দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১১টি জেলা। এসব এলাকায় ৯টি নদীর ১৯টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও উত্তরের জেলাগুলোতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ পার্বত্য তিন জেলার নদ-নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণাধীন পানির সমতল স্টেশন ১০৯টির মধ্যে ৭৬টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ২৯টিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে চারটিতে।
এত অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ বৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে এফএফডব্লিউসি।
যেসব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর
এফএফডব্লিউসির তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি নুনখাওয়া, হাতিয়ে, চিলমারী ও ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বাহদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও পোড়াবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।
সুরমা নদীর পানি সিলেট ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদ ও শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।
খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন সুরমা নদীর পানি দেরাই পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমেশ্বরী নদীর পানিও কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।
নদনদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস
এফএফডব্লিউসির তথ্যমতে, দেশের সব প্রধান নদনদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের স্থানগুলোতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, ধরলা, দুধকুমারসহ সব প্রধান নদনদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ভারতের মেঘালয়ে ভারি বর্ষণের প্রবণতা কমে এসেছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে হবিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তিস্তা নদীর পানি সমতলে বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা উপরে অবস্থান করতে পারে।
এ ছাড়া লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার নদনদীগুলোর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন:ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা অভিযোগ করেছেন, অনেক জায়গায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চান জেলা প্রশাসকরা।
‘জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) অধ্যাদেশ পরিবর্তন হচ্ছে। তারপর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখাতে বরাদ্দ নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যথাযথভাবে যেন পুনর্বাসন কার্যক্রম চলে। এখন থেকে ইউএনওরা টিনসহ কিছু সামগ্রী স্থানীয়ভাবে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কিনবেন।’
অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যত্থানের পর সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে মনে করি। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
‘এ মাসের মধ্যেই জুলাই অধিদপ্তর গঠন হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে মৃত্যুবরণ করা সবাই জুলাই শহীদ। আর আহতরা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত হবেন।’
আরও পড়ুন:বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সব জনতাকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে সোমবার জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জনতা বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করছে। এ ক্ষেত্রে শুধু তৌহিদি জনতা নয়, জনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী সব জনতাকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে দুপুরে কোস্ট গার্ড সদরদপ্তরে বাহিনীর ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কোস্ট গার্ড দিবস-২০২৫ উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের নদীপথ ও সমুদ্র উপকূলের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কোস্ট গার্ডের, যা তারা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে মাঝে মাঝে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। কোস্ট গার্ড সেগুলো সফলতার সঙ্গে সমাধান করছে।
‘বিভিন্ন সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা আমাদের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রেও কোস্ট গার্ড ভালো ভূমিকা রাখছে। কোস্ট গার্ড ও বিজিবির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উপকূল এলাকা আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাওয়া সহজ হবে না। কারণ ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া পাসপোর্ট করা যাবে না।
‘রোহিঙ্গারা যেন জাতীয় পরিচয়পত্র না পায়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর যারা ইতোমধ্যে পেয়েছে, তাদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা হবে।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের বড় সমস্যা। এটি আমাদের সব ক্ষেত্রকে গ্রাস করে নিয়েছে। গত ছয় মাসে দুর্নীতির পরিমাণ অনেক কমেছে।
‘তবে এটি এখনও সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। দুর্নীতি যদি কমানো যায়, তাহলে সব সেক্টরে উন্নতি হবে।’
ওই সময় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল জিয়াউল হক উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখার বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সচিবালয়ে সোমবার আসন্ন রমজান মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এবং বিগত ৬ মাসে মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘সামুদ্রিক জলসীমায়ও ইলিশ ও অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য আহরণের ওপর প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সকল প্রকার মৎস্য নৌযান দিয়ে যেকোনো প্রকার মৎস্য ও চিংড়ি, কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি (ক্রাস্টাশিয়ান্স) আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ ১২.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এই সময়কাল পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সমন্বয় না থাকায় বাংলাদেশের মাছ আহরণে পার্শ্ববর্তী দেশের মৎস্যজীবীরা সুযোগ নিচ্ছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘তাই মৎস্য আহরণকারী সংগঠন এবং মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যানড পিরিয়ড সমন্বয় করার দাবি উত্থাপিত হয়ে আসছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘তারই পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য অংশীজন এবং মৎস্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। কারিগরি কমিটি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল আহরণ ও স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ মাছের ব্রিডিং পিরিয়ড এপ্রিল থেকে জুন মাস হওয়ায় ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
‘অর্থাৎ এখন থেকে সামুদ্রিক জলসীমায় ইলিশ ও অন্যান্য মাছের আহরণের নিষিদ্ধ কাল হচ্ছে ৫৮ দিন (১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন)।’
এ ছাড়া হাওরে দেশীয় মাছ সংরক্ষণে জন্য ১৫ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত হাওরে পানি আসার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ দিন বা সর্বোচ্চ ১ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশ দুর্নীতির অনেক গভীরে ঢুকে গেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দুর্নীতি সব শেষ করে দিচ্ছে। এটা থেকে বের হতে না পারলে বাংলাদেশের কোনো গতি নেই।
রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সামনে বিশাল সম্ভাবনাময় জগৎ, শুধু আমাদের সিদ্ধান্ত এবং কর্মসূচিগুলো ঠিক করার অপেক্ষা। তারুণ্য আমাদের আছে, প্রাকৃতিক সুযোগ আমাদের আছে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি, এই একটা জিনিস সব শেষ করে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো সমীক্ষায় আপনারা দেখবেন, বাংলাদেশ দুর্নীতির তালিকায় সর্বনিম্নে। সততা বলে আমাদের আর কোনো জিনিস নেই, শৃঙ্খলা বলে আমাদের আর কোনো জিনিস নেই। কাজেই এই দুর্নীতি থেকে বের না হলে আমরা ভালো কিছু করতে পারব না।’
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা আজকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সম্মেলনে এসেছি। কাজেই দুর্নীতি কোথায় আছে, কীভাবে আছে।
‘তাদের কাছে এটা অজানা নয়। এটা থেকে উদ্ধার পাওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনো গতি নাই। এটা থেকে বের হতেই হবে আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘এটা (দুর্নীতি) থেকে আমরা কেউ মুক্ত হতে পারছি না। এমন গভীরে ঢুকে গেছি আমরা।
‘আমরা যত বক্তৃতাই করি, এটা অসাড় কথা, যদি আমরা একটা সৎ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারি।’
দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা অল্প সময়ের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আছি, কতটুকু সমাধান দিতে পারব জানি না। তবে শুরু থেকে আমরা একটা চেষ্টা করছি। সবাইকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
দুর্নীতি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব জায়গাগুলোতে অনলাইন ব্যবস্থা আছে, সেগুলো পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায় আমরা দুর্নীতিমুক্ত হই। কারণ দুর্নীতিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই চলছে না। তারাও চায় আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য হোক, এটা তাদের গবেষণা।
‘আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই না। আমরা ব্যক্তিগত সুযোগ নিয়ে ব্যস্ত আছি। জাতীয় সুযোগের জন্য আমরা মোটেই চিন্তিত নই। আমাদের সেই চিন্তা বদলে ফেলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা সরকারি কার্যক্রমে যুক্ত আছেন, তাদের অনুরোধ জানাই দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে। দুর্নীতি থেকে সরকারকে বের হতে হবে। সরকার যদি দেশের উপকারে আসতে চায়, তাহলে এটা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে হবে।’
অনলাইন সেবা চালু করার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনাদের এই আবেদন করব, আমরা থাকা অবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অনলাইন সার্ভিস, যেগুলো তৈরি আছে সেটা শতভাগ যেন আমরা বাস্তবায়ন করে যেতে পারি।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘কেউ এটা বাধা দেওয়ার জন্য যেন কোমর বেঁধে না লেগে যায়। কোমর বেঁধে লেগে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ এটি (দুর্নীতি) দিয়েই তো তারা সব সুযোগ সুবিধা পেত।
‘এটা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের হবেটা কী? তারা নানা ব্যাখ্যা দেবে, এটা ব্যাহত করার জন্য। আমরা তাদের (দুর্নীতিবাজদের) মুক্তি দিতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘এটা হলো লোহার ফটক (দুর্নীতি), এটা অতিক্রম না করলে উন্নতি বলেন, কিছুই আসবে না। কিচ্ছু হবে না।
‘সম্মান, উন্নতি যাই বলেন, কিছুই হবে না। এটা ভদ্র লোকের সংসারের মতো হতে হবে, যে আমরা দুর্নীতিমুক্ত জাতি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের মতো দেশ যদি দুর্নীতি মুক্ত হতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না। সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরাও পারব।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি থেকে বিভিন্ন দেশ বের হয়ে এসেছে। এটা সম্ভব, অসম্ভব কিছু না। শুধু চেষ্টার দরকার। শুধু আমাদের প্রতিজ্ঞা দরকার, এটা আমরা করব।’
সম্প্রতি আরব আমিরাত সফরের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আরব আমিরাতের লোক আমাদের দুর্নীতি নিয়ে বলছে, আমরা তোমাদের কোনো ডকুমেন্ট বিশ্বাস করতে পারছি না। এত ভুয়া। গৃহকাজের লোক কিন্তু সে সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছে মেডিক্যাল ডক্টর হিসেবে।
‘জলজ্যান্ত আমরা দেখছি এ ডাক্তার হতে পারে না। সে ডাক্তার না, কিন্তু সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছে। ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি নিয়ে ওখানে আসছে। আমরা কতটা বাছাই করব? লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় যে, আমরা এটা কিছুই করতে পারছি না। আমরা কেউ না কেউ তাকে এই সার্টিফিকেট দিচ্ছি। এজেন্টরা জোগাড় করে দেয়। শুধু একটা এজেন্ট না বহু এজেন্ট আছে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে আমাদের বহু মেয়ে মধ্যপ্রাচ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। নিয়ে গিয়ে কীসের মধ্যে ফেলে দিয়েছে কেউ জানেও না। মানব পাচারের যে বিষয়, তা অত্যন্ত বীভৎস।
‘আমাদের মেয়েরা যাচ্ছে, কী অবস্থায় ফিরে আসছে, যদি সশরীরে ফিরে আসতে পারে। কত লাশ কোথায় চলে যাচ্ছে, সেটারও কোনো হিসাব নেই। এই কোনো দেশ বানালাম আমরা। আমরা তো দায়ী।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নিজের কাছে, নিজের সন্তানদের কাছে আমরা কী জবাব দেব যে, কাউকে আমরা রক্ষা করতে পারছি না। এই মৃত্যুর জন্য, এই মানব পাচারের জন্য আমরা দায়ী না।’
তিনি বলেন, ‘এ ভীষণ রোগ। আমাদের সারা গায়ে ঘা। এটা থেকে মুক্ত হতে না পারলে কোনো দিকে অগ্রসর হওয়ার উপায় নেই। আমরা আজকে প্রতিজ্ঞা করি, আমরা এই ঘা থেকে মুক্ত হব, সুস্থ হব, দুর্নীতির দায়ে আমাদের কেউ অভিযুক্ত করতে পারবে না। এই রকম সরকার চালাব, এ রকম সমাজ চালাব।’
আরও পড়ুন:পাসপোর্ট পেতে এখন থেকে আর পুলিশের ভেরিফিকেশন লাগবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে রবিবার তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার নতুন নিয়ম চালু করেছে যে, এখন থেকে আর পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না। পাসপোর্ট পাওয়া নাগরিকদের একটি অধিকার।
‘জন্মসনদ বা এনআইডির জন্য যদি পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার না পড়ে, তাহলে পাসপোর্টের বেলায় সেটা লাগবে কেন?’
ওই সময় সরকারকে একটি টিম হিসেবে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা টিমওয়ার্ক। পুরো টিমের সফলতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কিছু আমাদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত।’
ডিসিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা মহাশক্তিধর একটি সমাবেশ। আমরা যা করি, যা চিন্তা করি, যা পরিকল্পনা করি, সেটাই সরকার; সেটাই সরকারের চিন্তা, সরকারের ভাবনা। সেটাই সরকারের কর্তব্য।
‘কাজেই এই মহাশক্তি নিয়ে আমরা কী কাজ করব, কী কাজের জন্য আমরা তৈরি, কী কাজে আমরা সফল, কী কাজে আমরা বিফল, সেগুলোই আজকের সমাবেশের আলোচ্য বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে কাউকে স্তুতি দিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। এই স্তুতিবাক্য পরিহার করার আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। সভা-সমিতিতে স্তুতিবাক্য খুব অগ্রহণযোগ্য জিনিস বলে আমরা চালু করব।’
সরকার পরিচালনাকে খেলার দলের সঙ্গে তুলনা করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে যা কিছু করণীয়, সেই করণীয়র দায়িত্বে আমরা সবাই আছি। এমনভাবে চিন্তা করুন, আমরা একটা খেলার, ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার খেলোয়াড়।’
আরও পড়ুন:গ্যাস বা পেট্রলচালিত ফোর-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার (সিএনজিচালিত) অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত মিটারের ভাড়ার হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মামলা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশনার চিঠি প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রবিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ফোর-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান সম্পর্কিত বিআরটিএ কর্তৃক ইস্যুকৃত সাম্প্রতিক নির্দেশনাটি আজ বাতিল করা হয়েছে। বিআরটিএ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ডিএমপি কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে। ডিএমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবরোধ প্রত্যাহার করে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি মিটারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করলে চালকদের জরিমানা বা কারাদণ্ডের নির্দেশনা দেয় বিআরটিএ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ৩ দিনের সফরে রবিবার কুয়েত গেছেন।
সফরকালে সেনাপ্রধান কুয়েত সরকারের সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা উন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় করবেন।
এ সফরের মাধ্যমে কুয়েতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠনে (ওকেপি) নিয়োজিত বাংলাদেশি সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধিসহ কুয়েত সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য