প্রসাধনসামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানি হেনোলাক্সের মালিক নুরুল আমিনের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ৪ জুন পাওনা টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী গাজী আনিস।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
হেনোলাক্সে বিনিয়োগ করা অর্থের কিছু অংশ গাজী আনিসকে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন৷ এ জন্য জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান করছিলেন আনিস।
ঘটনার দিন অর্থাৎ ৪ জুন আনিসের পাওনা টাকার আংশিক পরিশোধের জন্য চেক দেয়ার কথা ছিল নুরুল আমিনের। কিন্তু এদিন তাদের কাছ থেকে ওই চেক না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত আনিস প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
মঙ্গলবার রাতে আমিন-ফাতেমা দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য গেল ২৬ জুন থেকে গাজী আনিস ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে একাধিকবার আলোচনার পর গাজী আনিসকে ৪ জুলাই আংশিক টাকা পরিশোধের জন্য চেক প্রদান করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন আমিন দম্পতি। সারা দিন অপেক্ষার পর তাদের কাছ কাঙ্ক্ষিত চেক না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গাজী আনিস।’
এদিকে নূরুল আমিন ও তার স্ত্রী র্যাবের কাছে জানান, আনিসের পাওনা মোট টাকার হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত ছিল তাদের। আনিস প্রাপ্য টাকার অনেক বেশি দাবি করেছিলেন। এটি সমাধান না হওয়ায় তারা সেদিন চেক দিতে পারেননি।
আনিসের আত্মহত্যার ঘটনা জানার পর ভয় পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলেই রাজধানীর কাকরাইলে নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে উত্তরায় গিয়ে আত্মগোপন করেন আমিন দম্পতি, জানান র্যাবের মুখপাত্র। পরবর্তীতে মামলা হওয়ার পর গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের দুজনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়।
আনিসের হেনোলাক্সে বিনিয়োগের বিষয়ে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘২০১৭ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে গাজী আনিসের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সখ্য এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। আমিন দম্পতি ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য ভারতে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে একই সাথে অবস্থানকালে আসামিদ্বয় ভিকটিমকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন। ভিকটিম প্রথমে অসম্মতি জানালেও পরবর্তীতে রাজি হন এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।
‘পরবর্তীতে তাদের প্ররোচনায় ভিকটিম আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোনো চুক্তিনামা হয়নি। বিনিয়োগ-পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য ভিকটিম বারবার আসামিদ্বয়কে অনুরোধ করেন। কিন্তু আসামিদ্বয় গড়িমসি করতে থাকেন।
‘প্রথমে কয়েক মাস লভ্যাংশ বাবদ আনিসকে টাকা দিলেও একসময় সে টাকা দেয়াও বন্ধ করে দেন নুরুল আমিন। সবশেষ লভ্যাংশসহ আনিসের ন্যায্য পাওনা ৩ কোটি টাকার অধিক বলে সে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। এর আগে কয়েক দফার চেষ্টায় ৭৪ লাখ টাকা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন আনিস। বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য কুষ্টিয়ায় দুটি মামলার পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন আনিস।
খন্দকার আল মঈন জানান, আনিসের বিনিয়োগের অধিকাংশ টাকা ধার করা ও পাওনাদারদের নিয়মিত লভ্যাংশ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি থাকায়, তারাও আনিসের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। এতে দিশাহারা আনিস গত ২৬ জুন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
ভিকটিম গাজী আনিস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। ভিকটিম সাহিত্য চর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে বলে জানায় র্যাব।
গ্রেপ্তার নুরুল আমিনের উত্থান সম্পর্কে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘তিনি ঢাকা বাংলাদেশ হোমিও হল থেকে হোমিও ডিগ্রি (ডিএইচএমএস) অর্জন করেন। এরপর ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম কয়েক বছর বাজারে প্রসাধনী পণ্যের কোনো প্রতিযোগী না থাকায় একচেটিয়া ব্যবসা করে নুরুল আমিনের হেনোলাক্স।
পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামকরণ করেন তিনি। ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস যেমন হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে সে আমিন হারবাল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৬ সালে হেনোলাক্স ও আমিন হারবালের সব কসমেটিকসের ব্যবসা বন্ধ করে দেন তিনি।
আরও পড়ুন:রাজধানীর মিরপুরে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে রুবেল হোসেন ও মুক্ত নামে দুইজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রুবেলের বয়স ২২ বছর এবং মুক্তের বয়স ২২ বছর। তারা দুজন চিকিৎসাধীন।
তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন সহকর্মী রাকিব হোসেন। নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া।
তিনি বলেন, ‘রুবেল ও মুক্ত দক্ষিণ খান মোল্লারটেক (ইউ এল ফ্যাশন) পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সেখান থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে গার্মেন্টস এক্সোসরিজ কিনতে উত্তরা থেকে প্রজাপতি বাসে মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
‘ঐ বাসেই তারা অজ্ঞান পার্টি খপ্পরে পড়েন। পরে মিরপুর ২ বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার পর অচেতন অবস্থায় বাসের ভিতরে পড়ে থাকতে দেখে বাসের কন্টাক্টর রুবেল কে সেখানে নামিয়ে দেন। মিরপুর ১০ নম্বর বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার পর মুক্ত কে সেখানে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়।’
পরে তাদের পকেটে থাকা ফোন দিয়ে খবর দিলে রাকিব তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পরে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসলে দুজনকে পাকস্থলী পরিস্কাষ্কার করে চিকিৎসক ভর্তি দেন বলে জানান রাকিব। তিনি ওই পোশাক কারখানার সুপারভাইজার।
তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী দুজনই (ইউ এল ফ্যাসন) পোশাক কারখানার পারচেজ ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা। তাদের সাথে এক লক্ষ টাকা ছিল। সেটি আমরা পাইনি। শুধু দুজনের পকেটে থেকে দুটি মোবাইল আর কিছু দরকারি কাগজপত্র পেয়েছি।’
ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মিরপুর থেকে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া দুইজন কে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাদেরকে স্টমাক ওয়াস দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি দেন। তাদের অভিযোগ তাদের কাছ থেকে প্রতারক চক্র এক লক্ষ টাকা নিয়ে যায়।’
আরও পড়ুন:ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেনকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়।
মানববন্ধনে পরিষদের সদস্যরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘মানুষের গায়ে হাত তোলার কে দিল অধিকার’, ‘জিরো টলারেন্স ফর ভায়োলেন্স’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে আলোচনা করেন পরিষদের নেতারা। এ সময় উপাচার্য হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মানববন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মহিউদ্দিন জিলানী বলেন, ‘শুধু ডা. সাজ্জাদ নন, অনেকের সঙ্গেই এরকম ঘটনা ঘটে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি এই ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা চাই আজকের মধ্যেই দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক। অন্যথায় বৃহস্পতিবার থেকে আমরা কর্মবিরতি পালন করব।’
‘কিছু ছাত্রের জন্য পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম হচ্ছে। আমরা এসব বিপথগামী শিক্ষার্থীর বিচার দাবিতে মানববন্ধন করছি।’
চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মারুফ উল আহসান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শহীদ মিনারে অনেকেই পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসেন, আড্ডা দেন। আজ সাজ্জাদ ডাক্তার হওয়ার কারণে হয়তো আমরা প্রতিবাদ করছি, কিন্তু অনেকেই তো সেটা করতে পারে না।’
পরিষদের সদস্য জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে মিটিং করেছি। আমাদের ডিরেক্টর, প্রিন্সিপালসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, আপনারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন, দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনেন। তা না হলে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।’
থানায় জিডি
এদিকে মারধরের ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন মারধরের শিকার সাজ্জাদ হোসেন। শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক রাজু মুন্সীকে এই ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জিডির বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘ভুক্তভোগী জিডি করেছেন। ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় আমরা আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো চেক করছি। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। আজকের মধ্যেই সব ক্যামেরার ফুটেজ চেক করা শেষ হবে।’
আরও পড়ুন:নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কিংবা গণতন্ত্রকে সংহত করা কোনো একক রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়।
রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার সকালে ইউএসএইড ও বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র চালাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত দায়িত্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা।
‘সাংঘর্ষিক রাজনীতি এবং সবকিছুতে না বলার সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিতে তিক্ততা বাড়িয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। আমি আশা করব, আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে আগামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের গত ৫০-৫১ বছরের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তখনই হুমকির মুখে পড়েছে যখন অস্ত্র উঁচিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হয়েছে। আর সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে।
‘দেশের কল্যাণে রাজনীতিসহ সব অঙ্গনে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশ ও সমাজের উন্নয়নে দেশাত্মবোধ, মানবিকতা এবং মমত্ববোধ জাগ্রত করতে রাজনৈতিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। রাজনৈতিক কর্মীরা অনেকেই জানেন না যে রাজনীতি একটা ব্রত।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর কচুক্ষেতে রজনীগন্ধা মার্কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরির মামলায় আসামি আলাউদ্দিন ও শাহজালালকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দুই দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার আসামিদের আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে রাখার আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে রোববার দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
স্বর্ণের দোকানে চুরির মামলায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার স্বর্ণারটেক গ্রাম থেকে ৫ আগস্ট রাতে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাহজালালকে। এ সময় তার হেফাজত থেকে বাদীর শনাক্তমতে উদ্ধার করা হয় ১৬ ভরি ৪ আনা ওজনের স্বর্ণালংকার।
মামলা থেকে জানা যায়, রজনীগন্ধা মার্কেটের নিউ বিসমিল্লাহ্ জুয়েলার্সের মালিক ২৯ জুলাই দুপুরে পার্শ্ববর্তী রূপনগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে ফেরার পথে তিনি জানতে পারেন যে তার দোকানের শাটার খোলা। তিনি দ্রুত দোকানে গিয়ে দেখেন স্বর্ণের বিভিন্ন ধরনের ৪০ ভরি ও রুপার ৫০ ভরি গয়না চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনার পরদিন রূপনগর থানায় একটি মামলা করেন তিনি।
সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির জ্বালানি তেল চুরি করে- এমন একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
বাহিনীটি সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, এই চক্রটি প্রতিদিন ৫০টি সরকারি গাড়ির প্রতিটি থেকে তেল সংগ্রহ করত।
তাদের কাছ থেকে একটি দোকান প্রায় ২০০ লিটার তেল কিনত। এই হিসাবে মাসে কিনত ছয় হাজার লিটার। এভাবে মোট তিনটি দোকানে মাসে প্রায় ১৮ হাজার লিটার চোরাই তেল কেনাবেচা হয়ে আসছিল।
বুধবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি জানান, এই অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা হলেন আবু কালাম, মো. সুমন, মো. বাবু ও মো. শাহিন। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ লিটার অকটেন ও পেট্রল উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিসি আজিমুল বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান প্রযুক্তি জাদুঘরের সামনের কয়েকটি দোকান সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অফিশিয়াল গাড়ির জ্বালানি তেল চুরি করে বিক্রি হচ্ছে।
‘এমন তথ্যের ভিত্তিতে আজ দুপুরে তেজগাঁও জোনের এসি মাহমুদ খানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তিনটি দোকান থেকে প্রায় ৬০০ লিটার অকটেন ও পেট্রল উদ্ধার করে। এ সময় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যদের বরাত দিয়ে ডিসি এইচ এম আজিমুল হক বলেন, প্রতি লিটার অকটেন ১০০ টাকায় কিনত তারা। এরপর খোলাবাজারে ১২৮ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করত। প্রতি লিটার পেট্রল ১১০ টাকায় কিনে খোলাবাজারে ১৩০ টাকায় এবং প্রতি লিটার ডিজেল ১০০ টাকায় কিনে খোলাবাজারে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করে আসছিল।
আগারগাঁও এলাকায় সরকারি অফিসের আধিক্যের কারণে এই চক্রটি এই এলাকাকে টার্গেট করে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল বলে তদন্তে তথ্য পাওয়ার কথা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
উপকমিশনার আজিমুল বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য পেয়েছি যা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি যে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়িচালক এই তেল চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকেও বিষয়টি অবহিত করা হবে।’
আরও পড়ুন:গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনতে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
সাপ্তাহিক নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে বুধবার সায়েদাবাদে অবস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় মোটর গ্যারেজ এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
তাপস বলেন, আপনারা অবগত আছেন, আমরা বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম সফলতার সাথে শুরু করেছি। একটি যাত্রাপথ শুরু হয়েছে। আরও তিনটি যাত্রাপথ আগামী ১ সেপ্টেম্বর আমরা উদ্বোধন করব। সেসব কার্যক্রমকে বেগবান করতে নিজ অর্থায়নে আমরা আমাদের সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও সিটি বাস টার্মিনালের আধুনিকায়নের কাজ আরম্ভ করেছি। প্রায় ৩০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে আমরা এ কার্যক্রম নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালটি অনেকদিন আগে নির্মাণ হলেও কোনও সংস্কার হয়নি। এখানে জলাবদ্ধতাসহ অবকাঠামোগুলো ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। এই কার্যক্রমের আওতায় ঢাকার গণপরিবহনকে যাতে শৃঙ্খলার আওতায় আনা যায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজটি হাতে নিয়েছি।’
মেয়র আরও বলেন, ‘এখানে আলাদাভাবে বাস রাখার জায়গা, শ্রমিকদের বিশ্রামের জায়গা, শৌচাগার করা হচ্ছে। এছাড়া যাত্রীরা যাতে ভেতরে প্রবেশ করে সেবা নিতে পারেন, সেভাবেই সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’
‘আমরা ২টি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটি কাঁচপুরে, অন্যটি কেরানীগঞ্জের কাছাকাছি। এর মধ্যে একটি জমির অধিগ্রহণ হলে আমরা হস্তান্তর চেয়েছি। আরেকটি জমির অধিগ্রহণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এগুলো নির্মাণ হতে আরও ৩-৪ বছর লেগে যাবে। এর মধ্যে বাসগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে, তাই বাস টার্মিনাল সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছি।
‘কিছু পথ টার্মিনালের কাছে এসে সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তাই আমরা নিচের রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্ত করার কাজ হাতে নিয়েছি। টার্মিনালের ভেতর দিয়ে উড়াল সেতুতে প্রবেশের পথ রয়েছে। তবে সেগুলো কার্যকর নয়। তাই আমরা নতুন করে কার্যকর করতে পরিকল্পনা করেছি।’
এ সময় মেয়র বলেন, ‘পোস্টার ও রঙ দিয়ে লিখে অবকাঠামোগুলোকে আচ্ছাদন করা হয়। এখানে জনগণের সচেতনতাই মুখ্য। আশা করব, তারা এগুলো থেকে বিরত থাকবেন। এক্ষেত্রে আমাদের আইন রয়েছে। তবে আমরা প্রয়োগ করি না। অবকাঠামো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সবার দায়িত্ব।’
পরে মেয়র জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষ্যে ধানমন্ডি লেকে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউস প্রজাতির ৩০০ কেজি পোনা অবমুক্ত করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক, করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলীসহ অন্যন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের বাসা থেকে অতিরিক্ত সময় নিয়ে যাত্রা শুরু করার অনুরোধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তরা বিভাগ।
বুধবার ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন জানান, বিমানবন্দর এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের কাজের জন্য বর্তমানে তিনটি লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সড়কে প্রায়ই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে খিলক্ষেত হয়ে উত্তরা ও গাজীপুরগামী যাত্রীদের পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে ওই সড়কে চলাচল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের নির্দিষ্ট সময়েরও অতিরিক্ত সময় হাতে নিয়ে যাত্রা শুরু করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের লা মেরিডিয়ান হোটেল ও কাওলা পার হওয়ার পর অবশ্যই বাম লেন ব্যবহার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।’
ডিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তরা) মো. সাইফুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এছাড়া থার্ড টার্মিনালের কাজও চলছে। এসব কারণে মূল সড়ক থেকে বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তাগুলো কমে গেছে। আবার বিআরটি প্রকল্পের কাজের জন্য মূল সড়কও সংকুচিত হয়েছে। যে কারণে রাজধানী থেকে আউটগোয়িংয়ে গতি কমে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘কাজগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট থাকবে। সেজন্য বিদেশগামী যাত্রীসহ অন্যান্য যাত্রীদের সময় নিয়ে বের হওয়ার জন্য বলেছি আমরা।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য