‘এইখানে আমার ঘর ছিল’- একটি পাকা ভিটের ওপর দাঁড়িয়ে বললেন বৃদ্ধ পূর্ণ দাস। যদিও এখানে এখন ঘরের কোনো অস্তিত্ব নেই। ভিটেটিই আছে কেবল। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পুরোনো টিন আর বাঁশ এখানে একদা ঘর থাকার কথা জানান দিচ্ছে।
গত ১৮ জুন ঢলে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পূর্ণ দাসের মাটির ঘর। পেশায় চা শ্রমিক তিনি। সিলেট নগর লাগোয়া বালুচর এলাকার দলদলি চা বাগানেই কাজ করেন।
বাগান থেকে ঢলের পানি নেমে গেছে ১৮ জুনই। তবু এখন পর্যন্ত ঘর মেরামত করতে পারেননি পূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ বাবু। ভাতই খাইতে পারি না। ঘর বানাইমু কী দিয়া!’
১৫ জুন থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়, যা পরে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় রূপ নেয়। ১৮ জুন ব্যাপক বৃষ্টি হয় এই অঞ্চলে। ওই দিনই তলিয়ে যায় প্রায় পুরো সিলেট নগর।
চা বাগানগুলো টিলাশ্রেণির ভূমি। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা। তবে ১৮ জুনের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দলদলি চা বাগানও। ঢল আর টিলাধসে ভেঙে যায় এই বাগানের শ্রমিকদের অন্তত ২২টি ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও অন্তত ২০টি বসতি।
সেই দিনের ভয়ংকর স্মৃতি বর্ণনা করে প্রবীণ চা শ্রমিক জয়ন্ত দাস বলেন, ‘সকালে টিলা থেকে ঢল নামতে শুরু করে। চোখের সামনে খড়কুটোর মতো আমার ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অনেক ঘরের চালও সেদিন পানির নিচে চলে গিয়েছিল। বাগানের ভেতরে পানির বড় বড় ঢেউ ছিল। আর ধসে পড়ছিল বাগানের ভেতরের টিলাগুলোও।’
তিনি বলেন, ‘জীবনে এমন পানি কখনও দেখিনি। বাগানে কখনও পানি ওঠেনি।’
সিলেটে বন্যাকবলিতদের সহায়তায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ চলছে। প্রশাসনের লোকজন বলছেন, পর্যাপ্ত ত্রাণের মজুত রয়েছে। আর সরকারের চেয়েও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক ট্রাক ত্রাণ নিয়ে আসছে সিলেটে।
তবু দলদলি বাগানে এখনও কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন এই বাগানের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মিন্টু দাস। না সরকারি উদ্যোগে, না বেসরকারি উদ্যোগে। ঘরবাড়ি হারানো এখানকার দরিদ্র শ্রমিকরা এখন থাকছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে।
বাগানের সবজি বাড়ি এলাকার রাজকুমার দাসের ঘর একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ঝড়ে। ভিটের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে টিন, বাঁশ, কাঠসহ ঘরের সরঞ্জামাদি।
ঘর ভাঙার ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সংস্কারকাজ শুরু করতে পারেননি রাজকুমার। তিনি বলেন, ‘আমরা ১২০ টাকা মজুরিতে কাম করি। ভাত খুইমু না ঘর বানাইমু?’
ভাত খাবেন না ঘর বানাবেন- এমন দোটানায় বাগানটির ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রমিকই। তবে এ বিষয়টির সমাধান দিতে বাগানে এখনও আসেননি দায়িত্বশীলদের কেউ। এমনকি বাগান কর্তৃপক্ষও না।
ঘর হারানো আরেক শ্রমিক মনি দাস বলেন, ‘বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘর ঠিক করে দেবে। কিন্তু ১০ দিনেও দেয়নি। এখন আমরা থাকব কোথায়? ঘর ছাড়া তো এক দিনও থাকা যায় না।’
শিপলা দাস নামে ঘর হারানো আরেক নারী বলেন, ‘আমরা গরিব চা শ্রমিক। আমাদের খোঁজ কেউ করে না। কেবল মেম্বার (ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য) একদিন এসে দেখে গিয়েছিল। আর কেউ দেখতেও আসেনি। কেউ আমাদের ত্রাণও দেয়নি।’
১৮ জুনের টানা বৃষ্টিতে টিলা ধসে পড়ে সুক্রু দাসের ঘরে। এতে ঘর গুঁড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাত ভেঙেছে তার। ঘর হারানো শুক্রু এখন মাকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী মামার বাড়িতে।
প্লাস্টার করা হাত গলায় ঝুলিয়ে শুক্র দাস বলেন, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সহায়তা দেয়নি। কেউ দেখতেও আসেনি। সব হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত।’
মঙ্গলবার বিকেলে দলদলি চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের শ্রমিক বস্তি এলাকাটি প্রায় লন্ডভন্ড। অনেক ঘরের পুরোটাই ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশির ভাগ বাড়ি। টিলাধসে অনেক সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
ঢলে ঘর তলিয়ে যাওয়া ও টিলাধসের কারণে ১৮ জুন বাগানের প্রায় সব শ্রমিক রাত কাটিয়েছেন পাতিঘর হিসেবে পরিচিত পাতা সংরক্ষণের ঘরে। বৃষ্টিতে তলিয়ে থাকায় এই বাগানে সাত দিন পাতা উত্তোলনও বন্ধ ছিল বলে জানালেন শ্রমিকরা।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ঘর হারানো চা শ্রমিক বিপ্লব দাস বলেন, ‘বালা করি ছবি তুলিয়া নেইন, আমরারে ঘরবাড়ি বানানির একটা ব্যবস্থা করিয়া দেইন।’
১৮ জুনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘ইলা মেগ (এমন বৃষ্টি) জীবনেও দেখছি না।’
এই বাগানের বাসিন্দা ড্যানি নায়েক গাড়ি চালানোর কাজ করেন। বাগানে এখনও ত্রাণ না পৌঁছানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাগান তো টিলা এলাকা। তাই সবাই হয়তো মনে করছে, এখানে পানি উঠবে না। তাই এদিকে কেউ আসছে না। আমাদের দুর্দশার কথা পৌঁছানোর মতোও কেউ নেই।’
দলদলি চা বাগানের অবস্থান সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নে। এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদ আহমদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ এখন পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন থেকে ১৩ টন ও সিটি করপোরেশন থেকে পাঁচ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। এই সামান্য ত্রাণ দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের চাহিদা মেটানো অসম্ভব।’
দলদলি চা বাগানে এখনও ত্রাণ না পৌঁছানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এই বাগানের শ্রমিকদের জন্য এক টন চাল রেখেছি। কাল-পরশুর মধ্যে তা পৌঁছানো হবে।’
তবে দলদলি চা বাগানে এখনও ত্রাণ না পৌঁছানোর তথ্য জানেন না বলে জানিয়েছেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক।
তথ্যটি জানানোর জন্য এ প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। বেসরকারি পর্যায়েও অনেক ত্রাণ আসছে। দলদলি চা বাগানে কেন এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
ইউএনও নিউজবাংলাকে আরও বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তালিকা করা হচ্ছে। সরকার থেকে এই বাড়িঘর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল চা কোম্পানির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের একটি ফাঁড়ি বাগান দলদলি। এই বাগানের দায়িত্বে থাকা লাক্কাতুরা চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জিলকর হোসেনের কাছে শ্রমিকদের ঘরবাড়ি সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাগান ব্যবস্থাপক এ কে এম এমদাদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
তবে ব্যবস্থাপক এমদাদুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনীতে সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবদুল হান্নান (৭৫) নামের কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর দক্ষিণপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুল হান্নান দেবীপুর দক্ষিণপাড়ার খোদা বক্সের ছেলে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিরোক আহমেদ বলেন, ‘আজ সকালে আবদুল হান্নান নিজ গ্রামের মাঠে অবস্থিত সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে স্থানীয়রা মরদেহটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়ি দেবীপুরে নিয়ে আসে।’
বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিদুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি। বতর্মানে মরদেহটি পরিবারের কাছে রয়েছে।’
নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার আগ্রান ঈদগাহ মাঠ এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই ভ্যানের এক যাত্রী।
নিহত মোজাহার আলী একই উপজেলার পারকোল গ্রামের মৃত শাহাদত আলীর ছেলে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলীমুল ইসলাম জানান, মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি ট্রাক ভ্যানটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ভ্যানচালক মোজাহার মারা যান। সেই সাথে ভানযাত্রী মিজান শেখ আহত হন।
তিনি বলেন, পরে স্থানীয়রা আহত মিজানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তীব্র তাপপ্রবাহে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীতে। পানির অভাবে ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছে বোরো ধান। ধানের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্যান্য ফসলও। পানির সংকট হওয়ায় আমের মুকুল ঝরে যাচ্ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ধান চাষি আজমত উল্লাহ জানান, পানির অভাবে ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ধানে পোকাড় আক্রমণ হচ্ছে। ধানের থোড়া আসায় পানির দরকার হলেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকদিন বরেন্দ্রের গভীর নলকূপে সেচের জন্য ঘুরছেন। তবে সিরিয়াল পাচ্ছেন না।
জেলার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণ আম ঝড়ে পড়ছে। গাছের নিচে ঝড়া আম স্তুপ হয়ে আছে।
চারঘাট উপজেলার আমচাষী জব্বর আলী বলেন, পানির অভাবে আম ঝড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আম ঝড়ে যাচ্ছে। পানি দিয়েও আম ঝড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। পানিও ঠিক মত উঠছে না। এবার আমের ফলন ঠিক মত হবে না।
অন্যান্য চাষীরাও বলছেন একই কথা। পানি না থাকায় বালায় নাশক স্প্রেও দেয়া যাচ্ছে না। ফলে পোকামাকড় আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরেন্দ্রের অপরিকল্পিত সেচ প্রকল্পের কারণে এই অঞ্চলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। ফলে পানির সংকট সৃষ্টি হয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে বোরো ধানের উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, বোরো ধানের জমিতে কম পক্ষে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ধানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। ধানের থোড়া তে প্রচুর পরিমাণ চিটা দেখা দেয়। আর পানির অভাবে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ হয়ে ধান গাছ হলুদ হয়ে যায়। যেভাবেই হোক বোরো ধানের জমিতে সব সময় পানির ধরে রাখতে হবে। এবার যেভাবে তাপ প্রবাহ ও পানির সংকট তৈরি হয়েছে এটা আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকলে বোরোর উতপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাপ প্রবাহের ফলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানির সংকট তৈরি হওয়ায় আম ঝড়ে পড়ছে। আমের ঝড়ে পড়া রোধে আম গাছের গোড়াতে সপ্তাহে অন্তত একদিন পানি দিতে হবে হবে। কৃষকদের আমরা গাছের গোড়াতে পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শীতাংশু কুমার পাল বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের কারণে পানির স্তর আরো বেশি দ্রুত নিচে নেমেছে। গভীর নলকূপেও এখন ঠিম মত অয়ানি উঠছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমিয়ে নদী থেকে জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি জমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের দাবি, সমালোচকরা পানি সংকটের বিষয়ে বরেন্দ্রের ঘাড়ে এককভাবে দোষ চাপাচ্ছে। পানির সংকট মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পদ্মা নদী থেকে আশেপাশের অঞ্চলে সেচের পানি সরবারাহ করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যাওয়া গভীর নলকূপ গুলোও মেরামত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তীব্র তাপ প্রবাহের ফলে কিছুটা পানি সংকট তৈরি হলেও তা দ্রুত সমাধান করতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। বোরো ধানের জমিতে পানি পানি সরবারাহের বিষয়ে বরেন্দ্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সাবিনা বেগম জানান, বোরো ধানের জমিতে পানি সরবাহর নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর একযোগে কাজ করার ব্যাপারে সমন্বয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলা হচ্ছে যেন সেচের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারাহ নিশ্চিত করা যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আপন ভাতিজিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমুদপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারীসহ তিনজনকে আট করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
প্রাণ হারানো তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২২), যিনি প্রয়াত শুক্কুর উদ্দিনের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর শারমিন বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
শারমিনের অভিযুক্ত চাচার নাম আবদুল খালেক।
তরুণীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে পিতৃহারা শারমিনকে কৌশলে বিয়ে দেন তার চাচারা। বিয়ের পর তালাক হলে সমঝোতায় দেনমোহরের টাকা শারমিনকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তার বড় চাচা আবদুল খালেক। সেই টাকা ও শারমিনের নামে থাকা জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তারা আরও জানান, সম্পত্তি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমিনের সঙ্গে তার চাচাদের বিরোধ বাধে। ওই সময় অভিযুক্তদের মারধরে গুরুতর আহত হন শারমিন। পরে আহত শারমিনকে অভিযুক্তরাই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
শারমিনের দুলাভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শারমিন ও শাম্মী আপন দুই বোন। আমার শ্বশুর (শারমিনের বাবা) মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর শারমিন আমার বাড়িতেই থাকত। পরে শারমিনের বাবলু নামের এক ফুফা ও তার জ্যাঠারা মিলে কৌশলে শারমিনকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে দেন।
‘বিয়ের তিন-চার মাস পরই তালাক হয় শারমিনের। তখন থেকেই শারমিন আমার শাশুড়ির সাথে তার বাবার বাড়িতেই থাকত।’
শারমিনের মা এবং এ তরুণীর দুলাভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, শাম্মী ও শারমিনের নামে ৩২ শতাংশ জমি আছে। সেই জমি নেয়ার লোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজসহ শারমিনকে মারধর করতেন তার চাচা আবদুল খালেক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শারমিনের কাছে জমি চেয়ে মারধর শুরু করেন তিনি। পরে আবদুল খালেকের ভাই আবদুল বারী, ভাতিজা রহমান ও ছকু নামের একজন মারধর করতে থাকেন। ওই সময় তাদের মারধরে শারমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গলাতে কোনো দাগ চোখে পড়েনি, তবে শ্বাসরোধের বিষয়টি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য