রাত পোহালেই নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হরনি ও চানন্দী ইউনিয়নের নির্বাচন। নদীভাঙন ও সীমানা বিরোধের জটিলতায় দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর ভোট হতে যাচ্ছে এই দুটি ইউনিয়নে।
নির্বাচনি প্রচারে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গেল ৩১ মে ‘কাফনের কাপড়’ জড়িয়ে এবং হাতে ‘বিষ’ নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন এ দুই ইউনিয়নের ২ জন চেয়ারম্যান ও ২৫ জন মেম্বার প্রার্থী।
এ অবস্থায় ১৫ জুনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল করতে গেল ২ জুন সব প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন জেলা নির্বাচন কমিশনার। তবে এতে ভয় বা শঙ্কা তেমন কাটেনি ভোটারদের। তেমনি অভিযোগ আসাও বন্ধ হয়নি প্রার্থীদের।
ভোটের আগে এলাকায় বহিরাগতদের জড়ো করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, হুমকি দেয়া, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করাসহ নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন বলছে, বহিরাগতদের ঠেকাতে ও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
সোমবার চানন্দী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম শামীম ও হরনি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মুসফিকুর রহমান প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকতার কাছেও এ অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন তারা।
অভিযোগে তারা উল্লেখ করেছেন, নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী তাদের ভোটের প্রচারে বাধা দিচ্ছেন, বহিরাগতদের জড়ো করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ ছাড়া পোলিং, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের হাতিয়া বাজারের ঈশিতা টাওয়ারে ডেকে নিয়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য প্রভাবিত করছেন।
লিখিত অভিযোগে এ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও অনিয়মের অভিযোগও তোলেন।
ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে চানন্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম নিউজবাংলাকে বলেন,‘শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারব কি না ভয়ে আছি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষভাবে শেষ পর্যন্ত কাজ করে ভোট মোটামুটি সুষ্ঠু হতে পারে।’
হরনি ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব আহসান উল্লাহ বলেন, ‘সরকার ৩০ বছর পর এই ইউনিয়নে নির্বাচন ঘোষণা করেছে। এখন যেভাবে বহিরাগত লোকজন দেখা যাচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয় কি না সন্দেহে আছি। মানুষ যেনো কেন্দ্রে যাইতে পারে, সে পরিবেশ করার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি।’
চানন্দী ইউনিয়নের ঢোল প্রতীকের আমিরুল ইসলাম শামীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আমাকে বিভিন্ন বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। যখন ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দেয়, তখন হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাদের এলাকায় এসে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে ১৫ তারিখের পর এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হবে বলে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভোটাররা এখন আতংকিত।
‘তাই বহিরাগতদের বের করে দিয়ে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তা ছাড়া নৌকার প্রার্থী (আজহার উদ্দিন) রঙিন ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে ভোটের প্রচার চালাচ্ছে। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই।’
প্রতিপক্ষের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আজহার উদ্দিন বলছেন, নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর এ অভিযোগ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘হাতিয়া থেকে আমার প্রচারে অংশ নিতে আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খিরা আসতেই পারেন। তারা তো অন্য উপজেলা থেকে আসেনি। ওরা নালিশ পার্টি। আজেবাজে কথা বলে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
হরনি ইউনিয়নের ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মুসফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছুদিন আগে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু গত চারদিন থেকে বর্তমান এমপি সাহেবের স্বামী নির্বাচনি এলাকায় প্রচুর বহিরাগত লোকজন সমাগম করছেন।
‘তারা আমার নির্বাচনি অফিস বন্ধ করে দেয়। আমি নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি ওসি সাহেবকে তদন্ত করতে বলেন। কিন্তু ওসি সাহেব কোনো ব্যবস্থা নেননি। আজ পর্যন্ত আমার অফিস বন্ধ রয়েছে। তারা প্রকাশ্যে বলছেন, আঙ্গুলের টিপ দিলেই ভোট নিয়ে নিবে।’
স্বতন্ত্র এ প্রার্থী ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়েই এসব অভিযোগ তুলছেন বলে দাবি করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী ও ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতার হোসেন। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হেরে যাওয়ার ভয়ে অযথা অভিযোগ করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে এসব কথা বলছে। এগুলো বাজে কথা, নোংরা কথা। আপনারা দেখেন কোনো বহিরাগত আছে কি না। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনের সামনে বিষের বোতল আর কাফনের কাপড় নিয়ে গেছে, তাদের অভিযোগ তো আর বাকি নাই।’
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে প্রার্থীরা অনেকেই অনেক কথা বলেন, কিন্তু আমরা সবকিছুর বাস্তবতা পাই না। দলের সিনিয়র নেতা বা চেয়ারম্যানরা নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারে, আচরণবিধিতে কোনো বাধা নাই।
‘তবে কেউ যদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে, তাহলে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নজরদারি করছেন।’
এলাকায় বহিরাগত আসার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেছে পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনি এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যাদের সন্দেহ হচ্ছে, তারা এই এলাকার কি না জিজ্ঞাসাবাদ করছি। বহিরাগত আসার কোনো সুযোগ নাই।
‘আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি, তবে মৌখিক অভিযোগ পাচ্ছি। যখন যে অভিযোগ পাচ্ছি আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন:সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২৮৮ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে কক্সবজার ইনানী নৌবাহিনী জেটি ঘাটে নেয়া হয় তাদের। সেখানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গত ১১ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি ও আশারতলী সীমান্তে দিয়ে প্রথম দফায় ১৭৯ জন মিয়ানমারের বিজিপির সদস্য আশ্রয় নেন। পরে কয়েক দফায় ঘুমধুম, তুমর্রু ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে দিয়ে মোট ২৮৮ জন মিয়ারমারের সেনা ও বিজিপির সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি ও সেনা সদস্যদেরকে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তাদের সে দেশের নৌবাহিনীর জাহাজে করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল।
ছিয়াত্তর বছর বয়সী আবদুর রহিম স্ত্রীকে হারিয়েছেন দেড় যুগ আগে। পরিবারের সদস্য বলতে এক ছেলে, তাও থাকেন প্রবাসে। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর অন্য ঘরে চলে গেছেন ছেলের বৌও। তাই রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয় নিজেকে।
জীবন যুদ্ধে তিনি কখনও দমে যাননি, তবে এবার হার মেনেছেন টিউবওয়েলের পানির কাছে। ১৫ থেকে ১৬ বার টিউবওয়েল চাপার পরেও মিলছে না এক গ্লাস পানি। তাই পানি সংকটের কারণে গোসল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সব কাজ হচ্ছে ব্যাহত।
তাই অধিকাংশ সময় বাড়ির পাশে থাকা মসজিদে গিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছেন আবদুর রহিম।
এদিকে গৃহবধূ ছানোয়ারা খাতুন গৃহস্থালির সব কাজ করেন একাই। বাড়িতে রয়েছে তিনটি গাভি ও চারটি ছাগল। এর মধ্যেই আজ সপ্তাহ দুয়েক ধরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। খাওয়া থেকে ওজু, গোসল সব কিছুতেই বেগ পেতে হচ্ছে পানি সংকটের কারণে।
ছানোয়ারা খাতুন জানান, তীব্র তাপদাহের মধ্যে আজ সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে থাকা গরুর গোসল করাতে পারেননি তিনি, তবে নিজে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসেন।
মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। বিশেষ করে মুজিবনগর উপজেলার, জয়পুর, আমদহ, তারানগর, বিশ্বনাথপুর; সদর উপজেলার শালিকা, আশরাফপুর, আমদাহ, বুড়িপোতা, আলমপুর এবং গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, মিনাপাড়া, ভোলাডাঙ্গা, কুমারীডাঙ্গা কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা।
গ্রামবাসীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও এই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হস্তচালিত অনেক টিউবওয়েল। যেখানে আগে ভূগর্ভের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরতা থেকেই পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ২ হাজার ২৩৯টি।
গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক মতিন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা দিয়ে বেড়াই। আজ ১০ দিন ধরে আমার বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। রোদের মধ্যে সারা দিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাড়ি এসে যদি পানি না পাই তাহলে কেমন লাগে? আমি তাই মসজিদের নলকূপে গিয়ে গোসল সেরে আসি।’
একই এলাকার দিনমজুর সিরাজ বলেন, ‘আমি সারা দিন মাঠে কাজ করি। বাড়িতে দুটি গরুও পালন করি অথচ গরু দুটি আজ কয়দিন গা ধোয়াতে পারিনি। আবার মাঠে এক বিঘা ধানের আবাদ আছে, তাতে সেচ দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে। যেখানে দুই ঘণ্টা মেশিনে পানি দিলে হয়ে যেতো। সেখানে এখন চারটা ঘণ্টা পানি দিয়েও হচ্ছে না।’
এ অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত আজকে বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’
মেহেরপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, সুপেয় পানির সমস্যা নিরূপণে যেসব এলাকায় সংকট সেখানে ১০টি বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি ৯০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব এলাকায় ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, তবে অতিবৃষ্টি ও পানির অপচয় রোধ করা না গেলে পানি সংকটের সমাধান মিলবে না।
আরও পড়ুন:নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের বোদা-দেবীগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রলির (ট্রাক্টর) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পথচারী নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার জন।
বুধবার সকালে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কলাপাড়া নামক স্থানে মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- বোদা পৌরসভার সদ্দারপাড়া গ্রামের সাফিরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়সী নুরজাহান ও একই উপজেলার মাজগ্রাম এলাকার মানিক ইসলামের ছেলে ২৫ বছর বয়সী জাহিদ ইসলাম।
বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক দুজনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেবীগঞ্জ থেকে পঞ্চগড়গামী একটি দ্রুতগামী ট্রাক ও বিপরীতমুখী একটি ট্রলির সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা এক পথচারী নারীকে গাড়িদুটি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনায় ট্রলির চালক জাহিদও ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মন্তব্য