‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/ অবাক তাকিয়ে রয়ঃ/ জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।’
গল্পটা মাথা তুলে দাঁড়াবার, গল্পটা বিশ্বকে বিস্মিত করে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেয়ার। গল্পটা পদ্মা সেতুর। এই গল্প বাংলাদেশের আকাশস্পর্শী অহংকারের।
আর তাই প্রমত্তা পদ্মার উপর দিয়ে নির্মিত সেতুটি খুলে দেয়ার আগেই বিশ্বব্যাপী এটি পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশের ‘মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক’ হিসেবে। স্বপ্নের সেই সেতুর বহুল প্রতীক্ষিত উদ্বোধন আজ।
দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সেতু নির্মাণ, শুরু হয় রাজনৈতিক বাদানুবাদ। উত্তাল-অস্থির সেই সময়ে অনমনীয় দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রায় এক দশক পর তার হাতেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের সেতুটি।
২৫ জুন শনিবার ঘড়ির কাঁটা সকাল ১০টা নির্দেশ করতেই উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তবে এর একদিন পর যান চলাচল শুরু হবে পদ্মা সেতুতে।
জমকালো আয়োজন চূড়ান্ত
সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে পদ্মার দুই পার এখন উচ্ছ্বাস মুখরিত। জমকালো আয়োজনে সেতু খুলে দেয়ার অপেক্ষায় সারা দেশ।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যোগ দেবেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সমাবেশে।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী করা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বাদ পড়েনি আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা থেকে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেতু নিয়ে নানা সমালোচনা করে আসা রাজনৈতিক দল বিএনপির সাত নেতাকেও।
বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার। বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মার সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ির ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের দিকে ছয়টি স্প্যান ও জাজিরা প্রান্তের দিকের ছয়টি স্প্যান সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে।
রোববার ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। ফুরাবে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা, বাঁচবে সময়। বদলে যাবে দৃশ্যপট, আরও সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।
স্বপ্নের শুরু
বিচ্ছিন্ন জনপদ হয়ে থাকা দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করতে পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে সেটি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান তৎপরতা শুরু হয় ২৫ বছর আগে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে জাপান সফরে যান তিনি। সে সময়ের ঘটনা স্মরণ করে বুধবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা নদী এবং রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। জাপান সরকার দুটি নদীর ওপরই সেতু নির্মাণে রাজি হয়। যেহেতু পদ্মা অনেক খরস্রোতা, বিশাল নদী, তাই পদ্মা নদীতে সমীক্ষা শুরু করে।’
সমীক্ষা শেষে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তকে পদ্মা সেতু নির্মাণের উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্বাচন করে জাপান। সেই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। এর ঠিক ১১ দিন পর, অর্থাৎ ওই বছরের ১৫ জুলাই শেষ হয় আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ। পরের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।
পদ্মা সেতুকে মাওয়া প্রান্ত থেকে সরিয়ে আরিচায় নেয়ার চেষ্টা করে বিএনপি-জামায়াত জোট। তবে শেষ পর্যন্ত হয়নি পদ্মা সেতু।
আবারও ঘুরে দাঁড়ানো
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আবারও শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণে তোড়জোর।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০১১ সালের মধ্যে শেষ করা হয় সেতুর মূল নকশা প্রণয়নের কাজ। ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিক এক বছর পর ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল সেতুতে রেলপথ যুক্ত করে প্রকল্প সংশোধন করা হয়।
তার ১৭ দিন পর অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল সেতু নির্মাণে অর্থায়নের বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে সই করে সরকার। ওই বছরের ২৪ মে সই হয় আইডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয় ৬ জুন।
চোখ রাঙানোর সাহস
২০১২ সালের জুনে এসে পাল্টে যায় সব হিসাব-নিকাশ। ওই বছরের ২৯ জুন দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে এগিয়ে আসা দাতা সংস্থাগুলো বাতিল করে ঋণচুক্তি।
অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ। ঠিক পাঁচ দিন পর ৪ জুলাই সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। শুরুতে সেই কথা অনেকে গ্রহণ করতে পারেননি। ৮ জুলাই আবারও সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
পরে অবশ্য বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ কানাডার আদালতে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিন নামে দেশটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই প্রতিষ্ঠানটিই পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাওয়ার কথা ছিল। তবে সেই মামলা টেকেনি, দেশটির একটি আদালতে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ বলে উড়িয়ে দেয়।
স্বপ্ন হলো সত্যি
২০১৪ সালের ৭ জুলাই শুরু হয় বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটির নির্মাণকাজ। দেশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় সেতুটি। তিন বছরের বেশি সময় পর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। পদ্মার দুটি তীরকে সংযুক্ত করতে প্রয়োজন হয় ৩ হাজার ২০০ টন ওজনের ৪১টি স্প্যান।
পদ্মা সেতুর পিলারে প্রতিটি স্প্যান বসানোর খবর জায়গা করে নেয় সংবাদপত্রের শিরোনামে। প্রমত্তা পদ্মায় সেতুটি যত দৃশ্যমান হয়েছে, বেড়েছে মানুষের আগ্রহ। সবশেষ ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৪১তম স্প্যানটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মার বুকে রচিত হয় বাংলাদেশের গৌরবগাথা।
প্রকৃতির বাধা
খরস্রোতা পদ্মা জয়ের কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। দুর্নীতিচেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানো, রাজনৈতিক বাদানুবাদ পেরিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতেই সামনে আসে প্রমত্তা পদ্মাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চ্যালেঞ্জ।
২০১৫ সালের শেষ দিকে সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। তিনটি করে ছয়টি পাইলের নিচের দিকে কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন প্রকৌশলীরা। এর প্রধান কারণ নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর।
তখন ওই দুটি পিলারের ছয়টি পাইলের ওপরের কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে আরও ২১টি পিলারের পাইলিংয়ের সময় তলদেশে কাদামাটি পাওয়া যায়। নদীর তলদেশে পাথর না থাকায় পাইলিংয়ের কাজ ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। ফলে নকশা বদলে পাইলিংয়ের উপরিভাগে করতে হয়েছে স্ক্রিন গ্রাউটিং। স্ক্রিন গ্রাউটিং বা অতিমিহি সিমেন্টের স্তরের মাধ্যমে পাইলের উপরিভাগে ওজন বহনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
পিলার নির্মাণ করতে গিয়ে ৯৮ থেকে ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত পাইলিং করতে হয়েছে। পৃথিবীতে আর কোনো সেতু নির্মাণে এতটা গভীর পাইলিং করতে হয়নি। ফলে এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড।
পদ্মা সেতুর পাইলগুলোও তিন মিটার ব্যাসার্ধের। অন্য কোনো সেতুর পাইলের ব্যাসার্ধও এত নয়। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইল ৫০ মিলিমিটার পুরু স্টিলের পাইপে মোড়া।
আর এ কাজটি করার জন্যই জার্মানি থেকে আনা হয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার। জার্মানির মিউনিখে তৈরি ৩৮০ টন ওজনের হ্যামারটি সর্বোচ্চ শক্তি তিন হাজার কিলোজুল। এর সাহায্যে পিটিয়ে পাইলের স্টিলের পাইপগুলো নদীতে পোঁতা হয়।
তিন হাজার ২০০ টন ওজনের স্প্যানকে পদ্মার বুকে নিয়ে পিলারে বসানোর কাজটিও সহজ ছিল না। এ জন্য চীন থেকে নিয়ে আসা হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শক্তির ভাসান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’-কে। পদ্মা সেতুর নির্মাণের প্রতি মুহূর্তকে তাই বলা হয় চ্যালেঞ্জিং।
জনসাহসে মাথা উঁচু
দীর্ঘ এক দশক পর যখন সেতুটির সফল বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে, তখন তার পুরো কৃতিত্বটা দেশের জনগণকেই দিলেন সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের সাহসের কারণেই পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বলে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। শুধু ধন্যবাদ নয়, আমি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। কারণ যেদিন আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করব, অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মানুষের শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি।
‘মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়া আমি পেয়েছিলাম, এটাই কিন্তু আমার সাহস এবং শক্তি। সেটুকু আপনাদের জানিয়ে রাখি। তাই দেশের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের সহযোগিতার, তাদের সাহসে, এই জনমানুষের সাহসে আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
পদ্মা সেতুর ব্যয়
২০১১ সালে সেতুর দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে সংশোধিত ডিপিপিতে পদ্মা সেতুর ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
প্রথম ডিপিপিতে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে তিনটির নিচ দিয়ে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা রেখে নকশা করা হয়। পদ্মার স্রোতের কথা ভেবে পরে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়েও নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। যুক্ত হয় রেল সংযোগ।
কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেতু নির্মাণে পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও বাড়তি গভীরতা ধরা হয়। বেড়ে যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয়ও।
২০১৬ সালে যখন ব্যয় বাড়ানো হয়, তখন মূল সেতু নির্মাণ, নদীশাসনসহ সব কাজের ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ৯ টাকা কমে যায়। ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ নতুন করে যুক্ত হয়। মূল সেতু, নদীশাসন ও সংযোগ সড়কে যে পরিমাণ অর্থে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছিল, তা থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয় জমি অধিগ্রহণের কারণে।
সবমিলিয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন, এর মধ্যে মূল সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে, ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এই টাকার মধ্যে আবার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাসলাইনের জন্য খরচ হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া নদী শাসনে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, অ্যাপ্রোচ সড়কে এক হাজার ৯০৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, পুনর্বাসনে এক হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, ভূমি অধিগ্রহণে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন ২১ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।
আরও পড়ুন:৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য