× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Padma Bridge is one of the lowest cost bridges
google_news print-icon

‘পদ্মা ব্রিজ ওয়ান অফ দ্য লোয়েস্ট কস্ট ব্রিজ’

পদ্মা-ব্রিজ-ওয়ান-অফ-দ্য-লোয়েস্ট-কস্ট-ব্রিজ
পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান কাঠামো ও প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো বুয়েটে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হওয়া লোক নই। আমি পিএইচডিও করিনি। আমি যদি এটা করতে পারি, তাহলে আমার সিনিয়র-জুনিয়র অনেকের সাহসও বৃদ্ধি পাবে। তারা ভাববেন, উনি যদি এত বড় কাজ করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন নয়? এভাবেই তো সক্ষমতা বাড়ে। সাহস বাড়ে।’

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শফিকুল ইসলাম। এই সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠার পর সরে যান আগের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তার জায়গায় ২০১১ সালের নভেম্বরে নিয়োগ পান শফিকুল।

বাংলাদেশের অহংকার পদ্মা সেতুর ঠিকাদার নিয়োগ থেকে শুরু করে নির্মাণকাজের পুরোটা দেখভাল করেছেন তিনি। বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি উদ্বোধনের ক্ষণে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন অভিজ্ঞ এই প্রকৌশলী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানজির মেহেদী বনি আমিন

প্রশ্ন: দাতা গোষ্ঠী পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প থেকে চলে যাওয়ার পরের কঠিন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়া হলো?

শফিকুল ইসলাম: আমি শুরু থেকে এই প্রকল্পে ছিলাম না। এখানে এসেছি ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে। বিশ্বব্যাংক চলে যাওয়ার কারণে ক্রাইসিস তৈরি হলো। তখন আমাদের সে সময়ের সচিব, পিডি (প্রকল্প পরিচালক), এমনকি মন্ত্রীও চলে গেছেন। ওই সময়ে আমি এলাম এবং একজন নতুন মন্ত্রী ও নতুন সচিবও এলেন দায়িত্বে।

বাই দিস টাইম ডিজাইন ওয়াজ কমপ্লিট। টেন্ডার ডকুমেন্ট ওয়াজ কমপ্লিট, প্রি কোয়ালিফিকেশনও কমপ্লিট। সরকার বলল, যেখানে থেকে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে আমরা শুরু করব।

আমরা কিছু কিছু ফাউন্ডেশন পেয়েছি। একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছি, এটা বলা ঠিক হবে না, ভুল হবে। নির্মাণকাজের শুরুটা আমাদের সময়ের। তার মানে ফুল টেন্ডার, টেন্ডার প্রকিউরমেন্ট এবং কনস্ট্রাকশন আমাদের হাতে হয়েছে।

বাংলাদেশে সবচেয়ে কঠিন হলো প্রকিউরমেন্ট। প্রকিউরমেন্টে অনেক গন্ডগোল লাগে, মামলা-মোকদ্দমা হয়, এটা-সেটা অনেক কিছু হয়। এই প্রকল্পে ওসব কিছু ওভারকাম করে আমরা নির্মাণকাজ করতে পেরেছি।

প্রশ্ন: চ্যালেঞ্জ নেয়ার সময়ের অনুভূতি কেমন ছিল?

শফিকুল ইসলাম: এখানে আসার আগে আমি ঢাকা-চট্টগ্রামে ফোর লেন প্রজেক্টের অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও পিডি ছিলাম। ওটা তখন রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট ছিল। তো আমি চ্যালেঞ্জটা নেয়ার জন্যই এখানে এসেছিলাম। ভাবলাম, দেখি না কেউ না কেউ তো এটা করবেই। সো হোয়াই নট মি? ওটা আমার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ছিল।

প্রশ্ন: আপনি তো একটা অচলাবস্থা থেকে শুরু করলেন, সে ক্ষেত্রে...?

শফিকুল ইসলাম: ওটা অচলাবস্থা ঠিক আছে, কিন্তু উই গট সাপোর্ট ফ্রম এভরি কর্নার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বললেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। অনেকের প্রশ্ন ছিল যে, নিজস্ব অর্থায়ন কীভাবে সম্ভব? কারণ আমাদের বাজেটের আকার এমন, এটা হলে সব উন্নয়ন থমকে যাবে। একই সঙ্গে এত ফরেন কারেন্সি আমরা কোথায় পাব? ৮০ ভাগ ফরেন কারেন্সি, আড়াই বিলিয়ন ডলার ফরেন কারেন্সি লাগবে। এটা নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় কাজ করেছে।

তখন আমি মিটিং করেছি ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে। সে সময় উনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ছিলেন। ওনার সঙ্গে মিট করা হলো। আমার ব্যাংকার ছিল অগ্রণী ব্যাংক। তাদের দুই জিএম সাহেবকে নিয়ে আমি গেলাম। তারপর ওনাকে ব্যাখ্যা করলাম যে টাকা তো আমাদের একবারে লাগবে না। চার-পাঁচ বছরে টাকাটা লাগবে।

শুনতে আড়াই বিলিয়ন ডলার মনে হলেও এটা তো আর একসঙ্গে লাগছে না। বাংলাদেশের তখনকার বাজেটের হয়তো একটা বড় অংশ, তবে পরের বাজেটে কিন্তু এটা কমে আসবে। কারণ বাজেট বড় হচ্ছে। আমার সেতুর বাজেট তো আর সামনে বাড়বে না।

ওনারা কনভিন্সড হলেন। অগ্রণী ব্যাংক বলল, যে টাকাটা লাগবে তারা দিতে পারবে। আমি বললাম, আমার এক মাসে ম্যাক্সিমাম ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) ডলার লাগতে পারে। তখন অগ্রণী ব্যাংক বলল, তারা এটা দিতে পারবে।

গভর্নর সাহেব খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে ফাইন। তাহলে তো আমার ওপর কোনো চাপই নাই। লাগলে আমি আপনাকে সাহায্য করব।’

পরে বিষয়টা আমরা আমাদের হাই অথরিটির কাছে ব্যাখ্যা করলাম। তারাও দেখল টাকা তো আর একবারে লাগছে না। আমাদেরও কনফিডেন্স বাড়ল, ঠিক আছে, উই ক্যান পে। ফরেন কারেন্সির জন্য কোনো সমস্যা হবে না।

প্রশ্ন: এই আলোচনা কি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে হয়েছিল?

শফিকুল ইসলাম: এটা আসলে নির্দিষ্টভাবে মনে নেই। এটা একটা চলমান প্রসেস ছিল। আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে কথা বলছিলাম। অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলাম। বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রকম কাজ হচ্ছিল। আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা হয়তো উনি (প্রধানমন্ত্রী) পরেই দিয়েছেন।

ওই সময়ে আমরা একাধিকবার মালয়েশিয়ায় গেছি। ওরাও আমাদের দেশে এসেছে। সেটাও কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই হয়েছে।

যতটুকু জানি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে আমাদের মরহুম অর্থমন্ত্রী মহোদয় (আবুল মাল আবদুল মুহিত) রাজি ছিলেন না। ওনার ধারণা ছিল এতে বাজেটে চাপ পড়বে। সে জন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছিল বাজেটের চাপ কমানোর জন্য।

প্রশ্ন: এটা তো অর্থায়নের দিক গেল, কিন্তু বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতারা চলে যাওয়ার পর টেকনিক্যাল গ্র্যাউন্ডেও তো আপনাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছিল

শফিকুল ইসলাম: হ্যাঁ। এই প্রকল্পে অর্থনীতি একটা পার্ট, তবে সবটাই তো আর অর্থনৈতিক নয়। এর মধ্যে অনেক সামাজিক ও কারিগরি দিকও আছে।

দাতারা চলে যাওয়ার পর আমরা যদি নিজেরা টেন্ডার করি, সেগুলো ইভ্যালুয়েশন করি তাহলে বিদেশিরা নাও আসতে পারত। তারা ভাবতে পারে যে বাংলাদেশের খুব বেশি সুনাম নাই।

যারা টেন্ডার জমা দেয় তাদের অনেক খরচ হয়। এই টেন্ডারটা দিতে গেলে আপনাকে ৫-১০ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে। তারটা যথাযথ মূল্যায়ন হবে কি না, সেই আস্থা না থাকলে সে নাও আসতে পারে। তখন আমি আমাদের সচিব মহোদয়কে পরামর্শ দিলাম, যারা ডিজাইন করেছে তাদের কাজ শেষে তারা চলে যাবে ডকুমেন্ট বানিয়ে। তো ওদেরকে আমরা প্রকিউরমেন্টে রেখে দিই। আমাদের নিজস্ব টাকায় তার মধ্যে কনট্রাক্ট আমরা এক্সটেন্ড করলাম, যাতে প্রকিউরমেন্টে তারা হেল্প করে।

এই যে এত বড় টেন্ডার, তার দুটি পার্ট। একটা টেকনিক্যাল আরেকটা ফাইন্যান্সিয়াল। টেকনিক্যাল পার্টটা ইভ্যালুয়েশন করার যোগ্যতা ফ্র্যাংকলি আমাদের নাই। আমরা এত বড় ব্রিজ করি নাই আগে। আমি এবং আমাদের টিম অনেক ব্রিজ করেছি। আমার ডিপিডি সাহেব পাকশী ব্রিজ করেছেন, তবে পাকশী ব্রিজ পদ্মা ব্রিজের কাছে কিছুই না। আমি নিজেও বহু ব্রিজ করেছি; ২০০, ৩০০, ৪০০, ৫০০ মিটার ব্রিজ করেছি, কিন্তু এত বড় ব্রিজ তো দেশে হয়নি আগে।

কাজেই কারিগরি মূল্যায়নটা তারা ছাড়া আমাদের দ্বারা করা সম্ভব ছিল না। সে জন্য তাদের রেখে দেয়া হয়েছিল। তারা পুরো প্রকিউরমেন্টটায় আমাদের হেল্প করল। এটা একটা জটিল প্রকিউরমেন্ট। এটাতে বিদেশিরাও আস্থা পেল যে এইকমের মতো একটা কনসালট্যান্ট আমাদের প্রকিউরমেন্ট টিমে থাকবে। তখন আমরা একটা আস্থা পেলাম যে তারা টেন্ডারে পার্টিসিপেট করবে এবং তা করলও।

তারা অনেক টাইম চেয়ে নিয়েছিল, আমরা টাইম দিয়েছি। যদিও চাপ ছিল তাড়াতাড়ি করার জন্য। আমরা কর্তৃপক্ষকে বোঝালাম, তাড়াহুড়া করলে আমরা টেন্ডারই পাব না। তখন কী হবে? আমরা আট মাস এডিশনাল টাইম দিয়েছি, কারণ ওদের আনতে হবে। তারা যদি না আসে তাহলে তাড়াহুড়া করে লাভ কী? কার জন্য তাড়াহুড়া করছি?

প্রশ্ন: কতটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল?

শফিকুল ইসলাম: আবেদন তো আগেই হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক আমাদের টেন্ডার ডকুমেন্ট রেডি করে দিয়ে গেছে; প্রিকোয়ালিফেকেশন করে দিয়ে গেছে। কোরিয়া, চীন এবং ইউরোপের একটি দেশের প্রিকোয়ালিফাইড টেন্ডার ছিল। ওদের মধ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ প্রিকোয়ালিফিকেশন একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। নতুন করে করতে হলে আবার অ্যাপ্লিকেশন আহ্বান করতে হবে, যাতে দেড়-দুই বছর চলে যাবে।

কারণ প্রিকোয়ালিফিকেশন করতে হলে প্রচুর ডকুমেন্ট শো করতে হয়। সাইট ভিজিট করতে হবে, খরচ আছে। তাই আমরা বললাম, যেখানে শেষ করেছি, সেখান থেকে আবার শুরু করছি। এটাই ছিল আমাদের ইনস্ট্রাকশন। যেখানে শেষ, সেখান থেকে আবার শুরু।

যে ডকুমেন্টগুলো ছিল সেগুলো কোনো চেঞ্জ করিনি। ইন্টারন্যাশনাল ডকুমেন্ট এবং এনবিআরের ভেটেড করা। একটা পরিবর্তন ছিল ডোনারের স্থানে। ডকুমেন্টে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের জায়গায় জিওবি বসানো হয়েছিল। অন্য কিছু পরিবর্তন করা হয়নি, যাতে কোনো আস্থা নষ্ট না হয়।

ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে কিছু কন্ডিশন থাকে, যেটা উইন উইন সিচুয়েশন। এটা কারও ফেভারে থাকে না। কনট্রাক্টর এবং ওনার দুজনের পক্ষেই থাকবে। আর যদি আরবিট্রেশন হয়, সেটা হবে সিঙ্গাপুরে, বাংলাদেশে না। এটা আমরা মেনেই নিয়েছি, কারণ ইন্টারন্যাশনালই কেউ আসতে চাইবে না। যেখানে যারা যারা ছিল ওদের মাধ্যমেই আমরা আবার করেছি। এটাই নিয়ম। বিশ্বব্যাংক যা করত, আমরা তাই-ই করেছি।

প্রশ্ন: সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রাথমিক হিসাব থেকে কয়েক গুণ বাড়ার কারণ কী?

শফিকুল ইসলাম: ২০০৭ সালে আমরা প্রথম টেন্ডার করেছি। এরপর জাইকা বলল, ফিজিবিলিটি স্টাডি করলে একটা কস্ট ধরতে হয়, সেই কস্টটা আমরা ডিপিপি করলাম। ডিপিপিতে লেখা ছিল, ডিটেইল ডিজাইন করার পরে এই ডিপিপিটাকে আবার রিকাস্ট করা হবে। এটা ওদের শর্ত ছিল।

কারণ তখন তো কোনো টেন্ডার নাই, ডিজাইন নাই, পাইল কয়টা হবে জানা নাই। এমনকি সে সময় রেলওয়েটা ইনক্লুডেড ছিল না। সে সময় অনুমানের ভিত্তিতে উইদাউট রেল হিসাব করা হয়েছিল। তখন এমন ছিল যে, তিনটা স্প্যান থাকবে নেভিগেবল (নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের উপযোগী), বাকিগুলো থাকবে নিচু। শুধু তিনটা স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌ চলাচল করতে পারবে, এমন কনসেপ্টে কাজ শুরু হয় প্রথমে।

কাজ শুরু করতে হলে একটা ডিপিপি লাগে। ডিপিপি ছাড়া কাজ শুরু করা যায় না, কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়া যায় না, জমি অধিগ্রহণ করা যায় না। ডিপিপি ছাড়া আপনি টাকা পাবেন কোথায়? ওই জন্য ২০০৭ সালে ডিপিপিটা করা হয়েছিল।

তারপর ২০১১ সালে ডিটেইল ডিজাইন হওয়ার পর বিশ্বব্যাংক বলল তোমরা ডিপিপিটা রিভাইস করো। আমরাও সিদ্ধান্তে এলাম রেললাইন করব, ডাবল স্টেক কনটেইনার করব, নদীশাসনের জন্য কিছু কাজ বাড়ল।

তখন আবার আরডিপিপি করব কীভাবে...কারণ অনেক কিছুর রেট আমাদের জানা নেই। আমাদের আশপাশের কোনো দেশে নিচে ট্রেন আর ওপরে রোড দিয়ে কোনো ব্রিজ হয়নি। ১২০ মিটার পাইল আমাদের কোথাও হয়নি। তাহলে এই রেটটা পাবে কোথায়?

তখন সিদ্ধান্ত হলো, অনুমানের ভিত্তিতেই এটা করা হোক। কারণ এর ওপর ভিত্তি করেই তো বিশ্বব্যাংকে লোন হবে। আগের কস্টে লোন দিলে তো হবে না। কাজের ব্যাপকতা হিসাব করে তারা আবার একটা ডিপিপি করল টু নেগোশিয়েট উইথ দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, জাইকার সঙ্গে। তখন ২০১১ সালে ডিপিপি করা হলো ২০ হাজার কোটি টাকা। আগে ২০০৭ সালেরটা ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা।

এই নতুন ডিপিপিতে কস্ট কম রাখার জন্য ডলারের রেট বাড়ানো হয়নি, আগের রেট ৬৯ টাকাই রাখে। আগের ডিপিপি ছিল ২০০৭ সালের, যা ২০১১ সালের বাস্তবতা ছিল না।

ডলারের আগের রেট রাখার কারণ হলো, বেশি টাকা দেখালে বিশ্বব্যাংক হয়তো লোন দিতে চাইবে না। এটা আমার শোনা কথা, কারণ সে সময় আমি ছিলাম না।

তবে এটাও তো ঠিক ২০১১ সালে এসে ডলারের রেট ৬৯ টাকা থাকবে কেন? এটা তো থাকার কথা না। তারপর ২০১১ সালে আমরা আসার পর টেন্ডারে গেলাম। ২০১৪ সালে টেন্ডারগুলো পেয়ে গেলাম। টেন্ডার পাওয়ার পর যেই কমপিটিটিভ প্রাইস পেলাম সেটাই আমরা অ্যাকচুয়াল খরচ ধরেছি।

কারণ এর কমে কে কাজ করবে? কমপিটিটিভ প্রাইস পাওয়ার পর ডিপিপি রিভাইজ করলাম ২৮ হাজার কোটি টাকায়। এটা কিন্তু আমাদের যে নিজস্ব কনসালট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এসটিমেট করছে, তার চেয়ে প্রায় ৭-৮ শতাংশ কম। এ জন্য আমাদের ইভ্যালুয়েশন কমিটি রিকমেন্ড করল যে এর থেকে আর কম পাওয়া যাবে না। আমাদের জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারের নেতৃত্বে একটা ইন্টারনাল প্রকিউরমেন্ট কমিটি ছিল। ওনারা এটা একসেপ্ট করলেন।

দেশের আইন অনুযায়ী আমরা কনসালট্যান্টের ওপর ভিত্তি করে কিছু করতে পারি না। প্রত্যেকটা টেন্ডারে একটা ইভ্যালুয়েশন কমিটি থাকে, সেখানে আমাদের ডিপার্টমেন্টের লোক থাকে এবং বাইরের লোকও থাকে। সেখানে আমরা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার এবং বুয়েটের কয়েকজন প্রফেসরকে রাখলাম। কারণ এটা জটিল কাজ।

কনসালট্যান্টের কাজ রিকমেন্ড করা আর ইভ্যালুয়েশন কমিটির কাজ আইনগত দিক বিচার করা। সরকারের কাছে পাঠানোর জন্য তাদের লাগবে। তো সবার মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে ২৮ হাজার কোটি টাকা এগ্রি করা হলো।

পরবর্তী সময়ে আবার ১৪০০ কোটি টাকা বাড়ল। আমাদের কথা ছিল এখানে ৪০০ কোটি সিএফটি বালি উত্তোলন হবে। আমরা যে মাটির নিচে ২৮ মিটার পর্যন্ত যাবে, সেই বালি রাখব কোথায়? ২০১১ সালের ডিপিপিতে ছিল যে নদীর চরের যে খাস জমি আছে, সেখানে ফেলব। সেটার জন্য সে সময় কস্ট ধরা ছিল না। ২০১৬-২০১৭ সালে দেখা গেল, শরীয়তপুর অংশে চরে বালি ফেলতে পারলাম, কিন্তু মাদারীপুরে আমাদের ফেলার সুযোগ হলো না। ওখানকার লোকজন জমি ভাড়া দিল না। তারা জমি অ্যাকোয়ারের জন্য রাজি হলো। তখন সাড়ে ১১০০ হেক্টর জমি অ্যাকোয়ার করা হলো ১৪০০ কোটি টাকায়। তাই মোট ব্যয় বেড়ে হলো ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

পরবর্তী সময়ে জমি অ্যাকোয়ার বাদে সেতুর মূল কস্ট কিন্তু ২৮ হাজার কোটি টাকাই আছে। এটা একটা রেকর্ড বলতে পারেন যে, ২০১৬ সালে যে এস্টিমেট ছিল, এখন পর্যন্ত এক পয়সাও তার থেকে বাড়েনি। গত সাত বছরে বাড়েনি।

এখন আমাদেরকে বলা হচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে বাড়ল কেন? ২০১০ সাল থেকে বাড়ল কেন? এগুলোর জবাব দেয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।

কেন ২০০৭ সালে এত কম কস্ট ধরল, কেন রেল অন্তর্ভুক্ত করল না, কেন তারা শুধু তিনটা স্প্যান নেভিগেবল রাখল, আমার জানা নেই।

তিনটা স্প্যান নেভিগেবল থাকলে কী হতো…আমাদের এক্সপার্ট যারা তারা বললেন...এই নদী একবার এই দিকে, একবার ওই দিকে নেভিগেবল থাকে। তাহলে মাঝখানের তিনটা যদি শুধু নেভিগেবল রাখি তাহলে একটা সময় চর পড়ে যাবে। তাহলে জাহাজ বা নৌকা যাবে কোন দিক দিয়ে? এ জন্য চেষ্টা করতে হবে ফুল নেভিগেবল রাখার। সেতুর নিচে সব স্থান দিয়ে যেন নৌ চলাচল করতে পারে। আর এ জন্য আমাদের হাইট বাড়াতে হলো। এতে খরচ বেড়ে গেল।

প্রশ্ন: এই ব্রিজের পরিকল্পনা করার সময় আপনারা নাব্যতার হিসাব কীভাবে করেছেন?

শফিকুল ইসলাম: ব্রিজ টেকসই ধরা হয়েছে ১০০ বছর। আর নাব্যতার ব্যাপারে আমাদের যেটা স্টাডি... প্রতি ১২ থেকে ১৫ বছরে একবার মাওয়া পাড়ের দিকে থাকে, আবার অন্য পাড়ে চলে যায় নাব্যতা। যেমন এখন ২-৩ বছর ধরে জাজিরার দিকে চলে যাচ্ছে। আমাদের অ্যাকোয়ার করা জমি নদীর ভেতরে চলে গেছে, যেটা ম্যাপ দেখলেই বোঝা যাবে। এখন আর এদিকে নাব্যতা নাই। আপনি পুরোনো ফেরিঘাটের দিকে যান, দেখবেন চর পড়ে গেছে।

প্রশ্ন: এমন কি হতে পারে যে ৫০ বছর পর সেতুর নিচেই আর পদ্মা নদী নেই?

শফিকুল ইসলাম: বর্তমান যে অংশে সেতু, এর বাইরে পদ্মার না যাওয়ার জন্যই তো নদীশাসন। নদীকে শাসন করা হচ্ছে যে তুমি বাইরে যেতে পারবে না। ডান দিকের এই সীমানা, বাম দিকের এই সীমানা। এর ভেতরেই থাকতে হবে। নদী তার মর্জিমতো বহমান থাকবে, কিন্তু আমাদের সীমানার বাইরে যাতে না যেতে পারে, সে জন্যই নদীশাসন।

প্রশ্ন: তার মানে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিষয়টি আপনারা মাথায় রেখেছেন

শফিকুল ইসলাম: হ্যাঁ। ওটাই তো মূল কাজ। যেমন যমুনাতে আমাদের ব্রিজের চাইতে নদীশাসনের ব্যয় বেশি ছিল। যমুনা কিন্তু ১২ কিলোমিটার ছিল, সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটারে আনা হয়েছিল, বাকি সাত কিলোমিটার ডিক্লাইন করা হয়েছে। ওই যে এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে, তারপরও তো চর পড়ছে।

প্রশ্ন: কিছু মানুষ মনে করেন পদ্মা হলো সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল সেতুআপনি কী বলবেন?

শফিকুল ইসলাম: আপনারা তো সাংবাদিক। আমি আপনাদের অনুরোধ করব আপনারা অনুসন্ধান করেন। আমার মুখের কথায় হবে না, আমি আপনাকে কিছু হিন্টস দিচ্ছি, আপনি সেটা অনুসন্ধান করেন। আমি তো আমারটার সাফাই গাইবই। আমি সঠিক বলছি কি না, সেটা যাচাই করেন।

সম্প্রতি আমাদের দাউদকান্দি, মেঘনা আর শীতলক্ষ্যার যে ব্রিজ হলো, সেই তিনটা মিলে তিন কিলোমিটারের কম। সেখানে কত খরচ হয়েছে?

ওই নদীগুলো তো পদ্মার মতো কঠিন নদী না; লেকের মতোই। তো এই নদীতে ব্রিজ করতে প্রতি মিটার বা কিলোমিটারে কত খরচ হলো আর পদ্মা সেতুতে কত খরচ হলো সেটা আপনারা বের করেন প্লিজ।

সব তথ্যই দেয়া আছে। আপনি গত বছরের এডিপিতে গেলেই দেখতে পাবেন কার কত খরচ হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে। উইদাউট রেল আর নদীশাসন বাদ দিয়ে ব্রিজ টু ব্রিজ তুলনা করেন। ওরা কত খরচ করেছে আর আমি কত খরচ করছি। আবার শুধু রেলওয়ে ব্রিজ হচ্ছে, সেটার সঙ্গে তুলনা করেন।

প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয়?

শফিকুল ইসলাম: সেটা আপনারা বের করেন। আমি মনে করছি পদ্মা ব্রিজ ওয়ান অব দ্য লোয়েস্ট কস্ট ব্রিজ।

প্রশ্ন: পদ্মা তো একটা বিশেষায়িত নদী

শফিকুল ইসলাম: বিশেষায়িত দরকার নেই। আপনি অবিশেষায়িতের সঙ্গে তুলনা করেন। তাতেই হবে। উইদাউট রেল তিন কিলোমিটারের কম ব্রিজে কত খরচ হয়েছে, আর ৯.৮ কিলোমিটারের পদ্মা ব্রিজে কত খরচ হয়েছে তুলনা করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আমার ব্রিজের ক্ষেত্রে যদি বলা হয় বেশি খরচ হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে যদি আমি সবাইকে তুলোধোনা করি সেটা কি ঠিক হবে? আপনারা সাংবাদিকরা করতে পারেন। আমি একজন সরকারি চাকুরে হিসাবে আরেকটার সমালোচনা করতে পারি না, তবে যেটা বলা হচ্ছে সেটা সঠিক তথ্যভিত্তিক না।

প্রশ্ন: এই সেতু করতে কোন চ্যালেঞ্জগুলো নিতে হয়েছে, যেগুলো আপনাদের ধারণায় ছিল না?

শফিকুল ইসলাম: এখানে পানির স্রোত অনেক বেশি, প্রায় ৪ মিটার পার সেকেন্ড। কারণ দুটি নদীর সম্মিলন ঘটেছে এখানে। আমরা এর আগে পদ্মাতেও ব্রিজ করেছি, যমুনাতেও করেছি। লালন শাহ ব্রিজ করেছি পদ্মায়, আর যমুনায় করেছি বঙ্গবন্ধু সেতু, তবে এখানে কিন্তু ওই দুইটা নদীর কম্বিনেশন।

সাধারণ সেন্সই তো বলবে দুই নদীর স্রোত যখন এক জায়গায় আসে, তখন সমস্যা এমনিতেই বেশি হবে। যমুনায় আমরা তলদেশে ৮০ মিটার যাওয়ার পর হার্ড লেয়ার পেয়েছিলাম। ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে এর থেকে মজার আর ভালো কিছুই হতে পারে না। আর এখানে আমরা ১৪০ মিটার গিয়েও হার্ড লেয়ার পাচ্ছি না। সে ক্ষেত্রে বিয়ারিংয়ের জন্য আমার অন্যান্য মেথড খাটাতে হয়েছে, যে কারণে অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।

৬০ শতাংশ মার্কস আর লেটার মার্কসের মধ্যে যে কত পার্থক্য, সেটা সেই শিক্ষার্থীই বোঝে যে জানে এর পেছনে কত পরিমাণ বাড়তি শ্রম আর মেধা লাগছে। তেমনই ৮০ মিটার পাইল আর ১২০ মিটার পাইলের মধ্যে পার্থক্য শুধু দেড় গুণ নয়, অনেক বেশি এনার্জি এখানে খরচ করতে হয়।

মাটির ভিন্নতা থাকার কারণে ২২টা পিলারে আমরা বিয়ারিং ক্যাপাসিটি পাইনি। পরে আবার ডিজাইন করা হয়েছে। সেখানে ছয়টার জায়গায় সাতটা পাইল দেয়া হয়েছে। তারপরেও আমাদের বিয়ারিং আসছিল না। তখন আমরা একটা নতুন টেকনোলজি ব্যবহার করেছি। সেটার নাম গ্রাউটিং, যেটা আগে বাংলাদেশে ব্যবহার হয়নি।

আবার যে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে সেটা আগে বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়নি। মাইক্রোফাইন সিমেন্ট, যেটা অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। এই সিমেন্ট আর গ্রাউটিং দিয়ে বিয়ারিং ক্যাপাসিটি বাড়ানো হয়েছে।

এরপরেও আমরা কনফিডেন্স পাচ্ছিলাম না। শুধু থিওরিটিক্যালি দেখলে আসলে হবে না, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তো প্র্যাকটিকাল বিষয়। আপনারা দেখবেন পাইলিংয়ের লোড টেস্ট হয়। বিল্ডিং বানাতে গেলেও লোড টেস্ট করে। ইঞ্জিনিয়ার প্রথমে ডিজাইন করে দেয় পাইলের লেন্থ এত হবে। সেটা হওয়ার পরে কিন্তু আবার লোড টেস্ট করে যে থিওরিটিক্যাল ক্যালকুলেশন বাস্তবের সঙ্গে মিলছে কি না। আমরাও তেমন টেস্ট করেছি এবং সেটায় ভালো ফল আসছে। এরপর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াতে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো টেস্ট করেছি। এটা বিশ্বে শুধু পদ্মা সেতুতেই হয়েছে। সেটাতেও ভালো ফল আসায় আমরা কনফার্ম হয়েছি, হ্যাঁ এখন এটাতে যেতে পারি।

পদ্মা সেতুতে ১২০ মিটার পাইল বিশ্বরেকর্ড। একই সঙ্গে গ্রাউটিং টেকনোলজি ও মাইক্রোফাইন সিমেন্ট দেয়াটাও বিশ্বরেকর্ড। আরও বিশ্বরেকর্ড হলো, আমরা ভূমিকম্প প্রতিরোধের জন্য বিয়ারিং ব্যবহার করেছি ৯০.৬ হাজার কিলো ইউনিট টন, মানে সবচেয়ে বড়। পৃথিবীতে এত বড় বিয়ারিং আর কোনো সেতুতে ব্যবহার হয়নি। নদীশাসনের ক্ষেত্রেও বিশ্বরেকর্ড হয়েছে। এখানে ২৮ মিটার ডেপথে এত বড় লেন্থে নদীশাসন আর কোথাও হয়নি।

প্রশ্ন: এই সেতু রিখটার স্কেলে কতটা ভূমিকম্প সহনীয়?

শফিকুল ইসলাম: এটা ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় .১৪ জি পর্যন্ত। আর সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য রিখটার স্কেলে ৮-এর কাছাকাছি।

আমাদের যে ডিজাইনটা করা হয়েছে, সেখানে দুই-তিনটা ক্রাইটেরিয়া রয়েছে। যখন আমরা নেভিগেশন ঠিক করি, তখন গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিবেচনা করেছি। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। আমরা এখন ১৮ মিটার বলছি, পরবর্তী সময়ে এটা হয়তো থাকবে না। সে জন্য আমরা আরও ৩০০ মিলিমিটার বাড়িয়ে ধরেছি, যাতে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে আমাদের সমস্যা না হয়।

এই নদী একটি সচল নদী। এখানে অনেক নৌযান চলাচল করে। তো সেগুলো অনেক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুতে ধাক্কা দিতে পারে। এসব ধাক্কা যাতে সেতু সহ্য করতে পারে সে বিষয়টাও ঠিক রাখা হয়েছে। জাহাজের ধাক্কা লাগলেও যাতে ব্রিজের ক্ষতি না হয় ডিজাইনটা সেভাবে করা হয়েছে।

আবার আমরা যে ১২০ মিটার পাইল করেছি তার মধ্যে ৬২ মিটার এখনকার জন্য অদরকারি। আবার এটা ছাড়া উপায়ও নেই। কারণ এমন হতে পারে পাইলের পাশ থেকে হঠাৎ মাটি সরে গেল। তখন কী হবে, বিয়ারিং কমে যাবে, যাতে বাকিটায় নিতে পারে সে জন্য এত বড় পাইল করা হয়েছে, কারণ নিচে তো হার্ড বেল্ট নেই।

প্রশ্ন: আমরা জেনেছি পদ্মা সেতুতে স্পেশাল লাইটিং থাকবেসেটা কতদূর হলো?

শফিকুল ইসলাম: আর্কিটেকচার লাইটিংয়ের একটা প্রোভিশন আছে। আমরা এখনও শুরু করতে পারিনি। হয়তো জুলাই থেকে শুরু করা যাবে। এটা কারা করবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি, তবে বাংলাদেশে এ রকম ঠিকাদার নেই।

প্রশ্ন: পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশেষ কী কী সরঞ্জাম ব্যবহার হয়েছে?

শফিকুল ইসলাম: এখানে যে ক্রেনটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা পাঁচ হাজার টন ক্যাপাসিটির। এর নাম তিয়ান-ই, চাইনিজ একটি ক্রেন। এটি পৃথিবীর অন্যতম বড় ক্রেন, সবচেয়ে বড় ক্রেন কি না জানা নেই। যেহেতু আমাদের স্প্যানের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন, তাই এর চেয়ে বেশি ক্যাপাসিটির ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছে।

এ সেতুর ব্যবহৃত হ্যামারটাও বিশেষ হ্যামার। যমুনাতেও একই কোম্পানির হ্যামার ব্যবহার হয়েছিল, তবে সেটা এত বড় ছিল না। এখানে যেহেতু ডেপথ বেশি, তাই হ্যামারের ক্যাপাসিটিও বেশি লেগেছে।

প্রশ্ন: পদ্মা সেতু দিয়ে যে ইউটিলিটি লাইন যাচ্ছে তার মধ্যে কী কী আছে?

শফিকুল ইসলাম: ইলেকট্রিক লাইন, গ্যাস লাইন আর অপটিক্যাল ফাইবারের কিছু অংশ। অপটিক্যাল ফাইবারের কাজ চলছে। আশা করছি জুনে না হলেও আগামী জুলাই মাসে শেষ হবে। ইলেকট্রিক লাইনের কাজ শেষ। আর গ্যাস লাইনের কাজও শেষ। কিছু টুকটাক কাজ আছে সেটা জুনের মধ্যেই শেষ হবে। তা ছাড়া ব্রিজের উদ্বোধনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন কিছু টুকটাক কাজ হয়তো থাকবে। সেগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: সেতুতে ব্যবহার করা লাইটের কি কোনো বিশেষত্ব আছে?

শফিকুল ইসলাম: স্ট্রিট লাইটের মধ্যে কোনো বিশেষত্ব নেই, তবে আমরা চেষ্টা করেছি কোয়ালিটি জিনিস দেয়ার। আমাদের ম্যানুফ্যাকচারকে বলেছি সুইজারল্যান্ডের ফিলিপসের কোয়ালিটিটা ফলো করতে, যাতে একটা পর্যায়ে আলো না কমে যায়। এটা কনট্রাক্টরের দায়িত্ব। আমরা মনিটর করেছি যাতে সঠিক জিনিসটা আসে। আবার ইলেকট্রিক পোস্টগুলোও চায়না থেকে আনা হয়েছে মান ঠিক রাখার জন্য।

প্রশ্ন: কুয়াশার সময় কোনো সমস্যা হবে কি না?

শফিকুল ইসলাম: কিছুটা ঝামেলা হতে পারে। কারণ এটা কুয়াশা প্রুফ লাইট না, তবে ফগ লাইট তো গাড়িতে থাকে।

প্রশ্ন: এত বড় প্রকল্প শেষ করা তো সাহসের কাজএটা করার পর বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা কতটা বেড়েছে?

শফিকুল ইসলাম: প্রধানমন্ত্রী তো নিজে বলেছেন বাংলাদেশের মর্যাদা ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে। আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল ক্যাপাসিটি প্রমাণিত হয়েছে। এই ব্রিজটা তো আমরা বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়াররাই ম্যানেজ করেছি। যমুনা নদীতে ব্রিজ করার সময় চিফ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন ব্রিটিশ। এখানে চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমি।

আমি তো বুয়েটে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হওয়া লোক নই। আমি পিএইচডিও করিনি। তাহলে আমি যদি এটা করতে পারি তাহলে আমার সিনিয়র-জুনিয়র অনেকের সাহসও বৃদ্ধি পাবে। তারা ভাববেন, উনি যদি এত বড় কাজ করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন নয়। এভাবেই তো সক্ষমতা বাড়ে। সাহস বাড়ে।

ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকার আরও বড় বড় প্রকল্প নিচ্ছে। এটা তো অবশ্যই অনেক বড় উৎসাহের ব্যাপার। আমাকেই দেখে হয়তো অনেকে বলবেন, ইয়েস উই ক্যান ডু ইট। তা ছাড়া পদ্মা সেতুতে যারা কাজ করেছেন তাদের আরও বেটার অপরচুনিটি আসছে। এভাবেই তো মানুষ এগোয়।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের অহংকার এই সেতুর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কী?

শফিকুল ইসলাম: যেকোনো কাজ শেষ করতে পারাটা তৃপ্তির। ছোট বা বড় যা-ই হোক, ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারাটা তৃপ্তির। এটা আল্লাহর রহমত। আমরা একটা বড় কাজ শেষ করতে পেরেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানানোর মতো জিনিস।

যদিও অনেকে অনেক কথা বলে, তবে আমরা মনে করি এটা ভালো কাজ হয়েছে। ১০০ বছর স্থায়ী হবে।

আরও পড়ুন:
পদ্মা সেতু দেয়ালে খেয়ালে 
পদ্মা সেতু উপলক্ষে স্মারক নোট
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন: শিমুলিয়ায় ট্যুরিস্ট পুলিশের শোভাযাত্রা
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ১৪ সেতুর টোল মওকুফ
পদ্মা সেতুর গর্বিত অংশীদার অগ্রণী ব্যাংক

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Vending machine installation and awareness workshops are underway at the university nationwide by the initiative of Fresh Ananya Sanitary Napkin

ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এর উদ্যোগে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনা এবং সচেতনতামূলক কর্মশালা

ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এর উদ্যোগে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনা এবং সচেতনতামূলক কর্মশালা

ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮-এর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে মাত্র ২৯ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে। অর্থাৎ প্রায় ৭১ শতাংশ নারী এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। পিরিয়ডের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করার ফলে সার্ভিক্যাল ইনফেকশন হতে পারে। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহারের ফলে পরবর্তীতে বন্ধ্যাত্ব এমনকি ক্যান্সার-এরও ঝুঁকি থাকে। এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা।

এ লক্ষ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)-এর জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন’ দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। ‘এক্সিলেন্স বাংলাদেশ’-এর সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে। ক্যাম্পেইন-এর অংশ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপ ও সেশন। এর বাইরে কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের নারীদের জন্য সহজে ও সুলভ মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহরে সুবধর্িাথরে জন্য ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করছে ফ্রেশ অনন্যা।

ফ্রেশ অনন্যা-ই বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র স্যানিটারি ন্যাপকিন, যাতে রয়েছে ডাবল লেয়ারড অ্যাডভান্সড অ্যাবজর্পশন টেকনোলজি। সুবিধা ও উপযোগিতার কথা বিবেচনায় রেখে, ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এ ব্যবহার করা হয়েছে এয়ারলেইড পেপার এবং এডিএল লেয়ার। যা নিশ্চিত করে আরও দ্রুত শোষণ এবং সুরক্ষা। তাই পিরিয়ডের দিনগুলো কাটে আরও বেশি স্বস্তিতে।

ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মাঝে পিরিয়ডকালীন পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে দেশব্যাপী স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন ইত্যাদি।

মন্তব্য

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা প্রধান উপদেষ্টার

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা প্রধান উপদেষ্টার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আজ সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:
স্টারলিংকের ইন্টারনেট বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
দেশবিরোধী আন্দোলনে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে : প্রধান উপদেষ্টা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
On the occasion of Independence Day the chief adviser released the postage stamp

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়। 

চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।

এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।

প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:
মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনই আসল সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
হাসান আরিফের জানাজায় শরিক হলেন প্রধান উপদেষ্টা
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে
ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে রাতে মিসর যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Chief Advisor to the Freedom Award

স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: বাসস
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।

এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।

আরও পড়ুন:
জাতীয় মৎস্য পদক দেয়া হলো ২২ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে
মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ভুটানের রাজার শ্রদ্ধা
শ্রদ্ধায় সিক্ত জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি
গৌরবদীপ্ত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Chief Advisor will pick up the Freedom Award on Tuesday

প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেবেন মঙ্গলবার

প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেবেন মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: বাসস
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।

ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।

তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।

গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।

আরও পড়ুন:
পুলিৎজার পুরস্কার দেয়া হচ্ছে আজ
কিউবার রাষ্ট্রীয় পদক পেলেন বাংলাদেশের দুই চিকিৎসা বিজ্ঞানী
‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার নিয়ে যা বলল ইউনূস সেন্টার
মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ভুটানের রাজার শ্রদ্ধা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
April 7 announced the holiday

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন ট্রেনযাত্রীদের পটভূমিতে রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো। গ্রাফিক্স: বাসস
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।

‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’

আরও পড়ুন:
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে যেসব পদক্ষেপ ডিএমপির
ঈদুল ফিতর ২০২৫-এ ঢালিউডে মুক্তির অপেক্ষায় যে সকল বাংলাদেশি সিনেমা
টানা ৯ দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীরা
ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে রেলওয়ের নানা উদ্যোগ
ঈদে ট্রেনযাত্রায় প্রতারণা এড়াতে অ্যাপ বা কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার পরামর্শ

মন্তব্য

বাংলাদেশ
If the family gives courage to women the state will also be on the side Environment Advisor

পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও পাশে থাকবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও পাশে থাকবে: পরিবেশ উপদেষ্টা বার্তা সংস্থা বাসসের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: বাসস
উপদেষ্টা বলেন, ‌‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।

এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।

উপদেষ্টা বলেন, ‌‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’

তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।

“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”

আরও পড়ুন:
নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নিলে লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
শ্রম আইনকে বিশ্বমানের করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
রমজান উপলক্ষে জীবনের সর্বস্তরে সংযমের বার্তা প্রধান উপদেষ্টার
দলীয় নয়, অপরাধ বিবেচনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ ক্রান্তিকালে: শিরীন হক

মন্তব্য

p
উপরে