টিকিটের জন্য শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আব্দুর রহিম। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি না পেয়ে রাত কাটান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেই। শনিবার সকাল হতেই ফের শুরু হয় টিকিট পাওয়ার লড়াই।
লাইনে দাঁড়িয়ে ‘সোনার হরিণের’ অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের এ ছাত্র। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অবসান হয় প্রতীক্ষার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে অবশেষে টিকিট ওঠে আব্দুর রহিমের হাতে।
কাউন্টারের সামনের ভিড় ঠেলে হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন জয়পুরহাটের টিকিট পাওয়া এ শিক্ষার্থী; নিউজবাংলার কাছে প্রকাশ করেন অভিব্যক্তি।
‘এত দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পেলাম! টিকিট তো নয়, মনে হচ্ছে সোনার হরিণ দিচ্ছে তারা। এত ভিড়!’, ক্লান্তি আর শঙ্কা ভুলে এক চিলতে হাসি দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আব্দুর রহিম।
‘গতকাল বিকাল ৪টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। তারপরও যে পেলাম, এতেই আলহামদুলিল্লাহ!’, যোগ করেন এ শিক্ষার্থী।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শুক্রবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। দ্বিতীয় দিনের টিকিট বেচা শুরু হয় শনিবার সকাল ৮টা থেকে।
আগের দিনের মতো শনিবারও কমলাপুরে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বাড়ি ফেরার টিকিটের জন্য মরিয়া এসব মানুষের একজন দিনাজপুরের পার্বতীপুরের তানভীর।
অগ্রিম টিকিটের আশায় তিনিও লাইনে দাঁড়ান শুক্রবার বিকেলে। শনিবার সকালে টিকিট পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন তিনি।
নিউজবাংলাকে তানভীর বলেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাব। গতকাল বিকেলে এসেছি, যাতে টিকিট পাই। কারণ সড়কপথে যানজট, দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি। টিকিট পেয়ে ভালো লাগছে।’
শনিবার ভোররাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের মানিক। ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ৬ জুলাইয়ের কাঙ্ক্ষিত সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের টিকিট পান তিনি।
হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘টিকিট হাতে পাওয়ার পর কষ্ট ভুলে গেছি। এখন বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারব।’
লাইনে রেলের কর্মীও
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের অনুসন্ধান বিভাগের কর্মী আনিসুরও অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন টিকিটের লাইনে। রেলওয়ের শৃঙ্খলার উদাহরণ দিতে গিয়ে গর্বিত স্বরে তিনি বলেন, ‘রেলের কর্মী বলেই যে লাইনে না দাঁড়িয়ে টিকিট পাব, তা নয়। আমাদেরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিকিট নিতে হচ্ছে।’
কবে কোন দিনের টিকিট
টিকিট বিক্রি শুরুর দিন ১ জুলাই দেয়া হয় ৫ জুলাইয়ের টিকিট। ২ জুলাই দেয়া হচ্ছে ৬ জুলাইয়ের টিকিট।
৩ জুলাই ৭ জুলাইয়ের, ৪ জুলাই দেয়া হবে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। ৫ জুলাই দেয়া হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট।
ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। ওই দিন ১১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে।
এর বাইরে ৮ জুলাইয়ে ১২ জুলাইয়ের টিকিট, ৯ জুলাই ১৩ জুলাইয়ের, ১১ জুলাই ১৪ এবং ১৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে।
১১ জুলাই সীমিত পরিসরে কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে। ১২ জুলাই থেকে সব ট্রেন চলবে।
কোথায় কোন গন্তব্যের টিকিট
ঢাকায় ছয়টি স্টেশন এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মিলছে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে মিলছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে পঞ্চগড়ের ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট।
আরও পড়ুন:হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া র্যাবের এয়ার উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের প্রথম জানাজা হয়েছে।
রাজধানীর কালশীর বাইতুর রহমান জামে মসজিদে বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে তার জানাজা হয়।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে ইসমাইলের মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌঁছায়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় র্যাব সদরদপ্তরে ইসমাইলের দ্বিতীয় জানাজা হবে। সে জানাজায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
জোহরের নামাজের পর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসমাইলের তৃতীয় জানাজা হবে। সে জানাজা শেষে তার মরদেহ বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গত ২৭ জুলাই ঢাকার নবাবগঞ্জে প্রশিক্ষণ চলাকালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার শিকার হন র্যাবের এয়ার উইং পরিচালক ৫৪ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন। তাকে শুরুতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৫ আগস্ট সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ইসমাইলকে। ৬ আগস্ট তার মেরুদণ্ডের সফল অস্ত্রোপচার হয়, কিন্তু অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় তার অবস্থার অবনতি ঘটে। ৯ আগস্ট আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঈগল এক্সপ্রেসের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বুধবার বিকেলে বিচারক নওরিন করিম তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এই আসামিরা হলেন মো. সাগর ও মো. বাবু।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. হেলাল উদ্দিন এসব নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ৯ জন। অন্য ৪ জন রিমান্ডে আছেন।
পুলিশের বর্ণনায় যা ঘটেছিল
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোডে জনতা নামের খাবার হোটেলে যাত্রা বিরতি করে। সেখানে ৩০ মিনিটের মতো বিরতি শেষে বাসটি ফের ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
পথে তিনটি স্থান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজন করে মোট ১২ জন ডাকাত যাত্রীবেশে বাসে ওঠেন এবং পেছনের দিকে খালি সিটে বসেন।
যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) পার হওয়ার আধা ঘণ্টা পর (রাত দেড়টার দিকে) টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকায় ডাকাতরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছুরি, চাকুসহ দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসের চালককে সিট থেকে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে পেছনে সিটের নিচে ফেলে রাখে।
টহল পুলিশের কাছে ধরা পড়া এড়াতে তারা বাসটিকে গোড়াই থেকে ইউটার্ন করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে ডাকাত দল বাসটির জানালার পর্দা ও যাত্রীদের পরনের বিভিন্ন কাপড় ছিঁড়ে চোখ এবং হাত বেঁধে ফেলে।
পরে ডাকাতরা বাসের ২৪ যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বাসের এক নারীকে পাঁচ-ছয়জন ধর্ষণ করে।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসে অস্ত্রের মুখে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ছয় আসামিকে ৩ দিন করে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে বাকি চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক ফারজানা হাসানাত মঙ্গলবার বিকেলে আসামিদের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন।
আদালত পরিদর্শক তানবীর আহম্মদ নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া আসামিরা হলেন রতন, মান্নান, জীবন, দ্বীপ, বাবু ও সোহাগ।
আদালত পরিদর্শক বলেন, ‘আদালতে ছয়জনের ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। বিচারক তাদের ৩ দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন। বাকি ৪ আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’
আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়া আসামিরা হলেন, আসলাম , রাসেল, আলাউদ্দিন ও নাইম।
সোমবার রাতে গ্রেপ্তার ১০ জনকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে র্যাব।
গত মঙ্গলবার রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মধুপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন বাসের এক যাত্রী।
শুক্রবার ভোরে কালিয়াকৈরের টান সূত্রাপুর এলাকা থেকে আসামি আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সকালে গ্রেপ্তার করা হয় নুর নবীকে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ডাকাত দলের সদস্য রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
তারা শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন এ তিন আসামি।
রোববার রাতে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আরও ১০ আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পুলিশের বর্ণনায় যা ঘটেছিল
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোডে জনতা নামের খাবার হোটেলে যাত্রা বিরতি করে। সেখানে ৩০ মিনিটের মতো বিরতি শেষে বাসটি ফের ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
পথে তিনটি স্থান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজন করে মোট ১২ জন ডাকাত যাত্রীবেশে বাসে ওঠেন এবং পেছনের দিকে খালি সিটে বসেন।
যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) পার হওয়ার আধা ঘণ্টা পর (রাত দেড়টার দিকে) টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকায় ডাকাতরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছুরি, চাকুসহ দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসের চালককে সিট থেকে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে পেছনে সিটের নিচে ফেলে রাখে।
টহল পুলিশের কাছে ধরা পড়া এড়াতে তারা বাসটিকে গোড়াই থেকে ইউটার্ন করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে ডাকাত দল বাসটির জানালার পর্দা ও যাত্রীদের পরনের বিভিন্ন কাপড় ছিঁড়ে চোখ এবং হাত বেঁধে ফেলে।
পরে ডাকাতরা বাসের ২৪ যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বাসের এক নারীকে পাঁচ-ছয়জন ধর্ষণ করে।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের মধুপুরে আলোচিত ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০ জনকে আদালতে তোলা হচ্ছে।
জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে তাদের তোলার কথা রয়েছে।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ১০ জনকে আজ বিকেলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রুমী খাতুনের আদালতে তোলা হবে।’
সোমবার রাতে র্যাব গ্রেপ্তারকৃত ১০ জনকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন।
এর আগে গত রোববার রাতে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, সোহাগ মণ্ডল, খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু, বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস, মো. জীবন, আব্দুল মান্নান, নাঈম সরকার, রাসেল তালুকদার ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান। তাদের বয়স ১৮ বছর থেকে ৩২-এর মধ্যে।
বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। গত শনিবার রাতে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গত ২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোডে জনতা নামক খাবার হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। সেখানে ৩০ মিনিটের মতো বিরতি শেষে বাসটি ফের ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
পথে তিনটি স্থান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজন করে মোট ১২ জন ডাকাত যাত্রীবেশে বাসে ওঠেন এবং পেছনের দিকে খালি সিটে বসেন।
যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) পার হওয়ার আধাঘণ্টা পর (রাত দেড়টার দিকে) টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকায় ডাকাতরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছুরি, চাকুসহ দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসের চালককে সিট থেকে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে পেছনে সিটের নিচে ফেলে রাখে।
টহল পুলিশের কাছে ধরা পড়া এড়াতে তারা বাসটিকে গোড়াই থেকে ইউটার্ন করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে ডাকাতদল বাসটির জানালার পর্দা ও যাত্রীদের পরনের বিভিন্ন কাপড় ছিঁড়ে চোখ এবং হাত বেঁধে ফেলে।
পরে ডাকাতরা বাসের ২৪ যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বাসের এক নারীকে পাঁচ-ছয়জন ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় বাসের যাত্রী হেকমত আলী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
আরও পড়ুন:দিনাজপুর পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়ায় ফের কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের করোনা শনাক্ত হওয়ায় গত ৩০ জুলাই পরীক্ষামূলক কয়লা উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম সরকার নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কয়লা উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৭৫০ টন এবং পরের ২৪ ঘণ্টায় ৯৫০ টন কয়লা উত্তোলন করা গেছে।’
আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই পুরোপুরি উত্তোলন শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টন কয়লা উৎপাদন করা যাবে।’
গত ৩০ এপ্রিল ১৩১০ নম্বর কূপে খনির মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। পরে কূপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর পরিত্যক্ত কূপের ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি স্থানান্তর ও নতুন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসিয়ে ১৩০৬ নম্বর কূপ থেকে কয়লা উত্তোলন করার প্রক্রিয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
এ সময় বলা হয়েছিল, নতুন কূপ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন করে কয়লা উত্তোলনে সময় লাগবে প্রায় আড়াই মাস। পরে আগস্টের মাঝামাঝিতে কয়লা উত্তোলনের সময়ও নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ।
পরে সারা দেশে বিদ্যুৎ সংকট শুরু হলে বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত কূপের উন্নয়ন কাজ শেষ করে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২০ দিন আগেই ২৭ জুলাই থেকে খনির নতুন কূপে পরীক্ষামূলক কয়লা উৎপাদন শুরু হয়।
এরই মধ্যে খনিতে কর্মরত ৫২ জন চীনা ও বাংলাদেশি শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হলে ৩০ জুলাই কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম ফের বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে শ্লীলতাহানির চেষ্টার মামলার আসামি এ এইচ আব্দুল্লাহ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে সোমবার সকালে তিনি আত্মসমর্পণ করেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী।
আব্দুল্লাহ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট সিটি করেপারেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল খালিকের ভাতিজা। তিনি ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহানি চেষ্টার মামলার প্রধান এবং ওই মেডিক্যাল কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় করা মামলার অন্যতম আসামি।
এই দুই মামলায় আরও তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার আরও চার আসামি এখনো গ্রেপ্তার হননি।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে ৩১ জুলাই অর্থাৎ রোববার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসককে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ ওঠে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ সময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়।
ওই ঘটনার জেরে পরদিন সোমবার রাতে ইমন আহমদ ও রুদ্র নাথ নামের দুই শিক্ষার্থীর ওপর কলেজের পেছনে হামলা চালানো হয়। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সহপাঠীরা।
এর প্রতিবাদে সোমবার রাত থেকেই হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন।
খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তাসহ সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা। মধ্যরাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা মেডিক্যাল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, তাদের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দাবি জানান।
তাদের এসব দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে রাত ৩টার দিকে পরদিন বেলা ২টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। পরদিন দুপুরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার বিকেলে ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও শুরু করেন তারা।
দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে আটজনকে আসামি করে মঙ্গলবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ এবং মেডিক্যাল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ বাদী হয়ে আলাদা দুটি মামলা করেন।
দুই মামলার আসামিরা হলেন দিব্য, আব্দুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ৩ আগস্ট সকাল থেকে মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা, আর কর্মবিরতি চালিয়ে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে তারা বিক্ষোভ করে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। হাসপাতালের মূল ফটকও বন্ধ করে দেন তারা।
ওই রাতেই দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় করা মামলার ১ নম্বর আসামি দিব্য সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর ৪ আগস্ট কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন তারা।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলে নৈশ কোচে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের মধ্যে ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনও আছেন।
রোববার রাতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনসহ ডাকাত চক্রের ১০ জনকে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাব জানায়।
এর আগে আলোচিত এ মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন, রাজা মিয়া, মো. আব্দুল আউয়াল ও মো. নুরনবী। গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। ওইদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকরা জানান।
এ ঘটনায় বাসের যাত্রী কুষ্টিয়ার হেকমত আলী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল এক্সপ্রেসের একটি বাসে ডাকাতি ও এক নারী যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য