পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণের মানুষদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা, ঠিক বিপরীত চিত্র লঞ্চমালিক-শ্রমিকদের মধ্যে। তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ব্যাপক।
সেতু উদ্বোধন করার পর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলো যাত্রীসংকটে পড়েছে। প্রথম এক-দুই দিন যাত্রী কম থাকার বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দেননি লঞ্চসংশ্লিষ্টরা। ভেবেছিলেন, সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর সেটি দেখার জন্য বুঝি স্রোত সেদিকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ফাঁকা যাওয়ার পর রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন মালিক-শ্রমিকরা।
যাত্রীদের ফেরাতে ভাড়ায় ছাড় দিয়েও সুফল মিলছে না। গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর ভাড়া ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। তখন লঞ্চমালিকরা দাবি করছিলেন, তাদের পোষাচ্ছে না, সেই তারাই এখন লঞ্চের ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন অনেকটাই।
কিন্তু সড়কপথে অর্ধেক সময়ে যেখানে ঢাকায়-আসা যাওয়া করা যাচ্ছে, সেখানে নৌপথে যাত্রীর চাপ কমবে- এটা আগেই ধারণা করা হচ্ছিল। হয়েছেও তা।
ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ রয়েছে ২৪টি, তবে নিয়মিত দুই ঘাট থেকে চলে ১২টি। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই রুটের লঞ্চের কেবিন থাকত ‘সোনার হরিণের মতো’। সেখানে এখন যাত্রী নিতে হচ্ছে অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় করে।
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সুপারভাইজার সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ডেকের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২০০, সিংগেল কেবিন ৯০০, সিঙ্গেল এসি কেবিন ১ হাজার, ডাবল কেবিন ১ হাজার ৪০০, ডাবল এসি কেবিন ১ হাজার ৮০০ টাকা।
আগে ডেকের ভাড়া ছিল ৩০০, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ১০০, সিঙ্গেল এসি কেবিন ১ হাজার ২০০, ডাবল কেবিন ২ হাজার আর এসি ডাবল কেবিন ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা।
তবে ভাড়ায় এই ছাড় দিয়ে লাভ হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেখানে বৃহস্পতিবার যাত্রীচাপ বেশি থাকে, সেদিনও যাত্রী ছিল অর্ধেকের মতো। পদ্মা সেতু চালুর পর আমাদের লঞ্চগুলো ব্যাপক যাত্রীসংকটে পড়েছে।
একই চিত্র দক্ষিণের অন্য রুটেও
পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে বিলাসবহুল ৯টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করত উভয় ঘাট থেকে। সেই সংখ্যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. ইউনুস আশা করছেন, এই দুর্দিন থাকবে না। তিনি বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রী কিছু কম, এটা সত্য। তবে তা বেশিদিন থাকবে না। এখন আনন্দ-উল্লাস করতে কিছু যাত্রী পদ্মা সেতু দেখতে সড়কপথে ঢাকা আসা-যাওয়া করছে। আশা করি, ঈদের সিজনেই লঞ্চে যাত্রী আগের মতো স্বাভাবিক হবে।
সুন্দরবন-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার মেহেদি হাসান সুমন বলেন, ‘ আগে ডেক ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা, এখন নিচ্ছি ৩০০; কেবিন ছিল দেড় ও আড়াই হাজার টাকা, এখন নিচ্ছি ১ হাজার ও ২ হাজার টাকা। আগে কেবিন খালি থাকত না, এখন অনেক কেবিন খালি থাকছে। তবে ডেকের যাত্রী মোটামুটি ভালো আছে।’
আওলাদ-৭ লঞ্চের পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের ইনচার্জ আবদুল আজিজ বলেন, ‘লঞ্চের সংখ্যা কম, ভাড়াও কম।’
লঞ্চ চলাচলে সীমিত হয়েছে পিরোজপুরেও। আগে এ জেলা থেকে ঢাকার পথে প্রতিদিন তিন থেকে চারটি লঞ্চ চলত। এখন চলে একটি। মালিকপক্ষ বলছে, যাত্রী কম হওয়ায় ভাড়া দিয়ে জ্বালানির পয়সাও ওঠে না।
এই রুটের লঞ্চ রাজদূত-৮ লঞ্চের পরিচালক সোহাগ হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে তিনটা লঞ্চে প্রতিদিন যাত্রী হতো, এখন একটা লঞ্চ ভরতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আসলে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে তো তাই যাত্রী সড়কপথে বেশি যাচ্ছে। এ জন্য লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।’
ঝালকাঠি-ঢাকা রুটে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিকেলে লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে ঘাটে ভিড় নেই।
লঞ্চঘাট ইজারাদার খান এন্টারপ্রাইজের হুমায়ুন কবির সাগর বলেন, ' শুক্রবার যে কয়টি ঘাট টিকিট বিক্রি করেছি, তাতে স্টাফের বেতন উঠবে না। পণ্য আনা-নেয়াও কমে গেছে।’
সুন্দরবন-১২ লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজার হানিফ হাওলাদার জানালেন, শুক্রবার ঝালকাঠি থেকে ঢাকার পথে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে মোট ৯৭টি কেবিন রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি কেবিন বুকিং হয়। এর সাতটি ডাবল এবং ১১টি সিঙ্গেল।
কোরবানি ঈদের আগে আগে এই সময়ে শুক্রবারে কেবিন খালি থাকত না বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘ডেক যাত্রী ছিল ১১৩ জন, যা আগের তুলনায় ৭০ ভাগ কম। ব্যাপক লোকসান আমাদের।’
বৃহস্পতিবার ঢাকার উদ্দেশে ঝালকাঠি ছাড়ে ফারহান-৭। ওই লঞ্চেও একই অবস্থা।
যারা নৌপথ ব্যবহার করছেন তারা বলছেন, বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে লঞ্চে যাতায়াত সুবিধা। তাই লঞ্চে যাচ্ছেন। বাকিরা যাচ্ছেন সড়কপথে।
বরগুনা থেকে ঢাকা রুটে আগে একেকটি লঞ্চ ৪০০-৫০০ যাত্রী পেত। এখন ১০০ যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকা-বরগুনা, ঢাকা-আমতলী নদীপথে আটটি বিলাসবহুল লঞ্চ চলছে। এর মধ্যে ঢাকা-বরগুনা পথে পাঁচটি ও ঢাকা-আমতলী রুটে তিনটি।
আমতলী লঞ্চঘাটের টোল আদায়কারী হানিফ গাজী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন বেলা ২টার মধ্যে দেড় থেকে দুই শতাধিক যাত্রী ঘাটে টোল দিয়ে লঞ্চে উঠে বিছানা পেতে বসে থাকতেন। কিন্তু এখন ৭০-৮০ জন যাত্রী হয়। বৃহস্পতিবার এ ঘাট থেকে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে এমভি তরঙ্গ ঘাট ছাড়ে। শুক্রবার ইয়াদ লঞ্চও সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়।’
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বরগুনা নদীবন্দর থেকে এমভি পূবালী ও রাজহংস-৮ নামের দুটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শুক্রবার অবশ্য রাজারহাট-বি নামের একটি লঞ্চ ছেড়েছে।
এমকে শিপিং লাইনসের বরগুনা ঘাটের ব্যবস্থাপক এনায়েত মিয়া বলেন, ‘যাত্রী কম হওয়ায় আজ একটি লঞ্চ ছাড়া হয়েছে। লঞ্চটিতে ৮০-৯০ জন যাত্রী ছিল। এ লঞ্চে সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিনের সংখ্যা ১২৬। এর মধ্যে মাত্র ৪০টি কেবিন বুকিং হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের লঞ্চ চলাচলেই লস হয়।’
এই রুটের লঞ্চ শাহরুখ-২-এর মাস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার পর থেকে লঞ্চে যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে। এর প্রভাব বেশ কিছুদিন থাকবে। মাসখানেক পর যাত্রীসংখ্যা বাড়বে। কারণ সবাই পদ্মা সেতু দেখার জন্য এখন গাড়িতে করে ঢাকায় যাচ্ছে।’
এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চার দিন লঞ্চ বন্ধ ছিল যাত্রী কম থাকায়। পদ্মা সেতুর প্রভাব নদীপথে পড়বে কি না তা এখনই বলা যাবে না। কিছুদিন গেলে বোঝা যাবে।’
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘আমাদের টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আশা করছি অবস্থা এমন থাকবে না। কয়েক মাস পর ঠিক হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:দেশে বর্তমানে ৩০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। আর ১৮ দিনের পেট্রল ও ৩২ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে। এছাড়া দেশে যে অকটেন মজুত রয়েছে, তা দিয়ে ১৮ থেকে ১৯ দিনে চাহিদা মেটানো সম্ভব।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর পর বিপিসির ২০১৪ সালের পর থেকে মুনাফায় থাকা, বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের বিপুল পরিমাণ স্থায়ী আমানতের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজ কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিপিসির চেয়ারম্যান।
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দর লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করে। অকটেন প্রতি লিটার ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ ও পেট্রল ৮৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এই দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে বিপিসির বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছিল। গত কয়েক মাসে লোকসান ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: সাত বছরের মুনাফা ও স্থায়ী আমানতের ব্যাখ্যা দিল বিপিসি
দেশে উৎপাদন হলেও পেট্রল ও অকটেনের নাম বাড়ানোর বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্রুডের কারণে পেট্রল ও অকটেনের দাম বাড়ে। সুতরাং পেট্রল ও অকটেনের দাম কৌশলগত কারণে বাড়াতে হয়েছে।’
বর্তমানে দেশে ৩০ দিনের ডিজেল এবং ১৮ দিনের পেট্রল ও অকটেন মজুত আছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:শুধু ডলার নয়, টাকার বিপরীতে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দরও ছুটছে পাগলা ঘোড়ার মতো। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেট থেকে বুধবার ১ পাউন্ড কিনতে হাতে গুনে ১৫০ টাকা দিতে হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
তবে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-পাউন্ডের বিনিময় হার ছিল ১১৪ টাকা ৩৯ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে দরে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন করে তাকে আন্তব্যাংক রেট বা ব্যাংক রেট বলে। ব্যাংকগুলো এই দরের চেয়ে এক-দেড় টাকা বেশি দরে নিজেদের মধ্যে লেনদেন করে এবং গ্রাহকদের কাছে নগদ বিক্রি করে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কার্ব মার্কেটে ব্যাংক রেটের চেয়ে ৩৫ টাকা বেশি দামে পাউন্ড বিক্রি হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলো ২৫ টাকা বেশি দরে নগদ পাউন্ড বিক্রি করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে বুধবার ডলার-পাউন্ডের বিনিময় হার ছিল ১ ডলার ২২ সেন্ট। অর্থাৎ ১ পাউন্ডের জন্য লেগেছে ১ ডলার ২২ সেন্ট।
রুবায়েত ইসলাম সৌরভ উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য যাবেন, বেশ কিছু পাউন্ডের প্রয়োজন। বুধবার এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ঘুরে প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছিলেন না। দুপুর ২টার দিকে প্রতি পাউন্ডের জন্য ১৪৫ টাকা চাওয়া হয়। ৪টার দিকে সেই পাউন্ড ১৫০ টাকায় কিনেছেন সৌরভ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব প্রয়োজন ছিল। এতো টাকা দিয়ে পাউন্ড কিনতে হবে কখনই ভাবিনি। ভেবেছিলাম ডলারের দাম বেশি; এখন দেখছি পাউন্ডও পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ১৫০ টাকা দিয়েই কিনেছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোলাবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুধু ডলার নয়, পাউন্ডও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন বাজার আগে কখনও দেখিনি।’
মানি এক্সচেঞ্জে নজরদারি, পুলিশের অভিযান, দামে কারসাজির অভিযোগে ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে সরিয়ে দেয়া- কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর; কমছে টাকার মান।
পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটছে আন্তর্জাতিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম। সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে ২৫ টাকা বেশিতে এখন ১২০ টাকায় খোলাবাজারে কিনতে হচ্ছে মুদ্রাটি। দেশের ইতিহাসে এর আগে এই ঘটনা কখনও ঘটেনি।
গত ২৭ জুলাই খোলাবাজারে ডলারের দর উঠেছিল ১১২ টাকা। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির পর কয়েক দিন সেখান থেকে কিছুটা কমে ১০৮ টাকায় থিতু হয়।
কিন্তু চলতি সপ্তাহ থেকে আবার শুরু হয় ঊর্ধ্বগতি। সোমবার খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায়।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দর সেদিনও ছিল ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। পরদিন তা আরও ৩০ পয়সা বাড়িয়ে করা হয় ৯৫ পয়সা। এরপর দিন খোলাবাজারে আবার লাফ দেয় ডলার। এক দিনে বাড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা।
ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও বেশি দামে বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক বুধবার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা দরে। এসআইবিএল থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক ১০৪ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়। জনতা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা।
খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
ডলারের দৌড় থামাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও কমছে না মুদ্রাটির তেজিভাব, কাটছে না সংকট।
ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে কয়েক মাস ধরে। বেড়েই চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। কমছে টাকার মান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দুই মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ শতাংশের মতো; আর এক বছরে কমেছে ১২ শতাংশের বেশি।
বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’আনতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ মাস ৮ দিনে (১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট) বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ১৫০ কোটি (দেড় বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ হিসাবে এই ১ মাস ৮ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৪ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনোই এত কম সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে এত বেশি ডলার বিক্রি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
অথচ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন ও আমদানি ব্যয় কমায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরও পড়ুন:ডিজিটাল কানেক্টিভিটি পার্টনার গ্রামীণফোন তার গ্রাহকদের জন্য প্রথমবারের মতো ‘আওয়ারলি আনলিমিটেড ডেটা ক্যাম্পেইন’ চালু করেছে।
প্রতি ঘণ্টার জন্য আনলিমিটেড এ ডেটা ক্যাম্পেইনে থাকছে দুটি ডেটা প্যাক। এর একটি হচ্ছে- ২৩ টাকায় দুই ঘণ্টার জন্য আনলিমিটেড (সর্বোচ্চ ৮ জিবি) ইন্টারনেট এবং ৩৪ টাকায় ৩ ঘণ্টার জন্য আনলিমিটেড (সর্বোচ্চ ১২ জিবি) ইন্টারনেট।
এই প্যাক দুটি পেতে গ্রাহকদের ডায়াল করতে হবে *১২১*৩৩০৯# অথবা *১২১*৩৩১২# কিংবা ভিজিট করতে হবে মাইজিপি অ্যাপ।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের সিএমও মোহাম্মদ সাজ্জাদ হাসিব বলেন, ‘ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে আমাদের গ্রাহকরা যেন পছন্দমতো ইন্টারনেট প্যাক বেছে নিতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। গ্রাহকরা যেন সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের বৈচিত্র্যময় ডিজিটাল চাহিদা পূরণ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে আমরা সব সময় চেষ্টা করি।’
এই ইন্টারনেট প্যাক গ্রাহকদের বিভিন্ন ডিজিটাল চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সবকিছু সম্ভব করে তুলতে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিটিআরসির সবশেষ নিলামে গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ ৬০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম কিনেছে। এছাড়া ডিজিটাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে গ্রাহকদের উন্নত সেবাদানে প্রতিষ্ঠানটির দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফোরজি বিটিএস রয়েছে।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইউজ কেসসহ ফাইভজি ট্রায়াল পরিচালনা করে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণফোন বাংলাদেশে অত্যন্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশ হয়ে মেঘালয়ে গেছে পণ্যবাহী ট্রাক।
ভারতীয় পণ্য নিয়ে ট্রাকটি বুধবার দুপুরে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মেঘালয় প্রবেশ করে। এটি গত ১ আগস্ট কলকাতা থেকে জাহাজে করে মোংলা বন্দরে আসে।
প্রথমবারের মতো ভারতীয় পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের স্থলবন্দর ব্যবহার করা হলো। এই চালানে ছিল ইলেক্ট্রো স্টিল কাস্টিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৭০ প্যাকেজের ১৬ দশমিক ৩৮০ টন লোহার পাইপবাহী কন্টেইনার।
এই ট্রানজিট পর্যবেক্ষণে তামাবিল স্থলবন্দরে দুপুরে এসেছিলেন সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নীরজ কুমার জয়সওয়াল ও গৌহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার এবং মিশন প্রধান শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর এবং বন্দর কর্মকর্তারা।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে হয়ে যাওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইউজ অফ চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অফ গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি)’ চুক্তির আওতায় বুধবার পরীক্ষামূলকভাবে এদেশের বন্দর ও সড়ক ব্যবহার করা হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে একটি জাহাজ ছেড়ে আসার পর রোববার সকালে মোংলা বন্দরে নোঙর করে। সোমবার দুপুরে খালাসের পর দুটি কন্টেইনারের একটি ভারতের মেঘালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বুধবার সকালে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে আসে। আরেকটি কন্টেইনার কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসামে যাওয়ার কথা রয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চুক্তিটি হয়। প্রথম পরীক্ষামূলক চলাচল হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী নৌযান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।
সেখান থেকে স্থলপথে পণ্য আগরতলা নেয়া হয়েছিল। তখনকার পণ্য ছিল ডাল ও রড। কিন্তু করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় গত চার বছরে এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পরে ভারতের পক্ষ থেকে চারটি রুটে ট্রায়াল রানের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল।
আপাতত দুটি স্থলবন্দর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট দিতে রাজি হয় বাংলাদেশ। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মোংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ক চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে চারটি ট্রায়াল রানের প্রথমটি শুরু করেছে কলকাতা বন্দর। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ট্রায়ালে ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশি নৌযান (কার্গো) ‘এমভি রিশাদ রায়হান’ পণ্যবোঝাই দুটি কন্টেইনার নিয়ে মোংলা বন্দরে আসে।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত এসিএমপি ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে একটি অনন্য মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’
সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নীরজ কুমার জয়সওয়াল জানান, ‘ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
‘২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অফ কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তারই প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাসের পর তামাবিল দিয়ে মেঘালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত ভেঙে জ্বালানি আমদানি করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ। বলেছেন, ডিজেলের দর লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর পরও তাদের লোকসান হচ্ছে।
২০১৪ সাল থেকে টানা সাত বছর বিপিসির যে পরিমাণ মুনাফা হয়েছে, তার আগের ১৪ বছরে এর চেয়ে বেশি লোকসান ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মুনাফার টাকায় আগের লোকসান সমন্বয় করা হয়েছে।
তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর পর বিপিসির ২০১৪ সালের পর থেকে মুনাফায় থাকা, বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের বিপুল পরিমাণ স্থায়ী আমানতের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বুধবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিপিসির চেয়ারম্যান।
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দর লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করে। অকটেন প্রতি লিটার ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ ও পেট্রল ৮৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এই দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে বিপিসির বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছিল। গত কয়েক মাসে লোকসান ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।
এরপর একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয় ২০১৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত মুনাফা ও করসহ লাভ হয় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এই সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ প্রশ্ন করতে থাকে, আগের মুনাফা থেকে বর্তমানের লোকসান সমন্বয় করা হলো না কেন।
অন্য একটি জাতীয় দৈনিক জানায়, সরকারি সংস্থার মধ্যে বিপিসির ব্যাংকে স্থায়ী আমানত সবচেয়ে বেশি। তাহলে তারা কেন লোকসানের কথা বলছে।
এই দুটি বিষয়েই ব্যাখ্যা দেন বিপিসির চেয়ারম্যান।
তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে সাত বছর মুনাফা করলেও এর আগের ১৪ বছর টানা লোকসান দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত জ্বালানি খাতে ক্রমাগত লোকসান গুনতে হয়। যার পরিমাণ প্রায় ৫৩ হাজার ৫ কোটি টাকা। ফলে ভর্তুকি হিসেবে সরকার বিভিন্ন সময় বিপিসিকে ৪৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা দেয়। ফলে সাত বছরে মুনাফা করলেও ওই সময়ে আরও ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকার ঘাটতি ছিল, যা পরে বিপিসির মুনাফার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।’
ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের বিষয়ে এ বি এম আজাদ বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় সব ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে বিপিসিকে আমদানি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে।’
তেলের আমদানি ব্যয় কত
এ বিষয়েও একটি হিসাব দিয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান জানান, বর্তমান দরে ডিজেল বিক্রি করে তাদের লিটারে লোকসান হচ্ছে ৬ টাকা। তবে অকটেনে মুনাফা হচ্ছে ২৫ টাকা।
তিনি জানান, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রতি লিটার ডিজেলে ১২০ টাকা খরচ হচ্ছে বিপিসির।
বিপিসি প্রধান বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আমাদের প্রতি ব্যারেল ডিজেল কেনার খরচ পড়ত প্রতি ব্যারেলে ৯৬ দশমিক ৯৫ ডলার। প্রতি লিটারে আমরা যখন এটাকে কস্টিং করি, প্রতি লিটার পরে ৮৩ টাকা ৬ পয়সা। ওই সময়ে বিপিসি বিক্রয় করত ৮০ টাকা করে। সেখানে লিটারে ৩ টাকার মতো লোকসান ছিল।’
‘ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন প্রতি ব্যারেল ১০৮ ডলার ৫৫ সেন্ট, সেটাকে টাকায় প্রতি লিটারে কনভার্ট করলে হয় ৮৯ টাকা ৮৫ পয়সা। তখনও বিপিসি বিক্রি করেছে ৮০ টাকা লিটার। যে কারণে ওই মাসে ৯ টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়েছে।
‘এ ফর্মুলায় গত জুলাই মাসে প্রতি ব্যারেল মূল্য ছিল ১৩৯ দশমিক ৪৩ ডলার, টাকায় প্রতি লিটারে কনভার্ট করলে খরচ পড়ত ১২২ টাকা ১৩ পয়সা। তখনও ওই তেল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। এভাবে তেলের দাম বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে প্রতি লিটারে লোকসান এসে দাঁড়িয়েছিল ৪২ টাকা ১৩ পয়সা।’
এফডিআর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে
ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ স্থায়ী আমানত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে করা হয়েছে বলে জানান বিপিসি চেয়ারম্যান। জানান, তারা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন।
এর মধ্যে আছে ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানো। এতে ব্যয় হবে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। এটি বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে বিপিসির মুনাফার একটি অংশ এফডিআর করা হয়। বিপিসি তার অর্থ কোনো না কোনো ব্যাংকের হিসাবের বিপরীতে রাখতে হয়। প্রকল্পের যে অর্থগুলো, সেগুলো প্রকল্পের নামে এফডিআর খুলে রাখা হয়।’
জ্বালানির দর বৃদ্ধি এই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাড়ানো হয়নি বলেও জানান তিনি।
দেশে উৎপাদন হলেও পেট্রল ও অকটেনের নাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রুডের কারণে পেট্রল ও অকটেনের দাম বাড়ে। সুতরাং পেট্রল ও অকটেনের দাম কৌশলগত কারণে বাড়াতে হয়েছে।’
বর্তমানে দেশে ৩০ দিনের ডিজেল এবং ১৮ দিনের পেট্রল ও অকটেন মজুত আছে বলেও জানান বিপিসি চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন:শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে গত এক বছরের লভ্যাংশ হিসাবে সাত কোটি টাকা জমা দিয়েছে চার কোম্পানি।
কোম্পানিগুলো হলো মেঘনা পেট্রোলিয়াম, লাফার্জ হোলসিম, বিএসআরএম এবং লিন্ডে।
দেশি, বিদেশি এবং বহুজাতিক মিলে ২৬৫টি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর তাদের লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত এ তহবিলে জমা দিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সচিবালয়ে দেশে শীর্ষস্থানীয় এই চার কোম্পানির প্রতিনিধিরা শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের হাতে নিজ নিজ কোম্পানির পক্ষে লভ্যাংশের চেক হস্তান্তর করেন।
প্রতিমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া চার কোম্পানির লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৯৫ লাখ ৭৪ হাজার ৪ টাকা।
লাফার্জ হোলসিমের পক্ষে চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এবং মানবসম্পদ পরিচালক আসিফ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ২ কোটি ২৫ লাখ ৯২ হাজার ২৭ টাকার, বিএসআরএমের পক্ষে হেড অফ করপোরেট অ্যাফের্য়াস সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দির নেতৃত্বে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৩ টাকা জমা দেয়।
এ ছাড়া মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জসিম উদ্দিন ১ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৪ টাকা এবং অক্সিজেন কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশের পক্ষে মানবসম্পদ বিভাগের সহযোগী পরিচালক সাইকা মাজেদের নেতৃত্বে ৭৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার চেক জমা দেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ তহবিলে বিভিন্ন কোম্পানির দেয়া লভ্যাংশের পুঞ্জিভূত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭৪৭ কোটি টাকা। শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণের জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী সরকার এ ফাউন্ডেশন তহবিল গঠন করে।
এ তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কর্মস্থলে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে, আহত, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিকের চিকিৎসা এবং শ্রমিকের মেধাবী সন্তানের উচ্চশিক্ষায় সহায়তা দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ২৩৭ শ্রমিককে এ তহবিল থেকে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে।
চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক গোকুল কৃষ্ণ ঘোষ, বিএসআরএম-এর আইআর এবং এমপ্লয়ি এনগেজমেন্ট সিনিয়র ম্যানেজার মো. ইসমাইল, মেঘনা পেট্রোলিায়ামের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার জসিম উদ্দিন আহমেদ এবং লিন্ডে বাংলাদেশের আইআর ও এডমিনের সহযোগী জেনারেল ম্যানেজার সুফিয়া ওয়াহেদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:স্থানীয় ওষুধশিল্পের সুরক্ষায় প্যাটেন্ট আইন সংশোধন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে বুধবার আয়োজিত ‘এলডিসি উত্তরণে ওষুধ শিল্পের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তারা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে ওষুধশিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পৃথক একটি রোডম্যাপ তৈরির কথা বলেন। একই সঙ্গে পোশাকশিল্পের মতো এই খাতে প্রণোদনার প্রস্তাব দেন তারা।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশীয় ওষুধশিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এটি মোকবিলায় আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে স্থানীয় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্যাটেন্ট আইন সংশোধন করতে হবে।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবিলম্বে ওষুধশিল্প পার্ক (এপিআই পার্ক) চালু হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘এর ফলে ভবিষ্যতে ওষুধশিল্পে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে এবং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ওষুধশিল্প দ্রুত এগিয়ে যাবে।’
ট্রিপস চুক্তির আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় প্রয়োজনীয় প্রচার চালানোর আহ্বান জানান সালমান এফ রহমান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান। এলডিসি-পরবর্তী সময়ের জন্য ওষুধশিল্পকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি খাত এবং শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি শক্তিশালী অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিল্ডের চেয়ারপারসন নিহাদ কবির, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রাহমানসহ অনেকে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান এমপি বাংলাদেশের প্যাটেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান।
নিহাদ কবির মেধাস্বত্বসংক্রান্ত কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্যাটেন্ট আইন সংশোধন করা হবে বলে আশ্বাস দেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা।
দেশের ওষুধশিল্পে পোশাক খাতের মতো প্রণোদনা দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন রিজওয়ান রাহমান।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রিপস চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাগুলো যাতে অব্যাহত রাখা যায় সে ব্যাপারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।’
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপির প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ। ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য