বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সড়কযাত্রায় ঘুঁচবে ফেরিঘাটের ভোগান্তি। সেতু উদ্বোধনের আগের দিন মাঝিরকান্দি থেকে ছেড়ে আসা শেষ ফেরিতে প্রাণ হারালেন বৃদ্ধা আমেনা বেগম। সেতু উদ্বোধনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আমেনা পদ্মা পারাপারের সময় প্রাণ হারানো হতভাগ্য মানুষের তালিকায় আরও একটি সংখ্যা যোগ করলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে উদ্বোধনের পর রোবরার ভোরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। এর আগের দিন শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় প্রশাসন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুর উদ্বোধন কেন্দ্র করে শনিবার রাত পর্যন্ত এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে কয়েক দিন ধরে পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে প্রতি রাতেই ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। একই অবস্থা শনিবার রাতেও থাকলে যান চলাচলের জন্য রোববার ভোরে সেতু খুলে দেয়ার আগে শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি নৌরুটে আর ফেরি চলাচলের সম্ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে মাঝিরকান্দি থেকে ছেড়ে আসা এবং শিমুলিয়ায় পৌঁছে আবার মাঝিরকান্দির উদ্দেশে যাত্রা করা ‘কুঞ্জলতা’ হবে সেতু খুলে দেয়ার আগে শেষ ফেরি।
আর এই শেষ ফেরিতেই শেষ নিঃশ্বাস পড়ল ৭০ বছর বয়সী আমেনা বেগমের। সুচিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসছিলেন স্বজনেরা। তবে পদ্মা পাড়ি দেয়ার সময় মাঝনদীতেই কুঞ্জলতা ফেরিতে প্রাণ হারান তিনি। একই ফেরিতে তার নিষ্প্রাণ দেহ নিয়ে বরিশালের পথ ধরেছে অ্যাম্বুলেন্স।
স্বজনেরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে স্ট্রোক করায় আমেনার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন।
গুরুতর অসুস্থ আমেনাকে নিয়ে শুক্রবার সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তার বড় মেয়ে ও স্বজনেরা। সেনাবাহিনীতে কর্মরত আমেনার ছেলে ঢাকায় সিএমএইচে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। বেলা ৩টার দিকে মাঝিকান্দি ঘাটে পৌঁছে সময়মতো ফেরিও পেয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তবে ফেরি মাওয়া প্রান্তের কাছাকাছি এসে পাড়ে ভেড়ার আগেই মারা যান আমেনা।
দিনের শেষ ফেরি হওয়ায় কুঞ্জলতাতেই আবার ফিরতি পথ ধরে অ্যাম্বুলেন্সটি।
আমেনার ভাতিজা শাওন মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ফুপু রাতে স্ট্রোক করার পর জরুরি ভিত্তিতে সকালে ঢাকায় উদ্দেশে রওনা হই। ফেরি পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এভাবে মাঝনদীতে তিনি চলে যাবেন আমরা বুঝিনি।’
এমন ঘটনায় হতবাক অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. আল আমিন। আক্ষেপ করে বলেন, ‘এত তড়াহুড়া করে গাড়ি চালিয়ে আসলাম, গাড়ির পর গাড়ি ওভারটেক করলাম, পুরো রাস্তায় আল্লাহ আল্লাহ করে গেলাম যেন ফেরি পেতে সমস্যা না হয়। কিন্তু মানুষটারে হাসপাতালে পৌঁছায়ে দিতে পারলাম না।’
আমেনা প্রাণ হারানোর পর স্বজনদের আর্তনাদে কুঞ্জলতা ফেরিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফেরির কর্মীসহ অন্য যানবাহনের কর্মী ও যাত্রীরা অ্যাম্বুলেন্সটি ঘিরে ধরেন। ফেরির লস্কর নাজমুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো ফেরিতেই ওনার দম ছাড়ার কথা কপালে লেখা ছিল। ব্রিজ হয়ে গেছে, এখন আর অমন দৃশ্য দেহন লাগব না।’
পদ্মা পারাপারে ঝরেছে অসংখ্য প্রাণ
২০১৯ সালের ২৫ জুলাই। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত নড়াইলের কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স রাত ৮টার দিকে পৌঁছায় পদ্মার কাঁঠালবাড়ী প্রান্তের ১ নম্বর ফেরিঘাটে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য তিতাসকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনেরা।
তবে এটুআই প্রকল্পে কর্মরত যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাবেন বলে ফেরি আটকে অপেক্ষা করতে থাকে ঘাট কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর সবুর মণ্ডল ঘাটে পৌঁছালে ফেরি ছাড়ে। অ্যাম্বুলেন্সটিও ফেরিতে ওঠার সুযোগ পায়। তবে এরই মধ্যে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণে ফেরিতেই মারা যায় তিতাস।
তিতাতের মৃত্যুর ঘটনা আলোড়ন তোলে দেশব্যাপী। পরে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেনসহ তিনজনকে দায়ী করে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি। তাতে অবশ্য যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডলকে দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ঢাকার পথে যাত্রায় পদ্মার মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে যুগের পর যুগ দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। দুর্ভোগ অনেক সময়ে হয়েছে প্রাণঘাতী। পদ্মা পাড়ি দিতেও প্রাণহানি হয়েছে অসংখ্য।
শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌপথ। ঘরির কাঁটা ১৮ জুন মধ্যরাত পেরিয়ে সাড়ে ৩টা। শরীয়তপুরের জাজিরা অংশে পদ্মা নদীর টার্নিং পয়েন্টে তীব্র স্রোতের মাঝে বেগম সুফিয়া কামাল ও বেগম রোকেয়া ফেরির সংঘর্ষ।
এই দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় ৪০ বছর বয়সী পিকআপ ভ্যানচালক খোকন শিকদারের প্রাণ। খোকনের বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া থানার চিংবাখালী গ্রামে। পদ্মার দুই পারের মানুষ বলছেন, স্বপ্নের সেতু নৌযাত্রার বিভীষিকাময় এই অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটাতে চলেছে।
তারা বলছেন, সেতু চালু হওয়ার পরও স্থানীয়ভাবে চালু থাকবে ফেরি ও লঞ্চ পরিবহন ব্যবস্থা। তবে ঢাকা থেকে দক্ষিণের পথে যাত্রায় প্রায় সবাই ব্যবহার করবেন পদ্মা সেতু। ফেরি, লঞ্চ বা স্পিডবোটে বিপদসংকুল পদ্মা পাড়ির অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আর হতে হবে না।
এই পথে নদী পারাপারের সময়ে প্রাণ হারানো মানুষের সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও স্থানীয় নৌ-পুলিশের অনানুষ্ঠানিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে পদ্মায় বিভিন্ন নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। নিখোঁজ আছেন অনেকে।
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালের। সে বছরের ৪ আগস্ট আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে পদ্মায় ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ। সরকারি হিসাবে, দুর্ঘটনার পর ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ৬৪ জন। উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে ২১ জনকে মাদারীপুরের শিবচর পৌর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। গত আট বছরেও তাদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। হদিস পাওয়া যায়নি দুর্ঘটনার শিকার পিনাক-৬ লঞ্চটির।
গত বছরের ৩ মে কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে পদ্মা নদীতে যাত্রীবোঝাই স্পিডবোট বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। এতে তিন শিশুসহ ২৬ যাত্রী মারা যান। একই বছর মাত্র ১০ দিনের মাথায় ১২ মে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মা নদীতে একটি রো-রো ফেরিতে প্রখর রোদের তাপে পাঁচজন যাত্রী প্রাণ হারান। এনায়েতপুরী নামের ফেরিটি ঘাটে পৌঁছানোর পর জ্ঞান হারানো অর্ধশতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া প্রায় প্রতি বছর পদ্মায় স্পিডবোটে উল্টে বা দুটি স্পিডবোটের সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেছে। ট্রালারডুবিও হয়েছে অনেকবার।
শিবচর উপজেলার চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহানুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নৌ-দুর্ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। ছোট-বড় কোনো দুঘর্টনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিই। কোথাও নৌপথে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নিই। এর বাইরে তেমন কিছু করার নেই।’
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মাসুদ পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা পারাপারের সময় কত যে মায়ের বুক খালি হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। চরম ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিয়ে এতদিন ধরে এই রুটে যাত্রীরা চলাচল করছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু স্বজনহারাদের দুঃখ কিছুটা হলেও ঘুঁচাবে।’
মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা ছিল। এ কারণেই বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পদ্মা সেতুর কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমে আসবে।’
আরও পড়ুন:৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য