আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা মার্কা ছাড়া এই দেশের মানুষদের কোনো গতি নেই বলে মনে করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কেবল স্বাধীনতা এনে দেয়নি, স্বাধীনতার সুফল এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে সাম্প্রতিক নানা ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন।
সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবির পর জোট নেতারা অভিযোগ করেন, আগের রাতেই সিল মেরে বাক্স ভরা হয়েছে আর দিনভর তাদের ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি।
তবে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, সেই নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন-বাণিজ্য করেছিল। বলেন, ‘নেতৃত্বশূন্য একটা দল ইলেকশন করবে, জনগণ ভোট দেবে কী দেখে? ওই চোর, ঠকবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা, খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি- তাদের এ দেশের জনগণ ভোট দেবে এ দেশ চালানোর জন্য? তা তো এ দেশের জনগণ দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তারা জানে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা। এবার বন্যায়ও তো নৌকার জন্য হাহাকার। নৌকা ছাড়া তো গতি নাই বাংলাদেশে- এটাও মনে রাখতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখানে নিজের ভাগ্য গড়তে আসেনি। আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যদি দেখা যায় আজ পর্যন্ত এ দেশের মানুষের যতটুকু অর্জন সবটুকুই আওয়ামী লীগের হাতে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। এ জন্য আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয় না। কারণ, তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করতে পারে না, নির্যাতন করতে পারে না।’
এ দেশের প্রকৃতি, মানুষের উন্নয়ন আওয়ামী লীগ যতটা বুঝবে অন্যরা তা বুঝবে না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বুঝবে কী করে? বিএনপির হৃদয়ে তো থাকে পাকিস্তান। তাদের মনেই আছে পাকিস্তান। দিল ম্যা হ্যায় প্যায়ারে পাকিস্তান। সারাক্ষণ গুণ গুণ করে ওই গানই গায়।’
নেতাকর্মীদের বিএনপি নিয়ে না ভাবার পরামর্শও দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের ভালো চাইবে না এটা খুব স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আপনাদের এত দুঃখ করার, চিন্তা করার কিচ্ছু নাই। আর ওদের কথা যত না বলা যায় ততই ভালো। কারণ ওরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না।
‘বরং এই সবগুলিকে গাট্টি বাইন্ধা পাকিস্তানে পাঠাইয়া দিলে ভালো হয়। পাকিস্তানের এখন যে অবস্থা ওখানে থাকলেই তারা ভালো থাকবে। এখনও লাহোরে সোনার দোকানে খালেদা জিয়ার বড় ছবি আছে যে ওই দোকানের সোনার গহনা তার খুব প্রিয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের জন্মও তো বাংলাদেশে না। না জিয়ার জন্ম বাংলাদেশে, না খালেদা জিয়ার জন্ম বাংলাদেশে- কারো জন্মই না। এরশাদও তো কোচবিহারি। একমাত্র আমার বাবা ছিলেন এই দেশের, আমারও এই দেশের মাটিতে জন্ম। কাজেই মাটির টান আলাদা। এখানে আমাদের নাড়ির টান। কাজেই এই দেশের মানুষের ভাগ্য গড়াটাই তো আমাদের লক্ষ্য। সেই জন্যই আমরা কাজ করি। আওয়ামী লীগের আদর্শই হচ্ছে জনগণের সেবা করা।’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পাঁচ বছরে যতটুকু অর্জন করতে পেরেছিল, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সবই নস্যাৎ করেছিল বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। খালেদা জিয়া প্রাইম মিনিস্টার থাকতে পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে এক নম্বর চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। সেই ভাবমূর্তি বাংলাদেশের জন্য কতটা অসম্মানজনক।
‘সেখান থেকে আমরা দেশকে পরিবর্তন করে এখন বিশ্বে একটা সম্মানজনক স্থানে নিয়ে গেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আমরা পেয়েছি।’
বিএনপি মিথ্যার কারখানা
বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগও আনেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘মিথ্যা কথা বানানো আর মিথ্যা কথা বলার যদি কারখানা থেকে থাকে, সেটা হলো বিএনপি। তারা মিথ্যা কথা বানানো, বলতে খুব ভালো পারে। …আমাদের কিছু লোক সেটা বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকে।’
সরকারপ্রধান উল্লেখ করেন, ‘আমরা পদ্মা সেতু করেছি আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে। এটা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। বিএনপি আবার প্রশ্ন তোলে কোন মুখে, যাদের আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা? এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজা পেয়েছেন খালেদা জিয়া। শুধু এতিমের অর্থ কেন, নাইকো, গ্যাটকো- এ রকম বহু কেস ঝুলে আছে। ওই কেসে সে তো কখনও কোর্টেই যেতে চায়নি। প্রত্যেকটা প্রজেক্টে দুর্নীতি করে তারা টাকা বানিয়েছে। তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া, কোকো সবই তো।’
‘পদ্মায় দুর্নীতির অভিযোগ তো কানাডার আদালতই নাকচ করেছে’
পদ্মা সেতুতে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টার যে অভিযোগ বিশ্বব্যাংক করেছিল, কানাডার একটি আদালতের রায়ে ২০১৭ সালে নাকচ হওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাংক একটি উড়ো চিঠির ভিত্তিতে অভিযোগ করেছিল, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন এই প্রকল্পে কাজ পেতে ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করছিল। তবে ২০১৭ সালে কানাডার আদালতে লাভালিনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি বাতিল হয়ে যায়। বিচারক বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে গালগপ্প বলে উড়িয়ে দিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কানাডার কোর্টে মামলা দিয়েছিল। স্পষ্টভাবে রায়ে বলা হয়েছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যে যে অভিযোগ এনেছে সবই মিথ্যা, ভুয়া, কোনোটাই সঠিক না।
‘একটা অপবাদ দিতে চেয়েছিল। সেটা তো আজকে প্রমাণিত যে এখানে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। তারপরে এই সেতুটা যে আমরা করেছি এটা তো একটা মাল্টিপারপাস সেতু আমরা করেছি। সেটা নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলে কোন মুখে? ওরা (বিএনপি) তো কিছুই করে যেতে পারেনি।’
যমুনা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে খুব বেশি এগোতে পারেননি। কারণ, সব জায়গায় তো কমিশন খাওয়ার অভ্যাস। আবার কমিশন তো একজনকে দিলে হবে না। মায়ের জন্য একটা, দুই ছেলের জন্য দুইটা, ফালুর জন্য একটা, অমুকের জন্য একটা- এই করতে করতে কেউ আর ওখানে কাজ করতে পারত না। এত ভাগে ভাগে তাদের কমিশন দিতে হতো। সেই কারণেই কোনো কিছু এগোতে পারেনি।
‘আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এই যমুনা সেতুতে রেললাইন, গ্যাসলাইন, বিদ্যুতের লাইন নিয়ে এটার ডিজাইনটা পাল্টে মাল্টিপারপাস ব্রিজ করে আমরাই তৈরি করি।’
তারেকের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাগরিকত্বের পরিচয় নিয়ে আবার প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তারের পরের বছর প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎকার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়ে আর ফেরেননি তারেক রহমান। এর মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলায় তার সাজা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে আগের দিন করা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গটি আওয়ামী লীগের আলোচনাতেও তোলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতি করে যদি টাকা না বানাবে বিদেশে এত বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে কী করে? কত টাকা খরচ করে সেখানে কোম্পানি খুলেছে এবং সেই কোম্পানিতে প্রথমেই সে যে ব্রিটিশ নাগরিক সেটা লিখেছে। পরে এক বছর পরে সেটাকে আবার সংশোধন করে সেখানে বাংলাদেশের নাগরিক লিখেছে।
‘কারণ, মিথ্যা কথা লেখাতে ধরা পড়ে যায়। কাজেই সেটাকে আবার সংশোধনও করেছে। যখন টাকার কথা তুলেছি যে সে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেল কোথা থেকে? একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ব্রিটিশরা কীভাবে নাগরিকত্ব দেয়? সেটা এখন তারা উইথড্র করেছে। এখন বাংলাদেশের লিখেছে।’
সব জেনেশুনেই প্রসঙ্গটি তুলেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য তো আমাদের কাছে আছে। এদেরই বেশি বড় গলা। কথাই তো বলে, চোরের মায়ের বড় গলা।’
আমাকে হত্যার চেষ্টা করেন খালেদা-তারেক
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা তুলে ধরে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সরাসরি দায়ী করেন শেখ হাসিনা। বলেন, '২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়ে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া আমাকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছে। কোটালীপাড়ার বিশাল বোমার পেছনে কি তারা ছিল না? সেখানেও তাদের হাত ছিল।
‘বারবার আমার ওপর যে আঘাত করেছে, গুলি বোমা, ট্রেনের মধ্যে গুলি এবং ট্রেনের মধ্যে পাথর মারা, কারা করেছে? এরাই করেছে। এরাই যে ১৫ আগস্টের হত্যা এবং চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ৭৫-এর হাতিয়ারকে সমর্থন দেয়, অর্থাৎ খুনিদের সমর্থন দেয়।’
‘বন্যায় সহায়তা না দিয়ে তারা মায়াকান্নায় ব্যস্ত’
সিলেট অঞ্চল ও উত্তরের বন্যায় বিএনপি দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায়নি বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তারা সেখানে না দিয়ে ঢাকায় বসে নানা কথা বলছে।
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘আজকে বন্যা হয়েছে, আজ পর্যন্ত কোনো বিএনপির নেতা বা কেউ কোনো সাহায্য দিয়েছে বন্যাবাসীদের? দেয়নি। ঢাকায় বসে বসে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমন এমন দুর্গম এলাকা যেখানে বন্যার পানির জন্য কেউ পৌঁছাতে পারছে না।
‘আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগও ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে। তারা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, খাদ্য সাহাষ্য দিচ্ছে, উদ্ধার কাজ করছে। তারা (বিএনপি) বন্যাবাসীদের জন্য আজ পর্যন্ত এক মুঠো খাবারও দিতে পারেনি বা তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে এখানে বসে বসে মায়াকান্না কেঁদে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে এদের চরিত্র।’
ত্রাণ নিয়ে এতটুকু গাফিলতি নেই
বানভাসি মানুষের পাশে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, প্রশাসন সবাইকেই নিয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা সবাই সেখানে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত উদ্ধার করা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, খাদ্য দেয়ায় সেখানে এতটুকু গাফলতি নেই।
‘ডে ওয়ান থেকে আমরা এই বানবাসী মানুষের পাশে আছি। বন্যা- এটা প্রাকৃতিক কারণেই বাংলাদেশে আসবে, হবেই। এর সঙ্গে আমাদের বসবাস করতে হবে।’
আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যা চলতেই থাকবে বলেও সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এই পানি আস্তে আস্তে নিচে যত নামতে থাকবে ধীরে ধীরে একেকটা এলাকা প্লাবিত হতে থাকবে। আমাদের সেই প্রস্তুতিও রাখতে হবে। এটা কিন্তু একেবারে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চলবে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে এই বন্যা। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের কিন্তু প্রস্তুতি নিতে হবে।
করোনা আবার বাড়ছে বলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:মহাসড়কে এক জেলা থেকে আকের জেলায় মোটরসাইকেলে করে যাত্রা নিষিদ্ধ করার পরও যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে বাইকে ঈদ যাত্রার যে সুযোগ পুলিশ করে দিয়েছে, তাকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে আবেদন করতে হবে।
পুলিশ সদরদপ্তর একটি পাসের ফরম্যাট তৈরি করে দিয়েছে। এই পাস থাকলে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহাসড়ক ধরে নির্দিষ্ট জেলা বা দূরত্বে যেতে পারবেন চালকরা।
বছরের পর বছর ঈদযাত্রায় সড়ক পথে যে দুর্ভোগ, সেটি দেখা যায়নি চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে। এটি কীভাবে হলো, তার পর্যালোচনায় পরে বেরিয়ে আসে বাইকের বিষয়টি। হাজার হাজার মোটর সাইকেলে করে বড় শহর থেকে লাখ লাখ যাত্রীর বাড়ি ফেরার কারণে বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে ভিড় ছিল খুবই কম।
টিকিটের জন্য হাপিত্যেস ছিল না একেবারেই। আবার সড়কে বাসের অপেক্ষায় যাত্রী কম থাকায় যানজটও দেখা যায়নি।
তবে এবার ঈদের আগে পরে সাত দিন মহাসড়কে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বাইক নিষিদ্ধ করার পর সেই ভোগান্তি ফিরে আসার নমুনা এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে। টিকিটের জন্য কাউন্টারে ভিড় তৈরি হয়ে গেছে।
এর মধ্যে পুলিশের একটি ঘোষণা অবশ্য বাইকারদেরকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। সেটি হলো পাস নিয়ে ঈদ যাত্রা করা যাবে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিভাগীয় ট্রাফিক উপ-কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে এসপি এই মুভমেন্ট পাস ইস্যু করবেন। এজন্য পুলিশ সদরদপ্তরের সরবরাহ করা ফরমে যাত্রার জন্য আবেদন করতে হবে।
সেই ফরমে যাত্রীদের নাম, ঠিকানা, সম্পর্ক, এনআইডি-ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, ফোন নম্বর এবং কোথায় ও কী কারণে ভ্রমণ করছেন উল্লেখ করে জমা দিতে হবে।
ফরমে উল্লেখিত কারণ যৌক্তিক মনে হলে ফরমের একটি অংশ আবেদনকারীকে সরবারহ করা হবে। এই অংশটিই পাস হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে কোনোভাবেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া ও রাইড শেয়ারিং এর জন্য এই পাস মিলবে না বলে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:কোথায় আপনার বিদ্যুৎ? আপনাকে দেশবাসী আর সহ্য করবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে এই বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সব কথা দ্বিচারিতামূলক। তিনি নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। তাহলে লোডশেডিং কেন?’
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।
চলতি মাসের শুরু থেকে দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতির পর পরই সরকারকে আক্রমণ করছে বিএনপি। তাদের দাবি, সরকার গত এক যুগে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে গর্ব করলেও আসলে এই খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি।
অন্যদিকে দলটির সর্বশেষ শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের করুণ চিত্র তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির লজ্জা থাকলে লোডশেডিং নিয়ে কথা বলত না।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করেছে। এই সময়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নানা প্রকল্পের সুফলও পেয়েছে দেশ। এক যুগে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ছয় গুণের বেশি বেড়েছে, উৎপাদনও বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিদ্যুতের আরও কয়েকটি বড় প্রকল্প উৎপাদনে আসার অপেক্ষায়।
বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বরাবর গর্ব করে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির পর দেশে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তরল গ্যাস বা এলএনজি আপাতত আমদানি করা হবে না। গ্যাসের ঘাটতিজনিত উৎপাদনের যে সংকট সেটি সমাধান করা হবে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে। দেশে এখন দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটা ব্যবহার করত না। তারাই এখন লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আর না কেনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে সরকার রাত ৮টায় বিপণিবিতান বন্ধের পাশাপাশি অফিস সময় পুনর্নির্ধারণ করে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত করার চিন্তা করছে।
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সব কথা দ্বিচারিতামূলক। তিনি নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। তাহলে লোডশেডিং কেন? …আপনি উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করে যে টাকা পাচার করেছেন তার কুফল মানুষ এখন ভোগ করছে। বিদ্যুৎ খাতে জনগণের ভর্তুকির টাকা হরিলুট করা হয়েছে। বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসে নয়ছয় হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে নজর দেয়নি।
‘নিজের আত্মীয়স্বজনের দিয়ে কুইক রেন্টালের সুযোগ দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছেন বিদ্যুৎ খাত থেকে। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘উন্নয়নের নামে হইচই করে এত লাফালাফি করলেন, কোথায় আপনার বিদ্যুৎ? আপনাকে দেশবাসী আর সহ্য করবে না।
‘আপনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে চলেছেন। কোথায় ১০ টাকার চাল? কোথায় ঘরে ঘরে চাকরি? আজকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকার তথা কর্মহীন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে। আপনি ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষ না খেয়ে থাকা। আপনি ক্ষমতায় থাকা মানে কর্মহীন থাকা। আজকে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে বিভিন্ন কালাকানুন করেছে সরকার।’
ঈদে মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, ‘মাফিয়া আওয়ামী লীগের লোকেরা সিন্ডিকেট করে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ ভাড়া আদায় করছে। আজকে সিন্ডিকেট এমনভাবে চেপে বসেছে মানুষ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। কোরবানির হাটেও সিন্ডিকেট করছে আওয়ামী লীগের লোকজন। সরকারদলীয় লোকেরা ইচ্ছামতো দাম বৃদ্ধি করে ক্রেতাদের পশু কিনতে বাধ্য করছে।
‘দেশের মানুষ ঈদের প্রাক্কালে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে হাপিত্যেশ করছে। সরকার জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। মানুষ বন্যার পানিতে ভাসছে, তাদের দিকে সরকারের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। তারা পদ্মা সেতুর জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত।’
পদ্মা সেতুতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি তোলা নিয়ে প্রশ্ন
পদ্মা সেতুতে দাঁড়ানো ও ছবি তোলা নিষিদ্ধের আদেশ জারির পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি তোলা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘দেশ চলছে মাফিয়া শাসনের অধীনে। এখানে আইনের কোনো বালাই নেই। হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রীরা যা খুশি বলছে এবং করছে।’
গত ৪ জুলাই পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান প্রধানমন্ত্রী। যাওয়ার পথে তারা সেতুতে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন।
তবে ২৫ জুন সেতু চালুর আগে সেতু কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেতুতে দাঁড়ানো বা ছবি তোলা যাবে না বলে জানায়।
রিজভী বলেন, ‘উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুর ওপর নেমে ছবি তোলা যাবে না। ছবি তোলায় কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। অথচ কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সেলফি তুলেছেন। আসলে এক দেশে দুই আইন চলছে।’
‘দেশে নির্বাচিত সরকার থাকলে তারা আইন মানত। তারা তো অনির্বাচিত। সে জন্য যখন যা চায় তারা তাই করছে।’
আলোচনা সভা শেষে অর্পণ সংঘের উদ্যোগে যুবদলের প্রয়াত নেতা জি এস বাবুলের স্ত্রীর হাতে অর্থসহায়তা তুলে দেন রিজভী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, জাহেদুল কবির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ও অর্পণ সংঘের বীথিকা বিনতে হোসাইন, ওমর ফারুক কাওসার ও আরিফুর রহমান তুষার।
বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব ধরনের আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন ও সংযোগ অধিশাখার উপসচিব সাইফুল ইসলাম ভুইয়ার সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জা না করার জন্য নির্দেশনাক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
সারা দেশে আলোকসজ্জা না করতে এর আগে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নবস্থাপিত ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে গণভবনে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে এ সংকট আরও তীব্র। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক স্থাপনার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান লোডশেডিংয়ের কারণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়িয়েছি। সেই বিদ্যুৎ আজকে আমরা সমস্ত বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ঘরে দিতে সক্ষম হয়েছি, তবে আপনারা জানেন যে রাশিয়া-ইউক্রেনের যে যুদ্ধ, যুদ্ধ পরবর্তীতে আমেরিকা রাশিয়ার ওপর যে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিল, ইউরোপ স্যাংশন দিল; ফলাফলটা এই দাঁড়িয়েছে, এখন তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ডিজেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে।’
প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এলএনজির দাম বেড়ে গেছে। সবকিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালিয়ে রাখা, আমাদের নিজস্ব যেটুকু গ্যাস আছে, তা ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে রাখাটাই একটা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।’
কোন বিদ্যুৎ উপকরণের কত দাম বেড়েছে, তার পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘ফার্নেস অয়েল যার মূল্য ছিল মাত্র ৭০৮ টাকা, সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের পর হয়ে গেছে এক হাজার ৪০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩২ টাকা, ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলএনজি যেটা মাত্র এমএমবিটিও ১০ ডলারে ক্রয় করা হতো, সেটা এখন ৩৮ ডলার। আর ২৮০ পার্সেন্ট প্রায় তার দাম বেড়ে গেছে। কয়লা সেটাও ১৮৭ ডলার ছিল, সেটা এখন ২৭৮ ডলার।
‘ডিজেল যেটা ছিল ৮০ ডলার, এখন সেটা ১৩০-এ চলে আসছে। এমনকি শোনা যাচ্ছে, এটা নাকি ২০০ থেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। অর্থাৎ এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে সারা বিশ্ব যাচ্ছে। আমরা এখন নির্ভরশীল ডিজেলের ওপর, সেই ডিজেলের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।’
যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর আমেরিকা বা ইউরোপ অবরোধ আরোপ না করলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ নাও হতে পারত বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘এই স্যাংশনটা যদি না হতো তাহলে রাশিয়া থেকে, ইউক্রেন থেকে, এরা যুদ্ধও করত, আবার তাদের তেল বা ফার্টিলাইজার, গম এগুলোর সাপ্লাইটাও ঠিক থাকত। যদিও জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেলের উদ্যোগে একটা চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ হয়েছে। তার মধ্যে আমি আছি। সেখানে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনা করে অন্তত বিশেষ করে খাদ্যটা যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, খাদ্য এবং সার যেন তারা আসতে দেন, এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘অবশ্য সে কারণে আমি সবাইকে আহ্বান করেছি, প্রত্যেককে নিজের সঞ্চয়টা বাড়াতে হবে। খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে হবে এবং যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে; বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে।’
লোডশেডিং কখন, কোথায় হবে, তার সূচি তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক এলাকাভিত্তিক, কখন কোন এলাকায় কত ঘণ্টা লোডশেডিং হবে, এটার একটা রুটিন তৈরি করে সেভাবে লোডশেডিং, যাতে সেই সময়ে মানুষ প্রস্তুত থাকতে পারে, যাতে মানুষের কষ্টটা আমরা লাঘব করতে পারি। সেই বিষয়টা আমাদের নজরে দিতে হবে।
‘আমি মনে করি, আশা করি দেশবাসী অন্তত এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।’
আরও পড়ুন:বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে দেশে বিদ্যুৎ খাতের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দূর হতে অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে ধারণা করছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। তার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে অনুরোধ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সারা দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখন যে অবস্থায় আছি এটা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্টেইন করতে পারলে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে।’
সেপ্টেম্বরের পর কীভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তার কারণও ব্যাখ্যা করেন তৌফিক। তিনি বলেন, ‘এলএনজির ওপর নির্ভরতার কারণে আমরা যে বিপাকে পড়েছি, তখন কতগুলো কোল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসবে।
‘যেমন আদানির একটি আসবে, রামপাল আসবে, চট্টগ্রামে এস আলমেরটা আসবে, তিন-চার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্ট আসবে। কম-বেশি অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট আমরা পাব।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করেছে। এই সময়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নানা প্রকল্পের সুফলও পেয়েছে দেশ। এক যুগে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ছয় গুণের বেশি বেড়েছে, উৎপাদনও বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিদ্যুতের আরও কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প উৎপাদনে আসার অপেক্ষায়।
বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বরাবর গর্ব করে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির পর দেশে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তরল গ্যাস বা এলএনজি আপাতত আমদানি করা হবে না। গ্যাসের ঘাটতিজনিত উৎপাদনের যে সংকট সেটি সমাধান করা হবে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে। দেশে এখন দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটা ব্যবহার করত না। তারাই এখন লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আর না কেনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এই কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উপকরণগুলো সেগুলোর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। যেমন ডিজেলের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে, এলএনজির দামসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কয়লা এখন প্রায় পাওয়াই যায় না।’
বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা শুরুর পর বিএনপি সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছে। তারা বলছে, দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের এই পরিস্থিতি। দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আসলে যে কোনো উন্নয়ন হয়নি, এখন তার প্রমাণ মিলছে।
বিদ্যুতের এই পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে এলেন তৌফিক, যিনি বিদ্যুৎ খাত নিয়ে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকারের নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জড়িত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যে ম্যানেজমেন্টের কথা বললাম এগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে ৫০০ মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি লোডশেডিং হবে না। আমরা ধরেছি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রিডে সাড়ে ১৪ হাজারের মতো বিদ্যুতের ডিমান্ড হতে পারে।’
সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত কী হবে- এ বিষয়ে তৌফিক বলেন চাহিদা কমানোর কথা।
এরই মধ্যে সরকার রাত ৮টায় বিপণিবিতান বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৌফিক এলাহী বলছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস সূচির পরিকল্পনার কথা।
তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো যদি আমরা সবাই মিলে নিই তাহলে এটাকে (চাহিদা) সাড়ে ১২ হাজারে নামিয়ে আনতে পারব। তাহলে আর লোডশেডিং হবে না। তবে আমি এখন এটা বলতে চাই না যে হবে না। এটার জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।’
বাগেরহাট রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন এখনও চালু করা যাচ্ছে না, সেটিও জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। বলেন, ‘প্ল্যান্টটা সিংক্রোনাইজ হতে আরও কিছু কাজ করা লাগবে। ওদের যে সাবস্ট্রেশন এখন এটা বন্ধ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২১ জুলাইয়ের পরে তারা যদি কাজ শেষ করতে না পারে, তাহলে আমরা এটা ব্যবহার করতে শুরু করব।
‘তখন কিন্তু এখান থেকে ৭০০-৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। বড় পুকুরিয়াতে আমাদের নতুন যে কয়লা উৎপাদন হচ্ছে, সেটা আসতে আরও মাস দেড়েক সময় লেগে যাবে। বর্তমানে যেটা আছে সেটা দিয়েই ওই পর্যন্ত যেতে হবে। স্টকটা আমরা চেষ্টা করছি যাতে সুষম ব্যবহার হয়। আগস্ট মাসের মধ্যে খলিতে ফুল অপারেশন শুরু হবে।’
দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাই নিয়েও কথা বলেন তৌফিক এলাহী। তিনি বলেন, ‘এটাকে সাধারণত আমরা ব্যবহার করি ব্যালান্সিংয়ের জন্য। এটাকে মেইন সোর্স ধরা হয় না। এ কারণে এর ব্যবহারটা অন্য কেন্দ্রগুলোর মতো হয় না। এখন পানি বেশি আছে, এখন নিশ্চয়ই প্রোডাকশন বেশি হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর সদরঘাটে নেই ঈদযাত্রার সেই চিরচেনা রূপ। লঞ্চের টিকিট পেতে নেই দৌড়ঝাঁপ-ধাক্কাধাক্কি, নেই ডেকে জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা। এক লঞ্চ থেকে অন্য লঞ্চে লাফ দেয়ার দৃশ্যও চোখে পড়েনি এবার। জায়গা দখলের হুড়োহুড়ি নেই লঞ্চের ডেকে, ফাঁকাও যাচ্ছে কেবিন। মানুষের ভিড়, টিকিট কালোবাজারি এ সবই এখন অতীত।
মূলত পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে লঞ্চঘাটের চিত্র। ফলে ফাঁকা কেবিন আর কম যাত্রী নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে দক্ষিণের লঞ্চগুলো।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদুল আজহার ছুটিতে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। যাত্রীর চাপ এমনকি ঈদযাত্রার সেই রূপ না থাকায় অনেকটা আরামদায়কভাবেই বাড়ি ফিরছেন তারা।
এদিকে লঞ্চভাড়াও স্বাভাবিক দেখা গেছে। অন্যবার ভাড়া ৫০-১০০ টাকা বেশি রাখলেও এবার ভাড়া আগের মতোই রাখা হচ্ছে। উল্টো ছোট লঞ্চে কেবিনের ভাড়া ১০০-৩০০ টাকা কম নেয়া হচ্ছে।
তবে উপেক্ষিত ছিল করোনার বিধিনিষেধ। মাইকিং করে নির্দেশনা দেয়া হলেও কেউ তা পাত্তা দিচ্ছেন না। এমনকি ছিল না গত ঈদে বাধ্য করা এনআইডি প্রদর্শনও।
ঢাকা থেকে রাত ৮-৯টায় লঞ্চে উঠলে ভোরেই ভোলায় পৌঁছানো যায়। তাই সেতুর প্রভার পড়েনি এ রুটে। ভোলা জেলার সঙ্গে কোনো স্থলপথ সংযোগ না থাকায় এ পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে যাত্রী স্বাভাবিক রয়েছে। এখানে দেখা গেছে ঈদযাত্রার ভিড়। অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য চলছে দৌড়ঝাঁপ।
ঘাটে বরিশাল রুটে চলাচলকারী পারাবত-১০ ও ১৮, প্রিন্স অফ আওলাদ-১০, সুন্দরবন-১১, ভাষানচর রুটের সম্রাট-৭, মুলাদী রুটের মহারাজ-৭ ও অভিযান-৫ রয়েছে। লঞ্চগুলো অনেকটাই খালি ছিল। তবে পটুয়াখালী রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন-১৪, প্রিন্স অফ আওলাদ-৭ লঞ্চে ভিড় কিছুটা বেশি।
বরিশালগামী যাত্রী আবুল হোসেন বলেন, ‘এ রুটে লঞ্চে যাত্রী থাকবেই। একেবারেও যদি সড়কপথ উন্নত হয়ে যায় তাও এ অঞ্চলের মানুষ লঞ্চে যাবে। যুগ যুগ ধরে আসা-যাওয়া করা মানুষ এত সহজে এ পথ ছাড়তে পারবে না। প্রথমবার হয়তো সেতুতে যাচ্ছে। পরে ঠিকই লঞ্চে আসবে। ঈদের ছুটি শুরু হলেই চাপ বাড়বে।
পরিবারসহ গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী যাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিকেলের লঞ্চে একটু চাপ থাকে। তাই সকালে বেরিয়ে পড়েছি। লঞ্চযাত্রা আসলেই আরামদায়ক। আশা করছি এবার স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারব।’
বরিশালগামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় লঞ্চে আগে ভিড় থাকত। এবার তা নেই। লঞ্চে এবার খুব স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছি। অন্যবার ঈদের সময় টিকিট পাওয়া ছিল খুব কষ্ট। এবার সহজেই টিকিট পেয়েছি। টিকিট কালোবাজারিও নেই।’
ঢাকা-ভোলা রুটে চলাচলকারী এমভি বালিয়া লঞ্চের কর্মী মো. জাকির হোসেন হ্যান্ডমাইকে যাত্রী ডাকছিলেন। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে যাত্রী অনেক কম। লঞ্চে যাত্রী পূর্ণ করতে সন্ধ্যা লেগে যাবে। আমাদের লঞ্চ ছাড়ার সময় সন্ধ্যা ৭টা।’
লঞ্চের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় নিচতলা ও দোতলার ডেক প্রায় ফাঁকা। ঢাকা-খেপুপাড়া রুটে চলাচলকারী লঞ্চ এমভি জাহিদ-৪ এর ডেক প্রায় যাত্রী পূর্ণ ছিল। এ লঞ্চের যাত্রী শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমি যাব পটুয়াখালী। ভোরে চলে এসেছি। এসে দেখি লঞ্চ খালি। এখন শুনি লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যায়। আগে এসে ভোগান্তিতে পড়লাম।’
মানিক লঞ্চের ম্যানেজার সেলিম রেজা বলেন, ‘এবার সদরঘাটে ঈদের আমেজ নেই। আগে ঈদের সময় দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ গন্তব্যে যেত, আসত খালি। এতে পুষিয়ে যেত। এখন লঞ্চে স্বাভাবিক সময়ের মতো আমাদের যাত্রী টানতে হচ্ছে।’
ঢাকা নদীবন্দরের ঘাট পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার জীবনে বহু ঈদ দেখেছি। ঈদের আগের দিন গেটগুলো দিয়ে পন্টুনে আসা যাত্রীদের জায়গা দিতে পারতাম না। এবারে ঈদে তেমন কোনো পরিস্থিতি নেই। যাত্রী অনেকটা স্বাভাবিক সময়ের মতো।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের যাত্রী কমেছে। ঈদযাত্রার আগের রূপ আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
‘সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। কিছু কিছু লঞ্চ যদি ঈদ উপলক্ষে ভাড়া কমায় সেটা তাদের ব্যাপার।’
আরও পড়ুন:হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন আগামী ১৬ আগস্ট ঠিক করেছে ঢাকার একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এ বদলির আদেশ দেন এবং অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নতুন তারিখ ঠিক করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, অমিতাভ অধিকারী, প্রীতিশ কুমার হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অনঙ্গ মোহন রায়, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অবন্তিকা বড়াল, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা এবং শংখ ব্যাপারী।
এদের মধ্যে শংখ ব্যাপারী, সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল, অনিন্দিতা মৃধা কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে ২৭ মার্চ এ মামলার পলাতক ১০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলা থেকে জানা যায়, দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির নামে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এই টাকা আর ফেরত না আসায় ওই চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
টাকা বের করার আগে শেয়ার কিনে তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।
তিনি দেশ ছাড়েন ২০১৯ সালের শেষ দিকে। আর এই আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে।
পলাতক থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন।
বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এই সম্পদের মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা হলেও এই সম্পদের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা।
এর মধ্যে নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এই সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে তার নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, প্রশান্ত তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় ১২ কোটি টাকা দামের একটি ভবন করেছেন।
আর পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন।
যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। প্রশান্ত তার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে দুই একর জমির ওপর আটতলা হোটেল তৈরি করেছেন।
যার আর্থিক মূল্য বর্তমানে ২৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পি কের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী এবং অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন, যার দাম ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক প্রতিবেদনে বলেছে, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তার ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি দুই কাতারের মাঝে এক কাতারের সমান জায়গা ফাঁকা রেখে দাঁড়াতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ায় ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ এমন আট দফা নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার সিনিয়র সহকারী সচিব মোস্তফা কাইয়ুমের সই করা এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নির্দেশনায় যা আছে
১. পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করা যাবে না।
২. প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে ঈদগাহে বা মসজিদে আসতে হবে।
৩. করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদ/ঈদগাহের অজুখানায় সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
৪. ঈদের নামাজের জামায়াতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদ/ঈদগাহে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৫. ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
৬. করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে খতিব ও ইমামদের দোয়া করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
৭. সম্মানিত খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
৮. পশু কোরবানির ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য