আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে মোট পাঁচ দিন কাউন্টারে কাউন্টারে প্রতিদিন সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। আর মোবাইল অ্যাপ এবং ইন্টারনেটে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে।
গত ২২ জুন রাজধানীর রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, এবার ১ জুলাই দেয়া হবে ৫ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। ২ জুলাই ৬ জুলাইয়ের টিকিট, ৩ জুলাই দেয়া হবে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। এ ছাড়া ৪ জুলাই দেয়া হবে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট এবং ৫ জুলাই দেয়া হবে ৯ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট।
ঢাকায় ছয়টি স্টেশনে এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট। কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট; তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে পাওয়া যাবে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। এ ছাড়া গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। পঞ্চগড় স্পেশাল ট্রেনের টিকিট জয়দেবপুর ছাড়াও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকেও পাওয়া যাবে।
গতবারের মতো এবারও ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’নীতিতেই ট্রেনের টিকিট বিক্রি করবে রেল। সে জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম সনদের ফটোকপি দিয়ে কিনতে হবে ট্রেনের টিকিট। ঈদের অগ্রিম টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন।
ফিরতি টিকিট
ঈদ-পরবর্তী টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ৭ জুলাই। চলবে ১১ জুলাই পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে ৭ জুলাই ১১ জুলাইয়ের, ৮ জুলাই ১২ জুলাইয়ের, ৯ জুলাই ১৩ জুলাইয়ের এবং ১১ জুলাই ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকেট বিক্রি করা হবে। ১০ জুলাই ঈদ হলে ১১ জুলাই সীমিত পরিসরে কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন চলবে।
আগামী ১৮ আগস্ট থেকে চীনের গুয়াংজু রুটে বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ১৮ আগস্ট স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে ফ্লাইট বিজি ৩৬৬ স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে গুয়াংজু বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
ফিরতি ফ্লাইট বিজি ৩৬৭ একই দিন গুয়াংজু থেকে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা করে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সাড়ে ৯টায়।
এতে আরও বলা হয়, মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. যাহিদ হোসেন সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ঢাকা-গুয়াংজু রুটে বিমানের যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে চীনের আরেক বাণিজ্যিক শহর কুনমিংয়ে ফ্লাইট চালুর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ নয় জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন ইউনুছ আলী আকন্দ।
সম্প্রতি ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনসহ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ।
রিটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদসচিব, উপসচিব ও বিইআরসির চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়। এক লাফে ডিজেল ও কেরোসিনে বাড়ানো হয় লিটারে ৩৪ টাকা। নতুন করে ডিজেল ও কেরোসিন এখন ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকা করে।
অন্য দিকে অকটেনে প্রতি লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন ১৩৫ এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা। এই হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ আর অকটেন-পেট্রোলে ৫১ শতাংশ।
বৈশ্বিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। জ্বালানি তেলের নতুন এই দাম কার্যকর হয় সেদিন রাতেই।
আরও পড়ুন:উত্তরায় বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায় নিতে নারাজ এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর এ কাজ আবার শুরু হবে। এ বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে।
নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি না করেই ভারী যন্ত্র সরানোর সময় সেটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে যাওয়ার ঘটনায় স্পষ্টতই অবহেলা ছিল কর্মীদের। এর আগেও এই প্রকল্পে একই ধরনের দুর্ঘটনার পরও সেখানে এই হেলাফেলা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারার মধ্যে বিআরটির এমডি বলেছেন, তদন্ত কমিটিই ঠিক করবে দায় কার।
সোমবার ঢাকার উত্তরায় প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনার পরই জনক্ষোভের মধ্যে এই ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্তের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান যাদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে আছেন বিআরটির প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলামও।
এখন নিরাপত্তায় জোর
বিআরটি এমডি জানান, প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
কেন এই নির্দেশ- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে তিনি প্রকল্পের সেফটি এনশিওর (নিরাপত্তা নিশ্চিত) করে তারপর কাজ করার কথা বলেছেন। আমরাও চাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আমাদের যে যে জায়গায় ইমপ্রুভ (উন্নতি) করতে হবে, সেগুলো ঠিক করতে হবে। কীভাবে নিরাপত্তা এনশিওর করব সেগুলো নিয়ে বৃহস্পতিবার মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করব।’
দায় কার জানেন না এমডি
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া কাজ করা ঠিকাদারি কোম্পানির অবহেলার প্রমাণ। তিনি এও মনে করেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চর্চা মেনে কাজ করানো নিশ্চিত করা এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও তদারকি সংস্থার দায়িত্ব। কারণ এই কাজে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের একটি বড় অংশ ধরা থাকে। কিন্তু বাজেটের পর অবহেলাগুলো এই প্রকল্পে স্পষ্ট।
তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রধান হয়েও সফিকুল এই ঘটনায় নিজেদের কোনো দায় নিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে কার দায়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নির্মাণকাজের সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত না করে রাজধানীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ কেন চলছিল তার কোনো উত্তর অবশ্য নেই বিআরটি এমডির কাছে।
আবার যে ক্রেনটি দুর্ঘটনা ঘটায়, সেটির এত ওজনের বক্স গার্ডার তোলার সক্ষমতা ছিল কি না, যার সেটি অপারেট করার কথা, তিনিই সেটি চালাচ্ছিলেন নাকি অন্য কেউ চালাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্নের জবাবও মিলছে না। দুর্ঘটনার পর ক্রেনের চালক পালিয়ে যান এবং তাকে এখনও ধরা যায়নি।
দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার নিউজবাংলার মুখোমুখি হয়ে বিআরটি এমডি বলেন, ‘এটা যে কী কারণে হলো। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা প্রতিবেদন দিলেই জানা যাবে৷ একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে কমিটি আরও ইনডিটেইল কাজ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবেন।’
প্রাথমিক তদন্তে দোষী ঠিকাদার
এই দুর্ঘটনার তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি এরই মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সড়ক পরিবহন সচিবের কাছে। এতে দায়ী করা হয়েছে ঠিকাদারি কোম্পানিকে।
বিআরটি প্রকল্প নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকালের (সোমবার) ঘটনার মূল দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তারা কাউকে না জানিয়ে কাজ করছিল অথচ গতকাল কাজ বন্ধ থাকার কথা।
‘তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের ব্যাপার ঘটলে তাদের যে দায়, সেই রকম ব্যবস্থাই তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশদভাবে বসবে মন্ত্রণালয়। আরও কারো কোনো দায় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালি প্রমাণিত হলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন প্রশ্নে সফিকুল বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে যে কন্ট্রাক্ট আছে সেই চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘বিআরটি গলার কাঁটা’
এর মধ্যেই বিআরটি প্রকল্পটিকে ‘গলার কাঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঢাকার তেজগাঁও সড়ক ভবনে গেল বছরের ২২ আগস্ট সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট-২-এর চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেছিলেন।
সেদিন তিনি বলেন, ‘গাজীপুর বিআরটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আর প্রকল্প বাড়াবেন না। যতটুকু আছে, এটাই আগে শেষ করুন।’
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের চেরাগআলী এলাকায় চলমান ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে এখনও আশাবাদী বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব আশা করি।’
কত ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১৮ শতাংশ কাজ বাকি।’
আরও পড়ুন:সব দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না, এ ক্ষেত্রে তেল আমদানির সম্ভাব্যতা যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের এ নির্দেশনা দেন।
সভা শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেছেন, অন্য রাষ্ট্র রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যারা বলেছিল শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে দেশ, এরপর ২ মাস পার হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতি খাদে পড়বে না, উল্টো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’
তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মন্দার আভাস মনে করিয়ে দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও এর বাইরে নেই। বলেন, এ জন্য ইকোনোমাইজ বা প্রয়োজনীয় সব ব্যয় করবে সরকার। সংকোচন নয়, অহেতুক ব্যয় বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃচ্ছ্রসাধনে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছরের শুরু থেকেই বাড়ছিল। দেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানিতে বেশি খরচ হওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হয় সরকারকে।
তাই গত ৫ আগস্ট দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনে লিটারে বাড়ানো হয় ৩৪ টাকা। আর অকটেন-পেট্রলে বাড়ানো হয় ৫১ শতাংশ।
তার আগে থেকেই দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাতে চেষ্টা করে সরকার। সে জন্য ডিজেলচালিত কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সময়ে সময়ে বন্ধ রাখার কথা জাননো হয়। সে কারণে দেশে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং দেয়া শুরু হয় গত জুলাই থেকে।
প্রথমে দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়া হলেও সেটি পরে বাড়িয়ে ২ ঘণ্টা, এমনকি কোথাও কোথাও তারও বেশি করে দেয়া শুরু হয়।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম। এখন অশোধিত তেল বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারের নিচে নেমে গেছে। রাশিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে শস্যটির রপ্তানি শুরু করেছে রাশিয়া।
সেই সঙ্গে ভারতসহ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশও দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চায় বলে একনেক সভায় সব বিষয় দেখে এগোতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে আগামী ২৫ আগস্ট দেশজুড়ে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে গণতান্ত্রিক বাম জোট।
রাজধানীর শাহবাগে মঙ্গলবার দুপুরে এক সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস ছাত্তার।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে তেল, সার, পরিবহন ভাড়া না কমালে ২৫ আগস্ট অর্ধদিবস হরতাল। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে এই হরতাল পালন করা হবে। আমরা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছি দাম কমাও, জান বাঁচাও।’
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জ্বালানি তেল ও ইউরিয়া সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে পল্টন মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন বাম জোটের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের চলতে থাকে ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে শাহবাগ পার হতে না পেরে নেতাকর্মীরা শিশু পার্কের গেটের সামনে সমাবেশ শুরু করেন।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। নতুন দর অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছেন দুই শতাধিক ট্রান্সজেন্ডার। এ সময় দেশের সব ধরনের উন্নয়ন কাজে টান্সজেন্ডারের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ের সহযোগিতায় নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করেন তারা।
সোমবার রাজধানীর মিরপুরে পাথওয়ের প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী ও ১৫ আগস্টে তার পরিবারের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে আলোচনা সভা ও শিশুদের মাঝে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও গণভোজ এবং ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ট্রান্সজেন্ডার কান্তা বলেন, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে সমাজে এতো অবহেলিত হয়ে থাকতে হতো না। সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেশের উন্নয়নে আমাদেরকেও কাজ করার সুযোগ করে দিতেন। তার ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ ট্রান্সজেন্ডারদের কর্মস্থানে সরকার প্রধানসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এগিয়ে আসবে।’
আলোচনা সভায় পাথওয়ের নিবার্হী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলস্রোতে সংযুক্ত করতে হবে।’
এ সময় তিনি অবহেলিত ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি পরিবার, সমাজ, ও নিকট আত্মীয় সকলকে সর্বদাই ভাল ব্যবহার, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে তাদের প্রতি সৌহাদ্যপূর্ণ আচরণের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান এবং অন্যান্য যে সকল মৌলিক অধিকার রয়েছে সেদিকে নজর দেয়ার কথা বলেন।
তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে রাষ্ট্রের সকল উন্নয়নমূলক কাজে লাগানোর আহবান জানান তিনি।
দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ, সমাজসেবা অফিসার (অঞ্চল-৬) কে এম শহিদুজ্জামান, পাথওয়ের চেয়ারম্যান রইজুর রহমান, উপদেষ্টা সাদ্দাম হোসেন ফয়েজসহ বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:কর্তৃপক্ষের অবহেলায় উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্টের অংশ বা বক্স গার্ডার পড়ে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রিট করতে বলেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ পরামর্শ দেয়।
বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল ও শাহিনুজ্জামান।
তখন আদালত বিষয়টি নিয়ে রিট করার পরামর্শ দেয়।
আইনজীবী শাহিনুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গার্ডার পড়ে নিরীহ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং নির্মাণাধীন এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে আদালতের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করি। আদালত লিখিত নিয়ে যেতে বলেছেন। আমরা লিখিত আবেদন নিয়ে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড়ে প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনের সড়কে সোমবার বিকেলে ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট কার। ক্রেনে তোলার সময় ভায়াডাক্টের অংশটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলত গাড়িটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুই শিশুসহ পাঁচজন। এত আহত হন আরও দুজন।
বিকেলে এমন নির্মাণকাজ করার সময় সেখানে নেয়া হয়নি কোনো ধরনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা। ব্যস্ত সড়কে যান চলাচলের মধ্যেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছিল বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ক্রেনের চালকসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে সোমবার রাতেই মামলা হয়েছে।
সড়ক বিভাগের ৫ সদস্যের একটি কমিটি দুর্ঘটনার তদন্ত করে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে মঙ্গলবার। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে বুধবারের মধ্যে।
এই দুর্ঘটনার দায় সব পক্ষকে নিতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
তিনি জানান, এমন নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে নির্মাণ এলাকা ঘিরে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হয়। যেন সাধারণ মানুষ সেখানে প্রবেশ করতে না পারেন। এমনকি সে এলাকায় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও জানান তিনি।
এই গবেষক বলেন, ‘ক্রেন থেকে গার্ডার কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে যেতেই পারে, সে কারণেই আপনাকে পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস হচ্ছে, আমাকে সেই জায়গাতে আগেই কর্ডন বা নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। ওই বেষ্টনীর মধ্যে যেন পথচারী বা কোনো যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।’
‘এ ধরনের প্রকল্পে কিন্তু এই ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা বড় ব্যয় ধরা থাকে। আমার মনে হয়, বিআরটি প্রজেক্টে প্রথম থেকেই কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ন্যূনতম যে গ্রামারটা আছে, সেটা তারা ফলো করছে না। … অতীতে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং নিহতের ঘটনাও আছে। ওইখান থেকেও আমাদের একটা শিক্ষা নেয়ার দরকার ছিল।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য