রংপুর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ বাজার। বাজারের প্রবেশপথে চোখে পড়বে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ভাস্কর্য। তিনটি আম দিয়ে তৈরি এই ভাস্কর্যের জায়গাটিকে বলা হয় আম চত্বর। যে কেউ এখানে এলেই বুঝতে পারবেন এটি হাঁড়িভাঙ্গা আমের জগৎ।
সম্প্রতি এই চত্বরে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির রহমান মামুনের। বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। বন্ধুর সঙ্গে আম কিনতে এসে তাকে নতুন করে বলতে হয়নি জায়গাটি ‘পদাগঞ্জ’। ভাস্কর্য দেখেই চিনে নিয়েছেন।
পদাগঞ্জ থেকে মিঠাপুকুর বা বদরগঞ্জ উপজেলার যেকোনো পথে এগোলে চোখে পড়বে সারি সারি আমগাছ। গত তিন দশকে সুস্বাদু এই আম অর্থনৈতিকভাবে বদলে দিয়েছে মিঠাপুকুর, এমনকি পুরো রংপুরকে।
রংপুর কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুর জেলায় এখন ১২ হাজার হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান। সব থেকে বেশি আম হয় মিঠাপুকুরের খোঁড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জে। এ এলাকাটির মাটি লাল হওয়ায় আমের স্বাদও ভিন্ন। দ্বিতীয় অবস্থানে জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা। আরও বেশ কয়েকটি উপজেলায় এ আমের চাষ হয়।
পদাগঞ্জের সীমানায় পৌঁছলে চোখে পড়বে এক অভাবনীয় দৃশ্য। পথের ধারে, প্রতিটি বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, বাড়ির উঠানে লাগানো আমগাছ। কোথাও কোথাও ধানিজমির আলের চতুর্দিকে সারি সারি করে আমগাছ লাগানো হয়েছে। সব গাছ প্রায় একই আকারের। আর তাতে ঝুলে আছে শত শত আম।
রংপুর কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার আট উপজেলায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে এবার আমের আবাদ হয়েছে, যেখান থেকে ২৯ হাজার ৪৩৬ টন আম উৎপাদন হবে।
আমের নাম হাঁড়িভাঙ্গা যেভাবে
আমের নাম হাঁড়িভাঙ্গা। এলাকার এ জাত এখন সারা দেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে। কোথা থেকে এলো এই জাত? আর এর নামটাই বা এলো কোথা থেকে?
এলাকায় যে জনশ্রুতি চালু আছে, সেটি এলাকার আম ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন পাইকারের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত।
আমজাদ হোসেন পাইকার নিউজবাংলাকে জানান, তার বাবা নফল উদ্দিন পাইকারও আমের ব্যবসা করতেন। ১৯৭০ সালে শতাধিক বছর বয়সে তিনি মারা যান। তার মুখে এই আমের জন্ম-ইতিহাস শুনেছেন তিনি।
আমজাদ হোসেন পাইকার বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি, রংপুরের মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে জমিদার রাজা তাজ বাহাদুর সিংয়ের বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধি ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল। বাগানটি যমুনেশ্বরী নদীর তীরে। জমিদার বাড়িতে আব্বার আসা-যাওয়া ছিল। জমিদারের বাগানসহ অন্য আমচাষিদের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে তিনি পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন। জমিদারের বাগানের বিভিন্ন আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুমিষ্ট, সুস্বাদু ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় তিনি ওই গাছের একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ বাগানে লাগান।’
তিনি বলেন, ‘গাছটি রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার জন্য একটা হাঁড়ি বসিয়ে তাতে ফিল্টার দিয়ে গাছে পানি দিতেন তিনি। কিছু দিন পরপর কে বা কারা সেই হাঁড়ি ভেঙে দেয়। কিন্তু গাছের নিচে যে আব্বা হাঁড়ি বসিয়েছেন, সেটা সবাই জানত। এরপর গাছে খুব আম ধরে। খেতে সুস্বাদু। এলাকার লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করেন, “নওফেল এটা কোন গাছের আম?” তখন আব্বা তাদের বলেন, “এটা হাঁড়ি দিয়ে যে গাছে পানি দেয়া হয়েছে, সেই গাছের আম।” তখন থেকে এই আমের নাম হয় “হাঁড়িভাঙ্গা”।’
আমজাদ হোসেন পাইকারের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে সেই মাতৃগাছটি মিঠাপুকুরের তেকানি মসজিদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
হাঁড়িভাঙ্গা আমের এই জন্মকথার সত্যতা যাচাই করার উপায় নেই। তবে এলাকার বয়স্করা অনেকে এটি সমর্থন করেন।
কীভাবে এলো এই আম
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুড়িরহাট, রংপুর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশিষ কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গার অরিজিন এখানেই (রংপুরের পদাগঞ্জ)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী বা ভারতের মালদহ জেলা একসময় তো একই ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের যত আমের ভ্যারিয়েন্ট আছে, সব মালদহ ডিস্ট্রিকের। কিন্তু এখানে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বহু ভ্যারিয়েন্ট আছে। সুতরাং অনুমান করা যায়, হাঁড়িভাঙ্গার অরিজিন এখানেই।’
তিনি বলেন, ‘কথিত আছে বা প্রচার করা হয় হাঁড়িভাঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তসংলগ্ন এলাকার মালদিয়া বা মালদই আম থেকে এসেছে। আসলে এটা সত্যি নয়। মালদিয়া আমের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই হাঁড়িভাঙ্গা আমের।’
যেভাবে সম্প্রসারণ
হাঁড়িভাঙ্গা আম এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন যে লোকটি, তিনি আবদুস সালাম সরকার। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘’আমি সমবায় অফিসার ছিলাম। চাকরির মেয়াদের ১০ বছর আগে স্বেচ্ছায় অবসর নিই। ১৯৯২ সালে একদিন বিকেলে আমার এক নাতি এসে বলে, “দাদু আমটা খেয়ে দেখো, অনেক সুস্বাদু।” আম খেয়ে অনুসন্ধান করি গাছের। পরে নওফেল উদ্দিন পাইকারের সেই গাছ থেকে অনেক কলম এনে আমার ১০ একর জমিতে রোপণ করি।’
তিনি বলেন, ‘এই আম সম্প্রসারণ করতে এমন কোনো কাজ নেই করিনি। গ্রামের মানুষের কাছে গেছি, ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গেছি। ঢাকায় দুটি বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মিডিয়াকে ডেকে ডেকে নিউজ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাকে ডেকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। সরকারের কৃষিমন্ত্রীকে এনে আমের মেলা করেছি। পোস্টার করে পুরো জেলায় ছাপিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন কোনো সেনানিবাস নেই যেখানে এই আমের চারা দেয়া হয়নি। সরকারের বড় কর্মকর্তাদের এই গাছের চারা উপহার দিয়েছি। এখন পুরো বাংলাদেশ, এমনকি বিশ্বের বহু দেশে যাচ্ছে এই আম।’
আব্দুস সালাম সরকার প্রায় ৩০ বছর ধরে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ করছেন। এখন রংপুরে কয়েক লাখ হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছ রোপণ করেছেন আমচাষিরা। আব্দুস সালামের নিজেরই ২৫টির বেশি বাগান রয়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হয় বলে লোকে এখন জেলার উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ী
একসময় রংপুর অঞ্চলের মানুষ ধানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রতি মৌসুমে পাঁচ-দশ বিঘা জমি চাষাবাদ করে কোনো রকমে চলত। এখন সেই জমিতে আম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন কৃষকরা। রংপুরের এই ‘আম অর্থনীতি’ মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে।
বলা হয়ে থাকে, বর্তমানে রংপুরের নতুন অর্থকরী ফসল ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম’। মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জের বিস্তৃত এলাকার হাজার হাজার কৃষক এই আম চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। কৃষক, দিনমজুর থেকে অনেকেই হয়েছেন আমচাষি। বছর বছর এটি চাষের পরিধি বাড়ছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর সদরের গোলাম মোস্তফা জানান, ‘খোড়াগাছ এলাকায় মাত্র ৬০ হাজার টাকায় আমি একটি বাগান কিনি। এবার সেই বাগানের আম আমি ২ লাখ বিক্রি করেছি। আরও ১ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারব। যে খরচ হয়েছে, তাতে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগে একটু অভাব-অনটন ছিল। এখন ভালো আছি। সাত বছর থেকে আমি এই আমের ব্যবসা করতেছি।’
ছবিউল ইসলাম নামে এক আম বিক্রেতা বলেন, ‘আগে তো মানুষের বাড়িতে মজুর করছি, গাড়ি চালাইছি। এখন আমার দুইটা বাগান আছে। বছর চারেক থেকে আমের বাগান কিনে আম বিক্রি করি। সেজনে সেজনে (বছরে বছরে) যে টাকা লাভ হয়, তা দিয়ে পুরো বছর চলে সংসার চলে। ছৈলদের পড়ালেখা চলে। যে টাকা বাঁচে, সেটা দিয়ে পরের বছর বাগান কিনি।’
মতিয়ার রহমান নামে এক আম বিক্রেতা বলেন, ‘আমি বাগান কিনি না। বাজার থেকে আম কিনে ব্যবসা করি। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে বাড়ির আম প্রতিদিন দুই ভ্যান, তিন ভ্যান, চার ভ্যান, পাঁচ ভ্যান বিক্রি করি। আম বেচে জমিজমা টুকিটাকি করছি।’
আমের ঝুড়ি বা ক্রেট বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমি ঢাকায় চাকরি করতাম। এখন গ্রামে আসছি ব্যাবসা করার জন্যে। প্রতি সিজনের ক্রেট ব্যবসা করে ভালোই চলে। প্রতি ক্রেটে ১০-১৫ টাকা লাভ করি।’
হাঁড়িভাঙ্গা আম ঘিরে রংপুরসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মিঠাপুকুর উপজেলার লালপুর, পদাগঞ্জ, তেয়ানিসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন আম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
কয়েক বছর ধরে এ আমের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমন দামও পাচ্ছেন চাষিরা। শুরুতে বাগানে ১ হাজার ২০০ থেকে ১৬ হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি হলেও শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মণ।
সুমন মিয়া নামে এক শিক্ষাথী বলেন, ‘আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমার বাবা মারা গেছেন ১০ বছর আগে। চার বছর ধরে প্রতি সিজনে আমের কাজ করে সংসার চালাই। সঙ্গে লেখাপড়া করি। প্রতিদিনে কখনও ৫০০, এক হাজার, আবার কোনো কোনো দিন বারো শ’ টাকা ইনকাম হয়।’
আশাদুর জামান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি বাসায় থাকি, বাসায় থেকে পড়া লেখা করি। আমের সিজেন এলে আমের গোডাউনে কাজ করি। ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমের ব্যবসায়ীরা আসেন আম কিনতে। আমরা সেই আম প্যাকেট করে গাড়ি লোড দিয়ে দিই। এইখানে আমরা কাজ করলে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পাই।’
আজহারুল ইসলাম নামে এক আমচাষি কৃষি শ্রমিকের কাজ ছেড়ে এখন হাঁড়িভাঙ্গা আমের ব্যবসা করছেন। গত বছর পাঁচ একর জমির আম আগাম কিনে তা ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করেন তিনি। এবার ১০ একর জমির আম কেনা হয়েছে। এবারও ভালো লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
তৈরি হয়েছে তরুণ উদ্যোক্তা
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প সমিতির রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি মো. রাকিবুল হাসান রাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার জানাশোনার মধ্যে রংপুরের দুই শতাধিক তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা এই আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনলাইনে অফলাইনে বিক্রি বিক্রি করেন। এরা মৌসুমি ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে কেউ শিক্ষার্থী, কেউ অন্য ব্যবসা করেন। এ বছর আমরা কমপক্ষে ১০০ মণ আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাব।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর নতুন নতুন উদ্যাক্তা তৈরি হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর বা আশার দিক।’
রংপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গার কারণে যে উদ্যাক্তা তৈরি হচ্ছে, তা আশাব্যঞ্জক। আমি শুনতেছি অনেকে এই ব্যবসা করেন।’
বিশ্বদুয়ারে হাঁড়িভাঙ্গা
রংপুরের বিখ্যাত এই আম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৪ জুলাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য উপহার হিসেবে পাঠান।
এই আম খেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রশংসা করেছিলেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছিল।
এ ছাড়া প্রতি বছর মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় এই আম।
রপ্তানির টার্গেট
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে জানান, গত বছর ৫০০ টন হাঁড়িভাঙ্গা আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছর ৭০০ টন বা তার বেশি রপ্তানির টার্গেট আছে। ইতোমধ্যে গত ১৭ জুন ভারতে ২০ টন হাঁড়িভাঙ্গা আম রপ্তানি করা হয়েছে। ধীরে ধীরে তা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে বেসরকারিভাবে আম বিদেশে রপ্তানি করে থাকেন। তাদেরও সহযোগিতা করি আমরা। সরকারিভাবেও রপ্তানি করা হবে।’
অর্থনীতিতে অবদান
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম রংপুরের অর্থনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। অনেক বছর ধরে শত শত কোটি টাকার আম বিক্রি করছেন চাষিরা। এই টাকা রংপুরের অর্থনীতিতে প্রভাব রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সৈয়দপুর বিমানবন্দর রয়েছে, চিলমারী নৌবন্দর রয়েছে। আমরা যদি সেভেন সিস্টার বলে ভারতের যে রাজ্যগুলো আছে, সেগুলোতেও রপ্তানি করতে পারি, তাহলে অনেক আয় অর্জন সম্ভব। এই আম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে সচ্ছল বানিয়েছে। রংপুর অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নে এই আম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
সম্প্রসারণে কী করা উচিত
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই আম এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। স্বাদ, গুণাগুণ, মিষ্টতা সব মিলিয়ে এটি অনন্য। এই আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, আরও বৃহৎ আকারে পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে এই আম কীভাবে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা যায়, সে বিষয়ে গবেষণা করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এই আমকে ঘিরে ফুড প্রসেসিং জোন প্রতিষ্ঠা করা হলে আম দিয়ে যে বিভিন্ন প্রডাক্ট তৈরি হয়, সেটা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘শুধু রংপুর অঞ্চল নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে যদি এই আম সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে এটি হতে পারে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি উপায়।’
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হলেন ফারুক আহমেদ।
ট্রাস্টি বোর্ডের ৬৬তম সভায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফারুক আহমেদ ২৭ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ফারুক আহমেদের উন্নয়ন খাতে রয়েছে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা।
তিনি এক সময় ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন এবং ঢাকায় বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেনেভাভিত্তিক গ্যাভি, দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (এঅঠও)-এর বোর্ড সদস্য ছিলেন, এছাড়া তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ফারুক আহমেদ সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি) এন্টারপ্রাইজের পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ওয়ার্কিং গ্রুপেরও একজন সদস্য।
ফারুক আহমেদ ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে আরডিআরএস-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আরডিআরএস বিশ্বাস করে, ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে সংস্থাটি দেশজুড়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখতে এবং এ সম্পর্কিত কার্যক্রমকে বেগবান করতে সক্ষম হবে। প্রেস রিলিজ
উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে ১৩৭তম বন্দর দিবস।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দর ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
ওই সময় বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মোহাম্মদ মাহবুবুবর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সব জলযান ও জাহাজ থেকে একনাগাড়ে এক মিনিট হুইসেল বাজানো হয়। এরপর বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বন্দর দিবসের কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ, বন্দরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সালামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়।
১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং নির্মাণ হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধন হয়।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্বর্ণের দাম। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে ৬৩০ টাকা। সে হিসাবে স্বর্ণের ভরি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। আগের দিন বুধবার তা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট থেকে স্বর্ণের নতুন নির্ধারিত দাম কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগে চলতি এপ্রিল মাসের ৬, ৮ ও ১৮ তারিখ তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ভালো মানের স্বর্ণের ভরিতে ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা ও ১৮ এপ্রিল দুই হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়। মাঝে ২০ এপ্রিল ভরিতে ৮৪০ টাকা দাম কমানোর পরদিন ২১ এপ্রিল আবার ৬৩০ টাকা বাড়ায় বাজুস।
এবার শুরু হয় দাম কমানোর পালা। সবশেষ দাম বাড়ানোর দু’দিন পর ২৩ এপ্রিল ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে তিন হাজার ১৩৮ টাকা ও ২৪ এপ্রিল দু’হাজার ৯৯ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। আর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ টানা তিন দিনে স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে পাঁচ হাজার ৮৬৮ টাকা।
সোনার দামে এমন উত্থান-পতনের কারণ জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন নতুন পদ্ধতি বা পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। সেটি হচ্ছে বিশ্ব স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি।
‘এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত তখন বাড়াতাম।’
তিরি আরও বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় উঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করে থাকি। সেক্ষেত্রে দিনে দু’বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।’
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।
‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’
এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম একদিনের ব্যবধানে আরেক দফা কমেছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে দু’হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বলা হয়েছে,
স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগের দিন মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে ওই দিন থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দুদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ৫ হাজার ২৭৭ টাকা।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৯৫ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ভরি ১ হাজার ৭১৪ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা।
অবশ্য স্বর্ণালঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের এর চেয়ে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সে সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৮ টাকা।
স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার ভরি ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে গত বছর প্রথমবারের মতো ল্যাপটপ নিয়ে আসে ট্রেন্ডি প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স। ইনবুক ওয়াইটু প্লাস নামের ল্যাপটপটি দিচ্ছে চমৎকার ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও সাশ্রয়ী দামের প্রতিশ্রুতি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষার্থী ও এক্সিকিউটিভদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে এ ল্যাপটপ।
দেখে নেওয়া যাক কী আছে ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস ল্যাপটপটিতে। এর ফিচার, পারফরম্যান্স ও ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাই বা কেমন।
ডিজাইন ও গঠন
স্লিক ও হালকা ডিজাইনের ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস সহজেই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। শিক্ষার্থী ও ব্যস্ত এক্সিকিউটিভদের জন্য এ ল্যাপটপ যথার্থ। এর পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক মেটালিক ডিজাইন স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে দেয় প্রিমিয়াম অনুভূতি। স্লিক প্রোফাইল ও প্রাণবন্ত ডিসপ্লের সঙ্গে যুক্ত সরু বেজেল ল্যাপটপটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। ফলে বাজারের একই ধরনের দামি ল্যাপটপের সমকক্ষ হয়ে ওঠে ওয়াইটু প্লাস।
তা ছাড়া এর মসৃণ এজি গ্লাস টাচ প্যানেলের কারণে সিল্কি-স্মুথ ও স্থায়ী টাচের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। ১.৫ মিলিমিটার কি ট্র্যাভেল এবং ব্যাকলাইটিংযুক্ত রেসপনসিভ কি-বোর্ড টাইপিংকে করে তোলে সহজ ও আরামদায়ক। তাই কম আলোতেও টাইপ করতে কোনো সমস্যা হয় না।
পারফরম্যান্স ও প্রোডাক্টিভিটি
১১তম প্রজন্মের কোর আই৫ প্রসেসর ও ৮ জিবি র্যাম রয়েছে ইনফিনিক্স ওয়াইটু প্লাসে। স্টোরেজের প্রয়োজন মেটাতে এতে আছে ৫১২ জিবি এনভিএমই পিসিআইই এসএসডি। প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার, ওয়েব ব্রাউজ করা কিংবা কনটেন্ট স্ট্রিম করাসহ সব ধরনের উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালানো যায় খুব সহজেই। এর ইন্টিগ্রেটেড ইন্টেল ইউএইচডি গ্রাফিকস সাধারণ গেমিং ও মাল্টিমিডিয়া এডিটিংয়ের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় গ্রাফিকস পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। উইন্ডোজ ১১ পরিচালিত ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের অপারেটিং সিস্টেম সবার পরিচিত ও ব্যবহার করা সহজ।
ডিসপ্লে ও মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতা
উজ্জ্বল রং ও ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভিজ্যুয়াল দেয় ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস ডিসপ্লেযুক্ত ইনবুক ওয়াইটু প্লাস। ৮৫ শতাংশ স্ক্রিন-টু-বডি রেশিওর সঙ্গে চমৎকার মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতার জন্য ডিসপ্লেটি দারুণ। কাজেই আপনার প্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ দেখা কিংবা ফটো এডিট করা— সবই হবে স্বাচ্ছন্দ্যে।
ল্যাপটপটিতে আছে ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ ও এআই নয়েজ ক্যান্সেলেশন প্রযুক্তিযুক্ত ১ হাজার ৮০ পিক্সেলের ফুল এইচডি+ ক্যামেরা। এর ফলে ভিডিও কলের অভিজ্ঞতা হবে আরও উন্নত।
ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং
ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের ৫০ ওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কোনো চার্জ ছাড়াই প্রতিদিনের কাজে আট ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। পাশাপাশি এর ৪৫ ওয়াট টাইপ-সি পোর্টযুক্ত চার্জারে ডিভাইসটি দ্রুত ও সহজেই চার্জ করা যায়। ফলে ভারী চার্জার বহনের প্রয়োজন হয় না।
দাম
ল্যাপটপটির বর্তমান বাজারমূল্য ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকা। অনুমোদিত ইনফিনিক্স রিটেইলার থেকে ল্যাপটপটি কেনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য