একই দিনে স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে আহাজারি করছেন আবেদা খাতুন। কিছুক্ষণ পরপর জ্ঞান হারাচ্ছেন। মাথায় পানি ঢালছেন স্বজনরা। কেউ আবার হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন।
পাশের ঘরেই তার ছেলে ওয়াসিমের স্ত্রী রুনা। ১০ বছর বয়সী ছেলে জুনায়েদ আর আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাফাকে নিয়ে এক রকম দিশেহারা তিনিও।
বারবার দুই সন্তানকে দেখিয়ে আহাজারি করছেন আর বলছেন, ‘এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলব? ওদের বাপ-দাদা দুজনই চলে গেলেন একদিনে। এই শোক আমরা সইবো কি করে?’
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাইদ ইউনিয়নের হালগড়া গ্রামে মঙ্গলবার সকালে এই দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
সোমবার বিকেলে উপজেলার বড়িবাড়ী ইউনিয়নের এন সহিলা হাওরে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হন তিনজন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই তিনজন হলেন করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাইদ ইউনিয়নের হালগড়া গ্রামের ৬০ বছরের সিরাজ উদ্দিন ও তার ছেলে ৩৫ বছরের ওয়াসিম এবং তাড়াইল উপজেলার দামিহা এলাকার ২৫ বছরের মাসুদ মিয়া।
তাদের মধ্যে সিরাজ ও ওয়াসিম সম্পর্কে বাবা-ছেলে। তাদের বাড়ি করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাইদ ইউনিয়নের হালগড়া গ্রামে।
আরেকজনের নাম মাসুদ মিয়া। তার বাড়ি তাড়াইল উপজেলার দামিহা এলাকায়।
ওয়াসিমের চাচাতো ভাই শরীফ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইটনা সদর ইউনিয়নের বেতেগা হাওরে তার চাচা সিরাজ উদ্দিনের কৃষিজমি ও মাছ ধরার কয়েকটি খাঁদ রয়েছে। সেই খাঁদে গাছের ডালপালা ফেলার জন্য একটি নৌকায় করে গিয়েছিলেন তারা চাচা ও চাচাতো ভাই ওয়াসিম।
‘গতকাল দুপুরে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দুর্ঘটনার কবল থেকে বেঁচে যাওয়া অসীম ও নিজামুল হকের কাছ থেকে ঘটনা শুনি।’
তাদের বরাতে শরীফ বলেন, ‘দুপুরে বড়িবাড়ী ইউনিয়নের এন সহিলা গ্রামের সামনের হাওরে পৌঁছানর পর প্রচণ্ড ঝড় হয়। হাওরে নৌকা নোঙর করে তারা সবাই ভেতরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকার ভেতর থেকে মাঝি অসীম ও নিজামুল হক বের হয়ে সাতরিয়ে একটি মাছের নৌকায় উঠে বেঁচে যান।
‘আর ভেতরে আটকা পড়েন সিরাজ উদ্দিন, তার ছেলে ওয়াসীম ও আরেক যাত্রী মাসুদ। পরে খবর পেয়ে ইটনা থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে তাদেরকে উদ্ধারের কাজ শুরু করে। তবে তখন তাদের আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সকালে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করলে সকাল ৯টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
সিরাজ উদ্দিনের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার বড় ভাই সিরাজ ও তার ছেলে ওয়াসিমই ছিল এ পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুর্ঘটনায় একসঙ্গে তাদের দুজনের মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসল।’
তিনি জানান, ওয়াসিমের এক ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে আর মেয়েটা কেবল হাঁটতে শিখেছে।
নোয়াবাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এই পরিবারের দুইজন সদস্যদের এমন মৃত্যুতে পরিবারটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পেলে, কোনো মতে তারা চলতে পারবে।’
করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘সংশিষ্ট চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। আবেদন পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে নিয়ে টিকটক ভিডিও করা যুবক বাইজীদ তালহার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলীখালী গ্রামে। টিকটকে তিনি বায়েজীদ তালহা নামে পরিচিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. বাইজীদ।
একসময়ের ছাত্রদলকর্মী বাইজীদ বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও পটুয়াখালী বিএনপিসংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, বাইজীদ অতীতে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতা এসব তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন। বাইজীদ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন মোহনের নিকটাত্মীয় বলেও দাবি করছেন তারা।
তবে মোহনের দাবি, বাইজীদ তার আত্মীয় নন। তিনি (বাইজীদ) জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের অনুসারী ছিলেন। বিপ্লব এখন যুবদল করেন।
জেলা ছাত্রদলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় মোহনের সঙ্গেও বাইজীদ রাজনীতি করেছেন। তবে তার কোনো সংগঠনিক পদ ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাইজীদ ঢাকায় চলে যান। সেখানে তিনি এখন ব্যবসায় জড়িত।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল-হেলাল নয়ন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইজীদ আগে পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে তিনি অনেকদিন ধরে এলাকায় নাই। এখন ঢাকায় রাজনীতি করেন কিনা তা জানি না। ব্যক্তির অন্যায় অপরাধ দল কখনই দায় নেবে না।’
বাইজীদকে রাজধানীর শান্তিনগর থেকে রোববার সন্ধ্যার দিকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
সিআইডির সাইবার ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ নিউজবাংলাকে বাইজীদকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আটকের পর তাকে সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেখানে একাধিক ইউনিটের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে কথা বলছেন।’
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, বাইজীদের বাড়ি পটুয়াখালী হলেও তিনি ঢাকার শান্তিনগরে থাকেন। পদ্মা সেতুতে নাট খোলার বিষয়টি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, বাইজীদ পদ্মা সেতুতে ওই টিকটক ভিডিও বানানোর পর নিজের টিকটক প্রোফাইলে পোস্ট করেন। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরে তিনি ভিডিওটি মুছে ফেলেন। একই সঙ্গে নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ডিঅ্যাকটিভেট করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
পরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে শান্তিনগরের বাসা থেকে আটক করে সিআইডি।
শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন বাইজীদ।
৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই যুবক সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। যিনি ভিডিও করছিলেন তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দেহ।'
নাট হাতে নিয়ে জবাবে বাইজীদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের... পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’
এ সময় পাশ থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।’
ভিডিওটি বাইজীদের টিকটক অ্যাকাউন্টে আপলোড করার পর ফেসবুকেও সেটি ভাইরাল হয়। তবে রোববার বিকেলে এই অ্যাকাউন্টে ‘প্রাইভেট’ করা অবস্থায় দেখা গেছে।
সাধারণের জন্য খুলে দেয়ার পর পদ্মা সেতুতে রোববার দিনভর গণপরিবহন ছাড়া অন্য প্রায় সব গাড়িকে সেতুতে থামাতে দেখা যায়। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি তুলেছেন ছবি।
মাইক্রোবাস ভাড়া করে পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে আসেন তোফাজ্জল হোসেন। গাড়িটি দাঁড় করিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পরিবারের ১৪ সদস্য সেতু ঘুরে দেখেন; তোলেন দলবদ্ধ ছবি।
নিউজবাংলাকে তোফাজ্জল বলেন, ‘যেদিন সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে, আমরা সেদিনই ঠিক করেছি প্রথম দিনই সেতু দেখতে আসব। এ জন্য আমার মা, খালা, ফুপুসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। সারা দিন ঘুরে আবার কুমিল্লা ফিরে যাব।’
নিয়ম ভাঙার প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, ‘দেখেন আমরা তো কত অনিয়মই করি। এতদিনের ইচ্ছা স্বপ্নের সেতুতে এসে দাঁড়াব। নিজের স্বপ্নপূরণে একটু অনিয়ম করা দোষের কিছু না।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিনে দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকামুখী দূরপাল্লার কোনো বাসে স্বল্প দূরত্বের যাত্রী না তোলায় দুর্ভোগে পড়েছেন ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফরিদপুর ভাঙার বাসিন্দা কামরুল হাসান রোববার সকালে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় এসেছেন। কিন্তু ঢাকা যাওয়ার জন্য কোনো বাসে উঠতে পারছেন না। ভাঙা থেকে যেসব বাস এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সেতু পার হচ্ছে তার সবই দূরপাল্লার (চেয়ার কোচ)।
এসব বাসে স্বল্প দূরত্বের কোনো যাত্রী তোলা হচ্ছে না। এদিকে লোকাল কোনো বাস সার্ভিসও নেই। এতে করে স্থানীয়রা পড়েছেন দুর্ভোগে। ভিড় বেড়েছে জাজিরা টোল প্লাজায়। বাসে উঠতে না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ফরিদপুর, মাদারীপুর থেকে অনেকে রোববার সকালে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় এসে ঢাকামুখী দূরপাল্লার কোনো বাসে উঠতে পারছেন না। এতে করে স্থানীয়রা পড়েছেন দুর্ভোগে। ছবি: নিউজবাংলা
রোববার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে টোল প্লাজায় ফি নিয়ে সেতুতে গাড়ি ছাড়া হয়। একের পর এক গাড়ি সেতু পার হয়। কিন্তু কোনো গাড়িতে উঠতে পারছেন না স্থানীয়রা। শতাধিক মানুষের ভিড় জমে যায় টোল প্লাজার সামনে। এতে বিপাকে পড়েন টোল প্লাজার দায়িত্বে থাকা টেলিটেল কমিউনিকেশনের কর্মীরা। সড়ক থেকে এই ভিড় সরাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
ঢাকার কোনো গাড়িতে উঠতে না পেরে হতাশ মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা শিমুল। সেতুতে গাড়ি চালুর পর ঢাকায় যেতে চেয়েও পারছেন না তিনি। শিমুল বলেন, ‘কোনো গাড়িই নিচ্ছে না। এখন যাব কীভাবে?’
শনিবার খুলনা থেকে এসেছেন শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী বেল্লাল শেখ। কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ফেরি বন্ধ থাকায় তিনি গতকাল পদ্মা পার হতে পারেননি। রোববার সকালে সেতু চালুর পর বাসে সেতু পার হতে পারবেন ভেবে জাজিরা টোল প্লাজায় এসেছেন তিনি। অন্য সবার মতো তারও একই অবস্থা। দাঁড়িয়ে আছেন বাসে ওঠার আশায়।
ভিড় সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে টোল প্লাজার দায়িত্বে থাকা টেলিটেল কমিউনিকেশনের কর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির ইঞ্জিনিয়ার জিবুল আক্তার।
তিনি বলেন, ‘রাস্তায় দাঁড়ানো নিষেধ। এখন প্রচুর মানুষ আসছে বাসে ওঠার জন্য। কিন্তু আমাদের হাতে তো এর কিছুই নেই। তাদের সড়কের পাশ থেকে সরানোর চেষ্টা করছি।’
ভায়াডাক্টসহ ৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতুটির টোল আদায় কার্যক্রম দ্রুতগতি করতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের দুটি টোল প্লাজায় বসানো হয়েছে সাতটি করে মোট ১৪টি গেট।
যান চলাচলে সেতুটি খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেট চালু হয়ে গেছে। সব কটি গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর টোল
গত ১৭ মে পদ্মা সেতুর টোল হার প্রকাশ করে সরকার। সে হিসাবে এই সেতু পাড়ি দিতে মোটরসাইকেলকে দিতে হবে ১০০ টাকা।
প্রাইভেট কার ও সাধারণ জিপে টোল ঠিক করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। পিকআপ ও বিলাসবহুল জিপ পারাপারে টোল ধরা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা।
মাইক্রোবাস পারাপারে সেতুর টোল ১ হাজার ৩০০ টাকা। ৩১ বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য দিতে হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা। মাঝারি বাসের টোল ২ হাজার টাকা। বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
পাঁচ টনের ট্রাক এই সেতু পাড়ি দিলে গুনতে হবে ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাঁচ টন থেকে আট টনের মাঝারি ট্রাকের জন্য দিতে হবে ২ হাজার ১০০ টাকা। আট টন থেকে ১১ টনের মাঝারি ট্রাকের টোল ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
থ্রি এক্সেলের ট্রাক পারাপারে টোল ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। মালবাহী ট্রেইলারের (চার এক্সেল) টোল ৬ হাজার টাকা। চার এক্সেলের ওপরে মালবাহী ট্রেইলারের জন্য প্রতি এক্সেলে দেড় হাজার টাকা যোগ হবে।
বর্তমানে ফেরিতে নদী পারাপারে যে হারে মাশুল দিতে হয়, সেতুতে তা দেড় গুণ বা আশপাশে বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয় শনিবার। অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়ার। সেই অপেক্ষায় অবসান ঘটিয়ে রোববার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে জাজিরা প্রান্ত থেকে পদ্মা সেতুর দুয়ার খুলে দেয়া হয়।
নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে প্রথম গাড়ি হিসেবে ছেড়ে যায় ফরিদপুরের বাসিন্দা নাজমুস সাকিবের মোটরসাইকেল। এরপর একে একে প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্সসহ অনুমোদিত যানগুলো টোলপ্লাজা পেরিয়ে মাওয়া প্রান্তের দিকে ছুটে চলেছে।
রোববার সকালে আলো ফোটার আগেই জাজিরাপ্রান্তে টোল প্লাজার সামনে দীর্ঘ সারি দেখা গেছে যানবাহনের। গাড়ি নিয়ে কেউ এসেছে শখে, কেউ প্রয়োজনে।
আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়ার পর বাইক নিয়ে সেতু পার হতে ভোর সাড়ে ৪টায় জাজিরাপ্রান্তের টোল প্লাজায় এসে হাজির হন ফরিদপুরের বাসিন্দা নাজমুস সাকিব।
তিনি বলেন, ‘আমার টার্গেট ছিল প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সেতু পার হবো। খবরে জানছিলাম, সকাল ৬টায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা খুলে দিবে, সেজন্য মাঝরাত থেকে এখানে এসে অপেক্ষা করছি।’
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রথমবার সেতু দিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিতে খুব সকালে আসেন বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়। বাগেরহাট থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে টোল প্লাজায় এসে হাজির হন এই তরুণ সাংসদ।
পদ্মা পাড়ি দিতে যাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ব্রিজের স্বপ্ন আমাদের পূর্বপুরুষরা দেখে গেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপহার দিয়েছেন। আমিতো বাগেরহাট থেকে আসছি, দেড় ঘণ্টার মধ্যে এখানে চলে আসছি। দেখি কতক্ষণ লাগে সেতু পার হতে। এই আবেগের কথা বুঝানোর ভাষা নেই। আমি নিজে গাড়ি চালাচ্ছি, ব্রিজে গাড়ি চালাতে চাই, দেখতে চাই। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নাই।’
রোগী নিয়ে সেতু পাড়ি দিতে আসা অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ভীষণ খুশি। ফরিদপুরের ভাঙা থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে যাচ্ছেন চালক তানভীর হাসান।
তিনি বলেন, ‘আগে ৬-৭ ঘণ্টা লেগে যাইতো ফেরির কারণে। চোখের সামনে গাড়িতে মানুষ মারা যাইতে দেখছি, এই দৃশ্য দেখার কষ্ট অনেক। আজকে পাঁচ মিনিটে পার হয়ে যেতে পারবো, এর চেয়ে খুশির কিছু নেই।’
সব গাড়ি নিয়ে পার হতে পারলেও অনুমোদিত না পাওয়ায় সেতু পাড়ি দিতে পারেননি খুলনার কয়রার বাসিন্দা মিনারুল ইসলাম। তিনি অটোরিক্সায় নৌকার আদলে কাঠামো তৈরি করেন। ঢাকায় বসবাস করা এই ব্যক্তি নৌকার আদলে গাড়ি নিয়ে সমাবেশে এসেছিলেন, দিনভর ছিলেন কাঁঠালবাড়ী এলাকায়। আজ সেতু পাড়ি দেয়ার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু টোলপ্লাজায় তার গাড়ি আটকে দেয়া হয়েছে।
মিনারুল বলেন, ‘কত শখ করে নৌকার মতো গাড়ি বানাইছি। টোলও দিছি কিন্তু যাইতে দিচ্ছে না।’
টোলপ্লাজায় দায়িত্বে থাকা একজন কর্মী জানান,’ উনার গাড়ি অনুমোদিত নয়, আমাদের কোনো ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে না। যে কারণে আমরা উনাকে যেতে দিতে পারছি না।’
সকাল ৫টা ৫০ থেকে ৭টা পর্যন্ত কয়েকশ মোটরসাইকেল জাজিরাপ্রান্ত থেকে টোল পরিশোধ করে পদ্মা সেতুতে উঠে। তাদের অধিকাংশ হেলমেট ব্যবহার করেননি। কোনো মোটরসাইকেলে চালক-আরোহী দুজনেরই হেলমেট নেই, কোনোটাতে চালকের আছে আরোহীর নেই।
জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায় সেনাবাহিনী, র্যাব, টোল কর্তৃপক্ষ থাকলেও যাত্রী ও চালকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার এই বিষয়গুলো দেখার কেউ নেই।
ভায়াডাক্টসহ ৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতুটির টোল আদায় কার্যক্রম দ্রুতগতি করতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের দুটি টোলপ্লাজায় বসানো হয়েছে সাতটি করে মোট ১৪টি গেট।
যান চলাচলে সেতুটি খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেট চালু হয়ে গেছে। সব কটি গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর টোল
গত ১৭ মে পদ্মা সেতুর টোল হার প্রকাশ করে সরকার। সে হিসাবে এই সেতু পাড়ি দিতে মোটরসাইকেলকে দিতে হবে ১০০ টাকা।
প্রাইভেট কার ও সাধারণ জিপে টোল ঠিক করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। পিকআপ ও বিলাসবহুল জিপ পারাপারে টোল ধরা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা।
মাইক্রোবাস পারাপারে সেতুর টোল ১ হাজার ৩০০ টাকা। ৩১ বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য দিতে হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা। মাঝারি বাসের টোল ২ হাজার টাকা। বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
পাঁচ টনের ট্রাক এই সেতু পাড়ি দিলে গুনতে হবে ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাঁচ টন থেকে আট টনের মাঝারি ট্রাকের জন্য দিতে হবে ২ হাজার ১০০ টাকা। আট টন থেকে ১১ টনের মাঝারি ট্রাকের টোল ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
থ্রি এক্সেলের ট্রাক পারাপারে টোল ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। মালবাহী ট্রেইলারের (চার এক্সেল) টোল ৬ হাজার টাকা। চার এক্সেলের ওপরে মালবাহী ট্রেইলারের জন্য প্রতি এক্সেলে দেড় হাজার টাকা যোগ হবে।
বর্তমানে ফেরিতে নদী পারাপারে যে হারে মাশুল দিতে হয়, সেতুতে তা দেড় গুণ বা আশপাশে বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:মান উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিতে অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন শিক্ষকরা। কিন্তু পথেই শেষ হলো তাদের যাত্রা। ট্রাকচাপায় চারজন প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আহত হয়েছেন এক শিক্ষক। দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অটোরিকশা চালকেরও।
নওগাঁর সদরে শুক্রবার সকালের এ ঘটনায় নিহত পাঁচজনের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রত্যেক পরিবারকে সহায়তা করা হবে।’
নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের বাবলাতলী মোড় এলাকায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।আহত এক স্কুলশিক্ষককে গুরুতর অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার নেহেন্দা গ্রামের ও পানিহারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন, বিজলী গ্রামের বেলকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুকবুল হোসেন, ভাদুরন্দ গ্রামের গোলাম নবীর স্ত্রী গুটিসর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন খাতুন, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দুলালপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে ও আমকুড়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক লেলিন সরদার ও সদরডাঙ্গা গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে অটোরিকশার চালক সেলিম হোসেন।
এ ছাড়া আহত হয়েছেন নিয়ামতপুর উপজেলার কুড়িদহ গ্রামের আব্দুল গফুরের মেয়ে ও কুড়িদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরজাহান বেগম।
স্থানীয়দের বরাতে নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল নিউজবাংলাকে জানান, সকালে নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে যাত্রী নিয়ে একটি অটোরিকশা নওগাঁর দিকে যাচ্ছিল। নওগাঁ শহর থেকে মাছের ফিডবোঝাই একটি ট্রাক যাচ্ছিল রাজশাহীর দিকে।
পথে বাবলাতলী মোড়ে মাটিবোঝাই একটি ট্রাক্টরকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় ট্রাকটি। অটোরিকশাটিকে চাপা দিয়ে এটি সড়কের পাশে পুকুরে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান চার শিক্ষকসহ অটোর চালক। গুরুতর আহন হন আরেক শিক্ষক।
তারা সবাই নওগাঁ পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছিলেন বলে জানান ওসি।
থানায় স্বজনদের আহাজারি
দুর্ঘটনার পর সদর থানার সামনে আহাজারি করতে দেখা গেছে স্বজনদের।
নিহত স্কুলশিক্ষক জান্নাতুন খাতুনের স্বামী গোলাম নবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নিতে নওগাঁ শহরে আসতেছিলেন আমার স্ত্রী। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শেষ বারের মতো কথা হয় তার সঙ্গে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পাই। নিজেকে কীভাবে স্থির রাখব? এমন করে আমার স্ত্রীকে হারাতে হবে, তা কখনোই ভাবিনাই।’
অটোরিকশার চালক সেলিম হোসেনের বাবা সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে শিক্ষকদের নওগাঁ পৌঁছে দিতে বের হয়। সকাল ৯টার দিকে জানতে পারি আমার ছেলেটা আর বেঁচে নেই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল ছেলেটা। যে ট্রাক চালক আমার ছেলেসহ ৫জনকে চাপা দিয়ে মারল, তার শাস্তি চাই।’
নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ট্রাকের চাপায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে পানির নিচে ডুবে ছিল। অটোরিকশটি কেটে ভেতর থেকে একে একে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ট্রাকটি উদ্ধার করে থানা পুলিশের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারে নিহত শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নিতে আসছিলেন। চারজন শিক্ষক ও অটোরিকশার চালক মারা গেছেন ট্রাকের চাপায়; খুবই দুঃখজনক ঘটনা। পরিবারের কাছে নিহতের মরদেহ হস্তান্তর ও তাদের কীভাবে সহায়তা করা যায়, বিষয়গুলো আমরা তদারকি করছি।’
ওসি নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘মরদেহগুলো থানায় নেয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের হস্তান্তর করা হবে। ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি।’
এ ঘটনায় বিকেল পর্যন্ত নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করেনি বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের জইকার কান্দিগ্রামের আক্কাস আলীর ঘর চুরমার করে দিয়েছে বানের পানি। ঘরের ভিটে ছাড়া আর কিছুরই অস্তিত্ব নেই। পানি কমায় বৃহস্পতিবার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে এই অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েন আক্কাস।
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঘরের চালের টিন কুড়াতে কুড়াতে তিনি বলেন, ‘পানি তো নামছে। কিন্তু আমাদের সব নিয়া গেছে পানি। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। মানুষের দেয়া সহায়তায় কোনো রকমে খেয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু এখন ঘর মেরামত করব কী করে? আসবাবপত্র কেনারই বা টাকা পাব কোথায়?’
ঘর ভেঙে যাওয়ায় পরিবারের অন্য সদস্যদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আনতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
একই দিন ঘরে ফিরেছেন গোয়াইনঘাটের নলজুড়ি এলাকার পাথরশ্রমিক রাসেল মিয়া। তার ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত পানিতে। বলেন, ‘পানিতে ঘর তছনছ হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে হাঁটু সমান কাদা। এই ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকব কী করে?
‘পানির কারণে আয়-রোজগার বন্ধ। ভাত খাওয়ারই পয়সা নাই। ঘর মেরামত করব কী করে?’
বন্যার পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বন্যার্তরা। আক্কাস ও রাসেলের মতো অনেকেরই ঘরবাড়ি বানের পানিতে ভেঙে গেছে; নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র। নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন।
গত ১৫ জুন থেকে চলতি বছরে তৃতীয় দফায় বন্যা দেখেছে সিলেট। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় তলিয়েছে সিলেটের প্রায় ৮০ শতাংশ। এখনও বেশির ভাগ এলাকা জলমগ্ন।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে, চলমান বন্যায় জেলায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪৪ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আর ১৭ হাজার ৯১৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ তারিখ পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩ উপজেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন আশ্রয় নেন। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ৯১ হাজার ৬২৩ জন।
সে হিসেবে, প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছেন।
সিলেট সদর উপজেলার মইয়ারচর এলাকার তাহেরা বেগমও বৃহস্পতিবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ দিন বাদাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি পানিতে বাথরুম ভেঙে গেছে। সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এইগুলা এখন মেরামত করাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।‘
বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন সিলেটের নাট্যকর্মী রুবেল আহমদ কুয়াশা। তিনি বলেন, ‘আপাতত শুকনো খাবার বিতরণের চাইতে বন্যার্তদের পুনর্বাসনের জন্য ফান্ড গঠন করা দরকার।
‘মানুষ তার আপৎকালীন সঞ্চয় আর ত্রাণ দিয়ে বন্যা চলাকালীন সংকট পার করে দিতে পারবে। কিন্তু তার মূল বিপদ পানি নামার পরেই দেখা দেবে। কারণ টিনের চাল, ঘরের বেড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। পানি নামার পর এগুলো মেরামতে বিপদে পড়বে তারা।’
কুয়াশার আশঙ্কা, এই মানুষগুলো ঘর ও আসবাবপত্র মেরামতে মহাজন বা বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান থেকে হয়তো ঋণ নেবে। তখন তারা আরও বিপদে পড়বে।
ঘরহারা কিছু মানুষের ঘর নির্মাণে সহায়তার জন্য তহবিল গঠনের চেষ্টা করছেন জানিয়ে আরেক স্বেচ্ছাসেবী দেবজ্যোতি দাস বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা মিলে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। খুব বেশি না পারলেও কিছু মানুষকে আমরা ঘর নির্মাণ করে দিতে চাই।’
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘এখনও বেশির ভাগ জায়গায় পানি রয়ে গেছে। এখন আমরা ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছি। পানি পুরো নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র প্রমিজ নাগের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুরাইয়া ইসলাম মিমকে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে প্রমিজের চাচাতো ভাই প্রীতিশ কুমার নাগ আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় প্রমিজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাহিদ হাসান মৃধা।
এজাহারে বলা হয়েছে, একই বিশ্ববিদ্যলায়ের লেখাপড়ার সুবাদে প্রমিজ নাগ ও সুরাইয়া ইসলামের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুরাইয়া প্রায়ই প্রমিজের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে বিয়ে করার জন্য সুরাইয়া প্রমিজের ওপর চাপ দেয়া শুরু করেন। কিন্তু দুজন ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় প্রমিজ তাকে বিয়ে করতে রাজি হননি।
গত ২০ জুন সুরাইয়া আবারও প্রমিজের বাসায় এসে বিয়ের বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রমিজের মাথায় ল্যাপটপ দিয়ে আঘাত করে নানা হুমকি দিয়ে চলে যান।
২২ জুন বুধবার সুরাইয়া আবারও প্রমিজের বাসায় এসে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে পাশের মেসের ছেলেদের নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা প্রমিজকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এ ঘটনার পর সুরাইয়া পালিয়ে যান। পরে প্রমিজকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এজাহারে বলা হয়, সুরাইয়া ইসলামের নির্যাতন ও প্ররোচনা সহ্য করতে না পেরে প্রমিজ নাগ আত্মহত্যা করেছেন।
কেএমপি সোনাডাঙ্গার সহকারী পুলিশ কমিশনার আতিক বলেন, ‘প্রমিজের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ও শরীরে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার ঘরে বেশ কিছু স্থানে রক্তের দাগ রয়েছে ও সিসিটিভির ফুটেজে মরদেহ উদ্ধারের আগে ওই ঘর থেকে তার এক বান্ধবীকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে দেখা গেছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে প্রমিজের বাবা-মাকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে, কেউ একজন তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করছিলেন। তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা লেখা আছে। তাই পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করে আমরা এটি শুধুমাত্র আত্মহত্যা হিসেবে নিতে পারছি না।’
কেএমপি কর্মকর্তা বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে যে মেয়েটিকে প্রমিজের ঘর থেকে বের হতে দেখা গেছে তিনিও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। প্রমিজের সহপাঠীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বর্তমানে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আসামি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
প্রমিজের বন্ধু আজগর রাজ বলেন, ‘সুরাইয়ার সঙ্গে প্রমিজের সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের বিভাগের সবাই জানত। কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসে কথা-কাটাকাটির পর তিনি প্রমিজকে মারধরও করেছিলেন।’
একই কথা জানিয়েছেন প্রমিজের চাচাতো ভাই দীপংকর নাগও। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ওই তরুণী প্রমিজকে উপহারও পাঠিয়েছেন। সেগুলোর মূল্য ফেরত চাচ্ছিলেন প্রমিজের কাছ থেকে। প্রমিজ বাড়িতে এসব কথা শেয়ার করে টাকাও চেয়েছিলেন।’
প্রমিজ নাগ খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাচিয়া গ্রামে।
তবে তিনি খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গার গোবরচাকা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। সেখান থেকেই বুধবার সন্ধ্যায় তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।
সুরাইয়া ইসলাম একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তার বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বাবুপুর গ্রামে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের শ্রীবরদীতে স্ত্রী ও শাশুড়িসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর আটক নিহতের স্বামীকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর পুটল গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী মনিরা বেগম, শাশুড়ি শেফালী বেগম ও জ্যাঠা শ্বশুর মাহমুদ গাজীকে কুপিয়ে হত্যা করেন মিন্টু মিয়া।
শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে শ্বশুর বাড়ি পুটল গ্রাম থেকে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে মিন্টুকে আটক করে পুলিশ। সারা রাত ওই বাড়ির একটি আম গাছে লুকিয়ে থাকেন তিনি।
শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে নিহত মনিরার ছোট বোন মিনারা বেগমের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার বাড়ি একই উপজেলার তাঁতীহাটি ইউনিয়নের গ্যাড়ামারা গ্রামে।
ওসি জানান, পারিবারিক কলহের জেরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বোরকা পরে দা নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে হামলা চালান মিন্টু। এসময় দা দিয়ে সবাইকে কোপাতে থাকে। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে পালিয়ে যান তিনি।
এতে ঘটনাস্থলেই স্ত্রী মনিরা বেগমের মৃত্যু হয়। হতাহত অন্যদের বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নিলে মারা যান মনিরার শেফালী ও মাহমুদ। পরে আহত বাচ্চুনি বেগম, মনু মিয়া ও শাহাদাত হোসেনকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এ ঘটনায় পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ওসি বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে ভোরে পুটল গ্রামে শ্বশুর বাড়ির একটি আম গাছ থেকে মিন্টুকে আটক করা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত একটি দা ও একটি চাকু জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তিনজনের মধ্যে একজনের মরদেহ শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে এবং অপর দুই মরদেহ জামালপুর জেলা হাসপাতালে রয়েছে বলেও জানান ওসি।
ঘাতক তার শ্বশুরবাড়িতেই একটি গাছের উপর উঠে লুকিয়ে ছিল বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য