১০ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগের সার্ভিস লাইনের তার চুরি হওয়ায় শুক্রবার রাত ৩টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শনিবার বেলা দেড়টার দিকে স্বাভাবিক হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ।
বিদ্যুৎ না থাকায় ভুতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয় পুরো হাসপাতালে। টিকিট কাউন্টার, চিকিৎসক রুমসহ জরুরি বিভাগে মোমবাতি জ্বালিয়ে, এমনকি মোবাইলের আলো দিয়ে চিকিৎসাকাজ চালানো হয়।
জরুরি বিভাগে মোবাইল ফোনের আলো দিয়ে চার বছরের এক শিশুর ঠোঁট সেলাই করতে দেখা গেছে।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বেলা দেড়টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। চুরির ব্যাপারে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি।’
সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের একটি গ্রামে মাত্র ২২ দিনের মধ্যে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ১১ দিন পর পর ওই তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন মৃত্যুতে ওই গ্রামজুড়ে এখন শোক আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিশেহারা অবস্থা পরিবারটিরও।
ঘটনাটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা সেনপাড়া এলাকার। মৃত ৩ জন হলেন- ওই এলাকার কৃষ্ণ চন্দ্রের ১৬ বছরের ছেলে মিঠুন চন্দ্র রায়, কৃষ্ণ চন্দ্রের কাকাতো ভাই ও মৃত অন্যপ্রসাদ রায়ের বড় ছেলে ৩০ বছরের বিমল চন্দ্র রায় ও মেজো ছেলে ২৭ বছরের রতন চন্দ্র রায়।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৮ জুন অসুস্থ অবস্থায় মারা যায় মিঠুন। তার শ্রাধ্যের দিনক্ষণ ছিল ২০ জুন। কিন্তু ১৯ জুন রাতেই মারা যান রতন। তিনি অসুস্থতা বোধ করছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। রতনের শ্রাধ্যের দিনক্ষণ ছিল ১ জুলাই। কিন্তু তার আগের দিন ৩০ জুন রাতে আকস্মিকভাবে মারা যান বিমল। ফলে ছোট ভাইয়ের শ্রাদ্ধ না করেই সৎকার করা হয় বড় ভাইকে।
এদিকে, একে একে তিন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারটিতে। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বিমলের নববধূ অষ্টমনি রানী। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বিলাপ করছেন রতনের স্ত্রী চিত্রা রানী।
মাত্র ৮ মাস আগে স্বামীকে হারানোর পর এবার কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা জয়ন্তি রানীও। এ ছাড়া স্থানীয়দের মাঝেও শোকের পাশাপাশি বিরাজ করছে আতঙ্ক।
মিঠুনের বাবা কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, তার ছেলে স্থানীয় স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়তো। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার। পড়ালেখা করে ছেলে অভাবের সংসারে হাল ধরবে এমন প্রত্যাশা ছিল বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বিমল এবং রতনের ছোট ভাই জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেছেন এখনও এক বছর হয়নি। এর মধ্যেই দুই ভাইকে হারাতে হলো। আমরা অভিভাবক শূন্য হয়ে গেলাম। কিভাবে পরিবার চালাবো ভেবে পাচ্ছি না। আর কাউকে হারাতে চাই না।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘এক পরিবারে একে একে তিনজনের মৃত্যু একটি মর্মান্তিক ঘটনা। শুনেছিলাম রতনের কিডনিকে সমস্যা ছিল। পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় সঠিক চিকিৎসা করতে পারেনি হয়তো।’
পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাও চান বেলাল।
বিষয়টি নিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী বলেন, ‘খবর নিয়ে জেনেছি, যারা মারা গেছেন তারা রোগাক্রান্ত ছিলেন। পরিবারটি যদি মনে করে তাদের কোনো বংশানুক্রমিক রোগ রয়েছে, তাহলে প্রয়োজনে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ছাড়া ওই পরিবারটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়ারও আশ্বাস দেন ইউএনও।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের রাউজান ও বাঁশখালীতে পৃথক দুর্ঘটনায় শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
বাঁশখালীতে রোববার সকাল ১০টায় এবং বিকেল ৪টার দিকে রাউজানে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের বাঁশখালা গ্রামের মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম এবং ফটিকছড়ির আব্দুল্লাহপুর এলাকার মো. রাশেদ।
বাঁশখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাহারছড়ার বাঁশখালা এলাকায় একটি ডাম্পট্রাকের চাপায় ৮ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। স্থানীয় বেড়িবাঁধে সড়ক নির্মাণের কাজে ইট নিয়ে যাচ্ছিল গাড়িটি। এই ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
রাত পৌনে ৯টার দিকে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, বিকেলে নিজ বাড়ি আব্দুল্লাহপুর থেকে মোটরসাইকেলে মাইজভান্ডার যাওয়ার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে পড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৯ বছরের এক শিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শনিবার রাত আটটার দিকে দুই জনকে আসামি করে মামলাটি করেন শিশুর মা। শিশুটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্রী। আল মাহি নামে এক যুবকের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে ২৯ জুন রাতে শিশুটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, আড়াইহাজার উপজেলার ছনপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে আল মাহি ও আব্দুর রশিদের ছেলে মোহাম্মদ আছলাম।
এজাহারে বলা হয়েছে, শিশুটি ২৯ জুন রাত আটটার দিকে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল আসামি আল মাহির বাড়িতে। সেখানে অবস্থান করছিল আছলাম নামের এক ছাত্র। পড়ার রুমে শিশুকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে মাহি ও আছলাম। পরে তাকে কোরআন শরীফ ছুঁয়ে কসম করানো হয় ঘটনা কাউকে না জানাতে।
শিশুটি রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাড়িতে ফিরে মাকে ঘটনা জানায়। এরপর বাবাসহ অন্য আত্মীয়রা বিষয়টি জানতে পারেন।
ওসি আজিজুল হক বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে প্রথমে স্থানীয়ভাবে শালিস হয়। সেখানে তারা নিজেরা মিমাংসার চেষ্টা করেন। মিমাংসা না হলে শিশুর মা থানায় মামলা করেন। এর আগেই আসামিরা পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।’
শিশুর মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পরদিন স্থানীয় কয়েকজন আমাদের বাড়িতে মিমাংসা করতে এসেছিলেন। কিন্তু আমি বিচার চাই, তাই মামলা করেছি।’
আরও পড়ুন:বরিশালের হিজলায় নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে পুকুরে ডুবে সোহান মিয়া নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সোহান টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নওয়াবাড়ি গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। ৭ বছর বয়সী শিশুটি মা-বাবার সঙ্গে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে থাকতো।
হিজলা থানার ওসি ইউনুস মিয়া জানান, অভিভাবকদের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শিশুটির নানা এসকান্দার ফকির সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার নাতিকে নিয়ে মেয়ে কুলসুম আক্তার বেড়াতে এসেছে। দুপুরে বাড়ির অন্য শিশুদের সঙ্গে পুকুর পাড়ে ঘাটে খেলা করছিল সোহান। কিছু সময় পর বাড়ির এক মহিলা সোহানকে পুকুরে ভাসমান দেখে উদ্ধার করে। দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক জানান যে শিশুটি ইতোমধ্যে মারা গেছে।
ফরিদপুরের সালথায় পাঁচ টাকার লোভ ধরিয়ে সাত বছরের এক শিশুকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষার ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্তের নাম দেলোয়ার হোসেন কুমকুম, বয়স ৫০ বছর।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু জানান, শিশুটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার সময় দেলোয়ার শিশুটির হাতে পাঁচ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বাড়ির পাশে একটি গরুর ফার্মে নিয়ে ‘ধর্ষণ’ করে।
এভাবে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার শিশুটিকে ‘ধর্ষণ’ করা হয়েছে জানিয়ে ওই চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিশুটি নিজে আমাকে ঘটনাটি জানায়। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেলে শুক্রবার রাতে দেলোয়ারকে ধরে মারধর করে ছেড়ে দেয়।’
শিশুটির মা বলেন, ‘স্থানীয় মাতুব্বরেরা ঘটনা মীমাংসা করে দিতে চাইলে তাতে প্রথমে রাজি না হওয়ায় আমার গলায় দেলোয়ার ছুরি ধরে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ভয়ে আমি মীমাংসা করতে বাধ্য হই, তবে এখন আমি চাই মামলা করতে।’
পরে এ খবরটি স্থানীয় সংবাদকর্মী ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে থানা পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা। পরে শিশুর বয়ান রেকর্ড করে পুলিশ। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অভিযুক্ত দেলোয়ারকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক বলেন, ‘শিশুকে ধর্ষণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন কুমকুম মিয়াকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ফরিদপুরের বিএসএমএমসি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও মামলা করা হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
আরও পড়ুন:‘নদীর পানি বাড়িচ্চে, আর হামাকে মদ্যে আতঙ্কও ব্যাড়া যাচ্চে বাপো। নদীর তীরোত হামাকেরে ফসলের মাঠ। পানি বাড়লে হামাকে জমিগুলা সব তলায়া যাবে বাপো। খুব চিন্তাত আছি।’
এভাবে আতঙ্কের কথা জানান আত্রাই নদী পাড়ের বাসিন্দা নিবারন চন্দ্র।
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁয় গত ২৪ ঘণ্টায় আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
জেলার প্রান্তিক কৃষকদের চাষাবাদের প্রস্তুতির মধ্যে আবার বন্যার আশঙ্কায় পড়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় এসব বিষয় জানান নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান।
পাউবো জানায়, আত্রাই নদীর পানি নওগাঁর জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। আত্রাইয়ের পানি রেলস্টেশন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার, মহাদেবপুর পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার, শিমুলতলী পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির এই বাড়া-কমায় নদীর অরক্ষিত তীরে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিদিনই নদীগুলোতে যে পরিমাণ পানি বাড়ছে, তাতে জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পাউবো।
মান্দার জোতবাজার গ্রামের কৃষক নিবারন চন্দ্র বলেন, ‘একন তো হামাকেরে বোরো মৌসুম চলিচ্ছে। নদীর তীরোত হামাকেরে ফসলের মাঠ। পানি বাড়লে হামাকে জমিগুলো সব তলায়া যাবে বাপো। গত দুই দিন থ্যাকা আত্রাই নদীর পানি বাড়া শুরু করিছে আর হামাকে মদ্যে আতঙ্কও বাড়িচ্চে বাপো। কি যে হবে এল্লা লিয়া খুব চিন্তায় আছি। যদি পানি ব্যাড়া যায়, তালে জমি ও ঘর পানির নিচে তলায়া যাবে। পরিবার লিয়া পথোত বসা লাগবে।’
মহাদেবপুরের শিমুলতলী গ্রামের কৃষক জাফের উদ্দিন জানান, গত সপ্তাহেও নদীর পানি স্বাভাবিক ছিল। শুক্রবার থেকে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর পানি বাড়ার কারণে ধানের ক্ষতি হয়েছিল। এবার যদি আবার পানি বাড়ে তবে ফসলের মাঠ তলিয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েক দিন ধরেই আত্রাই নদীর পানি বাড়ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে সব নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে বেশি সময় লাগবে না।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সার্বক্ষণিক পরিদর্শন করছি। চেষ্টা করছি দ্রুত কীভাবে মেরামত করা যায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই-তিন দিন পানি কিছুটা কমতে পারে।’
নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. নিলয় রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলার কিছু স্থানে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা হলে আমাদের ত্রাণ ও বন্যার্তদের সুরক্ষিত স্থানে রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।’
মন্ত্রণালয় থেকেও পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান ডিসি।
জেলা প্রশাসন অফিসের তথ্যমতে, নওগাঁ সদর, মান্দা, আত্রাই, রানীনগর, পোরশা, সাপাহার ও ধামইরহাট উপজেলার ৫০ গ্রামের প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ নদীতীরে বসবাস করছে। এরই মধ্যে নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:‘জন্মের আগে পশুচিকিৎসক বলেছিলেন ভালো মানের গরু হবে, বাচ্চাটা যেন বাড়িতে পালন করা হয়। ষাড় বাচ্চা পেয়ে বাড়িতে পালনের সিদ্ধান্ত নেন বগুড়া সদরের খামারি যুবক নূর আমিন। বগুড়ার আঞ্চলিকতার সুরে নাম দেন বুদু মিয়া।’
‘আড়াই বছরে ষাড় বাচ্চা বুদু মিয়া এখন এক হাজার কেজি ওজনের একটি সুবিশাল গরু। হলেস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান দামের গরুটির দাম হাঁকানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে আসন্ন কোরবানি মৌসুমে বগুড়ার চমক হয়ে উঠেছে বুদু মিয়া।’
বলছিলেন সদর উপজেলার এরুলিয়ার বানদীঘি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা নূর আমিন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। বানদীঘি বাজারে তার রড, সিমেন্টের ব্যবসা। তবে ব্যবসার পাশাপাশি শখের বশেই গরু পালন করেন নূর আমিন।
নূর আমিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে গরু রয়েছে। আমিও পড়ালেখার পাশাপাশি গরু পালন করে আসছি। আড়াই বছর আগে মন্টু নামে স্থানীয় এক পশুচিকিৎসক ব্র্যাক থেকে উন্নত জাতের বীজ এনে দেন আমাকে।’
‘তখনই ওই চিকিৎসক বলেছিলেন, খুব ভালো বীজ। এক সময় এই বীজের জন্য আমার নাম করবা। এই বাচ্চা বাড়িতে রেখে দিও। বাচ্চাটাও হয়েছিল অনেক বড়। তার কথাতেই বাচ্চাটি বাড়িতে পালনের সিদ্ধান্ত নিই।
এ কারণেই তার নাম দেয়া বলে জানান নূর আমিন। তিনি বলেন, বগুড়া জেলার সাথে মিল রেখে নাম রেখেছি বুদু মিয়া। ও খুবই শান্ত স্বভাবের। বাড়ির কাউকে কিছু বলে না।’
‘বুদু মিয়া লম্বায় প্রায় আট থেকে নয় ফিট। দৈনিক দানাদার, খড় ও কাঁচা ঘাস মিলে অন্তত ২৫ কেজি খাবার খায় গরুটি। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার গোসল করাতে হয় তাকে। আর সপ্তাহে দুদিন বাইরে হাঁটাহাঁটি করানো হয়।’
খামারি আমিন জানান, বুদু মিয়াকে কখনও ইনজেকশন বা ফিড খাওয়ানো হয়নি। জন্মের পর থেকে ছয় মাস শুধু মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। এখন দিনে ১২ থেকে ১৩ কেজির দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। আর ১৫ কেজি কাঁচা ঘাস দিতে হয়।
তিনি আরও জানান, ১৫ দিন আগে প্রচলিত নিয়মে ফিতার মাপ থেকে ওর ওজন পাওয়া গেছে প্রায় এক হাজার কেজি। এই কয়েক দিনে ওজন এক হাজার কেজি পাড় হয়ে যাওয়ার কথা।
বুদু মিয়াকে লালনপালনে খরচের বিষয়ে নূর আমিন বলেন, এই বার প্রথম কোরবানির বাজার লক্ষ্য রেখে গরু বিক্রি করছেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে পশু খাদ্যের দাম খুব বেশি। বুদু মিয়াকে ছয় মাস পর থেকে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার খাবার খাওয়াতে হয়েছে। এ হিসাবে দুই বছরে অনেক টাকা তার পিছনে ব্যয় হয়।
তিনি বলেন, ‘এসব হিসাব করে বুদু মিয়ার মূল্য ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। কিন্ত পশুখাদ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কম দামে বেচলে আমাদের মতো প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
শেখ নামে আমিনের প্রতিবেশী রনি বলেন, ‘আমিনের গরু পালনের কথা এলাকার সবাই জানে। কিন্তু তার বাড়ির মতো এত বড় গরু এ এলাকায় আগে কখনও দেখা যায়নি।’
নূর আমিন বলেন, ‘কোনো হাটে বুদু মিয়াকে ওঠানোর ইচ্ছা নেই। এর মধ্যে গত ১৫ দিন আগে থেকে বেশ কয়েকজন দরদাম করেছে। এভাবে বাড়ি থেকে বিক্রি হলে ভালো। তা না হলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঈদের দুদিন আগে ঢাকার গাবতলীতে নিয়ে যাবো। তবে বগুড়ায় বিক্রি হলে প্রয়োজনে ঈদ পর্যন্ত গরুকে বাড়িতে রাখার সুযোগ দিবো।’
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, এ বছর আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯২০টি।
মন্তব্য