ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটা পর্যন্ত একটা সময়ে ১৪টি ফেরি ছিল। গত ৩০ বছর দক্ষিণাঞ্চলবাসী সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে এসব ফেরি পারাপার করে রাজধানীতে আসা-যাওয়া করত।
পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে এই পথে সেই ফেরি যুগের অবসান ঘটতে চলেছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে কুয়াকাটা থেকে ঢাকা পর্যন্ত মোট ১৪টি নদীর ওপর ফেরি ছিল। এগুলোর বেশির ভাগই ছিল লক্কড়ঝক্কড় মার্কা। তার মধ্যে আবার বেশ কয়েকটি ছিল কাঠের ফেরি।
একের পর এক ফেরি পার হয়ে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত পৌঁছতে ক্ষেত্রবিশেষে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো।
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে ব্যাপকভাবে উল্লসিত দক্ষিণাঞ্চলের ভুক্তভোগী হাজারো মানুষ। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব দিনের দুর্দশার স্মৃতি তুলে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বাসিন্দা আহসান পাভেল বলেন, ‘গত ৩০ বছর এই রুটে ১৪টি ফেরি পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে হয়েছে। অনেক কষ্ট হতো ফেরি পারাপারে। অন্যান্য ঘাটে আগেই সেতু হয়ে গেছে, তবে বড় চ্যালেঞ্জটা ছিল পদ্মা নদী পাড়ি দেয়া। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই সীমাহীন ভোগান্তির অবসান হচ্ছে।’
নুরুজ্জামান মামুন নামের একজন সাংবাদিক ফেরিঘাটের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে তার বাবার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স মাওয়াঘাটে আটকে ছিল প্রায় এক দিন। এর আগে ২০১৬ সালে তার নানির জানাজায় অংশ গ্রহণ করতে পারেননি এই ঘাটের জ্যামের কারণে। সেই ঘাটে এবার সেতু হচ্ছে।
তিনি লিখেছেন, ‘পদ্মার বুকে নির্মিত এটি শুধু একটি সেতুই নয়, এটি বাংলাদেশের সক্ষমতার স্মারক। কুখ্যাত মোড়লদের বিশাল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এক স্বপ্ন জয়ের ইতিহাস। বিশ্ব দরবারে আজ আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারি, আমরাও পারি। অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রী।’
শুধু মামুন আর আহসান পাভেলই নন, এ রকম দুঃসহ স্মৃতির উল্লেখ করে দক্ষিণাঞ্চলের হাজারো মানুষ প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদ্মা সেতু নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে চারটিসহ গত ১৯ বছরে ১০টি সেতু নির্মিত হয়েছে এই পথে। ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট কলাপাড়া উপজেলায় সবশেষ শিববাড়িয়া নদীর ওপর ‘শেখ রাসেল সেতু’ উদ্বোধন করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার সোনাতলা নদীর ওপর ‘শেখ জামাল সেতু’ এবং আন্ধারমানিক নদীর ওপর ‘শেখ কামাল সেতু’ একসঙ্গে উদ্বোধন করেন তিনি।
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালীর লাউকাঠি নদীর ওপর ‘পটুয়াখালী সেতু’, ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর পায়রা (লেবুখালী) নদীর ওপর ‘পায়রা সেতু’, ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বরিশালের দপদপিয়া নদীর ওপর ‘আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু’, ২০০৩ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালের দোয়ারিকা নদীর ওপর ‘এমএ জলিল সেতু’, ২০০৩ সালের ৩ এপ্রিল শিকারপুর নদীর ওপর ‘ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’, ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ‘আড়িয়াল খান সেতু’ উদ্বোধন করা হয়।
এ ছাড়া ধলেশ্বর-১ ও ধলেশ্বর-২, বুড়িগঙ্গা এবং পটুয়াখালীর মৌকরণ সেতু নব্বইয়ের দশকে নির্মিত হয়।
এক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরে মাওয়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১০টি নদীর ওপর ১০টি নান্দনিক সেতু নির্মিত হয়েছে (পদ্মাসহ)।
আগামী ২৫ তারিখ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা সড়ক পথে সেই ফেরি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে।
ফেরির পরিবর্তে সেতু নির্মাণের দাবিতে বছরের পর বছর আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীরাও আজ মহাখুশি ফেরিবিহীন এই সড়কপথের কারণে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে তারা বেশি উচ্ছ্বসিত।
‘মাওয়ায় পদ্মা সেতু চাই- পটুয়াখালীবাসী’ আন্দোলনকারী ফরহাদ জামান বলেন, ‘অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবিতে। স্মৃতিতে সবকিছু ভাসছে। এখন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে মনটা আনন্দে ভরে যায়।’
গত ২৫ বছর ধরে কুয়াকাটা-ঢাকা রুটে চলাচল করা পরিবহনকর্মী আলম মিয়া বলেন, ‘বাসায় ঘুমানোর সুযোগ খুব কম ছিল। বেশির ভাগ সময় ফেরিঘাটেই ঘুমিয়ে পার করতাম। যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিদিন কথা-কাটাকাটি আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করাটা ছিল আমাদের নিয়মিত রুটিন।
‘এখন ফেরি নেই। সব সেতু হয়ে গেছে। কয়েক দিন পরই পদ্মা চালু হবে। কি যে মজা লাগতেছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। একদিকে সময় কম লাগবে। ট্রিপও বেশি দিতে পারব। যাত্রীরাও নিরাপদে আসা-যাওয়া করতে পারবে।’
২০০৫ সাল পর্যন্ত পটুয়াখালীর লাউকাঠি নদীতে চলাচলরত ফেরিতে দায়িত্ব পালন করেছেন স্বপন কুমার। বর্তমানে তিনি পটুয়াখালী ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার সংযোগস্থল পায়রা নদীতে পায়রাকুঞ্জ ফেরিতে কাজ করছেন।
তিনি জানান, ‘ভালো লাগছে এখন সব সেতু হয়ে গেছে। চোখের সামনে ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্সে অনেক মানুষের আহাজারি দেখেছি। কিন্তু স্রোতের টানে ফেরি দ্রুত চালানো যায়নি। সে জন্য অনেক বকাও খেয়েছি। আজ সেসব নদীতে সেতু হয়েছে। ভালো লাগছে।’
সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা সহজতর হবে বলে মনে করেন পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে। মানুষজন ঢাকা থেকে সকালে রওনা হয়ে কাজ শেষে আবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছতে পারবে। বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তারা এই এলাকায় আসবেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য।
‘পটুয়াখালীতে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র। এর আশপাশেই গড়ে উঠেছে সরকারের একাধিক মেগা প্রকল্প। পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ তৈরির কারখানা, পটুয়াখালী শহরের পাশেই ইপিজেড, ঢাকা-কুয়াকাটা রেললাইনসহ আরো বড় বড় প্রকল্প চলমান।’
মহিউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা পটুয়াখালী শহরকেও ঢেলে সাজাচ্ছি। মেগা প্রকল্পগুলোর দাপ্তরিক কাজকর্ম সারতে সবাই যেন পটুয়াখালী শহরকে বেছে নেয় আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে গোটা শহরকে সাজানোর চেষ্টা করছি। পদ্মা সেতু চালুর পর গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জন্য পটুয়াখালী শহরকে ব্যাবসায়িক দিক থেকে একটি হটস্পটে পরিণত করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু আত্মবিশ্বাস আর নির্ভরতার প্রতীক। এই সেতুর সুফল পটুয়াখালীবাসী সবচেয়ে বেশি ভোগ করবে। এখানকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এখানকার কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ব্যবসা এই সেতুর কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে।
‘কৃষিজ ফসল ঢাকাসহ সারা দেশে পৌঁছানোর জন্য আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হতো। ফলে পচেগলে নষ্ট হতো অনেক ফল। ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ত। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আর সেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ রপ্তানিও অনেক সহজ হবে।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক যুগে এই অঞ্চলের মানুষকে চাওয়ার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছেন। তার প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য