স্বামী হারানোর কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে জীবনযুদ্ধ শুরু করতে না করতেই বুক ফেটে কান্না আসছে বিউটি রানী নন্দীর।
তার প্রিয়তম মানুষটি, যার হাত ধরে নতুন জীবনের শুরু, সাত পাকে বাঁধার পর যাকে সুখ-দুঃখের সঙ্গী করেছিলেন, সেই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ তারই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি গত ২৫ জুনের। ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে পেটানোর পরদিন হাসপাতালে মারা যান উৎপল। এরপর শোকের পাহাড় ডিঙিয়ে প্রিয়জনকে শেষ বিদায় দেন বিউটি।
শোক শেষ হতে না হতেই সেই সাত পাকে বাঁধা পড়ার দিনটি বিউটিকে আবার কান্নার সাগরে ভাসাচ্ছে। যে দিনটি প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে মধুর স্মৃতি রোমন্থন করে কাটাতেন তিনি, সেই দিনটিতে সকাল থেকেই ডুকরে কাঁদছেন তিনি। সুখের সেই স্মৃতি আজ তাকে কেবলই বেদনায় আর্ত করছে।
দুজনের সংসারের শুরু ২০১৯ সালের ৩০ জুন। পরের বছর প্রথম বিয়েবার্ষিকীতে করোনার বিধিনিষেধের কারণে একান্ত নিজেদের মধ্যে কেটেছে দিনটি। ২০২১ সালেও একই চিত্র। এবার পরিকল্পনা ছিল আনন্দটি ভাগাভাগি করে নেবেন স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীদের সঙ্গে।
অনেক পরিকল্পনা ছিল। সব পরিকল্পনা, স্বামীর কথা, স্মৃতি আজ বুকে শূলের মতো বিঁধছে বিউটির। স্বামীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়েই বারবার কণ্ঠরোধ হয়ে আসছে তার।
বিউটি বলেন, 'দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীতেও আমি ছিলাম মিরপুরে আর ও ছিল জামগড়ায়। তখনও করোনার প্রকোপের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। গত নভেম্বর থেকে আমরা দুজনে মিরপুর আনছার ক্যাম্পে ভাড়া বাসায় উঠেছি। সবে সংসারটা গুছিয়ে নিচ্ছিলাম।
‘কারণ বিয়ের পর থেকেই ও (উৎপল) জামগড়ায় দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। আমি মাঝে মাঝে ওখানে যেতাম। আজ ৩০ জুন আমাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে সবাইকে নিয়ে পালন করতে চেয়েছিলাম। ওর বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী এমনকি শিক্ষার্থীদেরও দাওয়াত করেছিল। এইবারেই প্রথম একটু জাঁকজমক করে বিবাহবার্ষিকীটা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও হলো না।’
উৎপলের শখটা পূরণ হলো না- এটিও বিউটিকে পীড়া দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ওর শখটাই বেশি ছিল। অনেক দিন ধরেই বলতেছিল। গত বছরও পালন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তখনও করোনার কারণে হয়নি।’
নিজের সন্তান হবে- এ কথা বারবার স্ত্রীকে বলতেন উৎপল। তার অন্য সব ইচ্ছার মতো এটিও পূরণ হয়নি।
বিউটি বলেন, ‘মাসখানেক একটা কথা বলত; সুন্দরভাবে সংসার করবে, বাচ্চার বাবা হবে, তাকে বাবা বলে ডাকবে। এই কষ্ট আমি কাকে বোঝাব? কিন্তু আজ ও আমার কাছে নেই।
‘আমি এখন কী করব বুঝতে পারছি না। দিশেহারা অবস্থায় আছি। বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন কল্পনা যখন করছি তখনই ওকে মনে হচ্ছে। ওর অনেক প্রয়োজন সেটা অনুভব করছি। ওর অভাবটা আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছে। কোনো কাজ করতে গেলেই ওকে আমার পাশে দরকার। আমি শূন্য অবস্থায় আছি। বাসায় কোনো কাজ করলে ওর পরামর্শ নিয়ে করতাম। ওকে ছাড়া কোনো কাজই আমি সম্পূর্ণ করতে পারছি না।’
বিউটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পারসোনাল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। সে হিসেবে তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। তবে সঙ্গীহীন এই জীবন তাকে শূন্য করে দিয়েছে।
তিনি জানান, ওই অঞ্চলের পরিবেশের কথা চিন্তা করে উৎপলকে কলেজের পরিবেশ কমিটিতে না থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কলেজ থেকে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্ত্রীর কথা শোনেননি উৎপল।
বিউটি রানী বলেন, ‘কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রেমের বিষয়গুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হতো। এসব সমাধান করত। শিক্ষার্থীরা তাকে ভয় পেত সেই কথাও বলেছিল আমাকে। তবে তাকে মেরে ফেলতে পারে এমন বড় কোনো বিষয় জানায়নি।’
উৎপলের বড় ভাই অসীম কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সবাই একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। মা পাগলের মতো হয়ে গেছে। উৎপলের স্ত্রী এখন আমাদের বাড়িতে সিরাজগঞ্জে আছে। মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
‘তিন বছর আগে বিয়ের অনুষ্ঠানটাও ঠিকভাবে করা হয়নি। এরপর দুই বছর ছিল করোনা। উৎপল বলেছিল, আজকে আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করে বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করবে। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! আজ সবাই আছে, কিন্তু আমার ভাই আর নেই।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করছিলেন উৎপল কুমার সরকার। এই প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ কমিটির সভাপতিও ছিলেন।
গত শনিবার দুপুরে কলেজ মাঠে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে।
পরদিন রোববার সকালে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় উৎপলের। একই দিন তার বড় ভাই অসীম কুমার আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তিন দিন পর বুধবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসামি জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে এবং পরে গাজীপুর থেকে জিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যার পর জানা যায়, জিতুর সঙ্গে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি সেখানকারই এক শিক্ষকের শ্যালিকা। জিতুর বিরুদ্ধে আগে থেকেই বখাটেপনার অভিযোগ ছিল।
দুইজনকে স্কুলের একটি কক্ষে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখার পর মেয়েটির পরিবারকে বিষয়টি জানান উৎপল। মেয়েটিকে এই পথ থেকে ফেরানোর পরামর্শ দেন তিনি। পরে সেই ক্ষোভ থেকেই উৎপলকে পেটানো হয়।
জিতুকে গ্রেপ্তারের পর র্যাবের বর্ণনাতেও এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের নলডাঙ্গায় এক স্কুলছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো হিমেল হোসেন (১৫) উপজেলার পিপরুল গ্রামের ফারুক সরদারের ছেলে। সে পাটুল-হাপানিয়া স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
নলডাঙ্গা থানার ওসি মো. মনোয়ারুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে হিমেলকে তার সহপাঠী ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এরপর থেকে হিমেলের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান তার স্বজনরা। পরে রাত হলেও বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং বিষয়টি পুলিশকে জানান।
ওসি বলেন, পুলিশ হিমেলকে উদ্ধারে অভিযানে নামে। অভিযানে হিমেলের বন্ধু পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পার্থের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় হিমেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হিমেলের মাথায় আঘাত, গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মেহেদি, শিমুল ও সুজন নামে আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী সীমান্তে পায়ুপথে স্বর্ণের বার পাচারের ঘটনায় একজনকে আটক করেছে খুলনা-২১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা।
মসজিদবাড়ী এলাকার বিজিবি চেকপোস্টের সামনে থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আটক করা হয়।
আটক হওয়া মনোর উদ্দিনের বাড়ি বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী গ্রামে।
খুলনা-২১ বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘খুলনা-২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পুটখালী ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে সীমান্তের মেইন পিলার ১৭ এর ৭ এস এর ১৬৮ আর পিলার হতে ৫০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে মসজিদবাড়ী বিজিবি চেকপোস্ট এলাকায় গোপন অবস্থান করে।
‘স্বর্ণ পাচারকারী মনোর উদ্দিন একটি ইজিবাইকে করে স্বর্ণের চালানটি ভারতে পাচারের উদ্দেশে সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল। তখন মনোর উদ্দিনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রথমে তার শরীর তল্লাশি করে কোনো স্বর্ণ পাওয়া যায়নি। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বীকার করে তার পায়ুপথে স্বর্ণের বারগুলো আছে।
‘এ সময় তাকে আটক করে বেনাপোল বাজারে রজনী ক্লিনিকে শরীর স্ক্যানিং করে পায়ুপথে ছয় পিস স্বর্ণের বারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তারপর তার কাছ থেকে স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়, যার ওজন ৭০০ গ্রাম।’
খুলনা-২১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার স্বর্ণসহ এক পাচারকারী আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উদ্ধারকৃত স্বর্ণের চালানটি যশোর ট্রেজারিতে আছে। আটক ব্যক্তিকে বেনাপোল পোর্ট থানায় পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:আগামী জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করবে সরকার। সে জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রুমানা আলী।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেন, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কেউ যেন প্রতারিত না হয় কিংবা কেউ যেন প্রতারণা না করতে পারে সে জন্য সরকার সব ব্যবস্থা নেবে। আগামী জুনের মধ্যেই ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরিদর্শন করেছি। সেখানে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, তবে এ বছর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।’
এ সময় প্রতিমন্ত্রী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ও শেষ ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আজ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা।
এ ধাপে কুমিল্লা জেলায় ৩২ হাজার ১৯৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে নারী ১৪ হাজার ৭৬৭ জন এবং পুরুষ ১৭ হাজার ৪৩২ জন।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বরুড়ায় ভাইকে হত্যার দায়ে ছোট ভাই, বোন ও ভগ্নিপতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার শালুকিয়া গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বুধবার সকালে নিজ বসতঘর থেকে শরিফ হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শরিফের ছোট ভাই আরিফ হোসেন, বড় বোন খুকি আক্তার ও ভগ্নিপতি নাছির উদ্দিন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার নিহত শরীফের মা বরুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, ‘শরীফ মাদকাসক্ত ছিল। কিছুদিন আগে শরীফ মাদকের টাকা যোগাড়ের জন্য ভাই আরিফের অটোরিকশা বিক্রি করে দেয়। মাদকের টাকার জন্য মাকেও মারধর করত সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে শরিফের ছোট ভাই আরিফ ও তার বোন খুকি মিলে পরিকল্পনা করে শরীফকে পঙ্গু করে ঘরে রেখে দেবে। বাকি জীবন তাকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত ১ টার দিকে পুকুরপাড়ে শরীফকে হাত পা বেঁধে পেটানো হয়। বাড়িতে এনে আরেক দফা পেটানো শেষে হাত পা বেঁধে ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় শরীফ মারা যায়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল জানান, তথ্য প্রযুক্তিসহ নিজস্ব গোয়েন্দা ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করলে সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার শহরে বুধবার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভেতরে গ্রাহককে অজ্ঞান করে ৮১ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তানভীর হাবিব চৌধুরী রুমেল নামের ওই গ্রাহক মৌলভীবাজার মডেল থানায় অভিযোগটি করেন।
ব্যাংকের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টা সাত মিনিটে ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের শহরের সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসিতে বুধবার সকালে ১১টার দিকে প্রবাস থেকে আসা টাকা তুলতে যান ব্যবসায়ী তানভীর। দুই লাখ টাকা তুলে তানভীর এক হাজার টাকার নোট দেয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তা এক হাজার টাকার বান্ডিল দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাকে ৫০০ টাকা নোটের বান্ডেল প্রদান করেন।
‘তখন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রুমেলকে বলেন, তিনি এক হাজার টাকার বান্ডেল এক্সচেঞ্জ করবেন। তখন রুমেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি গুনতে থাকেন। টাকা হাতে নেয়ার পর রুমেল কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান অনুভব করেন। তখন ওই চক্র ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।’
অভিযোগকারী রুমেল বলেন, ‘ওই ব্যক্তির হাতে থাকা টাকার বান্ডেল আমাকে গুনতে দিয়ে আমাকে একটি চেয়ারে নিয়ে বসান। আমি টাকা হাতে নেয়ার পর নিস্তেজ অনুভব করি। সবকিছু আমার কাছে কিছু সময়ের মধ্যে এলোমেলো মনে হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে একটু স্বাভাবিক হলে গুনে দেখি, তারা আমার কাছ থেকে ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।
‘পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তারা ১১টা সাত মিনিটে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই চক্রের ছবি শনাক্ত করা হয়।’
ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসির মৌলভীবাজার শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল কাদের বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলাম, ব্যাংকের একজন গ্ৰাহকের সঙ্গে কয়েকজন লোক গল্পগুজব করে উনার সঙ্গে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, উনার টাকা নিয়ে চলে গেছে। তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘একজন ব্যাংক গ্ৰাহক অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নদীতে গোসল করতে নেমে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার চর বাউশিয়া বড়কান্দি গ্রাম সংলগ্ন গোমতী নদীতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারানো শাহেদ (১৪) ওই গ্রামের মোশারফ মিয়ার ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেলে গোমতী নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে যায় শাহেদ। ওই সময় হঠাৎ করে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে মারা যায় সে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাদের হাসপাতালে শাহেদকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আজাদ রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি, নিহতের লাশ গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।’
নিহতের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীতে মোটরসাইকেলে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় এক প্রবাসী যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা শহর মাইজদীর টোকিও ফুডসের সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আনোয়ার হোসেন অনিক (২২) কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ জগদানন্দ গ্রামের মাজারুল হক মন্টু মিয়ার ছেলে।
সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, আবুধাবি প্রবাসী অনিক দুই মাস আগে দেশে এসে বিয়ে করেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি থেকে জেলা শহর মাইজদীতে আসেন তিনি। ওই সময় মাইজদীর টোকিও ফুডসের সামনে রাস্তার উল্টোপথে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য