× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
What is behind the excavation of 365 ponds in a village of Naogaon
google_news print-icon

নওগাঁর এক গ্রামে ৩৬৫ পুকুর খননের নেপথ্যে কী

নওগাঁর-এক-গ্রামে-৩৬৫-পুকুর-খননের-নেপথ্যে-কী
নওগাঁর ধামইরহাটের ইসবপুর ইউনিয়নে একটি গ্রামে পাশাপাশি সাড়ে তিন শতাধিক পুকুর। ছবি: নিউজবাংলা
গবেষক মোস্তাফিজুর জানান, বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় পাল আমলেও পানির তীব্র সংকট ছিল এই এলাকায়। তাই রাজা বা শাসকরা সে সময় বড় বড় পুকুর খনন করতেন। ইসবপুরের যেসব পুকুর, সেগুলো খনন করা হয়েছিল মূলত জনকল্যাণে। পানির সংকট যেন না হয়, সে জন্য রাজারা এসব পুকুর খনন করতেন তাদের নিবাসের আশপাশে। দূর-দূরান্ত থেকে এসব পুকুরে আসতেন তখনকার প্রজারা। তারা খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতেন এসব থেকে।

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। জেলাটি কৃষিতে যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যে। জেলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান, স্থাপনা, প্রত্ন নিদর্শন। কিছু নিদর্শন সরকার সংরক্ষণ করলেও এখনও অরক্ষিত বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপনা। কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।

জেলাটিতে এখনও এমন অনেক প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে, যা অনেকের অজানা। তেমনই এক নিদর্শন পাশাপাশি সাড়ে তিন শতাধিক পুকুর। স্থানীয়রা অবশ্য বলছেন, সেখানে একসঙ্গে রয়েছে ৩৬৫ পুকুর। যেগুলো অনেক পুরোনো।

অবস্থান

নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাট। উপজেলা সদর থেকে আরও ১৯ কিলোমিটার দূরে ইসবপুর ইউনিয়ন। সেই ইউনিয়নের চান্দিরা গ্রামের শেষ প্রান্তে অবস্থিত পাশাপাশি বিশাল ৩৬৫টি পুকুর। নওগাঁ জেলায় একসঙ্গে এতগুলো পুকুর আর কোথায় নেই।

নওগাঁর এক গ্রামে ৩৬৫ পুকুর খননের নেপথ্যে কী

প্রচলিত মিথ

স্থানীয়রা দীর্ঘদিন থেকেই লোকমুখে শুনে আসছেন, পুকুরগুলো খনন করা হয়েছিল পাল আমলে। সেটা অষ্টম শতাব্দীর দিকে। সে সময় কোনো এক রাজার শাসনকালে রানি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার রোগ সারাতে রজ্যের বৈদ্য, হেকিমদের ডেকে পাঠানো হয়, অনেকেই অনেক ব্যবস্থাপত্র দেন, তবে রোগ সারে না রানির। পরে এক হেকিম রাজাকে বলেন, ৩৬৫ পুকুর খনন করতে হবে। সেসব পুকুরে প্রতিদিন রানি গোসল করবেন। এভাবে এক বছর গোসল করলে রোগ সেরে যাবে। হেকিমের কথামতো রাজা তখন খনন করেন সেই ৩৬৫ পুকুর।

যা বলছেন গবেষকরা

স্থানীয়দের মুখে মুখে সেই পুকুরগুলো নিয়ে এমন গল্প ফিরলেও এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য কেউ দিতে পারেননি।

ধামইরহাট এম এম ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও গবেষক শহিদুল ইসলাম পুকুর খননের ইতিহাস নিয়ে স্থানীয়দের মুখে ফেরা সে কথাটিকেই সত্য বলে জানান। অবশ্য তিনিও অষ্টাদশ শতাব্দীর সময় পাল শাসনামলে পুকুরগুলো খনন করা হয়েছে বলে দাবি করেন।

প্রত্যন্ত এমন গ্রামে একসঙ্গে এতগুলো পুকুর ঠিক কবে খনন করা হয়েছে জানতে চেয়ে একাধিক গবেষকের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. চিত্তরঞ্জন মিশ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নে থাকা পুকুরগুলো সম্পর্কে জানেন বলে নিউজবাংলাকে জানান। তবে পুকুরগুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনিও।

অবশ্য তিনি আরও দুই গবেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন, যারা সেগুলো নিয়ে জানেন বলেও জানান অধ্যাপক মিশ্র।

পরে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তার কাছে নিউজবাংলা ইসবপুরের ৩৬৫ পুকুরের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রানির অসুখ সারাতে রাজা ৩৬৫ পুকুর খনন করেন, সেগুলোতে প্রতিদিন এক পুকুরে রানি এক দিন করে গোসল করেন যে কথা প্রচলিত আছে, এর সবই মিথ। এগুলো সত্য নয়।’

নওগাঁর এক গ্রামে ৩৬৫ পুকুর খননের নেপথ্যে কী

তিনি বলেন,‘ নওগাঁ প্রাচীন আমল থেকে খুবই সমৃদ্ধ একটি স্থান। এই অঞ্চলের যে কয়েকটি মহাবিহার, তার দুটিই নওগাঁয় অবস্থিত। ধামইরহাটের ইসবপুরে যে পুকুরগুলোর কথা বলা হয়, এগুলো সব এক আমলের নয়। কিছু আছে পাল শাসনামলের, কিছু আছে মুসলিম বা মোগলদের শাসনামলে।’

তিনি জানান, ইসবপুরে সাধারণ দুই আকৃতির পুকুর আছে, কিছু পূর্ব-পশ্চিম লম্বা, আর কিছু উত্তর-দক্ষিণ লম্বা। যেসব পুকুর উত্তর-দক্ষিণমুখী সেগুলো মূলত পাল আমলে খনন করা হয়েছিল। আর পূর্ব-পশ্চিমমুখী পুকুরগুলো মুসলিম শাসনামলে অনেক পরে খনন করা।

অবশ্য এখন কিছু পুকুর চার কোনাকৃতির দেখা যায়, এগুলো এমন ছিল না। দীর্ঘদিন থেকে নানাভাবে এগুলো এমন আকৃতি নিয়েছে বলে জানান তিনি।

গবেষক মোস্তাফিজুর জানান, বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় পাল আমলেও পানির তীব্র সংকট ছিল এই এলাকায়। তাই রাজা বা শাসকরা সে সময় বড় বড় পুকুর খনন করতেন। ইসবপুরের যেসব পুকুর সেগুলো খনন করা হয়েছিল মূলত জনকল্যাণে। পানির সংকট যেন না হয়, সে জন্য রাজারা এসব পুকুর খনন করতেন তাদের নিবাসের আশপাশে। দূর-দূরান্ত থেকে এসব পুকুরে আসতেন তখনকার প্রজারা। তারা খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতেন এসব থেকে।

এ ছাড়া এসব পুকুরের আশপাশে ছিল মন্ত্রী, রাজ্যের বিভিন্ন কর্মচারীদের আবাস। তারা নির্দিষ্ট কিছু পুকুরে প্রাতাহ্যিক কাজ ও কিছু পুকুর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতেন। এসবই সেই ৩৬৫ পুকুর খননের সঠিক ইতিহাস, যা সময়ের ব্যবধানে রানির অসুখের গল্প আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক ড. আলী রেজা মুহম্মদ আব্দুল মজিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক গবেষকই নওগাঁর প্রত্ন নিদর্শন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তবে ধামইরহাটের ইসবপুরের যে ৩৬৫ পুকুরের কথা বলা হয়, সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা প্রবন্ধ বা নিবন্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে বের করা কোনো ম্যাগাজিনে উঠে আসেনি।’

এই অধ্যাপকও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোরশেদুল আলম বলেন, ‘একই সঙ্গে ৩৬৫ পুকুর দেশের আর কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। রানির অসুখ সারতেই এসব পুকুর পাল আমলে খনন করা বলে আমরা জেনে এসেছি। এখন পুকুরগুলোর চারপাশে বনায়ন কার্যক্রম করা হয়েছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে। সরকার যদি একটু উদ্যোগ নেয়, তবে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এই স্থানটিতে।’

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ‘এমন স্থাপনা দেশের অন্য স্থানেও আছে বলে মনে হয় না। এ স্থান তেমনভাবে পরিচিতি পায়নি। তাই সরকারের উচিত স্থানটিকে পর্যটনমুখী করার উদ্যোগ নেয়া।’

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নওগাঁ জেলা যেমন কৃষিতে সমৃদ্ধ, ঠিক তেমনি ইতিহাসে বিজড়িত। অনেক প্রাচীন দর্শনীয় স্থান আছে এ জেলায়। আবার অনেক স্থান পরিচিতি ও সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তপ্রায়। ধামইরহাটের চান্দিরা গ্রামের ৩৬৫টি পুকুরও কিন্তু ইতিহাসের স্মৃতি বহন করে।

‘পাল বংশের রাজ্য শাসনের শেষ দিকে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়। এখনও পুকুরগুলো অক্ষত রয়েছে। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেইনি স্থানটিকে সবার মধ্যে তুলে ধরার। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সবার মধ্যে তুলে ধরতে ব্যবস্থা নেয়া হোক।’

নওগাঁর এক গ্রামে ৩৬৫ পুকুর খননের নেপথ্যে কী

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, অন্যদিকে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে দাবি করেন তিনি।

বনায়ন

ধামইরহাট বন বিট কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, চান্দিরা গ্রামের ৩৬৫টি পুকুর অনেক প্রাচীন। পুকুরগুলো সরকারিভাবে লিজ দেয়া আছে। তবে পাড়ে বনায়ন করেছে বন বিভাগ। সে জন্য পুকুরপাড়ের চারপাশে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হয়েছে। জায়গাগুলো অনেক সুন্দর, একসঙ্গে এতগুলো পুকুর আর পুকুরপাড়ে নানা জাতের গাছের ছাঁয়া যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে। একটু উদ্যোগ নিলে স্থানটি বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হতে পারে।

পর্যটনে জোর স্থানীয় প্রশাসনের

নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গণপতি রায় বলেন, ‘একই সঙ্গে ৩৬৫টি পুকুর সত্যিই দারুণ বিষয়। এ এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সঙ্গে চান্দিরা গ্রামের ওই পুকুরগুলোতে যাতে খুব সহজেই যাওয়া যায়, সে জন্য রাস্তা নির্মাণেরও উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুন:
নওগাঁয় শুরু শতবলের ক্রিকেট
নওগাঁয় বঙ্গবন্ধু ম্যারাথন অনুষ্ঠিত
৮৪ হাজার ৪০০ টিকা গেল নওগাঁয়
সেই শিশু রফিকুলের দায়িত্ব নিলেন এক ইউপি চেয়ারম্যান
বাঁশঝাড় থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
GI Approval of Sherpur Chickpeas

শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’-এর জিআই স্বীকৃতি

শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’-এর জিআই স্বীকৃতি
গরুর খাঁটি দুধ প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি বানানো হয়। গুটিগুলো চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে প্রস্তুত করে রাখা ক্ষীরে ছেড়ে দেয়া হয়। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু ছানার পায়েস।

শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ‘ছানার পায়েস’ জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বীকৃতির সনদ হাতে পেয়েছেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান।

গরুর খাঁটি দুধ প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি বানানো হয়। গুটিগুলো চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে প্রস্তুত করে রাখা ক্ষীরে ছেড়ে দেয়া হয়। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু ছানার পায়েস।

শুরুতে হাতেগোনা দুই-একটি দোকানে ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টি খাদ্যপণ্য তৈরি হতো। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন জেলা সদরেই ২০টির বেশি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। জেলার উপজেলাগুলোতেও নিয়মিত তৈরি হয় এই সুস্বাদু ছানার পায়েস।

কারিগর কালিপদ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের এখানে খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় ছানার পায়েস। তাই স্বাদটা একটু ভিন্ন, চাহিদাও ব্যাপক। এক কেজি ছানার পায়েস তৈরির জন্য দুই কেজি দুধ, আধ কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০-১৫ গ্রাম এলাচ লাগে।’

শেরপুর শহরের চারু সুইটস, অনুরাধা, দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নিউ প্রেমানন্দ, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নন্দ গোপাল, মা ভবতারা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হোটেল আবির নিবির, হোটেল হৃদয়, হোটেল নূর রহমান ও বল্লব মিষ্টান্ন ভাণ্ডরে ছানার পায়েস পাওয়া যায়। জেলার পাঁচ উপজেলাতেও বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ছানার পায়েস বিক্রি হয়।

জমিদার আমলেও তৎকালীন জমিদাররা এখান থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে এই মিষ্টি কলকাতায় নিয়ে যেতেন। এখন‌ো শেরপুরে কেউ বেড়াতে এলে ছানার পায়েস খাওয়া চাই-ই চাই। নইলে যেন এক ধরনের অতৃপ্তি থেকে যায়।

বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের জুড়ি নেই। শুধু শেরপুরে নয়, সারা দেশেই রয়েছে এই মিষ্টির ব্যাপক চাহিদা।

গুণে ও মানে অনন্য শেরপুরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ছানার পায়েসকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য গত জানুয়ারি মাসে জেলা ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়ন কমিটি সুপারিশ পাঠায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশের ৪৪তম জিআই পণ্য হিসেবে শেরপুরের ছানার পায়েস স্বীকৃতি পায়।

অনুরাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বতাধিকারী বাপ্পি দে বলেন, ‘ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুব খুশি। কারণ আমরা এর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘শেরপুরের যেকোনো মিষ্টির বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো গরুর খাঁটি দুধে তৈরি। আবার দেশের অন্য সব স্থানের চেয়ে দামও অনেক কম। বর্তমানে প্রতি কেজি ছানার পায়েস ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জন্মদিন, ঈদ, বিয়েসহ বিভিন্ন পার্টিতে ছানার পায়েসের প্রচুর অর্ডার আসে।’

মিষ্টি কিনতে আসা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাগো শেরপুরের ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাইছে শুইনা খুব খুশি হইছি। তাই আজ ছানার পায়েস কিনতে আইলাম।’

স্বীকৃতির সনদ হাতে পেয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুব খুশি। এতে উৎসাহ পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ শেরপুর জেলাবাসী। সে সুবাদে জেলার ঐতিহ্য ও সুনাম বৃদ্ধি পাবে।

এর আগে শেরপুরের তুলশিমালা ধানের চাল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে জেলার দুটি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।

আরও পড়ুন:
‘টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদেরই থাকবে’
গোপালগঞ্জের রসগোল্লা পেল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি
জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল মুক্তাগাছার মণ্ডা
টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য ঘোষণা করেছে সরকার
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পেতে অবশেষে আবেদন

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Srimangale Garo community celebrate the Wangala festival

শ্রীমঙ্গলে ওয়ানগালা উৎসবে মাতলো গারো জনগোষ্ঠী

শ্রীমঙ্গলে ওয়ানগালা উৎসবে মাতলো গারো জনগোষ্ঠী
শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া গারো লাইনে রোববার গারো সম্প্রদায়ের দিনব্যাপী এই উৎসবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় গারো জনগোষ্ঠী তাদের নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া গারো লাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে গারো জনগোষ্ঠীর ওয়ানগালা উৎসব। রোববার সকালে ওয়ানগালা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে গারো সম্প্রদায়ের দিনব্যাপী এই উৎসবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় গারো জনগোষ্ঠী তাদের নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করেন।

ওয়ানগালা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি এলাকায় একসময় জুম চাষের মাধ্যমে বছরে মাত্র একটি ফসল ফলতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে তোলার সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’-কে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো।

মূলত গারোরা ছিল প্রকৃতিপূজারী। সময় পরিক্রমায় গারোরা ধীরে ধীরে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে পালন করা হয়। এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ‘ওয়ানগালা’ পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রীষ্টকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করে থাকেন।

ওয়ানগালা উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য প্রীতম দাস প্রমুখ।

আরও পড়ুন:
নেচে-গেয়ে উদযাপিত হলো গারোদের ‘ওয়ানগালা’ উৎসব
ওয়ানগালায় মুখরিত গারো পাহাড়

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Seng Kutsnem festival of Khasias

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব। ছবি: নিউজবাংলা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) সম্প্রদায়ের ১২৫তম বর্ষবিদায় ও ১২৬তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) সম্প্রদায়ের ১২৫তম বর্ষবিদায় ও ১২৬তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

খাসিদের আয় ও জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ। চলতি মৌসুমে পানের ব্যবসা মন্দা ও আর্থিক সংকটের কারণে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ আয়োজন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিল খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল। তবে পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গেই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে শনিবার আদিবাসী খাসিদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘সেং কুটস্নেম' অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবকে ঘিরে পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উপলক্ষে নানা রঙের পোশাক পরে খাসিরা নাচগান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। মাঠের এক পাশে খাসিদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলা বসে। মাঠের একপাশে সুপারি গাছের পাতা দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আয়োজন কিছুটা কম ছিল। কারণ একেবারে শেষ সময়ে এসে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ২৩ নভেম্বর মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে নেচে–গেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।

‘সেং কুটস্নেম’ উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন।

অনুষ্ঠানস্থলে মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন।

এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন।

হেলেনা পতমী বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর আমাদের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছি। অনুষ্ঠানটি ঘিরে আমরা খাসি সম্প্রদায়ের সবাই একসঙ্গে জমা হয়ে উৎসবে মেতে উঠি।’

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা অনুষ্ঠানটি করতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা সেং কুটস্নেম আয়োজন করি।’

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, ‘সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। দেশ–বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষবিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব।’

আরও পড়ুন:
ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসবে মাতলেন খাসিয়ারা
মৌলভীবাজারে মণিপুরী গারো ও খাসিয়াদের উৎসব, চলছে প্রস্তুতি
ইউটিউবারের উদ্যোগে অবশেষে খাসিয়াপুঞ্জিতে বসল প্রাথমিক বিদ্যালয়
ইনফো হান্টারের ভিডিও: খাসিয়াপুঞ্জিতে পানির দুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Manipuris Maharasotsava is over

শেষ হলো মণিপুরীদের মহারাসোৎসব

শেষ হলো মণিপুরীদের মহারাসোৎসব ছবি ও কোলাজ: নিউজবাংলা
শুক্রবার দুপুরে বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হন নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার মানুষ। তাদের পদচারণায় সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরী পাড়াগুলো। শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

নাচ-গানের মধ্যদিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শেষ হয়েছে মণিপুরীদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা।

শনিবার ভোরে এ আয়োজনের সমাপ্তি হয়েছে। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাসনৃত্যের বর্ণিল এই উৎসব উপভোগ করেছেন দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ।

শুক্রবার দুপুর ১টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হন নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার মানুষ। তাদের পদচারণায় সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরী পাড়াগুলো। শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

উপজেলার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ মাঠে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স মাঠে মণিপুরী মী-তৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে হয়েছে মহারাসোৎসব।

রাস উৎসব ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। বসেছিল রকমারি আয়োজনে বিশাল মেলা।

মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামণ্ডপ মাঠে মণিপুঈ মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ১৮২তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে আদমপুর গ্রামে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও মী-তৈ মণিপুরীদের ৩৯তম আলাদা উৎসব হয়েছে।

মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘মাধবপুর জোড়ামণ্ডপ রাসোৎসব এ বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটে।

‘মণিপুরীদের রাসলীলার অনেক ধরন। নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, বসন্তরাস, মহারাস, বেনিরাস বা দিবারাস। শারদীয় পূর্ণিমা তিথিতে হয় বলে মহারাসকে মণিপুরীরা পূর্ণিমারাসও বলে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় ২০ দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেছি আমরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন ছিল উৎসবের নিরাপত্তায়।’

আরও পড়ুন:
শেষ হলো দুবলার চরের রাস উৎসব

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Kalpa ship floating festival in Bankkhali river

বাঁকখালীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’

বাঁকখালীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে আয়োজন করা হয় কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। ছবি: নিউজবাংলা
কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে আয়োজন করা হয় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। অপূর্ব কারুকাজে তৈরি একেকটি দৃষ্টিনন্দন জাহাজ নৌকায় বসিয়ে ভাসানো হয় নদীতে। বিকেল গড়াতেই উৎসব বর্ণীল হয়ে ওঠে হাজারো দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে।

ফানুস উড়ানোর বর্ণিল আয়োজনে আকাশ রাঙানোর পর এবার প্রবারণায় কল্প জাহাজ ভাসানোর আনন্দে মেতেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়। অপূর্ব কারুকাজে তৈরি একেকটি দৃষ্টিনন্দন জাহাজ নৌকায় বসিয়ে ভাসানো হয় নদীতে। জাহাজগুলো যাচ্ছে নদীর এপার থেকে ওপারে। আর সেই জাহাজে চলছে শত শত প্রাণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। নদীর দুই পাড়েও উৎসবে মেতেছেন হাজারও নর-নারী।

বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে আয়োজন করা হয় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। দুপুরে শুরু হওয়া এ উৎসব বিকেল গড়াতেই বর্ণীল হয়ে ওঠে হাজারো দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে।

বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে যুগ যুগ ধরে বাঁকখালী নদীতে কল্প জাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে। এবার ভাসানো হয় পাঁচটি কল্প জাহাজ।

বাঁকখালীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’

কক্সবাজার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলা সদর পার হয়েই বাঁকখালী নদীর ঘাট। বিকেল ৩টায় এই ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লোকারণ্য নদীর দুই পাড়। গান-বাজনা, কীর্তন ও ফানুস ওড়াউড়িতে মেতে উঠেছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষরা।

পাঁচ থেকে ছয়টি কাঠের নৌকার ওপর বসানো হয়েছে একেকটি কল্প জাহাজ। ইঞ্জিন নৌকাও দেখা গেল দুটি জাহাজে। পানিতে ভাসছে মোট পাঁচটি কল্প জাহাজ। মূলত বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙিন কাগজে রঙের কারুকাজে জাদি, হাঁস, ময়ূর, হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এসব কল্প জাহাজে। চমৎকার নির্মাণশৈলী আর বৈচিত্র্যে ভরা প্রতিটি জাহাজই যেন স্বকীয়তায় অনন্য।

ভাসমান এসব জাহাজে চলছে বৌদ্ধ কীর্তন। কেউ নাচছে, কেউ গাইছে; আবার কেউ ঢোল, কাঁসরসহ নানা বাদ্য বাজাচ্ছে। শিশু-কিশোরদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল বাঁধভাঙা!

আয়োজকরা জানালেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অংশগ্রহণকারী জাহাজের সংখ্যা কম। দেশের

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। যে কারণে অনেক গ্রামে এবার জাহাজ তৈরি করা হয়নি।

চট্টগ্রাম থেকে প্রবারণায় শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন পূজা বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘প্রায় সময় চট্টগ্রামেই প্রবারণা উদযাপন করি। উৎসব বলতে গেলে ওখানে শুধু ফানুস উড়ানো হয়। কিন্তু এই জাহাজ ভাসানোর আনন্দ সত্যিই অসাধারণ।’

বাঁকখালীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’

কলেজছাত্রী প্রেরণা বড়ুয়া স্বস্তি বলেন, ‘এটি আমাদের প্রাণের উৎসব। এই উৎসব মূলত বৌদ্ধদের হলেও প্রতি বছর এটি অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলায় পরিণত হয়।’

চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক সংগীত বড়ুয়া বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা এই উৎসব উদ্‌যাপন করে আসছি। জাহাজ ভাসানোর প্রায় ১৫-২০ দিন আগে থেকে বৌদ্ধ গ্রামগুলোতে জাহাজ তৈরির আনন্দ শুরু হয়। বিশেষ করে গ্রামের শিশু-কিশোরেরা এই উদ্যোগ নিয়ে থাকে। প্রতিবছর প্রবারণার পরদিন আমরা বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসানোর আনন্দে মেতে উঠি।’

উৎসবে আসা রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক মানসী বড়ুয়া বলেন, ‘শত বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার তাগিদ দেয়। এই উৎসব বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও সবার অংশগ্রহণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলায় পরিণত হয়।’

রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘প্রায় দুশ বছর আগে থেকে এই জাহাজ ভাসা উৎসবের প্রচলন হয় পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে। সে দেশের মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এই উৎসবের আয়োজন করেন। শত বছর ধরে রামুতে মহাসমারোহে এই উৎসব হয়ে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘মহামতি বুদ্ধ রাজগৃহ থেকে বৈশালী যাওয়ার সময় নাগ লোকের অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন নাগেরা চিন্তা করলেন বুদ্ধপূজার এই দুর্লভ সুযোগ তারা হাতছাড়া করবে না। সঙ্গে সঙ্গে নাগলোকের পাঁচশত নাগরাজ পাঁচশ’ ঋদ্ধিময় ফণা বুদ্ধ প্রমুখ পাঁচশ’ ভিক্ষুসংঘের মাথার ওপর বিস্তার করল।

‘এভাবে নাগদের পূজা করতে দেখে দেবলোকের দেবতারা, ব্রহ্মলোকের ব্রহ্মরা বুদ্ধকে পূজা করতে এসেছিলেন। সেদিন মানুষ, দেবতা, ব্রহ্মা, নাগ সবাই শ্বেতছত্র ধারণ করে ধর্মীয় ধ্বজা উড্ডয়ন করে বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। বুদ্ধ সেই পূজা গ্রহণ করে পুনরায় রাজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই শুভ সন্ধিক্ষণ হচ্ছে শুভ প্রবারণা দিবস।’

মূলত চিরভাস্বর এই স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য বাংলাদেশের বৌদ্ধরা বিশেষ করে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা পূর্ণিমায় বাঁকখালী নদীতে ‘স্বর্গের জাহাজ’ ভাসিয়ে প্রবারণা উদ্‌যাপন করে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া।

উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিথুন বড়ুয়া বোথামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল।

আরও পড়ুন:
জাহাজ ভাসা উৎসব, সম্প্রীতির মিলনমেলা
কল্প জাহাজ ভাসিয়ে সম্প্রীতির আহ্বান
সত্য-সুন্দরের আশায় উড়ল ফানুস
প্রবারণার ফানুসে উড়ল বুদ্ধের চুল ওড়ানোর স্মৃতি

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Butchers of Meherpur are running to Dhaka in the hope of higher wages

অধিক মজুরির আশায় ঢাকায় ছুটছেন মেহেরপুরের কসাইরা

অধিক মজুরির আশায় ঢাকায় ছুটছেন মেহেরপুরের কসাইরা স্থানীয়ভাবে কসাই সংকট হবে জেনেও অধিক মুজুরির আশায় ঢাকায় ছুটছেন মেহেরপুরের বেশিরভাগ কসাই। ছবি: নিউজবাংলা
প্রতি বছর কোরবানি ঈদের এক-দুই দিন আগে তারা ঢাকায় যান। অনেক কসাই ঢাকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে আগেভাগেই ঠিক করে নেন কাদের পশু জবাই করবেন ও মাংস কাটবেন। কসাইরা এভাবে ঢাকায় চলে যাওয়ার ফলে প্রতি বছরই মেহেরপুরে কসাইয়ের সংকট দেখা দেয়।

দুই বছরের মধ‍্যে কোনো ঈদ দেশে পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করার সুযোগ পাননি প্রবাসী আব্দুল কাদের। তবে এবার ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগেই ছুটিতে দেশে এসেছেন। কোরবানির পশুও কিনেছেন তিনি। তবে বিপাকে পড়েছেন কসাই খোঁজ করতে গিয়ে। ইতোমধ্যে তিনি দশজন পেশাদার কসাইয়ের বাড়িতে গিয়েছেন, কিন্তু কেউ ঈদের দিন পশু জবাই করে দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।

মেহেরপুরের পোশাক ব‍্যাবসায়ী ওবায়দুর বলেন, ‘কোরবানির ঈদ আসতে বাকি আছে আর দুদিন। কোরবানির পশুও কিনেছি এক সপ্তাহ হয়েছে। তবে এখনও কোন কসাইয়ের সন্ধান মেলাতে পারিনি।

‘ঈদের আগে এমনিতেই দোকানে চাপ থাকে। তার ওপর এখন কসাই খোঁজা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকজন কসাইকে বলেছি। বাড়তি মুজুরি দিয়ে পুষিয়ে দেয়ার কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। তারা বলছেন- এমনিতেই আমাদের ঢাকায় গরু বেচতে যেতে হবে। সেইসঙ্গে কসাইয়ের কাজটা করলেও হাজার বিশেক টাকা আয় করা যাবে। তাই এলাকায় থাকব না।’

আব্দুল কাদের কিংবা ওবাইদুর রহমানই শুধু নয়, ঈদের আগে তাদের মতো অনেকেই কসাই নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

স্থানীয়ভাবে কসাই সংকট হবে জেনেও অধিক মুজুরির আশায় ঢাকায় ছুটছেন জেলার বেশিরভাগ কসাই। ঈদুল আজহা সামনে রেখে পশু জবাই ও মাংস বানানোর কাজে যোগ দিতে প্রতি বছরের মতো এবারও মেহেরপুরের পেশাদার ও মৌসুমি কসাইরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করেছেন।

প্রতি বছর কোরবানি ঈদের এক-দুই দিন আগে তারা ঢাকায় যান। অনেক কসাই ঢাকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে আগেভাগেই ঠিক করে নেন কাদের পশু জবাই করবেন ও মাংস কাটবেন। এভাবে দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে এক ধরনের যোগাযোগ গড়ে উঠেছে তাদের।

কসাইরা এভাবে ঢাকায় চলে যাওয়ার ফলে প্রতি বছরই মেহেরপুরে কসাইয়ের সংকট দেখা দেয়।

নিশিপুর জামে মসজিদের ইমাম কিতাব আলী বলেন, ‘আমাদের সমাজে অনেক পশু কোরবানি দেয়া হয়। অধিকাংশ জবাই আমাকেই করা লাগে। তবে চামড়া ছাড়ানো মাংস চুরানোর জন‍্য লোক পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেই পশু জবাই করে সিরিয়াল দিয়ে বসে থাকেন। অনেকে আবার সিরিয়াল না পাওয়ায় ঈদের পরের দিন পশু কোরবানি করেন।’

কসাই সারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে একটা বড় ছাগল জবাই করে পনের শ টাকা টাকা ও গরু জবাই করে পাই আড়াই হাজার টাকার মতো। অথচ একই কাজ ঢাকায় গিয়ে করলে দ্বিগুণ টাকা পাওয়া যায়, সঙ্গে পাওয়া যায় সম্মানও। আবার গ্রামে কাজ করে অনেক সময় ঠিকমতো টাকাও পাওয়া যায় না।’

ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের জালাল কসাই জানান, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদে ঢাকায় যান তিনি; সঙ্গে রাখেন চারজন সহকারী।

তিনি জানান, পশুর মূল্যভেদে পাশ্রমিক নিয়ে থাকেন তিনি। যে টাকায় পশুটি কেনা হয়েছে, তার প্রতি হাজারে ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা রেট ধরে পারিশ্রমিক নেয়া হয়।

তবে এবার সেই রেট বাড়িয়ে দুইশ টাকা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ঈদের দিন ৫ থেকে ৬টি পশু জবাই ও মাংস কাটতে পারেন তারা। কাজ শেষে ঈদের পরদিন রাতে কিংবা দিনে রাজধানী ছাড়েন।

জেলার গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পাশা জানান, যারা মাংস কাটার কাজে ঢাকায় যাচ্ছেন, তাদের ইতোমধ্যে ট্রেড লাইসেন্স ও পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চল থেকে দুইশজনের বেশি কসাই ঢাকামুখী হবেন। এ কারণে তাদের কাছে মাংস কাটার ধারালো ও ভারী অস্ত্র থাকবে। পথিমধ্যে কোনো আইনগত সমস্যায় পড়লে যাতে সমাধান হয়, সে কারণে তাদের কার্ড দেয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা
বড় গরু নিয়ে বিপাকে শেরপুরের খামারিরা
হাটে বেপারিদের আনাগোনায় লাভ চাষির, কোণঠাসা সাধারণ ক্রেতা
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট বরদাশত নয়: র‍্যাব
এক হাটের পশু অন্য হাটে নেয়ার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: আইজিপি

মন্তব্য

বাংলাদেশ
At the last minute the animal market of the capital has gathered satisfied buyers

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা কোরবানির জন্য বিক্রি হয়ে যাওয়া গরুটিকে শেষবারের জন্য আদর করে দিচ্ছেন এক বিক্রেতা। রাজধানীর দক্ষিণ শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি হাট থেকে তোলা। ছবি: নিউজবাংলা
ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত হাট থাকলেও এখন আর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। হাটে ঘুরেফিরে দর-দামে মিলে গেলেই নিয়ে নিচ্ছেন পছন্দের পশুটি।

মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে স্থায়ী দুটিসহ মোট ২০টি পশুর হাটে শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। পশুর হাটগুলোতে দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী দুই সিটিতে পশুর হাট বসেছে। চলবে ১৭ জুন অর্থাৎ ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত মোট ৫ দিন। বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক হাট বসলেও হাটগুলোতে মূলত কয়েক দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করে পশুর পিকআপ ও ট্রাক। খবর বাসস

ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত হাট থাকলেও এখন আর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। হাটে ঘুরেফিরে দর-দামে মিলে গেলেই নিয়ে নিচ্ছেন পছন্দের পশুটি।

রোববার রাত পোহালেই পরের দিন সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। রাজধানীজুড়ে মানুষ ও কোরবানির পশুতে একাকার। উত্তরার দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গায় বসেছে বড় দুটি পশুর হাট। এই পশুর হাটগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল ও ভেড়া। শুক্রবার পর্যন্ত পশুর দাম একটু কম থাকলেও আজ দাম কিছুটা চড়া। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মতে দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

শনিবার উত্তরার গরুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাটভর্তি বিভিন্ন জাতের দেশীয় ছোট, মাঝারি ও বড় জাতের অসংখ্য গরু উঠেছে, হাটে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে পশুর হাটে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই স্থানীয়ভাবে খামারে লালন-পালন করা দেশি গরুই পছন্দ করছেন। অনেক ক্রেতা মনে করছেন শেষ দিনে দাম কমে যাবে। তখন কোরবানির পশু তারা সস্তায় কিনবেন। তবে বেশির ভাগ ক্রেতাই আজকের মধ্যেই পশু কিনে নেবেন বলে জানিয়েছেন।

বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু নিয়ে উত্তরার হাটে এসেছেন মোস্তফা মাতাব্বর, মো. রাসেল ও রফিক নামে তিন গরু ব্যবসায়ী। তারা জানান, এ বছর পশুর হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। হাটে যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দেশীয় জাতের গরু এবং স্বাভাবিক খাবার দিয়ে খামারে লালন-পালন করা গরুই বেশি পছন্দ করছেন। উত্তরার হাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাটে এলেও দর-দাম করেই তাদের পছন্দের গরু কিংবা ছাগল কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বাজারে বড় গরুরও কমতি নেই। তবে ছোট ও মাঝারি জাতের গরুর চাহিদাই বেশি।

হাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা সালাম বেপারী বলেন, পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা, হাটে তোলা, খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা- এই পুরো সময়টাজুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। এ ছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা, গরুকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানান কারণে হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শিশির হাটে এসেছেন গরু কিনতে। তিনি বলেন, ‘যতটুক ঘুরে দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে এবার গরুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু কমই আছে।’

গরুর পাশাপাশি হাটে প্রচুর ছাগল, ভেড়াও উঠেছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির একটি ছাগল ক্রয় করা সম্ভব। বগুড়ার নবাব, লাট বাহাদুর, কালো মানিক ও লাল বাদশা নামে ৪টি বড় জাতের বিশাল গরু উত্তরার হাটে আনা হয়েছে। এগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে ১২-১৫ লাখ টাকা।

উত্তরার শ্রমিক নেতা রুবেল জানান, ‘গতকাল রাতে আমার বন্ধু উত্তরার গরুর হাট থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি বেশ বড় আকৃতির গরু কিনেছেন। আমার কাছে মনে হলো হাটে হঠাৎ গরুর দাম কমে গেছে। এতে আমি বেশ খুশি এ কারণে যে, এ বছর অনেকেই তার সাধ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিতে পারবেন।’

রাজধানীর গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন শুধু ছোট সাইজের গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া বাজারে প্রচুর পরিমাণ ছাগলও উঠেছে। বেচাকেনাও বেশ জমে উঠেছে। ছোট খাসির দাম ১০-১৫ হাজার টাকা। মাঝারি খাসি ২০-২৫ হাজার এবং বড় জাতের খাসি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

গাবতলী পশুর হাটে ভারতের রাজস্থান থেকে আনা উট তোলা হয়েছে। উট দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থী ও ইউটিউবাররা। মো. মাহফুজুর রহমান অপু দুটি উট এক মাস আগেই কিনেছেন। এরপর সড়কপথে উট দুটি বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উটের মালিক মো. মাহফুজুর রহমান অপু বলেন, ‘প্রতি উটে ১৪-১৫ মণ মাংস হবে। আমার পরিবার উটের ব্যবসার সঙ্গে ২০-৩০ বছর ধরে জড়িত। আমার বাবাও এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরিচর্যা হিসেবে ঘাস, কুড়া ও ভুসি খাওয়ানো হচ্ছে উট দুটিকে। রাজস্থান থেকে দুটি উট নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য কোরবানির সময় বিক্রি করা। আমরা দুটি উটের দাম চাচ্ছি ৬০ লাখ টাকা। তবে কিছু কমে হলেও বিক্রি করব।’

উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন পশুর হাটের ইজারাদার মো. কফিল উদ্দিন মেম্বার বলেন, ‘হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। হাটে গরুতে সয়লাব হয়ে গেছে। প্রচুর পরিমাণ গরু উঠেছে। তবে পশুর হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। আশা করছি, আজ রোববার আবহাওয়া ভালো থাকলে বিকেল থেকে হাটে পশুর বেচাকেনা তুলনামূলকভাবে বাড়বে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু আসা অব্যাহত রয়েছে। এই হাটে শতকরা ৫ টাকা হারে হাসিল নেওয়া হচ্ছে। হাটে নিরাপত্তার কোনো অভাব নেই।’

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ৯টি হাট এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি হাট বসেছে। তবে এ বছর আদালতের নির্দেশনার কারণে আফতাবনগরে হাট বসেনি।

ঢাকা উত্তরে অস্থায়ী ৮টি হাটের মধ্যে রয়েছে- উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, মস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খোলা জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ও দক্ষিণখানের জামুন এলাকার খালি জায়গা।

ঢাকা দক্ষিণে অস্থায়ী ১০টি হাটের মধ্যে রয়েছে- খিলগাঁও রেলগেট মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগে রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।

আরও পড়ুন:
ঈদযাত্রার প্রভাব নেই সদরঘাটে, গার্মেন্টস ছুটির অপেক্ষা
বাজার কাঁপাতে আসছে বিগবস, বাদশা, টাইগার, বুলেট ও রক
পশুর হাটে ‘ষাঁড়ের লাথিতে’ খামারি নিহত
পশুর হাটে বাড়ছে রঙিন মালা দড়ির চাহিদা
ঢাকার কোথায় কোথায় বসছে কোরবানির পশুর হাট

মন্তব্য

p
উপরে