বিদ্যুৎ খাতে গত এক যুগে উন্নয়ন হলে হঠাৎ লোডশেডিং কেন- এই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি নেতার অভিযোগ, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে নানা রংচংয়ের কথা বলা হয়েছে। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ১৫২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই এখন অচল। ফলে লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ ছোবলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ রাজধানীও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন ‘উন্নয়নের এত যে ঢাকঢোল বাজানো হলো, তাহলে সারা দেশে লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতি কেন?’
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল নাজুক। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটের বড় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে ব্যর্থতা।
এই পাঁচ বছরে বিএনপি সরকার একটিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারেনি, উল্টো এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কার্যাদেশ বাতিল করেছে। বিদ্যুতের দাবিতে এখানে সেখানে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে সেই সরকার। এমনকি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিও হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি নানা পদক্ষেপ নেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এই সময়ে কয়েক গুণ বেড়েছে এবং এটাকে সরকার সাফল্য হিসেবে প্রচার করে আসছে।
তবে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটা ব্যবহার করত না। তারাই এখন লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আর না কেনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এই কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উপকরণগুলো সেগুলোর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। যেমন ডিজেলের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে, এলএনজির দামসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কয়লা এখন প্রায় পাওয়াই যায় না।’
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে। বিএনপি এখনও তার সমালোচনা করে যাচ্ছে।
রিজভী বলেন, ‘বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কুইক রেন্টাল স্থাপন করতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, সেটি নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সে জন্য দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে।
‘বিদ্যুতের সীমাহীন ব্যর্থতার মূল কারণ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আত্মীয়স্বজনের বেপরোয়া লুণ্ঠন। এরা স্বদেশ ও সমাজকে এড়িয়ে আত্মীয় তোষণ করতে গিয়েই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে জনগণকে শোষণ করার পথ উন্মুক্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার উন্নয়নের হাতির ভেতরে দাঁত যে নেই, সেটি এখন স্পষ্ট। তার উন্নয়ন যে একটা ভোজবাজি, তা এখন দৃশ্যমান। ফাঁপা উন্নয়নের তাস দিয়ে যে মানুষের মন জেতা যাবে না, সেটি তিনি বোঝার চেষ্টা করেননি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন এমনই যে, যে জনপদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া হয় সেটিকেই মনে হয় অন্ধকার গোরস্থান।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আলিফ-লায়লার কাহিনিকে হার মানাবে
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সঙ্গে আরবের রূপকথার তুলনাও করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে যে কাণ্ড করা হলো তা আরব্য রজনীর আলিফ-লায়লার কাহিনিকেও হার মানাবে।
‘অধিকাংশ প্রিন্ট মিডিয়ার প্রথম পাতাজুড়ে শেখ হাসিনার গুণকীর্তনের কাহিনি ছাপা হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হরদম প্রচার করা হয়েছে শেখ হাসিনার উচ্ছ্বাস।’
রিজভী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর জাঁকজমক উদ্বোধনে শুধুমাত্র টয়লেট নির্মাণ করতেই শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবর— প্রবল বন্যায় বানভাসি মানুষের জন্য জনপ্রতি মাত্র ১৮ টাকা ও দেড় কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এ যেন কর্মহীন অর্ধাহার-অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি নির্মম পরিহাস।
‘এই পরিস্থিতি সরকারের অসৎ অনাচারের একটি সুনিশ্চিত ভঙ্গি। সরকারের এমন আচরণ দুঃস্বপ্নের অতীত এক অভিঘাত। সরকারের কারণেই এই বন্যা মানবতার অস্তিত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।’
সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের সর্বস্ব নিয়ে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেন, অথচ বিএনপি দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল উন্নয়ন দেখতে পায় না। তারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে এতটা হীন মনোবৃত্তির পরিচয় তারা দিচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে তাদের বাস্তবতা বোঝা উচিত।’
শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। খবর বাসসের
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্য থেকে বিএনপি নেতাদের প্রকৃত সত্য শিক্ষা নেয়ার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নতি ও উচ্চতা, এটা দেখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ লজ্জিত। তখন পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের কাছে মনে হতো বোঝা। এখন সে বোঝাই অনেক উন্নয়নে এগিয়ে গেছে। সে উন্নয়ন দেখে তিনি লজ্জিত হন। বিএনপি যতটা অপপ্রচার করে তাদের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রকৃত সত্য শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।
বৃহস্পতিবার করাচিতে সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে তাকালে এখন তাদের লজ্জা হয়। সে সময় ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ দেশের বোঝা মনে করা হতো। কিন্তু তারা শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব যুদ্ধ-সংঘাতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-হামাস পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আগ্রাসী অভিযান শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সব প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও এ যুদ্ধকে না বলার জন্য বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি নেতারা হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এমনকি জনগণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টা করছে।’
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের বোধগম্য হয় না যে আওয়ামী লীগ জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করে, জনকল্যাণে পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি নির্ধারণ করে। তাই জনগণকে হাতিয়ার করে নয়, জনকল্যাণের রাজনীতি করে জনগণের মন জয় করেই তাদেরকে ক্ষমতায় যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি গণবিরোধী রাজনীতি করে আসছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে তারা শাসন-শোষণ ও অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছিল। সন্ত্রাস ও উগ্র-জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তারা সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্যর্থ। দলটি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধ্যগ্রন্ত করার লক্ষ্যে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
‘সংসদ নির্বাচন বানচালের নামেও তারা অগ্নি-সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। আর দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত জনগণের নিরাপত্তা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ নিলে বিএনপি নেতারা সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালান।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।
‘সরকার জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর।
আরও পড়ুন:পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একইসঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচন ভবনে মাঠ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশ প্রধানের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ইসি সচিব বলেন, ‘প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ জেলায় কী সমস্যা আছে তা বলেছেন। পার্বত্য জেলাগুলোতে যেখানে হেলিকপ্টার সাপোর্ট দেয়া হয়, সেখানে তিনদিনের পরিবর্তে পাঁচদিনের সম্মানী ভাতা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য তারা বলেছেন। কমিশন তাতে সম্মত হয়েছে।
‘পার্বত্য উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলায় দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জনবল দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকরা বলেছেন যে ভোটের দিন সকালে ব্যালট গেলে অতিরিক্ত বাজেটের প্রয়োজন হবে। কমিশন সেটা বিবেচনা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। মূলত মাঠ প্রশাসনে যাতে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
ইউপি চেয়ারম্যানরা স্বপদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। কমিশন বিষয়টি নিয়ে আপিল করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আদেশের কপি এখনও আমরা পাইনি। পেলে আপিল করা হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেলায় জেলায় কোর কমিটি মিটিং করে জানালে সে অনুযায়ী অতিরিক্ত ফোর্স দেয়া হবে। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা যেভাবে নিরপেক্ষতা, সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে।’
জাহাংগীর আলম বলেন, ‘কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জের কথা বলেননি। তারা বলেছেন- স্থানীয় নির্বাচনে যেহেতু প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে তাই সেখানে প্রতিযোগিতাটা বেশি হবে। এজন্য তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেছেন। সহিংসতার আশঙ্কা করেননি। এ বিষয়টা গোয়েন্দা রিপোর্টে থাকে। কোথাও কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পার্বত্য জেলার উপজেলাগুলোতে নির্বাচনে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।’
নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব খাটানো নিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘আচরণবিধি যাতে সবাই যথাযথভাবে প্রতিপালন করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা অনুরোধ করেছেন। কমিশনও আশ্বস্ত করেছে যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত চার ধাপে দেশের পৌনে পাঁচ শ’ উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়া নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক জানান, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিএনপির ৬৪ জন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেকোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সল চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সহ-সভাপতি সাদেক আলী, উত্তর চট্টগ্রামের চিকনন্দী ইউনিয়নের সহকারী আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপি নেতা জহুরুল আলম ও কক্সবাজার জেলা মৎস্যজীবী দলের নেতা এম হান্নান মিয়াকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
হামলায় আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনকে প্রথমে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আহত আলী হোসেন বলেন, ‘কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনফর আলীর নির্দেশে সাইদুল, মুহিব, সোহেলদের নেতৃত্বে আমার ওপর এই হামলা হয়েছে। এ সময় আমাকে অপহরণেরও চেষ্টা করা হয়।’
ভাইরাল হওয়া অপর এক ভিডিওতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করার দৃশ্য দেখা যায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনসহ আরও তিনজন ঘোড়া প্রতীক চেয়েছিলেন। প্রতীক বরাদ্দের দিন বিষয়টি নিয়ে অনেক হট্টগোল হয়। একাধিক প্রার্থী হওয়ায় লটারির মাধ্যমে আলী হোসেন ঘোড়া প্রতীক পান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনফর আলীর নির্দেশে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, হামলার এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন:উপজেলা নির্বাচন থেকে মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনরা সরে না দাঁড়ালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার দলের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
কাদের বলেন, ‘দলীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা, তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, আমরা বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তারপরও কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি।
‘নির্বাচন কমিশনে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এ বিষয়টা চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে দলে; সময়মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না, এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেয়া হবে।’
চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাধারণ ক্ষমা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে দলীয় রণকৌশল। সেটা হতেই পারে। সেটা দলের সভাপতি নিতে পারেন। নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।’
বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ থাকে—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাস থেকে জনগণকে রক্ষায় কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি একতরফা সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকেই যায়। জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে।
‘আমরা মাঠে থাকলে তারা এসব অপকর্ম করতে মানসিকভাবে চাপে থাকবে। সে জন্য আমরা কর্মসূচি দিই। বিএনপির চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিহত করতে জনগণের স্বার্থে আমাদের কর্মসূচি থাকা উচিত।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য