সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। পদ্মার তীরে মৃদুমন্দ বাতাস। একটা মিনি ট্রাক ওঠার পর বন্ধ হয়ে গেল ফেরির দরজা। গগনবিদারী শব্দ তুলে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় কুঞ্জলতায় বাজল প্রস্থান ঘণ্টা।
নদীর অন্য প্রান্তে মাঝেরকান্দি ঘাট। কুঞ্জলতা যখন পদ্মায় ভাসে এই ঘাটের পথে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তখন শিমুলিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে মাঝিরকান্দিতে নোঙর করা ফেরি ‘বেগম রোকেয়া’। এই দুটি ফেরির ঘাট ছাড়ার মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে দক্ষিণের পথে সড়কযাত্রায় পদ্মার মাওয়া-জাজিরা নৌরুটে ফেরি যুগের দৃশ্যত অবসান ঘটল।
দেশের অহংকার হয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে নির্মিত হয়েছে সেতু। সেই সেতু খুলে দিতে শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর রোববার ভোরে পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হবে যান চলাচলের জন্য।
সেতুটি উদ্বোধনের পর স্থানীয় পর্যায়ের নৌযান পারাপারে সীমিত পরিসরে এই রুটে ফেরি থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে দূরপাল্লার প্রায় সব যানবাহন ২৬ জুন থেকে সহজ চলাচলের জন্য ব্যবহার করবে পদ্মা সেতু।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুর উদ্বোধন কেন্দ্র করে শনিবার রাত পর্যন্ত এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে কয়েক দিন ধরে পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে প্রতি রাতেই ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। একই অবস্থা শনিবার রাতেও থাকলে যান চলাচলের জন্য রোববার ভোরে সেতু খুলে দেয়ার আগে শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌরুটে আর ফেরি চলাচলের সম্ভাবনা নেই।
কুঞ্জলতার শেষ প্রাইভেট কার
নদী পার হয়ে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছেন ঢাকার বাসিন্দা মো. খোকন। সব শেষ ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে তার চালিত প্রাইভেট কারটি ‘দ্য লাস্ট ফেরি’ কুঞ্জতলায় ওঠে।
শেষ ফেরির যাত্রায় উচ্ছ্বসিত খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এতদিন আমাদের যে কী ভোগান্তিটা না হতো- ঘাটে এসে বসে থাকা কিংবা সিরিয়াল মেইনটেইন করা। ওই সব আর হবে না। ঢাকা থেকে সরাসরি হাইওয়ে দিয়া এসে ব্রিজ দিয়ে চলে যাব।’
পদ্মা সেতু তৈরি করে সরকার দক্ষিণবঙ্গবাসীকে ঋণী করে ফেলেছে বলেও মন্তব্য খোকনের। তিনি বলেন, ‘অনুভূতি বলার মতো না। দক্ষিণাঞ্চলে আমরা যারা চলাচল করি, বিভিন্ন জায়গায় যায়, আগে যেমন একটা মানুষ মারা গেলেও ফেরির জন্য বসে থাকতে হতো। এখন আর বসে থাকার অপশন নাই। এখন আমরা সরাসরি সেতু দিয়া যামুগা।’
ফেরির শেষ গাড়ি
কুঞ্জলতা ফেরির সব শেষ গাড়ি ‘ঢাকা মেট্রো- ন ১৬-৭২৭০’ নম্বরের একটি মিনিট্রাক। ফরিদপুরের কিশোর বয়সী লিমন চালাচ্ছিলেন গাড়িটি। বললেন, সামনে আর কখনও ফেরিতে উঠতে চান না। সেতু পাড়ি দিয়ে সোজা চলে যেতে চান গন্তব্যে।
দুই বছর হলো এই পেশায় এসেছেন লিমন। ফেরি পারাপারের এই অভিজ্ঞতা মোটেও তার কাছে সুখকর নয়।
লিমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপর দিয়া যামু। ভালো উপকার হইল। এই যে আমি আম টানি। সেদিনকা পইচা গেছিল প্রায়, যদি রাইতে না যাইতে পারতাম।’
ফেরির ইনচার্জ মাস্টার সাইফুল আবেগতাড়িত
কুঞ্জলতাকে মাঝিরকান্দি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছে ইনচার্জ মাস্টার সামশুল আলম সাইফুলের কাঁধে। এই নৌরুটে সাড়ে চার বছর ধরে ফেরি চালাচ্ছেন তিনি। সেতু উদ্বোধনের আগে শেষবারের যাত্রায় নিজের আসনে বসে আপ্লুত সাইফুল। একের পর স্মৃতি ভর করে কথায়।
সাইফুল বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকার কারণে আন্তরিকতা কাজ করতেছে। পদ্মা সেতু জাতির জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। যখন ওয়েদার খারাপ থাকে, যখন স্পিডবোট, লঞ্চ এসব বন্ধ থাকে, তখন পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের অনেক কষ্ট হয়। আমি নিজে দেখছি। অনেক সময় দেখা যেত, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে মানুষ যেতে পারছে না।’
দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে সাইফুল জানালেন, দাফনের সময় নির্ধারণ করেও ফেরি পারাপারের জটিলতায় ঠিক সময়ে মরদেহ দাফন না করার ঘটনাও ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এই কষ্ট আর থাকবে না। আমরা চাকরি করছি। আমাদের হয়তো যেখানে প্রয়োজন ম্যানেজমেন্ট সেখানে নিয়ে যাবে। সর্বশেষ ফেরিটা আমি নিয়ে যাচ্ছি। তবে যতটুকু জেনেছি, এখানে ওভারলোড গাড়ি এলে বা সেতুর ওপর যেসব গাড়ি চলতে পারবে না, সেগুলো পারাপারে ফেরির দরকার পড়তে পারে।’
এই রুটে যানবাহনবোঝাই শেষ ফেরি চালানোর অনুভূতি জানাতে গিয়ে ইনচার্জ মাস্টার বলেন, ‘এই পারাপারে কথা আসলে…সবকিছু তো স্মৃতি হয়ে থাকবে। এগুলো জীবনের সবচেয়ে বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে।’
সাইফুল বলেন, ‘নিরাপদে পার করে দেয়ার চেষ্টা সব সময় ছিল, আজকেও আছে। সব সময় চেষ্টা থাকে জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জনগণের সম্পদ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার। এটাই কাম্য, এটাই কামনা করি। এই যাত্রাতেও যেন অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা পথে না ঘটে।’
এ রুটের যাত্রীদের খুব ‘মিস করবেন’ সাইফুল। বলেন, ‘যাত্রীরা এসে কতক্ষণ আনন্দ উল্লাস করে এ রুট-ওই রুট পার হয়ে চলে গেছেন। আবার করোনার মধ্যে কয়েকজন যাত্রী মারা গেছেন তীব্র গরমে। এগুলো হৃদয়বিদারক ঘটনা। স্মৃতি হয়ে মনে থাকবে।’
আবেগতাড়িত সাইফুল বলেন, ‘অনেক যাত্রী এসে স্টিয়ারিং ধরে বলতেন আমি একটু চালাই। আমি ভিডিও নিয়েছি, তারা সেলফি তুলেছেন। আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে দেখিয়েছেন তিনি ক্যাপ্টেন। এসব মিস করব।’
খরস্রোতা পদ্মা নিয়ে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় যখন বাংলাবাজার থেকে এপারে আসতাম, স্রোতের কারণে ফেরি সোজা রাখা কঠিন হয়ে পড়ত। আড়াআড়ি হয়ে যেত ফেরি।’
ফেরি চালাতে গিয়ে তার জীবনে ওই সময়টায় খুব কষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাইফুল বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে যাতে আঘাত না লাগে, যাত্রী আর গাড়িগুলো যেন নিরাপদে পৌঁছে দিতে পারি, সেই চেষ্টাটা থাকত।’
ফেরিতে সুখ-দুঃখ
কুঞ্জলতা ফেরির লস্কর নাজমুলকে সেতু ও ঘাটের বিষয়ে প্রশ্ন করতেই চটজলদি উত্তর, ‘পদ্মা ব্রিজ হইছে খুব খুশি হইছি, মানুষের কষ্ট কমব, দেশের উন্নতি হইব। আমরা এই ঘাট ছাইরা হয়তো অন্য ঘাটে ডিউটি করমু, কিন্তু এই ঘাটের সঙ্গে বহু বছরের সম্পর্ক।
‘ব্রিজের জন্য মানুষ অহন কম আসব। ফেরিতে গাড়ি লোড-আনলোড করলে গাড়ির ড্রাইভাররা খুশি হইয়া পাঁচ-দশ টাকা দিত, এইডা আমাগো বাড়তি ইনকাম ছিল। তবে দেশের ভালো তো সবার ভালো, আমাগো ইনকাম কম হইলেও সমস্যা নাই, দেশ উন্নতি করুক।’
কুঞ্জলতার কোয়ার্টার মাস্টার মো. মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবাই একত্রিত হলে আনন্দ লাগত। সব সময় মানুষ দেখছি। সব সময় হৈ-হুল্লোড়, উল্লাসে দিন কাটাচ্ছি। এখন আমরা হয়তো আস্তে আস্তে পণ্যবোঝাই ট্রাক নেব। মানুষ থাকবে না। এত আনন্দও লাগবে না।’
শেষ ফেরি কুঞ্জলতায় ওঠা অ্যাম্বুলেন্সচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘাট দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে কত রোগী নিয়ে গেছি। ঘাটের জ্যামে আটকে আমার গাড়িতে ছেলের সামনে বাবা মারা গেছে, ছোট বাচ্চা মারা গেছে। কতবার চোখের পানি মুছছি।
‘পদ্মা খালি ব্রিজ না, আল্লাহর রহমত। আমি চাই না আমার গাড়িতে আর কেউ মারা যাক।’
ফেরিঘাটে এতদিন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ যাদের নিত্যসঙ্গী ছিল, সেই ট্রাকচালকরাও শেষ ফেরিতে চড়তে তিন দিন ঘাটে অপেক্ষা করেছেন।
পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মিজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন দিন এই ঘাটে বসা। ১ হাজার ৫০০ টাকা এই কয়দিন এখানে বসেই খরচ করছি। শেষে উপায় না পাইয়া ঘাটে ৩০০ টাকা ঘুষও দিছি। অহন ফেরিতে উঠলাম। আল্লায় হাতে ধইরা না তুললে আর কখনও ফেরিতে উঠমু না, অহন আমাগো ব্রিজ আছে।’
আরেক ট্রাকচালক রাব্বানি অবশ্য ভাবছেন খরচ নিয়ে। এখন ফেরির খরচ কমলে তিনি সেতুর পাশাপাশি ফেরিতেও চড়তে চান।
রাব্বানি বলেন, ‘ব্রিজ হইছে ভালা কথা। কিন্তু ব্রিজের যে টোল এত টাকা দিলে আমরা পোষামু কেমনে? অহন যদি ফেরির ভাড়া কমে তাইলে আমি জরুরি কিছু না হইলে ফেরিতেও যামু। এত বছর ধইরা ঘাটের লগে পরিচয় আমার, তারে ভুইলা গেলে কেমনে হইব। আর যদি কখনও ঘাট না থাকে তাইলে মাঝেমইধ্যে বেড়াইতে আমু।’
আরও পড়ুন:৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য