রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের (আরএসটিপি) অধিকাংশ প্রস্তাবনা প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রকল্পের সমীক্ষা চলছে, কোনোটির বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ হচ্ছে, আবার কোনোটির অবকাঠামো বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে জানা গেছে। পুরো পরিকল্পনাটি ২০৩৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভাকক্ষে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা আরএসটিপি-বিষয়ক একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। আয়োজিত গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা যানজট এবং এই যানজটের ফলে হাজার হাজার কর্মঘণ্টা প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে। গণশুনানিতে সবার মতামত এবং সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি যুগোপযোগী পরিবহন পরিকল্পনা প্রয়োজন। ঢাকা শহর এবং তার আশপাশে গড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এবং নরসিংদী শহরের যান চলাচল ব্যবস্থা ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আছে, যার জন্য একটি সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা প্রয়োজন।
আরএসটিপির প্রকল্প পরিচালক রবিউল আলম জানান, আরএসটিপি প্রকল্পের মিড-টার্ম রিভিউ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কনসাল্টিং ফার্মের নিয়োগ দেয়া শেষ হয়েছে। আরএসটিপিতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবহন পরিকল্পনা ছিল, যা চলমান রয়েছে। তবে দ্রুত পরিবর্তনশীল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে ডিটিসিএ আরএসটিপি হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে। আরএসটিপি মিড-টার্ম রিভিউ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যমান পরিকল্পনা সংশোধন করা হবে এবং এ ব্যাপারে সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
গণশুনানির সভাপতি ও ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘আরএসটিপির অধিকাংশ প্রস্তাবনা বর্তমানে প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পুরো পরিকল্পনাটি মোট চার ধাপে- প্রথম ধাপে ২০১৬ থেকে ২০২০; দ্বিতীয় ধাপে ২০২১ থেকে ২০২৫, তৃতীয় ধাপে ২০২৬ থেকে ২০৩০ এবং চতুর্থ ধাপে ২০৩১ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘বর্তমানে ডিটিসিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মিড-টার্ম রিভিউ অফ আরএসটিপি প্রকল্পের কাজ চলছে। শিগগিরই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। তাই ঢাকাকে আধুনিক ও টেকসই নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পিত উন্নয়নে এটি সুবর্ণ সুযোগ।’
তিনি বলেন, ‘আজকের গণশুনানিতে পাওয়া সব সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং তার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সভায় পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দীন জানান, আরএসটিপির মূল প্রকল্প এসটিপি নামে ২০০৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল। এসটিপিতে অনেক চমৎকার ও টেকসই পরিবহন প্রস্তাবনা ছিল।
তিনি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকার ভেতরে নতুন করে সৃষ্ট যানজট নিরসনে আউটার রিং রোড বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেন।
সভায় ওয়েবিনারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. হাদীউজ্জামান বলেন, আরএসটিপি বাস্তবায়নের জন্য অনেকের অনেক ধরনের মতামত রয়েছে, তবে তা গবেষণাভিত্তিক ফলাফলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা উচিত। আরএসটিপি ট্রান্সপোর্ট মডেল গতানুগতিক ৪ স্টেপ মডেল না হয়ে সেটা ৫ স্টেপ মডেল হওয়া উচিত, যেখানে পরিবহনের সঙ্গে ভূমি ব্যবহারের সমন্বয় করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘মিড-টার্ম রিভিউ আরএসপিটি প্রকল্পের সব সার্ভে তথ্য-উপাত্ত পাবলিক করে দেয়া উচিত, যাতে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ডাটা যাচাই করা যায়।
আরও পড়ুন:ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধ করার পর বাসের টিকিট পেতে যে দুর্ভোগের শঙ্কা ভাবা হচ্ছিল, হয়েছেও তা।
ঈদুল ফিতরে টার্মিনালে গিয়েই টিকিট কেটে বাড়ির পথ ধরা গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে টিকিটের জন্য।
সব রুটে বাসে আগাম টিকিট কাটা হয় না। যেমন গুলিস্তান থেকে দক্ষিণের পথে বিআরটিসি কাউন্টারে গিয়েই কাটা হয় টিকিট। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এই টিকিটের চাহিদা বেড়েছে, তবে ঈদ যাত্রা শুরুর পর যে চাপ দেখা গেছে, সেটি এতদিন দেখা যায়নি।
মো. ইমরান। বাড়ি বরিশাল। পরিকল্পনা করেছিলেন মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটা হয়ে উঠেনি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় লঞ্চের বদলে সড়ক পথে যাচ্ছেন তিনি।
তার সঙ্গে দেখা গুলিস্তানে বিআরটিসির বাসের কাউন্টারে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও টিকিট না পেয়ে ভীষণ বিরক্ত। রাগটা গিয়ে পড়েছে সড়ক বিভাগের ওপর, যারা মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধ করেছে।
নিউজবাংলাকে ইমরান বলেন, ‘আজকেও নিউজ দেখলাম বাস দুর্ঘটনার। বাস-ট্রাক প্রতিদিন দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছে। তাহলে তাদেরকেও বন্ধ করে দিক। সব দোষ হয়েছে বাইকারদের। কে, কবে, কী করছে- তার দায়ভার আমাদের নিতে হচ্ছে। ইচ্ছা ছিল এবারের ঈদে পদ্মা সেতু হয়ে বাইকে বাড়ি যাব। সেটা আর হলো না। এখন কাউন্টারে এসেও টিকিট পাচ্ছি না।’
ইচ্ছার বাইরে ফরিদপুরে বাসে করে যেতে হচ্ছে লিমন মোল্লাকে। তারও পরিকল্পনা ছিল বাইকে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘বাস মালিক সমিতির ইচ্ছায় বাইক বন্ধ হয়েছে। সরকার তাদের খেদমত করতেছে আমাদের বাঁশ দিয়ে। এত মানুষের ভিড় হতো না যদি বাইক চলত।’
দীর্ঘ অপেক্ষায় ভোগান্তি
দূরপাল্লার বিরতিহীন বাসের টিকিট না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে বেছে নিচ্ছেন লোকাল বাস।
ফরিদপুর ভাঙার যাত্রী ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট পাই নাই। এখন লোকাল বাসে করে বাড়ি যাব। অবশ্য আমাদের রুটের লোকাল বাসেও সমস্যা নাই। রাস্তা ভালো তাই।’
অনেকে বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বাস আসলেই তাদের টিকিট দেয়া হচ্ছে। যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি হচ্ছে এবং বাসের স্বল্পতা ও রয়েছে।
বরিশালের যাত্রী মো. সোহান বলেন, ‘বিআরটিসি বাসের আসায় বসে আছি। সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। বাস আসলে টিকিট দিচ্ছে। তবে বাস পর্যাপ্ত না হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।’
বিআরটিসি কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. মেহেদী বলেন, একটা করে বাস আসতে আর টিকিট বিক্রি করছি। বাস না আসলে টিকিট বিক্রি করছি না। জ্যামের কারনে বাস আসতে দেরি করছে। যাত্রীদের সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
যেসব বাসে আগাম টিকিট দেয়া হচ্ছে, সেখানেও কোনো টিকিট নেই। শনিবার পর্যন্ত বাসের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে কাউন্টার থেকে।
দোলা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. রাব্বি বলেন, ‘আগামীকাল পর্যন্ত সিট ফাকা নাই। শনিবার বিকেলে ফাঁকা আছে। আমরা অগ্রিম টিকিট দিচ্ছি। সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় লেগে আছে। গতকাল এত চাপ ছিল না। আজকে হুট করে চাপ বাড়ছে। আগামীকালও এমন চাপ থাকবে।’
টুংগীপাড়া এক্সপ্রেসও সিট ফাকা নেই। পরিবহনটির টিকিট বিক্রেতা মো. রয়েল বলেন, ‘সব সিট বিক্রি হয়ে গেছে। যদি গাড়ি ভাড়ায় তাহলে সিট পাওয়া যাবে। না হলে সিট পেতে শানিবার বিকেল।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর রায়েরবাজারে ছুরিকাঘাতে আহত ২৩ বছরের রবিন ওরফে বক্কর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহতের বোন সোমা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই মোহাম্মদপুর একটি জুসের কোম্পানিতে চাকরি করত। সে পরিবার ও একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এলাকায় থাকতেন।
‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা এক সময় আমার ভাইয়ের সঙ্গে চলাফেরা করত। মেয়ে সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। বন্ধু আলামিন রায়েরবাজার বটতলা পুলপারে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ৩/৪ জন মিলে আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে।’
সোমা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার বাবা দেলোয়ার হোসেন মামলা করেন।’
এর আগে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছুরিকাঘাতের এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অবস্থায় রবিনকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিলশাদ নামে সিএনজি চালকের মাধ্যমে বিকেলে সোয়া ৬টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে তার চিকিৎসা দেয়া হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রবিনের পেটে, পিঠে চার থেকে পাঁচটি ছুরিকাঘাতের জখম রয়েছে। তার অতিরিক্ত রক্তখন হয়েছে।
রবিনের বন্ধু বাবু জানান, রবিনসহ তারা তিনজন রায়েরবাজার বটতলা এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী মিঠুর ছেলেসহ ৫/৬ জন তাদের পথ রোধ করে। সেখান থেকে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায় পাশের রাস্তায়, সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার আগের দিন ওই এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। এর কারণেই এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে তার বন্ধুরা জানিয়েছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘রবিন চিকিৎসা নেয়া অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যান।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কে পশুবাহী ট্রাকচাপায় এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. রতন হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি ঢাকা এসপিবিএন ১-এ কর্মরত ছিলেন।
আদাবর থানার উপপরিদর্শক মাধব চৌধুরী জানান, সকালে পশুবাহী একটি ট্রাক ওই কনস্টেবলের মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। আশপাশের মানুষ তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
তিনি জানান, পশুবাহী ট্রাকটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন। ট্রাকটি শনাক্ত ও চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
কোরবানির পশুর ক্রেতারা যাতে প্রতারণার শিকার না হন, সে লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে বৃহস্পতিবার এ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব হাটে কার্যক্রম চলবে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের। এর মাধ্যমে গরুকে ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে একজন পশু চিকিৎসক থাকছেন। তিনি সন্দেহ হলেই যেকোনো পশুকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। ওই পশুর শরীরে ওষুধের উপস্থিতি পাওয়া গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট পরিদর্শন শেষে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই পশুর হাটে ক্রেতাদের ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত হোক। আগে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে, কোরবানির পশু কিনতে এসে ক্রেতারা প্রতারিত হয়েছেন। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে হাটগুলো মনিটর করা শুরু করেছে।
‘আজ থেকে হাটে চাপ শুরু হচ্ছে। আর আজকেও অনেক পশু হাটে ঢুকছে। তাই কোনো অসুস্থ পশু বা ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা পশু বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রতিটি হাটে র্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হাটে র্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে জাল টাকা শনাক্ত করার মেশিন রয়েছে। কারও যদি কোনো টাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়, তাহলে সেখানে গিয়ে টাকা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারবেন। পাশাপাশি মহাসড়কে পশুর ট্রাকে চাঁদাবাজি, হাটে যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি ও অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে র্যাবের টহল দল কাজ করছে।’
যেকোনো ধরনের সমস্যায় র্যাবের কন্ট্রোল নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চাওয়ারও অনুরোধ করেছেন খন্দকার আল মঈন।
আরও পড়ুন:ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বাড়ি যেতে উদগ্রিব তারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক মানুষকে ট্রেনের ছাদে উঠে বসতে দেখা গেছে।
স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই প্রচুর মানুষের সমাগম, তবে গত ঈদের তুলনায় ভিড় তুলনামূলক কম।
এর আগের বিভিন্ন ঈদযাত্রার সময় দেখা যায়, ট্রেনে পা ফেলার জায়গা থাকছে না, কিন্তু এবার বেশ ফাঁকাই ছিল বগিগুলো।
সকালে নীলসাগর এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন ছাড়ার আগে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ছিল। ওই সময় দেখা যায়, ট্রেনের ভেতরে ফাঁকা থাকলেও টিকিট নেই এমন মানুষজন চেপে বসেছেন ছাদে। জটলা বেঁধে একে অন্যের হাত ধরে টেনে তুলছেন। নিচে থেকে ঠেলে তুলে দিচ্ছেন অনেকেই।
ওই ট্রেনের ছাদে ওঠার চেষ্টায় ছিলেন নজরুল নামের এক ব্যক্তি। এমন সময় নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ঢাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন তিনি। টিকিট নেই। তাই ছাদে চড়ে যাবেন বাড়িতে।
বাড়ি কোথায়, জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও কেন ছাদে উঠে যাবেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি আর কথা বলেননি।
আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে নিউজবাংলা, তবে কেউই সংবাদমাধ্যমের পরিচয় পেয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের যে স্রোত, চাইলেও ছাদে ভ্রমণ বন্ধ করা যায় না অনেক সময়।’
এদিকে আগের কয়েক দিন কমলাপুর স্টেশন থেকে ফাঁকা আসন নিয়ে ট্রেন ছেড়ে যেতে দেখা যায়। কারণ অনেক যাত্রীই এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে উঠবেন।
বৃহস্পতিবার ফাঁকা সিট নিয়ে ট্রেন ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি খুব একটা। যাদের টিকিট নেই বা স্ট্যান্ডিং টিকিট আছে, তারা ফাঁকা আসনগুলোতে চেপে বসেছেন।
ঈদ শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। ফিরতি টিকিটের জন্য খুব বেশি লাইন দেখা যায়নি স্টেশন কাউন্টারে, তবে দীর্ঘ লাইন ছিল কমিউটার ট্রেনের কাউন্টারে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে স্টেশন থেকে যাত্রা, সেই স্টেশন থেকেই দেয়া হবে ফিরতি টিকিট।
বৃহস্পতিবার সকালে স্টেশন থেকে বেশিরভাগ ট্রেনই ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ে, তবে কয়েকটি ট্রেন কিছুটা দেরিতে ছেড়েছে। সেটাও ১৫ বা ২০ মিনিটের বেশি নয়।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা তেমন কোনো দেরি নয়। স্বাভাবিক সময়েও যাত্রী ওঠানামা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে এতটুকু সময় লেগেই যায়।
আর ট্রেনে ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি নেই বলে স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
আরও পড়ুন:সারা বিশ্বেই এখন বিদ্যুতের সংকট জানিয়ে এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুতের কী পরিস্থিতি ছিল, সেটিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘লজ্জা থাকলে বিএনপি লোডশেডিং নিয়ে কথা বলত না।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্ত নবগঠিত ৭৫টি ইউনিট কমিটির পরিচিতি সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে জনগণকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সারা বিশ্বেই এখন বিদ্যুতের সংকট।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে জনগণকে বিদ্যুতের পরিবর্তে খাম্বা এবং পুলিশের গুলিতে লাশ উপহার দিয়েছিল। সেই বিএনপি নেতারা যখন বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলে, তখন তাদের শাসনামলের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সেই দুঃসময়ের কথা মনে পড়ে। বিএনপি নেতাদের যদি লজ্জা-শরম থাকত, তাহলে তারা লোডশেডিং নিয়ে কথা বলত না।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করেছে। এই সময়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নানা প্রকল্পের সুফলও পেয়েছে দেশ। এক যুগে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ছয় গুণের বেশি বেড়েছে, উৎপাদনও বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিদ্যুতের আরও কয়েকটি বড় প্রকল্প উৎপাদনে আসার অপেক্ষায়।
বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বরাবর গর্ব করে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির পর দেশে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তরল গ্যাস বা এলএনজি আপাতত আমদানি করা হবে না। গ্যাসের ঘাটতিজনিত উৎপাদনের যে সংকট সেটি সমাধান করা হবে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে। দেশে এখন দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটা ব্যবহার করত না। তারাই এখন লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আর না কেনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এই কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উপকরণগুলো, সেগুলোর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। যেমন ডিজেলের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে, এলএনজির দামসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কয়লা এখন প্রায় পাওয়াই যায় না।’
বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা শুরুর পর বিএনপি সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছে। তারা বলছে, দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের এই পরিস্থিতি। দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আসলে যে কোনো উন্নয়ন হয়নি, এখন তার প্রমাণ মিলছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘প্রচণ্ড লোডশেডিং হচ্ছে- এটা ভয়াবহ। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতের যে কথা, আজকের এই অবস্থা (লোডশেডিং) প্রমাণ করে যে আমরা যে কথাগুলো বলে আসছি, সেগুলো বাকসর্বস্ব কথা। এগুলো (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা, এসব করে নিজেদের পকেট ভারী করা, বিদেশে গিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা।’
দলের আরেক মুখপাত্র রুহুল কবির বিজভী বলেছেন, ‘উন্নয়নের এত যে ঢাকঢোল বাজানো হলো, তাহলে সারা দেশে লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতি কেন?’
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল নাজুক। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটের বড় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে ব্যর্থতা।
এই পাঁচ বছরে বিএনপি সরকার একটিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারেনি, উল্টো এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কার্যাদেশ বাতিল করেছে। বিদ্যুতের দাবিতে এখানে সেখানে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে সেই সরকার। এমনকি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিও হয়েছে।
সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলে কোনো মুখে? তাদের কি বড় কথা বলার কিছু আছে? মনে আছে ফখরুল সাহেব আপনাদের সময় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং, দিনের পর দিন লোডশেডিং। আপনাদের লজ্জা যদি থাকত লোডশেডিং নিয়ে কথা বলতেন না।’
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সরবরাহজনিত সমস্যার কারণে এখন উন্নত বিশ্বেও বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। সেই তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেক ভালো বলে মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো সৎ ও দক্ষ নেতা ক্ষমতায় আছেন বলেই বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে পরিচিতি সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলেরর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত ‘ক্যাটল স্পেশাল’ ট্রেনে ঢাকায় এক হাজার গরু-ছাগল আনা হয়েছে।
রেলের পূর্বাঞ্চল জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে দুটি ট্রেন এবং পশ্চিমাঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একটি ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন ঢাকায় এসেছে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।
রেল মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ক্যাটল স্পেশাল প্রথম ট্রেনটি প্রতি ওয়াগনে ১৬টি করে মোট ২৫টি ওয়াগনে ৪০০টি গরু নিয়ে বুধবার জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে দুপুর ২টায় রওনা হয়। পরে এটি ইসলামপুর বাজার হয়ে ঢাকা পৌঁছায় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে।
ক্যাটল স্পেশাল দ্বিতীয় ট্রেনটি দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে ১৮টি ওয়াগনে ১৬টি করে ২৮৮টি গরু, ইসলামপুর বাজার থেকে সাতটি ওয়াগনে ১১২টি গরুসহ মোট ২৫টি ওয়াগনে ৪০০টি গরু নিয়ে ঢাকায় পৌঁছায় বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায়।
এ দুটি ট্রেনে মোট গরু আসে ৮০০টি এবং ভাড়া আদায় হয় মোট ৩ লাখ ৯৮ হাজার ১১০ টাকা।
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও বড়াল ব্রিজ থেকে মোট ৩৬টি গরু ও ১৬০টি ছাগল নিয়ে বুধবার বিকেল ৪টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রওনা হয়ে ঢাকা স্টেশনে পৌঁছায় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায়।
এ ট্রেন থেকে মোট ভাড়া আদায় হয় ৪২ হাজার ১২০ টাকা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য