পটুয়াখালীতে বুধবারের ভোটের ফলাফলে বিস্ময় যেন কাটছেই না।
জেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা মার্কার প্রার্থীর জয়ের পাশাপাশি পাঁচটিতে দলটির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হাজির হচ্ছে।
এই আট ইউনিয়নে মোট ভোট পড়েছে ৭৯ হাজার ৫৫টি। এর মধ্যে নৌকায় পড়েছে ২৮ হাজার ৩৮৭টি। হাতপাখা প্রতীকে পড়েছে ১৮ হাজার ২৭৬টি।
এর মধ্যে ধুলারসর ইউনিয়নে নৌকার প্রায় দেড়গুণ ভোট পেয়ে জিতেছেন হাতপাখার আবদুর রহিম। ইটবাড়িয়া ইউনিয়নে পাঁচ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তাদের প্রার্থী না থাকায় বিএনপি সমর্থকরা ভোট দিয়েছেন হাতপাখায়। যেখানে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল, সেখানেও তার অবস্থান ছিল দুর্বল। তার পাশেও ছিল না দলের কর্মী-সমর্থকরা।
তবে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলছেন, তারা গত কয়েক বছরে পটুয়াখালীতে সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়েছেন অনেকটাই। তাদের ব্যাপক কর্মী তৈরি হয়েছে। ভোটের আগে তারা কেন্দ্রভিত্তিক পরিকল্পনা করে কাজ করেছেন। এর ফল মিলেছে ভোটে।
৮ ইউনিয়নের মধ্যে নৌকা জিতেছে পাঁচটিতে। দুটিতে জিতেছেন দল নিরপেক্ষ প্রার্থীরা। একটিতে জয় পেয়েছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। একটিতে জিতেছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী।
যেসব ইউনিয়নে নৌকা হেরেছে, তার প্রতিটিতেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা অনেক ভোট নষ্ট করেছেন। নৌকার প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মিলিয়ে ভোটসংখ্যা বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে বেশি হয়।
আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যেই দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু দুর্নীতিবাজ লোক গোপনে কাজ করেছেন। আমি বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রে জানাচ্ছি। কারা কারা আমার ইউনিয়নে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে, কারা কারা অর্থ দিয়েছে, সব তালিকা আমার হাতে পৌঁছেছে। সবকিছু প্রমাণসহ আমি কেন্দ্রে পাঠাব।
ধূলারসর ইউনিয়নে পরাজয়ের নৌকার প্রার্থী মোদাচ্ছের হাওলাদার প্রচার চলাকালেই সাবেক এমপি মাহাবুবুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, মাহবুবুর ও তার ভাই হাবিবুর রহমান নৌকাকে হারাতে বিদ্রোহী প্রার্থী শাহরিয়ার সবুজের পক্ষে কাজ করেছেন।
আ.লীগের বিভক্তিতে হাতপাখার জয়
কলাপাড়া উপজেলার ধুলারসর ইউনিয়নে এখানে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল ঘরে তুলতে বেগ পেতে হয়নি হাতপাখার প্রার্থীকে। এখানে প্রার্থী ছিলেন সাতজন। এদের মধ্যে হাতপাখা আর বিএনপির নেতা আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাদে বাকি পাঁচ জন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ভোটের আগে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল।
নৌকা, ঘোড়া, মোটরসাইকেল, চশমা, অটোরিকশা প্রতীকের প্রার্থীরা সবাই মিলে মোট ভোট পেয়েছে ৫ হাজার ৭৫২। আর বিজয়ী হাতপাখার প্রার্থী পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৩ ভোট।
কলাপাড়া উপজেলা সেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক কে এম সোহেল আনারস প্রতীকে এখানে পেয়েছেন ১ হাজার ৯০৭ ভোট।
এই ইউনিয়নটিকে ‘বিএনপির ঘাঁটি’ বলে দাবি করেন দলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভোটগ্রহণের পরেও দলের নেতার ভোট এত কম কেন?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক সমর্থক জানান, নৌকা ঠেকাতে হাতপাখার দিকে ঝুঁকেছেন তারা।
পটুয়াখালী-৪ কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদারের গ্রামের বাড়ি পাশের ইউনিয়ন ধুলারসরে। বর্তমান এমপি মুহিবুর রহমানের গ্রামের বাড়িও একই এলাকায়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন এবং মনিরুজ্জামানেরও গ্রামের বাড়িও ওই ইউনিয়নে। সেখানে হাতপাখার প্রার্থীর এত শক্ত অবস্থান তৈরির পেছনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ- দুই দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেই দায়ী করা হচ্ছে।
ভোটের আগে সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদার লতাচাপলি ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করলেও ধুলারসর ইউনিয়নে তিনি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে এক দিনের জন্যও গণসংযোগ করেননি। বরং সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহরিয়ার সবুজের আনারসের প্রতীকের পক্ষে গোপনে তৎপরতা চালিয়ে গেছেন-এমন অভিযোগ খোদ দল থেকেই পাওয়া গেছে।
তবে বর্তমান এমপি মুহিবুর রহমান বলেন, ‘আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যেই দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোক গোপনে কাজ করেছেন। আমি বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রে জানাচ্ছি। কারা কারা আমার ইউনিয়নে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে, কারা কারা অর্থ দিয়েছে সব তালিকা আমার হাতে পৌঁছেছে। সবকিছু প্রমাণসহ আমি কেন্দ্রে পাঠাব।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সব প্রার্থী মিলে পাঁচ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছে। যদি এখান থেকে সবাই মিলে নৌকাকে সমর্থন দিত, তাহলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত ছিল।’
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম বলেন, ‘ধুলারসরে হাতপাখার সাংগঠনিক অবস্থা নাই বললেই চলে। নির্বাচনের আগে যখন বিএনপি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পরাজয় টের পাওয়া গেছে, তখন তাদের নেতা-কর্মীরা হাতপাখাকে ভোট দিয়েছে।
‘তারপরও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে না থাকলে সেখানে নৌকার জয় সুনিশ্চিত ছিল। কারণ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট আর নৌকার ভোট একত্রিত করলে যে ভোট হয় তা কিন্তু হাতপাখা আর বিএনপি প্রার্থীর ভোট যোগ করলেও সমান হয় না।’
প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো শক্ত প্রার্থী না থাকায় আমাদের নৌকার প্রার্থী প্রথমে অনেক গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছে। মনে করেছিল যে, নৌকা এমনিতেই জিতে যাবে। তারা এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। হাতপাখার এত বেশি ভোট পাওয়া এটাও আরেকটি অন্যতম কারণ।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘আমি যেহেতু শেখ হাসিনার কর্মী সেহেতু নৌকার পক্ষে তো কাজ করবই।’
অনেকেই অভিযোগ করেছেন ধুলারসরে আপনি বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে গোপনে কাজ করেছেন এবং সে কারণে নৌকা হেরেছে- এমন প্রশ্নে মাহবুবুর বলেন, 'এটি কোনো প্রশ্ন হলো? এসব বিষয়ে আমি টেলিফোনে মিডিয়ার সামনে কিছু বলব না।'
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কেন্দ্রের নির্দেশে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থীদের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানোর দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘নৌকা দিয়েছে কেন্দ্র। সেখানে আমার কোনো হাত নাই। নৌকা যারা পেয়েছে তাদের বিজয়ী করার জন্য আমার নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা দিনরাত সমানতালে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক চালিয়েছি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে ভোটগ্রহণ হয়, সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকেও সব ধরনের সহায়তা করা হয়েছে।
‘নৌকার বিরুদ্ধে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর কখনও তারা দলে আসতে পারবে না। দলের মধ্যে যদি কেউ ঘাপটি মেরে নৌকাকে হারাতে ইন্ধন দিয়ে থাকে, সেটি আমরা যাচাই করে দেখে তথ্য-প্রমাণ পেলে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।’
অন্য পাঁচ ইউনিয়নেও হাতপাখার চমক
সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ছাড়াও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরিদ উদ্দিন সিকদার এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনের ছোট ভাই কামাল হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগেই কামাল হোসেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও ফরিদ উদ্দিন সিকদার মাঠে থেকে যান। তার জন্য আনারস প্রতীক বরাদ্দ হয়।
নৌকার সঙ্গে আনারসের তুমুল লড়াই হবে- এমন গুঞ্জনের মধ্যে দুই দিনের মাথায় ফরিদ ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তবে তখন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল না বলে ব্যালটে তার প্রতীক থেকে যায়।
ভোট শেষে দেখা যায় ফরিদের আনারসে ভোট পড়েছে ২৪৩টি। সেখানে হাত পাখার প্রার্থী জাকারিয়া হাওলাদার পান ৫ হাজার ৭৫৬ ভোট। এই মার্কায় এত ভোট কীভাবে এলো, এ নিয়ে প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে।
যে ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসান সিকদার, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতাসহ আরও অনেকের বাড়ি, সেখানে নৌকার বিপরীতে ছোট দলের প্রার্থীর এত ভোট কীভাবে এলো?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, অনেক নেতা-কর্মীই দলীয় প্রতীকের বদলে কাজ করেছেন হাতপাখার পক্ষে। তারা ‘দিনে নৌকা, রাতে হাতপাখা’ এই নীতিতে ছিলেন।
দুই বছর আগে ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডকে পৌরসভার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে নৌকা প্রার্থীর মোজাম্মেল হোসেন সেসব ওয়ার্ডে যাননি। উন্নয়নও হয়নি সেখানে। ওই তিন ওয়ার্ডে সাধারণ ভোটাররা হাতপাখার পক্ষে রায় দিয়েছে।
নৌকার প্রার্থীর খুব কাছের এক কর্মী বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো শক্ত প্রার্থী না থাকায় আমাদের নৌকার প্রার্থী প্রথমে অনেক গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছে। মনে করেছিল যে, নৌকা এমনিতেই জিতে যাবে। তারা এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। হাতপাখার এত বেশি ভোট পাওয়া এটাও আরেকটি অন্যতম কারণ।’
তবে ইসলামী আন্দোলনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা অহিদুজ্জামান বলেন, ‘মূলত এখানকার চেয়ারম্যানের বিগত দিনের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তিনি সপ্তাহে দুই দিন এলাকায় আসতেন। বাকি সময় ঢাকায় থাকতেন। আরও অনেক কারণে সেখানকার মানুষ আমাদের দিকে ঝুঁকছে।’
শহরসংলগ্ন মৌকরন ইউনিয়নে ৩ হাজার ৭৭৯ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকার প্রার্থী হেরেছেন। এখানে হাতপাখা পেয়েছে ৭৪০ ভোট।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা হেলেনের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে কাজী রাইসুল ইসলাম আনারস প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে জিতেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম বশির আহম্মেদ নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ১১৩ ভোট।
পাশের ইউনিয়ন লাউকাঠিতে একসময়ের বিএনপি নেতা ইলিয়াস বাচ্চু টেলিফোন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২ হাজার ৯১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হাতপাখার প্রার্থী ইদ্রিস আলী। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৮৬৭ ভোট।
এখানে নৌকার প্রার্থী আশিষ কুমার চক্রবর্ত্তী ১ হাজার ৩৪৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা আবুল বাশার সোহাগ ১ হাজার ৮০৫ ভোট পেয়ে রয়েছেন তৃতীয় স্থানে।
স্থানীয়দের মতে, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে নৌকা প্রতীক দেয়ায় ভুলের কারণে ভরাডুবি হয়েছে এখানে। যদি এখানে আবুল বাশার সোহাগকে নৌকা প্রতীক দেয়া হতো, তাহলে নৌকার বিজয় হতে পারত।
কারণ নৌকা আর বিদ্রোহী প্রার্থী মিলে এখানে পেয়েছে ৩ হাজার ১৫৪ ভোট, যা বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে অনেক বেশি।
সদর উপজেলার জৈনকাঠিতে নৌকার প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ মোহসিন ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৯৭২টি। এখানে হাতপাখার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৬১৭ ভোট।
কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলিতে ৬ হাজার ১১৩ ভোট পেয়ে জিতেছেন নৌকার আনসার উদ্দিন মোল্লা। হাতপাখার প্রার্থী মোসলেম মুসল্লি ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৭৫টি। তিনি সেখানে তৃতীয় হয়েছেন।
দশমিনা উপজেলার চরবোরহানে নৌকার প্রার্থী নজির সরদার জিতেছেন ১ হাজার ৮২১ ভোট পেয়ে। এখানে হাতপাখার সাইফুল ইসলাম মুন্সী পেয়েছেন ৫৩৯ ভোট।
অন্য একটি আসনে হাতপাখার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
আরও পড়ুন:জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলটির পক্ষ থেকে এই মতামত জমা দেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল দলটি ২১ আগস্ট তাদের মতামত জমা দেবে।
এদিকে জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় আগামী ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার মতামত চেয়ে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের পটভূমিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তা বলা হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কোনো কোনো দল একমত হননি। সেসব বিষয়ে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।
ওই সব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষ নয় বিএনপি এমনটা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতিতে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত নয়, এতে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না। দেশে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আছে তা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, সংকট নিরসনের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচন। যারা সংস্কার চাচ্ছে না, সেটা তাদের দলের ব্যাপার।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক, এটাই প্রত্যাশা।’
এর আগে গত বুধবার সকালে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীসহ চিকিৎসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। দেশে ফিরে সুস্থ আছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার ১১ আগষ্ট দুপুর ১ টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম
উদ্বোধনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশন করে সন্মান প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ ও জুলাই আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।
কাজেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, কারা হাসবে জয়ের হাসি, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। তাই সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। কর্মীরাও মুখে আছেন নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে।
এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃনমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেক নেতাকর্মী ভাবছেন নতুন নেতৃত্ব আসবে, আবার কেউ কেউ ভাবছেন ধারাবাহিক নেতার মধ্যে দুই একজন জয়ী হতে পারেন।
তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে ছিলেন, রাজপথ থেকে উঠে এসেছেন, রাজনীতিতে যাদের দলীয় পরিচয় বেশি, যারা কর্মী বান্ধব তারাই আসুক নেতৃত্বে। দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। এছাড়াও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান রিপন। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি।
এরপর ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুকে আহ্বায়ক ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল।
পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে, ঘোষিত সম্মেলন উপলক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার (৩ আগষ্ট) তফসিল ঘোষণা করেন সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরের দিন সোমবার জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুইটি পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ, সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাষ্টার হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য আটজন মনোনয়ন তুলেছেন। তারা হলেন শফিউল আজম (ভিপি) রানা, নূর-ই আলম, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক।
এদিকে এই সম্মেলনের আগের দিন রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল।
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিএনপি’র শীর্ষ ৫ জন নেতা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিকে, সোমবার রাতে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টায় শেষ হয়।
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঘেরাও করতে চাওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠিতে এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়। তবে বহিষ্কারের বিষয়টি বুধবার সকালে প্রকাশ পায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি বলেন, বহিষ্কারের তথ্যটি সঠিক।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলীয় নীতি, আদর্শ ও সংহতির পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লায় সোনালি সংসদ মাঠে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, শাহ আলমের (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী) জন্য আমরা নমিনেশন আনবো। প্রয়োজনে আমরা আত্মাহুতি দেবো কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে। তারেক রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ও বিএনপির মহাসচিবকে ঘেরাও করবো।
তিনি বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ মহলকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ফতুল্লাকে নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে কাউকে ছাড়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো জোট চলবে না। এই খেলা আর খেলবেন না। ধানের শীষ ছাড়া ফতুল্লায় কিছু চলবে না। ফতুল্লার জনগণের আবেগ, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। ফতুল্লার মানুষদের প্রিয় নেতা শাহ আলমকে বাদ দিয়ে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
এদিকে এই ঘটনার দুই দিন পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঘেরাও করার মন্তব্যটি সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, মন্তব্যটি স্লিপ অব টাং বলতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রায় ৮০ ভাগ ভোটার বিএনপির। এখানে যদি জোটের অন্য কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ভোটারদের জন্য কষ্টদায়ক। বিষয়টি কেন্দ্রকে বোঝাতে গিয়ে একটু বেশি বলে ফেলেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করে এবং একটি সঠিক গণতান্ত্রিক কাঠামো জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা না করে কোনও প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক আলোচনাসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি তাদের সমালোচনা করেন যারা মনে করেন, সংস্কার রাতারাতি বা কয়েকটি বৈঠকের মধ্য দিয়েই হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
বিএনপি নেতা বলেন, যদি সরকার মনে করে যে, তারা চাইলেই কাল থেকে পুলিশ ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দেবে, তাহলে সেটা হবে না। ‘আপনাকে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যেখানে ঘুষ নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়।’
জিয়া পরিষদ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল ‘জুলাই অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’। এটি গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল দেশের উন্নয়নে বাধা হিসেবে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমলাতন্ত্র উন্নয়নের একটি বড় বাধা। এটি একটি নেতিবাচক আমলাতন্ত্র এবং এটিকে একটি ইতিবাচক কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে। তা করতে হলে মূলত জনগণকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া, তাদের চাহিদা বোঝা এবং সেই চাহিদাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করা।
নির্বাচন চাওয়ার কারণে বিএনপিকে ঘিরে চলমান সমালোচনার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই বলা হলো, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছে, আমরা কেন নির্বাচন চাই?’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচন ছাড়া প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা যায় না। ‘আর যদি প্রতিনিধি না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে সংসদে যাবে? আর যদি নির্বাচিত সংসদ না থাকে, তাহলে কীভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে?’
ফখরুল বলেন, ‘আপনি দেশ চালাতে বাড়ি ও বিদেশ থেকে কয়েকজন লোক ভাড়া করে আনতে পারেন না। এটি সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, জাতির এই শোকের সময়ে আমি সকল গণতন্ত্রপন্থী সহযোদ্ধার প্রতি শান্ত ও সংহত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিভেদমূলক সংঘাত কিংবা জনতার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করতে হলে আমাদের সহনশীলতা ও আত্মসংযমের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু সদস্যের মাধ্যমে জনতা ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব গোষ্ঠীকে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন একটি শোকাবহ মুহূর্তকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সহানুভূতি ও সংহতি প্রদর্শনের দিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের শক্তি ব্যয় হোক নিখোঁজ প্রিয়জনদের খুঁজে বের করা, নিহতদের সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করা, আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণে কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার কাজে।
তারেক রহমান বলেন, প্রাণহানির শিকার নিরীহ ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে আমাদের হৃদয়ের গভীর সহানুভূতি। বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
মন্তব্য