আলোয় উদ্ভাসিত রাতের পদ্মা সেতু। প্রতিবিম্ব পদ্মার বুকে তৈরি করেছে অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ। নিজ ঘর ছেড়ে মৃদু পায়ে নদীর তীরে এসে দাঁড়ান ৪২ বছর বয়সী বাবুল হাওলাদার। দুই চোখ বেয়ে নামছে অশ্রুধারা।
বাংলাদেশের অহংকার হয়ে প্রমত্তা পদ্মাকে পরাস্ত করে দুই প্রান্তের সংযোগ ঘটিয়েছে যে সেতু, তার নাড়ির টান বাবুল হাওলাদারের। আরও অনেকের মতো তার পৈত্রিক জমি এই সেতুর জন্য করা হয়েছে অধিগ্রহণ। ফলে পদ্মা সেতু কেবল একটি স্টিল-কংক্রিটের কাঠামো নয়, বাবুলের কাছে এই সেতু যেন আপন সন্তানতুল্য।
জাজিরা প্রান্তের ১০১ নং নাওডোবা মৌজার ১০৪৯ নং খতিয়ানের ৪৩৪৯ নং দাগে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার আগে ভায়াডাক্টের সবশেষ পিলারের জায়গায় ছিল বাবুল হাওলাদারের বসতি। ৯.৮১ একর জমিতে বসতবাড়ির পাশাপাশি ছিল কৃষিজমি।
সেই জমিতে কৃষিকাজ করত বাবুলে পরিবার। পাশাপাশি ঢাকার শ্যামবাজারে হকারের কাজ করতেন বাবুল।
২০০৬ সালের শেষের দিকে কথা। বাবা লাল মিয়া হাওলাদার মোবাইল ফোনে বাবুলকে জানান তাদের জমি থেকে পাঁচ একর জায়গা পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছাড়ার শংকায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে বাবুলের।
তবে নিজেকে সামলে নেন দিন কয়েকের মধ্যেই, বুঝতে পারেন তার মতো আরও অনেকের ত্যাগের মধ্যে দিয়েই দক্ষিণের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের দ্বার উন্মোচিত হবে।
পদ্মা সেতুর জন্য বাবুল শেষ পর্যন্ত স্বতস্ফূর্তভাবেই জমি দিয়েছেন। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জমি অধিগ্রহণের নোটিশ পায় তার পরিবার। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১১ সালে ক্ষতিপূরণ বাবদ তারা পান ২১ লাখ ৬ হাজার ৪১৫ টাকা।
২০১৪ সালে অধিগ্রহণ করা জমির সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু ও সার্ভিস এরিয়া ২ এর মধ্যে থাকা অবশিষ্ট থাকা ৪.৮১ একর জমিতে নতুন বসতি গড়েন হাওলাদার পরিবারের মানুষ। তারপর কেটে গেছে আট বছর। বাবুলের চোখের সামনে ধীরে ধীরে পূর্ণতা পেয়েছে বিশ্বকে অবাক করে দেয়া বাংলাদেশের গর্বের গল্প।
রাতের ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে আলো ঝলমলে পদ্মা সেতুর দিকে তাকিয়ে সেই সব দিনের স্মৃতি তাড়িত হন বাবুল। নিউজবাংলাকে শোনান, প্রথম কয়েক দিনের টানাপড়েন আর এখনকার গর্ব-আনন্দের নানান কথা। পদ্মা সেতু নিয়ে প্রথম দিককার ষড়যন্ত্রে বাবুল হাওয়ালাদারও ভেঙে পড়েছিলেন। তবে কি তার মতো আরও অনেকের ত্যাগ আর দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন বিফলে যাবে?
বাবুল বলছিলেন, 'জমি দেয়ার পর জানতে পারলাম সেতু নিয়া ষড়যন্ত্র হইতাছে। বিদেশিরা নাকি টাকা দিবো না। তহন ভাবছিলাম পদ্মা সেতু মনে অয় অইবো না। কিন্তু আইজ এই সেতু এভাবে দেইখা খুবই আনন্দ লাগতাছে।'
এই সেতু যেন বাবুলের নিজের সন্তান। কথা বলতে গিয়ে দুই চোখে ঝিলিক দিয়ে ওঠে গর্ব। বাবুল বলেন, 'আমাগো জমির উপর দিয়া পদ্মা সেতু হইছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হইতে পারে। আামার জমি হারানোর সব কষ্ট দূর হইয়া গেছে।'
আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এই সেতু আমাগো গর্বের, আমাগো অহংকারের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখাই দিছে আমরা বাঙ্গালিরা কাঙ্গাল না। গর্বে বুকটা ভইরা যায় যখন ভাবি দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাপ্ন সত্যি হইছে।'
বাবলের মতোই এমন অসংখ্য গল্পের নায়ক পদ্মা পাড়ের খেটে খাওয়া অসংখ্য মানুষ। পৈত্রিক জমি অধিগ্রহণের পর তাদের অনেকের আশ্রয় হয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রে। পদ্মা সেতুর জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে সাতটি পুর্নবাসন কেন্দ্র। আধুনিক সব সুযোগ সুবিধার এসব আবাসন প্রকল্পে ভালো আছেন পুনর্বাসিতরা।
প্রশস্ত সড়ক, ড্রেনেজ, পানি সরবরাহ, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা রয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের জন্য।
পদ্মা সেতু পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী নিউজবাংলাকে বলেন, 'সেতু প্রকল্পের জন্য সম্পূর্ণ বা আংশিক জমি হারাতে হয়েছে ২০ হাজার ৭৫৫টি পরিবারকে। তাদের জমি কিংবা আবাসস্থলের ওপর গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বড় এই অবকাঠামো।'
সেতুর জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে সাতটি পুর্নবাসন কেন্দ্রে ৩ হাজার ১১টি পরিবারের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আড়াই, পাঁচ ও সাড়ে সাত শতাংশ করে জমির প্লট। পরিবারগুলোর শিশুদের জন্য বিশাল খেলার মাঠসহ শিক্ষার সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পাঁচটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চলছে। প্রতিটি কেন্দ্রে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের সুযোগও রাখা হয়েছে। দৈনন্দিন কেনাকাটা ও ব্যবসা পরিচালনা এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিশাল মার্কেট শেডও নির্মাণ করা হয়েছে।'
প্রতিটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দেখভালের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাজিরা প্রান্তের পুর্নাবাসন কেন্দ্রগুলো সম্প্রতি ঘুরে দেখেছে নিউজবাংলা। কেন্দ্রের মূল গেট দিয়ে ঢুকলেই সবুজে ঘেরা আধুনিক পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার দেখা মেলে। প্রতিটি বাড়ির পাশে ফলদ-বনজ গাছ বেড়ে উঠছে। ঘন সবুজের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে প্রশস্ত পিচ ঢালা রাস্তা। এর পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে পাকা, আধাপাকা আর টিনশেড বাড়ি।
বসবাসকারীদের জন্য রয়েছে বিদ্যুৎ, সাপ্লাই পানি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রর ভেতরে বিকেল হতেই চোখে পড়ে ছোট একটি বাজারে বয়স্করা চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে নাস্তা করতে ভিড় জামিয়েছেন কর্মস্থল থেকে ফেরা মানুষ। তাদের কারও কারও দাবি, যাদের জমিতে পদ্মা সেতু করা হয়েছে তাদের জন্য বিশেষ কার্ড দেয়া হোক, যাতে তারা বিনা খরচে সেতু পার হতে পারেন।
নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের মো. আজাহারের বয়স ৬৫ বছর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০৭ সালে প্রথম যখন আমাগো জমি অধিগ্রহণ করলো, তখন খুবই খারাপ লাগতেছিল। পরে যখন টাকাপয়সা দিলো এবং থাকার জন্য একটা প্লট দিলো তখন থেকে মন ভালো হয়ে গেছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হইতাছে, দেশের অনেক উন্নতি হইবো। আমাগো সব কষ্ট দূর হইয়া গেছে।'
পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৩৮ বছর বয়সী মাকসুদা বেগম বলেন, ‘দ্যাশের একটা বড় কাজের লিগ্যা জমি ছাইড়া দিছি। সরকার আমাগো জমির লিগ্যা টাহাও দিছে। আবোর থাকোইন্যা ব্যবস্থাও কইরা দিছে। ঢাহা (ঢাকা) শহরের মতো পানি টিপ দিলেই পড়তে থাকে। কারেন আছে। হাসপাতালে গেলে ওষুদ-বড়ি দেয়। এহানের স্কুলে পোলাপাইনে লেহাপরা করাইতে পারি। এইহানে অনেক ভালোই আছি।'
পূর্ব নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, ‘পোলাইনের পড়ালেখার জন্য সুন্দর বিদ্যালয় আছে। যারা কাজ শিখতে চায় তাদের জন্য গাড়ি চালানোর ট্রেনিং দিয়া আবার চাকরিও দিয়া দিছে। মেয়ে-ছেলেরা শিলাইয়ের (টেইলারিং) কাজ শিখছে। অহন তারা জামা কাপাড় বানাইয়া টাকা কামাই করতে পারে।'
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য