উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। জেলাটি কৃষিতে যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যে। জেলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান, স্থাপনা, প্রত্ন নিদর্শন। কিছু নিদর্শন সরকার সংরক্ষণ করলেও এখনও অরক্ষিত বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপনা। কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।
জেলাটিতে এখনও এমন অনেক প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে, যা অনেকের অজানা। তেমনই এক নিদর্শন পাশাপাশি সাড়ে তিন শতাধিক পুকুর। স্থানীয়রা অবশ্য বলছেন, সেখানে একসঙ্গে রয়েছে ৩৬৫ পুকুর। যেগুলো অনেক পুরোনো।
অবস্থান
নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাট। উপজেলা সদর থেকে আরও ১৯ কিলোমিটার দূরে ইসবপুর ইউনিয়ন। সেই ইউনিয়নের চান্দিরা গ্রামের শেষ প্রান্তে অবস্থিত পাশাপাশি বিশাল ৩৬৫টি পুকুর। নওগাঁ জেলায় একসঙ্গে এতগুলো পুকুর আর কোথায় নেই।
প্রচলিত মিথ
স্থানীয়রা দীর্ঘদিন থেকেই লোকমুখে শুনে আসছেন, পুকুরগুলো খনন করা হয়েছিল পাল আমলে। সেটা অষ্টম শতাব্দীর দিকে। সে সময় কোনো এক রাজার শাসনকালে রানি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার রোগ সারাতে রজ্যের বৈদ্য, হেকিমদের ডেকে পাঠানো হয়, অনেকেই অনেক ব্যবস্থাপত্র দেন, তবে রোগ সারে না রানির। পরে এক হেকিম রাজাকে বলেন, ৩৬৫ পুকুর খনন করতে হবে। সেসব পুকুরে প্রতিদিন রানি গোসল করবেন। এভাবে এক বছর গোসল করলে রোগ সেরে যাবে। হেকিমের কথামতো রাজা তখন খনন করেন সেই ৩৬৫ পুকুর।
যা বলছেন গবেষকরা
স্থানীয়দের মুখে মুখে সেই পুকুরগুলো নিয়ে এমন গল্প ফিরলেও এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য কেউ দিতে পারেননি।
ধামইরহাট এম এম ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও গবেষক শহিদুল ইসলাম পুকুর খননের ইতিহাস নিয়ে স্থানীয়দের মুখে ফেরা সে কথাটিকেই সত্য বলে জানান। অবশ্য তিনিও অষ্টাদশ শতাব্দীর সময় পাল শাসনামলে পুকুরগুলো খনন করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
প্রত্যন্ত এমন গ্রামে একসঙ্গে এতগুলো পুকুর ঠিক কবে খনন করা হয়েছে জানতে চেয়ে একাধিক গবেষকের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. চিত্তরঞ্জন মিশ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নে থাকা পুকুরগুলো সম্পর্কে জানেন বলে নিউজবাংলাকে জানান। তবে পুকুরগুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনিও।
অবশ্য তিনি আরও দুই গবেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন, যারা সেগুলো নিয়ে জানেন বলেও জানান অধ্যাপক মিশ্র।
পরে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তার কাছে নিউজবাংলা ইসবপুরের ৩৬৫ পুকুরের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রানির অসুখ সারাতে রাজা ৩৬৫ পুকুর খনন করেন, সেগুলোতে প্রতিদিন এক পুকুরে রানি এক দিন করে গোসল করেন যে কথা প্রচলিত আছে, এর সবই মিথ। এগুলো সত্য নয়।’
তিনি বলেন,‘ নওগাঁ প্রাচীন আমল থেকে খুবই সমৃদ্ধ একটি স্থান। এই অঞ্চলের যে কয়েকটি মহাবিহার, তার দুটিই নওগাঁয় অবস্থিত। ধামইরহাটের ইসবপুরে যে পুকুরগুলোর কথা বলা হয়, এগুলো সব এক আমলের নয়। কিছু আছে পাল শাসনামলের, কিছু আছে মুসলিম বা মোগলদের শাসনামলে।’
তিনি জানান, ইসবপুরে সাধারণ দুই আকৃতির পুকুর আছে, কিছু পূর্ব-পশ্চিম লম্বা, আর কিছু উত্তর-দক্ষিণ লম্বা। যেসব পুকুর উত্তর-দক্ষিণমুখী সেগুলো মূলত পাল আমলে খনন করা হয়েছিল। আর পূর্ব-পশ্চিমমুখী পুকুরগুলো মুসলিম শাসনামলে অনেক পরে খনন করা।
অবশ্য এখন কিছু পুকুর চার কোনাকৃতির দেখা যায়, এগুলো এমন ছিল না। দীর্ঘদিন থেকে নানাভাবে এগুলো এমন আকৃতি নিয়েছে বলে জানান তিনি।
গবেষক মোস্তাফিজুর জানান, বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় পাল আমলেও পানির তীব্র সংকট ছিল এই এলাকায়। তাই রাজা বা শাসকরা সে সময় বড় বড় পুকুর খনন করতেন। ইসবপুরের যেসব পুকুর সেগুলো খনন করা হয়েছিল মূলত জনকল্যাণে। পানির সংকট যেন না হয়, সে জন্য রাজারা এসব পুকুর খনন করতেন তাদের নিবাসের আশপাশে। দূর-দূরান্ত থেকে এসব পুকুরে আসতেন তখনকার প্রজারা। তারা খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতেন এসব থেকে।
এ ছাড়া এসব পুকুরের আশপাশে ছিল মন্ত্রী, রাজ্যের বিভিন্ন কর্মচারীদের আবাস। তারা নির্দিষ্ট কিছু পুকুরে প্রাতাহ্যিক কাজ ও কিছু পুকুর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতেন। এসবই সেই ৩৬৫ পুকুর খননের সঠিক ইতিহাস, যা সময়ের ব্যবধানে রানির অসুখের গল্প আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক ড. আলী রেজা মুহম্মদ আব্দুল মজিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক গবেষকই নওগাঁর প্রত্ন নিদর্শন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তবে ধামইরহাটের ইসবপুরের যে ৩৬৫ পুকুরের কথা বলা হয়, সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা প্রবন্ধ বা নিবন্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে বের করা কোনো ম্যাগাজিনে উঠে আসেনি।’
এই অধ্যাপকও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোরশেদুল আলম বলেন, ‘একই সঙ্গে ৩৬৫ পুকুর দেশের আর কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। রানির অসুখ সারতেই এসব পুকুর পাল আমলে খনন করা বলে আমরা জেনে এসেছি। এখন পুকুরগুলোর চারপাশে বনায়ন কার্যক্রম করা হয়েছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে। সরকার যদি একটু উদ্যোগ নেয়, তবে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এই স্থানটিতে।’
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ‘এমন স্থাপনা দেশের অন্য স্থানেও আছে বলে মনে হয় না। এ স্থান তেমনভাবে পরিচিতি পায়নি। তাই সরকারের উচিত স্থানটিকে পর্যটনমুখী করার উদ্যোগ নেয়া।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নওগাঁ জেলা যেমন কৃষিতে সমৃদ্ধ, ঠিক তেমনি ইতিহাসে বিজড়িত। অনেক প্রাচীন দর্শনীয় স্থান আছে এ জেলায়। আবার অনেক স্থান পরিচিতি ও সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তপ্রায়। ধামইরহাটের চান্দিরা গ্রামের ৩৬৫টি পুকুরও কিন্তু ইতিহাসের স্মৃতি বহন করে।
‘পাল বংশের রাজ্য শাসনের শেষ দিকে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়। এখনও পুকুরগুলো অক্ষত রয়েছে। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেইনি স্থানটিকে সবার মধ্যে তুলে ধরার। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সবার মধ্যে তুলে ধরতে ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, অন্যদিকে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে দাবি করেন তিনি।
বনায়ন
ধামইরহাট বন বিট কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, চান্দিরা গ্রামের ৩৬৫টি পুকুর অনেক প্রাচীন। পুকুরগুলো সরকারিভাবে লিজ দেয়া আছে। তবে পাড়ে বনায়ন করেছে বন বিভাগ। সে জন্য পুকুরপাড়ের চারপাশে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হয়েছে। জায়গাগুলো অনেক সুন্দর, একসঙ্গে এতগুলো পুকুর আর পুকুরপাড়ে নানা জাতের গাছের ছাঁয়া যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে। একটু উদ্যোগ নিলে স্থানটি বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হতে পারে।
পর্যটনে জোর স্থানীয় প্রশাসনের
নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গণপতি রায় বলেন, ‘একই সঙ্গে ৩৬৫টি পুকুর সত্যিই দারুণ বিষয়। এ এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সঙ্গে চান্দিরা গ্রামের ওই পুকুরগুলোতে যাতে খুব সহজেই যাওয়া যায়, সে জন্য রাস্তা নির্মাণেরও উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:জাম্বিয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন একটি কাঠের শিল্পকর্ম আবিষ্কার করেছেন যা প্রায় অর্ধ মিলিয়ন (পাঁচ লাখ) বছর পুরানো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, জাম্বিয়ার একটি নদীর তীরে পাওয়া ওই শিল্পকর্মটি সাধারণ কাঠামোর কাঠের ওপর তৈরি। দুটি কাঠের লগ দিয়ে জোড়া লাগানো ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে শিল্পীর হাতের কাজ।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অ্যাবেরিস্টউইথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পৃথিবী বিজ্ঞানের অধ্যাপক জিওফ ডুলার বলেন, ‘আধা মিলিয়ন বছর ধরে শিল্পকর্মটি যে স্থানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। সবচেয়ে অসাধারণ বিষয় এই যে, সেটি এখনও অক্ষত রয়েছে।’
২০১৯ সালে যে দলটি এ শিল্পকর্ম আবিষ্কার করে তার সদস্য ছিলেন অধ্যাপক জিওফ ডুলার।
প্রস্তর যুগের মানুষ যে যাযাবর ছিলেন, সে ধারণাটিকে নতুন আবিষ্কৃত এ শিল্পকর্মটি চ্যালেঞ্জ করছে বলে জানান ডুলার।
এর আগে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন কাঠের শিল্প নিদর্শনটি (চরা এবং শিকারের জন্য কাঠের সরঞ্জাম) প্রায় ৪,০০,০০০ বছর আগের বলে দাবি গবেষকদের। আর সবচেয়ে পুরানো কাঠের শিল্পকর্ম হিসেবে পরিচিত যে শিল্পকর্মটি (পালিশ করা তক্তার পুরানো টুকরো ), তা প্রায় ৭,৮০,০০০ বছর পুরনো বলে দাবি গবেষকদের।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ খোঁজার লক্ষ্যে খনন কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে এ খনন কাজের শুরু হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ষোড়শ শতকের দিকে বিলুপ্ত হওয়া পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্প্রতি দেয়াঙ পাহাড় পরিদর্শন করেন একাধিক প্রতিনিধিদল। তারই ধারাবাহিকতায় খনন কাজ পরিচালনার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে বৃহস্পতিবার কর্ণফুলীর ইউএনও মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পীযূশ কুমার চৌধুরী, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপপরিচালক ড. আতাউর রহমান, ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান শাহীন আলম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা সহকারী নিয়াজ মাগদুম ও সার্ভেয়ার চাই থোয়াই মারমা।
জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপপরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে’র নির্দেশনা অনুসারে ১৬ সেপ্টেম্বর পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা হবে।’
কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দেয়াঙ পাহাড়ের বিশ্বমুড়া নামক স্থান থেকে খননকাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের একটি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় যা বর্তমানে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। খিস্ট্রীয় অষ্টম শতাব্দীতে পূর্ববঙ্গের তথা বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা।
এটি মূলত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তৎকালীন সময়ে যা পূর্ববঙ্গে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে শিক্ষা ও মতবাদ প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হতো।
পাল সম্রাজ্যের বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান পণ্ডিত বিহারে কিছুদিন অবস্থান ও অধ্যয়ন করেছিলেন বলে জানা যায়।
পণ্ডিতবিহারে অধ্যাপকেরা তাদের অধ্যাপনা, অধ্যয়ন ও যোগ সাধনার পাশাপাশি অবসরে যেসব গান-দোহা রচনা করেছিলেন তা-ই পরবর্তীকালে চর্যাপদ নামে বাংলা ভাষা ও কাব্যের আদি নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
পণ্ডিত বিহারের অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত থাকলেও গবেষণায় উঠে এসেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরি, হাজীগাঁও, বটতলী, কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ও জুলধা এলাকাজুড়ে সপ্তম-অষ্টম শতকে পণ্ডিত বিহার নামে একটি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র গড়ে ওঠে।
আনোয়ারার হাজীগাঁও থেকে ৬৬টি পিতলের বৌদ্ধমূর্তি পাওয়া গেলে ওই স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সম্পর্কে প্রমাণ নিশ্চিত করেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন পটিয়ার চক্রশালার ব্রাহ্মণ সন্তান তিলপাদ। তার হিন্দু জীবনের যোগ সাধনসঙ্গিনী তিল পিষে জীবনধারণ করতেন বলে তিনি তিলপাদ নাম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পর প্রজ্ঞাভদ্র নাম গ্রহণ করেন ও পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন।
মগধের প্রধান আচার্য নরতোপা পণ্ডিত বিহারে প্রজ্ঞাভদ্রের কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে লুই পা, শবর পা, লাড় পা, অবধূত পা, অমোঘনাথ, ধর্মশ্রী, মৈন, বুদ্ধজ্ঞান পা, অনঙ্গবজ্র প্রমুখ বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য এবং পণ্ডিতগণ পরিদর্শক হিসেবে কিংবা অধ্যাপক হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
গবেষকদের অনুমান, বিভিন্ন বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ এই বিহারে সমবেত হয়েছিলেন বলে পণ্ডিত বিহার নামকরণ হয়েছিল।
পণ্ডিত বিহারের বিলুপ্ত হওয়ার কারণ বা সময়কাল সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি।
১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে সোনারগাঁওয়ের সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের সেনাপতি কদলখাঁ গাজী চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আরাকানীদের বিতাড়িত করেন ও চট্টগ্রামকে সর্বপ্রথম মুসলিম শাসনের আওতায় নিয়ে আসেন।
১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছিল বাংলার স্বাধীন সুলতান ও আফগান শাসনভুক্ত। ধারণা করা হয়, ওই সময়ই পণ্ডিত বিহারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।
সর্বশেষ ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি মোঘল যোদ্ধারা চাটিগাঁ দুর্গ দখল করে মগদের বিতাড়িত করেন। যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে চট্টগ্রামের প্রাচীন বন্দরশহর দেয়াঙ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কালের বিবর্তনে পণ্ডিত বিহারের বিলুপ্তি ঘটে বলেই বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়।
ঐতিহাসিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক ড. জিনবোধি ভিক্ষুর নেতৃত্বে একদল শিক্ষা অন্বেষক।
২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল আনোয়ারা উপজেলার দেয়াঙ পাহাড় অঞ্চলে পণ্ডিত বিহারের ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলেই গড়ে উঠবে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
চলতি বছরের ২ আগস্ট আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের পাশাপাশি জাদুঘর স্থাপনের নিমিত্তে জায়গা পরিদর্শন করে গিয়েছে দেশি-বিদেশি পরিদর্শক দল।
তারা কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দেয়াঙ পাহাড়ের বিশ্বমুড়া নামক স্থান ঘুরে দেখেন। সেসময় বিশ্বমুড়া আরাকান রাজা রাজ বিক্রমের বাড়ি ছিল বলে জানান তারা।
পরিদর্শন দলে ছিলেন পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যেক্তা ড. জিনবোধি ভিক্ষু, বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন নাগরিক উদ্যেগের সদস্য সচিব মোস্তফা কামাল যাত্রা, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপপরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান, জাপানি নৃতাত্তিক হেনরি হিরোশে ও হিরোকো হিরোশে।
এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ।
শনিবার আবারও পরিদর্শক দল আনোয়ারার দেয়াঙ পাহাড়ে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়েরর জন্য নির্ধারিত ৫০ একর জমি পরিদর্শন করে এসেছেন।
এদিন দুপুরে তারা উপজেলার বটতলী মৌজার ওই স্থানটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন আনোয়ারার ইউএনও মো. ইশতিয়াক ইমন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বশির আহমেদ, বান্দরবান বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রভাষক সুমদত্ত বড়ুয়া, সাংবাদিক ও নাট্যকর্মী আশিক আরেফিন ও মো. রাসেল প্রমুখ।
ঐতিহাসিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, ‘বাংলা ভাষার হারিয়ে যাওয়া আদি চর্যাপদের স্মৃতিবিজড়িত প্রাচীন বাংলার বিদ্যাপীঠ পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃস্থাপিত করার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আমাদের সঙ্গে কাজ করছে একটি গবেষক দল। এটি পুনঃস্থাপিত হলে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের শিক্ষার মানচিত্র বদলে যাবে।’
পণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন নাগরিক উদ্যেগের সদস্য সচিব মোস্তফা কামাল যাত্রা বলেন, ‘অষ্টম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সক্রিয় ছিল। এটা কীভাবে ধ্বংস হলো, তা তুলে আনার চেষ্টা করছি।
‘২০১২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাশ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার অনুমোদন হয়েছে। এর পরও এটি কেন থেমে আছে, তা বোধগম্য নয়। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে জায়গা অধিগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে গবেষক দলের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও তৎপরতা প্রয়োজন।’
সবার আশা, শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সিদ্ধান্ত পেয়ে ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসে প্রতিষ্ঠিত হবে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়। আর এটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম পাবে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ফিরে আসবে হারিয়ে যাওয়া দেয়াঙ পরগণার ইতিহাস। সেইসঙ্গে বদলে যাবে এ জনপদের চালচিত্র।
আরও পড়ুন:গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসায় আয়োজন করা হয় পুকুরে হাঁস ধরা প্রতিযোগিতা। জনপ্রিয় এ খেলা দেখতে এসে ব্যাপক বিনোদন পেয়েছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার দুপুরে হাড়িভাসা ইউনিয়নের পাহাড়তলি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে এই হাঁস ধরা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা দেখতে পুকুর পাড়ে জমে বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড়।
স্থানীয় যুবক সারোয়ার নয়ন এবং পাহাড়তলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের যৌথ এ আয়োজন চলবে আরও চারদিন।
এ খেলায় পুকুরে একটি হাঁস ছেড়ে দেন আয়োজকরা। হাঁসটি ধরতে ঝাপিয়ে পড়ে ১৫ জন প্রতিযোগীর একেকটি দল। পুকুরের চারপাশে জড়ো হয়ে থাকা অসংখ্য মানুষ এসময় করতালি দিতে থাকনে। হাঁস ধরতে শুরু হয় হইচই। প্রতিযোগীরা কখনও সাঁতার আবার কখনও ডুব দিয়ে হাঁসটির পেছনে ছুটতে থাকেন। কখনও কাছাকাছি গিয়ে ধরতে না পারায় দর্শকের মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়।
ধারাবাহিকভাবে ৬টি দলের ৯০ জন মানুষ খেলায় অংশ নেন। খেলা শেষে ৬টি দলের ৬ জন বিজয়ীকে পুরস্কার হিসেবে একটি করে মোবাইল ফোন তুলে দেয়া হবে।
আয়োজনকারী সারোয়ার হোসেন নয়ন বলেন, ‘ব্যস্ততার মাঝে চিত্ত বিনোদনের জন্য আমাদের এই আয়োজন। ঐতিহ্যবাহী খেলাটি দর্শকরা দারুণভাবে উপভোগ করেছে। তাই মাঝে-মধ্যেই এমন আয়োজনের চিন্তা করছি।’
পাহাড়তলি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী সব খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যাওয়া এমন সব খেলা নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে পুকুরে হাঁস ধরা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতেও এ ধরণের ব্যাতিক্রমী আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ঐতিহ্যবাহী মণ্ডার উদ্ভাবক গোপাল পাল। তার প্রতিষ্ঠিত মণ্ডার দোকানে প্রায় ২০০ বছর ধরে বংশানুক্রমে মণ্ডার ব্যবসা চলছে। ব্যবসায় এখন চলছে পঞ্চম পুরুষ। তবে মণ্ডার দাম নিয়ে বর্তমানে অসন্তুষ্ট ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, মালিকপক্ষ ধাপে ধাপে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালেও শুধুমাত্র ঐতিহ্যের কারণে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা জানান, গত তিন বছরে ৫০০ টাকা কেজির মণ্ডা ৬০০ টাকা হয়েছে। এবারের ঈদে তা আরও ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়। এছাড়া মণ্ডা বিক্রির রশিদও কাউকে দেয়া হয় না। এসব কারণে ক্রেতা অসন্তুষ্ট হলেও নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন মালিকপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মণ্ডার দোকানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মণ্ডা তৈরি করায় এবং ক্রেতাদের মণ্ডা বিক্রির রশিদ না দেয়ায় দোকানের মালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ঘটনায় উচ্ছসিত হয় ক্রেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেকে ধন্যবাদ জানান তারা। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মণ্ডা তৈরি করে ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করায় মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। অনেকে আবার ঐতিহ্যবাহী এই মণ্ডা না খাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
শেক্সপিয়ার মাহমুদ ওয়াকিল হক নামে এক ক্রেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে কখনও মুক্তাগাছা উপজেলায় গেলে গোপাল পালের মণ্ডার দোকানে যাই৷ দোকানের ভেতরে বেঞ্চে বসেও অনেক সময় কয়েকটি মণ্ডা খাই, আবার কখনও পরিবারের জন্য কিনে বাসায় নিয়ে আসি। মণ্ডা বিক্রির রশিদ তারা কখনওই দেয়না। রশিদ চাইলে ম্যানেজার বাঁকা চোখে তাকিয়ে মণ্ডার গুণগান শুরু করে দেন।’
আসাদুল হক নামে আরেকজন বলেন, ‘দোকানের মালিকসহ ম্যানেজার নিজেদের রাজা-বাদশা মনে করেন। কারণ ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত কখনও এ দোকানে অভিযান চালায় না। মণ্ডার একচেটিয়া বিক্রিতে তারা সম্মানিত মানুষদেরও সম্মান দেননা। তাদের ভাব এমন- মণ্ডা বিক্রি করে দোকান থেকে বিদায় করতে পারলেই হলো।’
দোকানটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কাওসার পারভেজ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘মণ্ডার স্বাদ আগের মতো নেই। দূর-দূরান্তের ক্রেতারা ঐতিহ্যের কারনে বেশি পরিমাণ মণ্ডা বাড়িতে কিনে নিয়ে যান। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নানা অজুহাতে ধীরে ধীরে দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাই দোকানটিতে আর যাই না। কয়েকমাস সবাই এই দোকানের মণ্ডা খাওয়া ছেড়ে দিলেই ন্যয্য দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবে মালিকপক্ষ।’
গোপাল পালের ঐতিহ্যবাহী মণ্ডার দোকানটি তার পঞ্চম বংশধর রমেন্দ্র নাথ পালের মৃত্যুর পর বর্তমানে পরিচালনা করছেন তার ছোট ভাই রবীন্দ্রনাথ পাল, রথীন্দ্রনাথ পাল, শিশির কুমার পাল ও মহির কুমার পাল।
নিউজবাংলাকে রবীন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘প্রতি কেজিতে ২০টি মণ্ডা পাওয়া যায়। দুধের ছানা ও চিনি দিয়ে মণ্ডা তৈরি হয়। আমাদের তৈরি মণ্ডার গুণগত মান সেরা হওয়ার কারণেই ক্রেতারা ভিড় জমায়৷ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মণ্ডা তৈরি করা হয় না। মণ্ডা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় মণ্ডার দাম বাড়াতেও বাধ্য হয়েছি। মণ্ডার ঐতিহ্যসহ স্বাদ ধরে রাখতে আমরা বদ্ধ পরিকর।’
এ বিষয়ে মুক্তাগাছার ইউএনও লুৎফর রহমান আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি কেজি মণ্ডা ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মণ্ডার এই বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে উৎপাদন খরচের সামঞ্জস্য নেই বলে আমাকে জানিয়েছেন জেলা বাজার কর্মকর্তা।’
ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে মণ্ডা বিক্রি করলে আবারও ওই দোকানে অভিযান চালানো হবে বলে জানান ইউএনও।
ঐতিহ্যবাহী মণ্ডার ইতিহাস
মুক্তাগাছার মণ্ডার উদ্ভাবক গোপাল পাল ১৮২৪ সালে মণ্ডার দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৭ সালে মারা যান সুস্বাদু মণ্ডার এ উদ্ভাবক।
জনশ্রুতি আছে, গোপাল পাল স্বপ্নে প্রায়ই এক সাধুর দেখা পেতেন। স্বপ্নে সাধু তাকে মণ্ডা তৈরির নিয়ম শেখাতেন। প্রায় রাতেই সাধু মণ্ডা তৈরির নিয়ম বলতেন। এক রাতে মণ্ডা তৈরির শেষ নিয়মটি সাধু তাকে শেখালেন এবং বললেন, ‘তুই এই মণ্ডার জন্য অনেক খ্যাতি অর্জন করবি। তোর মণ্ডার সুখ্যাতি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে।’
গোপাল পাল স্বপ্নে মণ্ডা তৈরির পদ্ধতি পেয়ে মণ্ডা বানিয়ে প্রথমেই খাওয়ান মুক্তাগাছার তৎকালীন জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীকে। মণ্ডা খেয়ে তৃপ্তি পেয়ে তিনি নিয়মিত তাকে মণ্ডা দিতে বলেন। মহারাজা সূর্যকান্তের ছেলে শশীকান্তও গোপালের মণ্ডা খুব পছন্দ করতেন। সেই থেকে বংশপরম্পরায় মণ্ডা তৈরি করে আসছেন গোপাল পালের উত্তরসুরীরা।
দোকানে থাকা একটি পুস্তিকা থেকে জানা যায়, মণ্ডার কারিগর গোপাল পাল ১৭৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস মুর্শিদাবাদে। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের পর মুর্শিদাবাদের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বসবাস শুরু করে। তখন গোপাল পালের বাবা রাম পাল প্রাণভয়ে পালিয়ে ভারতের মালদহ হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহীতে চলে আসেন। এরপর সেখান থেকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার তারাটি গ্রামে বসবাস শুরু করেন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গোপাল পালের বংশধররা শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানেও তারা মণ্ডা তৈরি করেন। কিন্তু ভারতের আবহাওয়া মণ্ডা তৈরির জন্য বিশেষ উপযোগী ছিল না। তাই আগের স্বাদ আর হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তাগাছায় ফিরে এসে ওই একই স্থানে মণ্ডা তৈরি শুরু করেন তারা। ১০৮ বছর বয়সে ১৯০৭ সালে মারা যান এই মণ্ডার উদ্ভাবক গোপাল পাল।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরাই এ দোকানে বসে মণ্ডা খেয়ে সুনাম করেছেন।
আরও পড়ুন:নতুন করে মাইলফলক সৃষ্টি হলো প্রায় আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দইয়ে। বিখ্যাত এই সরার দই অর্জন করেছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি। এর ফলে নতুন সম্ভাবনার আলো দেখছেন জেলার দই ব্যবসায়ীরা।
তবে গন্তব্যের শেষ এখানেই নয়। বিশ্ববাজারের বগুড়ার দই উপস্থাপন করতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল। বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন হলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়তে পারে বগুড়ার দইয়ের স্বাদ।
২৬ জুন এক সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) যাচাই-বাছাই শেষে বগুড়ার দইকে জিআই পণ্য হিসেবে অনুমোদন দেয়। বগুড়ার দই ছাড়াও ওইদিন জিআই স্বীকৃতি পায় শেরপুর জেলার তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম। এ নিয়ে দেশের ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।
২০১৩ সালে দেশে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রতিষ্ঠানটি।
কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সাধারণত প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও উৎপাদনভিত্তিক পণ্যের জিআই স্বীকৃতি মেলে।
বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য জামদানি শাড়ি। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর জিআই সনদ পায় এটি। এর আবেদনকারী ও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। তারপর একে একে স্বীকৃতি পায় ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো বগুড়ার দইসহ চার পণ্য। এখন থেকে এসব পণ্য বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পাবে।
বগুড়ার দই জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর উল্লসিত জেলার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এই স্বীকৃতি নিয়ে কাজ চলছিল। অবশেষে সেই স্বীকৃতি মিলেছে। ফলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে বগুড়ার দই শিল্পের।
ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়ায় দৈনিক অন্তত এক কোটি টাকার দই বিক্রি হয়। দেশের ভিতরে তারা সব ধরনের সক্ষমতা অর্জন করেছেন। এমনকি স্থানীয় মানুষদের হাতে করে বহু আগেই অল্প-বিস্তর দই বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। সেখানে সুনামও কুড়িয়েছে বগুড়ার দই। কিন্তু বানিজ্যিকভাবে বিদেশে পাঠাতে হলে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ- রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেড ও আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দরের মতো সুবিধাগুলো।
এতে শুধু দই ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন না। এসব সুবিধা পেলে বগুড়া থেকে কৃষি যন্ত্রাংশ, আলুও রপ্তানি হবে। ফলে দেশের অর্থনীতি প্রসারিত হবে।
বগুড়ায় দইয়ের বাজারে সেরার খ্যাতি কুড়িয়েছে এশিয়া সুইটস। মো. নুরুল বাশার চন্দন, নুরুল আলম টুটুল ও নুরুল হুদা তিলক এই তিন ভাইয়ের হাতে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বগুড়ার দই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় নুরুল বাশার চন্দন বলেন, “দইয়ে জিআই স্বীকৃতি পাওয়া আমাদের জন্য ‘গ্রেট অপরচুনিটি’। এর ফলে দই রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা বহুমুখী সুবিধা পাব। কিন্তু এ দইকে বিশ্ববাজারে নিতে হলে সরকারের সহযোগিতা ভীষণ প্রয়োজন।’
কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘দইয়ে সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকে। এটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে হয়। তা না হলে দইয়ের স্বাদ ও মান ঠিকঠাক পাওয়া যায় না। দই দ্রুত পাঠাতে হলে আমাদের অবশ্যই আকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে তারপর তা করতে হলে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হয়ে যাবে। আবার বড় পরিসরে দই উৎপাদনের জন্য এখানে ইপিজেড এলাকাও সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’
নুরুল বাশার চন্দন বলেন, ‘কয়েক বছর আগে বগুড়ার সৈয়দ আহম্মেদ কীরণ নামে সিআইপি মর্যাদার এক ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে এক ট্রাক দই কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছিল সে দই। আমরা বিশ্বাস করি বিশ্ব বাজারেও আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। কিন্তু বিমানবন্দর, ইপিজেড ব্যবস্থা না পেলে আমাদের সেই আউটপুট দেয়াটা দুষ্কর।’
বগুড়ার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া হোটেল। দই-মিষ্টিসহ ভোগ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠানটি উত্তরাঞ্চলের প্রথম সারিতে রয়েছে।
আকবরিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল বলেন, ‘দই অনেক জায়গায় তৈরি হয়। কিন্তু বগুড়ার দই আবহাওয়া ও পানির কারণে সবদিক থেকে আলাদা, যেটি অনেকে জানেন না। জিআই স্বীকৃতির কারণে বিশ্বে বগুড়ার দইয়ের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হলো।’
বানিজ্যিককরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বগুড়া শহর ও শেরপুর উপজেলা মিলে দিনে অন্তত এক লাখ পিস দই বিক্রি হয়। টাকার অংকে প্রায় এক কোটি হবে। স্বভাবতই রপ্তানি হলে দেশে আরও বেশি রাজস্ব আয় আসবে।
‘আমরা খোঁজ নিয়েছি, ফুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনায় এ দই দেশের বাইরে পাঠানো সম্ভব। জাহাজে পাঠাতে পারব, তবে বিমানে হলে বেশি ভালো হয়। আমরা তো সবে জিআই পেলাম। এখন উদ্যোগ নেব রপ্তানিতে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের সহযোগিতা দরকার।’
ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা অল্প কিছুদিন হলো জিআই স্বীকৃতি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য, কোনো পণ্য কোনো নির্দিষ্ট এলাকার বলে চিহ্নিত করা। এতে এর বৈশ্বিক স্বীকৃতি মেলে। আরেকটি উদ্দেশ্য, জিআইয়ের মাধ্যমে পণ্যটির বাণিজ্যিকিকরণের পথ সুগম করা। পণ্যটি যখন বাইরের দেশে পাঠানো হয়, তখন জিআই স্বীকৃত পণ্যের মান ও দাম নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।’
স্বীকৃতি মেলার পর এখনও অনেক কাজ আছে উল্লেখ করে মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন ইউজার রেজিস্ট্রেশন করার প্রক্রিয়ায় যাব। আর একটা কমন লোগো হবে আমাদের। এটি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো পাবে। লোগোর কাজ চলছে। এটি হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যে ব্যবহার করতে পারবে।’
দই ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমাদের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের বিষয়ে বিভিন্ন কোরামে কথা তোলা হয়েছে।
‘এখন চার লেনের মহাসড়কের কাজ চলছে। এরপর রেলের কাজ হবে। একটা একটা করে হোক। এরপর যদি সকল সমীক্ষা শেষে ইতিবাচক থাকলে সরকার বিমানবন্দর দিতে পারে। আর ইপিজেড নিয়ে প্রস্তাবনা দেয়া আছে। সদরের সংসদ সদস্যও এটা নিয়ে চেষ্টা করছেন।’
বগুড়ার দইয়ের ইতিহাস
প্রায় আড়াইশ বছর আগে শেরপুর উপজেলা থেকে বগুড়ার দইয়ের ইতিহাস শুরু হয়। পরবর্তীতে ঘোষদের হাত ধরে ধীরে ধীরে এটি চলে গেছে মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের কাছে।
তৎকালীন বগুড়ার শেরপুরের ঘোষ পরিবারের ঘেটু ঘোষ প্রথম দই তৈরি শুরু করেন। টক দই তৈরি থেকে বংশ পরম্পরায় তা চিনিপাতা বা মিষ্টি দইয়ে রূপান্তরিত হয়।
সরার দইয়ের পথিকৃত শেরপুরে ঘোষপাড়ার নীলকণ্ঠ ঘোষ। প্রায় ১৫০ বছর আগে তার হাতেই সরার দই প্রসার লাভ করে।
পরবর্তী সময়ে ১৮ শতকের শেষের দিকে বগুড়ার নওয়াব আলতাফ আলী চৌধুরীর (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাবা) পৃষ্ঠপোষকতায় শেরপুরের ঘোষপাড়ার অন্যতম বাসিন্দা শ্রী গৌর গোপাল পাল বগুড়া শহরে দই উৎপাদন শুরু করেন।
বর্তমানে নওয়াববাড়ি রোডে তার উত্তরসূরি শ্রী বিমল চন্দ্র পাল ও শ্রী স্বপন চন্দ্র পাল ‘শ্রী গৌর গোপাল দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামে সেই প্রাচীন বানিজ্য বিতানটি চালু রেখেছেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও সম্পূর্ণ বাইবেল নিলামে উঠেছে। নিউইয়র্কের সোথবি’স নিলাম প্রতিষ্ঠানে বাইবেলখানা ৩৮.১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪১০ কোটি টাকা। এতে আর্থিক মূল্যে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পাণ্ডুলিপির মর্যাদা পেয়েছে হিব্রু ভাষায় রচিত ওই বাইবেল।
গ্রন্থটি প্রায় ১ হাজার ১ শ’ বছর আগে রচিত বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
বিরাম চিহ্ন, স্বরবর্ণ ও উচ্চারণসহ হিব্রু বাইবেলের ২৪টির সবগুলো বই ধারণকারী একটি একক পাণ্ডুলিপির প্রাচীনতম উদাহরণ এই গ্রন্থ।
ইসরায়েলের তেল আবিবে অবস্থিত ইহুদির এএনইউ জাদুঘরের জন্য এটি কিনে নেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আলফ্রেড মোসেস।
এক বিবৃতিতে মোসেস বলেন, ‘ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও পশ্চিমা সভ্যতার ভিত্তি গঠন করেছে হিব্রু বাইবেল। আমি জেনে খুশি হয়েছি যে এটা ইহুদি জনগণের। কোডেক্স স্যাসুন (২৪টি বাইবেলের সংকলন)-এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য অনুধাবন করাই আমার লক্ষ্য ছিল। কারণ আমি মনে করি, এটির অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে বিশ্বের সব মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে।’
এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পাণ্ডুলিপি ছিল লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’র বৈজ্ঞানিক নোটবুক ‘কোডেক্স লিসেস্টার’। ১৯৯৪ সালে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী বিল গেটস সেটি ৩০.৮ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য