ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় বন্য পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ লোকালয়ের মানুষ। বন্য পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা পার হয়েছে। এতে ছয়টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ধরলা ও তিস্তার পানি লালমনিরহাটে বিপৎসীমা উতরে জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি মহারশি, ভোগাই, সোমেশ্বরী ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
যমুনার পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনার তীর রক্ষাবাঁধের পাশের বাসিন্দারা বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে।
কুড়িগ্রামে বেড়েই চলেছে বানের পানি
ব্রহ্মপুত্র-ধরলার পানি বিপৎসীমা পার হওয়ার পর কুড়িগ্রামে অন্য নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সদরে ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত যাত্রাপুর ইউনিয়নে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন।
পোড়ারচর গ্রামের বাসিন্দা হাকিম মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টি-বন্যায় অসহায় হয়ে পড়েছি। বউ-বাচ্চা নিয়া কয়েক দিন ধরে শুকনা খাবার খেয়ে আছি। রান্না করার মতো অবস্থা নেই।’
বানের একবুক পানি বেয়ে ঘর থেকে আসবাবপত্র এবং খড়ি নৌকায় তুলছেন আয়না বেগম। তার মায়ের সঙ্গে দুটি শিশুসন্তান নৌকায় বসিয়ে রেখেছেন।
আয়না বেগম বলেন, ‘পাঁচ-ছয় দিন ধরে বন্যার পানি ঢোকা শুরু করেছে। কাল রাত থাকি ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এলা ঘরের জিনিস সরে নিবার সময় পায়নি। একবুক পানি ভেঙে জিনিস জানাস বের করা নাগবাইছে। উঁচু স্থানত যায়া আশ্রয় নিব। কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাই নাই।’
সেকেন্দার আলী বলেন, ‘বানের পানিত ঢেউ আর স্রোত বেশি। তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ির বেড়া খুলে নৌকায় করে অন্য জায়গায় যাচ্ছি।’
স্থানীয় সংবাদকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, জেলার ছয় উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের ৬০-৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানি প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়ছে।
জেলার প্রায় ২ হাজার ৬৩ হেক্টর জমির ধান, ৯০৩ হেক্টর জমির পাট, ৭৮ হেক্টর জমির অন্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর, বামনডাঙ্গা, নুনখাওয়া, বল্লভেসের খাস, কালীগঞ্জ, বেরুবাড়ি।
সদরের ঘোগাদহ,যাত্রাপুর, হলোখানা,পাঁচগাছি, মোগলবাসা, উলিপুরের হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, সাহের আলগা, বেগমগঞ্জ এবং চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ,অষ্টমির চর,রমনা, নয়ারহাট, চিলমারী সদর পানির নিচে।
রৌমারীর শৌলমারী, যাদুরচর, রৌমারী সদর এবং রাজীবপুর উপজেলার রাজীবপুর সদর ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ।
যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েক শ পরিবার ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, শুক্রবার বেলা ৩টায় ধরলার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। রৌমারী উপজেলায় আট শতাধিক পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আব্দুর সবুর মিয়া বলেন, ভারি বৃষ্টিসহ বজ্রপাত হতে পারে। কবে নাগাদ আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কুড়িগ্রাম বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
তবে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা কম বলেও জানান তিনি।
শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি
বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকার চারটি নদীর পানিই বৃদ্ধি পেয়েছে। মহারশি, ভোগাই, সোমেশ্বরী ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহরে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বাড়ায় বেড়েছে দুর্ভোগ। দুই উপজেলার ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
হাতিবান্ধা ইউনিয়নের তমছের আলী বলেন, ‘পানি এল্লা কমবার দরছিলো আজ আবার রাত থাইকা বৃষ্টি হইয়া হঠাৎ কইরা পানি বাড়তাছে। কী করমু এহন, কী খামু। একটা ব্রিজ ছিল কয়দিন আগে ঐডাও ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। পানি বাইরা আমগরে ইউনিয়নের ছয় গ্রামের মানুষ খুব বিপদে পড়েছে।’
সদর ইউনিয়নের রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে পরছি। পানি আওয়ার জন্য গরু-ছাগলগুইলা না খাইয়া আছে। পানি আমাগো এনো থাইক্কা কয়দিন আগে নাইমা গেছিলো গা। আজ রাত থাইক্কা বৃষ্টিতে আবার পানি বাড়লো। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়ে, সকাল থাইক্কা বেশি এই পানি আইতাছে।’
আহম্মদনগরের বাসিন্দা আছমত আলী বলেন, ‘আমার প্রজেক্টের মাছ পাহাড়ি ঢলে ভাসায় নিয়া গেছে গা। পানির চেয়ে মাছ আগে গেছে গা। কর্জধার কইরা মাছ চাষ করছিলাম এহন কী কইরা খামু।’
শেরপুর পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, ‘জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হবে। ২৪ ঘণ্টায় পাহাড়ি চার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ১৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন শুক্রবার সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বেড়েই চলেছে তিস্তার পানি
লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তাপারের কালমাটি মাস্টারপাড়ার আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘হামরা ত বন্যাতে ডুবি গেইছি। কিছু একনা করি দেও ব্যাহে? রাস্তাঘাটের ব্যবস্থা করি দেও।’
একই এলাকার আমেনা বেগম বলেন, ‘ডিসি সাইব কয় হামার এত্তি নাকি বন্যা হয় নাই। হামরা এক কোমর পানিত আছি আর ওমরা কয় পানি নাই। ডিসি সাইব আসি দেখি যাউক তো হামরা কোনটে আছি।’
লালমনিরহাটে তিস্তাপারের খুনিয়াগাছ, গোকুণ্ডা, মহিষখোঁচা, চরফলিমারী, মোগলহাট, কুলাঘাট, বড়বাড়ি ইউনিয়নের কয়েক শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হবে বলে জানিয়েছে পাউবো।
এ বিষয়ে পাউবোর ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। আমরা ব্যারাজসহ আশপাশের এলাকা মনিটর করছি।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, লালমনিরহাটে ধরলা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর নিউজবাংলাকে বলেন, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে আসা পানির কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। পর্যবেক্ষণ করছি জেলার সব উপজেলা। সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া আছে, তারা মাঠে কাজ করছেন।
যমুনার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনার তীর রক্ষার বেড়িবাঁধের পাশের বাসিন্দারা বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সারিয়াকান্দি মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সারিয়াকান্দির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) আব্দুর রহমান তাযকিয়া পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, যমুনা নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৭০ মিটার। সন্ধ্যা ৬টার দিকে যমুনার পানি ১৬ দশমিক ৭২ মিটার উচ্চতায় ছিল।
আব্দুর রহমান আরও বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির ধরন দেখে মনে হচ্ছে শনিবারের মধ্যে এই পানি বিপৎসীমার অন্তত ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।’
পাউবো কর্মকর্তারা জানান, বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা মিলে যমুনা নদীর ডান তীরে ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। চলতি বছর বাঁধের প্রায় ৪৬টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার বেশির ভাগ অংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের সাত কিলোমিটার বাঁধে এমন ঝুকিঁপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, ‘কামালপুর ইউনিয়নে সমস্যা বেশি। এই এলাকার প্রায় সাত কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। পানি বৃদ্ধির পর পরই আমরা এ ইউনিয়নের রহদহ গ্রামে অবস্থান করছি। বাঁধে এখনও ভাঙন দেখা দেয়নি। আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
মন্তব্য