এ যেন এক যুদ্ধ। তাদের কোনো রাত-দিন নেই। শীত-বর্ষা-গ্রীষ্ম এমনকি রোদ-বৃষ্টিকে থোড়াইকেয়ার। নেই করোনা অতিমারিতে আতঙ্কনীল হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ। আছে শুধু কাজ শেষ করার অদম্য ক্ষুধা। স্বপ্নে সঞ্জীবিত কর্মীরা নিরলস, যেন ব্রতে ব্যাপৃত। স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে ইতিহাসের অংশ হওয়ার অঙ্গীকার সবার।
কারও চোখেমুখে নেই ক্লান্তির ছাপ। আছে আনন্দের ঝিলিক আর অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার বুকভরা সাহস। এইসব মেহনতি ঘাম ও নিষ্ঠার গাঁথুনিতে প্রমত্ত পদ্মাকে জয় করে প্রায় এক যুগে গড়ে উঠেছে গর্বিত বাংলাদেশের অহংকার দ্বিতল মহাসেতু।
এই সেতু চালু হওয়ায় ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভারসংলগ্ন গোলচত্বর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০-৪৫ মিনিট। সরকারের প্রত্যাশা, এই সেতু হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে।
ভায়াডাক্ট ছাড়া ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চার লেনে চলবে গাড়ি, এক বছর পর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুর তলদেশ দিয়ে বাংলাদেশে অনুমোদিত যেকোনো ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারবে অনায়াসে। সেতুর নিচতলা দিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের পাইপলাইন, যে লাইন দিয়ে গ্যাস পৌঁছাবে এই জনপদসহ আশপাশের অনেক জেলায়।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতু ও নদীশাসন কাজ উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি শুরু হয় নকশা ও পুনর্বাসন কাজ।
উপহাস আর ষড়যন্ত্রের কথা
দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাঙালি জাতির স্বপ্ন এখন বাস্তব। পদ্মা সেতু যাতে না হয় সে জন্য বিদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন দেশেরও অনেকে। কয়েকটি সংবাদপত্রে দিনের পর দিন পদ্মা সেতুর কল্পিত দুর্নীতি নিয়ে মনগড়া গল্প প্রকাশ হয়েছে। তবে এসব গল্প উড়িয়ে দিয়ে পাঁচ বছরের বেশি সময়ের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত বলেছে, এই মামলায় যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে, তা অনুমানভিত্তিক, গালগল্প এবং গুজবের বেশি কিছু নয়।
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপোড়েনের জের ধরে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। পরে নিজস্ব অর্থায়নেই বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে।
পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদার নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, এই সেতু নিয়ে ৯০ দশকের আন্দোলন এবং আন্দোলনের কারণে অনেক মানুষের টিটকারী, হাসি-তামাশার শিকার হওয়ার কথা। অনেকে তাকে পাগল হিসেবেও উপহাস করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে শরীয়তপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা খোকা শিকদার জানিয়েছেন, আন্দোলনের এই পুরো সময়ে ক্ষমতায় ছিল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি। তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। তারপর বিএনপি সরকার এসে সেটা ভেঙে ফেলে। তারপরের ইতিহাস সবাই জানেন। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা নিজেদের টাকা দিয়ে নিজেই পদ্মা সেতু করলেন।’
নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন কমিটির বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি, নানা ধরনের উপহাস আর ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ তোলেন শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা। যুক্ত হই ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদারের নেতৃত্বাধীন পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন কমিটিতে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এই সেতুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিই। সে সময় এই সেতুর কথা বলে আজকের বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা পর্যন্ত উপহাস করেছিলেন।
‘নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলেন পদ্মা সেতু ঠেকাতে। কিন্তু দেশপ্রেমে বলীয়ান শেখ হাসিনাকে কেউ দমাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নদী পার হয়ে জাজিরায় গেছেন। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য চষে বেরিয়েছেন এই জনপদ। আজ সেই নদীর বুক চিরে পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে যেন বঙ্গবন্ধুকেই কুর্নিশ করছে। এই সেতুর ফলে এখানকার জনপদে উন্নয়নের আলো ছড়িয়ে পড়েছে।’
প্রকল্পের কর্মীদের তথ্য
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা নিউজবাংলাকে জানান, ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি নকশা ও পুনর্বাসনের কাজ শুরুর সময়ই ৫০০ কর্মী ছিলেন। এরপর কাজের সঙ্গে বাড়তে থাকে কর্মী। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের সময় ১২০০ থেকে ২০০০ কর্মী ছিলেন।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে ২০ হাজার কর্মী কাজ করেছেন। এরপর কাজের চাপ কমে যাওয়ায় কর্মীর সংখ্যাও কমতে থাকে। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাসে সাড়ে ৪ হাজার কর্মী কাজ করছেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার জনই বাংলাদেশি। বাকি ৫০০ কর্মী ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের ২২টি দেশের নাগরিক।
দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, কলম্বিয়া, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নেপাল এবং আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া। বিদেশি কর্মী-কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে চীনের।
বিদেশিদের মাসিক বেতন সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা থেকে সর্বনিম্ন ৮০ হাজার। বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে শ্রমিক থেকে ফোরম্যান পর্যন্ত বেতন ছিল ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত।
দেশি-বিদেশি উপকরণ
পদ্মা সেতুর পিলার ও স্ল্যাব তৈরির জন্য স্টোন চিপ আনা হয়েছে দুবাই ও ভারত থেকে। যে রড, সিমেন্ট, বালু লেগেছে তার সবই দেশি। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, সেতু তৈরির প্রধান প্রধান উপকরণের মধ্যে বাংলাদেশের এমএস রড, বালু ও সিমেন্টই ব্যবহার হয়েছে। অন্যান্য প্রধান সব উপকরণই বিদেশ থেকে আনা হয়।
৬ থেকে ৩৮ নম্বর পিলারের মধ্য দিয়ে চলবে নৌযান
মূল সেতুর ৬ নম্বর থেকে ৩৮ নম্বর পিলারগুলোর যেকোনো ফাঁকা জায়গা দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারবে। এর প্রত্যেকটি পিলারের পাইল ক্যাপ থেকে সেতু পর্যন্ত উচ্চতা ১৮ দশমিক ৩ মিটার। দুই পিলারের মাঝের দূরত্ব ১৩১ মিটার। বর্ষা মৌসুমে পানির স্তর পাইল ক্যাপের নিচেই থাকে। আর ১৮ দশমিক ৩ মিটার উচ্চতার বেশি কোনো নৌযান নেই বাংলাদেশে।
প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ
২০০৭ সালের আগস্টে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
পদ্মায় মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৫ সালে ৭ নম্বর পিলার বসানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই সেতুর কাজ আরও আগেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও প্রবল বন্যায় কাজের ব্যাঘাত হওয়ায় দুই বছর বাড়ে প্রকল্পের মেয়াদ।
অর্থনৈতিক প্রভাব
সেতুটির মাধ্যমে দক্ষিণের ১৯ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। এর ফলে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা বন্দরটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে বেনাপোল স্থলবন্দরেরও।
এসব যোগাযোগের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়ার যে আশা করা হচ্ছে সে প্রসঙ্গে কথা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্যতার বড় জায়গাটায় না গেলাম, সর্বনিম্ন সমীক্ষাটিও যদি গ্রহণ করি, তাহলেও দক্ষিণ বাংলার যে ২১ জেলা আছে সেখানে ২ শতাংশ জিডিপি বাড়বে। আর পুরো দেশের জিডিপি কম করে হলেও ১ শতাংশ বাড়বে, এর বেশিও বাড়তে পারে।’
রেলসংযোগ প্রকল্পে ইলেকট্রিক ট্রেন
পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধীনে যান চলাচল ও ট্রেনের লাইন হচ্ছে। দুই পারের সঙ্গে রেলসংযোগ করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প (পিবিআরএলপি)।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তম এই প্রকল্পের অধীনে রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন হচ্ছে। প্রকল্পটির সবশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের সময় দুই বছর বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন সরকারের ঋণের অর্থে এই প্রকল্প জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। প্রকল্পে ঢাকার মেট্রোরেলের মতো ইলেকট্রিক ট্রেনের প্রযুক্তি থাকবে।
এই রেললাইনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে জাতীয় ও আন্তদেশীয় রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। রেলপথটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় প্রথম রেলসংযোগ স্থাপন করবে।
আরও পড়ুন:মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঝালকাঠিতে সাতটি দলের চার শতাধিক প্রতিযোগীর অংশগ্রহণে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুগন্ধা নদীতে প্রতিযোগিতাটি মঙ্গলবার বিকেলে আয়োজন করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।
এক আয়োজক বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ বিকেলে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতাটি সুগন্ধা নদীর ইকোপার্ক প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে কলেজ খেয়াঘাট সংলগ্ন মিনি পার্কে এসে শেষ হয়। এতে আলাদা সাতটি দলের ৪ শতাধিক প্রতিযোগী অংশ নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জিতেছে শেখেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ। দ্বিতীয় হয় সদর উপজেলা পরিষদ এবং তৃতীয় হয় ঝালকাঠি বণিক সমিতি।’
নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির এবং সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ব্যাংকের ডিরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জয়নাল আবেদীন ও মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এফসিএমএ।
ওই সময় অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ কায়সার আলী ও ক্যামেলকো তাহের আহমেদ চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নানান ধরনের মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি বা নাটোরের কাঁচাগোল্লাসহ আরও অনেক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি।
এসব মিষ্টি নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় মিষ্টি মেলা’।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য সংস্কৃতি হিসেবে দেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিগুলোকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি গত বুধবার শুরু করে এ মেলার আয়োজন। পাঁচ দিনব্যাপী মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। এতে অংশ নিয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা ৬৪ এর অধিক মিষ্টি শিল্পীরা।
জাতীয় মিষ্টিমেলার দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে মূল অনুষ্ঠানের আগে পরিবেশিত হয় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী। লোক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করে সরকারি সংগীত কলেজ। সমবেত শাস্ত্রীয় সংগীত ‘রাগ বৈরাগী ভৈরব’ এবং সমবেত যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন তারা।
এরপর পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হয় একক সংগীত। একক সংগীত পরিবেশন করেন ড. ফকির শহীদুল ইসলাম, শেখ খালিদ হাসান, মাইনুল আহসান, ছন্দা চক্রবর্তী, উত্তম কুমার সাহা, মফিজুর রহমান, এম এ মমিন, উর্বী সোম, সৌমিতা বোম, পূর্ণ চন্দ্র মণ্ডল, সাইফুল ইসলাম, এম এম ইউনুসুর রহমান ও গোলাম মোস্তফা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মনসুর।
প্রথম জাতীয় মিষ্টি মেলা ১০ মার্চ পর্যন্ত চলবে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৫টায় থাকবে লোক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল দুদিন আগে বৃহস্পতিবারই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে মেলার সময় বাড়ানো হয়েছে দুদিন। বর্ধিত সেই সময় শেষ হচ্ছে আজ।
তবে যে প্রত্যাশা নিয়ে মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল সে অনুযায়ী বই বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। তাদের ভাষ্য, বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনা পাঠকদের আলোড়িত করেছে। এ অবস্থায় মেলা শেষ হওয়ার আগের দিন শুক্রবার হওয়া সত্ত্বেও ভিড় ও বিক্রি ছিল কম।
আবার অনেকে বলছেন, মেলার সময় বাড়ানোর তথ্যটা যে পরিমাণে প্রচার হওয়া দরকার ছিল সেই পরিমাণে হয়নি। তাই অনেকে জানেনই না যে মেলার সময় বেড়েছে।
সাধারণত প্রাণের অমর একুশে বইমেলা হয় ২৮ দিনে। তবে এ বছর অধিবর্ষ হওয়ায় মেলা একদিন বেশি পেয়ে দাঁড়ায় ২৯ দিনে। তার ওপর ২৯তম দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় প্রকাশকদের দাবি ছিল মেলার সময় বাড়িয়ে শনিবার পর্যন্ত নেয়ার। তাদের দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়ে বইমেলার সময় দুদিন বাড়ানো হয়।
এবারের বইমেলা শুরু থেকেই ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। প্রথম সপ্তাহের পর থেকে মেলা পুরোদমে জমে ওঠে। এর মধ্যে আবার মেট্রো ট্রেন বইমেলায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। দূরত্ব ও যানজট বিবেচনায় আগে যারা বইমেলায় আসতে নিরুৎসাহ বোধ করতেন এবার মেট্রো ট্রেন তাদেরকেও নিয়ে এসেছে বইমেলায়। ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দর্শনার্থীর ভিড় এবং ভালো বেচাবিক্রি হওয়ায় প্রকাশকদের মুখেও ছিল সন্তুষ্টির ছাপ।
এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবও পড়েনি মেলায়। ২২ ফেব্রুয়ারি অল্প সময়ের বৃষ্টি মেলার বেচা-বিক্রিতে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি করলেও তা প্রকাশক ও পাঠকদের বড় ভোগান্তির কারণ হয়নি। তবে পাঠকের অত্যধিক সমাগমের দিন মেলার ধুলোবালি কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে দর্শনার্থীদের।
এদিকে বেশি ভালো বিক্রির প্রত্যাশায় মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি তোলা হলেও বইয়ের বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। পাঠক সমাগমও ততোটা বাড়েনি। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা এজন্য ভিন্ন ভিন্ন কারণ তুলে ধরেছেন।
শুক্রবার মেলায় কথা হয় তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি কাউসার হোসেনের সঙ্গে। বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেচাবিক্রি শুক্র-শনিবারের মতো তো হচ্ছেই না, নরমাল দিনের মতোও বলা যাচ্ছে না। অনেকে হয়তো জানেনই না যে মেলা দুদিন বেড়েছে। আবার এটাও হতে পারে- যারা বই কেনার তারা ২৯ তারিখের মধ্যেই কিনে ফেলেছেন।’
মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী তামিম হোসেন বলেন, ‘বিক্রি বা ভিড় অনেক কম। নগণ্যই বলা যায়। হতে পারে মেলার সময় বাড়ার খবরটা মানুষের মাঝে পৌঁছাতে যত প্রচার করা দরকার ছিল ততোটা প্রচার হয়নি। ফেসবুক থেকে মানুষ আর কতটাই বা নিউজ জানতে পারে।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি হাসেম আলী বলেন, ‘বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে। মালিক পক্ষ যে প্রত্যাশা নিয়ে মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল তার ধারেকাছেও নেই বেচাবিক্রি। অর্ধেকেরও কম হবে বলে মনে হচ্ছে।’
তবে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার হিসেবে আজ পাঠক ও ক্রেতা সমাগম বেশি হওয়ার কথা ছিল। আমরাও সেরকম প্রত্যাশা করে মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে। কিন্তু বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড অনেকের মনে প্রভাব বিস্তার করেছে। মেলায় হয়তো তার প্রভাবটা পড়েছে। আশা করি আজ ভালো বিক্রি হবে।’
মেলা শেষের আগের দিনে ২১৯ নতুন বই
এদিকে মেলার শেষ সময়েও নতুন বই নিয়ে আসছেন প্রকাশকরা। শুক্রবার বইমেলার ৩০তম দিনেও নতুন বই এসেছে ২১৯টি।
শুক্রবার হওয়ায় এদিন মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় আর শেষ হয় রাত ৯টায়। তবে এদিন ছিল না কোনো শিশুপ্রহর। শনিবারও থাকবে না কোনো শিশুপ্রহর।
মেলার শুরু থেকে মূল মঞ্চে প্রতিদিনই থেকেছে আলোচনা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। লেখক বলছি মঞ্চে থাকতো বই নিয়ে কথোপকথন। বর্ধিত দুই দিনে তা-ও থাকছে না। এই সময়টাতে মূলত বই বিক্রিই মুখ্য বিষয় থাকবে প্রকাশকদের।
সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান
শনিবার সমাপনী দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলায় বিদায়ের সুর বেজে উঠছে। মেলার বাকি আর মাত্র চার দিন।
এ কয়েকদিন রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এর মধ্য দিয়ে পাঠক, দর্শক ও প্রকাশকের আনাগোনায় মুখরিত থাকা বইমেলার ইতি টানা হবে, তবে বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রকাশকরা।
এদিকে এ বছর মেলা দুদিন বাড়ানোর জন্য বাংলা একাডেমির কাছে প্রকাশকরা আবেদন করলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির সামনের বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের বই খুঁজছেন পাঠকরা। বেশির ভাগ দর্শনার্থীই বই কিনতে মেলায় ভিড় করেছেন। মেলায় বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
পাশাপাশি নানা বয়সি মানুষ বইমেলায় এসেছেন। তাদের কেউবা মনের আনন্দে ঘুরে বেরিয়েছেন। কেউ বই দেখেছেন আবার কেউ কেউ প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করেছেন। এভাবেই কেটেছে বইমেলার প্রতিটি দিন।
ব্যস্ততার কারণে সাধারণ দিনগুলোতে যারা মেলায় আসতে পারেননি, বন্ধের দিনে তারা ঠিকই হাজির হয়েছেন প্রাণের মেলায়। ফলে ছুটির দিনগুলোতে সবচেয়ে মুখরিত থাকত বইমেলা। এ দুদিন বইয়ের বিক্রিও অন্য দিনের তুলনায় বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে নতুন লেখকদের বইও বিক্রি হচ্ছে বেশ। তবুও প্রকাশকদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ।
প্রকাশকরা বলছেন, মেলায় আগের তুলনায় বিক্রি অনেক কম হয়েছে। যদিও শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা ও নতুন বই প্রকাশে ব্যস্ত পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা, তবে শেষ কয়েকদিন পাঠকের ঢল নামার প্রত্যাশা করেছেন তারা।
বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রেতারা জানান, মেলার শেষ দিকে প্রতিদিন বিক্রি ভালো হয়। এখনও প্রতিদিন নতুন নতুন বই মেলায় আসছে।
মেলায় ঘুরতে আসা লিমন ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছু বই সংগ্রহ করেছি। আবার এসেছি নতুন বই কিনেছি। বান্ধবীকে বই উপহার দিলাম। শেষের দিকে আবার আসব। আর অবশ্যই আমাদের সকলের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে বইমেলায় এসেছেন লাইজু লিজা। তিনি বলেন, ‘বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এ মেলা এক মাস কেন, সারা বছর থাকা উচিত।’
মাওলা ব্রাদার্সের প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘প্রথম দিকের চেয়ে এবার শেষের দিকে এসে মেলায় বিক্রি বেড়েছে। মেট্রোরেলের নতুন মাত্রা এবারের বইমেলায় বই বিক্রি বাড়ার প্রধান কারণ। আমরা তরুণ লেখকদের বইগুলো তরুণদের হাতে দিতে পারছি, তবে এ বছর এখনও ব্যাগভর্তি বই ক্রেতা দেখছি না।’
এদিকে রোববার অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিনে মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৮টা ৩০ পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৬টি।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের স্বরণে আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকেল ৪টার দিকে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাজী নূরুল করিম দিলু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তানভীর নেওয়াজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেবুন নাসরীন আহমেদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের কর্মপরিধি ছিল বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম গেরিলা সদস্য হিসেবে একের পর এক দুঃসাহসিক অপারেশনে অংশ নিয়েছেন তিনি। তার পরিকল্পিত নকশায় নির্মিত হয়েছে দেশের অনেক দৃষ্টিনন্দন ভবন ও স্থাপনা।
‘গণমানুষের অধিকারের বিষয়ে মোবাশ্বের হোসেন ছিলেন আপসহীন। দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভবন সুরক্ষা, পরিবেশ রক্ষা, শিক্ষা, ক্রীড়া এমনকি ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা থেকে শুরু করে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তিনি রেখেছেন সক্রিয় ভূমিকা।’
আলোচক বলেন, বাংলাদেশের বহুবিধ স্থাপত্য প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের নাম। ব্যক্তিমানুষ হিসেবে অত্যন্ত আন্তরিক মোবাশ্বের হোসেন দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক জেবুন নাসরীন আহমেদ বলেন, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যই ছিল দৃঢ়তা, সততা, সাহসিকতা এবং দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। তার কর্মমুখর জীবন ও আদর্শ সবার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন
এ মঞ্চে বিকেল ৫টার দিকে কবি ও চলচ্চিত্রকার মাসুদ পথিকের কবিতা ও চলচ্চিত্র বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি এজাজ ইউসুফী, জান্নাতুল ফেরদৌসী, উৎপলকান্তি বড়ুয়া, প্রসপারিনা সরকার, অংকিতা আহমেদ রুবি, রিশাদ হুদা, সৌমিত্র দেব, অরবিন্দ চক্রবর্তী, আহসান মালেক, রওশন ঝুনু, সমর চক্রবর্তী, গিরিশ গৈরিক এবং আহমেদ জসিম।
ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার আখতার হুসেন, আমীরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান রিটন, ফারুক হোসেন, আনজীর লিটন, মাহমুদউল্লাহ, সারওয়ার উল আলম, রিফাত নিগার শাপলা এবং তপংকর চক্রবর্তী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদা আখতার, চিং হ্লা মং চৌধুরী এবং চৌধুরী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
এবারের বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আজকের বইমেলা
২৬শে ফেব্রুয়ারি সোমবার অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন মেলা শুরু হবে বেলা ১২টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: আবুবকর সিদ্দিক এবং স্মরণ: আজিজুর রহমান আজিজ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে ফরিদ আহমদ দুলাল এবং কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মামুন মুস্তাফা, তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনজুরুর রহমান এবং আনিস মুহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি আসাদ মান্নান।
আরও পড়ুন:অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আবারও নিজেদের শাণিত করে পরম শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষাশহিদদের স্মরণ করলেন অস্ট্রিয়ার প্রবাসী বাঙালিরা।
দেশটির রাজধানী ভিয়েনার হেলবেগটাসে অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের নিজস্ব কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর শহিদদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম। সঞ্চালনা করেন, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শ্যামল।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি, অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক, সাংবাদিক এম. নজরুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অস্ট্রিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি রবিন মোহাম্মদ আলী, অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শ্রী রুহী দাস সাহা, শফিকুর রহমান বাবুল, মনোয়ার পারভেজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব খান শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম কাঞ্চন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জহির তুহিন।
অনুষ্ঠানে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একুশে আমাদেরকে ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় থাকতে এবং মাথা নত না করতে শিখিয়েছে। একুশ আমাদের ঐক্য ও শক্তির প্রতীক। একুশের চেতনায়ই আজ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, ‘এই একুশে বরকত, সালাম, জব্বার, রফিকরা ভাষার দাবিতে রক্ত দিয়েছিল। একুশ আমাদেরকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে।’
বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাঙালির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে অমর একুশের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এ প্রকাশিত হয়েছে জনপ্রিয় স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান জি বাংলা'র মীরাক্কেল দশের অন্যতম ফাইনালিস্ট আফনান আহমেদ রাশেদের রম্য বই ‘ফিলিং চিলিং’।
অমর একুশে বইমেলার মাঠে শিখা প্রকাশনী মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
শিখা প্রকাশনীর ৩০০, ৩০১, ৩০২, ৩০৩ নম্বর স্টলে ফিলিং চিলিং বইটি পাওয়া যাচ্ছে। ঘরে বসেও পাঠকরা অনলাইন বইয়ের শপ রকমারি, প্রথমা, বইফেরী সহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
বইটির লেখক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আফনান আহমেদ রাশেদ ছিলেন মীরাক্কেল সিজন টেনের অন্যতম ফাইনালিস্ট। পড়াশোনা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায়। পেশাগত জীবনে স্ট্যান্ড-আপ-কমেডিয়ান, স্ক্রিপ্ট রাইটার।
তরুণ এই লেখক এবং স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানের ভাষ্যমতে, দর্শকদের ভালোবাসা তাকে বিমোহিত করে তাই তিনি নিজেকে রেডিও, টেলিভিশন কিংবা মঞ্চে এখন সরব রেখেছেন।
লেখক রাশেদ বলেন, রম্য কিংবা জোকসের বই মানেই অন্যরকম ভালোলাগা, আনন্দ কিংবা প্রাণবন্ত অনূভুতির চমৎকার বহিঃপ্রকাশ ফিলিং-চিলিং বই ।
রাশেদ বলেন, মীরাক্কেলের ভেতর বাইরে নানান গল্প নিয়ে লিখেছেন ২০২২ সালে মীরাক্কেল এক্সপ্রেস বইটি। সেই সময়ে মানুষের ভালোবাসায় বইটি প্রচুর পাঠক সমাগম ও জনপ্রিয়তা পায়। এই জন্য এবার তিনি চেষ্টা করেন মানুষকে আনন্দ দেয়ার। এইজন্য তার লেখা এই ভিন্নধর্মী বই ফিলিং-চিলিং। বইটিতে রয়েছে দুর্দান্ত সব স্যাটায়ার, সেন্স অব হিউমার, কমিক পাঞ্চলাইন, ক্রিঞ্চ কমেডি সহ বিভিন্ন জোক।
জি বাংলার রিয়্যালিটি শো মীরাক্কেলের সিজন টেনের অন্যতম ফাইনালিস্ট ছিলেন রাশেদ। মীরাক্কেল খ্যাত রাশেদ এর জনপ্রিয় বই "মীরাক্কেল এক্সপ্রেস"। যা ২০২২ সালে অমর একুশে বইমেলায় পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান, স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করার পর লেখক হিসেবে তার আবির্ভাব হয়েছে।
মন্তব্য