হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেখানকার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে বিপুল অর্থ কীভাবে অনুদান দিয়েছেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
জাতীয় সংসদে সম্প্রতি ড. ইউনূসের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন সরকারদলীয় এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি বলেন, ‘একজন ডাক্তার আছে। নাম হইল ডক্টর ইউনূস। উনি পশুর ডাক্তার না মাছের ডাক্তার না গরুর ডাক্তার না বাংলাদেশের মানুষের সর্বনাশের ডক্টর?
‘উনি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। যত অশান্তি উনি বাংলাদেশে ঘটাবার জন্য এই পর্যন্ত যা করছে, বাংলাদেশের পায় পয়সাও উন্নতি করেও নাই, ভালো করে নাই; ক্ষতি করে গেছে।’
অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক আরও বলেন, ‘আজকে আমি অর্থমন্ত্রীকে বলব, উনি (ড. ইউনূস) যে ছয় মিলিয়ন (৬০ লাখ) ডলার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দিয়েছে, ওই টাকা উনি কোত্থেকে দিল, এইটা আপনি তদন্ত করেন।’
ড. ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন বলে ২০১৬ সালে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে, তবে তিনি কী পরিমাণ অর্থ ফাউন্ডেশনে দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি।
জাতীয় সংসদে শেখ সেলিম অনুদানের সে অর্থের উৎস অনুসন্ধানের যে দাবি করেছেন, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক।জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা অনেক তদন্ত করেন। আপনারা একটু করেন না। আপনার এত কিছু লেখেন…আপনার একটু করেন। একটা ব্যাংকের এমডি, আমাদের তো প্রায় ৫৪টা প্রাইভেট ব্যাংকের এমডি আছে। কার এত আর্থিক সংগতি আছে যে একজন এমডি একটা ফাউন্ডেশনে এত ডলার দিল একটা অনুদান দিল বা এত টাকা খরচ করল কীভাবে? তো সেটা আপনারা তদন্ত করলে ভালো না? আমি করতে গেলে বলবেন প্রতিহিংসা শিকার করার জন্য করছি, ইত্যাদি।
‘আপনারা সাংবাদিকরা যদি খুঁজে বের করেন, সেটা ভালো হয়। আরও তথ্য আছে, কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কোন চেকে কত টাকা সরাল, সব তথ্য আছে। বের করেন…সব আমরা বলব কেন? আপনারা খুঁজে বের করেন। তারপর কিছু লাগলে জোগাল দেব।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আগে নিজেরা বের করেন বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে কত আছে। বিশাল বিশাল চেক, একটা ফাউন্ডেশন বা ট্রাস্ট করে ট্রাস্টের টাকা একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চলে যায় কীভাবে? এক চেকে ছয় কোটি টাকা তুলে নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে…আমরাও একটা ট্রাস্ট চালাই, কিন্তু সেখান থেকে ব্যক্তিগতভাবে টাকা তোলার রাইট আমার নেই। আমি ট্রাস্টের চেয়ারপারসন, কিন্তু আমি তুলতে পারব? কিন্তু আমার কাছে এ তথ্যও আছে, ট্রাস্ট থেকে ছয় কোটি টাকা নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে নিয়ে, তারপর সেই টাকা ভ্যানিশ।
‘বেশিদিন আগের কথা না। ২০২০ সালের কথা। চান তো তারিখ, অ্যাকাউন্ট নম্বর সব আছে। সে কথা বলতে চাই না। আপনারা বের করেন। এত স্বনামধন্য বিখ্যাত ব্যক্তি, আমরা তো লেখাও জানি না, পড়াও জানি না, কিছুই জানি না। আমাদের তো এত বলা শোভা পায় না, তাই না? এত জ্ঞানী তো না। সাধারণ একটা মানুষ। নিরেট বাঙালি একটা মেয়ে। তাও আবার বাংলায় পড়ছি; বাংলায় পাস করছি।’
আরও পড়ুন:উপদেষ্টা পরিষদের ৩৯তম বৈঠকে আজ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীগণের পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।
এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-
১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন
৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর
৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা
৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি
৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ
৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি
৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র
রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী : খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারাদেশ জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানান প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
উপদেষ্টা বুধবার (২০ আগষ্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে 'টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত করণীয়' -শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কমছিল। তাই আমরা এখাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তুলতে যা করণীয় তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনে করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে রয়েছি যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই।
৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইর গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিকদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিকদূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি মানুষের পক্ষে ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইর ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্যজীবী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর সহযোগিতায় নরওয়ের গবেষণা জাহাজ “R.V. Dr. Fridtjof Nansen” আগামী ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ পরিচালনা করবে। প্রায় ৩২ দিনব্যাপী এ অভিযানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৩ জন বিজ্ঞানীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ২৬ জন গবেষক অংশগ্রহণ করবেন।
উপদেষ্টা আজ দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে Norwegian সামুদ্রিক গবেষণা জাহাজ "R.V. Dr.Fridtjof Nansen" কতৃক বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য সম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ পরিচালনা সংক্রান্ত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত মৎস্যসম্পদ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এ খাত জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, এ জরিপে ছোট পেলাজিক ও মেসোপেলাজিক মাছের প্রাচুর্য ও মজুদ নিরূপণ, তলদেশীয় মৎস্যসম্পদের প্রজাতিগত বৈচিত্র্য মূল্যায়ন এবং সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হবে। পাশাপাশি সমুদ্রের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, স্রোতের গতি, উৎপাদনশীলতা, গভীর সমুদ্র সঞ্চালন ব্যবস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। উপদেষ্টা বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক, সামুদ্রিক আবর্জনা, অক্সিজেন মিনিমাম জোন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও সমুদ্রপানির অম্লতা বিষয়েও গবেষণা পরিচালিত হবে, যা ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, “R.V. Dr. Fridtjof Nansen”-এর ২০২৫ সালের জরিপ বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, টেকসই আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষায় জাতীয় নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে।
রয়্যাল নরওয়েজিয়ান দূতাবাস, ঢাকা-এর চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিসেস মারিয়ানে রাবে ক্নায়েভেলস্রুদ (Ms.Marianne Rabe Knaevelsrud) বলেছেন, নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সামুদ্রিক গবেষণায় সহযোগিতা করে আসছে। তিনি আরো বলেন, "Dr. Fridtjof Nansen" গবেষণা জাহাজের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও জোরদার করবে এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. জিয়াকুন শী (Mr. Jiaoqun Shi) বলেছেন, নরওয়ে সরকারের সহযোগিতায় FAO-এর EAF-Nansen Programme বাংলাদেশের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা জাতীয় ও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো: তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো: ইমাম উদ্দীন কবীর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী, মাসুকা বেগম ও মাহফুজা খানম মানবতা ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে এ জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষক পরিবারের সদস্যরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল, দুই ছেলে আদিল রশিদ ও আয়ান রশিদ, বোন মেহেতাজ চৌধুরী, ভাই মুনাফ মজিব চৌধুরী ও নিকট আত্মীয় কাওসার হোসেন চৌধুরী; শিক্ষক মাসুকা বেগমের বোন পাপড়ি রহমান ও ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান এবং শিক্ষক মাহফুজা খাতুনের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা, বোন মুরশিদা খাতুন, ভাগ্নে মো. মাইদুল ইসলাম ও নিকট আত্মীয় হুমায়ূন কবির।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন পার হলেও এই স্মৃতি এখনো সবার মধ্যে দগদগে হয়ে আছে। আমি ঘটনা জানা মাত্রই আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা যে দুঃসময়ের মধ্যে ছিলেন, সেসময়ে দেখা করা সমীচীন হতো না। আমরা আপনাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতে পারি, কিন্তু এই দুঃসহ স্মৃতি মুছে দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, এ শোক আপনাদের একার নয়। জাতি হিসেবে আমরা এই শোককে ধারণ করি।’
এসময় তিন শিক্ষক পরিবারের কাছে তাঁদের স্মৃতিকথা শুনতে চান প্রধান উপদেষ্টা।
শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, “তাঁকে যখন হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল তখন ফোনে আমার সাথে কথা হয়। সেদিন বার্ন ইনস্টিটিউটে যে দৃশ্য দেখেছি, তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। জীবনে যেন কারো সেই অভিজ্ঞতা না হয়। আমি তাঁকে দেখলাম, একপাশ পুরোটা পুড়ে গেছে। সেখানে কয়েকজন সামান্য দগ্ধ বাচ্চা চিকিৎসা নিতে নিতে আমাকে বলল, ‘মিসই আমাদের টেনে টেনে বের করে আনল! মিস তো সুস্থ ছিল! এমন হলো কেন!’ আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি বের হয়ে এলে না কেন? তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না?’ সে আমাকে বলল, ‘ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি?’ পৃথিবীর সকল মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তার জন্য দোয়া করেছে। সবার জন্যই সে নিবেদিত প্রাণ ছিল।”
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন শিক্ষক মাহফুজা খাতুন। মায়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা।
তিনি বলেন, ‘আমার মা অনেকখানি সুস্থ হয়ে উঠেছিল। আমি ভেবেছিলাম, মা’কে নিয়ে বাড়ি ফিরব। মাকে যেদিন হুইলচেয়ারে বসাই সেদিন মনে হলো আমি বিশ্বজয় করেছি। মা ছাড়া একেকটা দিন আমার স্বপ্নের মতো মনে হয়। আমার তো বাবা নেই, এখন মাও চলে গেল। আমি এতিম হয়ে গেলাম। এখন পর্যন্ত নিজের বাসায় ফিরতে পারিনি। মা ছাড়া সে বাসায় ফিরব কী করে?’
শিক্ষক মাসুকা বেগমের ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেক দিন ধরেই তাঁর বোন অসুস্থ। চোখে কিছুটা কম দেখেন। মাসুকা সবসময় তাঁর বাবা ও বোনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, তাঁদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা ছিল। বাবাকে নিয়মিত হাতখরচ পাঠাত। আমার ছেলে-মেয়েদের ও নিজের সন্তানের মতো মনে করত। প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে ওর কথা হতো। আমরা আর তার স্কুল—এই ছিল তাঁর জীবন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁদের কথা শুনতে কষ্ট লাগে। একইসঙ্গে গর্ববোধ হয় যে আমাদের দেশে এমন নাগরিক আছে যারা অন্যের জীবন বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে। মানবতার এই দৃষ্টান্ত তারা প্রমাণ করে গেছে। আমরা ক্ষুদ্র মানব ছিলাম, তারা আমাদের বড় করেছে। সবার ভেতরে নাড়া দিয়েছে। সবাই এটা নিজের মধ্যে অনুভব করেছে যে, ‘আমি যদি সেই অবস্থানে থাকতাম, আমি কী করতাম? আমি কি জীবনের পরোয়া না করে এভাবে ছোট শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে আত্মবিসর্জন দিতাম? এই প্রশ্ন সবার মনে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই শিক্ষকগণ আমাদের গর্ব, আমাদের আদর্শ। তাঁদের স্মৃতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। এজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, আমরা তা করব’।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
মন্তব্য