কুমিল্লায় একেবারে শেষে ঘোষণা করা যে চার কেন্দ্রের ভোট যোগ হওয়ার পর নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত অল্প ভোটে জিতেছেন, তার প্রতিটি কেন্দ্রের ফল নিউজবাংলার হাতে এসেছে।
প্রতিটি কেন্দ্রেই প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছে আগেই ফল তুলে দেয়া হয়েছিল এবং পরে সেগুলো প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা পাঠান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সইসহ ফলাফলের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষণা করা ফলে কোনো পার্থক্য নেই।
পরাজিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা কেন্দ্র থেকেই সেই ফল পেয়েছেন।
গত বুধবার কুমিল্লায় ভোট হয় ১০৫টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে ৫৪টিতে জয় পায় নৌকা। ৫০টিতে জয় পায় মনিরুল হক সাক্কুর টেবিল ঘড়ি আর একটিতে জয় হয় নিজামউদ্দিন কায়সারের ঘোড়া মার্কা।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ১০১টি কেন্দ্রে সাক্কু যখন পাঁচ শতাধিক ভোটে এগিয়ে ছিলেন, তখনও যে চারটি কেন্দ্রের ফলাফল আসতে বাকি, তার মধ্যে একটি নৌকার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। একটিতে কোনো একক দলের প্রভাব নেই। বাকি দুটিতে সাধারণত বিএনপির প্রার্থীরাই জিতে থাকেন, তবে এবারের সমীকরণে ছিলেন নিজামউদ্দিন কায়সার।
শেষ যে চারটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে ভিক্টোরিয়া কলেজ কেন্দ্রে বরাবর ভালো ব্যবধানে জয় পায় আওয়ামী লীগ।
শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আলাদা করে কোনো দলের প্রভাব নেই। একেকবার একেক প্রার্থী জেতেন।
দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্র। বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর প্রভাবিত এলাকা। বেশির ভাগ সময় বিএনপির প্রার্থীরাই জিতেছেন।
এটি সদর দক্ষিণের একটি কেন্দ্র। এবার সদর দক্ষিণের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে ভোটে দাঁড়ানো নিজামউদ্দিন কায়সার। মূলত তিনি ভোট কাটার কারণেই সাক্কু এই দুটি কেন্দ্রে হেরে গেছেন।
দুই প্রধান প্রার্থীর যে কেউ জিততে পারেন, এই পরিস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণার একেবারে শেষ দিকে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে শুরু হয় হট্টগোল। নৌকা ও ঘড়ি প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে হাঙ্গামার কারণে মিনিট বিশেক ফল ঘোষণা স্থগিত থাকে। এরপর চারটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা হওয়ার পর ৩৪৩ ভোটে জয় পায় নৌকা।
তাৎক্ষণিকভাবে সাক্কু অভিযোগ করেন, ফল ঘোষণা স্থগিত করে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী ফোনে ওপর মহলের সঙ্গে কথা বলে তার জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। তিনি আইনি পদক্ষেপ নেবেন।
তবে ভোটের পর দুই দিন সাক্কু বা তার এজেন্টের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তুতির খবর মেলেনি, বরং সাক্কু এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতির কথা বলছেন।
সেই চার কেন্দ্রে কোন প্রার্থী কত ভোট পেলেন
আওয়ামী লীগ প্রভাবিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৮৭ জন। সেখানে নৌকা নিয়ে আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৮৫৩ ভোট, ঘড়ি নিয়ে সাক্কুর পক্ষে পড়েছে ৪০৮ ভোট এবং নিজামউদ্দিন কায়সার ১৫৭ ভোট পেয়েছেন।
এই কেন্দ্রে রিফাত ব্যবধান কমিয়ে ফেলেন ৪৪৫ ভোট।
গোটা নির্বাচনে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়লেও এই কেন্দ্রে এর চেয়ে কম ভোটাররা ভোট দিতে আসেন। সেখানে ভোট পড়ে ৪৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ হাজার ১৫৩ জন। ভোট পড়ে ১ হাজার ৪০৫টি। এর মধ্যে দুটি ভোটকে বাতিল করা হয়। ভোটের হার ৬৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এখানে নৌকা নিয়ে রিফাত পেয়েছেন ৬৫৬ ভোট, সাক্কুর ঘড়িতে পড়েছে ৩২৬ ভোট এবং কায়সারের ঘোড়ায় পড়েছে ৩০৮ ভোট।
অর্থাৎ এই কেন্দ্রে নৌকা বেশি পেয়েছে ৩৩০ ভোট, যা ভোটের ব্যবধান ঘুচিয়ে রিফাতকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
এই কেন্দ্রে কায়সারের কারণেই মূলত সাক্কু বড় ব্যবধানে হেরেছেন। বিএনপিপন্থিদের ভোটের বেশির ভাগ অংশই পেয়েছেন তিনি।
বাকি দুই কেন্দ্রের মধ্যে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটিতে ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৫৯৪ জন। এদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ১০২ জন। বাতিল হয়েছে দুটি ভোট। ওই কেন্দ্রে শতকরা ভোট পড়ে ৬৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এই ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ৪১৩টি, সাক্কু পেয়েছেন ৩৭৮টি আর কায়সার পেয়েছেন ২৫৬টি।
স্পষ্টতই বিএনপিপন্থিদের ভোট দুই ভাগ হয়ে যাওয়ায় নৌকার জয় দেখেছে এই কেন্দ্রটি। সাক্কুর চেয়ে রিফাত বেশি পেয়েছেন ৩৫ ভোট। অন্যদিকে কায়সার আড়াই শরও বেশি ভোট নষ্ট করেছেন সাক্কুর।
দিশাবন্দেই আরেক কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৬৩৯ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ১ হাাজর ২১২টি। ভোটের হার ৬৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এই ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ৫২৫টি, সাক্কুর ঘড়িতে পড়েছে ৩৬৭টি আর কায়সারের ঘোড়ায় পড়েছে ২৩৬ ভোট।
ঘড়ির তুলনায় নৌকা বেশি পেয়েছে ১৫৮ ভোট। এখানেও বিএনপিপন্থিদের ভোট এক বাক্সে পড়লে অতীতে জয়ের ধারাবাহিকতা দেখা যেত।
কী বলছেন সাক্কুর সমন্বয়ক
শেষে ঘোষণা করা চার কেন্দ্রের ফলের বিষয়ে সাক্কুর নির্বাচনি সমন্বয়ক কবির মজুমদার বলেন, ‘সব কেন্দ্রেই আমাদের এজেন্ট ছিল। আমরা ফলাফল বুঝে পেয়েছি। সেখানে কোনো সমস্যা ছিল না।’
সেই কেন্দ্রগুলোতে সাক্কুর এজেন্টদের নাম দিতে পারেননি জনাব মজুমদার। ফলে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার আপনাদের বিস্তারিত জানাব।’
তবে শুক্রবার যোগাযোগ করা হলে আরও এক দিন সময় নেন তিনি।
কী বলছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা
চার কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ইভিএমের ফলাফল বের করে এজেন্টদের হাতে দিয়েছি। সরকারি যেসব গোয়েন্দা সংস্থা আছে, সেগুলো ছাড়াও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় যেখানে ফলাফল পাঠাতে হয় আমরা সবখানে পাঠিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের ফল পরিবর্তনের কোনো সুযোগই নেই। কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টদের স্বাক্ষর রেখে ফল দেয়া হয়। তারপর ফলাফল ঘোষণা করি।’
সেই রাতের হট্টগোলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার সময় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্লোগান শুরু হয়। বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়। অতিরিক্ত পুলিশ আসে সেখানে।
এ সময় আমি ওয়াশরুমে যাই। উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয়, ডিসি ও এসপি সাহেবকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করি। এসে বাকি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করি।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আর কোনো নেতা নেই যাকে মানুষ বিশ্বাস করে। একমাত্র শেখ হাসিনা সেই নেতা, যাকে মানুষ বিশ্বাস করে। এ দেশে শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।’
বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের রূপান্তরের রূপকার শেখ হাসিনা। সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিয়েছেন যিনি তিনি আমাদের সাহস, স্বপ্নের বর্ণিল ঠিকানা। আমাদের পূর্ব পৃথিবীর সূর্য শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নতুন নতুন উচ্চতা দিয়েছেন। বাংলাদেশকে নব নব মুকুটে সজ্জিত করেছেন। সি হ্যাজ মেড আস লুক ব্রাইটার। সি হ্যাজ প্রাউড আস…। সি হ্যাজ শো দ্য ওয়ে আউট অফ পোভার্টি।
‘ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশকে আবারও অন্ধকারে নিয়ে যাবেন তা আমরা হতে দেব না। ষড়যন্ত্র করে ওই নেতাকে বাদ দেবেন? শেখ হাসিনা ছাড়া নির্বাচন মানি না। আমরা সেটা হতে দেব না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪৮ বছর চলে গেছে। যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের কাছে জানতে চাই, পঁচাত্তরের পর শেখ হাসিনার মতো জনপ্রিয় নেতা এসেছে এ দেশে? গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে সাহসী নেতা, সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক, সফল কূটনীতিক। কে তিনি? শেখ হাসিনা। এখনও বাংলাদেশের নম্বর ওয়ান পপুলার পলিটিশিয়ান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নীতির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে- নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন আর ভয় দেখান মির্জা ফখরুল। কী অদ্ভুত কাণ্ড!’
মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টা শেষ। আল্টিমেটাম শেষ। ফলাফল কী? ক্যাপ্টেন আমেরিকায়। ক্যাপ্টেন এলে জোরদার খেলা হবে। আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের সংবিধান ঠিক করবে। আমাদের নির্বাচন, আমাদের সংবিধান ঠিক করবে। তত্ত্বাবধায়ক এখন লাশ। ওই লাশ আমাদের কাছে এনে লাভ নেই।’
সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি প্রমুখ।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় এমপির সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত চারজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাটে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতের অধিকাংশের বাড়ি গজারিয়া উপজেলায় বলে জানা গেছে।
এদিকে সমর্থকদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য আয়োজিত জনসভা থেকে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা শুক্রবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৭৫টি ট্রলারে করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দুপুরে গজারিয়া উপজেলা থেকে সদর উপজেলার উদ্দেশে রওনা হন।
বিকেল ৫টার দিকে ট্রলারগুলো মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাটলক্ষ্মীগঞ্জ লঞ্চঘাট এলাকায় পৌঁছলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের ভাই মনির হোসেনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের অধিকাংশই গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর সমর্থক বলে জানা গেছে।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঘটনার পর অনেকে গজারিয়ায় ফিরে এসেছেন। আহতদের মধ্যে ৩৩জন এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের ১১জনকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়েছে। চারজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ বলেন, ‘অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও তার অনুসারীরা অধিকাংশই বিএনপি সমর্থক।
‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। সেখানে তার সমর্থকদের দিয়ে রাস্তায় মহড়া দেয়ার কী দরকার ছিল? তারা পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করতে চেয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই।’
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল হোসেন বলেন, ‘ট্রলারে করে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিন্নাহর লোকজন শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাটের অদূরে বেড়িবাঁধে আসে। সেখানে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে ধাক্কা লাগে জিন্নাহর লোকজনের। এরপর তারা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথিমধ্যে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা আমার বড় ভাই মনির হোসেনকে ও তার কয়েকজন সমর্থককে বেধড়ক মারধর করে। সব দোষ জিন্নাহর সমর্থকদের।’
সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন সরে পড়ে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।’
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত হয়েছেন।
উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ওসমানপুর এলাকায় শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহিদ হোসেন নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মোহাম্মদ নোমান ওসমানপুর এলাকার প্রয়াত নুরুজ্জামানের ছেলে। তিনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন বলে দাবি উঠেছে। তবে এ সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিকেলে ওসমানপুর ইউনিয়নে বিএনপির প্রোগ্রাম ছিল। এ সময় ছাত্রলীগও পাশাপাশি অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে বিএনপির লোকজন মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগের ওপর হামলা করে।
‘হামলায় নোমান নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা তাকে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে দাবি করছেন। ঘটনায় ৫ থেকে ৬ জন আহত হয়েছেন, তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
ওসমানপুর ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক সঞ্জয় মল্লিক বলেন, আজমপুর বাজারে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী নুরুল আমিনের প্রোগ্রাম ছিল। এ সময় খবর পেয়ে আমরা এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিই। তাদের প্রোগ্রাম শেষে লাঠিসোটা ও অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এসে মুহুরি প্রজেক্ট থেকে আজমপুর বাজার পর্যন্ত ভাঙচুর চালায়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্টি অফিসেও হামলা করা হয়। আমাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না, তারা আমাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ নেতা হাসান রাফি আরফিন, যুবলীগ নেতা সাত্তার সুজন দুখু, ছাত্রলীগকর্মী নোমানসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করে। তাদের মধ্যে নোমানের মৃত্যু হয়েছে।’
সঞ্জয় মল্লিক বলেন, পুরো হামলাটা বিএনপি নেতা নুরুল আমিনের নির্দেশেই হয়েছে বলে ধারণা আমাদের।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি দেশটাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে কৃষক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সমসাময়িক রাজনীতি প্রসঙ্গে এ কথা বলেন। খবর বাসসের
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যারা দেশে-দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে আজকে বিএনপি-জামায়াত তাদের হাতে, বিশ্ববেনিয়াদের হাতে দেশটাকে তুলে দিতে চায়। দেশটাকে তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। কিন্তু এ অপচেষ্টায় কোনো লাভ হবে না।
নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, নির্বাচন ভন্ডুল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অনেক অপচেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই অপচেষ্টা যারা করছে সেই বিএনপি হচ্ছে ছাগলের তিন নম্বর ছানা। তাদেরকে কেউ বাতাস দিচ্ছে এবং সেই বাতাসে ফখরুল সাহেব লাফাচ্ছেন। তারা লাফাতেই থাকবেন আর এদিকে যথাসময়ে নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচনে আবারও ধস নামানো বিজয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা আবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে আসীন হবেন ইনশাআল্লাহ।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। পরে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ সবাইকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটেন ও প্রধানমন্ত্রী এবং দেশ-দশের মঙ্গল কামনায় দোয়ায় অংশ নেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রাজধানীর বারিধারার এভারকেয়ার হাসপাতালে শুক্রবার বিকেল ৫টা ১০মিনিটে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয় তাকে। এর ঘণ্টা তিনেক পর তাকে আবার কেবিনে নেয়া হয়। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসনকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সপ্তম তলার কেবিন থেকে চতুর্থ তলার সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা কিছুটা কমলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় পর তাকে আবার কেবিনে নেয়া হয়।
চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন- মেডিক্যাল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়নে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন ম্যাডাম।’
এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ৯ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার অ্যানজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ও ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেয়া হয়েছিল। পরে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন। তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে। এরপর কয়েক দফায় তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় এলে দেশের নারী, শিশুসহ কারও নিরাপত্তা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘এরা পুনরায় ক্ষমতায় এলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না, সার্বভৌমত্ব থাকবে না। গণতন্ত্র চিরতরে চলে যাবে, ভোটের অধিকার চলে যাবে।’
শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহিলা সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার এবং সরকার পতনের একদফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে তাকে সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার বিদেশে পাঠানোর যে আবেদন করছে তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
গত সোমবার খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদাকে আটক রাখা হয়েছে, কারণ উনি মুক্ত থাকলে উনাদের ক্ষমতা থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া যাবে না।’
ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। কারণ এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে সেই নির্বাচন কখনও অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সমগ্র দেশের মানুষ যখন এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে তখন এই মহিলা সমাবেশ আমাদের আরো সাহস যুগিয়েছে। আজকে এই সরকারের অত্যাচার থেকে মা বোনদের রক্ষা পায় নাই। সাইবার সিকিউরিটি আইনের নামে আটক করা হচ্ছে মা-বোনদের। আজকে সত্য লেখার অপরাধে মা-বোনদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দ্রব্যমূল্য আজ আকাশচুম্বী। সরকারের বেধে দেয়া দর কেউ মানছে। সব জায়গায় আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট। সংসার চালাতে মহিলারা হিমশিম খাচ্ছে। এ সরকারের আমলে আজ কেউ নিরাপদ নয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এরা জনগণের নির্বাচিত নন। খালেদা মেয়েদের দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে পড়ার ব্যবস্থা করেছেন, চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েদের কোটা প্রথা চালু করেছেন। আজকে এ সরকার গায়ের জোরে সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। গণতন্ত্র ও দেশ ধ্বংস করে ফেলছে। তারা মানুষের কথা চিন্তা করছে না।
‘মানুষের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এরা চায় না। এ সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। তাই আসুন সব নারী-পুরুষ ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই একদলীয় বাকশালী সরকারকে বিদায় করে জনগণের রাষ্ট্র কায়েম করি।’
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা আক্তার রিতা, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দল নেত্রী হেলেন জেরেন খান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘সরকার স্যাংশন নাকি মানে না। মানবে কেন? দেশের মানুষ না খেয়ে থাকলে, মারা গেলে আপনাদের কী? আপনারাতো জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদ তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়াকে নিয়ে যেভাবে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন আপনাদের ঘরে কি মা-বোন নেই? আপনারা শুধু রাষ্ট্র, সমাজ নয়, পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন:তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না, যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃহস্পতিবার আয়োজিত আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে তিনি একথা বলেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারিয়া ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে।
হাছান মাহমুদ বলেন, “আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ দেশে নির্বাচন ভণ্ডুল করে ‘হামিদ কারজাই’ মার্কা সরকার গঠনের অপচেষ্টা কখনও সফল হবে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বলা হয়েছিল যে সরকার টিকবে না। আমাদের সরকার পূর্ণ পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করেছে। ২০১৮ সালেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এবারও আমরা দু'মাসের মাথায় পাঁচ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যতই দেশটাকে বিশ্ববেনিয়াদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করুক, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। বিএনপি আসুক বা না আসুক, আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজক সুপ্রিম পার্টিসহ বহু রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
দেশরক্ষা, অলি-আউলিয়াদের সম্মান রক্ষা ও ফেতনা সৃষ্টিকারীদের রুখে দাঁড়ানো মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের কল্যাণে যখন অভাবনীয় কাজ করা হয়েছে এবং হচ্ছে তখন দেশে ইসলামের নামে হানাহানির অপচেষ্টা চলছে।
‘আজ জামায়াতে ইসলামী ও আরও কিছু গোষ্ঠী অলী-আউলিয়াদের অসম্মান করে। তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, বক্তৃতা করে। এরা ইসলামের কল্যাণ করছে না, বরং ফেতনা সৃষ্টি করছে। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এ দেশে ইসলামের কথা বলে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির সময় একযোগে পাঁচশ' জায়গায় বোমা ফাটানো হয়েছে। বিএনপি জঙ্গি ভাড়া করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। যারা এভাবে ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
‘দেশে দেশে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে স্যাংশন বা ভিসা নীতি নেই’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ফিলিস্তিনে শিশুদের ঢিল ছোঁড়ার জবাবে যখন ইসরাইলি বাহিনী গুলি করে পাখির মতো মানুষ হত্যা করে, তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়া হয় না। মিয়ানমারে যখন মুসলমানদের হত্যা করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি হয় না। নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে আমাদের আশ্রয়ে ভালো রাখার উপায় দেয়া হয়; কিন্তু তাদের নিজ দেশে ফেরত নেয়ায় জোর দেয়া হয় না।’
‘ইসলামের খেদমতে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ যুগান্তকারী’
মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা:) জন্ম ও ওফাত দিবস পবিত্র ঈদে মিলাদুননবী উপলক্ষে এ দিনের বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ইসলামের খেদমতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ যুগান্তকারী ও অদ্বিতীয়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তৎকালীন এই রেসকোর্স উদ্যানে ঘোড়দৌড় বন্ধ করেছিলেন। কারণ ইসলাম বাজি সমর্থন করে না। উদ্যানের পাশে তাবলীগ জামাতের মসজিদ এবং টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জমিও বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। তিনি মদ, জুয়া, হাউজি নিষিদ্ধ করেছিলেন, যেগুলো পরে বিএনপি জিয়াউর রহমান আবার চালু করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামের খেদমতে বহু কাজ বঙ্গবন্ধু করেছেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ, ১ লাখ ২০ হাজার মসজিদভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা ও প্রতি মক্তবের শিক্ষকদের ৫২০০ টাকা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। খালেদা জিয়া, এরশাদ সরকার মূলা ঝুলিয়ে রেখেছিল। শেখ হাসিনাই দেশে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
হাছান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় প্রতিটি আলিয়া মাদ্রাসার নতুন ভবন এবং ৬১০০ মসজিদে পাঠাগার হয়েছে। ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট হয়েছে। ২০২৪ সালে জাহাজে করে হজ্জ্বযাত্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ জাহাজে খরচ বিমানের প্রায় অর্ধেক। মক্কা-মদীনার ইমামবৃন্দ শেখ হাসিনার আমলেই এ দেশে আমন্ত্রণে এসেছেন। সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক উচ্চতায় আসীন হয়েছে।’
আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য