সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও জনগণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে খুলনায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপন হয়েছে।
এ উপলক্ষে শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় সরাসরি দেখানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে খুলনায় নানা রঙের বেলুন উড়িয়ে মুহূর্তটি উদযাপন করা হয়।
খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, মহানগর পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা, রেঞ্জ ডিআইজি ড. মহিদ উদ্দিন, কেডিএর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মিরাজুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে খুলনা শহর ও স্টেডিয়ামসংলগ্ন এলাকা রঙিন পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন দ্বারা সুসজ্জিত করা হয়। সরকারি-বেসরকারি ভবনে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়।
বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে ও স্থানীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন এবং ডাক অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে এলইডি স্ক্রিনে পদ্মা সেতুকে উপজীব্য করে নির্মিত বিশেষ ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে সকাল ৯টায় খুলনা মহানগর পুলিশের উদ্যোগে নগরীর শিববাড়ী মোড় থেকে হাদিস পার্ক পর্যন্ত র্যালি হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
মেয়র বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন। তার সততা, দক্ষতা ও দৃঢ়তার কারণে আজকে এই পদ্মা সেতু আমরা পেয়েছি।
‘আমি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই। কারণ তারই একক প্রচেষ্টায় এই সেতু নির্মাণ হয়েছে।’
মেয়র বলেন, ‘যখন বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে দুর্নীতির অভিযোগ ছুড়ে দিল। তার ১০ দিন পর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন এই পদ্মা সেতু আমাদের নিজস্ব টাকায় নির্মাণ করা হবে। তখন আমাদের দেশের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞসহ অনেকে জল্পনা-কল্পনা করেছিলেন এটা কী করে সম্ভব। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা কারও কাছ থেকে টাকা নেব না। নিজস্ব টাকায় এই পদ্মা সেতু করব।
‘এখন রাজধানীর সঙ্গে আমরা যুক্ত হব। যে দিনের জন্য আমরা এতদিন অপেক্ষা করছিলাম। সেই দিন এখন প্রধানমন্ত্রীর জন্য সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, তারই কন্যা স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আরেকটা ঐতিহাসিক উপহার দিলেন।’
খুলনার জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের বিজয়ের প্রতীক। উন্নয়ন, ঘুরে দাঁড়ানো ও হার না মানার প্রতীক। পদ্মা সেতু নির্মাণের অনন্য ইতিহাস ও উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাহেন্দ্রক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সেতু চালু হওয়া দক্ষিণাঞ্চলে নতুন সম্ভাবনা শুরু হলো।’
খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে আওয়ামী লীগ সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সব বাধা অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সেই পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিষ্টিমুখ
পদ্মা সেতুর ঐতিহাসিক উদ্বোধন অনুষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরই উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।
এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদ্মা সেতু নির্মাণে তার দৃঢ় ও দূরদর্শী ভূমিকার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘পদ্মা সেতু সব ক্ষেত্রে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। যেকোনো কাজে চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সে উদাহরণ পদ্মা সেতু থেকে নেয়া যায়। পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক, মনোবলের প্রতীক। এই সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটাবে।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন হলো। পদ্মা সেতু বিনিয়োগ বাড়াবে, শিল্পায়ন বাড়াবে, অর্থনীতিকে গতিশীল করবে। ফলে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে।
‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা। আমরা সবাই যদি এক হয়ে কাজ করি, তাহলে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা বলেন, ‘আমাদের স্বপ্নের বাস্তব রূপ এখন পদ্মা সেতু। সারা বিশ্ব এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে যাওয়া মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১৩ জন নিহতের ঘটনায় গেটম্যান ও নিহত মাইক্রোচালকের দায় খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে লেভেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন ও নিহত মাইক্রোচালক গোলাম মোস্তফা নিরুকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবুল কালামের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
বুধবার আবুল কালাম নিজেই নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। গেটম্যান সাদ্দামের ঘটনাস্থলে অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে মামলায় সে আসামি হয়ে কারাগারে আছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হবে। আর মাইক্রোবাসচালক তো মারাই গেছে।’
২৯ জুলাই আরঅ্যান্ডজে কোচিং সেন্টার থেকে খইয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে যান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফেরার পথে মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় অরক্ষিত একটি লেভেল ক্রসিংয়ে পর্যটকবাহী মাইক্রোটিকে ধাক্কা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ১১ জন। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান দুজন। এ ঘটনায় আহত তিনজন এখনও চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় মামলা করেন সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার সময় সাদ্দাম হোসেন লেভলে ক্রসিংয়ে ছিলেন কি না এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দুর্ঘটনার পর প্রাণহানির পুরো দায় মাইক্রোচালকের বলে দাবি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
তখন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেখানে রাস্তায় ক্রসিংয়ে সাদ্দাম নামে একজন গেটকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি দাবি করেছেন যে সময়মতোই ক্রসিংবার ফেলেছিলেন। তার কথা অমান্য করে মাইক্রোবাসের চালক বারটি তুলে রেললাইনে গাড়ি তুলে দেয়। এতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
পরে রেলওয়ে কর্মকর্তার এ দাবি সত্য নয় দাবি করেন বেঁচে ফেরা দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোর যাত্রী জুনায়েদ কায়সার ইমন।
ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোর পেছনের সারিতে ছিলেন হাটহাজারীর কলেজছাত্র জুনায়েদ। তিনি জানান, ক্রসিংয়ে কোনো বার ছিল না। এ কারণে চালক গাড়ি টেনে নেন রেললাইনে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেছিলেন, ‘ট্রেনের কোনো ব্যারিকেড ছিল না। ট্রেন যখন আসছিল তখন বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে ট্রেন আসছে। ড্রাইভার গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন এসে মেরে দিয়েছে। খেয়ালও করিনি। নিমিষেই ট্রেন চলে আসছে। আমি পড়ে গেছি পেছনে। কীভাবে পড়লাম, কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।’
এ ঘটনা তদন্তে পরে দুটি কমিটি গঠন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি কমিটি গেটম্যান ও মাইক্রোবাসের চালককে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছে।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় একটি রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার ওয়াবদা এলাকায় সিস্টার কিচেন নামক রেস্তোরাঁয় বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ২০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নেভান ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটের কর্মীরা।
আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন লিডার মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানান।
রেস্তোরাঁর পরিচালক দিলরুবা খাতুন বলেন, ‘দুপুরে আমার স্বামী তানছেন জামান গ্যাসের চুলায় রান্নার কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ চুলায় আগুন ধরে গেলে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ঘরের চালে ও দোকান ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দোকান ঘরে থাকা এসি, ফ্রিজসহ নানা জিনিস পুড়ে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।’
তানছেন জামান বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে চুলায় তেল গরম করতে দেয়া হয়। অসাবধানতায় আগুন লেগে যায়। নেভানোর চেষ্টা করা হলেও তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরে খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসে।’
স্টেশন লিডার মিজানুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পানি বহনকারী গাড়ি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় একটি ইউনিট। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় তারা। এর কিছুক্ষণ পরই আগুন পুরোপুরি নিভে যায়।
তিনি আরো জানান, গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। দোকানে থাকা সব মালামাল পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। আনুমানিক ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। আকস্মিক এ ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন এখানকার পর্যটকরা।
খাবারের নিম্ন মান এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভিযোগে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে এ ঘোষণা দেয় খাবার হোটেল মালিক সমিতি। বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।
সংগঠনের সভাপতি মো. সেলিম মুন্সি নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ম্যাজিস্ট্রেট খাবার হেটেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন; আবার একই হোটেলে একাধিকবার জরিমানা করা হয়। মোবাইল কোর্টের নামে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাই সব হোটেল মালিক এক হয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সংগঠনের এই নেতা আরও বলেন, ‘গত ১১ আগস্ট আল-মদিনা নামের একটি হোটেলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তখন ওই হোটেল মালিক তার সমস্যা সমাধানে ১৫ দিন সময় চেয়ে নেন; কিন্তু গতকাল (মঙ্গলবার) আবার ওই হোটেলেই ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
‘মালিক জরিমানা না দিতে পারায় তাকে বেশ কিছুক্ষণ আটকে রাখা হয়। পরে তার পরিবারের সদস্যরা ধার করে টাকা এনে তাকে ছাড়িয়ে নেয়।’
বিষয়টি সমাধানে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘খাবার হোটেল বন্ধ থাকলে পর্যটকরা বড় সমস্যায় পড়বেন। তাই আশা করব, প্রশাসন আমাদের বিষয়টি সহজ করে দেখবে। তাহলে আমরা হোটেল খুলে দিব।’
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচা-বাসি ও ভেজাল খাবার পরিবেশন এবং অধিকমূল্য আদায় নিয়ে পর্যটকদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে- এ বিষয়ে মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট অবশ্যই হবে, কিন্তু যার যার সাধ্য মোতাবেক জরিমানা করা উচিত। আর পর্যটকদের যাতে খাবার, পরিবেশের কোনো অভিযোগ না থাকে, সেদিকে আমি আমার সংগঠনের সবাইকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছি।’
জরিমানার নামে হয়রানির অভিযোগ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. কলিম মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ তুলে জরিমানাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। ছোট ছোট হোটেল মালিককেও ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি একেক জনকে মাসের মধ্যে তিন-চারবার জরিমানা করা হয়েছে।
‘এতে ব্যবসায়ীদের এখন পথে বসার উপক্রম। তাই হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে মঙ্গলবার রাতে জরুরি সভা করা হয়েছে। এতে সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এর প্রতিকারে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত সব হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে হঠাৎ ধর্মঘট ডাকায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা।
খুলনা থেকে আসা পর্যটক হান্নান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার পরিবার নিয়ে আসছি বেড়াতে। রাতে হোটেলেই খেয়েছি। সকালে দেখি সব বন্ধ। যেখানে উঠেছি, সেখানকার বয়কে বলেছি দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে।’
সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন কলেজ শিক্ষার্থী আবু রায়হান। তিনি বলেন, ‘খাবার হোটেল সব বন্ধ, তাই কলাপাড়ার এক পরিচিত জনকে ফোন দিছি। দুপুরে তাদের ওখানে খেয়ে বিকেলেই চলে যাব।’
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি সকালেই আমি জেনেছি। জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছি। আমি হোটেল মালিক কর্তৃপক্ষকে বলেছি যে, খাবারের মানও ঠিক রাখতে হবে, আবার মোবাইল কোর্টও চালাতে হবে। দুটি বিষয়ই একে অপরের সঙ্গে জড়িত।
‘আগে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তারপর আন্দোলন সংগ্রাম। ভালো মানের খাবার পরিবেশন না করতে পারলে কুয়াকাটার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। কুয়াকাটার বদনাম হয় এমন কোনো কাজ এখানকার কারও করা উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি এর একটি সমাধান হয়ে যাবে। কারণ এখানে এখনও বেশ কিছু পর্যটক আছেন। তাদের যেন খাবারে কোনো রকমের সমস্যা না হয়, সে বিষয়টিও দেখভাল করতে হবে।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত শহীদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটায় পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ছে। এখানকার হোটেলগুলোর খাবারের মান নিয়ে পর্যটকরা প্রশ্ন তুলেছেন। পচা-বাসি খাবার দেয়া, অতিরিক্ত দাম রাখার অভিযোগ তুলেছেন।’
তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যটকদের সেবার মান অক্ষুণ্ন রাখতে, খাবার হোটেলগুলোতে মানসম্মত খাবার পরিবেশন, তাদের সঙ্গে পর্যটকবান্ধব আচরণ করতে হবে। মূলত আমরা এসব নিয়েই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।
কিছু কাজ সম্পন্ন করতে ওনারা (হোটেল মালিক) কিছুদিন সময় নিয়েছেন। এ ছাড়া আজ হোটেল বন্ধ রাখার বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন।’
আরও পড়ুন:নাটোরের বড়াইগ্রামে পৃথক অভিযানে পর্ন ভিডিও সংরক্ষণ ও বিক্রির অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় জব্দ করা হয় ৪টি কম্পিউটার ও ১০টি হার্ডডিস্ক।
উপজেলার বাগডোব এবং জোনাইল বাজারে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, একই উপজেলার পাড় বাগডোব গ্রামের সিডি ব্যবসায়ী আজাদ হোসেন ও বাগডোব গ্রামের আল আমিন ও শামছুল হক এবং চাঁদপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন।
নাটোর র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বুধবার সকাল ৯টার দিকে এসব জানান।
তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পর্নো ভিডিও সংরক্ষণ ও বিক্রির অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়। এরপর রাতেই বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জব্দকৃত আলামত পর্নোগ্রাফি সংরক্ষণ এবং টাকার বিনিময়ে এলাকার যুবক ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে অনেকদিন ধরে হস্তান্তর করে আসছে তারা।
তারা মূলত কম্পিউটারের দোকানে গান, সফটওয়ার লোড,মোবাইল মেকানিক্সের ব্যবসার আড়ালে পর্নোগ্রাফী সংরক্ষণ ও বিক্রি করত।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ তে বলা হয়েছে, পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, ভাড়া, বিতরণ, সরবরাহ, প্রকাশ্যে প্রদর্শন বা যেকোনো প্রকারে প্রচার করিলে অথবা উক্ত সকল বা যেকোনো উদ্দেশ্যে প্রস্তত, উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণ করিলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদন্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন।
আরও পড়ুন:যশোরে ১৬টি সোনার বারসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শার্শার গোগা সীমান্ত থেকে বুধবার সকাল ৯টার দিকে তাকে আটক করা হয়।
৪০ বছর বয়সী জনি বেনাপোল পোর্ট থানার ছোট আঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা।
খুলনা বিজিবি-২১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর রহমান (পিএসসি) নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শার্শার গোগা সীমান্ত দিয়ে বৃহৎ একটি স্বর্ণের চালান পাচার হবে- এমন খবর পেয়ে গোগা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ওই এলাকার ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করেন। পরে তার শরীরে লুকিয়ে রাখা ১৬টি সোনার বার জব্দ করা হয়।
‘এ বারগুলোর ওজন এক কেজি ৮৪৬ গ্রাম। আটক সোনার বারের আনুমানিক মূল্য প্রায় এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা।’
সোনার বারসহ আটক আসামি জনিকে শার্শা থানায় দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ৫ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
জেলার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল হালিম বুধবার সকালে এ রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনোরঞ্জন দাশ নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডিতরা হলেন নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন, বলকিপার আবদুল মান্নান, তার ভাই আবদুল গাফফার, বলকিপার রমজান আলী এবং বাবুল রহমান ওরফে রনি।
পিপি জানান, ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটি এলাকায় অবস্থিত দুটি মসজিদে জুমার নামাজের পর বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল কমান্ডার এম আবু সাঈদ নগরীর ইপিজেড থানায় মামলা করেন।
সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে করা এই মামলায় আসামি করা হয় ৪ জনকে। পরে পুলিশের তদন্তে আসামি আবদুল মান্নানের বড় ভাই জেএমবি সদস্য আবদুল গাফফারের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
মনোরঞ্জন বলেন, ‘মামলার এক বছর পর ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় তদন্ত কর্মকর্তা। বিচার শুরুর পর চলতি বছরের ২৩ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বুধবার রায় ঘোষণা করেন আদালত।’
আসামিদের মধ্যে এম সাখাওয়াত হোসেন পলাতক। বাকিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান পিপি।
আরও পড়ুন:নিরাপদ হলের দাবিতে অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে অধ্যক্ষের কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তিনটি করে আলাদা ছয়টি হল রয়েছে; যার প্রতিটি হলের অবস্থাই জরাজীর্ণ। প্রায় প্রতিনিয়তই হলগুলোর ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। এতে অনেক সময় অনেক শিক্ষার্থী আহত হচ্ছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, শিগগির তারা সংস্কারকাজ শুরু করবে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী লিসা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রী হলের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের। এখন নিরাপদ হল আমাদের দাবি।’
শিক্ষার্থী এহসান উল্লাহ বলেন, ‘ছেলেদের তিনটি ছাত্রাবাসের মধ্যে হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসের অবস্থা খুবই খারাপ। গত রাতেও আমাদের এক সহপাঠীর রুমের পলেস্তারা খসে পড়ে, অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় সে। আমাদের একটাই দাবি, আমরা নিরাপদ হল চাই।’
তাহসিন আহম্মেদ বলেন, ‘হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। দ্রুত এই ছাত্রদের পুনঃ আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আবাসনসংকট নিরসনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু হল নির্মাণ করা হয়নি। আবাসনসংকট নিরসনে নতুন হল নির্মাণে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
হুঁশিয়ারি দিয়ে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাগর হোসেন বলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে হল নির্মাণের দৃশ্যমান কাজ দেখতে চাই। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ হলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ স্থানে রাখার দাবি জানাই। তা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সচিব মহোদয় কিছুক্ষণ আগে ফোন করে হোস্টেল সংস্কারের কথা বলেছেন। আমরা অতি দ্রুত কাজ শুরু করব। এ ছাড়া কলেজে দুটি হোস্টেল নির্মাণকাজ শিগগির শুরু হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য