দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দোতলা সেতু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পদ্মা সেতু। এত দিন ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে লম্বা দ্বিতল সেতুর তকমা ছিল আসামের বগিবিল সেতুর।
৪ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বগিবিল সেতুটিতে একসঙ্গে রেল ও গাড়ি চলাচল করে।
আসামের ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর তৈরি করা হয় সেতুটি। এটি ভারতের দীর্ঘতম দোতলা সেতু। ২০১৮ সালে সেতুটি উদ্বোধন করে কয়েক মিনিট সেখানে হেঁটে বেড়ান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অন্যদিকে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের ভায়াডাক্ট বা সংযোগ সেতু মিলিয়ে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।
শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুপুর ১২টার একটু আগে মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী গাড়িতে চড়ে যান সেতুর জাজিরা প্রান্তে। এই সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৩ হাজার ১৯৩ হাজার কোটি টাকা। উদ্বোধনের পরের দিন দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে চার লেনে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
আসামের ডিব্রুগড় থেকে অরুণাচলের ধেমরাজীকে সংযুক্তকারী এই সেতুটি তৈরি করতে খরচ হয় ৫ হাজার ৯০০ কোটি রুপি। ১২০ বছর মেয়াদি এই সেতুটির প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ৩ হাজার কোটি রুপি। পরে এর খরচ ৮৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের দীর্ঘতম সেতু মালির রিভার ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হওয়া এই সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১২ কোটি রুপি। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য কোনো রোড-কাম-রেল সড়ক নেই। শাহ ফয়সাল শহরের সঙ্গে করোঙ্গি, লানধিকে সংযুক্তকারী এই সেতুটি বর্তমান অবস্থা নাজুক। ২০১৬ সালে এই সেতুটি মেরামতের অংশ হিসেবে কয়েক সপ্তাহ বন্ধ থাকে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানে উল্লেখযোগ্য কোনো দোতলা সেতু নেই। এই দেশগুলোর সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতুর দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটারের নিচে।
১৯৯৮ সালে বগিবিল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ২০০২ সালে রেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। সেতুটি তৈরি করতে ২১ বছর সময় লাগে।
আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির মিশেলে ব্রহ্মপুত্রের ওপর তৈরি করা হয় বগিবিল সেতু। দোতলা এই সেতুর ওপরের তলা দিয়ে চলে বাস, লরি, ট্রাকসহ বিভিন্ন যান; আর নিচ দিয়ে চলাচল করে ট্রেন।
দোতলা পদ্মা সেতু ও বগিবিল সেতুর নকশায় কিছুটা মিল থাকলেও এদের নির্মাণ ব্যয় ও অর্থনৈতিক গুরুত্বে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রমাণ: ভারত
মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর সফল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সফলভাবে শেষ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারত সরকার ও জনগণের পক্ষে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছে ভারতের দূতাবাস।
অভিনন্দন বার্তায় পদ্মা সেতুকে যুগান্তকারী অবকাঠামো উল্লেখ করে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, বহুল প্রতীক্ষিত এই মেগা প্রকল্পের সফল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়।
‘এই সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তের প্রমাণ দেয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ যখন এই প্রকল্পটিকে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আমরা একে অবিচলভাবে সমর্থন জানিয়েছি,’ বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে।
বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু শুধু আন্ত বাংলাদেশ যোগাযোগকেই উন্নত করবে না, এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অভিন্ন অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করা ও বাণিজ্য বাড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা দেবে। সেতুটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে জোরালো ভূমিকা রাখবে।’
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অসাধারণ অনন্য এক স্থাপনা
পদ্মা সেতু শুধু একটি যোগাযোগের বড় মাধ্যম নয়, এটা এক আবেগ ও ভালোবাসারও নাম। এটা টেকনিক্যালই চ্যালেঞ্জিং ছিল বাংলাদেশের জন্য। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও বটে।
এ এলাকার ভৌগোলিক অবস্থাও একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশে রূপান্তরকামী একটা চেতনা। বলতে পারি, পদ্মা সেতু দেশ রূপান্তরকারী একটি প্রকল্প, এটা এখন সক্ষমতার প্রতীক, এমনটি বলেন বুয়েটের অধ্যাপক ও যোগযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. সামছুল হক।
তিনি বলেন আমাদের একটা প্রবণতা ছিল- কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দাতাদের দিকে তাকিয়ে থাকা। এ প্রকল্পে কিন্তু সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে মনে হয়। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা কতটা এগিয়েছি সেটার পরিচয়ও সেতুটি বহন করে।
অবকাঠামোগতভাবে এটা বাংলাদেশের জন্য এক অসাধারণ অনন্য স্থাপনা।
যেসব স্থাপনায় রড ব্যবহৃত হয় সেখানে পানি পেলে রড ফুলে যায় এবং ক্ষয় হতে থাকে, সঙ্গে থাকা অন্য উপাদানেরও ক্ষতি করে থাকে। সে জন্য সেগুলোর স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে মোটামুটি ১০০ বছর ধরা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে সেখান থেকে জানা জানা যায়, এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এ ব্রিজের মধ্যে যে উন্নত ইলোকট্রনিক প্রযুক্তির মনিটরিং সেল ও সেল্ফ সেন্সর রয়েছে সেটি জানান দেবে এ স্থাপনাটির স্বাস্থ্যগত কোনো পরিবর্তন ঘটছে কি না। কোন জায়গায় কতটুকু চাপে আছে? ভূমিকম্প বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে কি না তা জানান দেবে। সংগত কারণেই এটার নির্মাণকৌশল ও প্রযুক্তিগত কারণে একে টেকসই করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখেবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি এবং আমার বিশ্বাস, যে প্রযুক্তি ও কৌশল পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা হলো- তাতে এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি হবে।
আরও পড়ুন:
বিগত ৮০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল ও আশপাশের এলাকায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
বানের জলে ভেসে নিখোঁজ হয়েছে আটজন। বন্যার পানি ঢুকে গেছে বাড়িঘর, যানবাহন, ভবন ও পাতাল রেলপথে।
দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মঙ্গলবার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সিউলভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার রাতে সিউলের কিছু অংশ, পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দর নগরী ইনচিয়ন এবং সিউলঘেঁষা গিয়ঙ্গি প্রদেশে ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সিউলের দংজাক এলাকায় এক পর্যায়ে ঘণ্টায় ১৪১.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা ১৯৪২ সালের পর সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ কোরিয়ার আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজধানী শহরে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলীয় গিয়ঙ্গি প্রদেশে বৃষ্টিপাত ৩৫০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সরকারি ডেটা অনুযায়ী, সিউলে ভারি সৃষ্টির পর বন্যায় পাঁচজনের মৃত্যু ও চারজন নিখোঁজ হয়েছে। গিয়ঙ্গি প্রদেশে মৃত্যু হয় তিনজনের। সেখানে নিখোঁজ রয়েছে দুজন।
গিয়ঙ্গি প্রদেশে ৯ জন আহত হয়। সেখানে ২৩০টি পরিবারের ৩৯১ জন মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। তারা আশ্রয় নিয়েছে স্কুলসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়।
সিউলের গোয়ানক এলাকায় একটি পরিবারের তিন সদস্য (চল্লিশোর্ধ্ব এক নারী, তার বোন এবং কিশোরী ভাগ্নি) স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৯টা ৭ মিনিটে তলিয়ে যাওয়া একটি বাড়িতে ছিলেন বলে খবর পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
দংজাক এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড কার্যালয়ের ষাটোর্ধ্ব এক কর্মীর মৃত্যু হয় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে। সড়কের পাশে পড়ে যাওয়া গাছ পরিষ্কারের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই এলাকায় বিকেল তলিয়ে যাওয়া একটি বাড়িতে ৫টা ৪০ মিনিটে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:আকাশ ও জলপথে সামরিক মহড়ার মধ্য দিয়ে চীন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বেইজিং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করতে চাইছে বলে মনে করছে তাইপে।
‘তাইওয়ানে হামলার জন্য মহড়া ও সামরিক কৌশল সাজিয়েছে চীন। চীনের আসল উদ্দেশ্য তাইওয়ান প্রণালি এবং পুরো অঞ্চলের স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করা’, বলেন তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর গত বৃহস্পতিবার থেকে সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। সে মহড়া রোববার শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে সোমবারও তা অব্যাহত রাখে বেইজিং।
চীনের এ মহড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে তাইওয়ানের কর্মকর্তাদের মধ্যে। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তারই প্রতিফলন দেখা গেল।
জোসেফ উ বলেন, তাইওয়ানের জনগণের মনোবল ভেঙে দিতে বড় পরিসরে সামরিক মহড়া ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পাশাপাশি সাইবার হামলা, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার ও অর্থনৈতিক নিগ্রহ চালাচ্ছে চীন।
এদিকে টানা পাঁচ দিন চীনের সামরিক মহড়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা মহড়া চালিয়েছে তাইওয়ানও।
আরও পড়ুন:জলবায়ু পরিবর্তনে পুড়ছে বিশ্ব। মানুষ, পশু-পাখি, গাছপালা কিছুই রেহাই পাচ্ছে তীব্র গরম থেকে। কদিন আগেই, ব্রিটেনের একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শূকরদের গরম থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন মাখিয়েছিল খামারিরা।
ইউরোপের হাওয়া লেগেছে পূর্ব এশিয়াতেও। গ্রীষ্মের অসহ্য গরমে শীতল থাকার জন্য কুকুরের গায়ে আটকানো যায় এমন ফ্যান (ওয়ারেবল ফ্যান) কেনায় মেতে উঠেছেন জাপানের কুকুর মালিকরা।
ওয়ানসি নামের ফ্যানটি একটি জালের সাথে সংযুক্ত। এটি পোষা প্রাণীর পশমের নিচের স্তরও ঠান্ডা রাখে।
হিকারু উজাওয়া সুইট মাম্মি নামে একটি মাতৃকালীন পোশাকের দোকানমালিক। তিনি বলেন, ‘আমার কুকুর বাইরে হেঁটে আসার পর হাঁপাত। অসহ্য গরমে সে দুর্বল হয়ে যেত। এ ফ্যান ব্যবহারের পর সে হাঁপানো বন্ধ করে দিয়েছে।’
ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে হিকারু উজাওয়ার এই বিশেষ ফ্যান। ১ জুলাই দোকানটি উদ্বোধনের পর অন্তত ১০০টি অর্ডার পেয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া এবং ইতালি থেকেও আসছে চাহিদা।
কেবল কুকুরের শরীর ঠান্ড রাখে, তা কিন্তু নয়। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাও ঠিকঠাক আপনাকে জানিয়ে দেবে হিকারুর এই বিশেষ ফ্যান।
জুলাইয়ের শুরুতে রাজধানী টোকিওর বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হয়। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। অবস্থা বেগতিক দেখে দিনের বেলা বাইরে যাওয়া এবং ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকার জন্য জনগণকে অনুরোধ জানায় কর্তৃপক্ষ।
সারা বিশ্বেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ইংল্যান্ডে ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়; যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জারি হয় ‘চরম তাপ সতর্কতা’। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এই গ্রীষ্ম মৌসুমে তাপজনিত মৃত্যুর কারণে শত শত মানুষ মারা যেতে পারে।
হিকারু বলেন, ‘গরম থেকে বাঁচাতে আমার চিহুয়াহুয়া ও সোয়ানের (কুকুর) জন্য বহনযোগ্য পাখা তৈরি করেছি।’
হিকারুর এ ধরনের ফ্যানের ধারণা আসে তিন বছর আগে, ২০১৯ সালে। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন গ্রীষ্মে হাঁটার পর সোয়ান অনেক ক্লান্ত হয়ে যায়।
হিকারু বলেন, ‘কাজের সময়সূচির কারণে আমার জন্য তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা কঠিন ছিল। তাই মধ্যাহ্নের গরমেই ওদের হাঁটাতে নিয়ে যেতাম।
পশু চিকিৎসকদের সাহায্যে এই ফ্যান তৈরি করেন হিকারু। এখন পাঁচটি ভিন্ন আকারের ফ্যান বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিটির দাম নিচ্ছেন ৯ হাজার ৯০০ ইয়েন; অর্থাৎ ৭৪ ডলারের কাছাকাছি।
হিরোকো মুরায়ামা তার দুটি ইয়র্কশায়ার টেরিয়ার অ্যান এবং ননের জন্য ওয়ানসি কিনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম যে ফ্যানের ঘূর্ণায়মান শব্দ তারা অপছন্দ করতে পারে। তবে এমনটা হয়নি। প্রতিদিন সকালে হাঁটার সময় তারা এগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকে।’
হিকারু বলেন, ‘চাহিদা থাকায় আরও দুটি পরিধানযোগ্য ফ্যানের মডেল তৈরি হচ্ছে। একটি শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত, অন্যটি পরিধানযোগ্য। এখন কুকুররা উত্সবে গেলেও শান্ত থাকবে।’
আরও পড়ুন:বন্ধুত্ব মানুষের জীবনের অন্যতম পবিত্র একটি বন্ধন। প্রকৃত বন্ধু এমন একজন যিনি সমর্থন ও উৎসাহ দেন এবং প্রতিটি যাত্রা ও ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করে তোলেন।
এই বন্ধনকে সম্মান জানাতে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতি বছর আগস্টের প্রথম রোববারকে বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে উদযাপন করে থাকে। এই বছর এটি ৭ আগস্ট পড়েছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস উদযাপন করা হয় ৩০ জুলাই।
কোনো একটি কাজ একা যতই চ্যালেঞ্জিং মনে হোক না কেন, সময়মতো পাশে একজন বন্ধু থাকলে তিনি এটিকে সহজ করে তুলতে পারেন।
এমন বন্ধুত্ব সব সীমাবদ্ধতা ও শ্রেণিবৈষ্যমের ঊর্ধ্বে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যে কেউ এই সম্পর্ককে লালন ও ধারণ করার পাশাপাশি যত্ন নিলে এটি তাকে শৈল্পিক ভালোবাসারও শিক্ষা দেবে।
জাতিসংঘ গুরুত্ব দিয়ে জানায়, সহিংসতা, দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো সমস্যায় জর্জরিত গোটা বিশ্ববাসী এসব বাধা উতরে যেতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো মানুষের নিরাপত্তা, উন্নয়ন, শান্তি এবং সামাজিক সম্প্রীতিকে নষ্ট করে।
এসব বাধাবিপত্তি অতিক্রম ও মানবজাতির মধ্যকার সংহতি বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হিসেবে কাজ করে বন্ধুত্ব। এটি দ্বিধাবিভক্ত চেতনাকে সারিয়ে তুলতে সবচেয়ে সহজ কিন্তু কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে।
মানবজাতি এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাসের দৃঢ় বন্ধন তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে এমন বন্ধুত্ব।
যাতে আমরা একযোগে একটি শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অবদান রাখতে পারি। এটি একটি উন্নত ও মানবিক বিশ্বের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ আবেগ তৈরি করে, যেখানে একটি মহান উদ্দেশের জন্য সবাই একত্রিত হয়।
ইতিহাস
বন্ধুত্বের ধরন যেমনই হোক না কেন, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালন হয় বন্ধু দিবস।
২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস (ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে) হিসেবে ৩০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়।
তবে ভারত, বাংলাদেশসহ কিছু দেশ আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধুত্ব দিবস উদযাপন করে।
ফ্রেন্ডশিপ ডে ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ‘জয়েস হল’ ১৯১৯ সালে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে সবাইকে কার্ড পাঠাতেন।
১৯৩৫ সালে আমেরিকার সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম শনিবার। তার প্রতিবাদে পরদিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকক্ষ কংগ্রেসে ১৯৩৫ সালে আগস্টের প্রথম রোববারকে বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
করোনা মহামারিতে কয়েক বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে বন্ধু তৈরিতে পড়ে যায় বাধা। সেই বাধা ফের উতরে নতুন যাত্রার পথ চলল মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা।
আরও পড়ুন:শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) বৈঠকে অংশ নিতে পারছেন না মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
আসিয়ানের সিরিজ আঞ্চলিক বৈঠক শেষে স্থানীয় সময় শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক সখন।
আসিয়ানের এবারের আঞ্চলিক বৈঠকগুলো হয়েছে কম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেনে। সেসব বৈঠকে ১০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় একমত হন।
সংবাদ সম্মেলনে কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জেনারেলদের এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে বোঝা যায় শান্তি পরিকল্পনায় অগ্রগতি হয়েছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে তথাকথিত পাঁচ দফা ঐকমত্যে পৌঁছেছিল আসিয়ান। ১৫ মাসেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
আসিয়ানের বৈঠক চলাকালে শুক্রবার ১০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছরের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন না হওয়ার নিন্দা জানান। চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় আসিয়ানের আঞ্চলিক সম্মেলনের আগে মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বাধীন স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলকে (এসএসি) ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন তারা।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত নেতা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চিকে আটক করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে অস্থিরতা চলছে মিয়ানমারে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে অসহযোগ আন্দোলন, দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও অভ্যুত্থানবিরোধী সশস্ত্র সংগঠনগুলোর প্রতিরোধ দেখে মিয়ানমার।
নৃশংস কায়দায় বিরোধীদের সে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ দমন করে সামরিক জান্তা। অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাদের হাতে প্রাণ হারান ২ হাজার ১৫৮ জনের মতো মানুষ।
আরও পড়ুন:কয়েকটি সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের প্রতিক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নিল বেইজিং।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেয়।
মন্ত্রণালয় এমন কিছু ক্ষেত্রের তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে চীনা ও আমেরিকান কর্মকর্তাদের মধ্যে আর যোগাযোগ থাকবে না। এর মধ্যে রয়েছে থিয়েটার কমান্ডার স্তরে সামরিক যোগাযোগ এবং বৃহত্তর প্রতিরক্ষা নীতি সমন্বয় আলোচনা।
চীনের বিবৃতিতে বলা হয়, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা, ফৌজদারি বিষয়ে আইনি সহায়তা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করা হবে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান রাজনীতিক পেলোসি এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা দেয় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বেইজিংয়ের আপত্তি সত্ত্বেও পেলোসি গত মঙ্গলবার তাইওয়ান সফর করেন। স্বশাসিত দ্বীপটিকে নিজেদের অংশ দাবি করে চীন। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০-এর দশক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এক চীন’ নীতি স্বীকার করে আসছে।
বেইজিংয়ের কূটনৈতিক স্বীকৃতি পরিবর্তন করার পরও ওয়াশিংটন তাইপের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কয়েক বছর ধরে আমেরিকান প্রশাসন তাইওয়ানের সরকারকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে দেখে আসছে।
বেইজিং বলছে, ওয়াশিংটন ইচ্ছাকৃতভাবে স্থিতাবস্থা নষ্ট করছে এবং তাইওয়ানে বিচ্ছিন্নতাবাদকে উৎসাহ দিচ্ছে।
যদিও হোয়াইট হাউস পেলোসির অবস্থান থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর বলেছিল, তাইওয়ান যাওয়ার সিদ্ধান্ত পেলোসির ব্যক্তিগত।
চীনের কর্মকর্তারা এ দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা পরিণতির হুমকিও দিয়েছিলেন। শেষমেশ সব জল্পনা উড়িয়ে তাইওয়ান সফর করেন পেলোসি।
জবাবে চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তাইওয়ানের চারপাশে বৃহস্পতিবার থেকে বড় মহড়া শুরু করে, যা শেষ হচ্ছে রোববার। একে চীনা মিডিয়া পূর্ণ অবরোধের মহড়া হিসেবে বর্ণনা করেছে। তাইওয়ানের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাও দেয় চীন।
আরও পড়ুন:তাইওয়ানের চারদিক ঘিরে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো তাইওয়ানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীন। স্বশাসিত দ্বীপটির উপকূলেও এসে পড়ছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।
আগেই ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কিত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালু করার বিষয়টি জানিয়েছিল তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার চীনকে মোকাবিলায় ভূমিকেন্দ্রিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে তাইওয়ান।
চলমান মহড়ায় বারবার চীনের যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ মেডিয়ান লাইন অতিক্রম করার কারণে তাইওয়ানের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ নেয়া হলো।
তবে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তাইপে কোনো যুদ্ধ চায় না, তবে চলমান উত্তেজনায় লড়াইয়ের প্রস্তুতি বাড়াবে।
মেডিয়ান লাইন হলো চীনের মূল ভূখণ্ড ও স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানকে পৃথককারী সীমানা। সাধারণত চীন ও তাইওয়ান কেউই এই সীমানা অতিক্রম করে না। তবে চীনের চলমান সামরিক মহড়ায় এই সীমান্ত মানছে না বেইজিং।
চীন তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। এরই মধ্যে তাইওয়ানের অনেক বাণিজ্যিক বিমানের ফ্লাইট স্থগিত হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে বিমানবাহী রণতরি পাঠিয়েছে।
এদিকে জাপান বলছে, মহড়ায় ছোড়া চীনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তাদের জলসীমায় এসেও পড়ছে। চীনের প্রতি অবিলম্বে এই মহড়া থামানোর আহ্বান জানিয়েছে টোকিও।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য