কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি পাওয়া গেছে। ৩ মাস ২০ দিনে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়ল সেখানে। এ ছাড়া জমা পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মোস্তফা নিউজবাংলাকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় গণনা শুরু হয়, চলে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। দিনভর গণনা শেষে ১৬টি বস্তায় পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা।
এর আগে সর্বশেষ গত ১২ মার্চ দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৪ মাস ৬ দিনে এই দানবাক্সগুলোতে জমা পড়েছিল ১৫ বস্তা টাকা। সেই বস্তাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে দিনভর গণনা শেষে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। এ ছাড়া জমা পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ নানা ধরনের জিনিস দান করেন বিভিন্ন জেলার অসংখ্য মানুষ।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল ৯টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। বাক্সগুলো থেকে টাকাগুলো প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। তারপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বস্তা থেকে টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। এতে অংশ নেন মাদ্রাসার ১১২ ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ ও মসজিদ কমিটির ৩৪ জন।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূইয়া নিউজবাংলাকে জানান, মসজিদে দানবাক্স রয়েছে আটটি। সেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ সহায়তা দিয়ে থাকেন। করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল।
পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের হাফিজিয়া মাদ্রাসার খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়।
তা ছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরও এই দানের টাকা থেকে সহায়তা করা হয়েছে।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে।
দানবাক্স খোলার পর থেকেই গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ। গণনা দেখতে এসেছেন মো. এনামুল হক হৃদয়। তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে হৃদয় বলেন, ‘মানুষের মুখে আর বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়া টাকার কথা শুনি। এবার নিজ চোখে দেখতে এসেছি। সত্যিই এত পরিমাণ টাকা একসঙ্গে কখনও দেখিনি। তা ছাড়া আমার জানামতে, কোনো মসজিদের দানবাক্সে এত পরিমাণ টাকা জমা পড়ে এমন খবরও শুনিনি।’
গণনার কাজে নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্য রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার দেশের বাড়ি নরসিংদী। পাগলা মসজিদের দানের টাকা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছি। কিন্তু এবার সৌভাগ্যক্রমে এই মসজিদে ডিউটি পড়েছে। গণনা দেখে খুব ভালো লাগছে। দানবাক্সে জমা পড়া অনেক টাকার ছবি তুলেছি। বাড়িতেও পাঠিয়েছি।
গণনায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন মেহেদি নিউজবাংলাকে জানায়, দানবাক্স খোলার পর থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী সেখানে থাকে।
মো. ইয়াসীন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী মসজিদের দানবাক্স কখন খোলা হবে অধীর আগ্রহ নিয়ে সেই অপেক্ষায় থাকে। একসঙ্গে এত টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালংকার দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগে। সবচেয়ে আনন্দ লাগে সবাই মিলে একসঙ্গে টাকা গুনতে।
পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মো. মকবুল হোসেন। তিনি এই মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন ২৭ বছর। তিনি বলেন, ‘শুধু মুসলিম না, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে এসে দান করেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দান করেন অনেকে। করোনার শুরুতে যখন জনসমাগম বন্ধ ছিল, তখনও অনেকে গভীর রাতে এসে দানবাক্সে দান করেছেন।’
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. গোলাম মোস্তফার তত্ত্বাবধানে সকাল ৯টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়।
এছাড়া কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ শামীম আলম, পৌর মেয়র ও মসজিদ কমিটির সদস্য সচিব মো.পারভেজ মিয়া, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উবায়দুর রহমান সাহেল, মাহবুব হাসান, সিরাজুল ইসলাম, সুশান্ত সিংহ, নাবিলা ফেরদৌস, ফাতেমা তুজ জোহরা, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা আনোয়ার পারভেজসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে অবস্থিত পাগলা মসজিদ।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগের পর প্রধান অভিযুক্ত কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে তাদের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বদলি করা হয় বলে জানান তিনি।
বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতর আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলায় বিষয়টি জানাজানির ভয়ে নারী হাজতি সীমাকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন করিমন নেছা।
ওই অভিযোগপত্রে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুন ও তহমিনা, কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাকে অভিযুক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নম্বর-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হাতকড়া পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। সেদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
অভিযোগ পেয়ে গত ১৬ এপ্রিল ঘটনার তদন্তে জেলা কারাগারে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান।
সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
শুক্রবার অভিযুক্তদের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তা নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সে দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৩ সদস্য।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিব) সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বার্তায় শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শুক্রবার নতুন করে আরও ১১ জন (জীম্বংখালী -৩ জন এবং হাতিমারাঝিরি-৮ জন) বিজিপি সদস্য আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ২৮৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঢোকা বিজিপি সদস্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
মন্তব্য