দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের জাঁতাকলে থেকে বাংলাদেশ যখন পরমুখী, আত্মবিশ্বাস যখন তলানিতে, তখনই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণায় বাঙালি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই পদ্মা সেতু শুধু ইট-কাঠের স্থাপনা হিসেবে নয়, দেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
পদ্মা সেতু দিয়ে আসা ১৯ জেলার যানবাহন ও পণ্য পরিবহনকে সহজ করতে ঢাকাকে ঘিরে রিংরোড নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সায়েদাবাদ বা কাঁচপুরসহ ঢাকা শহরে চারটি কাঁচাবাজার নির্মাণ করে পণ্য পরিবহনকে সহজ করার কথাও জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোববার সকালে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান। এদিন বার্ষিক কর্মসম্পাদন পুরস্কার ২০২২ এবং শুদ্ধচার পুরস্কার ২০২২ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে আমাদের ওপর একটা বদনাম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। শুধু সরকার বা রাষ্ট্রের ওপরে না, এমনকি আমার পরিবার, আমার ছোট বোন, আমার ছেলে-মেয়ে, বোনের ছেলে কেউ কিন্তু বাদ যায়নি। আমার মন্ত্রী, সচিব, উপদেষ্টা, প্রত্যেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল, একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে।’
কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে বিশ্বাস করতেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘একটা পর্যায়ে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। এটা আসলে আমাদের মতো দেশে অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি। বা বিদেশেও অনেকের পক্ষে এটা মেনে নেয়া সম্ভব হয়, আমরা কী পারি।
‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন চলাকালীন আমাদের এত বেশি পরনির্ভরশীল করে ফেলা হয়েছিল যে আমাদেরও যে একটা শক্তি আছে, স্বকীয়তা আছে বা আমাদের কর্মক্ষমতা আছে বা চিন্তাচেতনা আছে, সেটাই যেন মানুষ ভুলতে বসেছে।
‘এটাই সব থেকে দুর্ভাগ্যের। মানুষ যখন এ ধরনের ভুলে যায় বা নিজের শক্তি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস হারায় সে জাতিকে টেনে তোলা খুব কষ্টকর। তবে বাঙালি জাতি সম্পর্কে আমি এটাই বলব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণে যে কথা বলেছিলেন যে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না এ কথা তিনি বলে গিয়েছিলেন এ জন্য, তিনি বাংলার মানুষকে চিনতেন। আমিও তার কন্যা হিসেবে অন্তত তার পাশে থেকে মানুষকে কিছুটা চেনার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সাহস নিয়ে বলেছিলাম নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু আমরা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে সেই পদ্মা সেতু আমরা করতে পেরেছি। এটা শুধু একটা ইট, কাঠ বা স্টিল বা কংক্রিটের একটা স্তম্ভ না বা স্থাপনা না, এটা আমাদের আত্মমর্যাদা। আত্মমর্যাদার একটা নিদর্শন। আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি।’
বছর খানেকের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাই আমি মনে করি, ওই একটা সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিল এবং বিশ্বদরবারে আজকে আর কোনো দেশের জনগণের কাছে কোনো বাঙালিকে মাথা নিচু করে চলতে হবে না। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে আমরা চলব।’
বাংলাদেশ তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘উন্নত দেশ পারবে তা না, আমরাও পারি। ইনশাল্লাহ উন্নত দেশে একদিন আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। এটাই আমাদের বিশ্বাস, সেটা আমি করতে পারব।’
পদ্মা সেতুতে যান চলাচল ও পণ্য পরিবহন
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, এখন দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রচুর পণ্য আসবে। আমি কিন্তু এর পূর্বে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, শুধু কারওয়ান বাজার আমাদের একটা হোলসেল মার্কেট কাঁচা শাকসবজি, মাছের জন্য।
‘এখানে আমরা ঢাকা শহরে আমিনবাজারের ওইদিকে, মহাখালী এবং সায়েদাবাদের ওইদিকে অথবা কাঁচপুরে আর পশ্চিম দিকে আরেকটা–চারটা জায়গায় চারটা কাঁচাবাজার নির্মাণের একটা সিদ্ধান্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চল থেকে যে পণ্যগুলো আসবে, সেগুলো কাঁচপুরের ওখানে একটা ভালো কাঁচাবাজার করে সেগুলো সেখানেই যেন সংরক্ষণ করে সরবরাহ করতে পারি সেই ব্যবস্থাটা নেয়ার কথা ছিল, জানি না সেটা কতদূর বাস্তবায়ন হয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে ঢাকা শহরে যে চাপটা আসবে সেটা যেন না থাকে, সেটা আমাদের দেখতে হবে।’
পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে আসা ১৯ জেলার যানবাহন যেন ঢাকা শহরের ওপরে বাড়তি চাপ তৈরি না করে সেই ব্যবস্থাপনা দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করারও তাগিদ ছিল প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের পদ্মা সেতু থেকে যে বিশাল ট্রাফিক আসবে, সেটা তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য আমাদের ঢাকাকে ঘিরে যেটা রিংরোড করা, তার ব্যবস্থাটা করা। কিছু কিছু জায়গায় অলরেডি কাজ শুরু হয়েছে। সে ধরনের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। যাতে করে আমরা আমাদের পণ্য পরিবহন, বাজারজাতকরণ এবং মানুষের চলাচল যাতে সহজ হয়, সেই ব্যবস্থাটা করা।’
চলতে হবে মাথা উঁচু করে
জনপ্রশাসনে কর্মরত সবাইকে মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দেশের উন্নয়নের গতিধারা সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব সময় নিজেকে একটা মর্যাদাশীল রাষ্ট্র এবং মর্যাদাশীল জাতির একজন সদস্য হিসেবে, এটা মাথায় রেখে আমাদের যা কিছু যতটুকু সম্পদ আছে সেটাই কাজে লাগিয়ে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি দেশকে, সেই চিন্তা থেকেই কিন্তু সবাইকে চলতে হবে।’
পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে সবারা উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে আমি শুধু সেটুকুই চাই।’
বন্যা নিয়েও সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বন্যার প্রকোপ থাকবে। বন্যা নিয়ে আমাদের বাঁচতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা আমাদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে, চলতে হবে। আমাদের মানুষের জীবন ক্ষয় যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সব পরিকল্পনা।’
বিশ্বজুড়ে কঠিন সময়
করোনার অভিঘাত থেকে ঘুরে না দাঁড়াতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব থেকে একটা কঠিন সময় গেল, সেটা হলো এই করোনা মহামারি। আর করোনা মহামারি যেতে না যেতে এখন আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এটি সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। আর আমাদের মতো দেশ সেখানে তো আরও বেশি এটির প্রভাব পড়েছে।
‘তারপর ও আমি বলব, ধন্যবাদ জানাব প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়, আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলে এই অবস্থা থেকেও দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।’
ইশতেহার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার
জনগণের সামনে যে ইশতেহার ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ, তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যটা হলো আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছি, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা রাজনীতি করি। আমাদের দল আছে। আমরা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, একটা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করি।
‘ইশতেহারে আমরা এ দেশকে কীভাবে আর্থসামাজিকভাবে উন্নত করব, সেই নির্দেশনা বা সেই কর্মপরিকল্পনারই একটা কাঠামো থাকে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, কখনও আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারটা কিন্তু ফেলে দিইনি। প্রতিবার বাজেট করার সময় সেটাকে অনুসরণ করে কিন্তু আমাদের কর্মপরিকল্পনা এবং কতটুক আমরা সফল করতে পেরেছি, কতটুকু আরও করা বাকি সেটাও কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট করি। আমাদের দলের একটা ঘোষণাপত্র থাকে, গঠনতন্ত্র থাকে, সেখানে কতগুলো দিকনির্দেশনা থাকে সেটা আমরা কিন্তু বাস্তবায়ন করি।’
সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার পুরোটাই তৃণমূল পর্যায় থেকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এভাবে চিন্তা করিনি যে শুধুমাত্র ধনী থেকে ধনী হোক। আমরা চেয়েছি একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে অবহেলিত মানুষগুলো...আমাদের লক্ষ্যই ছিল এই মানুষগুলোর ভাগ্য আমাদের পরিবর্তন করতেই হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর পান্থপথের ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের আবাসিক হোটেলে বুধবার সকাল ৮টায় আসেন ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা রেজাউল করিম। সঙ্গে ছিলেন সদ্য এমবিবিএস পাশ করা জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীক। হোটেলের কক্ষটি বাইরে থেকে তালা দিয়ে সাড়ে ১০টার দিকে বেরিয়ে যান রেজাউল। এরপর তিনি ফিরে আসেননি।
হোটেলটি থেকে বুধবার রাতে জান্নাতুলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে কলাবাগান থানা পুলিশ। এরপর খোঁজ শুরু হয় রেজাউলের। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে র্যাব চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে রেজাউলকে গ্রেপ্তার করে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তবে জান্নাতুলকে হত্যার কারণসহ রহস্যজট কাটেনি প্রাথমিক তদন্তে।
হোটেল স্টাফদের দেয়া তথ্য ও ফুটেজ বিশ্লেষনে জানা যায়, রেজাউল ও জান্নাতুল হোটেলের চতুর্থ তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষে ছিলেন। রেজাউল বের হয়ে যাওয়ার পর কক্ষটি দীর্ঘ সময় বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। দীর্ঘসময় কক্ষ তালাবদ্ধ দেখে রাত ৯টার দিকে কলাবাগান থানা পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ ওই কক্ষের বিছানা থেকে গলাকাটা অবস্থায় জান্নাতুলের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা শফিকুল আলম কলাবাগান থানায় মামলা করেছেন। আসামি করা হয়েছে রেজাউল ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের। জান্নাতুলকে কেন হত্যা করা হয়েছে, সে ব্যাপারে ধারণা দিতে পারেননি স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রেজাউল করিম রেজাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব জান্নাতুল হত্যার বিস্তারিত তথ্য জানাবে।
পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহ উদ্ধারের পর ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন করা হয়। ওই হোটেলের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ভিকটিম ও আসামি ঘটনার আগেরদিনও স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে যান। তারা বেলা ১টা থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। বুধবার সকাল আটটায় তারা আবার যান সেখানে। কিন্তু দুই ঘণ্টা পর একা বেরিয়ে যান রেজাউল।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে নারী চিকিৎসককে হত্যা করা হয় বলে ধারণা মিলেছে। তবে কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা জানা যায়নি। রেজাউলের সঙ্গে জান্নাতুল দুই দফা হোটেলটিতে যান, সে বিষয়ে প্রমাণ মিলেছে।
‘রেজাউলকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এ দুজনের রুমে ঢোকার পর অন্য কাউকে সেখানে যেতে দেখা যায়নি। রেজাউল কক্ষটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে বেরিয়ে যান।’
নিহত জান্নাতুলের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী, রেজাউল করিমের বাড়ি কক্সবাজার। তাদের দুজনের সম্পর্ক পরিবার মেনে নেয়নি বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে জান্নাতুলের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:করোনার মতো মহামারিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে রোটারিসহ মানবিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বাংলাদেশ সফররত রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট জেনিফার ই জোনস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করতে এলে রাষ্ট্রপতি এই আহ্বান জানান।
জেনিফার ই জোনস এ সময় রোটারি ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। করোনা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত কর্মসূচিরও প্রশংসা করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ গোটা বিশ্বকে অনেক বেশি অসহনীয় করে তুলছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। সংকট মোকাবিলায় রোটারিয়ানদের আরও বেশি অবদান রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দেশের সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে অংশীদারত্ব বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন রাষ্ট্রপতি। স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সরকারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সমাজের বিত্তবানদের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব সংযুক্ত মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সংবাদ সংগ্রহ করার সময় রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দুই সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, কামরাঙ্গীরচরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাওয়া সাংবাদিক হাসান মিসবাহ ও সাজু মিয়াকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। তাদের টুঁটি চেপে ধরা মানে সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরা। জড়িতদের শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।
বক্তারা বলেন, দুর্নীতিবাজরা বার বার সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা করে তাদের দমিয়ে রাখতে চায়। সরকার গণমাধ্যম-বান্ধব হলেও নির্যাতনকারীদের বিচারের বিষয়ে আন্তরিক নয়।
হাসান মিসবাহ ও সাজু মিয়ার ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্য এসআই মিলনকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি গ্রেপ্তারেরও দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুরে কামরাঙ্গীরচরে এসপিএ রিভারসাইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে ভুয়া ডাক্তারের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহের সময় হামলার শিকার হন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক হাসান মিসবাহ ও ক্যামেরাপারসন সাজু মিয়া। এ ঘটনায় পরদিন হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়। ওই মামলায় এসপিএ হাসপাতালের মালিক উসমানি ও জাহিদসহ গ্রেপ্তার চারজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেল থেকে নারী চিকিৎসকের গলা কাটা দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এক যুবককে আটক করেছে র্যাব।
রেজাউল করিম নামের যুবককে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
রাজধানীর পান্থপথের ‘ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট’ নামের হোটেল থেকে বুধবার রাতে মরদেহটি উদ্ধার করে কলাবাগান থানা পুলিশ।
পরে পুলিশ জানায়, ২৭ বছর বয়সী ওই চিকিৎসকের নাম জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীক। তিনি ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি কোর্সে পড়ছিলেন।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রেজাউল নামের একজনের সঙ্গে উঠেছিলেন জান্নাতুল। হোটেলটির চতুর্থ তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষের বিছানার ওপর থেকে জান্নাতুলের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র্যাব জানায়, সন্দেহভাজন যুবক রেজাউলকে আটক করা হয়েছে। তাকে জান্নাতুল হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
আরও পড়ুন:সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা জমা রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ কখনও সুইজারল্যান্ডের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়নি বলে দেশটির রাষ্ট্রদূতের যে বক্তব্য রেখেছেন, তাকে সরাসরি মিথ্যা বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বক্তব্য দেবে জানিয়ে মন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসার পর তার মন্ত্রণালয় সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলবে। বলেছেন, ‘মিথ্যা বলে কারও পার পাওয়া উচিত নয়।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য বলেন।
তিনি বলেন, ‘সেটা তারা মিথ্যা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ফিন্যান্স সেক্রেটারি আমাকে আগে জানিয়েছিলেন, তারা তথ্য চেয়েছিলেন, তারা (সুইস ব্যাংক) উত্তর দেননি।’
সুইস রাষ্ট্রদূত যা বলেছিলেন
দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় সুইস রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড জানান, তার দেশের কাছে বাংলাদেশ কারও বিষয়ে তথ্য জানতে চায়নি।
তিনি বলেন, ‘তথ্য পেতে হলে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে আমরা সরকারকে জানিয়েছি, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তথ্যের জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আমরা যেকোনো ধরনের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও চুক্তি করতে পারি। ইতোমধ্যে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে সব তথ্য সরবরাহ করেছি।’
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের কত টাকা
সুইস ব্যাংক বলতে সুইজারল্যান্ডের কোনো একক ব্যাংককে বোঝায় না। সুইস নাশনাল ব্যাংক বলতে যে প্রতিষ্ঠানটি আছে, সেটি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশটির যেকোনো ব্যাংকে রাখা টাকাই সুইস ব্যাংকের টাকা হিসেবে আলোচনায় আসে।
গত জুনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সুইস ব্যাংকগুলোতে এখন বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার বেশি। টাকার অবমূল্যায়নে এই অঙ্ক এখন ৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে গত ১২ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে।
এই অর্থ জমা নিয়ে বরাবর তুমুল বিতর্ক হয় বাংলাদেশে। সমালোচকরা বলে আসছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ এটি।
অবশ্য বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে অবৈধ উপায়ে পাচার হওয়া অর্থ যেমন সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও দেশটিতে অর্থ জমা রাখেন। তাই সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের মোট অর্থের মধ্যে বৈধ-অবৈধ সব অর্থই রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব মেলে না এ কারণে যে, সাধারণত সুইস ব্যাংক অর্থের উৎস গোপন রাখে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন।
এই হিসাব প্রকাশের আগের বছর সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ ফেরত আনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এরপর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) সঞ্চয়কারী বাংলাদেশিদের নামের তালিকা চায় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব ব্যাংকে টাকা জমাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানাতে বলা হয়। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে দেয়া হয়নি।
সুইস ব্যাংকে অবৈধ ও কালো টাকা রাখা যায় না: রাষ্ট্রদূত
সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড কালো টাকা রাখার স্বর্গরাজ্য নয়। এই বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সুইস ব্যাংক অবৈধ অর্থকে কোনোভাবেই উৎসাহিত করে না। সুইজ ব্যাংক বিশ্বের একটি অন্যতম ব্যাংকিং ব্যবস্থা, আমাদের জিডিপির অন্যতম একটি বড় অংশ। সুইজ জাতীয় ব্যাংক প্রতি বছর বাংলাদেশি গ্রাহকদের বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকায় ব্যক্তিগত টাকা সংরক্ষণ হার বাড়ছে না, বরং কমছে।’
সুইস রাষ্ট্রদূতের এই মন্তব্য বাংলাদেশে আলোড়ন তুলেছে। বিএনপি অভিযোগ করছে, অর্থপাচারে সরকারদলীয় লোকেরা। তাই সরকার কারও নাম জানতে চায় না। কেন সরকার কারও নাম জানতে চায়নি, সেই প্রশ্ন রেখেছে হাই কোর্টও।
মিথ্যা বলে পার পাওয়া উচিত নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজকেও আমি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলেছি। উনি আগে ফাইন্যান্স সেক্রেটারিও ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, আমরা আগে তথ্য চেয়েছি, তারা কোনো রেসপন্স করেননি।
‘তখন আমি বলেছি, এটা আপনি সবাইকে জানিয়ে দিন। বিকজ এভাবে মিথ্যা বলে পার পাওয়া উচিত নয়।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেবে-বলেন এ কে আব্দুল মোমেন। বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আগে স্টেটমেন্ট দিক, বা ফিন্যান্স মিনিস্ট্রি আগে দিক, তারপর আমরা সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলব। কারণ, আমরা তো তাদের (সুইস ব্যাংক) কাছে কাউকে পাঠাই না।’
আরও পড়ুন:রাজধানীতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। আর তার প্রভাবে বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএনসিসির কার্যালয় নগর ভবনে এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সমন্বয় সভায় মেয়র আতিকুল বলেন, ‘চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এর ফলে যে অর্থনৈতিক বলয় গড়ে উঠবে তার সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে।
‘মেট্রোরেল, বিআরটি চালু হলে এর নিচের রাস্তা, ড্রেন, শাখা রোড, রাস্তার লাইট, পরিবেশ এগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ফুটপাত যথেষ্ট প্রশস্ত হতে হবে। ফুটপাতে মেট্রোরেল ও বিআরটির ল্যান্ডিং স্টেশন করা যাবে না। চলাচলের জন্য ফুটপাত সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত থাকবে।’
সভায় ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক, এমআরটি লাইন ১, ৫ ও ৬, বাস রুট ট্রানজিট ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, ডিটিসিএ ও ট্রাফিক বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে জোনভিত্তিক সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে শিল্পাঞ্চলগুলোর একেক এলাকায় একেক দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ভিন্ন ভিন্ন দিনে সাপ্তাহিক ছুটি পুনর্বিন্যাস করা হলো। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ শ্রম আইনের ক্ষমতাবলে এই ছুটি কার্যকর হবে।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সারা দেশকে সাতটি জোনে ভাগ করে সপ্তাহের সাত দিনই কোনো না কোনো জোনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দিনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যাবে। একইসঙ্গে শিল্প-কারখানায় নির্বিঘ্নে উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১১৪(২) ধারার ক্ষমতাবলে সারা দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রজ্ঞাপনের ২ নম্বর কলামে বর্ণিত বার বা সময়ে জনস্বার্থে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ধার্য করা হলো। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে সারা দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন, বৈদ্যুতিক এলাকা এবং এলাকার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কারখানা বন্ধের দিনের সার্বিক তথ্য জানতে ক্লিক করুন www.dife.gov.bd ওয়েবসাইটে।
জোনভিত্তিক এই ছুটির ব্যবস্থা নিয়ে এর আগে ৭ আগস্ট বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৈঠকে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমএ ও বিকেএমইএর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে সপ্তাহের একেক দিন একেক এলাকার শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। জোনভিত্তিক কারখানা বন্ধ রেখে দৈনিক ৪৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চাইছে সরকার। সপ্তাহের একেক দিন একেক এলাকার শিল্প-কলকারখানা বন্ধে সরকারের প্রস্তাব ব্যবসায়ীরা সানন্দে গ্রহণ করেছেন।’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমানে শিল্পাঞ্চলে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। একদিনে সব এলাকায় ছুটি না দিয়ে রেশনিংয়ের মাধ্যমে একেক দিন একেক এলাকায় ছুটি চালু করলে বিদ্যুতের কিছুটা সাশ্রয় হবে। লোডশেডিংও কিছুটা কমে আসবে। শিল্প-মালিকরা এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন।’
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে দিনে ৪৯০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। আমরা বলেছি যে কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশেই যেন এরকম ছুটি কার্যকর করা হয়।’
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম আহসান বলেন, ‘এক সময় যখন নিয়মিত লোডশেডিং হতো তখন এরকম ছুটির ব্যবস্থা চালু ছিল। সরকার চাচ্ছে এখন আবার সে ধরনের সূচি চালু করা হোক। তবে ডায়িং ও স্পিনিং ফ্যাক্টরিকে কিছুটা ছাড় দেয়া যায় কিনা সে বিষয়টি বিবেচনার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য