জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে ব্যবসায়ী গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় করা মামলার আসামি কথিত হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী গাজী আনিসুর রহমানের আত্মহত্যার পর নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীকে নজরদারিতে রেখেছিলেন র্যাবের গোয়েন্দারা। ঘটনার পর তারা আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।‘
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার নিজের শরীরে আগুন দিয়ে ব্যবসায়ী গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় সামনে আসে নুরুল আমিনের নাম।
মৃত্যুর আগে গাজী আনিস অভিযোগ করে গেছেন, হেনোলাক্স কোম্পানিতে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। লভ্যাংশসহ সেই টাকা ৩ কোটির ওপরে পৌঁছালেও গাজী আনিস কোনো অর্থ ফেরত দেননি। এ নিয়ে মামলা করেও লাভ হয়নি।
এই হতাশা থেকেই সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের গায়ে আগুন দেন কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী আনিস। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, আনিসের মুখমণ্ডলসহ শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন আনিসের বড় ভাই নজরুল ইসলাম। মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে।
হেনোলাক্স কোম্পানি বহু আগেই বিলুপ্ত
নুরুল আমিনকে হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক বলা হলেও নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেড় যুগ আগেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নুরুল আমিন বর্তমানে আমিন পোল্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের চেয়াম্যান হিসেবে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। এর আগে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠার উল্লেখও তিনি করেছেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে।
ফেসবুকে নিজেকে ডা. এন আমিন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যবসায়িক জীবন শুরু করার আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন নুরুল আমিন। ১৯৮৪ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি শুরু করার পর তিনি আগের পেশা থেকে সরে এলেও নামের আগে ডা. ব্যবহার করছেন।
ফেসবুকে তিনি বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন, বাস্তবে সেগুলোর কার্যক্রম নেই। ঠিকানা হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরানা পল্টনের ‘হেনোলাক্স সেন্টার’-এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। ওই ঠিকানায় গিয়ে ছোট একটি অফিস কক্ষ পাওয়া গেলেও সেটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে।
‘বায়বীয়’ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক পরিচয় দেয়া নুরুল আমিন কথিত হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগের কথা বলে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী গাজী আনিসের কাছ থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও সেই টাকা ফেরত পাননি আনিস।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৯ মে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন। সেখানে তিনি জানান, ২০১৬ সালে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে ২০১৮ সালে তিনি এই টাকা হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগ করেন।
গত ৩১ মে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সব শেষ স্ট্যাটাস দেন গাজী আনিস। সেখানেও নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিচার দাবি করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপও কামনা করেছিলেন তিনি।
ওই স্ট্যাটাসে আনিস লেখেন, ‘২০১৬ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আমার সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। আমি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং কুষ্টিয়া শহরেই বসবাস করি।’
কাজেকর্মে ঢাকায় যাতায়াত করতে হতো আনিসকে। যার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত দম্পতির সঙ্গে তার সখ্য আরও গভীর হয়।
আনিস লিখেছেন, ‘তবে প্রতি মাসেই নিজের প্রয়োজনে ঢাকা এলে তাদের সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হতো এবং উপহার বিনিময় ও ভালো রেস্তোরাঁয় আমরা একসাথে খাওয়া-দাওয়া করতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। যেহেতু আমি স্বাচ্ছন্দ্য দিনযাপনে অভ্যস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নিজস্ব গাড়িতেই সব সময় যাতায়াত করি। আমি মো. নুরুল আমিন এবং ফাতেমা আমিনের সঙ্গে নিজের খরচায় দেশের বাইরেও একাধিকবার বেড়াতে গিয়েছি।’
বিদেশে বসেই ওই দম্পতি তাকে হেনোলাক্সে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন বলে উল্লেখ রয়েছে আনিসের স্ট্যাটাসে।
তিনি লেখেন (বাক্য ও বানান অপরিবর্তিত), ‘২০১৮ সালে কলকাতা হোটেল বালাজীতে একইসাথে অবস্থান কালে উনারা আমাকে হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগের এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান। আমি প্রথমে অসন্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হই এবং প্রাথমিক ভাবে এককোটি টাকা বিনিয়োগ করি। পরবর্তীতে তাদের পীড়াপীড়িতে আরও ছাব্বিশ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি (অধিকাংশ টাকা ঋণ হিসেবে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে নেয়া)।’
তিনি লিখেছেন, ‘বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে এবং তাদের অনুরোধে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি তবে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য বারবার অনুরোধ করি, কিন্তু উনারা গড়িমসি করতে থাকেন।
‘এক পর্যায়ে উনারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করতেন সেটাও বন্ধ করে দেন এবং কয়েকবার উনাদের লোকজন দ্বারা আমাকে হেনস্তা ব্ল্যাকমেইল করেন এবং করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে লভ্যাংশ’সহ আমার ন্যায্য পাওনা তিনকোটি টাকার অধিক।’
স্ট্যাটাসের শেষ দিকে এসে তিনি লিখেছেন, ‘ভীষণ মানসিক নিপট খরায় আমি উল্লেখিত তথ্যাদি উপস্থাপন করলাম। আমার সামনে বিকল্প পথ না থাকায় ফেসবুকেও সবাইকে জানালাম।
‘আমি এই প্রতারক দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করছি। সেইসাথে যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী তারাও সোচ্চার হবেন বলে আশা করছি।’
ঘটনার পর স্ত্রীসহ উধাও হন নুরুল আমিন
ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়গায় কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ৩/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০ উল্লেখ করেছেন নুরুল আমিন।
সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির নাম ‘স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার’। এর তৃতীয় তলায় কথিত হেনোলাক্সের প্রধান কার্যালয়। আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ঠিকানা হিসেবেই এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে কক্ষটির বাইরের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলতে দেখা যায়। অফিসের ঠিকানার ফোন নম্বরে কল করা হলেও কেউ ধরেননি।
ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে হেনোলাক্সের এই কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অফিসে কেউ আসেননি। এর আগে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী নিয়মিত অফিসে আসতেন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার তাদের অফিসে আসতে দেখা গেছে।’
কাদের জানান, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির জমির মালিক নুরুল আমিন। তবে স্কাই ভিউ ডেভেলপার কোম্পানি এর ওপর ১১ তলা ভবনটি নির্মাণ করেছে। ভবনের ৩৬টি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটের ১৮টির মালিক নুরুল আমিন, বাকি অর্ধেক পেয়েছে ডেভলপার প্রতিষ্ঠান।
নুরুল আমিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরে। শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাদিম সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আমিনের পরিবারের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকেন। গ্রামের সবাই তাকে হেনোলাক্সের কর্ণধার হিসেবে চেনেন।’
ঢাকায় হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পরই নুরুল আমিনের পরিবারে সচ্ছলতা আসে উল্লেখ করে নাদিম সরকার বলেন, ‘নুরুল আমিন সাহেব আমাদের এলাকায় সহজ সরল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার পারিবার অতটা সচ্ছল ছিল না। শুনেছি আগে তিনি হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক ছিলেন। তবে ঢাকায় গিয়ে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়।
‘বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নাম কামান। ঢাকাসহ নরসিংদীতে অনেক জায়গাজমি কেনেন। তবে আবার এই হেনোলাক্স লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় আমরা শুনেছি। হেনোলাক্স ছাড়া তার আর কোনো ব্যবসা আছে বলে আমার জানা নেই।’
নুরুল আমিনের শ্বশুরবাড়িও একই এলাকা জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনার কোনো সন্তান নেই। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। শুধু ঈদের সময় বছরে দুই-একবার গ্রামে আসেন।’
কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক রতন কুমারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পেরেছে নিউজবাংলা। তিনি দাবি করেন, পাঁচ দিনের ছুটিতে তিনি গাজীপুর আছেন এবং অফিস বন্ধ থাকার কোনো তথ্য তিনি জানেন না। নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গেও সোমবার থেকে যোগাযোগ নেই রতনের।
গাজী আনিসের আত্মহত্যার বিষয়টি অবশ্য জানেন রতন কুমার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিউজে দেখেছি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমি এই প্রতিষ্ঠানে ২৮ বছর ধরে কাজ করছি, আমি আনিস নামের ভদ্রলোককে কখনও আমাদের অফিসে দেখিনি৷ ওনার নাকি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনা ছিল। এমনটা হলে তার তো অফিসে আসার কথা এবং পুলিশেরও আসার কথা।
‘আমি এমন কিছু কখনও দেখিনি এবং আমাদের স্যার-ম্যাডামও এ বিষয়ে কখনও কোনো কিছু বলেননি। বিষয়টা জেনে আমি খুবই অবাক হয়েছি।’
রতন কুমার বলেন, ‘হেনোলাক্স ১৯৮৪ সালে প্রথমে ত্বক ফর্সা করা ও মুখের দাগ দূর করার কয়েকটি ক্রিম নিয়ে বাজারে ব্যবসা শুরু করে। এরপর এর জনপ্রিয়তার কারণে হেনোলাক্সের মোড়কে নকল ক্রিমে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। মামলা মোকদ্দমা করেও নকল ক্রিমের বাজার বন্ধ করতে না পেরে ২০০৪ সালে এই ব্যবসা গুটিয়ে নেয় হেনোলাক্স কর্তৃপক্ষ।
‘এরপর নুরুল আমিন হেনোলাক্স ফুড নামে লাইসেন্স নিয়ে রেডি টিসহ দুই-একটি খাদ্যপণ্য বাজারে নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়ে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। নুরুল আমিন ২০১২ সালে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের লাইসেন্স নিয়ে এর অধীনে বেশ কিছু প্রসাধনীসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন। তবে ২০১৯ সালের পর এই ব্যবসাতেও ধস নামে।’
রতন কুমার বলেন, ‘আমিন হারবালের উৎপাদনও বন্ধ, কোনো অর্ডার পাওয়া গেলে কেবল সেগুলো তৈরি করে সরবরাহ করা হয়।’
তিনি জানান, হেনোলাক্স গ্রুপের বড় কারখানা রয়েছে রাজধানীর কদমতলীতে। তবে ব্যবসায়িক মন্দার কারণে সেই কারখানাটি অন্য এক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন নুরুল আমিন। এখন পুরানা পল্টনের ফ্ল্যাট ও কারখানা ভাড়া ছাড়া হেনোলাক্স গ্রুপের আর কোনো দৃশ্যমান আয়ের উৎস নেই।
রতন কুমার বলেন, ‘আমরা কয়েকজন কর্মকর্তা আছি, তারা পল্টনের অফিসে বসি। আমি মূলত পুরানা পল্টনের ভবনটির ও কারখানার ভাড়া তুলি। আর মো. তসলিম উদ্দীন নামে আমিন হারবালের একজন মার্কেটিং ম্যানেজার আছেন। তিনি দৌড়াদৌড়ি করে হারবালের কিছু অর্ডার নিয়ে আসেন, এভাবেই চলছে।’
আমিন হারবাল লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. তসলিম উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি এই পদে আছেন। তিনি মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমিন হারবালের প্রসাধনীর প্রচার ও বিপণনসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে সোমবারের পর থেকে তাকেও অফিসে দেখা যায়নি। তসলিমের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে ২৫৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।
আক্তার হোসেন বলেন, তিনটি কোম্পানির শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগ কার্যক্রমে মার্কেট ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। মার্কেট ম্যানিপুলেশনের সঙ্গে তিনি (সাকিব) জড়িত।
এর আগে গত সোমবার সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। সাকিব ছাড়া ১৪ আসামি হলেন— সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) ও তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ অভিপ্রায়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ১৭ ধারা) পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘনপূর্বক নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টসমূহে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফটকা ব্যবসার মতো একাধিক লেনদেন, জুয়া ও গুজবের মাধ্যমে বাজারের কারচুপি করেছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার সংঘবদ্ধভাবে ক্রমাগত ক্রয়-বিক্রয়পূর্বক কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই শেয়ারসমূহে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তাদের ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎপূর্বক অস্বাভাবিক রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ বা প্রসিড অব ক্রাইম শেয়ার বাজার থেকে সংঘবদ্ধভাবে উত্তোলন করেছেন। আসামি মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) কর্তৃক তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থের ২১ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপনের অভিপ্রায়ে লেয়ারিং করে বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করেন। তিনি ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
ওই মামলায় সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে বলা হয়, আসামি মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) কর্তৃক শেয়ার বাজারে কারসাজিকৃত প্যারামাউন্ট ইস্যুরেন্স লি., ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লি. এবং সোনালী পেপারস লি.-এর শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করে বাজার কারসাজিতে যোগসাজশ করেন। সরাসরি সহায়তাপূর্বক সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কারসাজিকৃত শেয়ারে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে তাদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অপরাধলব্ধ আয় হিসেবে শেয়ার বাজার হতে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০বি/১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে সাকিবের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ভয়হীন ও পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করবেন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, কেউ বোমা মারলেও তিনি ভয় পাবেন না।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুরোনো হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করতে গত ৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-২ এর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে পথ চলি। তার ওপর নির্ভর করে কাজ করি। কেউ বোমা মারলেও ভয় পাব না। কেউ গুলি করে মেরে ফেললে আমার সব গুনাহ নিয়ে যাবে। ফলে আমার ভয়ের কারণ নেই। আমি কবরের পাশে দাঁড়ানো, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভয়ের কিছু নেই। বিচারের এই তরি বয়ে নিয়ে যাব।’ বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, কিছু লোক গত ১৫ বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। তারা নিষ্ঠুরভাবে শাসন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস করেনি। মানুষ নিজেদের কথা বলতে পারেনি। সেই ফ্যাসিস্টরা এখনো ফিরে আসার চেষ্টা করছে।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শত শত ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে মানুষকে স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। তাদের অনেকে এখনো যথাযথ চিকিৎসা পাননি। বিচারকেরা চেষ্টা করছেন ছাত্র-জনতার দুর্ভোগ কমাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তাদের নাম উল্লেখ করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভয়হীন ও পক্ষপাতহীনভাবে তারা কাজ করবেন। তাদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার আশা করা যায়। তারা আন্তর্জাতিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে চলবেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বিষয়গুলোও মেনে চলবেন বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য বিচারপতি মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারপতি নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই আমাদের এই বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যেন কোন প্রশ্ন না ওঠে। আমরা দেখতে চাই এই বিচার যেন হয় আন্তর্জাতিক মানের।’
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আজকের সংবর্ধনায় এজলাসে বসা শুরুর মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল-২ এর যাত্রা শুরু হলো। ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে কিছু মামলা এখানে আসবে বলে আশা করছি। আর কিছু নতুন মামলা এখানে দাখিল করব। ইনশাআল্লাহ, বিচারের অগ্রগতি দেশবাসী দেখতে পাবে। গত ৮ মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে সরকার। এই ট্রাইব্যুনালের সদস্য পদে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মঞ্জুরুল বাছিদ এবং মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান ও সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের প্রাপ্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন। এছাড়া প্রজ্ঞাপনে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে শত শত অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
রাজধানীর কুখ্যাত চাঁদাবাজ লিটনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ছিনতাই ও অপহরণের মামলা ছিল।
বুধবার (২৮ মে) রাত ১০টার দিকে পুরানো পল্টনের নিউ বন্ধু হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকায় ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়, অপহরণ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিল লিটন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এসব কার্যক্রম আরও বেড়ে যায়।
পুরানা পল্টন এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। এরপর সেনাবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো লিটনের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে।
বুধবার রাতে নিউ বন্ধু হোটেলের পাশের একটি ভবনে থাকা লিটনের ব্যক্তিগত অফিসে অভিযান চালানো হয়। হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হোটেল কক্ষ, অফিস ও তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে পাঁচটি মোবাইল ফোন, নগদ ২ লাখ টাকা ও ১ হাজার ১০০ ডলার উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।
সেনাবাহিনীর মেজর শাকিব সাংবাদিকদের জানান, লিটনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গণহত্যার বিচার আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
উপদেষ্টা আজ তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘বিচার শুরু হচ্ছে শিগগির। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি আছে সমাজে। এটি দৃশ্যমান করা হয়েছিল আট মাস আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়েই।
এরপর তদন্তকারী অফিস ও প্রসিকিউশন অফিস পুনর্গঠন করা হয়েছে। তদন্তকারী দল কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষ করেছে। প্রসিকিউশন টিম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একটি মামলার ফরমাল চার্জ গঠন করেছে। গতকাল রোববার এটি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার পর তা আমলে নেয়া হয়েছে।’
উপদেষ্টা বলেছেন, ‘ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে একটি বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। সেটি গতকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার মামলার বিচারের শুনানি পর্ব শুরু হচ্ছে অচিরেই। ইনশাল্লাহ্, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এই বিচারের রায় পেয়ে যাবো আমরা। গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।’
স্ত্রী-কন্যাসহ আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নামে থাকা মোট নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। এসব হিসাবে মোট ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৯৬ টাকা রয়েছে।
বুধবার (২১ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। এদিন দুদকের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক আদালতে হিসাব অবরোধের আবেদন করেন।
অবরুদ্ধ হওয়া হিসাবে মো. আব্দুর রাজ্জাকের নিজ নামে থাকা চারটি ব্যাংকে হিসাবে, ৪২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা, তার স্ত্রী শিরিন আকতার বানুর চারটি ব্যাংক হিসাবে ৬৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৫ টাকা ও তার মেয়ে ফারজানা আক্তার তন্দ্রার হিসাবে ২৮ লাখ টাকা রয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডার ও মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগে দুর্নীতি, সরকারি জমি দখল, এসিআই ও আদম ব্যবসায়ী নূর আলীর মাধ্যমে শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার এবং পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।
এতে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকালে রাজ্জাক ও তার স্ত্রী-মেয়ের নামে অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এই সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করলে তদন্ত ব্যাহত হতে পারে এবং ভবিষ্যতে তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই তদন্তের স্বার্থে এসব হিসাব অবরুদ্ধ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
নারী নির্যাতনের একটি মামলায় সঙ্গীতশিল্পী মামলায় মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছে ডেমরা থানা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার তালিবুর রহমান এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (১৯ মে) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ডেমরার স্টাফ রোড এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘তার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় নারী নির্যাতনে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে ডেমরা পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুর রহমান ইউএনবিকে জানান, ‘ইসরাত জাহান প্রিয়া নামে ইডেন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর সাথে রুবেলের টেলিফোনে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে প্রায় সাত মাস আগে রুবেল প্রিয়াকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কীর্তন করে টেমরা থানার অধীন আমতলা নামক স্থানে একটি ফ্লাট বাসায় রাখে। বিগত সাত মাসে প্রিয়ার সাথে সম্পর্ক করে এবং পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি।’
সম্প্রতি প্রিয়ার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেটা দেখে প্রিয়ার বাবা-মা ডেমরা থানা যোগাযোগ করেন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার রাত দশটায় আমতলার বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রিয়াকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু রুবেল সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে প্রিয়া ডেমরা থানা এসে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডেমরার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। রুবেল তখন একটি গাড়ি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
বাংলাদেশের গায়ক হলেও নোবেল খ্যাতি অর্জন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি বাংলা চ্যানেলের গানবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’ থেকে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় জিততে না পারলেও তৃতীয় হন নোবেল, আর নিজের সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে খুব সহজেই দুই দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি।
এরপর থেকে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও এই আলোচিত গায়কের সুখ্যাতি নিমেষেই নষ্ট হয়ে যায় তার ব্যক্তিগত জীবন সবার সামনে আসার পর। স্ত্রীকে মারধর, মাদক সেবন, মদের ঘোরে ভাঙচুর, টাকা নিয়ে শো করতে না যাওয়া—এমন নানা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন নোবেল।
২০১৯ সালে মেহরুবা সালসাবিল মাহমুদের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। পরবর্তীতে খ্যাতির মধ্যে থাকা অবস্থায় নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিক্ততা শুরু হয় স্ত্রীর সঙ্গে, যার শেষ পরিণতি হয় বিচ্ছেদ।
২০২৩ এর নভেম্বরে অন্যের স্ত্রী ফারজানা আরশির সাথে অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করে নোবেল সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন তিনি আবারও বিয়ে করেছেন। পরবর্তীতে ফারজানা আরশি পুলিশের কাছে গায়কের নামে অভিযোগ দায়ের করে জানান যে নোবেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি, জোর করে গোপালগঞ্জের বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এরপরে মাদক খাইয়ে ওই অন্তরঙ্গ ছবিগুলো তোলা হয়েছিলো।
ব্যক্তিগত জীবনের বাইরেও একই বছর শরীয়তপুরের একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে অর্থ নিয়েও না যাওয়ায় ঢাকার মতিঝিল থানায় প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয় নোবেলের বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালে বেশ কিছু মাস রিহ্যাবে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর নোবেল সম্প্রতি আবারও গানের জগতে ফিরে এসেছিলেন এবং বেশ কিছু নতুন গানের কাজ করছিলেন।
নাশকতার পরিকল্পনা ও সামাজিকমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া সৈনিক নাঈমুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগীকে রাজধানীর খিলক্ষেতের বটতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বিভিন্ন সামরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাঈমুল ইসলামকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনুষঙ্গিক আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কতিপয় বরখাস্ত বা অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যকে সঙ্গে নিয়ে নাঈমুল বিভিন্ন গণমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করে আসছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আগামীকাল রোববার (১৮ মে) ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশপথে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, এ ধরনের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল আজ বেলা দুইটার দিকে খিলক্ষেতের বটতলা বাজার এলাকায় নাঈমুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এ সময় নাঈমুল তার কিছু সহযোগীকে নিয়ে উপস্থিত এক সেনাসদস্যের ওপর দেশি অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালান। তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্প থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাঈমুল ও তাঁর দুই সহযোগীকে আটক করে।
মন্তব্য