এশিয়ার অন্যতম দুই বাণিজ্যিক কেন্দ্র হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের শরীয়তপুরের। পদ্মা বহুমুখী সেতুকে কেন্দ্র করে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা সেতুর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিউজবাংলা টিম পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প ও আশপাশের এলাকা ঘুরে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে শরীয়তপুরের সম্ভাবনার বিষয়টি দেখেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঠিক মাঝখানে অবিস্থত হওয়ায় দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর আশপাশের দেশগুলোর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটি এখন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। আর চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
আয়তনের দিক দিয়ে হংকং ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে বড় পদ্মা-মেঘনার মিলিত স্রোতধারায় সিক্ত শরীয়তপুর জেলা। হংকংয়ের আয়তন ১১০৭ বর্গকিলোমিটার এবং সিঙ্গাপুরের আয়তন প্রায় ৭২৩ বর্গকিলোমিটার। যেখানে শরীয়তপুরের আয়তন ১১৮১ বর্গকিলোমিটার। এই জেলার উত্তরে মুন্সিগঞ্জ, দক্ষিণে বরিশাল, পূর্বে চাঁদপুর এবং পশ্চিমে মাদারীপুর জেলার অবস্থার।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অংশ হওয়ায় শরীয়তপুর এখন বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশীদারে পরিণত হয়েছে। এই সেতু ও রেল প্রকল্প এশিয়ান হাইওয়ে রুটের অংশ হওয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. পারভেজ হাসান নিউজবাংলাকে জানান, পদ্মা সেতুর কারণে এই জেলার আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনোজাগতিক, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হবে। কোনোটা খুব দ্রুত, কোনোটা ধীরে ধীরে।
তিনি জানান, মাদারীপুরের মতো শরীয়তপুরেও চার লেনের রাস্তা হবে। এই চার লেন আর পদ্মা ও মেঘনা সেতু হয়ে গেলে এই অঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে শরীয়তপুর। তখন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের ওয়্যার হাউস বানাবেন। বিশ্রামাগার হবে, কিছু থ্রি স্টার ও ফাইভ স্টার হোটেল হবে। সব মিলে শরীয়তপুরের অনেকটাই হংকং বা সিঙ্গাপুরের মতো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘শরীয়তপুর এখন চাঁদপুরের সঙ্গে কানেক্টেড নরসিংহপুর যে ফেরিঘাট আছে তার মাধ্যমে। নরসিংহপুর ঘাট থেকে ফেরিতে করে চাঁদপুর দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে চট্টগ্রাম। চাঁদপুর প্রান্তেও চার লেনের রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি সুখবর হচ্ছে মেঘনায় আরেকটি সেতু করার জন্য একনেক সভায় আড়াই শ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু, মেঘনা সেতু আর মাঝখানে চার লেনের রাস্তা হলে বাংলাদেশের যেকোনো বন্দরেই যাওয়া যাবে শরীয়তপুরের ওপর দিয়ে।
‘বিশেষ করে বেনাপোল, মোংলা ও চিটাগাং- এই তিন পোর্টের কানেক্টিং রাস্তা হবে শরীয়তপুরের বুকের ওপর দিয়ে। তখন কেউই কিন্তু ঢাকা ঘুরে চিটাগাং যাবে না। তখন শরীয়তপুরকে দেখতে হংকং বা সিঙ্গাপুরের মতো মনে হবে। এটা হলে শরীয়তপুরের রাস্তা ও ভূমি অটোমেটিক্যালি ডেভেলপ হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান মনে করেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মার দুই পাশেই চীনের হংকং-সাংহাইয়ের মতো শহর গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমার মনে হয়, পদ্মার দুই পাশেই হংকং-সাংহাইয়ের মতো শহর গড়ে উঠবে। সেখানে বড় বড় শহর হবে, বড় বড় রিসোর্ট হবে। এখানে যদি আমরা প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করি, তাহলে ঢাকার যে ডিমান্ড, সেটা ওই খানেই পূরণ করা যাবে। সেজন্য আমাদের একটা মেগা পরিকল্পনা থাকা উচিত, যে আমরা কীভাবে ওই এলাকা সাজাব।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্যতার বড় জায়গাটায় না গেলাম, সর্বনিম্ন সমীক্ষাটিও যদি গ্রহণ করি তাহলেও দক্ষিণ বাংলার যে ২১টি জেলা আছে সেখানে ২ শতাংশ জিডিপি বাড়বে। আর পুরো দেশের জিডিপি কম করে হলেও ১ শতাংশ বাড়বে, এর বেশিও বাড়তে পারে।’
‘এটাই হলো আমাদের পদ্মা সেতু, যা বাংলাদেশের সক্ষমতা, সমৃদ্ধি, অহংকার ও সাহসের প্রতীক, যার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর মনে করেন, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে ‘যে বিস্ফোরণ’ ঘটেছিল তার চেয়েও ‘বড় বিস্ফোরণ’ ঘটাবে পদ্মা সেতু।
তিনি বলেন, ‘যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে বিপুল বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। পদ্মা সেতু চালুর পর অর্থনীতিতে তার চেয়েও বড় বিস্ফোরণ ঘটবে।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার কানেকটিভিটি বেড়ে যাবে, যার কারণে সেখানকার কৃষি খাত বেগবান হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতে বিপ্লব ঘটবে। দ্রুত পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় সারা দেশে বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে শিক্ষাব্যবস্থায়।
‘এ ছাড়া কুয়াকাটা, সুন্দরবন ও বঙ্গবন্ধুর সমাধি ঘিরে পর্যটন খাত বিকশিত হবে। অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ তখন টুঙ্গিপাড়া, ষাটগম্ভুজ মসজিদ, কুয়াকাটাসহ নদীর ওই পারে যেতে পারবে। হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠবে। মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দরেও এনার্জি হাব হবে। ওই এলাকায় অনেক শিপ বিল্ডিং প্রতিষ্ঠান হবে। এসব শিল্পের জন্য যদি আমরা আলাদা করে প্রণোদনা দিই, তাহলে সার্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে উল্লম্ফন ঘটবে।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘এখন জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের যেসব মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকামুখী হয়েছে, তারা এলাকায় ফিরে যাবে এবং সেখানেই উৎপাদন, সেবা ও বাণিজ্যমুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে। এসবের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপিতে।’
পদ্মা সেতুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ও প্রকৌশলী ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। মৃত্যুর কিছুদিন আগে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা ও বাস্তবতা নিয়ে লিখেছিলেন তিনি।
তিনি লিখেছেন, ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে বাংলাদেশজুড়ে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। তখন পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে শুধু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই আমূল বদলে যাবে। এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী লিখেছেন, ‘এই পথটি ট্রান্স-এশীয় রেলপথের অংশ হবে। তখন যাত্রীবাহী ট্রেন যত চলবে, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি চলবে মালবোঝাই ট্রেন। ডাবল কনটেইনার নিয়েও ছুটবে ট্রেন। তখন পুরো দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।’
ড. জামিলুর রেজা বলেছিলেন, ‘কোনো বিনিয়োগের ১২ শতাংশ রেট অফ রিটার্ন হলে প্রকল্পটিকে আদর্শ বিবেচনা করা হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে বছরে ১৯ শতাংশ করে বিনিয়োগ উঠে আসবে।’
‘পদ্মা সেতু বাঙালির স্পর্ধার সমান’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান মনে করেন, পদ্মা সেতু বাঙালির স্পর্ধার সমান, সাহসের সমান একটি স্থাপনা।
নিউজবাংলার কাছে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর জেলার যে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, সেটি হচ্ছে সোনালি সেতুর শ্যামলভূমি শরীয়তপুর। সেতুর কারণে শরীয়তপুরে সোনা ফলবে- সেই প্রত্যাশাই আমাদের।’
তার মতে, পদ্মা সেতু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম সর্বোচ্চ শিখরে উত্তীর্ণ হওয়ার কারণেই। শুধু দেশের প্রয়োজনেই তিনি তার স্পর্ধিত পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাই পদ্মা সেতু আজ পদ্মা নদীর বুক চিড়ে দাঁড়িয়ে।’
এগিয়ে নেবে মৃৎশিল্প ও পিতল শিল্পকে
স্থানীয় কয়েকজন নিউজবাংলা টিমকে জানান, শরীয়তপুর অনেক আগে থেকেই মৃৎশিল্প ও পিতলের জিনিসপত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানকার টেরাকোটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পটারি ইউরোপসহ বিশ্বের ২০টি দেশে যায়।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মনে করেন, পদ্মা সেতু এই দুই শিল্পকে আরও এগিয়ে নেবে। এর বাইরে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে কৃষি খাতে, বিশেষ করে কালো জিরা, ধনিয়া ও কাঁচা মরিচের।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনা
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণে নড়িয়া উপজেলা ও চাঁদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী, নদীর পাড় ও চরগুলো পর্যটন শিল্পের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুর্দান্ত সম্ভাবনা আছে আমাদের পর্যটনের ক্ষেত্রে। পদ্মা সেতু দেখার জন্য প্রচুর মানুষ আসবে। শরীয়তপুর থেকে জাজিরার দিকে যেতে ডান পাশে রূপবাবুর হাট বলে চমৎকার একটি জায়গা আছে, যেটি জলমহাল হিসেবে ইজারা দেয়া হয়। এ বছর ইজারা শেষ হবে। এটি মূলত পদ্মার একটি চ্যানেল, যেটি মারা গেছে।
‘আমাদের পরিকল্পনা আছে এটির দুই পাড় বাঁধাই করে একটি ফাইভ স্টার হোটেল করার। সেখানে গলফ খেলার মাঠ হতে পারে। এত সুন্দর একটি তট তৈরি হয়েছে, যেখানে ওয়াচ টাওয়ারও করা যেতে পারে সেতু দেখার জন্য। ওখান থেকে মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার কানেক্টিভিটি রয়েছে। এই অঞ্চল চর ট্যুরিজমের জন্য খুবই উপযোগী। নদীপথে যদি আমরা রিভারক্রুজের ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে দর্শনীয় একটি পর্যটন স্পট হতে পারে।’
জেলা প্রশাসক জানান, জাজিরা প্রান্তে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম হতে পারে। কারণ ঢাকা থেকে বিকেএসপি যেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে জাজিরায় আসতে কম সময় লাগবে। শরীয়তপুর জেলা স্টেডিয়াম আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এটিও আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচের জন্য অনুশীলন ভেন্যু হতে পারে। এটা করা গেলে এখানে হোটেল-মোটেল তৈরির সম্ভাবনা জেগে উঠবে। পদ্মা সেতুর সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শরীয়তপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা যায় কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা চলছে।
শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি ইউনিভার্সিটি হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে বেশকছিু হিমাগার হচ্ছে জাজিরা রোডে। পদ্মা সেতুর সুবিধা কাজে লাগিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে যারা শিল্প-কারখানা করতে চান, তাদের সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।
পদ্মা পাড় দিয়ে রিভার ড্রাইভ
জেলা প্রশাসক পারভেজ নিউজবাংলাকে আরও জানান, গোসাইরহাট থেকে শুরু করে জাজিরা পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাশ দিয়ে রিভার ড্রাইভ হবে। ইতিমধ্যে নড়িয়ার অংশে হয়ে গেছে। নড়িয়ার যে রাস্তাটা করা হয়েছে সেটাকে জাজিরা পর্যন্ত নিয়ে আসার চিন্তা-ভাবনা চলছে। মোটরসাইকেল নিয়ে যে ছেলেটি পদ্মা সেতু পার হলো সে আর শরীয়তপুরে না গিয়ে রিভার ড্রাইভ দিয়ে সরাসরি গোসাইরহাটে চলে যেতে পারবে।
জমির দাম বেড়েছে ১০ গুণ
শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাতে নজিরবিহীন উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। সখিপুর থানা উপজেলা হচ্ছে। এই জনপদের চরাঞ্চলেও বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শরীয়তপুরের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ মুন্সিগঞ্জ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কার্তিকপুর, ব্রজেশ্বর ও চরসেনসাসে হচ্ছে বিদ্যুতের সাবস্টেশন।
তিনি জানান, মেঘনা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। চার লেনের রাস্তা হচ্ছে। এসব উন্নয়নের কারণে এই এলাকার জমি আগের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। এখন এক শতাংশ জমির দাম উঠেছে ৩-৪ লাখ টাকা, যেখানে আগে কেউ এখানে জমি কিনত না। পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই কুর্নিশ করছে বলে মন্তব্য করেন এনামুল হক শামীম।
স্বপ্ন দেখছে নিম্ন আয়ের মানুষ
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ এই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন।
নড়িয়ার কেদারপুরের কালাচান ব্যাপারী পেশায় কাঠমিস্ত্রি। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মার দক্ষিণ পার থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া অনেক সহজ হবে। আগে ৫ ঘণ্টা লাগছে। সেতু চালু হইলে কম লাগব। মিল-কারখানা হইলে আমাগো তো সুবিধা হবেই।’
মুলফতগঞ্জের বাবুল খাঁ প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মায় ডিঙি নৌকায় করে মাছ ধরেন। সেই মাছ বিক্রির টাকায়ই চলে সংসার। তিনি মনে করছেন, পদ্মা সেতু হলে ঢাকার মানুষ আসবে মাছ কিনতে। তাদের কাছে বেশি দাম পাবেন।
আরও পড়ুন:অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।
বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।
এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য