‘পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা শহরে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। পদ্মার ভাঙন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কষ্টের কথা বলেছি। সেসব কষ্ট লাঘবে পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয়তা তাদের কাছে তুলে ধরেছি। সবাই এই দাবিকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন করেছেন। ওয়ার্ড থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সভা-সমাবেশ করেছি। ব্যানার-পোস্টার বানিয়েছি। পত্রিকায় নিউজ পাঠিয়েছি। তবে এসব কর্মকাণ্ড চলাকালে অনেক মানুষ টিটকারী করেছে, হাসি-তামাশা করেছে। অনেকে পাগলও বলেছে।’
আক্ষেপ করে নিউজবাংলাকে এসব কথা বলছিলেন ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের এই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এখন শরীয়তপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
পদ্মা সেতু নিয়ে নব্বই দশকের সেই আন্দোলন ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের বিস্তারিত নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন খোকা সিকদার। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মূল প্রেরণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি নিজে ডেকে নিয়ে আন্দোলনে উৎসাহ দিয়েছেন। তার নির্দেশনাতেই এ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।’
খোকা সিকদার জানান, এ আন্দোলনের কারণে চলতি পথে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। একবার মাওয়া দিয়ে নৌকায় বাড়ি ফেরার সময় লোকজন তাকে ‘শালা পাগল হয়ে গেছে’ বলেও টিটকারী করেছিল।
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রেরণাতেই ১৯৮৬ সালে তারা পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ গঠন করেন। ২১ সদস্যের এই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইত্তেফাকের আব্বাস উদ্দিন আনসারী।
খোকা সিকদার বলেন, ‘হুসেইন মু. এরশাদের সময় যমুনা সেতুর কথা ওঠে। তখনই আমাদের কয়েকজনের উপলব্ধি আসে, আমরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এত কষ্ট করে নদী পার হই। নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে যাতায়াত করি। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য পদ্মা নদীর ওপর সেতু হলে এই কষ্ট দূর হতো।
‘সেই ভাবনা ও উপলব্ধি থেকেই আমি আর আব্বাস উদ্দিন আনসারী ভাইসহ কয়েকজন পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয়তা সবার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করি। ব্যানার-পোস্টার বানানো শুরু করি। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে ঘুরে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলি।’
পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলেন, “পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কষ্টার্জিত টাকা খরচ করে পোস্টার ছাপাই। ১৯৮৬ সালের সেই পোস্টারে লেখা ছিল, ‘২১ জেলার ৫ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি পদ্মা সেতু চাই।’”
তিনি জানান, ১৯৮৬ সালে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ গঠনের পর তারা এ কার্যক্রম সবখানে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। খুলনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের জেলাভিত্তিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেসব কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার দলীয় নেতা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার যুব ও ছাত্রনেতারা সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
খোকা সিকদার বলেন, “এসব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে আরও একটি পোস্টার করি আমরা। সেখানে লেখা ছিল, ‘পদ্মা সেতু কেন চাই?’ পরে আরেকটি পোস্টার করি, তাতে লেখা ছিল, ‘পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন চাই।’”
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের এই পুরো সময়ে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। অনেকেই আমাদের দাবি নিয়ে হাসি-তামাশা করলেও বিভিন্ন জেলার মানুষকে এই দাবিতে একত্রিত করার কারণে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন চাই স্লোগানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
‘আমরা খুলনা, ফরিদপুর ও ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করি। তখন অনেক সাংবাদিকও বলেন, পদ্মা নদীতে সেতু চান? সেটা তাহলে কোথায় হবে? এমন প্রশ্ন করলে আমি বলি, এটা তো সরকারের পক্ষ থেকে ফিজিবিলিটি যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মাওয়া পয়েন্টেও হতে পারে। এখন সেই মাওয়া পয়েন্ট দিয়েই হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, সেতু দিয়ে চলবে ট্রেনও।’
একদিনের উপহাসের ঘটনা বর্ণনা করতে করতে খোকা সিকদার বলেন, ‘একবার লঞ্চে ফরিদপুরে বোনের বাসায় যাচ্ছি। পথে কেবিন থেকে লোকজন বলে উঠল, এই শালার পাগল পদ্মা নদীতে সেতু চায়! তারপর সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকবার মাওয়া থেকে নৌকায় বাড়ি যাচ্ছি। উত্তাল পদ্মার বড় বড় ঢেউ দেখে সবাই ভয় পেল। আমিও ভয় পেয়ে গেছি। একটা পর্যায়ে নদীর শান্ত এলাকায় পৌঁছালে অনেকেই টিটকারী করতে শুরু করল। বলল, এই নদীতে নাকি সেতু হবে! অনেক সময় হেঁটে যাওয়ার পথেও লোকজন হাসাহাসি করত এই দাবি নিয়ে। বলত, শালা পাগল হয়ে গেছে।’
ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, ‘তাদের এমন উপহাসে আমরা দমে যাইনি। এই সেতুর দাবি নিয়ে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, খুলনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলি। মতবিনিময়, সভা-সমাবেশে পদ্মা সেতুর দাবির কথা বলতে থাকি।
‘এ সময়ে লিয়াকত নামের একজন খুব হেল্প করেছিলেন। আমি আর ইত্তেফাকের আব্বাস উদ্দিন আনসারী ভাইয়ের নেতৃত্বে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। তারপর বিএনপি সরকার এসে সেটা ভেঙে ফেলে। তারপরের ইতিহাস সবাই জানেন। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা নিজের টাকা দিয়ে নিজেই পদ্মা সেতু করলেন।’
পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘যদি কেউ কোনো কাজ আন্তরিকভাবে করার চেষ্টা করেন, সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করেন, সেটা সফল হবেই। আমি যদি এই আন্দোলন করার জন্য কিংবা পোস্টার-ব্যানার তৈরির জন্য চাঁদা তুলতাম, তাহলে হয়তো এই আন্দোলন করা সম্ভব হতো না। নানাজন নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতেন।
‘এখন আমার আর কোনো চাওয়া নেই। সেতু দিয়ে এখন পদ্মা সেতু পার হতে পারব এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পটি ২০০৭ সালের আগস্টে অনুমোদন দেয় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরে সেতুর অর্থায়ন নিয়ে নানা নাটকীয়তা চলে। শেষে আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেতুর সঙ্গে রেলপথও যুক্ত করা হয়।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতু ও নদীশাসন কাজ উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি শুরু হয় নকশা ও পুনর্বাসন কাজ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন শুধু দৃশ্যমান বাস্তবতাই নয়, খুলে দেয়া হচ্ছে যান চলাচলের জন্যও।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার ইউএনবিকে বলেন, সোমবার বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
বিএফআইইউর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, লেনদেন তলব করার জন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
চিঠিতে তলব করা ব্যক্তিদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা কোথায় ও কীভাবে এসেছে, পরে ওই টাকা কোথায় খরচ হয়েছে এবং নগদে উত্তোলন করা হয়েছে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে এই ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং তার বোন শেখ রেহানা একজন ট্রাস্টি।
এ ছাড়া এই ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত অন্যদের বা ট্রাস্টের হিসাব থেকে যেসব অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর বা জমা হয়েছে, তাদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে দেয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছে আপিল বিভাগ।
একই সঙ্গে এ মামলায় তাদের দেয়া সাত বছরের দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার ইমেজকে ক্ষুণ্ন করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সাত বছরের সাজা দিয়েছিলেন।
‘আজকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আমাদের লিভ দিয়েছেন (আপিলের জন্য অনুমতি)। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদক ও আমাদের আপিলের সারসংক্ষেপ দিতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সাত বছরের দণ্ড স্থগিত করেছেন। এই মামলায় দুইজন আসামি। দুইজনের ক্ষেত্রেই সাজা স্থগিত করা হয়েছে।’
রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর মামলাটি করে দুদক। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যাদের মধ্যে অভিযোগপত্রের বাইরের সাক্ষী হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য একটি নির্মাণ কোম্পানির চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এ টাকা লেনদেন হয়।
এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন।
এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এ মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত।
রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেয় আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন মামুনও আপিল করেন।
দুই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
একই মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। আজ এই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:এবার বিজয় দিবসকে উৎসবমুখর করতে সারা দেশে বিজয় মেলার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
ইউএনবিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ইউএনবিকে বলেন, ‘বিজয় দিবস আমাদের জাতির জন্য অনন্য দিন। ৯ মাস যুদ্ধ করে জাতি এই বিজয় অর্জন করেছে। সারা দেশের মানুষ যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিল।
‘একসময় গ্রামে ও সারা দেশেই এই বিজয় উৎসব হতো। ধীরে এই উৎসব নিষ্ক্রিয় ছিল। এবার সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজয় মেলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে চারু, কারুমেলার সঙ্গে কৃষি পণ্যের মেলা হবে। তার সঙ্গে দেশীয় পণ্য পরিবেশন করা হবে। মেলায়, শিশু, নারী, পুরুষ সবার অংশগ্রহণ থাকবে।
‘এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সবাই আনন্দ উপভোগ করবে। পাশাপাশি স্কুলগুলোতে অনুষ্ঠান হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে যে প্রচলিত কুচকাওয়াজ হতো, এতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকত না, সেখানে স্কাউট ও সেচ্ছাসেবকরা থাকত। তার সঙ্গে অন্যান্য বাহিনী থাকত। এতে সরাসরি জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। এবার শিশু, নারী, পুরুষ সব শ্রেণির জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে এবার কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। কারণ সেনাবাহিনী এখন সারা দেশে ব্যস্ত।
‘এটার জন্য একটা প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাই এবার প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। এটার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন।’
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় স্টেডিয়ামে আগে প্রধানমন্ত্রী যেতেন। এবার প্রধান উপদেষ্টা যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, উপদেষ্টা যাবেন না। এ রকম প্রোগ্রাম হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রোগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। তেমনই ঢাকায় এখানকার জেলা প্রশাসন করবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে প্রশাসন করত কুচকাওয়াজ, এখন প্রশাসন মেলার আয়োজন করবে। সেখানে স্ব স্ব এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় সব পর্যায়ের জনগণ অংশ নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
আরও পড়ুন:দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মঙ্গলবার এ পদে তাকে নিয়োগ দেন।
এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিয়া আলী আকবর আজিজি ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদকে দুদকের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের কথা জানানো হয়।
গত ২৯ অক্টোবর দুদকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং দুই কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছাম্মৎ আছিয়া খাতুন। এর পর থেকে দুদকের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার পদ খালি ছিল।
পদোন্নতিবঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন পেশ করেছে।
কমিটির প্রধান জাকির আহমেদ খান কমিটির অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, নির্ধারিত ৯০ দিনের পূর্বেই প্রতিবেদন পেশ করায় কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রতিবেদন পেশ করার সময় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এই সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনাপূর্বক যথাযথ সুপারিশ প্রণয়নের জন্য সরকার গত ১৬ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থসচিব এবং বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
কমিটি সূত্রে জানা যায়, এটি আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার ৭৫৪ জনকে পদায়নের সুপারিশ করে। তার মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ১১৯ জনকে সচিব, ৪১ জনকে সচিব পদমর্যাদায় গ্রেড-১ পদ ও ৫২৮ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিটি গত তিন মাসে প্রায় ১৯টি সভা করে। আবেদনকারী ১৬ বছরে পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, কোনো পদোন্নতি পাননি– এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমেও রিপোর্ট নেয় কমিটি। সেই রিপোর্ট নেতিবাচক না হওয়ায় বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
যাদের চাকরির মেয়াদ বেশি আছে, তাদের পর্যায়ক্রমে সচিব করা যেতে পারে এমন সুপারিশ করা হয়েছে। যাদের সময় কম আছে, তাদের সরকারের এক্সটেনশন অনেক পদ আছে। সেখানে দেয়ার সুপারিশ করেছে।
বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়াদের সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থায় গ্রেড-১ পদমর্যাদা দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
আরও পড়ুন:স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন পদত্যাগ করেছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবদুল মোমেন। সোমবার তার পদত্যাগপত্র প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয় এবং তা গ্রহণ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে মঙ্গলবার এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, পদত্যাগের কারণ আবদুল মোমেন ‘ব্যক্তিগত’ বলে উল্লেখ করেছেন, তবে ১৯৮২ সালের বিশেষ বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা আবদুল মোমেনকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হতে পারে।
দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) আছিয়া খাতুন গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেন।
পরে দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দিতে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই আবদুল মোমেনকে দুদকের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর গত ১৭ আগস্ট আবদুল মোমেনকে দুই বছরের চুক্তিতে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
পরের দিন তাকে জ্যেষ্ঠ সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। গত ১ অক্টোবর থেকে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
আবদুল মোমেন ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও বিমানের এমডি ছিলেন।
তার আগে নব্বইয়ের দশকে তিনি ছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস। ২০০৯ সালে অতিরিক্ত সচিব থাকা অবস্থায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আরও পড়ুন:‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান করতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিলের অনুমতি দিয়েছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। তিনি আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
‘জয় বাংলা’কে ২০২০ সালের ১০ মার্চ জাতীয় স্লোগান করার ওই রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলে, ‘জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সাথে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ’
আদালত আরও বলে, ‘আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন। এটা এ আদালতের এখতিয়ার-বহির্ভূত। কারণ কোনো আইন প্রণয়ন করা এবং সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।’
তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছে উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলে, আইন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করায় একমত পোষণ করেছেন। এরপর আদালত রায়ের অংশ ঘোষণা করে।
আদেশে আদালত বলে, ‘ক. আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।
খ. সকল জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারী এবং রাষ্ট্রীয় সব কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ যেন করেন, সে জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
গ. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পর ছাত্র-শিক্ষকরা যেন জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।’
আদালতের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন ৩ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলে নির্দেশ দেয়া হয়।
২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট।
রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট। পরে ৫ ডিসেম্বর থেকে এ রুলের শুনানি শুরু হয়। এরপর হাইকোর্ট রায় দেয়।
সম্প্রতি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য