যতদূর চোখ যায় কেবল পানি আর পানি। রহিমা খাতুনের ঘরটি দূর থেকে দেখলে মনে হয় পানিতে ভেসে আছে। ঘরের ভেতরও পানি। এর মধ্যেই স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকছেন, যাননি আশ্রয়কেন্দ্রে।
রহিমার বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ে। এই পুরো ইউনিয়নই এখন পানির ওপর ভাসছে। প্রতিটি ঘরেই পানি। বড় বড় ঢেউয়ে ভেঙে পড়ছে মাটির ঘরবাড়ি।
এমন অবস্থায় আশ্রয়কেন্দ্র কেন গেলেন না রহিমা?
তিনি বলেন, ‘ঘর ছেড়ে গেলে তো গরিবের যে সামান্য মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে, তাও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে পানি। চোরেরা লুটে নেবে। কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রেখেছি ঘরটা।’
কখনও পানির ওপর, আবার কখনও নৌকায় বা চৌকিতে উঠে দিন কাটে রহিমার। তবে রাতে সাপের ভয়ে তার ঘুম আসে না।
রহিমা বলেন, ‘দিনেই অনেক সাপ ঘরের আশপাশ দিতে ভেসে যেতে দেখি। একদিন ঘরেও ঢুকে পড়েছিল একটা বিষাক্ত সাপ। তাই রাত হলে আর সাপের ভয়ে ঘুমাতে পারি না। রাতে তো কিছু দেখা যায় না। তাই ভয়ে থাকি। ছেলেকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি।’
কাঠইর ইউনিয়নের বাসভাসিদের এখন ভয় ঢেউয়ের তোড়ে ঘর ভাঙার আর সাপের। সঙ্গে যোগ হয়েছে খাবারের সংকট ও রোগবালাইয়ের শঙ্কা।
মাঝে মাঝে নৌকায় করে কিছু লোক আসেন এখানে। খাবার, পানি ও ওষুধ দিয়ে যান তারা। এসবের ওপরেই নির্ভর করে দিন কাটছে সুনামগঞ্জ শহর লাগোয়া এই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।
রহিমা খাতুনের ঘর থেকে বেরিয়ে নৌকায় করে কিছুদূর এগোতেই দেখা মেলে আরেক বৃদ্ধের। পানিতে প্রায় ভেসে আসছেন, যেন কচুরিপানা।
বৃদ্ধের নাম আসকর আলী। কাছে যেতেই বললেন, ‘১৫ দিন ধরে ঘরসহ পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। পানি কিছুতেই কমছে না। ঘরে বসে থেকে তো আর চলছে না। তাই কাজের সন্ধানে বেরিয়েছি। দেখি কোথাও কিছু পাই কি না।’
এই ইউনিয়নের কলাইয়া গ্রামের মো. শহিদুলও রাতে ঘুমাতে পারেন না। তার ঘরেও পানি।
হাওর অঞ্চলে এই বড় বড় ঢেউকে আফাল বলে।
শহিদুল বলেন, ‘আফালের কারণে ঘরের বেড়া ভেঙে পড়ছে। একেকটা আফাল আসে আর মনে হয় এই বুঝি পুরো ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। এই ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। সারা রাত জেগে আল্লাহ আল্লাহ করি।’
একই অবস্থা পাশের মোহনপুর ইউনিয়নেরও। সেখানকার দেওয়াননগর গ্রামের আসলাম মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুদিন আগে আমার মেয়ে খুব অসুস্থ হয়েছিল। কিন্তু তাকে কোনো ডাক্তার দেখাতে পারিনি। ওষুধ কিনে দিতে পারিনি।
‘পানির কারণে এই এলাকায় কোনো ফার্মেসি ও দোকানপাট খোলা নেই। কারও অসুখ হলেও ঘরে বসে মরা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য জ্যোৎস্না বেগমের ঘরেও পানি।
তিনি বলেন, ‘এখন আর কী পানি দেখছেন। আর পাঁচ-ছয় দিন আগে এলে দেখতেন অবস্থা। অনেক মানুষ ঘরের চালে উঠে তীরে ধরে বসেছিল। পুরো ঘরই তলিয়ে গিয়েছিল পানিতে। এখন আবার পানি বাড়ছে।’
শহর ছাড়া গোটা সুনামগঞ্জেরই চিত্র এমন। শহর থেকে পানি দুদিন ধরে নামছে।
গত ১৫ জুন থেকেই পানিবন্দি পুরো সুনামগঞ্জ এবং সিলেট। সরকারি হিসাবেই এই দুই জেলায় অন্তত ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি এখনও। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি।
সুনামগঞ্জ শহরে ঢুকতেই দেখা যায়, বিভিন্ন সড়কের পাশে লেপ, তোশক, জাজিম স্তূপ করে ফেলে রাখা। চৌকিসহ আসবাবপত্রও ফেলে রাখা কয়েক জায়গায়।
শহরের নতুনপাড়া এলাকার সুজক নন্দী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ১০ দিন ঘরের ভেতর পানি ছিল। পানি এত দ্রুত বেড়েছে যে কোনো আসবাবপত্র সরানো যায়নি। পানি নামার পর আজ ঘরে এসে দেখি লেপ-তোশক পচে গন্ধ হয়ে গেছে। তাই এগুলো ফেলে দিচ্ছি। আসবাবপত্রও নষ্ট হয়েছে অনেক।’
স্থানীয় সরকার বিভাগ সুনামগঞ্জের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেনের সরকারি বাসাও তলিয়েছে বন্যায়।
জাকির সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীরও দায়িত্বে আছেন।
ঘরে পানির চিহ্ন দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম তলা পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। পানিহীন কোনো একতলা বাসা ছিল না এখানে। প্রথম দুই-তিন দিন তো একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল সবাই। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। আমরাই কোনো খোঁজখবর পাচ্ছিলাম না।’
পানি কমছে সিলেটে
গত দুদিন বাড়ার পর শুক্রবার থেকে আবার কমতে শুরু করেছে সুরমা নদীর পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমটার কমেছে। তবে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে কুশিয়ারা নদীর পানি।
তবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে শুক্রবারও। এই বৃষ্টিতে অবশ্য পানি বাড়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ গার্মেন্টস কর্মী নুরুজ্জামানকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তীব্র স্রোতের কারণে ডুবুরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারছে না। তবে নুরুজ্জামানকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের ডিফেন্সর স্টেশন অফিসার সঞ্জয়।
সোমবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে সেতুর ঢাকামুখী মাওয়ার ১০/১১ নম্বর পিলার অংশে চলন্ত প্রাইভেটকার থেকে ঝাঁপ দেন ৩৮ বছরের নুরুজ্জামান। তার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানা এলাকায়। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের উর্মি গার্মেন্টসে কাজ করতেন তিনি।
এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও তার খোঁজ পায়নি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু করে নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
তবে তীব্র স্রোতের কারণে ডুবরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে ঠিক কী কারণে ওই ব্যক্তি নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মাওয়া নৌপুলিশ। নদীতে ঝাঁপ দেয়ার কারণ বলতে পারছেন না নুরুজ্জামানের স্ত্রী ও ঝাঁপ দেয়ার সময় প্রাইভেটকারে থাকা ওমর ফারুকও।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে নৌপুলিশ।
সোমবার রাতে সেতু থেকে ঝাঁপ দেয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি ধারণ করা হয় পাশের লেনে থাকা বিপরীতগামী অপর একটি চলন্ত গাড়ি থেকে। বলা হচ্ছে, চলন্ত প্রাইভেটকার থেকেই লাফ দেন নুরুজ্জামান। তবে গাড়ি চলন্ত অবস্থায়ই তিনি লাফ দিয়েছেন কী-না, ওই ভিডিও থেকে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
নুরুজ্জামান যখন নদীতে ঝাঁপ দেন, সে সময় চালক ছাড়া প্রাইভেটকারে ছিলেন পেশায় অটো মিস্ত্রি ওমর ফারুক। তারা নারায়ণগঞ্জে একই এলাকায় থাকেন।
ঘটনার পর তিনি জানান, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে এদিন সকাল ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে রওনা দিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান তারা। তবে তারা সমাধিতে ফুল দিতে পারেননি। সেখান থেকে ফেরার পথেই পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দেন নুরুজ্জামান।
ওমর ফারুকের বর্ণনায়, ‘৩/৪ দিন আগে থেকে (নুরুজ্জামান) বলতেছিল- আমারে নিয়া টুঙ্গিপাড়ায় যাইব, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিব, শ্রদ্ধা জানাইব। আমার তো কাজ আছে, আমি যাইতে পারুম না বলি। তখন সে আমাকে বলল, তোমার কাজের মজুরি আমি দিয়া দিব, আমার সঙ্গে চলো। আমি লোকটার কথা ফালাইতে পারিনি। সে জন্য আমি তার সাথে গেছি।
‘কাঁচপুর থেকে তার সাথে আমি গাড়ি ভাড়া করি। সেখান থেকে আমরা সকালে রওনা দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাই। ওইখানে যাওয়ার পর আমাদের কার্ড নাই, তাই আমরা ঢুকতে পারি নাই। তখন প্রধানমন্ত্রীর আসার সময় ছিল। বড় নেতারাও ওইখানে দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিল, তারাও আমাদেরকে ওখান থেকে সরে যেতে বলে। তখন আমরা সাইডে আইসা পড়ছি।’
সমাধিতে ফুল দিতে না পেরে নুরুজ্জামান সে সময় মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে ভিডিও করার সময় বলতেছিল, এই ভিডিওগুলি আমি ফেসবুকে ছাইড়া দিমু। আমি ফুল দিতে পারি নাই, কষ্ট পাইছি। সাড়ে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। আমি সারা মাসের বেতনের টাকা খরচ কইরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল ও শ্রদ্ধা জানাইতে আসছি, আমি বঙ্গবন্ধুরে কতটুকু ভালবাসি তাই ভিডিওর মধ্যে...’
ওমর ফারুকের ভাষ্য, সেখানে ২ ঘণ্টার মতো অবস্থান করে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে ব্যর্থ হয়ে তারা বাড়ি উদ্দেশে রওনা দেন। ফেরার পথে পদ্মা সেতুতে ঢাকাগামী লেনটিতে কাজ চলছিল। সে কারণে তাদের প্রাইভেটকারটিও ধীরগতিতে ছিল। তখনই কারের পেছনের সিটে বসা নুরুজ্জামান হঠাৎ দরজা খুলে নদীতে ঝাঁপ দেন।
এ ঘটনার কারণ জানেন না স্ত্রী সবুরাও। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি, আমার স্বামী পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিছে। খবর শুনে সেখানে গিয়ে আমি তাকে খুঁজতে থাকি। কী কারণে সে নদীতে ঝাঁপ দিছে বলতে পারি না।’
এ বিষয়ে মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ অহিদুজ্জামান বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করেছিলেন নুরুজ্জামান। কিন্তু ফুল দেয়ার অনুমতি কার্ড না থাকায় সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর পদ্মা সেতুতে ঢাকামুখী লেন দিয়ে ফেরার পথে নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি।
‘এ ঘটনায় নুরুজ্জামানের সঙ্গে গাড়িতে থাকা ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাঁড়িতে নেয়া হয়েছে।’
ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের ডিফেন্সর স্টেশন কর্মকর্তা সঞ্জয় বলেন, ‘তীব্র স্রোতের কারণে ডুবুরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারেনি। তবে নৌপুলিশের সহায়তায় সেতুর আশপাশ এলাকায় নুরুজ্জামাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।’
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত পুলিশের ভূমিকার বিষয়টি তদন্তে জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে সোমবার রাতে কমিটি গঠন করা হয়।
নিউজবাংলাকে মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কে এম এহসান উল্লাহ। তবে কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
বরগুনা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের সামনে সোমবার দুপুরে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে বেধড়ক পেটায় পুলিশ।
এ সময় সেখানে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনায় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল গাড়ি ভাঙচুরকারীকে তারা চিনতে পেরেছে। আমি বলেছি, যে ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আপনাদের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারবে। আমি তাদের মার ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে এত পুলিশ আসছে, যে কমান্ড শোনার মতো কেউ ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা মহররম ছিলেন সেখানে। তিনি অনেক ভুল করেছেন।
‘যেখানে আমি উপস্থিত, সেখানে তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। আমি তাকে মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম। তারা (পুলিশরা) আমার কথা শোনেননি।’
এমপি শম্ভুর করা অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে কী ঘটেছে ডিআইজি স্যারের নেতৃত্বে আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এমপি সাহেব মুরুব্বি মানুষ। তার সঙ্গে পুলিশের কেউ অশোভন আচরণ করে থাকলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহররম আলী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা কল রিসিভ করেননি। পরে সরকারি নম্বরের ওয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
যা ঘটেছিল
বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর পদবঞ্চিত কয়েকজন হামলা চালায়। এ সময় দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিল্পকলায় প্রবেশের সময় হামলাকারীরা ছাদ থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ কারণে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে।
আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরপর ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন।
এতে জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ মিছিল ও ভাঙচুর চালায়।
আরও পড়ুন:পারিবারিক কলহের জেরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গৃহবধূকে শিলের আঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত রুবেল মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।
সদর উপজেলার পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ১৯ বছরের ফারজানা আক্তার পশ্চিম রসুলপুর এলাকার নুর নবীর মেয়ে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হক।
নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তিনি জানান, একই এলাকার রুবেলের সঙ্গে ছয় মাস আগে বিয়ে হয় ফারজানার। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে কলহ চলছিল।
এর জেরে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে বিচার-সালিশও হয়েছে তাদের। গত সোমবারও সালিশ হয় তাদের নিয়ে। কিন্তু আজ ভোরে আবারও তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে শিল দিয়ে ফারজানার মুখে ও মাথায় আঘাত করে গুরুতর আহত করেন রুবেল।
এ সময় ফারজানার চিৎকারে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ফারজানার মৃত্যু হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘সকালে গৃহবধূর স্বজনরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।’
ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক মোস্তফা কামাল খান বলেন, ‘ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী রুবেল মিয়াকে আটক রাখে। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসের চারটি বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় দেশের উত্তরবঙ্গমুখী কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে।
আগামীকাল বুধবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
রোববার রাতে গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়া দ্রুতযান এক্সপ্রেসের চারটি যাত্রীবাহী বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে আহত হয় ৭ যাত্রী।
দুর্ঘটনার কারণে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১১ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সোমবার সকাল ৮টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত পঞ্চগড়গামী ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি সরিয়ে নেয়া হলে চলাচল স্বাভাবিক হয়।
তবে পরবর্তী সময়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও বেশ কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলস্টেশনের পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল হক।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ‘গত পরশুদিন দুর্ঘটনার পর কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে। যে ট্রেনগুলো দেরিতে ছেড়ে গেছে সেগুলো রেলওয়ে পশ্চিম বিভাগের অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ ও খুলনাগামী ট্রেন বলেই জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এগুলোকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যায় না। কয়েকটি ট্রেন ২-৩ ঘণ্টা দেরি করেছে দুর্ঘটনার কারণে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত পরশুদিন দুর্ঘটনা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক দেরি হয়েছে। প্রায় ১১-১২ ঘণ্টা লেগেছে। সে সময় প্রায় ১২ ঘণ্টার মতো উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সেই পরিস্থিতি এখনও ফেস করতে হচ্ছে।’
তিনি জানান, উত্তরবঙ্গগামী কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে। যার মধ্যে রয়েছে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস, পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ও খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন। যার প্রতিটি ট্রেন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামীকালের মধ্যে ট্রেনের এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
আরও পড়ুন:কোনো কিছুতেই কান্না থামছে না জাহিদ আকন্দের। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। ঝর্না ও সন্তানদের নিয়েই ছিল তার সাজানো সংসার। মুহূর্তেই যেন তা এলোমেলো হয়ে গেল।
ভাগনি রিমা মনির বিয়ের দাওয়াত খেতে গত বৃহস্পতিবার জামালপুরের মেলান্দহের আগ পয়লা গ্রামের ঝর্না বেগম, জাহিদ আকন্দ এবং তাদের ২ বছরের ছেলে জাকারিয়া ও ৬ বছরের মেয়ে জান্নাত আশুলিয়া যান।
শনিবার বিয়ে শেষে বাড়ি ফিরে আসেন ইজিবাইক মিস্ত্রি জাহিদ। এরপর সোমবার বৌভাত শেষে আশুলিয়া যাওয়ার পথে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্ট ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচ আরোহী নিহত হন।
তাদের মধ্যে ঝর্না বেগমের বাড়িতেই মেলান্দহে চলছে শোকের মাতম। দুই সন্তানসহ মায়ের এমন মৃত্যুতে হতবাক তাদের স্বজনসহ এলাকাবাসী। সব প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দ্রুত দেয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।
ঝর্না বেগমের স্বজন হাসনা বেগম বলেন, ‘সোমবার দুপুরে মারা গেছে, অথচ এখনও আমরা লাশ পাইলাম না। আমরা দ্রুত লাশগুলো চাই। তাদের দ্রুত দাফন করতে চাই।’
আরেক স্বজন কনিকা বেগম বলেন, ‘কোনো দিন কল্পনা করিনি, আমাদের আদরের ধন এভাবে মারা যাবে। এখনও আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না।’
এ ছাড়া ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি বিক্ষুব্ধ স্বজনদের।
ঝর্নার স্বজন আব্বাস মিয়া বলেন, ‘আমরা ঘটনার তদন্ত চাই। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার চাই। কয়েকজনের গাফিলতির জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে।’
সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্ট ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচ আরোহী নিহত হন। দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
তারা হলেন ২৬ বছর বয়সী হৃদয় ও ২১ বছর বয়সী রিয়ামনি, যাদের বিয়ে হয়েছে গত শনিবার। সোমবার ছিল বউভাত।
ছেলের বাড়ি রাজধানীর কাওলায়। বউভাত শেষে মেয়ের বাড়ি আশুলিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিল। ছেলের বাবা রুবেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
রুবেল ছাড়াও যারা মারা গেছেন তারা হলেন কনের মা ফাহিমা বেগম, তার বোন ঝর্না বেগম, ৬ বছর বয়সী জান্নাত ও দুই বছর বয়সী জাকারিয়া।
আরও পড়ুন:হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে হাওর থেকে নিখোঁজ দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরিদল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সুজাতপুর হাওর থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
ফায়ার সার্ভিসের দলনেতা পিযুষ কুমার দাস বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউজবাংলাকে জানান, হাওরে ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তাৎক্ষণিক নিহতদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
পিযুষ কুমার বলেন, ‘সুজাতপুর হাওরে একটি বৈদ্যুতিক তার ঝুলে ছিল। সোমবার রাতে একটি বিয়ের নৌকা এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি তারে জড়িয়ে পানিতে পড়ে নিখোঁজ হন। ভোরের দিকে আরেকটি নৌকা ওই দিক দিয়ে যাওয়ার সময় আরও একজন সেই তারে স্পৃষ্ট হয়ে পানিতে পড়ে যান।’
সকালে হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ডুবুরিদল প্রায় ৮ ঘণ্টার চেষ্টায় দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন:ফরিদপুরের সালথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেয়ার কথা বলে চাঁদাবাজির অভিযোগে এক নারী ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামীকে আটক করা হয়েছে।
সালথা থানা এলাকা থেকে সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে আটক করে পুলিশ।
উপজেলার কুমারপট্টি এলাকার আব্দুর রহমানের সালথা থানায় লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে আটক করে পুলিশ। অভিযোগকারী রহমান ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার ৫৫ বছরের হায়দার মোল্যা সালথা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান রুপা বেগমের স্বামী।
অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আব্দুর রহমানের কাছ থেকে সাড়ে ২৫ হাজার টাকা নেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামী হায়দার মোল্যা। টাকা দিলেও পরে ঘর পাননি তিনি।
পরে সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাকে হুমকিধামকি দেন হায়দার ও মোকাদ্দেস। এ ছাড়া রুপা বেগমও বিভিন্ন লোকজন দিয়ে তাকে হুমকিধামকি দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি রুপা বেগম।
ওসি বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় ভিক্ষুক আব্দুর রহমান সালথা থানায় চাঁদাবাজি ও হুমকির অভিযোগ এনে একটি এজাহার দায়ের করেন। এতে উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান রুপা বেগমের স্বামী হায়দার মোল্যা ও ভাই মোকাদ্দেস মাতুব্বরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
‘এজাহারের প্রেক্ষিতে হায়দার মোল্যাকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কাজ করছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য