আষাঢ়ের আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। রোদের উত্তাপে হাঁসফাঁস চারপাশ। এমন গরমেই দুষ্টু ছেলেমেয়ের দল হানা দেয় কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার লালমাই পাহাড়ে। সেখানে গাছে গাছে ঝুলে আছে হলুদ চাপালিশ!
পাকা এই চাপালিশ ভেঙে অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে কোষগুলো নিয়ে শুকনো মরিচ পোড়ায় কিশোর-কিশোরীর দল। হাল্কা মিষ্টি আর টক স্বাদের চাপালিশে ঝাল মিশিয়ে মুখে পুরে নেয় তারা। তারপর ওঠে তৃপ্তির ঠেকুর। দুপুরে উদরপূর্তির জন্য এর চেয়ে ভালো আয়োজন কি হতে পারে?
চাপালিশ দেখতে কাঁঠালের মতোই। কাঁচা অবস্থায় সবুজ। আর পাকলে হলুদ হয়ে ওঠে। আকারে ছোট এই ফলটির ভেতরে কাঁঠালের মতোই ছোট ছোট কোষ থাকে। কোষের ভেতরে থাকা এর বীচিগুলোও অনেকে আগুনে পুড়িয়ে খায়। কিছুটা চিনা বাদামের স্বাদ পাওয়া যায় এতে।
টক মিষ্টি স্বাদের এই চাপালিশকে স্থানীয়রা চামল বা চাম্বল নামেই চেনে। লালমাই পাহাড়ে শত বছর আগে প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছিল চাপালিশের বন। ঘন সবুজ পাতার আড়াল থেকে উঁকি মারা পাকা চাপালিশ যে কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আষাঢ় মাসেই চাপালিশ পাকতে শুরু করে। ৯০-এর দশকে লালমাই পাহাড়ে যে পরিমাণ চাপালিশ গাছ ছিল, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই।
কোটবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ জানান, পুরো লালমাই পাহাড়ে বর্তমানে অর্ধশতাধিক চাপালিশ গাছ আছে। এক সময় এই সংখ্যাটি ছিল হাজারেরও বেশি। কাঠের জন্য কিংবা জমি প্রশস্থ করতে গত কয়েক বছরে স্থানীয়রা বহু চাপালিশ গাছ কেটে ফেলেছে।
ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘পাশের সেনানিবাসের ভেতর বর্তমানে বেশকিছু চাপালিশ গাছ রয়েছে।’
কোটবাড়ি এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পার্শ্বে হাতিগড়া এলাকায় চাপালিশ বিক্রি করেন চা দোকানীরা। দোকানের সামনে ঝুড়িতে রাখা থাকে ফলটি। কেউ আবার ক্রেতা আকর্ষণের জন্য এটিকে দোকানের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন।
চা দোকানী খায়ের মিয়া বলেন, ‘প্রতিটা ২০ টাকা করে বেচি। আষাঢ়-শাওন মাসে কাঁঠালের সাথে চামলও পাকে। শহর থেকে আসা মানুষেরাও শখ করে কিনে নিয়ে যায়। একটা গাছে ২ থেকে ৩ মন চাপালিশ ধরে।’
খায়ের জানান, লালমাই পাহাড়ে একসময় এত পরিমাণ চাপালিশ হতো যে, এগুলো খেতে শত শত বানর এসে ভিড় জমাতো। চাপালিশ কমার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকাটিতে এখন বানরের সংখ্যাও কমে গেছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘চাপালিশ একটি বিপন্ন উদ্ভিদ। আবাসস্থল ধ্বংস এবং মাত্রাতিরিক্ত আহরণের জন্য চাপালিশের বিস্তৃতি নাই বললেই চলে। সরকারের উচিত পরিকল্পিত বনায়নের অংশ হিসেবে চাপালিশ বৃক্ষের আবাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা। এর কাঠ যেমন মূল্যবান, তেমনি এর ফল বন্যপ্রাণী ও মানুষের খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।’
মেহেরুন্নেসা মনে করেন, জলবায়ু সংকটে থাকা এই পৃথিবীকে আবাসযোগ্য রাখতে বৃক্ষনিধন দমনের পাশাপাশি ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচী হাতে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে চাপালিশের চাষ একটি চমকে দেয়ার মতো বিষয় হতে পারে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, সারাদেশে যেসব এলাকায় চাপালিশ গাছ জন্মে, তার মধ্যে কুমিল্লার লালমাই পাহাড় অন্যতম। বিলুপ্তপ্রায় এই গাছটির কাঠ ও ফল মূল্যবান। পাখি ও বনের পশুর জন্যও চাপালিশ উন্নত খাবার। এই গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি আসবাব বছরের পর বছর টিকে থাকে। এই গাছ রক্ষায় বন বিভাগের জরুরী উদ্যোগ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
কুমিল্লা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা কোটবাড়িতে উদ্ভিদ উদ্যান করেছি। সেখানে চাপালিশের বীজ থেকে চারা করে গাছের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। যে কেউ চাইলে আমরা বীজ কিংবা চারা দিয়ে সহযোগীতা করবো।’
আরও পড়ুন:২০০৭ সাল। জন্মভূমির বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে থাইল্যান্ডে যান কাজী আসমা আজমেরী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গিয়েছিলেন একাই। বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছাটা তখনও চেপে বসেনি মাথায়।
দুই বছর বিরতি দিয়ে ২০০৯ সালে আবার দেশের বাইরে যান আজমেরী। সে বছর তার গন্তব্য ছিল হিমালয়কন্যা নেপাল। সেই থেকে বিশ্বভ্রমণের নেশা পেয়ে বসে তাকে। চলতি বছরের মে পর্যন্ত ১৩০টি দেশ ঘুরেছেন তিনি।
এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাত্রার এ গল্প নিউজবাংলাকে শুনিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এ পর্যটক। এক যুগ আগে ফিরে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি যখন নেপাল যাই, তার কিছুদিন আগে বন্ধুর মা আমাকে টিটকারি করেছিল। আমার বন্ধু ২৬টি দেশ ভ্রমণ করেছিল। আমি এক্সাইটেড হয়ে বলেছিলাম, ‘আমি বিশ্ব ভ্রমণ করতে চাই।’”
সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে আসমা আরও বলেন, “তখন আমার বন্ধুর মা বলেছিল, ‘তুমি তো মেয়ে। তুমি ভ্রমণ করতে পারবে না।’ তখন আমার কথা ছিল, ‘কেন? মেয়েদের টিকিটের দাম কি বেশি ছেলেদের থেকে যে, আমি পারব না?”
ভ্রমণপিপাসু আসমার জন্ম কুমিল্লায়। বাবার ব্যবসা সূত্রে তার বেড়ে ওঠা খুলনায়। স্থায়ী বসবাসও বিভাগীয় শহরটিতে।
চলতি বছরের মে মাসে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ সেন্ট লুসিয়া ভ্রমণ করেন আসমা। দুই মাস বিরতি নিয়ে চলতি মাসে আবার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়বেন তিনি। এবার শুরুটা করবেন আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস দিয়ে।
এই যে একের পর এক দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাতে খরচ হয় অনেক টাকা। এর জোগান কীভাবে হয়, তা জানতে চাওয়া হয় আসমার কাছে।
জবাবে আবার স্মৃতি রোমন্থন করে এ পর্যটক জানান, প্রথম দেশ ভ্রমণের সময় মা তাকে সোনার গয়না বেচে টাকা দিয়েছিলেন। এখন চাকরির বেতনের টাকা জমিয়েই ছুটে চলেন এপাড়-ওপাড়।
প্রতি দুই বছরে ছয় মাস ভ্রমণ করেন আসমা। বাকি সময়টাতে সে ভ্রমণের টাকা জোগাতে করেন চাকরি।
তিনি বলেন, ‘আমি নিউজল্যান্ডে রেডক্রিসেন্টে চাকরি করতাম। এখন অস্ট্রেলিয়ান একটা কোম্পানিতে আছি। ওখানে এইচআর ও ফাইন্যান্সের দেখাশোনা করছি। অনলাইনে কাজ করছি মে মাস থেকে।
‘এটা একটা অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারনাশন্যাল কোম্পানি। সোর্স অফ ইনকামটা হলো প্রত্যেক দুই বছরে দেড় বছর চাকরি করি আর ছয় মাসের জন্য আমি বিশ্বভ্রমণ শুরু করি। এইভাবেই আমি করে আসছি আজ পর্যন্ত।’
আগামী দুই বছরে বিশ্বের আরও ৬৩ দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা আসমার। তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা আছে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ ঘুরে দেখার। সেটা পূরণ করতে আরও ৬৩টি দেশ বাকি। আগামী দুই বছরে সেসব দেশে যাওয়ার ইচ্ছা।’
ভ্রমণের পাশাপাশি বাংলাদেশের পাসপোর্টকে বিশ্ব পরিসরে পরিচিত করাচ্ছেন বলেও জানান আসমা। এরই মধ্যে তিনি আখ্যা পেয়েছেন ‘গ্রিন পাসপোর্ট গার্ল’ হিসেবে।
‘বাংলাদেশি মানুষ যে বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারে, আমরা যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পরিবর্তন না করেও কিছু করতে পারি, এটা আমি দেখাতে চেয়েছি’, বলেন আসমা।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে যাত্রী কমছে বরিশালের আকাশপথে। এরই মধ্যে বেসরকারি এয়ারলাইনস নভো এয়ার এ রুটে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। ফ্লাইট কমিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে উপযোগিতা হারাতে পারে ৩৪ বছরের পুরাতন বিমানবন্দরটি। অবশ্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও দেশি এয়ারলাইনসগুলো বলছে, এ সংকট সাময়িক। তাদের আশা, আগামী শীত মৌসুমে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে জমে উঠবে ফ্লাইট চলাচল।
বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো বলছে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গরম আর রোদের দাপট থাকায় এ সময়টিকে পর্যটনের জন্য অনুপযুক্ত মনে করা হয়। যেহেতু এ সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে, তাই স্বাভাবিকভাবে এয়ারলাইনসগুলোতে যাত্রীর চাপও কমে আসে।
তার ওপর গত এক বছরে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েল বা এভিয়েশন ফুয়েলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এর প্রভাব পড়েছে ভাড়ায়। অতিরিক্ত খরচের কারণে আগে যারা সময় বাঁচাতে আকাশপথ বেছে নিতেন, তাদের অনেকে অন্য মাধ্যমগুলোতে ফিরে যাচ্ছেন। এতে আকাশপথে যাত্রীর সংখ্যায় প্রতি বছর যে প্রবৃদ্ধি হতো, তা হোঁচট খেয়েছে।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে সড়কপথে ভ্রমণ ও সেতু দেখার জন্য মানুষের বাড়তি আগ্রহ জন্মেছে। এই কারণে বরিশাল বিমানবন্দর ব্যবহার করা যাত্রী কমে গেছে।
আকাশ থেকে শস্যক্ষেতে কীটনাশক ছিটাতে ১৯৬৩ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জের রহমতপুর ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয় প্রায় ২ হাজার ফুটের রানওয়ে। সে সময় এটিকে প্ল্যান্ট প্রোটেকশন বন্দর হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
১৯৮৫ সালে এই রানওয়েটিকে বিমানবন্দরে রূপ দেয়া হয়, তবে সে সময় এখানে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। ১৯৯৫ সালের ১৭ জুলাই বেসরকারি এয়ারলাইনস অ্যারো বেঙ্গলের ঢাকা-বরিশাল রুটে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে বিমানবন্দরটির বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়। ওই বছরেরই নভেম্বর মাসে বিমানবন্দরটিতে ফ্লাইট চালু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
শুরু থেকেই এ পথে যাত্রীর খরা ছিল। ২০০৬ সালে যাত্রীর অভাবে বিমানবন্দরটিতে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৯ বছর পর ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল আবার এই বিমানবন্দরে ফ্লাইট শুরু হয়।
১৬০ দশমিক ৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট; প্রস্থ ১০০ ফুট।
বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও আমরা বরিশালে দিনে একটি করে ফ্লাইট চালাচ্ছি, তবে যাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কম। এর একটি কারণ এখন পর্যটনের জন্য অফ সিজন। আর তার ওপর পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে ভ্রমণে মানুষের বাড়তি আগ্রহ আছে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে আমি মনে করি না যে সড়কপথ ও আকাশপথ একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে।
‘এখন হয়তো পদ্মা সেতু দেখার বিষয়ে অনেকের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে, আকাশপথের যাত্রী কিন্তু ভিন্ন। এ কারণে ৩-৪ ঘণ্টার দূরত্বের একটি পথ কখনও ২৫-৩০ মিনিটের যাত্রার সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে তিন দফা টোল দিতে হয়। তাতে অর্থের যে খুব বেশি সাশ্রয় হচ্ছে, তাও না। এখন হয়তো সাময়িক একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তবে এটা দীর্ঘ মেয়াদে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।
‘আগামী পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের প্রতি মানুষের একটি আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে। এতে করে ঢাকার বাইরে থেকে যারা এখানে যেতে চাইবেন, তাদের একটি বড় অংশই আকাশপথ ব্যবহার করবেন বলে মনে হচ্ছে।’
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) মনে করছে, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে বাড়বে যাত্রী।
বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা গর্বিত। এর একটা সুফল পাওয়া গেছে যে, অনেক যাত্রী এখন বাই রোডে যাওয়া-আসা করছে, কিন্তু এটা সাময়িক।
‘যখন সময়ের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে, তখন কিন্তু আবার এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রীসংখ্যা বাড়বে। এখন হয়তো কৌতূহলের কারণে অনেকে সড়কপথ ব্যবহার করছে, কিন্তু যখন সেবার বিষয়টি আসবে, তখন আশা করি বিমানবন্দরগুলো সচল থাকবে এবং যাত্রী সংখ্যাও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিডের সময়েও দেখেছি, আমাদের যাত্রীরা আকাশপথেই বেশি আস্থা রাখছেন। হয়তো কোনো একটি বিমানবন্দরে কমলেও অন্য বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রী বাড়ছে। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগুলো যদি আরও তৈরি হয়, তাহলে আকাশপথে চলাচল আরও বাড়বে।
‘যেমন: নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে বিমানে ওঠার চেয়ে অনেকেই রাস্তার ঝক্কি কমাতে সেখান থেকেই বাসে করে চট্টগ্রাম চলে যান। শুধু বিমানবন্দর না, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক যে ব্যবস্থাপনা, এগুলো যদি আরও ভালো করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল আরও বাড়বে।’
আরও পড়ুন:ব্যাংকক যেতে টিকিট কিনলে দুই রাত বিনা মূল্যে হোটেলে থাকার অফার ঘোষণা করেছে বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস। প্রতিষ্ঠানটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ইউএস বাংলা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে যাচ্ছে। যাত্রা শুরুর প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশি পর্যটকরা দুটি টিকিট কিনলেই দুই রাত ফ্রি হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন।
এই অফার ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। অফারে অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংককের হোটেল ম্যানহাটন সুকুমভিত, অ্যাম্বাসেডর হোটেল ও গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট হোটেল। আকর্ষণীয় এ অফারটি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের যেকোনো নিজস্ব সেলস্ কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
এই প্যাকেজের জন্য জনপ্রতি ন্যূনতম খরচ ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। অফারটি প্রাপ্তবয়স্ক দুইজন পর্যটকের জন্য প্রযোজ্য হবে। প্যাকেজের সাথে বুফে ব্রেকফাস্ট অন্তর্ভুক্ত। শর্তসাপেক্ষে প্যাকেজে অতিরিক্ত রাত ও শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগও রাখা হয়েছে।
রাজধানীর গোল্ডেন টিউলিপ দ্য গ্র্যান্ডমার্ক হোটেলে বাংলা ফুড ফেস্ট শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অভিনেতা নীরব, আসিফ, অভিনেত্রী দীঘি ও গায়ক রাফাত।
এক সপ্তাহব্যাপী এই বাংলা খাবারের উৎসবে থাকছে মজাদার সব বাংলা খাবারের সমাহার। মরিচ বাটা, ভুনা হাঁসের গোস্ত, ঢাকাইয়া খাসির পায়া, চেপা শুঁটকির লোরা, কলার মোচা ভর্তা, পিঁয়াজ লাল মরিচ ও রসুনের চাটনি, নারিকেল দুধে ভেজা চিতই পিঠা, তন্দুরি শিকানদারি রানের মতো আরও অনেক মুখরোচক ও লোভনীয় খাবার।
শুধু খাবারের উৎসবই শেষ নয়, আরও আছে ঐতিহ্যবাহী বাংলা গান, বায়োস্কোপ বুথ, কাব্যিক বইয়ের বুথ, ফ্রি মেহেদি বুথ, ফটো বুথ, শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও লটারি। এই আয়োজন প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকবে।
মাত্র এক মাস আগেই ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা দিয়ে বিলাসবহুল একটি প্রমোদতরী কিনেছিলেন ইতালিয়ান ধনকুবের পাওলো স্কুডিয়ারি। ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ ফরমেন্তেরার পশ্চিম উপকূলে ক্যালা সাওনায় এটি ভাসছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আগুন ধরে যায় প্রমোদতরীতে।
আরিয়া এসএফটি নামে প্রমোদতরীর আয়তন ১৫০ ফুট। আগুন লাগার সময় এটিতে ৯ যাত্রী এবং সাতজন ক্রু ছিলেন। স্প্যানিশ দুটি উপকূলরক্ষী জাহাজ তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে এটা স্পষ্ট নয় তাদের মধ্যে প্রমোদতরীর মালিক স্কুডিয়ারি ছিলেন কি না।
আগুনের কারণে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া প্রতিবেশী দ্বীপ ইবিজা থেকেও দেখা গেছে। আগুনের কারণ জানা যায়নি এখনও।
ইতালির নেপলসে জন্ম শিল্পপতি স্কুডিয়ারির। গাড়ির অভ্যন্তরীণ উপাদান প্রযোজক গ্রুপো অ্যাডলারের চেয়ারম্যান তিনি, যার আনুমানিক মূল্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। ১৯৫৬ সালে তার বাবা অ্যাচিল এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
এ ছাড়া ট্যুরিজম এবং বেশ কিছু নামকরা রেস্তোরাঁর মালিক ৬২ বছর বয়সী পাওলো স্কুডিয়ারি।
কূটনীতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য সার্বিয়ায় ভিসামুক্ত যাওয়া-আসা নিশ্চিত করতে দেশটির সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন সরকারপ্রধান।
পরে সচিবালয়ে বৈঠকের বিস্তারিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক দেশের সঙ্গে এ রকম চুক্তি করছি। সার্বিয়ার সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হলো কূটনৈতিক বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট যাদের থাকবে, তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভিসা নিতে হবে না।’
এ চুক্তি সই হলে সার্বিয়া যেতে বাংলাদেশি কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা লাগবে না। একই নিয়ম সার্বিয়ার কূটনীতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের জন্য দারুন খবর নিয়ে এল একটি পর্যটন সংস্থা। বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত শহর দেখার পাশাপাশি লড়াইরত যোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও দেশটির নাম শুনলে হয়ত অনেকেই সরে আসবেন পরিকল্পনা থেকে।
কথা হচ্ছে ইউক্রেন নিয়ে। দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ছয় মাস চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে অভিযান জোরদার করেছে পুতিন বাহিনী। মৃত্যু ও ধ্বংসের ঢেউ উড়িয়ে ইউক্রেনে পর্যটকদের আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ভিজিট ইউক্রেন নামের প্রতিষ্ঠানটি।
গত মাসে প্রতিষ্ঠানটি এই ট্যুর প্ল্যান চালু করে। বলা হচ্ছে, ইউক্রেনীয় সেনারা যেসব দখল শত্রুমুক্ত করেছে, সেসব শহরের অবস্থা সরাসরি দেখার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে প্ল্যানে। ট্যুর কোম্পানির ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, ‘এখনই অদম্য ইউক্রেনে ভ্রমণ শুরু করুন।’
ইউক্রেন ভ্রমণে আন্তর্জাতিক সতর্কতা সত্ত্বেও সংস্থাটি বলছে, এ পর্যন্ত ১৫০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে নিরাপদ ভ্রমণের তথ্য সরবরাহ করে প্রতি মাসে ১৫ লাখ হিট পাচ্ছে তারা। যা রুশ অভিযানের আগের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ট্যুরের জন্য সাইন আপ করা যে কেউ বোমায় ধ্বংসাবশেষ, বিধ্বস্ত ভবন, ক্যাথেড্রাল এবং স্টেডিয়ামগুলোর মধ্য দিয়ে হাঁটার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া সামরিক হার্ডওয়্যার এবং বিমান হামলার সাইরেনগুলোতে স্বচক্ষে দেখে আসতে পারবেন পর্যটকরা।
ভিজিট ইউক্রেনের প্রতিষ্ঠাতা আন্তন তারানেঙ্কো বলেন, ‘অনেকের কাছে এমন ছুটি ভয়ংকর মনে হতে পারে। তবে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন এটা “ডার্ক ট্যুরিজম” নয়, যেখানে কেবল মৃত্যু, বিপর্যয়ের মতো দৃশ্যগুলো দেখানো হয়।
তারানেঙ্কো আরও বলেন, ‘এই সফরগুলো ইউক্রেনের জন্য তার নাগরিকদের ভালোবাসার মনোভাব তুলে ধরার পাশাপাশি বহির্বিশ্বকে এটা দেখানোর সুযোগ রয়েছে যে যুদ্ধের মধ্যেও জীবন থেমে থাকে না।
‘ইউক্রেনে যা ঘটছে তার মধ্যেও কীভাবে লোকেরা মানিয়ে নিচ্ছে, একে অপরকে সাহায্য করছে সেসব দেখার সুযোগ থাকছে। বোমা হামলায় বিধ্বস্ত দোকান ফের চালুর পর সেখানে বসে বন্ধুদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো চেখে দেখতে পাবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেনে ‘লেভেল ফোর সতর্কতা জারি করেছে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে আমেরিকান নাগরিকদের ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কিয়েভে বাইডেন প্রশাসন দূতাবাসে কার্যক্রম স্থগিতের পর সাফ জানিয়ে দিয়েছে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কোনো কনস্যুলার সহায়তা দেয়া হবে না।
অন্যান্য দেশও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে। যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস বলছে, শহর ও অঞ্চলে হামলার কারণে “জীবনের জন্য প্রকৃত ঝুঁকি” রয়েছে।
তবুও তারানেঙ্কো আশায় বুক বাঁধছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি আমাদের ধ্বংস হওয়া শহর এবং সাহসী লোকদের যুদ্ধ দেখতে চান, তবে দয়া করে এখনই আসুন। তবে আপনাদের সর্তক থাকতে হবে। কারণ ইউক্রেন এখনও শতভাগ নিরাপদ না।’
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির ধ্বংসপ্রাপ্ত পর্যটন শিল্পকে রক্ষা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও, ইউক্রেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ ট্যুরের অনুমোদন দেয়নি।
ইউক্রেনের স্টেট এজেন্সি ফর ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের চেয়ারপার্সন মারিয়ানা ওলেস্কিভ বলেন, ‘এখন পরিদর্শনের উপযুক্ত সময় নয়। তবে আমরা জয়ী হওয়ার পর মানুষকে ইউক্রেন দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য