ছয় বছর আগে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরপর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। তারা সক্ষমতা হারিয়েছে। দেশে তাদের কোনো ‘ফিজিক্যাল’ অ্যাকটিভিটি নেই। অনলাইনে কিছুটা কার্যক্রম থাকলেও তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
বর্তমানে দেশে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী রয়েছে আটটি। আরও একটি নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ছয় বছর পূর্তিতে সিটিটিসি-প্রধান মো. আসাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নিয়েছে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম।
প্রশ্ন: হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর আপনারা কীভাবে সাড়া দিয়েছেন?
মো. আসাদুজ্জামান: বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাসে অন্যতম বড় একটি ঘটনা হোলি আর্টিজান। এখানে আমাদের দুজন পুলিশ কর্মকর্তা, ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হয়েছেন। এরপর মামলার তদন্তভার সিটিটিসির ওপর বর্তায়। সিটিটিসি মামলাটির সফল তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এই মামলার রায় হয়েছে। আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছি, তাদের একজন বাদে সবাইকে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দিয়েছে আদালত। পরবর্তীতে সিটিটিসি ইন্টেলিজেন্ট পুলিশিংয়ের কারণে জঙ্গিদের আস্তানা খুঁজে বের করে প্রায় সবগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছে। হোলি আর্টিজান হামলার পরে যেসব অভিযান হয়েছে তার প্রায় সবই হয়েছে জঙ্গিদের আস্তানায়।
প্রশ্ন: জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এখন কতটা তৎপর?
মো. আসাদুজ্জামান: সম্প্রতি দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কোনো অপারেশন লক্ষ করিনি। বিচ্ছিন্ন যা দুয়েকটা ছিল সেগুলো খুবই যৎসামান্য। পরবর্তীতে সেগুলোও আমরা উদঘাটন করেছি। এর পেছনে যারা ছিল, সকলকেই সিটিটিসি গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে মে মাসে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ বক্সের পাশে যে একটা আইইডি তারা রেখে এসেছিল, সেটার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করেছি। এমনকি তারা যে আস্তানায় বসে আইইডি প্রস্তুত করেছিল, যারা যারা জড়িত ছিল, সবাইকে আমরা অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছি।
এরপর গত দুই বছরে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কোনো অপারেশন আপনারা দেখেননি। আমরা বলব, জঙ্গিদের সে রকম কিছু করার সক্ষমতা নেই। সিটিটিসি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আমাদের কার্যক্রমের কারণে জঙ্গিদের তৎপরতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
লাগাতার অভিযানে জঙ্গিরা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। করোনার সময়ে অনলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। সাইবার জগতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে সেখানেও তাদের কার্যক্রম সীমিত হয়ে এসেছে।
প্রশ্ন: জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতার এখন প্রবণতাগুলো কী?
মো. আসাদুজ্জামান: এখন জঙ্গিদের ফিজিক্যাল কোনো অ্যাকটিভিটি নেই। করোনাকালীন তারা অনলাইনে বেশ কিছু সক্রিয় ছিল। অনলাইন র্যাডিকেলাইজেশনের ক্ষেত্রে তাদের প্রচার প্রচারণা, রিক্রুট, ট্রেনিং সবকিছু সাইবার স্পেসকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছিল। সেটাও আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। অনলাইনে যারা লিড রোল রাখছিল, তাদের অনেককেই আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এ কারণে অনলাইনে জঙ্গিদের তৎপরতা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে। তারপরও যে কিছু নাই, তা বলব না। ডার্ক ওয়েব, ডিপ ওয়েব বা নিজেদের গ্রুপে প্রচার-প্রচারণা চালায় তারা, কিন্তু সেটা খুব বেশি না।
প্রশ্ন: সংগঠিত প্রচারণা ছাড়াও কেউ কি জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হতে পারে?
মো. আসাদুজ্জামান: জঙ্গিদের একটা অংশ সেলফ র্যাডিকেলাইজড হয়েছে। এটা হচ্ছে সাইবার স্পেসের কারণে। আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে সকলের হাতে স্মার্টফোন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যদি ওই রকম একটি কনটেন্ট চোখে পড়ে বা পছন্দ হয়ে যায়, তাহলে আরও কনটেন্ট দেখতে আগ্রহী হয়, কমেন্ট করে। এর ফলে কিছু যে হচ্ছে না, তা বলব না। হচ্ছে। আমি বলব, এখনকার প্রজন্ম অনেক সচেতন, অভিভাবকও অনেক সচেতন। কেননা তারা দেখেছে, জঙ্গিদের পরিণতি কী, জঙ্গিবাদের সর্বশেষ পরিণতি কী? সিটিটিসি প্রায় ২৬-২৭টা হাইরিস্ক অপারেশন করেছে, যেখানে জঙ্গিদের কঠিন পরিণতি তারা স্বচক্ষে দেখেছে। ফলে আগে যেভাবে খুব সহজে র্যাডিকেলাইজ করতে পারত, এখন কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী বা বর্তমান প্রজন্ম তারা অনেক বেশি সচেতন। খুব সহজে তারা ফাঁদে পা দেয় না।
প্রশ্ন: জঙ্গিবাদ দমনে অভিযান ছাড়া আর কোন ধরনের কৌশল আপনারা প্রয়োগ করছেন?
মো. আসাদুজ্জামান: জঙ্গি দমনে হলি আর্টিজানে হামলার পর সিটিটিসি দেশব্যাপী ২৩টি হাই রিস্ক অপারেশন করেছে। এসব অভিযানে ৬৩ জঙ্গি মারা গেছে। জঙ্গি দমনে এসব হার্ড অ্যাপ্রোচের পাশাপাশি সফট অ্যাপ্রোচ নিয়ে কাজ করছে সিটিটিসি। বিশ্বের যেসব দেশ জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে আছে, তারাসহ জাতিসংঘ সর্বসম্মতভাবে একটা সিদ্ধান্তে আসে যে, শুধু অপারেশন বা বিচারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন করা যাবে না। বাংলাদেশও একই ফিলোসফিতে কাজ করে। হার্ড অ্যাপ্রোচের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করতে পারে এমন সহায়ক পরিবেশকেও প্রতিরোধ করতে হবে। যেসব কারণে জঙ্গিবাদ ছড়ায়, সেগুলো প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এই প্রতিরোধের অন্যতম পদ্ধতি হলো সচেতনতা বৃদ্ধি। সেই কাজটাই আমরা করছি।
বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাস দমন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নামে একটি প্রকল্প নিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে দেশের ৪৮টি জেলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি সম্পন্ন করেছি। এই বছরও আমরা ১২টি জেলায় কাজ করেছি। সর্বশেষ শরীয়তপুর জেলায় করেছি। এতে আমরা একটি জেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়। স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন ইউনিট হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। আমরা সকল ইউপি চেয়ারম্যানকে এতে যুক্ত করি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেম্বারদেরকেও যুক্ত করি। ওয়ার্ডে কী হয় না হয়, কোন ছেলেটা কেমন, এটা কিন্তু একজন ইউপি মেম্বার সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন। তার নজরে চলে আসে। তিনি যদি জঙ্গিবাদের লক্ষণগুলো জানেন, তাহলে তিনি সতর্ক করতে পারেন। তাদেরকে আমরা এসব বিষয়ে ব্রিফ করি। তাদের মন্তব্যও আমরা শুনি।
প্রশ্ন: এতে কতটা সুফল পাওয়া যাচ্ছে?
মো. আসাদুজ্জামান: জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রী, ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যুক্ত করি। আমরা এর সুফল পাচ্ছি। দেশের মানুষ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যাকে এ দেশের মানুষ সমর্থন করে না। এটাই আমাদের মূল শক্তি। যেখানেই গিয়েছি, আমরা সেখানে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি। এসব কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি হামলা ঘটেনি। এতে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। যেখানে আমেরিকার অবস্থান ২৮, ইউকে ৩২, বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ৪০। গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স যারা তৈরি করে, তারা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: জঙ্গিদের পুনর্বাসনে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?
মো. আসাদুজ্জামান: যারা ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে ইতোমধ্যে প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে সিটিটিসি। কারাগারে থাকা জঙ্গিদের ডির্যাডিকেলাইজ করার মধ্য দিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হবে। এ প্রকল্পের অনুমোদন পেয়ে গেছি। যারা গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় আছে, যারা সাজা খেটে বের হয়েছে, জামিনে আছে, এমন ব্যক্তিদের আমরা ডির্যাডিকেলাইজ করব, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনব। জেলখানা থেকেই কাজটা শুরু করতে চাই। খুব দ্রুতই কাজটা আমরা শুরু করব। এই কাজের জন্য সাইকোলজিস্ট, ধর্মীয় নেতা ও সমাজবিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় টার্নিং পয়েন্ট হবে। যারা র্যাডিকেলাইজ হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরমপন্থি হয়ে গেছে, এমন সকলকেই আমরা রিভার্স ওয়েতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনব। ইসলামের যে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তার প্রকৃত ব্যাখ্যাটা আমরা দেব।
প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য