রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা ও অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান মিজানকে গত বৃহস্পতিবার তুলে নেয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।
পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানোর পরের কয়েক ঘণ্টায় বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের পরিষ্কার কোনো তথ্য দেয়নি শ্যামপুর থানা পুলিশ। মিজানকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নেয়া হতে পারে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাননি সংবাদকর্মীরা।
এরপর বিকেল ৪টার দিকে পরিবারের জিম্মায় মিজানুরকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। পরে তাকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।’
জনস্বার্থ ও পরিবেশসংশ্লিষ্ট নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত মিজানুর রহমান বিভিন্ন সময়ে জনঘনিষ্ঠ আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে আলোচিত। তাকে পুলিশ ‘তুলে নেয়ার’ দুই দিন আগে মঙ্গলবার জুরাইন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন পুলিশের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করার জেরে তাকে প্রথমে থানায় এবং পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান।
পুলিশের জিম্মায় থাকার সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট থানা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি, মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য সঠিক হলেও তাকে নির্যাতন করা হয়নি। তাকে নিয়ে যাওয়ার পরের কয়েক ঘণ্টা তথ্য গোপনের অভিযোগও স্বীকার করছে না কর্তৃপক্ষ।
মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জুরাইন রেলগেটসংলগ্ন বিক্রমপুর প্লাজা মার্কেটের ভেতর শ্যামপুর থানার পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন আমার কাছে এসে নাম-পরিচয় জানতে চান। পরিচয় দেয়ার পর তারা বলেন, আমার সঙ্গে তাদের এডিসি কথা বলতে চান, থানায় যেতে হবে।
‘এর মধ্যে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত হন। আমাকে ঘিরে ধরে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। এর মধ্যে আমি ফোন করে আমার এক বন্ধুকে জানাই যে আমাকে শ্যামপুর থানায় নেয়া হচ্ছে।’
গাড়িতে তোলার পর থেকেই পুলিশ খারাপ আচরণ শুরু করে বলে অভিযোগ মিজানের। এ সময় তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়।
এরপর আমাকে চোখ বেঁধে পাঠানো হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। সেখানে ডিবির জুনিয়র অফিসাররা খারাপ ব্যবহার করলেও সিনিয়র একজন অফিসার স্বাভাবিক ও ভদ্রভাবে কথা বলেন।
মিজান বলেন, ‘এরপর শ্যামপুর থানার ওসির রুমে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে ওসির চেয়ারে শ্যামপুর জোনের এডিসি কাজী রোমানা নাসরিন বসা ছিলেন৷ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এ সময় রুমে উপস্থিত ছিলেন। ওখানে তারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ধমক ও গালিগালাজ করে কথা বলেন।
‘আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি মিডিয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কথা কেন বলেছি। এ সময় আমাকে ওই এডিসির নির্দেশে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনাটি আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। থানায় থাকার সময়ে আমাকে বিএনপির লোক, পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করি- এমন সব কটূক্তিও করেছেন পুলিশ সদস্যরা।’
মিজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরপর আমাকে চোখ বেঁধে পাঠানো হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। সেখানে ডিবির জুনিয়র অফিসাররা খারাপ ব্যবহার করলেও সিনিয়র একজন অফিসার স্বাভাবিক ও ভদ্রভাবে কথা বলেন।
‘তবে আলোচনার একপর্যায়ে ওই সিনিয়র কর্মকর্তা আমাকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরেন আপনি একটা মামলা খেলেন। মামলা তো নানাভাবেই দেয়া যায়। ধরেন আপনাকে কেউ দুই পিস, পাঁচ পিস, ১০ পিস ইয়াবা পকেটে ঢুকায়ে দিয়ে মামলা দিয়ে দিল।
‘২০ বছর পর মামলার রায় হলো। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেন। যারা আপনার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে তারাও জানে আপনি নির্দোষ, কিন্তু এই ২০ বছরের জার্নি আপনি চিন্তা করেন তো? এসব বলে তিনি আমার পরিবারের কথা মাথায় রেখে সতর্ক থেকে চলা ও দায়িত্বের সঙ্গে সমালোচনা করার পরামর্শ দেন।’
প্রায় ৬ ঘণ্টা পর পরিবারের জিম্মায় ও আমার মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়। তবে ডিবি কর্মকর্তারা এসব বিষয় গোপন রাখার পরামর্শ দেন।
এই অধিকারকর্মী বলেন, ‘এরপর বিকেলে আমার পরিবারকে আমার অবস্থান সম্পর্কে জানানো হয় এবং আমার স্ত্রী ও কন্যা গিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। এর আগে আমাকে আটকের কথা পরিবারের কাছে অস্বীকার করে শ্যামপুর থানা পুলিশ। প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা তারা আমার খোঁজ না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠায় ছিল।
‘প্রায় ৬ ঘণ্টা পর পরিবারের জিম্মায় ও আমার মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়। তবে ডিবি কর্মকর্তারা এসব বিষয় গোপন রাখার পরামর্শ দেন।’
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি মিজানুর রহমান।
পুলিশের গাড়িতে উঠে মিজানুর প্রথম ফোন করেছিলেন তার বন্ধু মাহতাব উদ্দিন আহমেদকে। মাহতাব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন বেলা ১১টার দিকে মিজান আমাকে ফোন করে বলেন তাকে শ্যামপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মাঝে পাশ থেকে কেউ তাকে ধমক দিয়ে বলছিলেন কেন ফোন দিয়েছেন, এরপর তার নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়।
‘দুপুর ১২টার দিকে আমি প্রথম শ্যামপুর থানায় গিয়ে মিজানের খোঁজ করি। তখন থানার গেট থেকে বলা হয় ভেতরে যাওয়া যাবে না। গেটের পুলিশ সদস্যরা জানান টাক মাথা ও কিছুটা বয়স্ক একজনকে নিয়ে আসা হয়েছে, তার নাম মিজান কি না তাদের জানা নেই। আরও কিছু সময় পর মিজানের স্ত্রী থানায় এলে সিভিল ড্রেসে থাকা থানার একজন কর্মকর্তা তাকে জানান, মিজানকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।’
তাকে আমরা মারধর কেন করব, তিনি কি রিমান্ডের আসামি নাকি! এই অভিযোগ সত্যি নয়। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মাহতাব বলেন, ‘এরপর আমরা ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে রিসিপশনে মিজানের বিষয়ে জানতে চাই। সেখানে বলা হয়, এখানে কোনো আসামি নিয়ে আসা হলে রিসিপশনে কোনো এন্ট্রি হয় না, শুধু নির্দিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তারা আসামির তথ্য দিতে পারেন। আমরা সেখানে অপেক্ষারত অবস্থায় সাংবাদিক ভাইয়েরা টেলিফোনে আমাদের জানান, মিজান ডিবি কার্যালয়ে আছেন এবং তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। এর কিছুক্ষণ পর ডিবি থেকে ফোন করে মিজানের স্ত্রী এবং মেয়েকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।’
মিজানের তোলা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার কাজী রোমানা নাসরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাকে ডিবি নিয়ে গিয়েছিল, আমরা শুধু তার আগে কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। আমরা জানতে চেয়েছিলাম তিনি মিডিয়ায় বলেছেন ফুটপাত থেকে পুলিশ চাঁদাবাজি করে- এই অভিযোগ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেন জানালেন না। আমরা তাকে বুঝিয়ে বলেছি, অভিযোগগুলো আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এরপর তাকে ডিবিতে নিয়ে যাওয়া হয়।’
মিজানকে গালিগালাজ ও লাঠি দিয়ে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে রোমানা নাসরিন বলেন, ‘তাকে আমরা মারধর কেন করব, তিনি কি রিমান্ডের আসামি নাকি! এই অভিযোগ সত্যি নয়। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
মিজানের বিষয়ে থানা থেকে তথ্য না দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন সাংবাদিকরা জানতে চাইছিলেন মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না? তার উত্তরে আমি বলেছি না আমরা তাকে গ্রেপ্তার করিনি। একই সঙ্গে এটাও বলেছি- বাহিনীর একাধিক ইউনিট তাকে খুঁজছে, ডিবিতে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।
‘যেহেতু পুলিশ বক্সে হামলার মামলাটি ডিবি তদন্ত করছিল, তাই ডিবি তাকে অ্যারেস্ট দেখাবে নাকি ছেড়ে দেবে, সে বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। তবুও আমরা গাইড করেছি যে ডিবিতে খবর নেন। এখানে আমরা কোনো তথ্য গোপন করিনি।’
সাংবাদিকরা যখন আমাকে ফোন করেছেন আমি তো সবাইকেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন কেন উঠছে সেটা বুঝতে পারছি না।
থানায় মিজানকে মারধরের অভিযোগও অস্বীকার করেন ওসি।
একই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিজানুর রহমানকে আমরা এনেছিলাম, কারণ পুলিশ বক্সে হামলার মামলাটি আমরা তদন্ত করছিলাম। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার ছিল। আমরা তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেই তার পরিবারকে ডেকে এনে তাদের জিম্মায় দিয়ে দিয়েছি।
‘এমন তো না যে আমরা দিনের পর দিন আটকে রেখেছি, তার সঙ্গে আমাদের ঘণ্টা দেড়েক কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যেই তার পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। এখানে খুব বেশি সময় নেয়া হয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না। আমরা যদি গ্রেপ্তার দেখাতাম, সেটাও পরিবারকে জানিয়ে দিতাম।
মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য নিয়ে ‘জটিলতা বা লুকোচুরি’র মতো কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেন এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা যখন আমাকে ফোন করেছেন আমি তো সবাইকেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন কেন উঠছে সেটা বুঝতে পারছি না।‘
মিজানকে মামলার ভীতি দেখানোসহ কর্মকর্তাদের রূঢ় আচরণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশপ্রধান বলেন, ‘এমন কিছুই তার সঙ্গে করা হয়নি। তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে, এমনকি আমরা তাকে দুপুরের খাবার দিয়েও আপ্যায়ন করেছি। তারপর তার পরিবারের জিম্মায় দিয়েছি।’
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হলে তার পরিবারকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। এ ঘটনায় তাকে নিয়ে আসার সময় তিনি যখন পরিবারকে ফোন দিয়েছেন তাতে পুলিশের বাধা দেয়া উচিত হয়নি। তবে পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ থেকেই তার পরিবারকে জানানো হয়েছে। তাই এখানে নিয়ম ভাঙার মতো কিছু হয়নি।
‘আর জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারধর, খারাপ আচরণ কিংবা হুমকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এখন প্রতিটি থানার ওসির রুম থেকে ধরে হাজতখানা পর্যন্ত সব জায়গাই সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাহেদ আহমদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম কবির, কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফ ও সেখানকার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম জানান, পতাকা বৈঠক শেষে শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র।
তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করে পরিবার। পরে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ আনার উদ্যোগ নেয় বিজিবি।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য