রাজধানীতে আগুন নেভানোর জন্য পানির উৎস খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। বনানীর এফ আর টাওয়ার ও পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভবনে আগুন লেগে মারা যান মোট ৯৩ জন। আশপাশে পানির কোনো উৎস ছিল না।
আগুন নেভাতে পানির প্রাপ্যতা সহজ করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার হাইড্র্যান্ট (অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত স্থায়ী পানিকল) স্থাপনের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। ২০১৯ সালে এক বৈঠকে ওয়াসাকে এ পরামর্শ দেয়া হয়।
বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, চুড়িহাট্টা ও বনানীতে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পানির উৎস খুঁজে পেতে বেগ পান। এ প্রেক্ষাপটে অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনে রাজধানীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার হাইড্র্যান্ট স্থাপনের কথা বলেন তিনি।
বৈঠকের পর তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও রাজধানীতে একটিও ফায়ার হাইড্র্যান্ট স্থাপন করা হয়নি। ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশন, কারও কাছ থেকেই এর কারণ সম্পর্কে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
২০২১ সালের ৮ জুন রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণের সময় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বস্তিবাসীদের কল্যাণে বস্তিগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা জোরদার করতে ফায়ার হাইড্র্যান্টের ব্যবস্থা করা হবে।
আগুন নেভানোর কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা।
পানি সংরক্ষণাগারের সঙ্গে সংযুক্ত বিশেষ পানিকল হচ্ছে ফায়ার হাইড্র্যান্ট। সাধারণত রাস্তার কাছে এই কল স্থাপন করা হয়। এর সঙ্গে পাইপ যুক্ত করে এই পানি আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করতে পারেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) আব্দুল হালিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ফায়ার হাইড্র্যান্ট নাই। অনেক সময় এটি নির্মাণের কথা বলা হলেও আমরা এর বাস্তব রূপ দেখছি না। ফায়ার হাইড্র্যান্ট খুবই প্রয়োজন। তবে সব থেকে বেশি প্রয়োজন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো অগ্রগতি নাই। সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার সমন্বয় হলে ফায়ার হাইড্রান্ট তৈরি করা সম্ভব।’
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (অয়্যারহাউজ ও ফায়ার প্রিভেনশন) আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের কোথাও সরকারিভাবে ফায়ার হাইড্র্যান্ট নেই। বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানা, ভবনের মালিক যারা আছেন তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে, নিজস্ব ভবন রক্ষায় এটা তৈরি করে থাকেন।’
নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্তব্য করেন, ‘খাবার পানিই ঠিক মতো ব্যবস্থা করতে পারে না, আর ফায়ার হাইড্রান্ট!’
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে ফায়ার হাইড্র্যান্ট দরকার ছিল এবং থাকা উচিৎ। এটার একটা মাস্টার প্ল্যান থাকে, অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এর জন্য সমন্বয় এবং তহবিল জরুরি। অনেকে নিজস্ব ভবনে পানি রিজার্ভে রাখে। এটা ভালো দিক।’
ঢাকা শহরের অনেক বড় পানির উৎস পুকুর। দিন দিন এই পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলা হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নজরুল ইসলাম। বলেন, এই কারণেই ফায়ার হাইড্র্যান্ট খুব দরকার।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ভবনগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা খুব কম থাকে। রাজউক, সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হলো সচেতনতা বাড়ানো। তবে এইটা আমাদের এখানে সেভাবে হয় না। টেলিভিশনকে এই কাজে ব্যবহার করতে পারে।’
তবে এরই মধ্যে ফায়ার হাইড্রান্ট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে কবে কতদিনে তা বাস্তব রূপ নেবে সেটা জানাতে পারেনি তারা।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফায়ার হাইড্র্যান্ট নির্মাণের জন্য আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটার টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি স্থাপন হয়ে যাবে।’
ফায়ার হাইড্রান্ট নির্মাণে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কতদিনে স্থাপন হবে সেটা এখনি বলতে পারছি না। ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করেই ফায়ার হাইড্র্যান্ট প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছি।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ফায়ার হাইড্র্যান্টের স্থাপনের বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নাই। তাদের মতে, ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রস্তাব না আসার কারণে এ বিষয়ে তারা কিছুই ভাবছেন না।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস থেকে আমরা যদি কোনো প্রস্তাব পাই, তখন সেই জায়গা ঠিক করে করব। আমরা যেটা করছি, যে সমস্ত জায়গায় জলাশয় আছে, সেখানে পানির সোর্স তৈরি করছি।
‘আমাদেরকে বলতে হবে কোন এলাকায় ঝুঁকি বেশি, সেই জায়গা প্রস্তাব আকারে দিতে হবে। তখন আমরা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেব।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েও কোনো ফল পাননি বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফায়ার হাইড্র্যান্ট কোনো ফলাফল নাই। গত মাসে এটা নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেয়া হবে। সেই আলোচনা সাপেক্ষে আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ওখান থেকে এখনও সিদ্ধান্ত দেয়া হয় নাই।’
ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এটা করে। ওয়াসা এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে এটা করতে হবে। ওয়াটার হাইড্র্যান্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে সংসদীয় কমিটির মিটিংয়ে। সেখানে আমার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, এটার কোনো অগ্রগতি এখনও নাই।’
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমত জিনিসটার গুরুত্ব দিতে হবে। চিঠি দিলে যদি কাজ হয়ে যেত তাহলে তো হতই। এটা করে নিয়ে আসা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। যাদের ফায়ার হাইড্র্যান্ট করার কথা, তারা নানা অজুহাত দিতে পারে। কিন্তু এটার গুরুত্ব অনুধাবন করে এটা করতে হবে। মন্ত্রী আলোচনা করে যদি ফল না পান, তাহলে শোরগোল করবেন যে, কেন এটা হচ্ছে না।
‘কিন্তু তিনি তো সেটা করেন নাই। যেখানে চিঠি দিয়েছেন, তাদের যেমন দায়িত্ব, যারা বাস্তবায়ন করবেন তাদেরও দায়িত্ব আছে। এ ছাড়া পানির আধারগুলোও সংরক্ষণ করতে হবে। যে হারে বহুতল ভবন বাড়ছে, তাতে ফায়ার হাইড্র্যান্ট না করা হলে সামনে বিপদ।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান (সচিব) এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যেক ভবনে নকশা অনুমোদন দেয়ার সময় আমরা ফায়ার হাইড্র্যান্ট নিশ্চিত করি।’
তবে ঢাকায় ফায়ার হাইড্র্যান্ট কোথাও দেখা যায় না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন ভবনগুলোতে হচ্ছে। ঢাকা শহর তো অনেক পুরোনো শহর। পুরাতনগুলোতে নেই, নতুনগুলোতে আমরা নিশ্চিত করছি। সামনে এটা নিয়ে আরও কাজ হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জের ধরে প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র মোট ২৬১ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার একজন ও আগের দিন আসা ৪৬ রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তপথে বিজিপি’র এক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপারে চলে আসেন আরও ৪৬ জন বিজিপি সদস্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি তাদের সবাইকে হেফাজতে নিয়েছে।
আইন-শৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহীদের গোলাযোগ চলছে৷ মঙ্গলবার রাতেও সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সংঘাতে আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা।
স্থানীয়দের দাবি, রাতের অন্ধকারে ৪৬ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিজিবি তাদের নিরস্ত্র করে মঙ্গলবার সকালে আশ্রয় নেয়া ১২ জনের সঙ্গে নতুনদেরও হেফাজতে রেখেছে।
বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে নতুন করে ৪৬ জন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবি ক্যাম্পের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়া আজ (বুধবার) নতুন করে আরও একজন আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে মোট ২৬১ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
মার্চ মাসে সারা দেশে মোট ৫৫২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এসব দুর্ঘটনায় মোট ৫৬৫ জন নিহত এবং এক হাজার ২২৮ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্চ মাসে রেলপথে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ১৮১ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৩ জন নিহত, ১৬৬ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৭৮ শতাংশ, নিহতের ৩৫.৯২ শতাংশ ও আহতের ১৩.৫১ শতাংশ।
এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় এ বিভাগে ১৬৫ জন নিহত ও ৩০৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ৯২ জন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৮৩ জন চালক, ৮২ জন পথচারী, ৮২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩১ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন শিক্ষক, ১০৯ জন নারী, ৭০ শিশু, ৩ জন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- ৫ পুলিশ সদস্য, ১ আনসার, ৩ সৈনিক, ২ জন চিকিৎসক , ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১৩০ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৭৮ জন পথচারী, ৬৪ জন নারী, ৬৩ শিশু, ২১ শিক্ষার্থী, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬ জন শিক্ষক, ও ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।
এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৭৯৩টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৪.৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৫.৮৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১১.২২ শতাংশ বাস, ১৬.৩৯ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫.১৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১০.৪৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ৬.৪৩ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭.৪২ শতাংশ গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৭.২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১.৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ২.৮৩ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং শূন্য দশমিক ৭২ ট্রোন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৪.৬০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৭.২১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৯.৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৭.৭৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, প্রকাশিত এই তথ্য দেশে সংঘঠিত সড়ক দুঘর্টনার প্রকৃতচিত্র নয়। এটি কেবল গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য। দেশে সংঘঠিত সড়ক দুঘর্টনার একটি বড় অংশ (প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত) গণমাধ্যমে স্থান পায় না। তাই এসব তথ্য আমাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ‘দেশে সড়ক দুঘর্টনার প্রাথমিক উৎসস্থল দেশের হাসপাতালগুলোতে দেখলে এমন ভয়াবহ তথ্য মেলে। ঢাকা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) মার্চ মাসে ১৩৬৯ জন সড়ক দুঘর্টনায় গুরুতর আহত পঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বিজ্ঞান বলে একটি দুঘর্টনায় ১০ জন আহত হলে তার মধ্যে কেবল একজন গুরুতর আহত বা পঙ্গু হয়।
‘বাংলাদেশে ১০ হাজার সরকারি ও ৬ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে এসব হাসপাতালে প্রতিবছর সড়ক দুঘর্টনায় আহত প্রায় ৩ লাখের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ গণমাধ্যমে তার ১০ ভাগের এক ভাগ তথ্যও প্রকাশিত হয় না বলে আমরা ঘটনার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে পারি না।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ
১. ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি।
২. মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল।
৩. সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং ও সড়কে বাতি না থাকা। রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার।
৪. সড়ক-মহাসড়কে নির্মাণত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও অদক্ষ চালকের হার ব্যাপক বৃদ্ধি।
৫. ফুটপাত দখল, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন চালানো ও সড়কে চাদাঁবাজি।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ
১. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করা।
২. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান।
৪. রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা; চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৭. ব্লাক স্পট নিরসন করা, সড়ক নিরাপত্তা অডিট করা ও স্টার মানের সড়ক করিডোর গড়ে তোলা।
৮. দেশে সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ-এর চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা ও প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা জরুরি।
মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির দিকে যথাযথ নজর রাখতে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে অর্থাৎ যুদ্ধ শুরু হলে এবং সৃষ্ট উত্তেজনা দীর্ঘ সময়ে গড়ালে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নির্দেশ দেন সরকার প্রধান। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ফলে সম্ভাব্য রি-অ্যাকশন কী হতে পারে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই সে বিষয় বিবেচনায় প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কনফ্লিক্ট যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, সেটি কীভাবে আমরা মোকাবিলা করব, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমরা কী করতে পারি; সেগুলোর প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি। ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে বলেছেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, যুদ্ধ যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তখন বিভিন্ন সেক্টরে যে ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে, সেটি সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে এক্সারসাইজ করে তা মোকাবিলায় পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছেন সরকার প্রধান। তিনি বলেছেন, যার যার সেক্টরে সবাই যেন প্রস্তুতি নেয়।
ক্রাইসিস তৈরি হলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। তখন কী করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সচিব জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে মন্ত্রিসভাকে জানাতে বলেন।
দেশে এখনও ১৬টি আইন তালিকাভুক্ত করা হয়নি উল্লেখ করে সচিব মাহবুব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিগগির আইনগুলো বাদ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভা ‘মহেশখালী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এমআইডিএ) অ্যাক্ট-২০২৪’ এবং ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা) আইন-২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বিত প্রক্রিয়ায় পরিচালনার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে এমআইডিএ আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব।
আইনটির আওতায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন এবং এটি ১৭ সদস্যের বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হবে। গভর্নিং বোর্ড ছাড়াও সরকার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে, যিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অফিসটি পরিচালনা করবেন।
কর্তৃপক্ষের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- প্রায় ৫৫ হাজার ৯৬৮ একর জমির নির্দিষ্ট এলাকার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা, সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনা, বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা এবং এলাকাটিকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা) আইন-২০২৪’ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি মূলত প্রচলিত ইংরেজির বাংলা সংস্করণ এবং এই সংস্করণে কোনো পরিবর্তন নেই। এর আগে এই আইনের ইংরেজি ভার্সন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও সেই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ আইনটিই পুনরায় বাংলায় করা হয়েছে। সেটির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বুধবার দুপুরে ৩ দিন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচন কারনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আজ (বুধবার) থেকে শুক্রবার বন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী জানান, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের সঙ্গে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাওয়া-আসাও বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বন্দর দিয়ে পার হতে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে, জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারী মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ দুবাইয়ের পথে রয়েছে। জাহাজটিতে রয়েছেন জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া ২৩ জন নাবিক। তাদের মধ্যে ২১ জন নাবিক ওই জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন। বাকি দু’জন এডেন উপসাগর হয়ে ওমান উপকূলের সামনে দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছে বিমানযোগে দেশে ফিরবেন।
জাহাজটির মালিক পক্ষের একটি সূত্রে জানা গেছে, নাবিকরাই এমন ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
কেএসআরমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম জানান, নাবিকরা তাদের ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন। ২১ নাবিক জাহাজে ও বাকি দুজন বিমানে বাংলাদেশে আসবেন। অন্যরাও চাইলে উড়োজাহাজে আসতে পারেন। যদি তারা আমাদের সিদ্ধান্ত দেন। তবে ২১ নাবিক জানিয়েছেন তারা ওই জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন।
দীর্ঘ ৩৩ দিন জিম্মি থাকার পর শনিবার জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর সোমালিয়ার ডেরা থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি।
মেরিন ট্রাফিক তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, জাহাজটি আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছবে ২০ এপ্রিল রাত ১০টায়। কিন্তু জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল জাহাজটি আরব আমিরাতে ভিড়বে। কারণ জাহাজটি চলার গতি অনেক কম।
কর্তৃপক্ষ জানায়, জাহাজটি আরব আমিরাতে পৌঁছার পরপরই দুই নাবিক বিমানযোগে বাংলাদেশে আসবেন। বাকিরা জাহাজে করে বাংলাদেশে আসবেন প্রায় এক মাস পর।
সোমালিয়ার একদল জলদস্যু গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ এমভি আব্দুল্লাহ নামের জাহাজটি জিম্মি করে। দেশটির উপকূল থেকে ৫৭৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি ছিনতাই করা হয়। এর ৩২ দিন পর অর্থাৎ ৩৩ দিনের জিম্মিদশা থেকে শনিবার রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়।
আরও পড়ুন:আজ বুধবার ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসে চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে।
এই অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রণীত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এদিন থেকে স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসক চক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।
এই অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার।
মেহেরপুর হয়ে ওঠে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী। মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানি বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতিনিধিরা ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং সেখান থেকেই কার্যক্রম চালাতে থাকেন। নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ঐতিহাসিক দিনটিকে বরাবরের মতোই স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সবার সঙ্গে একত্রিত হয়ে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সব স্তরের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মুজিবনগরের কর্মসূচি
ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৯টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে গার্ড অফ অনার। ১০টায় মুজিবনগর দিবসের জনসভা। এই জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ।
আরও পড়ুন:বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত ঘাটতি থাকায় দেশে ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও লোডশেডিংয়ে ধুঁকছে দেশ।
দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে সন্ধ্যার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার দাপ্তরিক তথ্যে দেখা যায়, সোমবার গ্যাস সরবরাহ ২ হাজার ৩৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে মঙ্গলবার ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়ে ২ হাজার ৫৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে।
তারপরও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বিশাল ঘাটতি রয়ে গেছে। এর ফলে বেশ কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।
সরকারি সূত্র জানায়, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রটি ১২শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। কিন্তু পূর্ণ সক্ষমতায় ফিরলেও কেন্দ্রটি উৎপাদন করে মাত্র ৬শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
শেভরনের এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা এখন ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম। কিন্তু সরকার বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে পুরো সরবরাহ পাচ্ছে না। সে কারণেই ক্ষেত্রটি ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে।’
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারাও বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে পুরো সরবরাহ না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলেছে তাদের আর গ্যাসের প্রয়োজন নেই।
কর্মকর্তারা জানান, দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা ৩ এপ্রিল তিন দিনের রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় যায় এবং যথাসময়ে উৎপাদনে ফিরে আসে।
মহেশখালীর দুটি এলএনজি টার্মিনালের এক হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার বিপরীতে ৯৭২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ায় জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা এলএনজির সরবরাহও বেড়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত ঘাটতি থাকায় দেশে ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে।
তথ্য বলছে, এদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দিনের সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে ৫০১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কারণ এ সময় দেশে ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছিল ১২ হাজার ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন যে তাপপ্রবাহ অপরিবর্তিত থাকলে সন্ধ্যার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য