আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলের সমর্থনে সাদা ও নীল প্যানেলের ব্যানারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন পরিচালনা বন্ধের দাবি তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সংবিধান সংরক্ষণ কমিটি নামে একটি সংগঠন।
ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে এক সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার এ দাবি তোলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, ‘২০২১ সালে নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মতিল খসরুর মৃত্যুর পর বারের এক বছর কার্যক্রম হয়েছে সভাপতি ছাড়া। সভাপতি নির্বাচনের জন্য একবার উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়। বারের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০ লঙ্ঘন করে কার্যনির্বাহী কমিটির বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা বেআইনি, বিশেষ করে কোনো বাজেট প্রণয়ন না করেই বারের তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করেছে।
‘আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার তৎকালীন কার্যনির্বাহী কমিটিকে অনুরোধ জানিয়েছি, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, লিফলেট বিতরণ অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সব রীতিনীতি অনুযায়ী সংবিধানের পথে আনার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়েছি।’
সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, ‘তারা গায়ের জোরে এক বছর কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং তার শেষ পরিণতি হচ্ছে সংবিধান লঙ্ঘন করে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা। ভোট গ্রহণ যদিও হয়েছিল, কিন্তু ভোট গণনা হয়নি।’
বারের সাবেক সভাপতিদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বারের সাবেক সভাপতিদের একটি বড় অংশের আচার-আচরণ এমন, যেহেতু তারা সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গেছে, এখন তারা বৈরাগ্য বেশ ধারণ করেছে। অথচ তাদের মধ্যে কয়েকজন আছেন, যারা নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বারের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আর সাবেক সম্পাদকরা সভাপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এসব সুবিধাবাদীর বাইরেও অনেক সাবেক নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ, সিনিয়র সদস্যবৃন্দ এবং নবীন আইনজীবীরা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির এই নেতা বলেন, ‘বর্তমানে বারে যে চরম নৈরাজ্য দেখছি, তা হচ্ছে রোগের লক্ষণ। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে যদি বোঝাতে সক্ষম হই যে আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য স্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট বারের কোনো বিকল্প নেই, তাহলে তারা সহযোগিতা করবেন। আর এই পারস্পরিক আলোচনা এবং রাজনৈতিক প্যানেলের বৃত্ত থেকে বারের নির্বাচনকে মুক্ত করতে হবে।
‘এ জন্য রাজনৈতিক প্যানেলের বৃত্ত থেকে বারের নির্বাচনকে মুক্ত করে সংবিধান এবং নির্বাচন রুলস ২০০১ অনুযায়ী ভবিষ্যতে যেন বারের নির্বাচন পরিচালিত হয়, সেই প্রচেষ্টা শুরু করেছি।
‘আগামী ১৮ জুনে অনুষ্ঠিতব্য গোলটেবিল বৈঠক হবে। যেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি, বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, আইনবিদ, শিক্ষক এবং সাংবাদিকরা থাকবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহ আহমেদ বাদল, নির্বাহী সভাপতি এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, সদস্য ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিলকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
হাতিরঝিলে নানা রং বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছে। বর্ণিল এলইডিতে ছেয়ে গেছে পুরো হাতিরঝিল। বর্ণিল আলোয় এক নতুন রূপ পেয়েছে হাতিরঝিল।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তার উপর হাতিরঝিলের সাজ, সব মিলিয়ে হাতিরঝিল ঘিরে মানুষ আর মানুষ। অনেকে আবার ওয়াটার ট্যাক্সিতে ও ভাড়া করা প্যাডেল বোটে করে ঘুরে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হাতিরঝিলে এসেছেন আনোয়ার সম্রাট। রামপুরা ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে আলোকিত হাতিরঝিল উপভোগ করছেন তারা।
সম্রাট নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে বন্ধের দিন। গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে দেখলাম হাতিরঝিল সাজানো হচ্ছে। তাই ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে এখানে আসা। ভাবছি ওদেরকে নিয়ে চক্রাকার বাসে পুরা হাতিরঝিল একটা রাউন্ড দেব।’
মাসুম আব্দুল্লাহ ও তার বন্ধুরাও হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজ এলাকায় হাতিরঝিলের আলোয় ছবি তুলছেন।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আজকে পুরা হাতিরঝিলে এই লাইটিং করা হয়েছে। ভালোই লাগছে। বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলছি। আমরা বাইক নিয়ে এসেছি। হাতিরঝিলের পুরা এলাকা এক চক্কর দিয়ে এখন আড্ডা দিচ্ছি।’
সেতু বিভাগের আয়োজনে এবং যমুনা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় হাতিরঝিলে এই আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজা প্রান্তে সংবাদ সম্মেলন করে আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর মুহাম্মদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু বিশ্বের কাছে আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ সাহসিকতা না থাকলে এটা সম্ভব হত না। পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব।’
যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন পদ্মা সেতু করার পদক্ষেপ নেন তখন বিশ্বব্যাংক পিছিয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকগুলোর কাছে আর্থিক যোগান চাওয়া হয়। সেদিন কোন ব্যাংক এগিয়ে আসেনি, কিন্তু আমাকে যখন বলা হলো তখন আমার ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রথম সাহসিকতার পদক্ষেপ নেই, ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দেই। এজন্য যমুনা ব্যাংক আজ আনন্দিত।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে এটা শতাব্দীর পর শতাব্দী ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশ আজ পরিপূর্ণ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে সম্মান লাভ করেছে। পদ্মা সেতুর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’
আরও পড়ুন:প্রস্তাবিত বাজেটে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘এটি কেবল খসড়া বাজেট। বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হবে। তারপর এটি সংসদে পাস হবে।’
রাজধানীর একটি হোটেলে শুক্রবার সকালে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট এবং অর্থনৈতিক গতিধারা’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাজেটের নানামুখী বিশ্লেষণের লক্ষ্যে এ সেমিনারের আয়োজন করে সিজিএস। সেমিনারে বক্তারা বাজেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রতি জোর দেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারপারসন ও অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘দেশ চালাতে সুশাসন অবশ্যই দরকার। তবে সবার আগে প্রয়োজন সাধারণ জনগণের চাহিদাকে মূল্যায়ন করা।
‘সুশাসনের রাস্তা অনেক দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি কেউ যেতে পারে না। পৃথিবীর বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশগুলোও বহু বছরের অপেক্ষার পর সুশাসন অর্জন করতে পেরেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন বিএনপির হরতাল দেয়ার সাহস নেই। কারণ জনগণই তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই পদ্মা সেতুর সঙ্গে জনগণের স্বপ্ন এবং অভিলাষ জড়িয়ে আছে।
‘শেখ হাসিনার শাসনামলে ১৫ বছর ধরে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ সরকারই দেশের মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ছিল বাংলাদেশের। এমনকি ভারত ও চীনের চেয়েও এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানবিষয়ক একটি প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরে বলেন, ‘পরিসংখ্যান সক্ষমতার দিক দিয়ে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের স্কোর ৬০, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।’
বর্তমান সরকারকে তিনি কর্তৃত্বপরায়ণ এবং অনির্বাচিত সরকার দাবি করে বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রে যখন রাজনীতিকরণ অর্থনীতিকে গ্রাস করে ফেলে, তখনই সরকার কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে যায়। এতে জনগণের কথা বলার সুযোগ থাকে না।’
বাজেটের কথা উল্লেখ করে আমির খসরু বলেন, ‘বাজেটে সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি জনসেবামূলক খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এই খাতগুলো এখন অবহেলিত।
সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারপারসন ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘কার্যকরী গণতন্ত্রের জন্য জনপরিসরে অর্থনৈতিক আলোচনা বাঞ্ছনীয়।’
তিনি ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করেন, ‘মূল্যস্থীতিকে কেবল সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে হবে না। এর সঙ্গে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়ের প্রসঙ্গও জড়িত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছিলেন, যার মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা ছিল উন্নয়ন ব্যয় এবং ১৮৬ কোটি টাকা ছিল পরিচালন ব্যয়।
‘বর্তমান বাজেটে আমরা ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। প্রাক-কোভিডকালে দেশের কর্মসংস্থান ঋণাত্মক পর্যায়ে চলে গিয়েছে। ফলে কোভিডকালে এবং কোভিডের পর দেশে নতুন করে দারিদ্র্য যুক্ত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা, তারা অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না।’
আরও পড়ুন:১৯৮৮ সাল থেকে হাওর এলাকায় পানি ধারণক্ষমতা ৮৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় এবার সিলেট এলাকায় বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে উঠে এসেছে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আয়োজনে এ তথ্য জানানো হয়।
‘হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের কয়েক দশকের পরিবর্তন ও এবারের বন্যার ব্যাপকতা’ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয় এতে। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট- আইপিডি ছিল এর আয়োজক।
সংলাপে গবেষণার সারাংশ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী বছরগুলো থেকে বর্তমানে বন্যার ভয়াবহতা আরও বেশি হওয়ার কারণ অতিবৃষ্টি ও নদী-নালার নাব্য সংকটের পাশাপাশি জলাভূমির ভরাট করে বাড়িঘর ও বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ।’
তিনি জানান, হাওর এলাকার জলাভূমি ১৯৮৮ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ কমে যায় এবং ২০০৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরও ৩৭ শতাংশ কমে গিয়ে এখন প্রায় ১৩ শতাংশ এলাকা অবশিষ্ট আছে।
এর বিপরীতে হাওর এলাকায় নির্মিত এলাকা (বিল্ট আপ এরিয়া) ২০০৬ সালে ২ দশমিক ২ গুণ ও ২০২০ সালে ৩ দশমিক ৮ গুণ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি হাওর এলাকায় পতিত জমি, কৃষিজমি ও বনজ এলাকাও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে।
তিনি বলেন, ‘হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মধ্যে ১৯৮৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে শুষ্ক মৌসুমের জলাভূমির পরিমাণ সিলেটে ৭৫ শতাংশ, সুনামগঞ্জে প্রায় ৮০, নেত্রকোণায় প্রায় ৯০, কিশোরগঞ্জে প্রায় ৮৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ৭০, হবিগঞ্জে প্রায় ৯০ ও মৌলভীবাজারে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে।’
পরিকল্পনাবিদ ইনজামাম উল হক রিফাত বলেন, ‘হাওর এলাকার জলাভূমির আশঙ্কাজনক পরিবর্তন এখনই রোধ না করা গেলে এই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বন্যার আশঙ্কা আরও ব্যাপকতর হবে।’
আইপিডির পরিচালক ও পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের বন্যার জন্য দায়ী আন্তদেশীয় নদীর অতিরিক্ত পানির প্রবল চাপ, পলি জমাটের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা সংকট ও নদী-জলাশয়ের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া। আমাদের উৎকণ্ঠার জায়গা, হাওর এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম টেকসই হচ্ছে কি না।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা বলেন, ‘এবারের বন্যার কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ কতটুকু বৃষ্টি হতে পারে তার একটা সম্ভাব্য প্রজেকশন ও হাওর এলাকার পানি ধারণ করার সক্ষমতা জানা থাকলে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলা করা আমাদের জন্য সহজতর হবে।
‘হাওর এরিয়ার জন্য সেখানে কতটুকু রোড দরকার, ডিমান্ড অ্যানালাইসিস এবং ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে ইন্টিগ্রেটেড পদ্ধতিতে মাস্টার প্ল্যান তৈরির করে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সেখানকার জীবন-মানের উন্নয়ন সম্ভব।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর মুগদায় একটি বাসার ছয়তলা থেকে এক কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে মুগদা থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে মরদেহ উদ্ধার করে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ওই কিশোরীর নাম ফারিয়া আক্তার রিয়া। তার বয়স ১৭ বছর।
রিয়ার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায়।
মুগদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে দক্ষিণ মুগদার একটি ভবনের ছয়তলা থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
‘বাসার লোকের মুখে জানতে পারি নিহত কিশোরীর ছয় মাস আগে বিয়ে হয়। অসুস্থতার কারণে ঢাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় আসে চিকিৎসার জন্য। রাতে মোবাইল ফোনে তার মায়ের সঙ্গে কথা হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে অভিমান করে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। পরে আমরা গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠাই।’
এসআই আরও বলেন, ‘কী কারণে সে গলায় ফাঁসি দিয়েছে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর ওয়ারীর একটি বাসায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) শিশু বিভাগের এক চিকিৎসক আগুনে দগ্ধ হয়েছেন।
ওই চিকিৎসকের নাম অদীতি সরকার। বয়স ৩৮ বছর।
ওয়ারীর ১০ নম্বর হেয়ার স্ট্রিটের বাসার ষষ্ঠ তলায় শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
দগ্ধ চিকিৎসক শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দগ্ধ চিকিৎসকের স্বামী প্রকৌশলী মানষ মণ্ডল বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা। বাসায় কিছু দাহ্য পদার্থ ছিল, তা অদীতির পায়ে লেগে পড়ে যায়, সেখানে আগুন লাগে এবং ওই আগুনে দগ্ধ হয়। ওই সময় তার দুই সন্তানসহ পরিবারের লোকজনও ছিল।’
মানষ মণ্ডল আরও বলেন, ‘অদীতি মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত। তাদের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে।
‘দীর্ঘদিন ধরে অদীতি শারীরিকভাবে অসুস্থ ও আপসেট ছিল। কাজ শেষে দুপুরে বাসায় ফিরে জামাকাপড় পাল্টানোর সময় পাশের রুমে হঠাৎ অতীদির চিৎকার শুনতে পাই। দৌড়ে গিয়ে দেখি তার শরীরে আগুন জ্বলছে। সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমে নিয়ে তার শরীরে পানি ঢালি। এরপর ৯৯৯-এর মাধ্যমে একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসি।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর বংশাল ও রামপুরায় পৃথক ঘটনায় দুজনের আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তারা হলেন বংশালের গৃহবধূ ৪০ বছরের সালমা বেগম ও ১৪ বছরের গৃহকর্মী সোনিয়া আক্তার।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ও রাত ১টার দিকে ঘটনাগুলো ঘটে।
অচেতন অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাত আড়াইটার দিকে সালমা ও সোনিয়াকে রাত সোয়া ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
সালমার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদরের নারাপাছা গ্রামে। বর্তমানে বংশালের নিমতলীর নবাব কাটারা এলাকার একটি বাসায় থাকতেন।
বংশালের সালমার বোন মুন্নি বেগম বলেন, ‘আমার বোনের সঙ্গে ১৭-১৮ বছর আগে দেলওয়ার হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তিনি তিনবার সন্তান প্রসব করেন। যার একটিও বেঁচে নেই।
‘দুই মাস আগে আমার বোন দেলওয়ারকে ডিভোর্স দেন। এর ১৫ দিন পর আমরা নিজেরাই মীমাংসা করে দিই। এরপর আবার সংসারে ঝগড়া হলে তার স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আবার দেলওয়ারের সঙ্গে সংসার করতে চাইলে দেলোয়ার রাজি হননি। এ নিয়ে অভিমানে আসমা ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।’
এদিকে রামপুরায় গৃহকর্মী সোনিয়াকে নিয়ে আসা গৃহকর্তা নাজগীর বলেন, ‘ছয় মাস আগে তার বোন আমাদের বাসায় কাজের জন্য নিয়ে আসে। তার পর থেকেই আমাদের বাসায় কাজ করছিল। গত রাতে আমার বাসার বারান্দায় ব্যায়াম করার রিংয়ের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
‘পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাত সোয়া ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিহতের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরের কাঠপট্টি গ্রামে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয় দুটি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ভবিষ্যতে হলে প্রবেশ করলে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর।
মঙ্গলবার বিকেলে জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৭০১২ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উৎসব রায় পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
উৎসব রায়ের অভিযোগ, জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সত্যজিৎ দেবনাথের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তিনি হলের বাইরে ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উৎসব বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে মঙ্গলবার নিজ রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। বিকেলের দিকে সত্যজিতের নেতৃত্বে ২০-৩০ জনের একটি দল আমার কক্ষের দরজায় কড়া নাড়ে। আমি দরজা খুলে দিলে প্রথমে আমার ইমিডিয়েট জুনিয়ররা ভেতরে প্রবেশ করে। তখন আমি তাদের বলি- আমি তোমাদের সিনিয়র, আমার সম্মান রাখো।
‘তখন পেছন থেকে সত্যজিৎ দেবনাথ আমাকে মারতে বলেন। তারপর তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাকে স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে হল থেকে বের করে দেয়। এ সময় আশপাশের কেউ ভয়ে তাদের কিছু বলেনি। আমি জীবন সংশয়ে আছি। আমাকে কেন মারা হয়েছে তা-ও জানি না।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিৎ দেবনাথ এ ব্যাপারে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাদের ফ্লোরের একটি রুম থেকে মোবাইল ফোন সেট খোয়া যায়। এ ঘটনায় উৎসব যাকে-তাকে মোবাইল চুরির অপবাদ দিচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। এটার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমিই বরং তাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচিয়েছি।
‘তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। ছিনতাই অথবা নারীঘটিত কারণে সে জেলও খেটেছে। নিয়মিত মাদকও সেবন করে।’
উৎসব রায় এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ও হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে তিনি ১৯ জনের নাম উল্লেখ করেছেন।
তারা হলেন- ভূতত্ত্ব বিভাগের সত্যজিৎ দেবনাথ, বাঁধন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সবুজ কুমার, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শুভ সাহা, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের রাজিব বিশ্বাস, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের গণেশ ঘোষ, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অমিত দে ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রিভু রিদম।
আরও রয়েছেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের স্বাগতম বাড়ৈ, অর্থনীতি বিভাগের দীপ্ত রায়, উর্দু বিভাগের সবুজ শীল, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের অভিষেক ভাদুরী, পাপন বর্মন, ইতিহাস বিভাগের সৌরভ সাহা, জয় দাস, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অপূর্ব দাস, পুষ্পেন্দু মণ্ডল, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অমৃত মণ্ডল ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রীতম আনন্দ।
তারা সবাই জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণের অনুসারী। আর অতনু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।
অতনু বর্মণ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। ঘটনার দিন আমি সুনামগঞ্জে ছিলাম।’
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আজই জেনেছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক শিক্ষককে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে অনুসন্ধান করতে বলেছি। তারপর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য