রাজধানীর কারওয়ান বাজার মাছবাজারসংলগ্ন রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার রাত ৮টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। ট্রেনে কাটা পড়ে তার দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে রাতে কারওয়ান বাজার মাছপট্টিসংলগ্ন রেললাইন থেকে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করি। তার সমস্ত দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।’
এসআই আরও জানান, ঘটনাস্থলে থাকা এক নারী তাকে জানিয়েছেন, গত রাতে ওই যুবক রেললাইন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সে সময় তেজগাঁওর দিক থেকে একটি ট্রেন আসছিল। তখন যুবককে রেললাইন থেকে টেনে নিয়ে আসেন ওই নারী, কিন্তু ট্রেনটি কাছাকাছি আসার পর যুবক রেললাইনে ঝাঁপ দেন। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, আইনি প্রক্রিয়া শেষে যুবকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব নেতৃত্বকে বাংলাদেশের পাশে চাইলেন জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট।
বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
মিশেল ব্যাচলেট বলে, ‘জলবায়ু সংকটের ফলে সবচেয়ে বেশি যেটি ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা হল মানবাধিকার। একটি জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির দেশ হিসেবে উন্নত বিশ্বের উচিত বাংলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে আসা।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শরণার্থীদের জায়গা দেয়া অনেক বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের এ বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। কোনো একটা এলাকায় হুট করে অনেক মানুষের আগমন ঘটলে পরিস্থিতি এলোমেলো হয়ে যায়। এতে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে।’
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও আবাসনগত সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে তাদের ফেরালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ফলে শুধু পরিবেশ নয় অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
‘রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায়। কিন্তু সে পরিবেশ এখনও রাখাইনে প্রস্তুত হয়নি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই জটিল। এ অবস্থায় ফেরত পাঠালে এ মানুষগুলো আবারো ফিরে আসার শঙ্কা থেকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সর্বত্র, প্রত্যেকের মানবাধিকারকে প্রভাবিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কমপক্ষে ৩.৩ বিলিয়ন মানুষ এর প্রভাবের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’
এক প্রশ্নে মিশেল ব্যাচলেট বলেন, ‘তরুণদের কাছে কোন বাধাই বাধা নয়। জলবায়ু জরুরি অবস্থায় এই অংশই বাঁচাতে পারে বিশ্বকে। তাদের কন্ঠস্বরকে আরো জোরালো করতে হবে, আগামীর ভবিষ্যতের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এসডিজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে। সবার জন্য, ন্যায় বিচারের প্রয়োজনে বাংলাদেশের অনেক কিছু করার রয়েছে। বৈষম্য করে চললে, সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষিত হবে না। মানবাধিকার নষ্ট হবে। পরিবেশের ক্ষেত্রে পুরো বিশ্বেই ক্ষতির মুখোমুখি রয়েছে। এটা মানবতার জন্য বড় বাধা।
‘দূষণ আর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বসে থাকবার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। কিন্তু, এটা একা এক দেশের পক্ষে মোকাবিলা করা সত্যি দুষ্কর। নতুন প্রজন্মের সুরক্ষা দিতে কিছু একটা করতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের অধিকার রক্ষা করতে হলে, পরিবেশের সুরক্ষা দিতে হবে। অভিযোজন অনেক ব্যয়বহুল। তুরাগ নদী নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা একটি বড় মাইলফলক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ, ক্ষতিগ্রস্ত দেশ গুলোর জন্য কথা বলা। স্বপ্ল মেয়াদি, মধ্যম মেয়াদি উদ্যোগ এখনই বাস্তবায়নে যাওয়ার সময়। রাজনৈতিক সদিচ্ছার বড় অভাব খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে গতানুগতিক নয়, নতুন কৌশলে এগুনোর দরকার। নিউ নরম্যালিটি এড়ানোর কোন সুযোগ নেই।’
কার্বন নিঃসরণ সম্পর্কে এক প্রশ্নে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু দেশ দ্বায়িত্বশীল। আবার কারো মধ্যে কোন উদ্বেগ নেই। কীভাবে আমরা সংগঠিত করবো, তহবিল যোগাড় করবো, সেটা এখন গুরুত্বপূর্ণ। সকল চুক্তি, সমঝোতার যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার।
‘কোনো কোনো দেশ বড় ধরনের কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। শুধু মানুষ এটা করছে, তা নয় বায়োলজিকাল কার্বন নিঃসরণ আছে। সবাইকে দ্বায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে। কোনো চুক্তিই আলোর মুখ দেখেনি। এটা হলে,এ বিশ্বকে কতটা সুরক্ষা দেয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘একটি দেশ নিজে দায়ী না হয়েও যখন তাকে ভার্নারেবল কান্ট্রি বলা হয়, তখন সত্যি তা বড় হতাশাজনক। সিলেট এবার বিশাল ফ্লাশ ফ্লাড হয়েছে। যা কোনদিনই হয়নি।
‘আবার তিন সপ্তাহে মধ্যে, অতি খরা, অতি বন্যা দেখার অভিজ্ঞতা এ দেশের মানুষের আছে। কুড়িগ্রামে এটা হয়েছে। ফরিদপুরে মানুষ বৃষ্টির অভাবে পাঠ পচাতে পারছে না। এটা এবারই প্রথম হলো।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্যারিস চুক্তিতে সব দেশ কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্লিন এনার্জির কমিটমেন্ট করেছিল। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ মানুষকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। জার্মানির মতো দেশ কয়লাবিদ্যুৎ এ ফিরে আসছে।’
বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মানবতার জন্য, জলবায়ুর পরিবর্তন এখন বড় একটি হুমকি। বৈশ্বিক সম্প্রদায় জলবায়ু তহবিল গঠনে উদাসিন্যতা দেখিয়ে আসছে। সবার মধ্যে মানসিকতার পরিবর্তন এনে একটি ঐক্য মতে পৌঁছাতে হবে নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে। এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস আনতে জাতিসংঘের মত সংস্থাকে সক্রিয় ভূমিকা নিতেই হবে।’
আরও পড়ুন:ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা অবৈধ সম্পদ ও মানিলন্ডারিং মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তিন ব্যাংক কর্মকর্তা।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে বুধবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ, সিটি ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ খান ও রেবেকা সুলতানা সাক্ষ্য দেন।
তাদের সাক্ষ্য শেষে আগামী ৩১ আগস্ট নতুন তারিখ দিয়েছে আদালত।
এ নিয়ে মামলাটিতে ৩৯ জনের মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য নিল আদালত।
বুধবার আদালতে সেলিম প্রধানের সঙ্গে তার রুশ স্ত্রী আনা প্রধান দেখা করেন।
সেলিম প্রধানের পক্ষে তার আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম জামিন আবেদন করলে ৩১ আগস্ট জামিন শুনানির তারিখ দেন বিচারক।
৫৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার বাদী হয়ে সেলিমকে আসামি করে মামলাটি করেন।
মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছিল।
২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলাটির তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ ২৮৮ টাকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ২১ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪৫ হাজার টাকা থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, দুর্নীতি ও ক্যাসিনোর মাধ্যমে সেলিম ৫৭ কোটি ৪১ লাখ ৪৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার। অর্জিত ২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পাচার করেছেন থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে।
সেলিম জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং পেপার্সের চেয়ারম্যান। এই কোম্পানিতে তার ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৬৯ হাজার শেয়ারের বিপরীতে এখানে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে ৬৯ লাখ টাকা।
তবে সেলিমের নামে শেয়ার মানি ডিপোজিট পাওয়া গেছে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫০ টাকা। এ টাকা তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ। প্রিন্টিং পেপার্স কোম্পানি ২০১০ সালে মুনাফা করে ২৯ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৩ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে মুনাফা করে এক কোটি ৪৬ লাখ ২১ হাজার ৭২ টাকা। এখান থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে আট কোটি টাকা ঋণ নেন বলে সেলিম তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন।
তবে এই কোম্পানি থেকে কীভাবে ঋণ গ্রহণ করেছেন, তিনি এ-সংক্রান্ত কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পে ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার চাপায় নিহত পাঁচজনের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
জনগণের নিরাপত্তায় বিগত ৫ বছর ধরে বিআরটি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাও ৬০ দিনে মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
আদেশের পরে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল ও ডাইরেকশন দিয়েছেন।
‘রুলে নিহতদের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে। পাশাপাশি বিআরটি প্রজেক্ট গত পাঁচ বছরে জনগণের নিরাপত্তার জন্য কী কী করেছে তা আগামী ৬০ দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে।’
সড়ক ও জনপথ সচিব, বিআরটি এর চেয়ারম্যানসহ ৫জন বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত সোমবার বিকেলে উত্তরার জসিম উদ্দীন মোড়ে বিআরটি প্রকল্পের একটি বক্স গার্ডার ক্রেনে করে গাড়িতে তোলার সময় সেটি পিছলে পড়ে যায় চলন্ত একটি প্রাইভেট কারে। এই ঘটনায় পাঁচ জনের প্রাণহানি হয় ঘটনাস্থলেই। গাড়িতে থাকা নব দম্পতি বেঁচে যান কেবল।
এই দুর্ঘটনায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অবহেলার বিষয়টি প্রকাশ পায়। এত ভারী একটি বস্তু সমানোর সময় সেখানে নিরাপত্তমূলক যেসব পদক্ষেপ নিতে হতো, তার কিছুই করা হয়নি। সেখানে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়নি, যেটি করলে এই প্রাণহানি এড়ানো যেত।
যে গাড়িতে বক্স গার্ডারটি তোলা হচ্ছিল, তার একেবারে পাশ ঘেঁষে স্বাভাবিকভাবেই চলছিল সড়কের অন্যান্য গাড়ি। তাদেরকে সাবধান করার কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি।
এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায় খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন সচিব। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত গোটা প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাকারিয়া খান জনস্বার্থে বুধবার সকালে রিট করেন।
আরও পড়ুন:স্লিভলেস টপ পরা এক তরুণীকে নরসিংদী রেলস্টেশনে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মার্জিয়া আক্তার শিলাকে জামিন দেয়ার সময় হাইকোর্টের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মার্জিয়ার আইনজীবী মো. কামাল হোসেনের বরাতে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শুনানির সময় আদালত দেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে তরুণীর পোশাক সঙ্গতিপূর্ণ কিনা- সেই প্রশ্ন তুলেছে। ওই তরুণী যে পোশাক পরেছিলেন সেটি দেশের সবচেয়ে ‘ফাস্ট এরিয়া’ গুলশান-বনানীতেও কোনো মেয়ে পরে রাস্তায় বের হন না।
বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার এ শুনানির পর মার্জিয়া ছয় মাসের জামিন পান।
ঘটনার পরদিন বুধবার বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার বিষয়টি হাইকোর্টের একই বেঞ্চের নজরে এনেছেন মার্জিয়ার আইনজীবী কামাল হোসেন। আদালতের কাছে কামাল হোসেনের আর্জি ছিল, ‘ফেসবুকে বাজে মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।’
আদালত ফেসবুকে মন্তব্যকারীদের বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে স্ক্রিনশট জমা দিতে বলেছে।
পাশাপাশি হাইকোর্ট বেঞ্চটির জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘আমরা তো আদেশে পোশাক নিয়ে কিছুই লিখেনি, আমরা ভিডিও দেখে আইনজীবীদের কাছে শুধু জানতে চেয়েছি।
‘ভিডিও দেখে রাষ্ট্রের কাছে জানতে চেয়েছি, এমন ড্রেস পরে এমন গ্রাম এলাকায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কিনা।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. কামাল হোসেনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মাদ আবুল হাশেমও ফেসবুকের একটি স্ক্রিনশট উপস্থাপন করেন। তিনি মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেন।
আইনজীবী কামাল হোসেন পরে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালত শুনানিকালে যেসব প্রশ্ন করেছেন, মন্তব্য করেছেন, সেটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় আদালত সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আদালত অবমাননা করা হয়েছে।
‘তাদের বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে আদালতের নজরে আনি। আদালত আরও সুনির্দিষ্ট করে বিষয়গুলো নিয়ে যেতে বলেছেন।’
আইনজীবী কামাল হোসেন দাবি করছেন, তার মঙ্গলবারের বক্তব্য সঠিক। তরুণী যে পোশাক পরেছিলেন সেটি কোনো সভ্য দেশের পোশাক হতে পারে কিনা- সেই প্রশ্ন আদালত তুলেছে। তবে কামাল হোসাইনের মতে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করার সুযোগ নেই।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল আমি আদালতের যে বক্তব্য গণমাধ্যমে বলেছি, তা তো বলেছি। কিন্তু এটি নিয়ে আদালতকে হেয় করে ফেসবুকে মন্তব্য করা ঠিক নয়। আদালতের আদেশ কারও বিরুদ্ধে গেলে তিনি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। তার মানে এই নয় যে, আদালতকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহনকারী মৈত্রী বাসের চাকা পাংচার হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আইল্যান্ডের ওপর উঠে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এতে তিনজন গুরুতর আহত আর ৭ জন কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে দাবি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থীর। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় যাত্রাবাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে।
বাসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী শিশির চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের মৈত্রী বাসটি নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। বাস যখন যাত্রাবাড়ীতে তখন এটির সামনের একটা চাকা পাংচার হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আইল্যান্ডের ওপরে উঠে যায়। এই ঘটনায় দুই-চারজন গুরুতর আহত আর ৭ জন সামান্য আঘাত পেয়েছে।’
শিশির বলেন, ‘আমাদের যিনি ড্রাইভার ওনার হাত হয়তো ভেঙে গেছে। শিক্ষার্থীরা তাকে এক্স-রে করানোর জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেছে।’
শিশির দাস বলেন, ‘আমাদের ড্রাইভার চাকা চেঞ্জ করে দেয়ার জন্য পরিবহন অফিসে তিনবার আবেদন করেছেন। কিন্তু এটা গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যেখানে অ্যাকসিডেন্ট হইছে, সেখানে মাওয়ার ইলিশ বাসের কাউন্টার। তারা বলেছে, এই চাকাটা তিন থেকে চার বছর আগে ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। চাকাটার খাঁচ ক্ষয় হয়ে গেছে, ক্রিজ ছিল না। এ জন্যই অ্যাকসিডেন্টটা ঘটেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার কামরুল হাসান বলেন, ‘ড্রাইভার আমার কাছে চাকার জন্য আবেদন করেছেন। এটি যাচাই-বাছাই করার জন্য একটু সময় লাগে। গত রোববার তার জন্য চাকাটা অ্যাপ্রুভ হয়েছে। কিন্তু এখনও চাকা লাগানো হয়নি। টেকনিক্যালে যারা আছেন তারা চাকা লাগানোর কাজ করেন।’
কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের পরিবহনে কখনো এই ঘটনা ঘটেনি। আজকে দুর্ভাগ্যক্রমে এই ঘটনা ঘটেছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরায় বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের জন্য এক কোটি করে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাকারিয়া খান বুধবার জনস্বার্থে রিটটি করেন।
রিটকারী আইনজীবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উত্তরায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যেকের জন্য ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু নির্দেশনা চেয়েছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের কাজের শুরু থেকে কতটা নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সারা দেশে যেখানে এ ধরনের নির্মাণকাজ হচ্ছে, তাতে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, সেটি জানাতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।’
রিটে সড়ক ও জনপথ সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যানসহ ৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। আদালত শুনানির জন্য দুপুর ২টায় সময় ঠিক করে দেয়।
গত সোমবার বিকেলে উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচ আরোহী নিহত হন।
গাড়িটি থেকে দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন ২৬ বছর বয়সী হৃদয় ও ২১ বছর বয়সী রিয়ামনি, যাদের বিয়ে হয়েছে গত শনিবার। সোমবার ছিল বউভাত।
হৃদয়ের বাড়ি রাজধানীর কাওলায়। বউভাত শেষে কনের বাড়ি আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন তারা। ছেলের বাবা রুবেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
রুবেল ছাড়াও মৃত্যু হয়েছে কনের মা ফাহিমা বেগম, তার বোন ঝরনা বেগম, ছয় বছর বয়সী শিশু জান্নাত ও দুই বছর বয়সী জাকারিয়ার।
জামালপুরে মঙ্গলবার রাতে নিহত চারজনের দাফন হয়েছে। আর বুধবার সকালে মেহেরপুর সদরের রাজনগর গ্রামে দাফন হয় রুবেলের।
ওই ঘটনায় গত সোমবার রাতে নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরনা বেগমের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন।
মামলায় ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ নানা ইস্যুতে সরকারবিরোধীদের রাজপথে একের পর এক কর্মসূচির মধ্যে এবার মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আগস্টে শোকের কর্মসূচি ছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচি সচরাচর পালন না করলেও একই দিনে দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়নে জমায়েত করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। উপলক্ষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার প্রতিবাদ।
বুধবার সারা দেশে এই বিক্ষোভে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ছবি
কেন্দ্রীয়ভাবে বিকেল ৪টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করবে দলটি। মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা-প্রেস ক্লাব ও জিরোপয়েন্ট হয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে সেটি।
এতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেবেন।
আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি দৃশ্যত রাজপথে সংগঠনকে সক্রিয় করার পদক্ষেপ।
লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে বিএনপি ও সমমনারা যখন একের পর এক বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে, সে সময় নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নামার তাগিদ দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গত ১১ আগস্ট এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের এই কর্মসূচি নিয়ে বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। আমরা রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছি। তারা যেভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আমরা রাজপথ ভুলে গেছি। আমরাও আছি, অচিরেই রাজপথে দেখতে পাবেন।’
বিকেল ৩টা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিক্ষোভ কর্মসূচিতে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরও অংশ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।’
দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, এই বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যত মাঠে শক্তি প্রদর্শনের জন্য নামছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা গরম বক্তব্য দিচ্ছেন, হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন। একাধিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথেও নেমেছে। পাশপাশি অন্যান্য বিরোধী দলগুলোও রাজপথে সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালন করছে। আওয়ামী লীগ এসবের জবাব দিতে চায়।’
কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি পালন করে থাকে। তবে এবার এ কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করার জন্য সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের মশাল মিছিল। ফাইল ছবি
‘দল থেকে দেশব্যাপী জেলা, মহানগর, উপজেলা পর্যায়ে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শোকের মাসে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে না। কিন্তু অনেকের হুমকি-ধমকি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তাই আমরা আগস্ট শেষে রাজপথে নামব। আর আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি গুরুত্ব দিয়ে পালনের জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য