বিদ্যুৎ খাতে গত এক যুগে উন্নয়ন হলে হঠাৎ লোডশেডিং কেন- এই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি নেতার অভিযোগ, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে নানা রংচংয়ের কথা বলা হয়েছে। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ১৫২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই এখন অচল। ফলে লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ ছোবলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ রাজধানীও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন ‘উন্নয়নের এত যে ঢাকঢোল বাজানো হলো, তাহলে সারা দেশে লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতি কেন?’
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল নাজুক। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটের বড় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে ব্যর্থতা।
এই পাঁচ বছরে বিএনপি সরকার একটিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারেনি, উল্টো এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কার্যাদেশ বাতিল করেছে। বিদ্যুতের দাবিতে এখানে সেখানে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে সেই সরকার। এমনকি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিও হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি নানা পদক্ষেপ নেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এই সময়ে কয়েক গুণ বেড়েছে এবং এটাকে সরকার সাফল্য হিসেবে প্রচার করে আসছে।
তবে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটা ব্যবহার করত না। তারাই এখন লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আর না কেনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এই কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উপকরণগুলো সেগুলোর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। যেমন ডিজেলের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে, এলএনজির দামসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কয়লা এখন প্রায় পাওয়াই যায় না।’
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে। বিএনপি এখনও তার সমালোচনা করে যাচ্ছে।
রিজভী বলেন, ‘বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কুইক রেন্টাল স্থাপন করতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, সেটি নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সে জন্য দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে।
‘বিদ্যুতের সীমাহীন ব্যর্থতার মূল কারণ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আত্মীয়স্বজনের বেপরোয়া লুণ্ঠন। এরা স্বদেশ ও সমাজকে এড়িয়ে আত্মীয় তোষণ করতে গিয়েই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে জনগণকে শোষণ করার পথ উন্মুক্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার উন্নয়নের হাতির ভেতরে দাঁত যে নেই, সেটি এখন স্পষ্ট। তার উন্নয়ন যে একটা ভোজবাজি, তা এখন দৃশ্যমান। ফাঁপা উন্নয়নের তাস দিয়ে যে মানুষের মন জেতা যাবে না, সেটি তিনি বোঝার চেষ্টা করেননি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন এমনই যে, যে জনপদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া হয় সেটিকেই মনে হয় অন্ধকার গোরস্থান।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আলিফ-লায়লার কাহিনিকে হার মানাবে
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সঙ্গে আরবের রূপকথার তুলনাও করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে যে কাণ্ড করা হলো তা আরব্য রজনীর আলিফ-লায়লার কাহিনিকেও হার মানাবে।
‘অধিকাংশ প্রিন্ট মিডিয়ার প্রথম পাতাজুড়ে শেখ হাসিনার গুণকীর্তনের কাহিনি ছাপা হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হরদম প্রচার করা হয়েছে শেখ হাসিনার উচ্ছ্বাস।’
রিজভী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর জাঁকজমক উদ্বোধনে শুধুমাত্র টয়লেট নির্মাণ করতেই শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবর— প্রবল বন্যায় বানভাসি মানুষের জন্য জনপ্রতি মাত্র ১৮ টাকা ও দেড় কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এ যেন কর্মহীন অর্ধাহার-অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি নির্মম পরিহাস।
‘এই পরিস্থিতি সরকারের অসৎ অনাচারের একটি সুনিশ্চিত ভঙ্গি। সরকারের এমন আচরণ দুঃস্বপ্নের অতীত এক অভিঘাত। সরকারের কারণেই এই বন্যা মানবতার অস্তিত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।’
সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের সর্বস্ব নিয়ে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন:রাজনীতিতে ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হওয়া স্লোগান ‘খেলা হবে’ এবার শোনা গেল বিএনপি নেতার মুখে। নয়াপল্টনে বৃহস্পতিবারের সমাবেশে এই স্লোগান দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে হুশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম।
নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বক্তব্যের ‘খেলা হবে’ স্লোগানটি সে সময় বেশ জনপ্রিয়তা পায়। দেশের সীমানা পেরিয়ে স্লোগানটি উঠে যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতার মুখে ‘খেলা হবে’ স্লোগানটি বার বার শোনা গেছে।
জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি ওই সমাবেশের আয়োজন করে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আব্দুস সালাম।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে জরুরি সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছি। বিএনপি যেভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আমরা মাঠে নেই। অচিরেই রাজপথে দেখতে পাবেন। খেলা হবে, রাজপথে মোকাবেলা হবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম বলেন, ‘এবার খেলা হবে। মুজিব কোট পরে আর কেউ রাস্তায় নামতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধে রাজি আছি আমরা। আমরা ভেসে আসিনি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সামনে-পেছনে র্যাব-পুলিশ বাদ দিন। হাসিনা গণভবন থেকে বের হয়ে সুধা সদনে যান। আমাদের মতো পাবলিক হয়ে যান। তারপর হবে যুদ্ধ।
‘আওয়ামী লীগের এক নেতা আছেন না? বলেছেন, তিনি পুরনো খেলোয়াড়। আমরাও কিন্তু কম পাকা খেলোয়াড় না। খেলার দেখছেন কী? কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব দিয়ে যেতে হবে। আমরা কিছুই ভুলিনি। ধৈর্য্য ধরে আছি।’
আরও পড়ুন:রাজপথে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে এবার পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করল আওয়ামী লীগ। ১৭ আগস্ট দেশ জুড়ে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খেলা হবে, মোকাবিলা হবে।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে বোমা হামলার দিনটিতে রাজপথে নামতে যাচ্ছে দলটি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক জরুরি সভায় এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি দৃশ্যত রাজপথে সংগঠনকে সক্রিয় করার পদক্ষেপ। লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে বিএনপি ও সমমনারা যখন একের পর এক বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে, সে সময় নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নামার তাগিদ দিলেন ওবায়দুল কাদের।
সরকার পতন ও আন্দালনের বিষয়ে সরকারবিরোধী জোটগুলোর হুমকিরও জবাব দেন আওয়মাী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। আমরা রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছি। তারা যেভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আমরা রাজপথ ভুলে গেছি। আমরাও আছি, অচিরেই রাজপথে দেখতে পাবেন।
‘শোকের মাসে সেভাবে রাজপথে নামতে পারছি না। তবু আমরা চিন্তা করেছি যে এসব অপপ্রচার, মিথ্যাচার, সাম্প্রদায়িকতা, চক্রান্ত- এসবের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদেরও প্রতিবাদ করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে।’
কাদের জানান, ১৭ আগস্ট বিকেল ৪টায় সবাই মিলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে জমায়েত হবেন তারা। সেখানে সমাবেশের পর তারা মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন।
বিকেল ৩টা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, এ কর্মসূচি সারা দেশের সব জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলা, ইউনিয়নেও হবে।
‘আ. লীগ মাঠে নামলে বিএনপির ক্ষমতার স্বপ্ন কর্পূরের মতো উড়ে যাবে’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পালাবার দল নয়। বার বার শুধু পালানোর কথা বলছেন, স্বপ্ন দেখছেন ময়ূর সিংহাসনের, যা সোনার হরিণ। আওয়ামী লীগ যখন মাঠে নামবে, তখন স্বপ্ন আবারও রঙিন খোয়াবের মতো, কর্পূরের মতো উড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দর ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ভোলায় সংঘর্ষে দুই নেতা-কর্মীর প্রাণহানির প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভে মারামারি করেছেন বিএনপির দুই পক্ষ। তাদেরকে নিবৃত্ত করতে গেলে মারামারিতে জড়িত দুই পক্ষ চড়াও হয় তার ওপরও।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারির এই ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাবেক ছাত্রদলের নেতা মোহাম্মদ নয়নের নেতৃত্বে কয়েকজনের একটি পক্ষ অপর একটি পক্ষের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ায়। সেখানে উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী তাদের থামাতে যান। নেতা-কর্মীরা তখন তার ওপরও চড়াও হন।
এ সময় ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব পাভেল মোল্লা, ঢাকা জেলা তাঁতী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হীরা হোসেন, যুবদল নেতা বাদল হোসেন ও বিএনপির নেতা আল আমিন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নেতা-কর্মীদের পাশে নির্ধারিত স্থানে বিশাল একটি মিছিল নিয়ে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন ও সদস্য সচিব এনামুল হক এনাম।
কিছুক্ষণ পর ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী নিয়ে সেখানে হাজির হন রবিউল ইসলাম নয়ন। তারা কেরানীগঞ্জ দক্ষিণের নেতা-কর্মীদের তুলে দিয়ে বসতে চান। এক পর্যায়ে কেরানীগঞ্জের এক কর্মীর মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন নয়ন।
তখন কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায় তাদেরকে থামাতে যান। তখন নয়নসহ তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা তার ওপরও চড়াও হন এবং কেরানীগঞ্জের নেতা-কর্মীদের মারধর করেন।
একপর্যায়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নেতা-কর্মীরা নয়নকে ধরে উত্তম মধ্যম দেয়। পরিস্থিতি খারাপ দেখলে যুবদলের কেন্দ্রীয় এক নেতার হস্তক্ষেপে স্থান ত্যাগ করেন নয়ন।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা নিয়ে পাত্তা দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, সমালোচনার অধিকার শরিক দলগুলোর আছে। এই সিদ্ধান্ত অনেক কিছু বিবেচনা করেই নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক জরুরি সভায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শরিকদের কর্মসূচি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরসিনের নাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেনের নাম যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৬ টাকা বাড়ানোর পর তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
এমনিতেই মূল্যস্ফীতিজনিত সমস্যায় জর্জর দেশবাসীর কষ্ট তুলে ধরে আওয়ামী লীগের শরিক দলের নেতারাও বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত অমানবিক। কেউ কেউ এর প্রতিবাদে কর্মসূচিও দিয়েছে।
৬ আগস্ট বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি দাম কমানোর আহ্বান জানিয়েছে।
১০ আগস্ট দেশব্যাপী বিক্ষোভ করেছে জাসদ। দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।
শরিকদের প্রতিবাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোটের শরিকদের দলগতভাবে কর্মসূচি দেয়ার অধিকার আছে। তারা করতে চাইলে করবে। এটা তো কোনো কথা না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জোট তো আমাদের ইলেকশন অ্যালায়েন্স, সেটা তো কৌশলগত জোট। সেখানে আদর্শের কোনো বিষয় নেই। তাহলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা কেন জোট করেছি? এসব ব্যাপার তো ভাবতে হবে।’
তেলের মুল্যবৃদ্ধির আগে দলীয় পরিমণ্ডলে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছিলো কি না-জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করাটা সরকারের ব্যাপার। এটা দলীয় মিটিংয়ে আলোচনা করে হয় না। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয় এবং এখানে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের হেড কিন্তু প্রধানমন্ত্রী।’
প্রগতিশীল আদর্শের ভিত্ত্বিতে গড়ে ওঠা ১৪ দলীয় জোটে আদার্শের কোনো বিষয় নেই বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ১৪ দলের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘এই জোট তাদের নির্বাচনী অ্যালায়েন্স, কৌশলগত জোট। এখানে আদর্শের কোনো বিষয় নেই।’
তেলের দর বৃদ্ধির কোনো বিকল্প ছিল না বলেও জানান কাদের। বলেন, ‘সারা দুনিয়ার পরিস্থিতি, বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সবকিছু জেনেশুনে এটা করা হয়েছে। আমরা আগেই বলেছি এটা আমরা বাধ্য হয়ে, নিরুপায় হয়ে করেছি। মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কোনো বা বিকল্প কোনো পথ ছিল না।’
সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে বিএনপির কর্মসূচির সময় আকাশে ড্রোন দেখে ক্ষোভ ঝাড়লেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার অভিযোগ, গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছে তাদের মনিটর করতে সরকার ইরান থেকে ড্রোন আমদানি করেছে।
ড্রোন দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষকে হত্যার কথা তুলে ফখরুল বলেন, এ কারণে যন্ত্রটি নিয়ে ভয় পান তারা।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দলের দুইজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশের আশপাশে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ও জলকামান, রায়ট কার দেখা গেছে। আকাশে ড্রোনও দেখা যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন ড্রোনের দিকে আপনারা তাকাচ্ছিলেন, তখন আমি ড্রোনের সঙ্গে জড়িতদের বললাম যে এটা তো বেআইনি। তারা আমাকে জানাল, ৫ পাউন্ডের নিচে ড্রোন চালাতে অনুমতি লাগে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ইরান থেকে ২১টা ড্রোন আমদানি করেছে এবং তারা বলেছে ড্রোন ভাসানচরে পরীক্ষা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন, ড্রোন চালানো দেখেছেন এবং বলেছেন সেটা তারা ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের মনিটরিং করবে। আসলে ড্রোন নিয়ে এসেছে মানুষকে মনিটর করার জন্য। যারা গণতন্ত্র চায় তাদের মনিটর করার জন্য।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘ড্রোনের নাম শুনলে আমরা খুব ভয় পাই। কেন ভয় পাই? আমরা দেখি ড্রোন দিয়ে কীভাবে অন্য দেশে গিয়ে বিভিন্ন নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। আমরা দেখি গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছে তাদের হত্যা করা হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে একমত যারা আওয়ামী লীগকে ফোর টোয়েন্টি পার্টি বলেন। আমি শুধু তাদের সঙ্গে এতটুকু যোগ করতে চাই যে, আওয়ামী লীগ প্রতারকের দল, এই সরকার প্রতারক।
‘শেখ হাসিনা বলেছেন ১০ টাকা কেজি চাল দেব, বিনা মূল্যে সার দেব, ঘরে ঘরে চাকরি দেব। এখন সব মিথ্যা ‘
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, আজ সাংবাদিকরা লেখতে পারছেন না, দেখাতে পারছেন না। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে, সংবিধানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বাতিল করে দিয়েছে, পুলিশ আজ আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে গরিব মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের ব্যয় বেড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন না করে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজের লোক দিয়ে টাকা লুটপাট করেছে।’
আগামী ২২ আগস্ট থেকে মহানগর, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সমাবেশেরও ঘোষণা দেন বিএনপি নেতা।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও এক লাফে জ্বালানির মূল্য এত বৃদ্ধির নজির নেই। ৮ বছরে বিপিসি আয় করেছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর এবার লোকসান করেছে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে ভর্তুকি দিয়ে দেশের রিজার্ভ খেয়ে ফেলছে। দেশের অবস্থা আরও বেহাল হতে বাধ্য।’
তিনি বলেন, ‘পাচারের টাকা সরকার দেশে আনতে চায় না। সুইজারল্যান্ডের সুইস ব্যাংকের কাছে টাকা পাচারের তথ্য চায় না। কারণ, এ সরকার জানে পাচারকারীরা সব আওয়ামী লীগের লোক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশের টাকা পাচার করে দেশটাকে আওয়ামী লীগ দেউলিয়া করে দিয়েছে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আফরোজা রিতা, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন:পণ্যমূল্য ও জ্বালানির দর বৃদ্ধিজনিত যে সংকট, সেটি গোটা বিশ্বেই একই রকম জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অন্য দেশে সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক জরুরি সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরসিনের নাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রল ও অকটেনের নাম যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৬ টাকা বাড়ানোর পর তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘সারা দুনিয়ার পরিস্থিতি, বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সবকিছু জেনেশুনে এটা করা হয়েছে।
‘আমরা আগেই বলেছি এটা আমরা বাধ্য হয়ে, নিরুপায় হয়ে করেছি। মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কোনো বা বিকল্প কোনো পথ ছিল না।’
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে তখনই সরকার কমাবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যখন স্বাভাবিক সময় আসবে, তখন আমরা আমাদের প্রমিজ থেকে পিছিয়ে যাব না।’
অর্থনৈতিক চাপের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটা যুদ্ধের কারণে এবং এটা বৈশ্বিক সংকট। কিন্তু কোনো দেশে এজন্য সরকার দায়ী করা হচ্ছে না।
‘শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের বিষয় আলাদা। সেখানে একটা পটপরিবর্তন হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যা হচ্ছে সরকারকে দায়ী করে কোনো মিছিল কোনো দেশে হচ্ছে না। কিন্তু এদেশে আজকেও বিএনপিসহ তাদের দোসররা মাঠে নেমেছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে, বিষোদগার করছে।
‘সরকার উৎখাতের চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। এই সংকটে সহযোগিতা করবে না। এটা তারা জানান দিয়েছে।’
এই সংকট থেকে শেখ হাসিনাই মুক্তি দিবে পারবেন উল্লেখ করে ‘একটু ধৈর্য’ ধরার পরামর্শও দেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘আমার তো মনে হয় এই ক্রাইসিস থেকে তিনি মুক্তি দিতে পারবেন। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের নেত্রীর রয়েছে। আজকের সংকট সাময়িক। এই সংকট কেটে যাবে।’
‘পুলিশকে আক্রমণ করায় প্রাণহানি’
বিএনপির বিক্ষোভ এবং ভোলায় দুই জনের প্রাণহানি নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এই প্রাণহানির দায় তিনি দেন বিএনপিকে। বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়ে নানা কথা বলছে। বক্তব্য দিচ্ছে, ভাষণ দিচ্ছে, কাউকে তো সরকার গ্রেপ্তার বা নিষেধ করেনি। কিন্তু আপনি যদি অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর চড়াও হন, তখন তারা কী করবে? তাদের আসল উদ্দেশ্যও এটা।’
সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
‘শরিকদের প্রতিবাদ কোনো বিষয় না’
শরিকদের প্রতিবাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোটের শরিকদের দলগতভাবে কর্মসূচি দেয়ার অধিকার আছে। তারা করতে চাইলে করবে। এটা তো কোনো কথা না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জোট তো আমাদের ইলেকশন অ্যালায়েন্স, সেটা তো কৌশলগত জোট। সেখানে আদর্শের কোনো বিষয় নেই। তাহলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা কেন জোট করেছি? এসব ব্যাপার তো ভাবতে হবে।’
আরও পড়ুন:
ছোট ছোট সাতটি দল ও সংগঠন নিয়ে গঠন করা জোট গণতন্ত্র মঞ্চ সরকারকে দেশ ছাড়ার চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছে। জোটের প্রবীণ নেতা আ স ম আবদুর রব দাবি করেছেন, বিশ্বের কোনো দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়েনি।
সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে সমঝোতা করে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়া এই রাজনীতিক এটাও বলেছেন, গণতন্ত্র মঞ্চের কারও আপোষ করার ইতিহাস নেই।
আত্মপ্রকাশের তিন দিন পর মঞ্চের পক্ষ থেকে ডাকা প্রথম বিক্ষোভে এ কথা বলা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাসের সামনে এই বিক্ষোভ হয়।
গত ৮ আগস্ট জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে এই গণতন্ত্র মঞ্চের ঘোষণা দেন।
এর মধ্যে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল। এই দুটি ছাড়াও গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবার বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। আবার তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।
প্রথম কর্মসূচিতে জোট নেতারা সরকারকে বিদায় না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার কথা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ স ম রব সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আজকে দেশ শ্রীলঙ্কা হওয়ার পথে। এই সরকারের লোকদের বলব, আপনারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালাবেন সেই চিন্তা করুন।’
এই বিক্ষোভ যেসব কারণে ডাকা হয়েছে, তার একটি কারণ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। সরকার বলছে, বিশ্ববাজারে বাড়ার কারণে বাংলাদেশেও একই সিদ্ধান্ত নেয়ার বিকল্প ছিল না। আর তেলের দাম দেশে দেশেই বেড়েছে।
তবে রব বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও জ্বালানি তেলের দাম এমন বেড়েছে এর উদাহরণ কোথাও নেই।… দেশে সরকার নেই, দেশে আছে সার্কাস। সরকার সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি। সিন্ডিকেট যে দিকে সুইস দেয় সরকার সেভাবেই কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নই। সারাদেশে হাহাকার চলছে। তাই এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের কোনো নেতার অতীতে আপোষ করার কোনো ইতিহাস নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের লড়াই গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, আমাদের এই লড়াইয়ে জিততে হবে। এই সরকারকে যেতে হবে।
‘এই সরকার বলেছে মরে গেলেও ক্ষমতা ছাড়বে না। আর আমরাও মরে গেলে কোন আপোষ করব না। রাস্তায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা চোর, ডাকাত, লুটেরা। আমরা দেশকে, দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারকে হটাতে চাই। আমরা শুধু সরকারের পদত্যাগই চাই না। আমরা চাই এই দেশের গঠনমূলক পরিবর্তন।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের একটি প্রাচীন দল। কিন্তু দেশের জনগণ এখন তাদের ঘৃণা করে। তাই দেশের জনগণকে আর তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চ নিয়ে সরকারের ভয় শুরু হয়েছে। আমাদের ভয় পাওয়ার কারণ হচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলবে। আমরা শুরু থেকেই বলছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আর না হয় কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটানো হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ নাকি বলেন, ‘এটা আমাদের প্রথম কর্মসূচি। এই সরকারকে বিদায় করা না পর্যন্ত আমরা মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, ‘সরকার চাপাবাজি করে বলছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকার বুঝতে পারছে তারা বিদায় নিলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই তারা মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। … আমাদের লক্ষ্য এক এই ফ্যাসিবাদ সরকারকে সরিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।’
এ সময় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খানও বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন।
বিক্ষোভ শেষে একটি মিছিল বের হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য