ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটা পর্যন্ত একটা সময়ে ১৪টি ফেরি ছিল। গত ৩০ বছর দক্ষিণাঞ্চলবাসী সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে এসব ফেরি পারাপার করে রাজধানীতে আসা-যাওয়া করত।
পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে এই পথে সেই ফেরি যুগের অবসান ঘটতে চলেছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে কুয়াকাটা থেকে ঢাকা পর্যন্ত মোট ১৪টি নদীর ওপর ফেরি ছিল। এগুলোর বেশির ভাগই ছিল লক্কড়ঝক্কড় মার্কা। তার মধ্যে আবার বেশ কয়েকটি ছিল কাঠের ফেরি।
একের পর এক ফেরি পার হয়ে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত পৌঁছতে ক্ষেত্রবিশেষে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো।
পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীতে আসা-যাওয়ায় ফেরি যুগের অবসান হতে যাচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে ব্যাপকভাবে উল্লসিত দক্ষিণাঞ্চলের ভুক্তভোগী হাজারো মানুষ। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব দিনের দুর্দশার স্মৃতি তুলে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বাসিন্দা আহসান পাভেল বলেন, ‘গত ৩০ বছর এই রুটে ১৪টি ফেরি পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে হয়েছে। অনেক কষ্ট হতো ফেরি পারাপারে। অন্যান্য ঘাটে আগেই সেতু হয়ে গেছে, তবে বড় চ্যালেঞ্জটা ছিল পদ্মা নদী পাড়ি দেয়া। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই সীমাহীন ভোগান্তির অবসান হচ্ছে।’
নুরুজ্জামান মামুন নামের একজন সাংবাদিক ফেরিঘাটের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে তার বাবার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স মাওয়াঘাটে আটকে ছিল প্রায় এক দিন। এর আগে ২০১৬ সালে তার নানির জানাজায় অংশ গ্রহণ করতে পারেননি এই ঘাটের জ্যামের কারণে। সেই ঘাটে এবার সেতু হচ্ছে।
তিনি লিখেছেন, ‘পদ্মার বুকে নির্মিত এটি শুধু একটি সেতুই নয়, এটি বাংলাদেশের সক্ষমতার স্মারক। কুখ্যাত মোড়লদের বিশাল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এক স্বপ্ন জয়ের ইতিহাস। বিশ্ব দরবারে আজ আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারি, আমরাও পারি। অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রী।’
শুধু মামুন আর আহসান পাভেলই নন, এ রকম দুঃসহ স্মৃতির উল্লেখ করে দক্ষিণাঞ্চলের হাজারো মানুষ প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদ্মা সেতু নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে ২৫ জুন। ছবি: নিউজবাংলা
সওজ সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে চারটিসহ গত ১৯ বছরে ১০টি সেতু নির্মিত হয়েছে এই পথে। ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট কলাপাড়া উপজেলায় সবশেষ শিববাড়িয়া নদীর ওপর ‘শেখ রাসেল সেতু’ উদ্বোধন করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার সোনাতলা নদীর ওপর ‘শেখ জামাল সেতু’ এবং আন্ধারমানিক নদীর ওপর ‘শেখ কামাল সেতু’ একসঙ্গে উদ্বোধন করেন তিনি।
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালীর লাউকাঠি নদীর ওপর ‘পটুয়াখালী সেতু’, ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর পায়রা (লেবুখালী) নদীর ওপর ‘পায়রা সেতু’, ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বরিশালের দপদপিয়া নদীর ওপর ‘আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু’, ২০০৩ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালের দোয়ারিকা নদীর ওপর ‘এমএ জলিল সেতু’, ২০০৩ সালের ৩ এপ্রিল শিকারপুর নদীর ওপর ‘ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’, ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ‘আড়িয়াল খান সেতু’ উদ্বোধন করা হয়।
এ ছাড়া ধলেশ্বর-১ ও ধলেশ্বর-২, বুড়িগঙ্গা এবং পটুয়াখালীর মৌকরণ সেতু নব্বইয়ের দশকে নির্মিত হয়।
এক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরে মাওয়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১০টি নদীর ওপর ১০টি নান্দনিক সেতু নির্মিত হয়েছে (পদ্মাসহ)।
আগামী ২৫ তারিখ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা সড়ক পথে সেই ফেরি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে।
ফেরির পরিবর্তে সেতু নির্মাণের দাবিতে বছরের পর বছর আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীরাও আজ মহাখুশি ফেরিবিহীন এই সড়কপথের কারণে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে তারা বেশি উচ্ছ্বসিত।
‘মাওয়ায় পদ্মা সেতু চাই- পটুয়াখালীবাসী’ আন্দোলনকারী ফরহাদ জামান বলেন, ‘অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবিতে। স্মৃতিতে সবকিছু ভাসছে। এখন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে মনটা আনন্দে ভরে যায়।’
গত ২৫ বছর ধরে কুয়াকাটা-ঢাকা রুটে চলাচল করা পরিবহনকর্মী আলম মিয়া বলেন, ‘বাসায় ঘুমানোর সুযোগ খুব কম ছিল। বেশির ভাগ সময় ফেরিঘাটেই ঘুমিয়ে পার করতাম। যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিদিন কথা-কাটাকাটি আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করাটা ছিল আমাদের নিয়মিত রুটিন।
‘এখন ফেরি নেই। সব সেতু হয়ে গেছে। কয়েক দিন পরই পদ্মা চালু হবে। কি যে মজা লাগতেছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। একদিকে সময় কম লাগবে। ট্রিপও বেশি দিতে পারব। যাত্রীরাও নিরাপদে আসা-যাওয়া করতে পারবে।’
২০০৫ সাল পর্যন্ত পটুয়াখালীর লাউকাঠি নদীতে চলাচলরত ফেরিতে দায়িত্ব পালন করেছেন স্বপন কুমার। বর্তমানে তিনি পটুয়াখালী ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার সংযোগস্থল পায়রা নদীতে পায়রাকুঞ্জ ফেরিতে কাজ করছেন।
তিনি জানান, ‘ভালো লাগছে এখন সব সেতু হয়ে গেছে। চোখের সামনে ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্সে অনেক মানুষের আহাজারি দেখেছি। কিন্তু স্রোতের টানে ফেরি দ্রুত চালানো যায়নি। সে জন্য অনেক বকাও খেয়েছি। আজ সেসব নদীতে সেতু হয়েছে। ভালো লাগছে।’
সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা সহজতর হবে বলে মনে করেন পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে। মানুষজন ঢাকা থেকে সকালে রওনা হয়ে কাজ শেষে আবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছতে পারবে। বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তারা এই এলাকায় আসবেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য।
‘পটুয়াখালীতে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র। এর আশপাশেই গড়ে উঠেছে সরকারের একাধিক মেগা প্রকল্প। পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ তৈরির কারখানা, পটুয়াখালী শহরের পাশেই ইপিজেড, ঢাকা-কুয়াকাটা রেললাইনসহ আরো বড় বড় প্রকল্প চলমান।’
মহিউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা পটুয়াখালী শহরকেও ঢেলে সাজাচ্ছি। মেগা প্রকল্পগুলোর দাপ্তরিক কাজকর্ম সারতে সবাই যেন পটুয়াখালী শহরকে বেছে নেয় আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে গোটা শহরকে সাজানোর চেষ্টা করছি। পদ্মা সেতু চালুর পর গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জন্য পটুয়াখালী শহরকে ব্যাবসায়িক দিক থেকে একটি হটস্পটে পরিণত করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু আত্মবিশ্বাস আর নির্ভরতার প্রতীক। এই সেতুর সুফল পটুয়াখালীবাসী সবচেয়ে বেশি ভোগ করবে। এখানকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এখানকার কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ব্যবসা এই সেতুর কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে।
‘কৃষিজ ফসল ঢাকাসহ সারা দেশে পৌঁছানোর জন্য আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হতো। ফলে পচেগলে নষ্ট হতো অনেক ফল। ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ত। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আর সেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ রপ্তানিও অনেক সহজ হবে।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক যুগে এই অঞ্চলের মানুষকে চাওয়ার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছেন। তার প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালুর দিনে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের স্বাভাবিক ভিড় দেখা যায়নি। অনেকে পদ্মা সেতু দেখতে সড়কপথে রওনা দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন লঞ্চসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর যোগাযোগে এতদিন ব্যবহার হয়ে আসা প্রধান মাধ্যম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে রোববার রাত ৮টায় গিয়ে যাত্রীদের কোলাহল দেখা যায়নি। অন্যান্য দিন এমন সময়ে ডেকে যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও লঞ্চ অনেকখানি ফাঁকাই দেখা যায়। কেবিনেরও বেশির ভাগ ভাড়া হয়নি।
টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, অধিকাংশ লঞ্চেই আশানুরূপ যাত্রী নেই। ডেকের ধারণক্ষমতার অর্ধেক ও পূর্ণ হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে কী হবে, লঞ্চ কী করে চলবে আর তাদের চাকরিইবা থাকবে কি না এই নিয়ে শঙ্কা জেগেছে এরই মধ্যে। তবে কেউ কেউ বলছেন, বরিশালের মানুষ নৌপথে শুয়ে-বসে যাত্রা করে অভ্যস্ত। তারা সড়কপথে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া যাবে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কিছুদিন এমন মন্দা থাকতে পারে লঞ্চে।
পারাবত লঞ্চের সুপারভাইজার মো. শাহজালাল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা লঞ্চে যাওয়ার তারা লঞ্চেই যাবে। প্রথম দিন হয়তো সেতু দেখতে গিয়েছে। সেতুর উদ্বোধন হবে তাই অনেক লঞ্চ ও বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে আসতে পারেনি।’
‘লঞ্চে ৩৫০-৪০০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও আজ দেড় শতাধিক যাত্রী হয়েছে। ঢাকা থেকে সর্বশেষ ট্রিপেও আমরা তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম।’
রেডসন-৫, এমভি কুয়াকাটা-১ ও ২-এর সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম রাজু নিউজবাংলাকে জানান, ‘রমজানের ঈদের পর থেকেই যাত্রী কম। ইদানীং তো আরও কম। সেতু হয়েছে এখন যাত্রী কমই থাকবে।’
পটুয়াখালীগামী পূবালী-৫ লঞ্চের মালিক আলী আজগর বলেন, ‘আজ লঞ্চে যাত্রী নেই বললেই চলে। ডেক একদম ফাঁকা। কেবিন তো ভাড়াই হয়নি। ঘাটে লঞ্চ নেই তাই এই অবস্থা। লঞ্চ বেশি হলে যাত্রীসংকটে ভুগতে হতে পারে।’
এমভি পারাবত-১৮ লঞ্চের মালিক ও সমিতির মহাসচিব শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘যাত্রীর চাপ কমা-বাড়ার ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এটা ঈদের সময় বলা যাবে। সেতু চলাচলের আজ প্রথম দিন। অনেকে শখের বসেও হয়তো দেখতে গেছেন।’
লঞ্চে যাতায়াতের সুবিধাগুলো উল্লেখ করে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ পথে খাবার ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা শুধু লঞ্চেই রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে বাসগুলো সরাসরি গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো সময় খাবার বা পানি পাওয়া সম্ভব না। লঞ্চে যাত্রীরা এ সুবিধা পাবেন।’
সড়কপথে ভাড়া বেশি পড়বে বলেও যাত্রীরা লঞ্চ বেছে নেবেন বলে বিশ্বাস করেন এই লঞ্চ মালিক। বলেন, ‘লঞ্চ ভাড়া ৩৫০ টাকা আর সেখানে বাস ভাড়া পাঁচ শতাধিক৷ এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে লঞ্চেই যাত্রীরা দক্ষিণাঞ্চলে যাবেন।’
সুন্দরবন লঞ্চের মালিক ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়েছে এখন সবাই দৌড়ে হয়তো চলে যাবেন। কিন্তু সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে যাত্রীরা লঞ্চেই ফিরে আসবেন। কেননা লঞ্চে সড়কপথের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি।’
যাত্রী কম থাকলেও লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভাড়া ডেকে ৩৫০, ৩৭০; এমনকি কোনো কোনো লঞ্চে ৪০০ টাকাও রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-টরন্টো রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হচ্ছে ২৭ জুলাই। টরন্টো ফ্লাইটে ভ্রমণে ইচ্ছুকরা এখন থেকেই অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
রোববার প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশ-বিদেশে অবস্থিত বিমানের যে কোনো সেলস্ সেন্টার, বিমান অনুমোদিত যে কোনো ট্রাভেল এজেন্সি, বিমানের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট www.biman-airlines.com ও কল সেন্টার ০১৯৯০৯৯৭৯৯৭ থেকে এ রুটের টিকিট কেনা এবং আনুষঙ্গিক সেবাগুলো গ্রহণ করা যাবে।
তবে কানাডা থেকে আপাতত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কেনা যাবে না। বিষয়টি এখনও অ্যাকটিভেশন পর্যায়ে রয়েছে।
বিমান বলছে, প্রাথমিকভাবে ঢাকা-টরন্টো রুটে সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালিত হবে। ঢাকা থেকে প্রতি বুধবার ও রোববার বিমানের ফ্লাইট টরন্টোর উদ্দেশে যাত্রা করবে। একই দিন টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। রুটটিতে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিমানের বহরে থাকা বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ফ্লাইটটি তুরস্কের ইস্তানবুলে এক ঘণ্টার জন্য টেকনিক্যাল ল্যান্ডিং করবে। তবে ফিরতি ফ্লাইটটি সরাসরি ঢাকায় অবতরণ করবে বলে জানিয়েছে বিমান।
বাংলাদেশ থেকে ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণে একমুখী যাত্রার জন্য ভাড়া ঠিক করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৯০ হাজার ৫১০ টাকা। আর রিটার্ন টিকিটের ভাড়া ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭০ টাকা।
প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসের একমুখী ভাড়া ১ লাখ ২৭ হাজার ৩০০ টাকা আর রিটার্ন ভাড়া ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫৫ টাকা।
আর বিজনেস ক্লাসের ক্লাসে ভ্রমণে একমুখী ভাড়া শুরু হবে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১০০ টাকা এবং রিটার্ন টিকিটের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৩০২ টাকা।
টরন্টো থেকে যারা ঢাকায় আসবেন তাদের জন্য ইকোনমি ক্লাসে একমুখী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯০ কানাডিয়ান ডলার আর রিটার্ন টিকিটের দাম ১ হাজার ২৩৩ কানাডিয়ান ডলার।
প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসের ক্ষেত্রে একমুখী ভাড়া ১ হাজার ২৩০ কানাডিয়ান ডলার এবং রিটার্ন টিকিটের দাম ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৭৮ কানাডিয়ান ডলার। আর বিজনেস ক্লাসের ক্ষেত্রে একমুখী ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬০ কানাডিয়ান ডলার এবং রিটার্ন টিকিটের দাম ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৭৮ কানাডিয়ান ডলার।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক ভিডিও বানানো মো. বাইজীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হচ্ছে।
আইনটির যে ধারায় তার নামে মামলা হবে বলে জানানো হয়েছে, সে ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি; এটা পরিকল্পিত।
সংস্থাটির এক কর্মকর্তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেছেন, বাইজীদের এই কাজের পেছনে নাশকতার চেষ্টা থাকতে পারে।
পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রোববার রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে সন্ধ্যায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন সেই যুবক। পরে জানা যায়, তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত, তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ।
সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইজীদ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নাট খুলেছিলেন সেতুর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে। এমন অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এ মামলা প্রক্রিয়াধীন। থানা কর্তৃপক্ষই বাদী হবে।’
কী আছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায়
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ (স্যাবোটাজ) কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা ও শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।
এই আইনের ১৫ (খ) ধারায় বলা হয়, কোনো রেলপথ, রোপওয়ে, রাস্তা, খাল, সেতু, কালভার্ট, বন্দর, ডকইয়ার্ড, লাইটহাউজ, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার স্থাপনার দক্ষতা বিনষ্ট বা ক্ষতিসাধনের মতো কাজ করা যাবে না।
এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়া যাবজ্জীবন বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
বাইজীদকে জিজ্ঞাসাবাদে কী জানা গেল
বাইজীদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছি, সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই কাজ করেছে। আমরা বিস্তারিত আগামীকাল (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনে জানাব।’
জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বাইজীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও পরীক্ষা করা সিআইডি জানিয়েছে, তিনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন।
সিআইডি আরও জানায়, বাইজীদের মোবাইল ফোন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই তারা দেখা গেছে, নিছক হেয়ালি নয়, পরিকল্পিতভাবে সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলেছেন এ যুবক।
কী ছিল আলোচিত ভিডিওতে
পুলিশ জানায়, শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন বাইজীদ।
৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই যুবক সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। যিনি ভিডিও করছিলেন, তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দ্যাহো।’
নাট হাতে নিয়ে বাইজীদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের...পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’
ওই সময় পাশে থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।’
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারিত অংশ পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ডিপ্লোমেটিক জোন গড়ে তোলা হবে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি জানান, পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরে ডিপ্লোমেটিক জোন করার জন্য প্লট নির্ধারিত রয়েছে।
রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকারি দলের সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘অনেক দেশই অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মিশন খোলার ব্যাপারে আগ্র্রহ দেখিয়েছে। তাছাড়া যেসব দেশ বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাদের অফিস পরিচালনা করছে তাদের পক্ষ থেকেও এক সময় অফিস ভবন নির্মাণের জন্য জমির দাবি উঠতে পারে।
‘বর্তমানে গুলশান ও বারিধারা এলাকায় কূটনৈতিক মিশনের জন্য বরাদ্দ দেয়ার মতো জায়গা খালি নেই। তাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) শহর সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পূর্বাচল ডিপ্লোমেটিক জোন তৈরির পরিকল্পনা করেছে। বিদেশি মিশনগুলো সম্মত হলে প্রক্রিয়াটি দ্রুতগতিতে শুরু করা যাবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে নতুন নতুন কূটনৈতিক মিশন খোলার বিষয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বাংলাদেশে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিশনগুলোর নিজস্ব অফিস ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকারমূলক যৌক্তিক নির্দেশ রয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সারা বিশ্বে জমির দাম ও ভাড়া করা অফিসের মূল্য উত্তরোত্তর বাড়ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন রাষ্ট্রে তার মিশনগুলোর জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জমি কেনার সিদ্ধান্ত বিষয়ে কাজ করা যাচ্ছে।
‘দূতাবাস ভবনের জন্য ভূমি বিনিময় এখন একটি যৌক্তিক রাষ্ট্রাচারে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভূমি বিনিময় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। এই মুহূর্তেও কিছু কার্যক্রম চলমান।
‘বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাসের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব দেশ জমি বরাদ্দ দিয়েছে অথবা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে সেগুলো হচ্ছে- ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, থাইল্যান্ড, ইরাক, মিসর, জাপান ইত্যাদি। তারই ধারাবাহিকতায় ভিয়েনা কনভেনশন-১৯৬১ অনুযায়ী বিদেশি মিশনগুলোকে তাদের নিজস্ব ভবন তৈরির ক্ষেত্রে নতুন করে জমি বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট বল্টু খুলে এক টিকটকারের আটক এবং তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার ঘোষণার মধ্যেই নাট খোলার আরও একটি ভিডিও ছড়িয়েছে।
দুটি ভিডিও পর্যালোচনা করলে দেখে মনে হয়, দুটো একই জায়গায় করা হয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি বলেছে, তারা বেশ কয়েকটি ঘটনা নিয়ে একস্ঙ্গে কাজ করছে। এসব বিষয়ে পরে জানানো হবে।
রোববার পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন সেতুতে উঠতে বিশেষ করে বাইকারদের মরিয়া মনোভাবের মধ্যে সেতুর রেলিংয়ের ওপরে থাকা স্টিলের পাত সংযোগের নাট বল্টু খুলতে দেখা যায় একটি ভিডিওতে।
পরে জানা যায়, সেই যুবকের নাম বাইজীদ তালহা। তার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলীখালী গ্রামে।
ভিডিওটি প্রথমে আপলোড করা হয়েছিল টিকটকে। সেটি ভাইরাল হলে তুমুল সমালোচনার মুখে তা সরিয়ে ফেলা হয়। এমনকি বাইজীদের ফেসবুক আইডিটিও ডিঅ্যাকটিভেট করে ফেলা হয়। বন্ধ হয়ে যায় ফোন নম্বর।
তবে সন্ধ্যার ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সেই যুবক হাত দিয়ে নাট বল্টু খোলার কথা জানানো হলেও গোয়েন্দারা জানান, বাইটের নাট খোলার যন্ত্র দিয়ে সেতুর রেলিংয়ের নাট খোলা হয়েছে।
এর মধ্যে টিকটকেই আরও একটি ভিডিও প্রচার হয়।
সেই ভিডিওতে দেখা যায়, নাট খুলে লম্বা গড়নের এক যুবক বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নাট।’
অন্য একজন বলেন, নাট খুইল্যা গেছে?’
সেই যুবক বলেন, ‘ঝাকায়া খুইল্যা ফালাইছি হাত দিয়া’।
এই সবগুলাই কি লুজ?-জিজ্ঞেস করেন ভিডিওতে চেহারা দেখা না যাওয়া দ্বিতীয় জন।
এর মধ্যে সেই নাটটি জায়গা মতো স্থাপন করেন সেই যুবক। বলেন, ‘এইগুলা লুজ। লাগায়া দিলাম। ক্যামেরা দেহাইয়া লাগাইয়া দিলাম।’
ভিডিওতে চেহারা দেখা যায় না, সেই যুবক বলেন, ‘এখন লাগায়া দিছেন, কিন্তু রাইতে আবার কী করবেন না করবেন…’
এরপর সেই যুবক পাশের আরেকটি জোড়ার কাছে যান, ‘এই যে দেখেন আরেকটা। এতে আমি কিন্তু কোনো রেঞ্জ ব্যবহার করি নাই।’
তবে তিনি সেই নাট খুলেছেন, কি না সেটা দেখা যায় না।
এর আগের যে ভিডিওটি ছড়িয়েছিল এবং দ্বিতীয় ভিডিওর স্থানটি একই বলেই প্রতীয়মান হয়, যদিও বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ বিস্তারিত জানাচ্ছে না। দ্বিতীয় যুবকের পরিচয়ও কেউ নিশ্চিত করেনি।
যোগাযোগ করা হলে সিআইডির সাইবার ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই ধরনের বেশ কয়েকজনের বিষয়ে খোঁজ করছি। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সোমবার ভোর ৬টা থেকে মোটরসাইকেল চলাচলের এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হয় আজ ভোর ৬টা থেকে। তবে সবার আগে সেতু পার হওয়ার প্রবণতায় গতকাল রাত থেকেই হাজার হাজার বাইক ও যানবাহন সেতুর মাওয়া প্রান্তে জড়ো হতে থাকে।
এতে সেতুর টোলপ্লাজার আগেই দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। সবার আগে সেতু পার হওয়ার প্রবণতায় বাইকচালকরা বিশৃৃঙ্খলা শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যান।
বাইকাররা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন টোলপ্লাজায়। নির্দিষ্ট লেন না মেনে প্রায় সব লেনেই ভিড় করেন। এতে অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশও করতে পারে না টোলপ্লাজায়।
এরই মধ্যে পদ্মা সেতুতে বাইক নিয়ে গিয়ে সেতুর রেলিং থেকে নাট খোলার ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওর সূত্র ধরে নাট খোলার ওই ঘটনায় বাইজীদ নামে এক যুবককে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আরেক ব্যক্তিকেও একটি ভিডিওতে রেলিং থেকে নাট খুলতে দেখা গেছে। দেখা গেছে সেতুতে উঠে প্রস্রাব করার একটি ছবিও, যা দিনভর ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এ ছাড়া সন্ধ্যার পর পদ্মা সেতুতে বাইক নিয়ে দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সেতু উদ্বোধনের আগেই সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে সেতুতে কোন কাজ করা যাবে বা যাবে না। সরকারের অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআই হিসেবে দেখানো হয় পদ্মা সেতুকে। ফলে সেতুতে যেকোনো ধরনের গাড়ি থামানো, গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাচলা করা কিংবা এ ধরনের যেকোনো কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়।
তবে উদ্বোধনের দিন শনিবার অসংখ্য মানুষ এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেতুর পাশের বেড়ার ওপর ও নিচ দিয়ে সেতুতে উঠে পড়েন। যদিও একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত উদ্বোধনের দিন হিসেবে মানুষের চলাচল শিথিল করা হয়েছিল, যা রোববার থেকে আগের মতোই নিষিদ্ধ করা হয়।
এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করার ঘোষণা এসেছে সরকারের তরফ থেকে।
আরও পড়ুন:আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসাতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। একই সঙ্গে কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণে সব সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্টদেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে রোববার ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনলাইনে আয়োজিত পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি বাস্তবায়ন ও কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনায় এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কের পাশে যেখানে যান চলাচল বিঘ্ন হতে পারে। সেখানে কোনোক্রমেই পশুর হাট বসানো যাবে না। এ নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘জেলা প্রশাসকরা পৌর মেয়র ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নেবেন ও বাস্তবায়ন করবেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা সবাই তাদের স্ব স্ব অবস্থানে থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালন করবেন।’
তিনি বলেন, ‘করোনার মহাসংকটেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ঈদে পশুর হাট বসানো হয়েছিল। এ বছরের শুরুতে করোনা সংক্রমণের হার কম থাকলেও বেশ কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের হার বেড়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এবারের পশুর হাট বসাতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
‘স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোরবানির হাট বসানোর পাশাপাশি এ বছরও অনলাইনে পশু কেনাবেচার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পশুর হাট বাজার ব্যবস্থাপনা, দ্রুততম সময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও জনসাধারণের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
গত বছরের মতো পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি ও দ্রুততম সময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাজ করার আহ্বান জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য