চলমান বন্যায় নেত্রকোণার ১০ উপজেলায় মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার অন্তত ২৫ হাজার বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক পুকুরের মাছ বানের জলে ভেসে গেছে। ২২৩টি গবাদিপশুর খামার এবং ৪৪২টি হাঁস-মুরগির খামার প্লাবিত হয়েছে।
এ ছাড়া পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৯১ হেক্টর জমির ধান, পাট ও সবজিজাতীয় ফসল।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবির নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, বন্যায় দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টাসহ ১০ উপজেলার প্রায় ১১ হাজার টন মাছ ভেসে গেছে, যার আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি।
মোহনগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলার ২ হাজার ৪০টি বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ টাকা। খালিয়াজুরীতেও পুকুর ডুবেছে ৪১৪টি।
কলমাকান্দার নাজিরপুর এলাকার মৎস্যচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার তিনটি পুকুরে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাছ ছিল। এক রাতের বন্যায় সব ভেসে গেছে। এত বড় বন্যা হবে, তা এক দিন আগেও টের পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সমস্ত পুঁজি মাছ চাষে বিনিয়োগ করেছিলাম। সব শেষ হয়ে গেছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যায় ১০ উপজেলার ২২৩টি গরু-ছাগলের খামার এবং ৪৪২টি হাঁস-মুরগির খামার প্লাবিত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৪ কোটি টাকা।
‘এ ছাড়া ২১ লাখ টাকার দানাদার পশুখাদ্য, ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার খড় নষ্ট হয়েছে। চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার একর। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি টাকা।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ধানের খড়ের পুঞ্জি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হাওরাঞ্চলের কৃষকরা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বেন। কারণ বর্ষার পানি না কমা পর্যন্ত তাদের গবাদিপশুকে বাজার থেকে খাবার কিনে খাওয়াতে হবে।’
আসন্ন কোরবানির পশুর হাটেও বন্যার প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বাড়িঘরে পানি এবং খাদ্যসংকটের কারণে অনেকে গবাদিপশু বাজারে সস্তায় বেচে দিতে পারেন। তাদের বেচে দেয়া গবাদিপশু মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে চলে যেতে পারে। এ কারণে আগামী কোরবানির পশুর হাট তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
‘এ ছাড়া যারা গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের ব্যবসা করেন, তারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। কারণ পর্যাপ্ত খাবার না পেলে পশুর স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাবে। এতে দাম কম পাবেন তারা’ বলেন তিনি।
খালিয়াজুরীর বলরামপুর গ্রামের হাঁস খামারি রইছ মিয়া বলেন, ‘আমার খামারে প্রায় ৪০০ হাঁস আছে। এগুলোকে আগে হাওরের পানিতে ছেড়ে দিয়ে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াতাম। এখন বন্যা পরিস্থিতির কারণে ছাড়তে পারছি না। খামারে রেখে ধান খাওয়াতে হচ্ছে।
‘এক মণ ধান কিনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। প্রাকৃতিক খাবারের অভাবে ডিম উৎপাদনও কমে গেছে। এর ওপর হাঁসের রোগবালাইয়েরও ভয় আছে।’
মোহনগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন জানান, তার উপজেলার ৩ হেক্টর জমির আউশ ধান, ১০০ হেক্টর জমির পাট এবং ৫০ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির আর্থিক মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘এবারের বন্যায় ১০ উপজেলার ৫৬৪ হেক্টর জমির আউশ ধান, ১৭০ হেক্টর জমির পাট এবং ৩৫৭ হেক্টর জমির শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। এতে উৎপাদনে প্রভাব পড়ার পাশাপাশি কৃষকরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।’
আরও পড়ুন:নড়াইলের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের জের ধরে ব্যাপক সহিংসতা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনা ঘটে। পুলিশের সামনে এমন ঘটনায় তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা দিয়ে অপদস্থ করার ঘটনায় কারও দায়িত্বে গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বপন কুমারকে জুতার মালা পরানোর পর তার আশপাশে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বাহিনীর অন্তত ১০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে যেখানে দাঁড় করিয়ে জুতার মালা পরানো হয়, তার তিন-চার হাত দূরেই দৃশ্যত নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিলেন নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর।
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, স্বপন কুমার ও অভিযুক্ত ছাত্রসহ তিনজনকে কলেজের ভেতর থেকে বের করে আনার সময় ডান পাশে কলাপসিবল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর।
ভিডিওতে দেখা যায়, কলাপসিবল গেটের বাম পাশের আরেকটি গেট দিয়ে তিনজনকে বের করে আনা হচ্ছে। এ সময় পুলিশি পাহারার মধ্যেই কলেজের ভেতর থেকে এক তরুণ জুতার মালা হাতে বেরিয়ে আসেন। ওই তরুণের কোমরের এক পাশে আইডি কার্ড ঝুলছিল।
স্বপন কুমার ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে যে তিন যুবক জুতার মালা পরিয়ে দেয়, তাদের একজনের কাছে আইডি কার্ডধারী তরুণটিই ভেতর থেকে আনা মালা ধরিয়ে দেন। মালা পরানোর আগে ওই তিন যুবকের দুজন ওসি শওকত কবীরের সামনে দিয়ে রেলিং টপকে শিক্ষকের সামনে যান। রেলিং টপকানোর সময়ে দুই যুবকের মধ্যে আকাশি রঙের টি শার্ট পরা যুবকের বাহুতে হাত দিতেও দেখা যায় ওসিকে।
এরপর তিন যুবক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ছাত্রকে জুতার মালা পরিয়ে দেন। এ সময়ে ওসিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা ছিলেন নিষ্ক্রিয়।
শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর সময় পাশেই নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীরের উপস্থিতি ভিডিওতে শনাক্ত করেছেন পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুমার কুণ্ডু।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন ‘ওখানে ওসি ছিল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিল, অতিরিক্ত পুলিশ ছিল। ভিডিওতে দেখেছি, বোঝাই যাচ্ছে উনি ওসি। পুলিশ সে সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।’
তবে এ ঘটনার সময় অন্যত্র ছিলেন বলে শুরু থেকে দাবি করছিলেন ওসি শওকত কবীর।
বিষয়টি নিয়ে রোববার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। সেদিন তিনি বলেন, ‘ওই দিন পাবলিক খুব বেশি উত্তেজিত ছিল। তাদের কন্ট্রোলে নেয়া যাচ্ছিল না। আর আমার চোখে জুতার মালার মতো কোনো কিছু পড়েনি। তাকে যখন গাড়িতে তোলা হয়েছে তখন তার গলায় এ ধরনের কিছু ছিল না।’
আরও পড়ুন: পুলিশের সামনে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা কীভাবে?
ভিডিওতে তাকে দেখা গেছে, এমন তথ্য জানিয়ে বুধবার এ বিষয়ে ওসির বক্তব্য আবার জানতে চায় নিউজবাংলা। এ সময়ও তিনি দাবি করেন, অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর সময় তিনি আশপাশে ছিলেন না।
মোহাম্মদ শওকত কবীর নিউজবাংলাকে বলেন, ’আমি মেইন গেটের দিকে ছিলাম। ক্রাউড কন্ট্রোল করছিলাম। রুমের ভেতরে ও ওপরে আমাদের অফিসার এবং ফোর্স ছিল। বের করে নিয়ে আসার পরে তিন-চারজন ওরা যে এইটা করবে, বা ওখানে থাকবে এ রকম কিছু ইনটেনশন ছিল না।’
এরপর তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ভিডিও থেকে নেয়া স্ক্রিনশট পাঠানো হলে বক্তব্যে পরিবর্তন আনেন। অবস্থানের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে তিনি বলেন, ‘আমি জুতার মালা পরাতে দেখিনি।’
ঘটনার বর্ণনায় শওকত কবীর বলেন, ‘আমাদের জুনিয়র অফিসাররা বেসিক্যালি পেছন সাইটটায় ছিল, ওনাদের নিয়ে আসার সময়। কোনো ইনটেনশন ছিল না। রাহুলকে (অভিযুক্ত ছাত্র) দিলে পরে আমরা এক্সকিউজ করতে পারি, কিন্তু প্রিন্সিপালকে কোনো দোষ ছাড়াই এটা দিছে। একটা ঘটনা ঘটে গেছে।
‘এখানটাতে এত মানুষ, কোনো ক্যাজুয়ালিটি ছাড়া ওনাকে (স্বপন কুমার) বের করে নিয়ে আসাই আমাদের প্রধান টার্গেট ছিল। কেউ প্রেডিক্ট করতে পারেনি, এমনটি ঘটবে।’
নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়ও শুরুতে দাবি করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর ঘটনা তার জানা নেই, সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ-সংক্রান্ত ভিডিও তার চোখে পড়েনি। তবে পরে অবস্থান পরিবর্তন করেন পুলিশ সুপার।
ওসি পাশে থাকার পরও এমন ঘটনাটি কীভাবে ঘটল জানতে চাইলে বুধবার পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে সবকিছু হচকচ লেগে গেছে। আমরা তদন্ত করছি। কারও গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারেও ‘অনিয়ম’
যে ছাত্রের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কলেজে উত্তেজনা, সেই ছাত্রের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির মামলার এজাহার নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
মামলার বাদী বলছেন, অভিযুক্ত ছাত্র রাহুল দেব রায় ফেসবুকে কী পোস্ট দিয়েছেন তা তিনি দেখেননি। ওসি শওকত কবীরের ‘অনুরোধে’ তিনি মামলার বাদী হয়েছেন, এমনকি এজাহারও লিখে দিয়েছে পুলিশ। তিনি শুধু সই করেছেন। ঘটনার পরদিন ১৯ জুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি হলেও ২০ জুন পুলিশ বাদীর বাড়ি গিয়ে এজাহার ‘সংশোধন’ করে আবার তার সই নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষককে জুতার মালা: ছাত্রের বিরুদ্ধে এজাহারের ‘লেখক’ পুলিশ
রাহুল দেব রায়ের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার বাদী মির্জাপুর হাজিবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পরের দিন দুপুরের দিকে ওসি সাহেব আমারে ফোন দিছেন যে, মামলার একজন বাদী হতে হবি, একজন বাদী বের করেন। কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করলাম, কেউ যাতি রাজি না।
‘আমি (ওসিকে) বললাম, মাগরিবের পরে আলোচনা করে কিডা যাবে আমি জানাচ্ছি আপনাদের। সে বলল, না, দেরি হয়ে যাবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে। তাহলে একটা কাজ করেন, আপনি নিজেই বাদী হন। আমরা গাড়িতে করে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি, আবার দিয়ে যাব।’
ফারুক হোসেন বলেন, ‘পরে ওসি সাহেবের গাড়িতে করে গেলাম নড়াইল। নড়াইল গেলে ওসি সাহেব সব লিখেটিখে সব কমপ্লিট করার পর আমি বললাম যে, আমার তো আবার মিটিং আছে, একটু তাড়াতাড়ি যাতি হবে।
‘তখন কলো (বলল), ঠিক আছে, কমপ্লেইন নিয়ে আমি এসপির কাছে যাব। ওখানে ডিআইজির সঙ্গে ফোন করে এডা আলোচনা করে আপনার স্বাক্ষর নেব। আপনার একটু দেরি করে যাতি হবে। তখন আমি ওখানে মাগরিবের নামাজ পড়লাম।’
এর পরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওসি সাহেব এরপর যাইয়ে এসপির সঙ্গে আলোচনা করে। ওইটা দেখাদেখি করার পর আমার কাছ থেকে একটা স্বাক্ষর নিল কেসে। যা লেখার উনারা লিখেছেন, আমি কিছু লেখিনি। আমি বলিওনি।
‘আমাক পড়ে শোনাল যে, এই ঘটনা। দেখলাম ওখানে যা হইছে, তাই। আমি যতদূর জানি সব সঠিক। সেইভাবে আমি স্বাক্ষর করি আসলাম।’
মামলা হয়ে যাওয়ার পর এজাহারের কপি পরিবর্তনের অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, পরদিন পুলিশ তার বাসায় এসে জানায় এজাহারে কিছু সংশোধন করা হয়েছে। এরপর সেই ‘সংশোধিত’ কপিতে আগের দিনের তারিখেই ফারুক হোসেনের সই নেয়া হয়।
এজাহারের প্রথম দিনের এবং পরদিনের দুটি কপিই পেয়েছে নিউজবাংলা। ফারুক হোসেনকে পুলিশ বলেছিল এজাহারের নতুন কপিতে কিছু বানান সংশোধন করা হয়েছে। তবে নিউজবাংলা দেখেছে, দুটি কপির মধ্যে ‘উক্ত সময়ে পুলিশ আইন শৃংখলা রক্ষার্থে ০৬ রাউন্ড গ্যাস গান ফায়ার করে‘- এই বাক্যটির হেরফের রয়েছে। একটি কপিতে বাক্যটি থাকলেও আরেকটিতে নেই।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন করলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
আর পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়ের দাবি, মামলার এজাহার পরিবর্তনের বিষয়টি তার জানা নেই। রাহুলের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার লিখে ফারুক হোসেনের সই নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘জোর করে কাউকে তো বাদী বানানোর কথা নয়। ওই প্রসঙ্গটা আমার জানা নেই, থানায় যখন মামলা হয়েছে ওসি সাহেব জানেন।
‘আমি তো এই ব্যাপারটা জানি না। যদি কেউ মামলা না করতে চায়, যদি কোনো বাদী না পাওয়া যায় তখন তো একভাবে না একভাবে মামলা করতেই হবে। উনি যদি মামলা করতে না যেত, তাহলে কি আমরা মামলা করতে পারতাম? যদিও এটা আমার জানা নেই।’
পুলিশ সুপার অবশ্য অভিযোগ অনুসন্ধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যেহেতু বলেছেন, আমি খোঁজ নেব জিনিসটা কী হয়েছিল। যদি কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার তিন দিনেও আসামি গ্রেপ্তার করতে না পারা, আলামত দেরিতে জব্দ ও মামলায় আসামিকে অপ্রাপ্ত বয়স দেখানো নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। যদিও এসব নিয়ে খুব একটা সচেতনতা নেই নিহত শিক্ষকের হতদরিদ্র পরিবারের।
কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষক উৎপলকে মারধরকারী শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের ভাই। যে স্টাম্প দিয়ে শিক্ষককে আঘাত করা হয়েছিল, সেটি আমাদের কলেজেই তিন দিন ধরে রাখা ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ এসে সেটি নিয়ে গেছে।’
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বয়স লেখা রয়েছে এমন একটি নথি সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন অধ্যক্ষ। যেখানে আশরাফুল ইসলাম জিতুর বাবা মো. উজ্জ্বল, মা জুলেখা বেগম ও তার জন্মতারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০০৩ সাল উল্লেখ রয়েছে। সে হিসাবে জিতুর বয়স ১৯ বছর।
মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উৎপল আমাদের পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট। সে সবার খুব আদুরে ছিল। মা উৎপলকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে গেছেন। আমরা এখনও যৌথ পরিবারেই বসবাস করি। ওকে হারিয়ে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।’
মামলায় আসামির বয়স ১৬ বছর কেন উল্লেখ করেছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মামলার এজাহার লেখার সময় বয়স জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছে, সেভাবেই আসামির বয়স উল্লেখ করা হয়েছে। আমি তো তখন ওভাবে কিছুই জানি না।’
মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষক হত্যায় আমরা জিতুর সম্পৃক্ততা পেয়েছি। আমাদের চারটি টিম আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।’
তিন দিন পর আলামত সংগ্রহের বিষয়ে বলেন, ‘আসলে আলামতটা সিজ করাই ছিল। আজকে সেটা আমরা সংগ্রহ করেছি। আলামত আমাদের হেফাজতেই আছে।’
মামলায় আসামিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই সময় আসলে বাদী তার এজাহারে যেটা দেয় আমরা সেটাই নেব। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা মামলা গ্রহণ করব। কিন্তু তদন্তসাপেক্ষে এটার তো ব্যবস্থা হবেই। ক্লাস টেনে পড়ে আর বাদী যেভাবে মামলা দিছে আমরা সেভাবেই নিছি। এখন তো সব বের হচ্ছেই।’
গত শনিবার দুপুরে কলেজে নারী শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে স্টাম্প দিয়ে অতর্কিতভাবে শিক্ষক উৎপল কুমারকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন শিক্ষার্থী জিতু। পরদিন সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
৩৫ বছর বয়সী শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানী গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি প্রায় ১০ বছর আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
উৎপলের ওপর কীসের ক্ষোভ জিতুর?
কলেজের সামনের মার্কেটের মালিক ইমান উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসল ঘটনা এখনও কলেজের শিক্ষকরা বলছেন না। তবে আস্তে আস্তে সব বেরিয়ে আসবে।
‘জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার মাজেদ নামে এক ব্যক্তি। তাদের হোটেল ব্যবসা আছে। সেই মাজেদের শ্যালিকার ছোট বোন এই কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। তার সঙ্গে জিতুর আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক।
‘কিছুদিন আগেও স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও সেই মেয়েকে দেখার পর শিক্ষক উৎপল তাদের শাসন করেন। ওই মেয়ের পরিবারকে তিনি ফোন করে সব জানিয়ে সতর্কও করেন। মেয়েটা জিতুকে এসব বিষয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়েই ওই স্যারকে পিটিয়েছে।’
ইমান উদ্দিনের তথ্য বলছে, জিতু এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে খেলার আগের দিন থেকেই কলেজের বাইরে স্টাম্প নিয়ে ঘুরছিল।
তিনি জানান, সেদিন জিতুর সঙ্গে আরও তিনজন ছিল। পেটানোর পর চারজন একসঙ্গে হেঁটে চলে যায়।
একই কথা জানান ওই কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইম ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘স্যার সেই মেয়ের বাসায় ফোন করে শক্তভাবে বিচার দিয়েছিলেন যেন মেয়েটা জিতুর সঙ্গে না মেশে। এটার ক্ষোভ থেকেই জিতু স্যারকে খেলার দিন পিটিয়েছে।’
কলেজের হিসাবরক্ষক পারুল আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও মেয়েটাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেভাবে বিস্তারিত জানি না। মেয়েটা আমাদের কলেজের এক শিক্ষকের ছোট বোন। এর বেশি আর কিছু জানি না আমি।’
আরও পড়ুন:নরসিংদীর বেলাবতে হত্যা মামলার আসামিকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছে স্বজন ও স্থানীয়রা।
বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের খামারের চর এলাকায় বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে প্রায় ৫০ মিনিট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
গত ২৫ জুন উপজেলার বারৈচা ইউনিয়নের খামারচর ব্রিজের পাশে থেকে কবির হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
কবির চার বছর আগে খামারের চর গ্রামের সোহরাব হোসেন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। সম্প্রতি তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে বারৈচা বাজারে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা শুরু করেন।
মানববন্ধনে কবিরের ভাতিজা আশিক মিয়া বলেন, ‘চাচার সঙ্গে এলাকার কয়েকজনের শত্রুতা ছিল। তারা চাচাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। যারা আমার চাচাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি।’
মরদেহ উদ্ধারের পর কবিরের মা সামছুন্নাহার ৯জনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন সাবেক ইউপি সদস্য রিনা বেগম, তাজুল ইসলাম, ফরিদ মিয়া, মো. বায়েজিদ, মো. শিপন, শাহিন মিয়া, সাফির উদ্দিন, মো. ফরহাদ, আবু সাঈদ।
বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন পলাশ নিউজবাংলাকে জানান, কবির হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে আবু সাঈদ নামের একজনকে শনিবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতে তুললে বিচারক কারাগারে পাঠান। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদেরও ধরতে আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে কলেজশিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্কুলছাত্রকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজি ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে বুধবার সকাল ৯টার দিকে মানববন্ধন হয়।
কলেজ শাখার শিক্ষার্থী মুন্নী আক্তার বলেন, ‘পুলিশ এখনো আমাদের প্রিয় শিক্ষকের হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, মামলার তদন্তেও পুলিশের গাফিলতি প্রকাশ পেয়েছে। যে স্টাম্প দিয়ে স্যারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, পুলিশ তিন দিনেও সেই আলামত জব্দ করতে পারেনি।’
অভিযুক্ত জিতু দশম শ্রেণিতে পড়লেও তার বয়স ১৯ বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, এই তরুণ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সেখান থেকে ঝরে পড়ার পর এই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়।
এ প্রসঙ্গ টেনে মুন্নী বলেন, ‘মামলায় আসামির বয়স উল্লেখ করেছে ১৬ বছর। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। এটা দুঃখজনক। আমরা অবিলম্বে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একজন শিক্ষককে এভাবে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা নজিরবিহীন। এমন ঘটনা দেশে নয়, বিশ্বেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এমন হত্যাকারী সন্তানের প্রতি ধিক্কার জানাই। আর কোনো ঘরে যেন এমন সন্তানের জন্ম না হয়। আমরা অবিলম্বে আমাদের সহকর্মী হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’
শিক্ষক উৎপল কুমার হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্কুলছাত্রের বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার মধ্যরাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত ছাত্র এখনো পলাতক।
যা ঘটেছিল
হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা ছেলেদের ফুটবল ও মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি। শনিবার স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। এ সময় প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল ছেলে শিক্ষার্থীরা।
‘অভিযুক্ত ছাত্রও দ্বিতীয় তলায় ছিল। হঠাৎ সে নেমে মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় উৎপলকে উদ্ধার করে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই আজ (সোমবার) সকালে উৎপলের মৃত্যু হয়।’
অধ্যক্ষ জানান, উৎপলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামে। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন।
দায়িত্বের অংশ হিসেবেই উৎপল শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিং করতেন ও তাদের নানা অপরাধ বা নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিচার করতেন বলে জানান অধ্যক্ষ। তার ধারণা, অভিযুক্ত ছাত্রকেও উৎপল কোনো কারণে শাসন করেছিলেন। সেই ক্ষোভ থেকে ওই কিশোর তার ওপর হামলা করেছে।
নিহতের ভাই ও মামলার বাদী অসীম কুমার সরকার বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, ওই শিক্ষার্থী মেয়েদের ইভটিজিংসহ নানা উচ্ছৃঙ্খল কাজে অভিযুক্ত। তাকে শাসন করায় আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে সে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিহত শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি থাকায় নিয়ম-কানুন মানাতে শিক্ষার্থীদের শাসন করতেন। তিনি ওই শিক্ষার্থীকেও শাসন করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের প্রাথমিক ধারণা।’
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নদীতে ডুবে নিখোঁজের এক দিন পর কেরামত গাজীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মাদার নদীর চর থেকে বুধবার ভোর ৫টার দিকে স্থানীয়রা ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম। তিনি জানান, ভোরে নদীর চরে তার মরদেহ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে মাছ শিকারের জন্য নদীতে ফেলা বড়শি ছাড়াতে গিয়ে ডুবে নিখোঁজ হন কেরামত গাজী। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা দিনভর অভিযান চালিয়েও তাকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন।
৪০ বছরের কেরামত গাজীর বাড়ি উপজেলার মহেশখালী গ্রামে। দিনমজুর কেরামত দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মাদার নদীর চরেই বাস করতেন।
রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তারেক বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের দিন নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তির মরদেহ বুধবার ভোরে মাদার নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মৃগী রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কেরামত পানিতে পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারেননি।
‘পরিবারের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সকাল ৯টার দিকে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ আর নেই।
স্থানীয় সময় বুধবার সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
নির্মল গুহের বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন তিনি।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১২ জুন রাতে রক্তচাপ বেড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নির্মল রঞ্জন গুহ। তাকে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেয়া হয়।
নির্মল গুহের হার্টে দুটি ব্লক ধরা পড়লে সেখানে রিং বসানো হয়, কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে ১৬ জুন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গারপুর নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন:সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষককে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রের বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে বুধবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যা মামলার আসামি ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আজ ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘সকালে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি জিতুকেও গ্রেপ্তারে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক বলেন, ‘ওই শিক্ষক মারা যাওয়ার দিন গত রোববার তার বড় ভাই অসীম কুমার সরকার অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুকে প্রধান করে হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে অজ্ঞাতনামা অনেককেই আসামি হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন। ওই মামলায় প্রধান আসামির বাবাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
গত শনিবার দুপুরে সাভারের চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে কলেজের প্রভাষক উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র জিতুর বিরুদ্ধে।
পিটুনিতে গুরুতর আহত হওয়া শিক্ষক উৎপল পরদিন মারা যান। এ ঘটনায় উৎপলের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় জিতুকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও তিন-চারজনের নামে হত্যা মামলা করেন।
জিতু দশম শ্রেণিতে পড়লেও তার বয়স ১৯ বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, এই তরুণ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সেখান থেকে ঝরে পড়ার পর এই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়।
কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ‘জিতু ক্লাস নাইনে আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকার একটা মাদ্রাসায় পড়ত। সে ছাত্র হিসেবে খুবই দুর্বলপ্রকৃতির। উচ্ছৃঙ্খলও। তার বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়েরও অভিযোগ ছিল।’
উৎপলের ওপর কীসের ক্ষোভ জিতুর?
কলেজের সামনের মার্কেটের মালিক ইমান উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসল ঘটনা এখনও কলেজের শিক্ষকরা বলছেন না। তবে আস্তে আস্তে সব বেরিয়ে আসবে।
‘জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার মাজেদ নামে এক ব্যক্তি। তাদের হোটেল ব্যবসা আছে। সেই মাজেদের শ্যালিকা এই কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। তার সঙ্গে জিতুর আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক।
‘কিছুদিন আগেও স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও সেই মেয়েকে দেখার পর শিক্ষক উৎপল তাদের শাসন করেন। ওই মেয়ের পরিবারকে তিনি ফোন করে সব জানিয়ে সতর্কও করেন। মেয়েটা জিতুকে এসব বিষয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়েই ওই স্যারকে পিটিয়েছে।’
ইমান উদ্দিনের তথ্য বলছে, জিতু এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে খেলার আগের দিন থেকেই কলেজের বাইরে স্টাম্প নিয়ে ঘুরছিল।
তিনি জানান, সেদিন জিতুর সঙ্গে আরও তিনজন ছিল। পেটানোর পর চারজন একসঙ্গে হেঁটে চলে যায়।
একই কথা জানান ওই কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইম ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘স্যার সেই মেয়ের বাসায় ফোন করে শক্তভাবে বিচার দিয়েছিলেন যেন মেয়েটা জিতুর সঙ্গে না মেশে। এটার ক্ষোভ থেকেই জিতু স্যারকে খেলার দিন পিটিয়েছে।’
কলেজের হিসাবরক্ষক পারুল আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও মেয়েটাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেভাবে বিস্তারিত জানি না। মেয়েটা আমাদের কলেজের এক শিক্ষকের ছোট বোন। এর বেশি আর কিছু জানি না আমি।’
সিসিটিভি ফুটেজে কিছুই নেই
কলেজের সিসিটিভি ফুটেজেও হামলার আগে জিতুর নানা কর্মকাণ্ড ধরা পড়েছে। তবে ঘটনার সময়কার কিছুই রেকর্ড হয়নি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনার সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ফুটেজ রেকর্ড হয়নি। সে সময় কলেজের বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পেছনে জিতুর হাত আছে বলেই বিশ্বাস তাদের।
কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, ‘উৎপল কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান ছিলেন। তাই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তিনি হয়তো শাসন করেছিলেন। তবে ঠিক কোন বিষয়টা, সেটা আমার জানা নেই। আর ওই দিনের ফুটেজের বিষয়টা হলো, আমরা হঠাৎ করে দেখি কারেন্ট চলে গেছে। কিন্তু তখন আশপাশে সব জায়গায় কারেন্ট ছিল। ঘটনার পর পরই আমরা বুঝতে পারি, সে (জিতু) পরিকল্পিতভাবেই বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করেছে।’
নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানী গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। ৩৫ বছর বয়সী এই শিক্ষক প্রায় ১০ বছর ধরে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকতা করছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য