দেশের সব মানুষকে পেনশনের আওতায় আনতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২২’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এখন এটি ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। তাদের সায় মিললেই আইনটি সংসদে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। পরে সচিবালয়ে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিসভা সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিসভা সচিব বলেন, ‘যে কোনো নাগরিক ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এই প্রিমিয়াম জমা দিলে পেনশন সুবিধা পাবেন। পেনশনাররা (১৮-৬০ বছর) আজীবন পেনশন পাবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় বয়স্ক লোকদের জন্য ৫০ বছরের অধিক কেউ থাকলে বিবেচনায় নেয়া হবে। পেনশন পেতে কমপক্ষে ১০ বছর নিয়মিত চাঁদা (প্রিমিয়াম) দিতে হবে।
‘জনগণের বেকারত্ব, ব্যাধি, পঙ্গুত্ব, বার্ধক্য কারণে অভাবগ্রস্ততা এবং দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি পেনশন এবং সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে আইন উপস্থাপন করা হয়েছে।’
আইনের বিস্তারিত তুলে ধরে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে পেনশনের ভাণ্ডারে ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের সব বাংলাদেশি নাগরিক পেনশনে অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরাও যদি নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করে এবং প্রিমিয়াম দেয় তাহলে এই পেনশনে অংশ নিতে পারবেন।
‘যে ব্যক্তি ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত প্রিমিয়াম দেবে তার পেমেন্টে এক রকম হবে, যে ৪০ বছর পর্যন্ত দেবে তারটা এক রকম হবে। প্রিমিয়ামের একাধিক লেয়ার থাকতে পারে। যে বেশি স্কেলের প্রিমিয়াম দেবে তার পেনশন বেশি হবে। পেনশনারদের কেউ ৬০ বছরে মারা গেলে তার নমিনি পেনশনের সুবিধা প্রাপ্য হবেন।’
তিনি বলেন, ‘আইনের মধ্যে প্রিমিয়াম মেনশন করা হবে না। বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে। যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। কারণ আজকে ২ হাজার টাকা ঠিক করা হলো, ২০ বছর পর ২ হাজার টাকার তো ভ্যাল্যু থাকবে না।
‘যাদের প্রিমিয়াম দেওয়ার সামর্থ নেই তাদের সুবিধার বিষয়টি রুলের মধ্যে থাকবে। ধরেন, সেফটিনেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে যাদের হেল্প করা হয় ওটা থেকে রুলের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। পেনশনের কোনো টাকা মার যাবে না, কেউ কোন ডিসকন্টিনিউ করলে বা মারা গেলে সে যদি প্রিমিয়াম আইনের মাধ্যমে কিছু না পায়, তাহলে রুলের মাধ্যমে নিয়ে আসা হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা লেজিসলেটিভ বিভাগ থেকে সাবজেক্টিভ অনুমোদন করে দেয়া হয়েছে। এখন লেজিসলেটিভ বিভাগ এটা দেখবে তারপরে সংসদে চলে যাবে। একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চারজন সদস্য নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে।’
পেনশন কেবল সরকারি চাকুরেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ৬০ বছরের বেশি বেসরকারি চাকরিজীবী এবং অন্যদেরও পেনশনের আওতায় আনতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিক কার্যক্রম ‘সবার জন্য পেনশন স্কিম’।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেয়া ইশতেহারে সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য পেনশন স্কিমের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। সবার জন্য পেনশনের এই চিন্তা অবশ্য আওয়ামী লীগের গত আমলের।
আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৭-১৮ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। এ জন্য পাইলট প্রকল্পের কথা বলেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরে যাওয়ার পর আমৃত্যু তারা আর্থিক সুবিধা পান প্রতি মাসে। সেই চাকরিজীবী মারা গেলে তার স্ত্রী এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে তাকেও আমৃত্যু পেনশন দেয়া হয়।
তবে বেসরকারি খাতে কোথাও কোথাও ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ড ফান্ড) এবং গ্র্যাচুইটি সুবিধা থাকলেও পেনশনের বিষয়টি নেই। ফলে চাকরি শেষে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয় বিপুলসংখ্যক মানুষ।
সর্বজনীন পেনশনের উল্লেখযোগ্য দিক
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক এই পেনশনের আওতায় আসবেন। প্রবাসীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদেরও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসিক চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে পেনশনের আওতায় আনা হবে। চাঁদার পরিমাণ কত হবে এবং পেনশনভোগী কীভাবে কতটা সুবিধা পাবেন তা নির্ধারণের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি আলাদা পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন অ্যাকাউন্ট অপরিবর্তিত থাকবে। ওই অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট জন যে পরিমাণ চাঁদা দেবে তার বাইরে একটি অংশ দেবে সরকার।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসিক চাঁদা জমা দিতে হবে। এরপর মেয়াদ শেষে পেনশনভোগীদের সুবিধা দেয়া হবে। আমৃত্যু পেনশন সুবিধা বহাল থাকবে।পেনশনের অর্থ এককালীন উত্তোলন করা যাবে না। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে।
কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। পেনশনের টাকা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। পেনশনের টাকা নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করা হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ এই টাকা বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করবে।
আরও পড়ুন:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তাদের আয় ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে জনপ্রত্যাশার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান দুদকের শীর্ষ অবস্থানের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের স্বার্থে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশের আহ্বান জানাই।’
ইফতেখারুজ্জামান দুদকের দুই কমিশনার ও চেয়ারম্যানের নিজের এবং নিকট পরিবারের নামে-বেনামে অর্জিত আয় ও সম্পদের তথ্য, আয়ের বৈধ সূত্রের সঙ্গে অর্জিত আয় ও সম্পদের সামঞ্জস্যতার তথ্য, নিরপেক্ষ নিরীক্ষক কর্তৃক আয় ও সম্পদ বিবরণীর যথার্থতা, পর্যাপ্ততা ও সামঞ্জস্যতা যাচাইয়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, পেশাগত জীবনের কোনো পর্যায়ে কোনো প্রকার ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত তথ্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্যের তথ্য চেয়েছেন।
পাশাপাশি উল্লিখিত বিষয়ে কোনো প্রকার অসামঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্তসাপেক্ষে জবাবদিহি করতে প্রস্তুত মর্মে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে দুদকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা এবং ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর অভীষ্টের প্রতি অনড় থাকার পাশাপাশি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকারের আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে। কমিশনার হিসেবে তার সঙ্গী হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:তালিকা থেকে স্বেচ্ছায় নাম প্রত্যাহার করলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শাস্তি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেছেন, ‘যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, তারা স্বেচ্ছায় এসে স্বীকার করলে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। নয়তো প্রতারণার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঢাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
ফারুক ই আজম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সেই পরিচয়ে সুবিধা নেয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণা। মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ নিয়ে যারা চাকরি নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। যাচাই-বাছাইয়ের পর যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
দেশে রাজাকারের তালিকা তৈরি করা কঠিন- এ কাজের অগ্রগতি শূন্যের কোটায় বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘জামুকা গঠিত হয়েছে, জামুকার সভা হয়েছে। সেখানে অনেক ফাইন্ডিং বেরিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আসতে পারে। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের যাতে মূল্যায়ন হয়, যারা মাঠে যুদ্ধ করেছেন এবং যারা নানা আঙ্গিকে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে সমান আঙ্গিকে সম্মান দিতে হবে। এটার বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা ছিল। তার মধ্যে যেটি যৌক্তিক সেটি আমরা চূড়ান্ত করব।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘জামুকা গঠিত হয়েছে আইনের ধারায়। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, কার কাছে কে দায়ী হবে- এটার জন্য বিধি হওয়ার কথা। অথচ এত বছর হলেও এটার কোনো বিধি রচিত হয়নি। ফলে একটা তুঘলকি কারবার হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বিগত সরকারের সময়ে ভারতের সঙ্গে যে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ছিল, তা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সরে এসেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থ কম্প্রোমাইজ (আপস) করে আমরা কোনো পররাষ্ট্র সম্পর্ককে বিশ্বাস করি না। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার ভারতের সাথে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসেছে। জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে পরবর্তী সম্পর্কগুলো চলমান থাকবে।’
কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি তথা বার্ডের লালমাই অডিটোরিয়ামে বুধবার অনুষ্ঠিত ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশনবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলের কর্মশালায় সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাজ পরিচালনা করা অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না, সে বিষয়ে স্থানীয় সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের কাজ শেষ হলে উদ্যোগ নেয়া হবে।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতকে যথাযথভাবে আইনগত আহ্বান জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ টবি আরও বলেন, ‘ভারত আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এবং প্রত্যর্পণের একটি আইনগতভাবে বৈধ এবং যথাযথ অনুরোধের সম্মান করে থাকলে, আমরা অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য আহ্বান জানাব।’
তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই আমরা জানি যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি বিদ্যমান। এ বিষয়ে এরই মধ্যে যা কিছুই বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা জানি এবং সচেতন রয়েছি। এ বিষয়ে ভারত আগামীতে কী করতে যাচ্ছে, তার কোনো প্রাক-বিচার এখনই আমরা করতে চাই না।
‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যথাযথভাবে অভিযোগ আনা এবং তাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য ভারতকে জানানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব এখন এই ট্রাইব্যুনালের এবং এর চিফ প্রসিকিউটরের।’
কোনো কারণে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করা যায় কি না কিংবা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা নেয়া যায় কি না, সেটি নিয়ে আলোচনা করছেন বলে জানান ক্যাডম্যান।
তিনি বলেন, ‘বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সহায়তা ও সমর্থন প্রয়োজন। আমি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, ইইউ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা করেছি।
‘যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাজকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি, সেহেতু এখানে অনেকের সমর্থন পাওয়ার সুযোগই আমাদের রয়েছে বলে আমরা আশাবাদী।’
আরও পড়ুন:সমতলের সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলের ভেদাভেদ থাকলে তা দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে আয়োজিত আলোচনা সভায় যমুনা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বনজ ও প্রাকৃতিক যে সম্ভার ও সুযোগ আছে, সেটা বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত জায়গা হওয়ার কথা। অথচ হয়েছে বিপরীত। এটা মানা যায় না।
‘আমরা চাই কীভাবে অনিয়ম কমিয়ে আনা যায়। বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার প্রযুক্তি ও শিক্ষার ওপর। সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী মাসে হবে তারুণ্যের উৎসব। এটা সবার উৎসব হোক। আমি যেন দেখি পার্বত্য জেলাগুলো এখানে ওপরে থাকে এ উৎসবে। এটা বরাবরের মতোই করব।
‘এবার প্রথমবারের মতো হবে। নিজেরাই উৎসাহের সঙ্গে এ উৎসব করবেন। অন্য তরুণদের চেয়ে পার্বত্য এলাকার তরুণরাও পিছিয়ে নেই, এটা প্রমাণ করার সুযোগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন, আমি দূর করার চেষ্টা করব। আমরা দেশও বদলাতে চাই, আমরা আমাদের কাজ দিয়ে পৃথিবীও বদলাতে চাই।’
পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক কঠিন সংকটে আছে। আপনাদের অঞ্চলে এটা আরও বেশি কঠিন। শিক্ষকদের কষ্ট হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট হয়। আপনাদের পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হতে হবে।
‘আমরাও চেষ্টা করব রাষ্ট্রীয় দিক থেকে কীভাবে কী করা যায়। পার্বত্য জেলার তরুণরা দুর্গম অঞ্চলে আছে বলে বড় শহর থেকে লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকবে, সেটা হতে দেয়া যাবে না। লেখাপড়ায় তাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
আরও পড়ুন:রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রাখাইনের সঙ্গে শেয়ার করছে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা বা প্রস্তুতি রয়েছে কিনা?- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘পুরো পরিস্থিতি আমরা খুবই গভীরভাবে মনিটর করছি। সার্বিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টা উচ্চপদস্থ একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি গভীরভাবে এটা মনিটর করবেন। যারা যারা অংশীজন আছেন তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘আগামী বছর আমাদের একটা বড় কাজ হবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা। এর ভেন্যু ও অন্যান্য বিষয় মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ঠিক করে ফেলব। আশা করছি, এই সম্মেলনটা হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে।’
বিশ্বের সব দেশ এতে অংশ নেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা খুবই আগ্রহী তারা সবাই থাকবে।’
জাতিসংঘের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, চলতি বছরের ৫ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্পর্কিত ঘটনায় মোট ৮৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওইসব জায়গায় নতুন কিছু ঘটনা ঘটলে গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যা বাড়বে। এসব মামলার বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
আরও পড়ুন:পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. ফজলুল কাদের।
পিকেএসএফ-এর ১২তম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মঙ্গলবার তাকে আগামী তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয় পিকেএসএফ পরিচালনা পর্ষদ।
মো. ফজলুল কাদের ১৯৯০ সালের ১ অক্টোবর ম্যানেজমেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে পিকেএসএফ-এ তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ২০২১ সালের ৮ আগস্ট পিকেএসএফ-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। গত ২২ আগস্ট থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরামর্শক হিসেবে তিনি জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, বাহরাইন, জর্ডান ও মরক্কোয় কাজ করেছেন।
মো. ফজলুল কাদের ১৯৭৯ সালে তৎকালীন মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসএসি ও ১৯৮১ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসএসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৮৮ সালে আইবিএ-তে এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
ফজলুল কাদের যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, টেমেনস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মন্তব্য