এশিয়ার অন্যতম দুই বাণিজ্যিক কেন্দ্র হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের শরীয়তপুরের। পদ্মা বহুমুখী সেতুকে কেন্দ্র করে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা সেতুর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিউজবাংলা টিম পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প ও আশপাশের এলাকা ঘুরে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে শরীয়তপুরের সম্ভাবনার বিষয়টি দেখেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঠিক মাঝখানে অবিস্থত হওয়ায় দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর আশপাশের দেশগুলোর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটি এখন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। আর চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
আয়তনের দিক দিয়ে হংকং ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে বড় পদ্মা-মেঘনার মিলিত স্রোতধারায় সিক্ত শরীয়তপুর জেলা। হংকংয়ের আয়তন ১১০৭ বর্গকিলোমিটার এবং সিঙ্গাপুরের আয়তন প্রায় ৭২৩ বর্গকিলোমিটার। যেখানে শরীয়তপুরের আয়তন ১১৮১ বর্গকিলোমিটার। এই জেলার উত্তরে মুন্সিগঞ্জ, দক্ষিণে বরিশাল, পূর্বে চাঁদপুর এবং পশ্চিমে মাদারীপুর জেলার অবস্থার।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অংশ হওয়ায় শরীয়তপুর এখন বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশীদারে পরিণত হয়েছে। এই সেতু ও রেল প্রকল্প এশিয়ান হাইওয়ে রুটের অংশ হওয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. পারভেজ হাসান নিউজবাংলাকে জানান, পদ্মা সেতুর কারণে এই জেলার আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনোজাগতিক, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হবে। কোনোটা খুব দ্রুত, কোনোটা ধীরে ধীরে।
তিনি জানান, মাদারীপুরের মতো শরীয়তপুরেও চার লেনের রাস্তা হবে। এই চার লেন আর পদ্মা ও মেঘনা সেতু হয়ে গেলে এই অঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে শরীয়তপুর। তখন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের ওয়্যার হাউস বানাবেন। বিশ্রামাগার হবে, কিছু থ্রি স্টার ও ফাইভ স্টার হোটেল হবে। সব মিলে শরীয়তপুরের অনেকটাই হংকং বা সিঙ্গাপুরের মতো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘শরীয়তপুর এখন চাঁদপুরের সঙ্গে কানেক্টেড নরসিংহপুর যে ফেরিঘাট আছে তার মাধ্যমে। নরসিংহপুর ঘাট থেকে ফেরিতে করে চাঁদপুর দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে চট্টগ্রাম। চাঁদপুর প্রান্তেও চার লেনের রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি সুখবর হচ্ছে মেঘনায় আরেকটি সেতু করার জন্য একনেক সভায় আড়াই শ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু, মেঘনা সেতু আর মাঝখানে চার লেনের রাস্তা হলে বাংলাদেশের যেকোনো বন্দরেই যাওয়া যাবে শরীয়তপুরের ওপর দিয়ে।
‘বিশেষ করে বেনাপোল, মোংলা ও চিটাগাং- এই তিন পোর্টের কানেক্টিং রাস্তা হবে শরীয়তপুরের বুকের ওপর দিয়ে। তখন কেউই কিন্তু ঢাকা ঘুরে চিটাগাং যাবে না। তখন শরীয়তপুরকে দেখতে হংকং বা সিঙ্গাপুরের মতো মনে হবে। এটা হলে শরীয়তপুরের রাস্তা ও ভূমি অটোমেটিক্যালি ডেভেলপ হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান মনে করেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মার দুই পাশেই চীনের হংকং-সাংহাইয়ের মতো শহর গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমার মনে হয়, পদ্মার দুই পাশেই হংকং-সাংহাইয়ের মতো শহর গড়ে উঠবে। সেখানে বড় বড় শহর হবে, বড় বড় রিসোর্ট হবে। এখানে যদি আমরা প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করি, তাহলে ঢাকার যে ডিমান্ড, সেটা ওই খানেই পূরণ করা যাবে। সেজন্য আমাদের একটা মেগা পরিকল্পনা থাকা উচিত, যে আমরা কীভাবে ওই এলাকা সাজাব।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্যতার বড় জায়গাটায় না গেলাম, সর্বনিম্ন সমীক্ষাটিও যদি গ্রহণ করি তাহলেও দক্ষিণ বাংলার যে ২১টি জেলা আছে সেখানে ২ শতাংশ জিডিপি বাড়বে। আর পুরো দেশের জিডিপি কম করে হলেও ১ শতাংশ বাড়বে, এর বেশিও বাড়তে পারে।’
‘এটাই হলো আমাদের পদ্মা সেতু, যা বাংলাদেশের সক্ষমতা, সমৃদ্ধি, অহংকার ও সাহসের প্রতীক, যার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর মনে করেন, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে ‘যে বিস্ফোরণ’ ঘটেছিল তার চেয়েও ‘বড় বিস্ফোরণ’ ঘটাবে পদ্মা সেতু।
তিনি বলেন, ‘যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে বিপুল বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। পদ্মা সেতু চালুর পর অর্থনীতিতে তার চেয়েও বড় বিস্ফোরণ ঘটবে।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার কানেকটিভিটি বেড়ে যাবে, যার কারণে সেখানকার কৃষি খাত বেগবান হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতে বিপ্লব ঘটবে। দ্রুত পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় সারা দেশে বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে শিক্ষাব্যবস্থায়।
‘এ ছাড়া কুয়াকাটা, সুন্দরবন ও বঙ্গবন্ধুর সমাধি ঘিরে পর্যটন খাত বিকশিত হবে। অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ তখন টুঙ্গিপাড়া, ষাটগম্ভুজ মসজিদ, কুয়াকাটাসহ নদীর ওই পারে যেতে পারবে। হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠবে। মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দরেও এনার্জি হাব হবে। ওই এলাকায় অনেক শিপ বিল্ডিং প্রতিষ্ঠান হবে। এসব শিল্পের জন্য যদি আমরা আলাদা করে প্রণোদনা দিই, তাহলে সার্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে উল্লম্ফন ঘটবে।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘এখন জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের যেসব মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকামুখী হয়েছে, তারা এলাকায় ফিরে যাবে এবং সেখানেই উৎপাদন, সেবা ও বাণিজ্যমুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে। এসবের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপিতে।’
পদ্মা সেতুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ও প্রকৌশলী ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। মৃত্যুর কিছুদিন আগে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা ও বাস্তবতা নিয়ে লিখেছিলেন তিনি।
তিনি লিখেছেন, ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে বাংলাদেশজুড়ে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। তখন পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে শুধু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই আমূল বদলে যাবে। এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী লিখেছেন, ‘এই পথটি ট্রান্স-এশীয় রেলপথের অংশ হবে। তখন যাত্রীবাহী ট্রেন যত চলবে, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি চলবে মালবোঝাই ট্রেন। ডাবল কনটেইনার নিয়েও ছুটবে ট্রেন। তখন পুরো দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।’
ড. জামিলুর রেজা বলেছিলেন, ‘কোনো বিনিয়োগের ১২ শতাংশ রেট অফ রিটার্ন হলে প্রকল্পটিকে আদর্শ বিবেচনা করা হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে বছরে ১৯ শতাংশ করে বিনিয়োগ উঠে আসবে।’
‘পদ্মা সেতু বাঙালির স্পর্ধার সমান’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান মনে করেন, পদ্মা সেতু বাঙালির স্পর্ধার সমান, সাহসের সমান একটি স্থাপনা।
নিউজবাংলার কাছে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর জেলার যে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, সেটি হচ্ছে সোনালি সেতুর শ্যামলভূমি শরীয়তপুর। সেতুর কারণে শরীয়তপুরে সোনা ফলবে- সেই প্রত্যাশাই আমাদের।’
তার মতে, পদ্মা সেতু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম সর্বোচ্চ শিখরে উত্তীর্ণ হওয়ার কারণেই। শুধু দেশের প্রয়োজনেই তিনি তার স্পর্ধিত পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাই পদ্মা সেতু আজ পদ্মা নদীর বুক চিড়ে দাঁড়িয়ে।’
এগিয়ে নেবে মৃৎশিল্প ও পিতল শিল্পকে
স্থানীয় কয়েকজন নিউজবাংলা টিমকে জানান, শরীয়তপুর অনেক আগে থেকেই মৃৎশিল্প ও পিতলের জিনিসপত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানকার টেরাকোটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পটারি ইউরোপসহ বিশ্বের ২০টি দেশে যায়।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মনে করেন, পদ্মা সেতু এই দুই শিল্পকে আরও এগিয়ে নেবে। এর বাইরে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে কৃষি খাতে, বিশেষ করে কালো জিরা, ধনিয়া ও কাঁচা মরিচের।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনা
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণে নড়িয়া উপজেলা ও চাঁদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী, নদীর পাড় ও চরগুলো পর্যটন শিল্পের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুর্দান্ত সম্ভাবনা আছে আমাদের পর্যটনের ক্ষেত্রে। পদ্মা সেতু দেখার জন্য প্রচুর মানুষ আসবে। শরীয়তপুর থেকে জাজিরার দিকে যেতে ডান পাশে রূপবাবুর হাট বলে চমৎকার একটি জায়গা আছে, যেটি জলমহাল হিসেবে ইজারা দেয়া হয়। এ বছর ইজারা শেষ হবে। এটি মূলত পদ্মার একটি চ্যানেল, যেটি মারা গেছে।
‘আমাদের পরিকল্পনা আছে এটির দুই পাড় বাঁধাই করে একটি ফাইভ স্টার হোটেল করার। সেখানে গলফ খেলার মাঠ হতে পারে। এত সুন্দর একটি তট তৈরি হয়েছে, যেখানে ওয়াচ টাওয়ারও করা যেতে পারে সেতু দেখার জন্য। ওখান থেকে মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার কানেক্টিভিটি রয়েছে। এই অঞ্চল চর ট্যুরিজমের জন্য খুবই উপযোগী। নদীপথে যদি আমরা রিভারক্রুজের ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে দর্শনীয় একটি পর্যটন স্পট হতে পারে।’
জেলা প্রশাসক জানান, জাজিরা প্রান্তে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম হতে পারে। কারণ ঢাকা থেকে বিকেএসপি যেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে জাজিরায় আসতে কম সময় লাগবে। শরীয়তপুর জেলা স্টেডিয়াম আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এটিও আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচের জন্য অনুশীলন ভেন্যু হতে পারে। এটা করা গেলে এখানে হোটেল-মোটেল তৈরির সম্ভাবনা জেগে উঠবে। পদ্মা সেতুর সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শরীয়তপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা যায় কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা চলছে।
শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি ইউনিভার্সিটি হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে বেশকছিু হিমাগার হচ্ছে জাজিরা রোডে। পদ্মা সেতুর সুবিধা কাজে লাগিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে যারা শিল্প-কারখানা করতে চান, তাদের সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।
পদ্মা পাড় দিয়ে রিভার ড্রাইভ
জেলা প্রশাসক পারভেজ নিউজবাংলাকে আরও জানান, গোসাইরহাট থেকে শুরু করে জাজিরা পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাশ দিয়ে রিভার ড্রাইভ হবে। ইতিমধ্যে নড়িয়ার অংশে হয়ে গেছে। নড়িয়ার যে রাস্তাটা করা হয়েছে সেটাকে জাজিরা পর্যন্ত নিয়ে আসার চিন্তা-ভাবনা চলছে। মোটরসাইকেল নিয়ে যে ছেলেটি পদ্মা সেতু পার হলো সে আর শরীয়তপুরে না গিয়ে রিভার ড্রাইভ দিয়ে সরাসরি গোসাইরহাটে চলে যেতে পারবে।
জমির দাম বেড়েছে ১০ গুণ
শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাতে নজিরবিহীন উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। সখিপুর থানা উপজেলা হচ্ছে। এই জনপদের চরাঞ্চলেও বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শরীয়তপুরের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ মুন্সিগঞ্জ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কার্তিকপুর, ব্রজেশ্বর ও চরসেনসাসে হচ্ছে বিদ্যুতের সাবস্টেশন।
তিনি জানান, মেঘনা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। চার লেনের রাস্তা হচ্ছে। এসব উন্নয়নের কারণে এই এলাকার জমি আগের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। এখন এক শতাংশ জমির দাম উঠেছে ৩-৪ লাখ টাকা, যেখানে আগে কেউ এখানে জমি কিনত না। পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই কুর্নিশ করছে বলে মন্তব্য করেন এনামুল হক শামীম।
স্বপ্ন দেখছে নিম্ন আয়ের মানুষ
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ এই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন।
নড়িয়ার কেদারপুরের কালাচান ব্যাপারী পেশায় কাঠমিস্ত্রি। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মার দক্ষিণ পার থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া অনেক সহজ হবে। আগে ৫ ঘণ্টা লাগছে। সেতু চালু হইলে কম লাগব। মিল-কারখানা হইলে আমাগো তো সুবিধা হবেই।’
মুলফতগঞ্জের বাবুল খাঁ প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মায় ডিঙি নৌকায় করে মাছ ধরেন। সেই মাছ বিক্রির টাকায়ই চলে সংসার। তিনি মনে করছেন, পদ্মা সেতু হলে ঢাকার মানুষ আসবে মাছ কিনতে। তাদের কাছে বেশি দাম পাবেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে গেছে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের নিম্নাঞ্চল। এতে ফসলহানির পাশাপাশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের কয়েক হাজার পরিবার।
এতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। তারা বলছেন, আউশের ক্ষেত ও আমনের বীজতলার পাশাপাশি শ শ মাছের ঘেরও ভেসে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
পিরোজপুর সাগর উপকূলবর্তী হওয়ায় নিম্ন বা লঘুচাপের প্রভাব পড়ে ব্যাপক।
এবার সাগরে লঘুচাপের কারণে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এরইমধ্যে দুই থেকে আড়াই ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার নিম্নাঞ্চল।
পিরোজপুরের শারিকতলা, ডুমুরিতলা, ইন্দুরকানী, ভাণ্ডারিয়া এবং মঠবাড়িয়া উপজেলার বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চলে অতি জোয়ারে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষেরা।
নদীর পাড়ের এলাকা শংকরপাশা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মো. কাসেম হোসেন বলেন, ‘গতকাল এবং আজ সকাল থেকে যেমন ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঘরের উঠানে নদীর পানি উঠেছে। বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তায় আছি। ওরা তো আর পানি বুঝে না, খেলতে নেমে যায়। তাই চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে।’
পাড়েরহাট এলাকার গাজিপুর গ্রামের মনিকা বেগম বলেন, ‘কচা নদীর গাজীপুরের বাঁধ ভেঙে আমাদের এলাকার অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। তবে জোয়ারে পানি আসলেও ৬-৭ ঘণ্টা পর পানি নেমে যায় ভাটায়।’
ঝনঝনিয়া গ্রামের কৃষক মন্টু মিয়া বলেন, ‘এখন চলছে আউশ ধানের মৌসুম। ইতিমধ্যে ধান কাটাও শুরু করেছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি ও নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে মাঠ। এতে ধানের ক্ষতি হবে।’
সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শিপন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘পানি স্থায়ী না হলে কৃষি ফসলের ক্ষতির তেমন আশঙ্কা নেই। তবে আমান বীজতলা লাগাতে কৃষকদের কিছুটা ভোগান্তি হবে।’
তিনি আরও বলেন, এ বছর জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ও ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে আমান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগের সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও তার স্ত্রীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসাইন বুধবার বিকেলে আকবরশাহ থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম, তার স্ত্রী তাছলিমা বেগম ও ওই স্থাপনার তত্ত্ববধায়ক মো. হৃদয়।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম মহানগর) হিল্লোল বিশ্বাস।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নগরীর পাহাড়তলী মৌজার লেকসিটি এলাকায় পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের একটি অভিযোগ পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কর্মকর্তারা। এ সময় পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ ও গাছ কাটার প্রমাণ পাওয়া যায়।
‘স্থাপনা বলতে টিনশেড সেমিপাকা একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া অন্তত ৩ হাজার ঘণফুট পাহাড় ও তিনটি বড় গাছ কেটে নিয়েছে ওরা। বুধবার শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়। শুনানিতে ওই স্থাপনার তত্ত্বাবধায়ক হৃদয় এসে জমির প্রকৃত মালিক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও তার স্ত্রী তাছলিমা বেগম বলে জানান।’
আরও পড়ুন:ঘোষণা ছাড়াই ময়মনসিংহ-সিলেট রুটে ৯ দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে সিলেটের পরিবহন মালিক সমিতি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা।
তাদের অভিযোগ, নিজেদের স্বার্থে পরিবহন মালিকরা বাস বন্ধ করে দিয়েছেন।
ময়মনসিংহ শহরে সিলেটের শাহজালাল কাউন্টারের সামনে বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় সাইদুল ইসলাম নামে সিলেটগামী এক যাত্রীর সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঘোষণা ছাড়াই এভাবে বাস বন্ধ করে দেয়ার কোনো মানে হয় না। আগে থেকে বাস বন্ধের নির্দেশনা আসলে আমরা জানতে পারতাম। কাউন্টারে গিয়ে টিকিট না পেয়ে ফিরে আসতে হতো না।’
নুরজাহান খাতুন নামে আরে যাত্রী বলেন, ‘আমাদের কথা পরিবহন মালিকরা চিন্তা করেন না। যখন ইচ্ছে বাস বন্ধ করে দেয়, আবার যখন ইচ্ছে বাস চলাচল স্বাভাবিক করে।’
ময়মনসিংহ শহরে সিলেটের শাহজালাল পরিবহনের ম্যানেজার মো. মমিনুল ইসলাম মানিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে বাসগুলো নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে পারলেও গত ৯ দিন ধরে সিলেটে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না সিলেট মালিক সমিতি।
‘এতে যে শুধুমাত্র যাত্রীরাই ভোগান্তিতে পড়েছে তা নয়। সিলেটগামী বাসের চালক, শ্রমিক ও কাউন্টারের ম্যানেজাররা বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে তারা তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মালিকপক্ষ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা বিভিন্ন সড়কে একাধিক গাড়ি চালিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা আমাদের মতো শ্রমিকরা ধারদেনা করে পরিবারের ভরণপোষণ করছে। অন্তত যাত্রীসহ আমাদের কথা চিন্তা করে ময়মনসিংহ-সিলেটে বাস চলাচল স্বাভাবিক করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মো. মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দফায় দফায় সিলেট ও নেত্রকোণা মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। কিন্তু এতোদিন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।
‘বুধবার রাতে এ সমস্যা সমাধানে সিলেট মালিক সমিতির নেতারা নিজেরাই আলোচনায় বসেছে। আশা করছি রাতেই মধ্যেই ময়মনসিংহ-সিলেটে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত আসবে।’
বাস বন্ধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নেত্রকোণা জেলায় চলাচলের জন্য গত ২ আগস্ট সিলেট মালিক সমিতির দুটি বাস নামিয়েছে। কিন্তু নেত্রকোণা মালিক সমিতি এ বাস দুটি চলাচল করতে দিবে না বলে জানায়।
‘কিশোরগঞ্জ মালিক সমিতিও নেত্রকোণা মালিক সমিতির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সিলেট মালিক সমিতি ময়মনসিংহ-সিলেট সড়কে তাদের সব বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়।’
আরও পড়ুন:রংপুর সিটি করপোরেশনের পানি শাখার এক নারী সহকর্মীকে মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপে ‘আপত্তিকর’ মেসেজ দেয়ায় নগর ভবনের যান্ত্রিক শাখার প্রধান সাজ্জাদুর রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
বুধবার বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যান্ত্রিক শাখার প্রধান সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে তার মোবাইল ফোন থেকে পানি শাখার কর্মকর্তা অঞ্জনা রানীকে ‘আপত্তিকর’ মেসেজ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। বিষয়টি আমার কাছে আসলে আমি অভিযুক্ত সাজ্জাদ এবং ওই নারী কর্মকর্তার পক্ষের লোকজনকে নিয়ে বৈঠকে বসি। বৈঠকে সাজ্জাদ নিজের দায় স্বীকার করেছেন।’
মেয়র মোস্তফা বলেন, ‘যেহেতু সাজ্জাদুর রহমান নিজের দায় স্বীকার করেছেন, তাই তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে চিঠি দেয়া হবে।’
ঘটনার তদন্তে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান মৃধাকে প্রধান করে, নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী ও সাধারণ শাখার প্রধান নাঈম হোসেনকে সদস্য করে একটি কমিটি করা হয়েছে।
তারা আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিলে সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাজ্জাদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মেসেজ দিয়েছি ঠিক আছে, কিন্তু অতটা আপত্তিকর নয়। বহিষ্কারের চিঠি এখনো পাইনি।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর ধামইরহাটে অবৈধভাবে পটাশ সার মজুত ও বেশি দামে বিক্রির দায়ে এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
উপজেলার আমাইতারা মোড়ে বুধবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে মেসার্স বিতরণী ট্রেডার্সের মালিক ও সার ডিলার আবু হেনা নুর মোহাম্মদকে এই জরিমানা করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শামীম হোসেন।
শামীম হোসেন বলেন, ‘এক ব্যক্তি ধামইরহাটে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি হচ্ছে, বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানালে আমরা ক্রেতা সেজে ওই দোকানে সার কিনতে গেলে সার নেই বলে জানানো হয়।
‘পরে গোডাউনে গিয়ে প্রায় ৩০ বস্তা পটাশ মজুত পাওয়া যায়। পটাশের দাম ৭৫০ টাকা বস্তা হলেও তের থেকে পনের শ টাকা করে বিক্রির সত্যতা পাওয়া যায়।’
তিনি জানান, এই বিএডিসি ডিলার গত ১৭ জুলাই স্টক রেজিস্ট্রারে পটাশ সারের মজুত দেখান ৪৬ বস্তা, কিন্তু ১৭ তারিখের পর থেকে আজকে পর্যন্ত বিক্রির ভাউচারে ৩১৮ বস্তা পটাশ সার বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়। যা তার হিসাবের সঙ্গে অসঙ্গতি।
তাই ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া সেসব সার ৭৫০ টাকা দামে উপস্থিতি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়।
অভিযানে ধামইরহাট উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক আনিসুর রহমান ও থানা পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের সকল নদ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে ওই এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বরিশাল নগরীতে।
বুধবার বিকেল ৪টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানির স্তরের তথ্য বার জোন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বিভাগের মধ্যে বরিশাল নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া বরিশালের পার্শ্ববর্তী জেলা ঝালকাঠীর বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার, ভোলার খেয়াঘাট সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখানের সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিনের সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
অন্যদিকে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের বুড়িশ্বর ও পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, বরগুনার বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টমিটার, পাথরঘাটার বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এ ছাড়া পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ও উমেদপুরের কচা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি নদীর পানির উচ্চতা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই সব অঞ্চলের নদ-নদীর পানিই বর্তমানে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।’
এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি উঠেছে, নগরীর নিম্নাঞ্চল পানির নিচে রয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
এ ছাড়া বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল। নদী বন্দরে ২ ও সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরও দুই এক দিন এই অবস্থা অব্যাহত থেকে বৃষ্টিপাত হতে পারে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঈগল এক্সপ্রেসের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বুধবার বিকেলে বিচারক নওরিন করিম তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এই আসামিরা হলেন মো. সাগর ও মো. বাবু।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. হেলাল উদ্দিন এসব নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ৯ জন। অন্য ৪ জন রিমান্ডে আছেন।
পুলিশের বর্ণনায় যা ঘটেছিল
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোডে জনতা নামের খাবার হোটেলে যাত্রা বিরতি করে। সেখানে ৩০ মিনিটের মতো বিরতি শেষে বাসটি ফের ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
পথে তিনটি স্থান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজন করে মোট ১২ জন ডাকাত যাত্রীবেশে বাসে ওঠেন এবং পেছনের দিকে খালি সিটে বসেন।
যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) পার হওয়ার আধা ঘণ্টা পর (রাত দেড়টার দিকে) টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকায় ডাকাতরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছুরি, চাকুসহ দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসের চালককে সিট থেকে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে পেছনে সিটের নিচে ফেলে রাখে।
টহল পুলিশের কাছে ধরা পড়া এড়াতে তারা বাসটিকে গোড়াই থেকে ইউটার্ন করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে ডাকাত দল বাসটির জানালার পর্দা ও যাত্রীদের পরনের বিভিন্ন কাপড় ছিঁড়ে চোখ এবং হাত বেঁধে ফেলে।
পরে ডাকাতরা বাসের ২৪ যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বাসের এক নারীকে পাঁচ-ছয়জন ধর্ষণ করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য