সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে বহু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বই-খাতা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের বিকল্প বই দেবে প্রশাসনের সে সুযোগও নেই। কারণ তাদের গুদামেও নেই পর্যাপ্ত বই।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্বল্প আয়ের পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত হলেও তারিখ দিলে পড়ার মতো বই কোথায় পাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই।
সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে তোফাজ্জল হোসেন। তার বইও ভেসে গেছে বানের জলে।
তোফাজ্জল বলে, ‘বন্যার কারণে কয়েক দিন ধরেই পড়ালেখা করতে পারছি না। পরিবারের সবার সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। এখন বাড়িতে এসে দেখি ঘরে বই-খাতা, জ্যামিতি বক্স কিছুই নেই। সব পানিতে ভেসে গেছে। যেকোনো দিন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। এখন আমি বই-খাতা পাব কোথায়?’
রায়েরগাঁও এলাকার বাসিন্দা শিহাব আহমদ রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গত ১৭ জুন পানি ঢুকে পড়ে শিহাবদের ঘরে। বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে তার সব বই-খাতা।
শিহাব বলে, ‘হঠাৎ করে পানি ঢুকে পড়ায় বই-খাতা সরাতে পারিনি। আমরা একটা আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে এসে দেখি সব বই-খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বেশির ভাগ ছিঁড়ে ভেসে গেছে পানিতে।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে কোনো রকমে দিন কাটছে শিহাবদের। তার কৃষক বাবা আব্দুল করিমের আয়ের উপায় এখন বন্ধ। পানি নেমে গেলে ঘর ঠিকঠাক করার পাশাপাশি চাষের জন্য পয়সা জোগাড় করাই এখন ভীষণ চ্যালেঞ্জ তার জন্য। বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে ছেলের বই-খাতা।
করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন খাওয়া থাকা নিয়েই চিন্তায় আছি। বাচ্চার বই-খাতা কিনব কী করে? আবার সরকার থেকে দেয়া বিনা মূল্যের বইগুলো তো বাজারে কিনতেও পাওয়া যাবে না।’
সিলেটে গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। ২১ লাখেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২৯ হাজার ঘরবাড়ি। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও প্লাবিত রয়েছে জেলার বেশির ভাগ এলাকা।
বন্যায় শিহাব, তোফাজ্জলের মতো অনেক শিক্ষার্থীই হারিয়ে ফেলেছে বই-খাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম। এতে শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। সরকার থেকে দেয়া পাঠ্যবই বাজারে কিনতে পাওয়া না যাওয়ায় এগুলো হারিয়ে সংকটে পড়েছে সব শিক্ষার্থী। তাদের বইসহ শিক্ষা সরঞ্জাম দেয়া না হলে এই সমস্যার সমাধান কঠিন।
তবে বন্যায় কী পরিমাণ শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে, সেটির তথ্য নেই শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে।
বিতরণযোগ্য বই নেই শিক্ষা বিভাগে
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল মান্নান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া যে যে এলাকা উদ্বৃত্ত বই রয়েছে তা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রদানের ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
তবে এটি যে সমাধান নয়, সেটি তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এবার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। সুনামগঞ্জ তো পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত বইয়ে হবে না। আবার নতুন করে এখন বই ছাপানোও কঠিন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করব, সম্ভব হলে তারা যেন সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ম্যানেজ করে নেয়ার চেষ্টা করে।’
শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা বইও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মজুত থাকা বইয়েরও ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’
স্কুল খোলার আগে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে না উল্লেখ করে এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হবে।’
ঝরে পড়ার হার বাড়ার শঙ্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জফির সেতু।
তিনি বলেন, ‘আমি বন্যার শুরু থেকে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছি। অনেক শিক্ষার্থীই আমাকে জানিয়েছে, তাদের বই-খাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। বই হারিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। কারণ সামনেই তাদের পরীক্ষা।
‘এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরই ঝরে পড়ার হার বাড়ে। এখন সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের বইসহ শিক্ষা সরঞ্জাম প্রদানের উদ্যোগ না নেয়, তবে ঝরে পড়ার হার আরও বাড়বে। বন্যায় সব হারিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো এমননিতেই সংকটে। বই-খাতা কেনার মতো অর্থ তাদের কাছে নেই।’
ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাই নেই
শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি জানিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘স্কুল খোলার আগে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে না।’
জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ‘আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা করছি। স্কুল ভবনের কেমন ক্ষতি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা কী পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করছি। কিন্তু অনেক জায়গা থেকে এখনও পানি নামেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’
আরও পড়ুন:খাগড়াছড়ি সদরের একটি স্কুলের গেট ভেঙে পড়ে এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
খবংপুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার সকাল ৯টার দিকে প্রবেশের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
৬ বছর বয়সী শ্রাবণ দেওয়ান ওই বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থী। নারায়ণখাইয়া গ্রামের প্রণয় দেওয়ানের ছেলে শ্রাবণ।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি জানান, স্কুলে ঢোকার সময় গেট ভেঙে পড়ে মারাত্মক জখম হন। ঘটনার পরপর রক্তাক্ত অবস্থায় শ্রাবণকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত ও পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
এদিকে দুর্ঘটনার জন্য এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন।
স্বণির্ভর বাজারের ব্যবসায়ী কলিন চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে গেটটি ভাঙা ছিল। শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়ার সময় গেট ধরে খেলত। এরপরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গেটটি না সরিয়ে বাঁশের খুঁটি দিয়ে লাগিয়ে রেখেছিল। তাদের অব্যবস্থাপনার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
খাগড়াছড়ির প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, ‘ঘটনার পরই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষক বা অন্য কারো কোনো দায় আছে কি না তা তদন্তে কমিটি করতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের সদর উপজেলার চরহোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট আবুল হোসেন খলিফার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ১২১ নং চরহোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি শিক্ষার্থীদের ১ হাজার ৯৫০ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা তাদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
উপবৃত্তির এই টাকা পেতে অভিভাবকদের প্রত্যেকেই মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। এই সুযোগটিই কাজে লাগান বিদ্যালয়ের পাশে বাংলাবাজার এলাকার এজেন্ট আবুল হোসেন খলিফা। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তিনি কৌশলে সবার গোপন পিন নম্বর জেনে নিয়েছিলেন।
এ অবস্থায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি ও স্কুল ড্রেসের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন খলিফা। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালিশের মাধ্যমে তাকে জরিমানা করেন এবং শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করেন।
কিন্তু কয়েকজনকে ফেরত দিলেও বাকিদের টাকা দিতে গড়িমসি করছেন খলিফা। এ জন্য তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিয়ার মা সাফিয়ে বেগম জানান, তার মোবাইলে টাকা আসছে, কিন্তু তিনি কোনো টাকা পাননি। পরে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গেলে তারা জানায়, তার মোবাইলে টাকা আসছিল, কিন্তু কেউ তা উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
সাফিয়ের দাবি, তার পিন নম্বর শুধু আবুলই জানতেন।
শিক্ষার্থী রোহান ও শ্রাবণীর ফুপু চায়না বেগম বলেন, ‘আমার ভাতিজার টাকা আসেনি। আর ভাতিজি ১ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে ১ হাজার পেয়েছে। এই ঘটনার বিচার চাই।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, ‘শিক্ষার্থীদের বই, খাতা ও স্কুল ড্রেস কেনার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দিয়েছে সরকার। সেই টাকা এজেন্ট আবুল আত্মসাৎ করেছে বলে অভিভাবকরা স্কুলে এসে অভিযোগ করেছেন। পরে আমরা স্থানীয় ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’
কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত আবুল বলেন, ‘আমি কিছু টাকা নিয়েছিলাম। আমার ভুল হয়েছে। এ জন্য আমি ক্ষমা চাই। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের কথামতো কিছু টাকা আমি দিয়ে দিয়েছি।’
ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও যদি কোনো শিক্ষার্থী টাকা না পায় তা হলে তাদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করব।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দাতুন নেছা রুপা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টাকা হাতিয়ে নেয়ায় ওই এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মাদারীপুর সদর উপজেলার ইউএনও মো. মাইনউদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী বা তাদের পরিবারের কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের (একাংশ) নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। কার্যনির্বাহী এই কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফিস আহমদ।
সোমবার নীল দল কার্যনির্বাহী পর্ষদ নির্বাচন-২০২২-এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. সৈয়দ আলম এ ফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে কোনো পদেই বিরোধী প্রার্থী না থাকায় সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
মোট ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির সদস্যরা হলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম, ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছগীর হোসেন খন্দকার, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন।
এ ছাড়া রয়েছেন সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ঝুমুর আহমেদ, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক, চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমাম হোসেন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেওয়ান বদরুল হাসান এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কে এম সুজাউদ্দিন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যনির্বাহী পর্ষদের প্রথম সভায় সদস্যদের মধ্য থেকে সহসভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে।
নির্বাচনে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ এম এম গোলাম আদম ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার দায়ে বরিশালের এক শিক্ষককে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শামিম আহমেদ সোমবার দুপুরে এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুর রহমান।
তিনি জানান, আপিল শর্তে আসামিদের ১৫ দিনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে আদালত।
সাজা পাওয়া আসামি হলেন বরিশাল সদর উপজেলার কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতিও।
২০১৯ সালে কাউনিয়া থানায় এই মামলা করেছিলেন কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য আব্দুল বারেক।
সে বছর প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপনের অনুরোধ জানান বাদী। স্কুলে এই অনুষ্ঠান করায় অনীহা প্রকাশ করেন শফিকুল। পরে বাদী ও অন্য শিক্ষকদের চাপে জন্মদিন উদযাপনে রাজি হন তিনি।
ওই বছরের ১৭ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে শিক্ষকরা শ্রদ্ধা জানান। এ সময় প্রধান শিক্ষক শফিকুল তাচ্ছিল্য করে বাম হাত দিয়ে একটি ফুল বঙ্গবন্ধুর ছবির সামনে ধরেন। উপস্থিত লোকজন এর প্রতিবাদ জানান। তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়।
এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি হয়েছে জানিয়ে বাদী মামলা করেন। সাতজনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত প্রধান শিক্ষক শফিকুলকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়।
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর পাশে না থাকলে দেশ এতো দ্রুত স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালীন বঙ্গমাতা গেরিলা হিসেবে কাজ করতেন।’
সোমবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য এ কথা বলেন।
এর আগে হল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গমাতার প্রতিকৃতিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের নেতৃত্বে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখনই কারাবরণ করেছেন তখন বঙ্গমাতা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা, হলের হাউজ টিউটরবৃন্দ এবং হলের ছাত্রীরা।
এ সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে ছাত্রী হল মিলনায়তনে একটি কর্নারের উদ্বোধন করা হয়।
আরও পড়ুন:পাঠকপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ র ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দিয়ে বইগুলোর বিক্রির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের করা লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করে সোমবার এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা ও হামিদুল মিসবাহ। আর রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও মো. ইফতাবুল কামাল।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, “কাজী আনোয়ার হোসেনের পক্ষে পরিবারের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আপিল তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ‘মাসুদ রানা’ র ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বই বেচাবিক্রির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে আদালত। এর ফলে এই ৩১০টি বই বেচাবিক্রি করা যাবে না। সেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।”
মামলা থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আব্দুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ দাখিল করেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই শেষে ২০২০ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়। পরে এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কাজী আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করে।
রুলে এখতিয়ারবর্হিভূত হওয়ায় কপিরাইট অফিসের ওই সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সংস্কৃতি সচিব, কপিরাইট অফিস, রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস ও কপিরাইট বোর্ডকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
ওই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর রিট খারিজ করে রায় ঘোষণা করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়। আদালত কাজী আনোয়ারের পরিবারের সদস্যদের এই আবেদন গ্রহণ করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দেয়।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ ও মানুষের জন্য কীভাবে আত্মত্যাগ করতে হয় নারীরা তা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে এই আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ‘বঙ্গমাতা: এ প্যারাগন অফ উইমেন লিডারশিপ অ্যান্ড ন্যাশন- বিল্ডিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনও উদ্বোধন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি মিসেস সেলিনা হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতির পিতার পাশে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন। সংসার, রাজনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘বঙ্গবন্ধু রাজবন্দি থাকাকালে তিনি বিভিন্ন মামলা মোকাবিলা, সংসার দেখাশোনা এবং দলীয় কর্মীদের আর্থিক সহযোগিতা করতেন। সংসারের কোনো ব্যাপারে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বিরক্ত করতেন না। জেলখানা থেকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বার্তা সংগ্রহ করে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন।’
বঙ্গমাতার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের প্রতিটি পরতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য অবদান রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিজেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে গর্ব অনুভব করি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বঙ্গমাতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ সেন্টার জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-বিষয়ক গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে কার্যকর অবদান রাখবে বলে আশা করি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সম্মেলনের দুটি সেশনে চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য