রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে নাহিদ হোসেন (ফালু) নামের এক যুবক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার বিকেলে এই ঘটনার পর পথচারীরা তাকে হাসপাতালে আনার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করে নেন।
নাহিদের ভাই শামীম মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই গ্রামে রাজমিস্ত্রি পেশার পাশাপাশি পোলট্রি ব্যবসা করেন। আমাদের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার করিমগঞ্জ গ্রামে।
‘সোমবার নরসিংদী থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় এসে তিনি বিমানবন্দর রেলস্টেশনে নামেন। পরে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের বাসে তেজগাঁও আসার পথে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে অচেতন করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে ওই বাসের কর্মীরা কাকরাইল মোড়ে তাকে নামিয়ে দিয়ে পকেটে থাকা এনআইডি কার্ড থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বাসায় ফোন দেন। পরে সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে পাকস্থলী ওয়াশ করে তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।’
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল খান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মেহেরপুরে বিক্রয় নিষিদ্ধ ও সরকারি ওষুধসহ বাবুর আলী নামের এক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার বিকেলে মেহেরপুর-কাথুলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইমন-ঈশান ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ওষুধসহ দোকান মালিককে আটক করা হয়।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসব তথ্য জানান।
৪৫ বছর বয়সী বাবুর আলী মেহেরপুর সদরের কাথুলি বাজার এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ কর্মকর্তা অপু সরোয়ার জানান, ইমন-ইশান ফার্মেসিতে বিক্রয় নিষিদ্ধ ও সরকারি হাসপাতালের ওষুধ বিক্রির গোপন তথ্যে অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
সেখানে থেকে নিষিদ্ধ ব্যথানাশক ট্যাবলেট টাপেন্টাডল ৩৬ পিস, গর্ভনিরোধকারি সরকারি ইনজেকশন স্বস্তি-১৫০ মিলি ১৯৪ পিস, ইন্ডিয়ান ভায়াগ্রা-১০০ মিলি ৭৫০ পিস ও সরকারি হাসপাতালের বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধের মধ্যে সেফিক্সিম-২০০মিলি ২০০ পিস, সেফ্রাডিন-৫০০ মিলি ৫০০ পিস, এজিথ্রোমাইসিন-৫০০ মিলি ১০০ পিস, সিপ্রোফ্লক্সিন-৫০০ মিলি ৩০০ পিস জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, নিষিদ্ধ ব্যথানাশক ট্যাপেন্টাডল বিক্রির নগদ ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও নিষিদ্ধ এসব ওষুধসহ ইমন-ঈশান ফার্মেসির মালিক বাবুর আলীকে আটক করে মেহেরপুর সদর থানায় নেয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে মেহেরপুর সদর থানায় তিনটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। সোমবার তাকে আদালতে নেয়া হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা অপু সরোয়ার।
আরও পড়ুন:মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় আলোচিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমসহ আটজনের বিরুদ্ধে তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৯ জুন দিন ঠিক করেন। এ মামলায় মোট ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
এদিন কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
সাক্ষীরা হলেন সিআইডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক আব্দুল মমিন, জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া দিদারুল আলম নামে আরও একজন সাক্ষ্য দেন।
এর আগে গত ১৫ জুন জি কে শামীমসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন র্যাবের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম।
বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত সারওয়ার আলম আদালতে জানান, তার নেতৃত্বে জি কে শামীমের অফিস ও বাসায় অভিযান হয়। তখন নগদ টাকা, অস্ত্র, বিদেশি মুদ্রা, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র ও কিছু চেক বই জব্দ করা হয়।
আলোচিত এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন দেলোয়ার হোসেন, মোরাদ হোসেন, সামসাদ হোসেন, আনিছুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, কামাল হোসেন ও জাহিদুল ইসলাম। তারা জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত।
জি কে শামীমকে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আটক করে র্যাব। এ সময় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরের ডলার, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর, অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ উদ্ধার হয়। এ ব্যাপারে র্যাব বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং, মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট আদালতে জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় চার্জশিট জমা দেন। ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আদালত।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক ভিডিও বানানো মো. বাইজীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হচ্ছে।
আইনটির যে ধারায় তার নামে মামলা হবে বলে জানানো হয়েছে, সে ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি; এটা পরিকল্পিত।
সংস্থাটির এক কর্মকর্তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেছেন, বাইজীদের এই কাজের পেছনে নাশকতার চেষ্টা থাকতে পারে।
পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রোববার রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে সন্ধ্যায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন সেই যুবক। পরে জানা যায়, তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত, তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ।
সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইজীদ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নাট খুলেছিলেন সেতুর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে। এমন অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এ মামলা প্রক্রিয়াধীন। থানা কর্তৃপক্ষই বাদী হবে।’
কী আছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায়
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ (স্যাবোটাজ) কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা ও শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।
এই আইনের ১৫ (খ) ধারায় বলা হয়, কোনো রেলপথ, রোপওয়ে, রাস্তা, খাল, সেতু, কালভার্ট, বন্দর, ডকইয়ার্ড, লাইটহাউজ, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার স্থাপনার দক্ষতা বিনষ্ট বা ক্ষতিসাধনের মতো কাজ করা যাবে না।
এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়া যাবজ্জীবন বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
বাইজীদকে জিজ্ঞাসাবাদে কী জানা গেল
বাইজীদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছি, সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই কাজ করেছে। আমরা বিস্তারিত আগামীকাল (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনে জানাব।’
জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বাইজীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও পরীক্ষা করা সিআইডি জানিয়েছে, তিনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন।
সিআইডি আরও জানায়, বাইজীদের মোবাইল ফোন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই তারা দেখা গেছে, নিছক হেয়ালি নয়, পরিকল্পিতভাবে সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলেছেন এ যুবক।
কী ছিল আলোচিত ভিডিওতে
পুলিশ জানায়, শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন বাইজীদ।
৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই যুবক সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। যিনি ভিডিও করছিলেন, তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দ্যাহো।’
নাট হাতে নিয়ে বাইজীদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের...পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’
ওই সময় পাশে থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট বল্টু খুলে এক টিকটকারের আটক এবং তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার ঘোষণার মধ্যেই নাট খোলার আরও একটি ভিডিও ছড়িয়েছে।
দুটি ভিডিও পর্যালোচনা করলে দেখে মনে হয়, দুটো একই জায়গায় করা হয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি বলেছে, তারা বেশ কয়েকটি ঘটনা নিয়ে একস্ঙ্গে কাজ করছে। এসব বিষয়ে পরে জানানো হবে।
রোববার পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন সেতুতে উঠতে বিশেষ করে বাইকারদের মরিয়া মনোভাবের মধ্যে সেতুর রেলিংয়ের ওপরে থাকা স্টিলের পাত সংযোগের নাট বল্টু খুলতে দেখা যায় একটি ভিডিওতে।
পরে জানা যায়, সেই যুবকের নাম বাইজীদ তালহা। তার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলীখালী গ্রামে।
ভিডিওটি প্রথমে আপলোড করা হয়েছিল টিকটকে। সেটি ভাইরাল হলে তুমুল সমালোচনার মুখে তা সরিয়ে ফেলা হয়। এমনকি বাইজীদের ফেসবুক আইডিটিও ডিঅ্যাকটিভেট করে ফেলা হয়। বন্ধ হয়ে যায় ফোন নম্বর।
তবে সন্ধ্যার ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সেই যুবক হাত দিয়ে নাট বল্টু খোলার কথা জানানো হলেও গোয়েন্দারা জানান, বাইটের নাট খোলার যন্ত্র দিয়ে সেতুর রেলিংয়ের নাট খোলা হয়েছে।
এর মধ্যে টিকটকেই আরও একটি ভিডিও প্রচার হয়।
সেই ভিডিওতে দেখা যায়, নাট খুলে লম্বা গড়নের এক যুবক বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নাট।’
অন্য একজন বলেন, নাট খুইল্যা গেছে?’
সেই যুবক বলেন, ‘ঝাকায়া খুইল্যা ফালাইছি হাত দিয়া’।
এই সবগুলাই কি লুজ?-জিজ্ঞেস করেন ভিডিওতে চেহারা দেখা না যাওয়া দ্বিতীয় জন।
এর মধ্যে সেই নাটটি জায়গা মতো স্থাপন করেন সেই যুবক। বলেন, ‘এইগুলা লুজ। লাগায়া দিলাম। ক্যামেরা দেহাইয়া লাগাইয়া দিলাম।’
ভিডিওতে চেহারা দেখা যায় না, সেই যুবক বলেন, ‘এখন লাগায়া দিছেন, কিন্তু রাইতে আবার কী করবেন না করবেন…’
এরপর সেই যুবক পাশের আরেকটি জোড়ার কাছে যান, ‘এই যে দেখেন আরেকটা। এতে আমি কিন্তু কোনো রেঞ্জ ব্যবহার করি নাই।’
তবে তিনি সেই নাট খুলেছেন, কি না সেটা দেখা যায় না।
এর আগের যে ভিডিওটি ছড়িয়েছিল এবং দ্বিতীয় ভিডিওর স্থানটি একই বলেই প্রতীয়মান হয়, যদিও বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ বিস্তারিত জানাচ্ছে না। দ্বিতীয় যুবকের পরিচয়ও কেউ নিশ্চিত করেনি।
যোগাযোগ করা হলে সিআইডির সাইবার ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই ধরনের বেশ কয়েকজনের বিষয়ে খোঁজ করছি। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:ফেনীর দাগনভূঞায় স্কুলের পেছন থেকে শিশু শিক্ষার্থীর লতায় প্যাঁচানো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আনোয়ার হোসেন স্বপন নামে ওই ব্যক্তি রোববার আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা।
আনোয়ারের বাড়ি উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের দক্ষিণ নেয়াজপুর গ্রামে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে শৌচাগারে যাওয়ার জন্য স্কুল থেকে বের হয় নেয়াজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকের ছাত্রীটি। সেখান থেকে তাকে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন স্বপন। শিশুটি সবাইকে এ ঘটনা বলে দেবে জানালে তাকে গাছের লতার সঙ্গে প্যাঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান তিনি।
দাগনভূঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান ইমাম জানান, স্বপনকে গ্রেপ্তারের পর তার মোবাইল ফোনে বিভিন্ন পর্ন ভিডিও পাওয়া গেছে। তাকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলামের আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে নিয়ে টিকটক ভিডিও করা যুবক বাইজীদ তালহার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলীখালী গ্রামে। টিকটকে তিনি বায়েজীদ তালহা নামে পরিচিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. বাইজীদ।
একসময়ের ছাত্রদলকর্মী বাইজীদ বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও পটুয়াখালী বিএনপিসংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, বাইজীদ অতীতে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতা এসব তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন। বাইজীদ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন মোহনের নিকটাত্মীয় বলেও দাবি করছেন তারা।
তবে মোহনের দাবি, বাইজীদ তার আত্মীয় নন। তিনি (বাইজীদ) জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের অনুসারী ছিলেন। বিপ্লব এখন যুবদল করেন।
জেলা ছাত্রদলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় মোহনের সঙ্গেও বাইজীদ রাজনীতি করেছেন। তবে তার কোনো সংগঠনিক পদ ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাইজীদ ঢাকায় চলে যান। সেখানে তিনি এখন ব্যবসায় জড়িত।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল-হেলাল নয়ন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইজীদ আগে পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে তিনি অনেকদিন ধরে এলাকায় নাই। এখন ঢাকায় রাজনীতি করেন কিনা তা জানি না। ব্যক্তির অন্যায় অপরাধ দল কখনই দায় নেবে না।’
বাইজীদকে রাজধানীর শান্তিনগর থেকে রোববার সন্ধ্যার দিকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
সিআইডির সাইবার ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ নিউজবাংলাকে বাইজীদকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আটকের পর তাকে সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেখানে একাধিক ইউনিটের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে কথা বলছেন।’
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, বাইজীদের বাড়ি পটুয়াখালী হলেও তিনি ঢাকার শান্তিনগরে থাকেন। পদ্মা সেতুতে নাট খোলার বিষয়টি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, বাইজীদ পদ্মা সেতুতে ওই টিকটক ভিডিও বানানোর পর নিজের টিকটক প্রোফাইলে পোস্ট করেন। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরে তিনি ভিডিওটি মুছে ফেলেন। একই সঙ্গে নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ডিঅ্যাকটিভেট করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
পরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে শান্তিনগরের বাসা থেকে আটক করে সিআইডি।
শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন বাইজীদ।
৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই যুবক সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। যিনি ভিডিও করছিলেন তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দেহ।'
নাট হাতে নিয়ে জবাবে বাইজীদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের... পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’
এ সময় পাশ থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।’
ভিডিওটি বাইজীদের টিকটক অ্যাকাউন্টে আপলোড করার পর ফেসবুকেও সেটি ভাইরাল হয়। তবে রোববার বিকেলে এই অ্যাকাউন্টে ‘প্রাইভেট’ করা অবস্থায় দেখা গেছে।
সাধারণের জন্য খুলে দেয়ার পর পদ্মা সেতুতে রোববার দিনভর গণপরিবহন ছাড়া অন্য প্রায় সব গাড়িকে সেতুতে থামাতে দেখা যায়। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি তুলেছেন ছবি।
মাইক্রোবাস ভাড়া করে পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে আসেন তোফাজ্জল হোসেন। গাড়িটি দাঁড় করিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পরিবারের ১৪ সদস্য সেতু ঘুরে দেখেন; তোলেন দলবদ্ধ ছবি।
নিউজবাংলাকে তোফাজ্জল বলেন, ‘যেদিন সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে, আমরা সেদিনই ঠিক করেছি প্রথম দিনই সেতু দেখতে আসব। এ জন্য আমার মা, খালা, ফুপুসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। সারা দিন ঘুরে আবার কুমিল্লা ফিরে যাব।’
নিয়ম ভাঙার প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, ‘দেখেন আমরা তো কত অনিয়মই করি। এতদিনের ইচ্ছা স্বপ্নের সেতুতে এসে দাঁড়াব। নিজের স্বপ্নপূরণে একটু অনিয়ম করা দোষের কিছু না।’
আরও পড়ুন:গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১-এর বিচারক মোস্তফা কামাল রোববার বিকেলে এই আদেশ দেন।
দণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন রংপুর নগরীর এরশাদনগর এলাকার আসাদুল ইসলাম, রঞ্জু মিয়া ও কেডিসি রোড এলাকার বাবু মিয়া।
রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও প্রধান আসামি বাবু পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ আইনজীবী রফিক হাসনাইন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০০৭ সালের ২৬ মে ভোরে নগরীর মর্ডান মোড় এলাকায় রিকশার গতিরোধ করে আরোহী ওই গৃহবধূকে টেনেহিঁচড়ে খামার এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করে আসামিরা। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন গিয়ে আসাদুলকে আটক করে পুলিশে দেয়। অন্যরা পালিয়ে যায়।
সেদিনই ওই নারী কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এসআই আজিজুল ইসলাম তদন্ত শেষে তিন আসামির বিরুদ্ধে সে বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ১৫ বছর পর এই মামলার রায় হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য