পদ্মা সেতু শুধু একটি যোগাযোগের বড় মাধ্যম নয়, এটা এক আবেগ ও ভালোবাসারও নাম। এটা টেকনিক্যালই চ্যালেঞ্জিং ছিল বাংলাদেশের জন্য। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও বটে।
এ এলাকার ভৌগোলিক অবস্থাও একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশে রূপান্তরকামী একটা চেতনা। বলতে পারি, পদ্মা সেতু দেশ রূপান্তরকারী একটি প্রকল্প, এটা এখন সক্ষমতার প্রতীক।
আমাদের একটা প্রবণতা ছিল- কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দাতাদের দিকে তাকিয়ে থাকা। এ প্রকল্পে কিন্তু সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে মনে হয়। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা কতটা এগিয়েছি সেটার পরিচয়ও সেতুটি বহন করে।
এর নির্মাণকৌশল ও প্রযুক্তিগত দিক দেখতে গেলে বিজ্ঞানের আশীর্বাদই সামনে ভেসে ওঠে। আমরা যদি দেশের উল্লেখযোগ্য একটি স্থাপনা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দিকে তাকাই, তবে দেখতে পাব সেখানে ট্র্যাডিশনাল প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটেছে। লোহা, নাট-বল্টু ব্যবহৃত হয়েছে। ওই সেতুটার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সময়-অর্থ ও জনবলের প্রয়োজন হয়। নাট-বল্টু ও রেবেটিং থাকলে সেগুলো ঘন ঘন পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। সেতু যত পুরোনো হতে থাকে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা খরচও তত বাড়তে থাকে।
পদ্মা সেতুতে এ সবের দরকার হচ্ছে না, একটি অভিনব ও চমৎকার ব্যবস্থার প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই। এতে কোনো নাট-বল্টু ও রেবেটিং নেই, সম্পূর্ণটা ওয়েল্ডেড বা ঝালাই করা এবং এতে কেমিক্যালের কঠিন একটা স্তর দেয়া হয়েছে, যে কারণে জং বা মরিচা ধরার কোনো সুযোগ নেই, আর ওজনটাও বেশ হালকা-পাতলা।
সাধারণত আমাদের ব্রিজগুলোয় কংক্রিট ব্যবহৃত হয়। যেসব ব্রিজে লোহার রড থাকে সেগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়; তবে এ দ্বিতল সেতুতে দুটিরই ব্যবহার আছে। এমনভাবে এটি নির্মিত যে ভূমিকম্পেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা এটাকে একটা কম্পোজিট ব্রিজও বলতে পারি। অবকাঠামোগতভাবে এটা বাংলাদেশের জন্য এক অসাধারণ অনন্য স্থাপনা।
যেসব স্থাপনায় রড ব্যবহৃত হয় সেখানে পানি পেলে রড ফুলে যায় এবং ক্ষয় হতে থাকে, সঙ্গে থাকা অন্য উপাদানেরও ক্ষতি করে থাকে। সে জন্য সেগুলোর স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে মোটামুটি ১০০ বছর ধরা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে সেখান থেকে জানা জানা যায়, এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি।
আমরা বলতে পারি পদ্মা সেতু বাংলাদেশের একটি দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা। এছাড়া স্টিল ট্রাসের সেতু হওয়ায় এটি পুনর্ব্যবহার যোগ্য (Recyclable)। কংক্রিট ব্রিজ পুনর্ব্যবহার করা যায় না বরং ডেমোলিশন একটি বড় চ্যালেঞ্জ ও পরিবেশ দূষণকারী ব্যাপার। সে বিবেচনায় পদ্মা সেতু একটি পরিবেশবান্ধব সবুজ উন্নয়ন।
রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে আমরা সেতু বা স্থাপনার ক্ষতি সাধনের পরে সেটা দেখতে বা জানতে পারি। তবে এটার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ক্ষতি বা সমস্যা হওয়ার আগেই সেটা জানা সম্ভব।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এ ব্রিজের মধ্যে যে উন্নত ইলোকট্রনিক প্রযুক্তির মনিটরিং সেল ও সেল্ফ সেন্সর রয়েছে সেটি জানান দেবে এ স্থাপনাটির স্বাস্থ্যগত কোনো পরিবর্তন ঘটছে কি না। কোন জায়গায় কতটুকু চাপে আছে? ভূমিকম্প বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে কি না তা জানান দেবে। সংগত কারণেই এটার নির্মাণকৌশল ও প্রযুক্তিগত কারণে একে টেকসই করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখেবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি এবং আমার বিশ্বাস, যে প্রযুক্তি ও কৌশল পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা হলো- তাতে এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি হবে।
ভবিষ্যতে প্রমত্ত পদ্মার গতিপথে যদি পরিবর্তন ঘটে বা সেতুর নিচে মাটির স্তরের হেরফের হয় তাতেও সমস্যা নেই। মনে রাখা দরকার, অতীত বলে নদী কখনও শাসন মানে না। যতই আমরা চেষ্টা করি ব্রিজের নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহ ও গতি ঠিক রাখতে, তা সম্ভব নয়।
নদী নতুন গতিপথ সৃষ্টি করে, এটা এর স্বভাব; নতুন চরও তৈরি করে। নদীভাঙনের লক্ষণ দেখা দিলে আগেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আমাদের যমুনা সেতুতে যেসব গাইড দেখছি সেসব কিন্তু অনেক সময় টিকছে না।
অপরদিকে নদীর পলি মাটি বেশ ভঙ্গুর। নদীর গতি-প্রকৃতি সহজে বোঝা যায় না। যতটুকু বোঝা যায় ততটুকু হয়তো শাসন করা গেল, কিন্তু তার চরিত্র বদলাবে না। নদীশাসনের পরপরই প্রয়োজন হবে নিবিড় নজরদারি। সেতুর নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা হয়তো করা গেল। অনেকগুলো পিলারে পানি বাধা পাবে এটাই স্বাভাবিক। এতে কী হবে? নদীর তলদেশের মাটি ক্ষয় হবে ক্ষরস্রোতের কারণে। যে চাপটা আসবে তাতে নদী রাগান্বিত হবে এর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শাসন মানবে না, ইতিহাস এটাই বলে। প্লাবনভূমির নদীগুলোর শাসনব্যবস্থা ও প্রকৌশলগত দিকে আমরা এখনও পরিপক্ব হতে পারিনি।
পদ্মা সেতুর বিষয়ে এমন আশঙ্কা নেই। সেতু যেহেতু ভূমিকম্পরোধক ও পিলারগুলো নদীক্ষয়ের স্তর থেকে অনেক গভীরে প্রোথিত সেহেতু আমরা আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিতে পারি।
আরেকটি ইতিবাচক প্রসঙ্গ এখানে তুলে ধরতেই হয়। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামোগত অভূত পরিবর্তন দেখা দেবে। সেটা হবে একটু দ্রুতগতিতে। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পরে সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরাঞ্চলের পরিবর্তন ঘটেছে বটে, তবে একটু ধীর গতিতে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ঢাকার কাছে হওয়ায় এর পরিবর্তন হবে দ্রুত।
এক সময় খুলনা কিন্তু শিল্পাঞ্চল ছিল। সেখানে একটা সমুদ্রবন্দরও আছে, মংলা। কিছু অবকাঠামোগত ঘাটতি ও সমস্যার কারণে ওই এলাকাটি একটু পিছিয়ে যায়। যেমন, সরাসরি যোগাযোগের অভাব আর ফেরির যে বাধা; তা পরিবহন বা যোগাযোগবান্ধব নয়। যে কারণে বিনিয়োগটা ওই এলাকায় যায়নি। এর ওপর বড় বেশকিছু জনবল ঢাকায় কর্মসংস্থানের জন্য আসায় রাজধানীর ওপর চাপ বেড়ে যায়।
পদ্মা সেতুর কারণে চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ওই অঞ্চলের বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজনীয় শিল্প, কলকারখানা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হবেন। ফিনিশিং প্রডাক্ট রপ্তানি বা বাজারজাতকরণে ওই মংলা পোর্টও বড় ভূমিকা রাখেবে। ওই অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক জনবলের কারণেও শিল্প-কারখানাগুলোর দ্রুত প্রসার ঘটবে বলে আশা করা যায়।
এসব কারণে আমি বলব একটা অর্থনৈতিক উদ্দীপনা তৈরি হবে। ওই অঞ্চলে সামাজিক, অর্থনৈতিক- সর্বোপরি মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগে পরিবর্তন ও সম্পূরক অবকাঠামোগত পরিবর্তন হবে। দেশে এখন অনেক বড় উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী আছেন, যারা এই বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ ও সম্ভবনা দেখে সেখানে বিনিয়োগ বাড়াবেন।
আমাদের বড় মাপের অর্থনীতির জন্যে দরকার বড় করপোরেট। দেশি-বিদেশির পাশাপাশি ছোট ব্যক্তি উদ্যোক্তাকেও বিনিয়োগের পরিসর পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে রূপরেখা করে দিতে হবে। তা না হলে বিশৃঙ্খলভাবে ছোটখাট কলকারখানা, সাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠবে। সেগুলো অবশ্যই উন্নয়ন, তবে এলোমেলো। প্রয়োজন পরিকল্পিত উন্নয়ন।
উন্নয়ন হবে তবে এটাকে গাইড করে মাত্রা ঠিক করে দিতে হবে। নইলে এলোমেলো উন্নয়ন পরবর্তী সময়ে একটা সমস্যা সৃষ্টি করবে। হয়তো এর পুরোপুরি সুফল আমরা পাব না, এজন্য সরকারের মনিটরিং বাড়ানোর আগে একটা রূপরেখা বা মাস্টার প্ল্যান করলে এর রিটার্ন আমরা পেতে পারি।
আরেকটি বিষয় আমাদের মাথায় রেখে এগোতে হবে। পদ্মা সেতুর করিডরের দুইপ্রান্তের প্রবেশদ্বারে জনজট ও যানজটমুক্ত রাখার বিষয়ে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ রাখা জরুরি। দুই পাড়ের মানুষই দীর্ঘদিন দীর্ঘ সময় ও পথ পাড়ি দিতে অভ্যস্থ ছিল। এখন দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দেবে ১৫ মিনিটে। মানুষ শুধু সেতু পার হবে না, তারা যাবে নিজেদের গন্তব্যে। সেটা ঢাকার দিকে বা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলই শুধু নয়, বিভিন্ন এলাকায় হবে। সময় হয়তো বাঁচবে, তবে যেখানে গিয়ে যানবাহন নামবে সেখানে যানজট হবে এটা স্বাভাবিক।
একটি বিশ্বমানের ব্রড ব্যান্ড সার্ভিস চালু হলো। এতদিন ছিল লোকাল সার্ভিসের চেয়েও খারাপ একটি ফেরি সার্ভিস। এ অবস্থায় ব্রিজের উপযোগিতা বাড়বে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভাবনার বিষয় হলো, ঢাকার প্রবেশদ্বার কিন্তু প্রস্তুত নয়। যানজটটা রাজধানীর মধ্যে থেমে থেমে বা বিচ্ছিন্নভাবে হয় বা হচ্ছে, পদ্মা সেতু পারাপারের পর সেসব বাহন পড়বে দীর্ঘ যানজটে। সেসব যে প্রবেশ পথ দিয়েই ঢুকুক সেটা বছিলা বলি, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুই বলি আর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হোক; সেসব জায়গায় যানজটের হট-স্পট হবে।
পদ্মা সেতু নতুন বাস ট্রানজিট তৈরি করবে। ঢাকার অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তাগুলো বেশ সরু। ঢাকায় যারা ঢুকবে, তারা যানজটের বিড়ম্বনায় পড়বে। রাজধানীর বাইরে থেকে যেকোনো যানবাহন যখন প্রবেশ করবে তখন একটা চাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ঢাকার নেটওয়ার্কও কিন্তু প্রস্তুত নয়। যারা ঢাকা থেকে বের হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাবে তারা তুলনামূলকভাবে একটু লাভবান হবে, যানজটে না পড়ায় সময় সাশ্রয় হবে। তবে রাজধানী বা এটা দিয়ে অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছানোর রাস্তাগুলো বেশ সংকীর্ণ হাওয়ায় তারা যানজটে পড়বে।
ঢাকার মধ্যে যে যানজট বাড়বে এটা মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনার দরকার ছিল, যেটা এখনও হয়নি। যানজট কমাতে অতিরিক্ত গাড়ি প্রবাহের চাপ বিলি-বণ্টন করতে অবশ্যই রিং-রোড বা বৃত্তাকার এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে হবে। ব্যবহারকারীরা সম্পূরক রাস্তা না পেলে এর সুফল পুরোপুরি পাবে না। তখন একটা প্রশ্ন সামনে আসতে পারে- এটা সমন্বিত উন্নয়ন হলো কি না!
আমার পরামর্শ হলো, করিডরের সড়কপথে আমরা ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। ট্রান্সপোর্ট করিডর হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান মেরুদণ্ড, এই ট্রান্সপোর্ট করিডরের মহাসড়কের পাশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া তৈরি করলে বড় সুবিধা হবে- পণ্য কোনো যানজট ছাড়াই বহন করে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। অর্থাৎ সড়কের দুপাশে আধা বা এক কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারি। এতে কাঁচামাল ও তৈরি পণ্য সহজেই গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।
আমরা বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়াই বিশ্ব অর্থনীতি বা বিশ্ববাজারের সঙ্গে নিজেদের আরও সংযুক্তি বাড়াতে পারব তখন, যখন সময় ও খরচ কমাতে ট্রান্সপোর্ট করিডরকে রূপান্তর করে অর্থনৈতিক করিডরে আনতে পারব। এতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে উন্নীত হতে পারব দ্রুত। এ ব্যাপারে সরকার যদি চুপ করে থাকে সেক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে এলোমেলো।
আমরা দেখেছি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে যেসব আবাসন ও স্থাপনা গড়ে উঠেছে সেসবে শৃঙ্খলা নেই। আমরা প্রত্যাশা করছি অদূর ভবিষ্যতে ট্রান্সপোর্ট করিডরকে ইকোনমিক করিডরে রূপান্তর করা হবে, এতে সরকারও আত্মপ্রসাদের আনন্দ পাবে। এমনটা ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম করছে ও থাইল্যান্ড করে ফেলেছে।
লেখক: পরিবহন বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, ভালোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রাকসু ও চাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাকসু ও চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা দেশের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শুধু দেশেই না বিদেশেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা ভোট দেবে তারাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করলাম। যেহেতু আমাদের একটা জাতীয় নির্বাচন আছে ফেব্রুয়ারিতে, এই নির্বাচনগুলো দেখে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা আমরা জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারবো সেজন্য আজকে বসেছিলাম।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আজ ভালো ভালো সাজেশন দিয়ে গেছে। সেই সাজেশন আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাদেরও উপকার হয়েছে। যেহেতু দুইটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে কী করতে হবে, ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় তারা কোনো ধরনের শঙ্কার কথা জানায়নি।
আজকের সভায় কি ধরনের সাজেশন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তারা বলেছে- কতগুলো সেন্টার হওয়া দরকার, ভোট গণনা কীভাবে হবে, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত ফল ঘোষণার জন্যও কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আলোচনা হয়েছে। ভোটারদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা যেন স্বচ্ছ থাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শনাক্ত হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বা কোন বিষয়গুলো কাজ করেনি, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আজকের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পবিত্র রমজানের কারণে ২০২৬ সালের অমর একুশে বইমেলা চলতি বছর ১৭ ডিসেম্বর শুরু হবে। মাসব্যাপী এই মেলা শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি।
আজ বিকেলে বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে অমর একুশে বইমেলা সংক্রান্ত এক সভায় এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন, সংস্কৃতি সচিব মো. মফিদুর রহমান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, একাডেমির সচিব, পরিচালকবৃন্দ এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ।
সোনালী আঁশ পাটের আবাদে কয়েক বছর ধরে চাষিরা লোকসানে পড়লেও এ বছর দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মূল্য না পাওয়া, মানসম্মত আঁশ সংগ্রহের প্রতিবন্ধকতা এবং রপ্তানি বাজার সংকটের কারণে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৭ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ও আঁশের মানহানি নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা থামছে না।
কৃষকেরা জানান, মুক্ত জলাশয়ের অভাবে পাট জাগ দিতে হচ্ছে ডোবা বা পুকুরের মতো বদ্ধ জলাশয়ে। এতে আঁশের মান কমে যাচ্ছে। রঙের পার্থক্য ও আঁশের তারতম্যের কারণে বাজারে সবসময় কম দাম পান তারা। ফলে ভালো ফলনের আশার মধ্যেও শংকা রয়েছে ন্যায্যমূল্য নিয়ে।
সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দীন তিন বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখনও এক বিঘার পাটও কাটতে পারিনি। শ্রমিক মজুরি জনপ্রতি ৬০০ টাকা। বাজারে এক মন শুকনো পাটের দাম ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার পাঁচশ টাকা। কৃত্রিম উপায়ে জাগ দিতে গেলে জমিতে পলিথিন বিছাতে হয়, শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি তুলতে হয়। এত খরচ করলে বিক্রির টাকা দিয়ে খরচই ওঠে না। তাই নদীতে জাগ দেওয়ার অনুমতি চাই।’
তেতুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জিয়াউল হকও একই সঙ্কটে আছেন। চার বিঘা জমিতে পাট করেছেন, পাশে চার কাটা জমিতে আমন ধানের চারা রয়েছে। তিনি জানান, ‘সময়মতো পাট কেটে জাগ দিতে না পারলে ধান রোপণ সম্ভব হবে না। আশপাশের পুকুরে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই আমরা নদীতে জাগ দেওয়ার অনুমতি চাই।’
কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, মানসম্মত পাট উৎপাদনে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা না পাওয়ায় তারা সমস্যার সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না। কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও লোকসানের শঙ্কায়।
মেহেরপুরের পাট ব্যবসায়ী কাউছার আলী জানান, ‘গত বছরের পাট বিক্রি করতে না পেরে গোডাউনে ভর্তি করে রেখেছি। ভারত কাঁচাপাট আমদানি বন্ধ করায় রপ্তানির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন বাজার তৈরি না হলে আমাদের বড় ক্ষতি হবে।
আরেক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, ‘কৃষকেরা এবছর তুলনামূলক ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে আমরা গত বছরের তুলনায় বেশি দামে পাট কিনতে বাধ্য হচ্ছি। যদি নতুন বাজার তৈরি না হয়, কৃষকেরা এ চাষ থেকে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন।’
জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আ ক ম হারুন কৃষকদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘নদী ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। কৃষকদের মানসম্মত পাট উৎপাদনে আমরা সহযোগিতা করছি এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’
শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড়ের রসাল মিষ্টান্ন টোপা। খেতে যতটা সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ হওয়ায় বেড়েই চলেছে এর চাহিদা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টোপা ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। রংপুর বিভাগের উত্তরের জেলা হিমালয় কণ্যা পঞ্চগড়। সদর উপজেলার ৮নং ধাক্কামারা ইউনিয়নের মিরগড় বাজার এই জেলার ঐতিহ্যবাহী টোপা তৈরি করে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোজন রসিকরা ভীড় জমান। বিশেষ করে শুক্রবার ও সন্ধার পরে জেলার অন্যান্য জায়গা থেকে খাওয়ার জন্য আসেন অনেকেই। ঐতিহ্যবাহী টোপা প্রতি পিচ মূল্য ১০ টাকা করে। সেখানে চিনি ও গুড়ের তৈরি দুই ধরনের টোপা পাওয়া যায়। টোপা ব্যবসায়ী এনামুল সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘আমি এই ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছি দীর্ঘদিন থেকে। অন্য কোথাও টোপা তৈরি হয় না শুধু আমাদের এই মীরগড় বাজারের তৈরি হয়, তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে এই টোপা খেতে আসেন ভোজন রসিকরা।’
পর্যটক সুকন্যা দে পুজা তিনি জানান, ‘আমি ঠাকুরগাঁও থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি এরপর জানতে পারলাম মীরগড় বাজারে এই জেলার ঐতিহ্যবাহী টোপা খেতে সুস্বাদু তাই টোপা খেতে এসেছি আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যরা।’ ক্রেতা মো. ওমর ফারুক বাপ্পির সাথে কথা বললে তিনি জানান, পৌর শহর থেকে টোপা খেতে এসেছি, সময় পেলেই টোপা খেতে এই বাজারে আসি।’
ময়মনসিংহে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিয়োজিত চিকিৎসক, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক মালিকদের নিয়ে ‘স্বাস্থ্য ইউনিটি’ নামের সংগঠন করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে নগরীর চরপাড়া এলাকায় সংগঠনটির প্রথম মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি শামীম আহম্মেদের সভাপতিত্বে জমকালো এই আয়োজনের শুরুতেই অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা মনসুর আলম চন্দন। এছাড়া ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাবেক বিভাগীয় সম্পাদক এম.এ মোতালেবসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। নেতারা বলেন, ‘স্বাস্থ্য ইউনিটি’ শুধু একটি সংগঠন নয়, বরং এটি হবে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংগঠনটি ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আরও বলা হয়, সংগঠনটির লক্ষ্য একত্রে কাজ করা এবং সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করা। এ জন্য সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ সবাইকে সাথে নিয়ে সংগঠনের নেতারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়।
এ সময় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ও স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে এবং এই আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিক মতভিন্নতার শান্তিপূর্ণ সমাধান আসবে।
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে প্রেস সচিব ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমেই সবকিছুর সমাধান হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম জানান, চলতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেবেন। তিনি স্পষ্ট করেন, এই সফর বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো মধ্যস্থতা বা আলোচনার জন্য নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, ‘তারা সরকারের অংশীদার হিসেবে এ ধরনের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে অংশ নিচ্ছেন।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের যৌথ মহড়া ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫–৩থ-এর অংশ হিসেবে ইনক্যাপ সিরিমনি। বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের ওই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক-এর এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল হায়দার আব্দুল্লাহ। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রতিবছর দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এ বছর বিদেশে বেশ কয়েকটি মহড়া সম্পন্ন হয়েছে, আর এটাই ছিল চলতি বছরের শেষ মহড়া। এ মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি অর্জন করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমেরিকান বিমান বাহিনীর দেওয়া অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের টেবিল, অপারেশন লাইট, এয়ার কন্ডিশন, জেনারেটর, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র এবং অপারেশন থিয়েটারের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর মিশন কমান্ডার মেজর জুদাহ বলেন, ‘আমরা এ কার্যক্রমে বিশেষভাবে নারী ও শিশুস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েছি। এ অঞ্চলের মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুসেবা আরও উন্নত করতে এসব সরঞ্জাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এ ধরনের মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে আনোয়ারার মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বেছে নেওয়া নিঃসন্দেহে স্থানীয় মানুষের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। এখানে স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র টিমের সিনিয়র সদস্য কার্নেল অ্যান্ড্রু ব্রি, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধি মেজর গ্রিন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যসহ দুদেশের বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য