× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Padma Bridge is a symbol of honesty Revenge of insult Abul Hossain
google_news print-icon

পদ্মা সেতু সততার প্রতীক, অপমানের প্রতিশোধ: আবুল হোসেন

পদ্মা সেতু
দেশের গণমাধ্যম পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অসত্য ও ভুয়া খবরকে উপজীব্য করে আমার বিরুদ্ধে ঢালাও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বেনামী চিঠির ভিত্তিতে বারবার একই বিষয়ে প্রতিবেদন করেছে। খবরের কাগজগুলোর রিপোর্টকে উপজীব্য করে টেলিভিশন টকশোতে বুদ্ধিজীবীরা অবিবেচকের মতো অশোভন কথা বলেছেন, শোনা কথার ওপর নির্ভর করে বিবেচনাহীনের মতো অসত্য কথাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় উপহার, শ্রেষ্ঠ উপহার।

পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমত্তা পদ্মা, কীর্তিনাশা পদ্মার ওপর সেতুর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার মানুষকে। দেশের মানুষকে। জনগণের মধ্যে পদ্মা সেতুর আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করেছিলেন। তিনি পদ্মা সেতু তৈরি করে মানুষের স্বপ্নকে পূরণ করলেন।

এ সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ার সূচনায় আমি সম্পৃক্ত থেকে যেভাবে কাজ করেছি, সে ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হতো, কিন্তু বিশ্বব্যাংকসহ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে তা ৯ বছর পিছিয়ে গেল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত আর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকারের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। প্রকৌশলগত এক বিস্ময়ের প্রতীক।

পদ্মা সেতু আমাদের সততার প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের অপমানের প্রতিশোধ। ষড়যন্ত্রের জবাব। পদ্মা সেতুর ফলে জাতির আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও সাহসের সোনালি ইতিহাস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে পদ্মা সেতুর মতো একটি কালজয়ী স্থাপনা আমাদের উপহার দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই।

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ শুধু ভিত্তিহীন ও বানোয়াটই ছিল না, তা ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত। যার ভিত্তি ছিল গালগল্প আর গুজব। এখানে বিন্দুমাত্র সত্য ছিল না, ছিল না কোনো বিবেচনাবোধ আর নৈতিকতা। আগাগোড়া ছিল পাশব নৃশংসতা।

যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি, কোনো চুক্তি সই হয়নি, কিংবা কোনো অর্থও ছাড় হয়নি, এই পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বিশ্বব্যাংকের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের একটি কূটকৌশলমাত্র। পরবর্তী সময়ে দুদকের তদন্ত এবং কানাডার আদালতের রায়ে আমাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলা হলে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ যে মনগড়া ও অসত্য তা প্রমাণ হয়। আমি প্রথম থেকে এ কথা বলে আসছিলাম।

ঘটনার সূত্র যেমন ভয়ানক, তেমনি স্বার্থান্ধ উন্মাদনায় ছিল ব্যাপক। বিশ্বব্যাংক যখন তাদের সমর্থিত ঠিকাদার নিয়োগে ব্যর্থ হয়, তখনই বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশল শুরু করে।

আমরা চেয়েছিলাম পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল আমাদের সরকারের মেয়াদকালের মধ্যে যাতে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হয়।

তৎকালীন বিশ্বব্যাংকের ঢাকাস্থ প্রতিনিধি গোল্ড স্টেইনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা এবং তার চালচলন, কর্মতৎপরতা থেকে বোঝা যায়, বিশ্বব্যাংক চায় না এ সরকারের আমলে পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হোক। তাই তারা ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ ও বিলম্বিত করার চেষ্টা করে, যাতে পরবর্তী সরকারের আমলে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়।

পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আমাকে বিতর্কে পড়তে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সে অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন প্রমাণ হয়। আসলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল একটি গালগল্প ও সম্পূর্ণ মনগড়া কথা। অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক কথা। একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের কথা।

এই ষড়যন্ত্র যখন চারদিকে ডালপালা মেলে, অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ যখন গোয়েবলসীয় কায়দায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তখন পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করি আমার দপ্তর পরিবর্তন করে দিতে।

প্রধানমন্ত্রী জানতেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ওই পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন। কারণ পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি, কোনো চুক্তি হয়নি, কোনো অর্থছাড় হয়নি, সে পর্যায়ে দুর্নীতির প্রশ্ন আসে কীভাবে?

পরের ইতিহাস সবার জানা। দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণ হয়। এ ক্ষেত্রে আমাকে নিয়ে যে বিতর্ক হয়, তার শেষ হয়। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। আমি যে পদ্মা সেতুর নির্মাণে কোনো অনিয়ম করিনি, আমি যে সৎ ও কাজে একনিষ্ঠ ছিলাম তা দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। তাই যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার প্রথম দিন থেকে আমি পদ্মা সেতু নির্মাণে মনোযোগী হই। পরামর্শ নিয়োগ প্রক্রিয়া, পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান, মূল সেতুর প্রাক-যোগ্য দরপত্র আহ্বান এবং সেতুর অর্থায়ন সংস্থা- বিশ্বব্যাংক, জাপানের জাইকা, ইসলামি উন্নয়ন সংস্থা এবং এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিই।

স্বল্প সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ করি। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ যাবতীয় কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসি। এমনকি প্রাকযোগ্য দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়াও শেষ করি। যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতি কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে মাত্র দুই বছরে আমরা পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ শেষ করেছি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হবে, এটাই ছিল আমার মূল টার্গেট এবং এ টার্গেট নিয়েই দ্রুততার সঙ্গে আমি কাজ এগিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলাম।

সব ডোনার এজেন্সির কো-অর্ডিনেটরের ভূমিকায় ছিল বিশ্বব্যাংক। তাই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজের প্রত্যেক পর্যায় অবলোকন ও অনুমোদন করে। পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগের প্রতিটি পর্যায় বিশ্বব্যাংকের অনুমোদনে অগ্রসর হয়।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি ঠিকাদার নিয়োগ ও কনসালট্যান্ট নিয়োগের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু প্রাক-যোগ্য ঠিকাদার নির্বাচনের একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক, কারিগরি কমিটিকে একটি প্রাক-যোগ্য কোয়ালিফায়েড ঠিকাদারকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত থাকার কারণে বাদ দিতে বলে এবং একটি প্রাক-যোগ্যতায় ডিসকোয়ালিফায়েড ঠিকাদারকে কোয়ালিফায়েড করতে বলে।

কারিগরি কমিটি প্রাক-যোগ্য কোয়ালিফায়েড দরদাতাকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে বাদ দেয়, কিন্তু প্রাক-যোগ্য ডিসকোলিফায়েড দরদাতাকে অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট দেয়ায় কোয়ালিফায়েড করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক প্রাক-যোগ্য ডিসকোয়ালিফায়েড দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কোয়ালিফায়েড করার লক্ষ্যে তার অনুকূলে বারবার কোয়ারি করে।

প্রাক-যোগ্য ডিসকোয়ালিফায়েড দরদাতাকে কোয়ালিফায়েড করতে কারিগরি কমিটি সম্মত হলো না। হওয়ার কোনো ন্যূনতম কারণও ছিল না। এরপরই তারা পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে এবং নানা কর্নার থেকে অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করে। উদ্দেশ্য, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বিলম্বিত করা।

বিশ্বব্যাংক সোজা পথে তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে না পেরে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার নানামুখী অসৎ কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নেয়। আমার বিরুদ্ধে দেশে নানা প্রপাগান্ডা শুরু করে। প্রাক-যোগ্য দরদাতা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট দিয়ে, স্থানীয় পত্রিকাকে প্রভাবিত করে, ভুয়া অভিযোগ দাঁড় করায় এবং পত্রিকায় প্রকাশ করে।

যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস মেরামত ও গাড়ি ক্রয়, কালকিনিতে ট্যাক্স প্রদত্ত অর্থে নির্মিত বাড়ি নিয়ে, সড়ক দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে, ১/১১-এর বিভীষিকাময় দিনে অন্যায়ভাবে দুর্নীতিবাজ বানানোর কথা একাধারে নিউজ করায়।

এসব পত্রিকার পেপার কাটিং বিশ্বব্যাংকে পাঠানো হয় ইংরেজি অনুবাদ করে। এভাবে বিশ্বব্যাংক পত্রিকার তথাকথিত অসত্য ও ভিত্তিহীন রিপোর্টের ভিত্তিতে আমার ব্যক্তিগত ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং সে আলোকে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের প্রতিনিধি গোল্ড স্টেইন আমাকে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম ধীরগতিতে এগিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুর সমন্বয়ক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনৈক বিহারি এই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্ট ছিল বলে আমার মনে হয়েছে।

আমি যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে সরে আসার পরও বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে এগিয়ে আসেনি। বিশ্বব্যাংক আমাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার জন্য সরকারের ওপর অন্যায় চাপ দেয়। পদ্মা সেতুতে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এনে নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল চেয়ারম্যান আইনজ্ঞ লুইস মোরেনো ওকাম্পোকে ঢাকায় পাঠায়। ওকাম্পো ঢাকায় এসে প্রথমেই কাদের সঙ্গে, কোন কোন সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তা গণমাধ্যম জানে।

ওকাম্পোর লম্ফঝম্ফ গণমাধ্যম দেখেছে, দেশবাসী দেখেছে। দুদকের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ওকাম্পো আমার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে কোনো দুর্নীতি প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব এবং আমাকে অ্যারেস্ট করার কথা বলেন। আমাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু দুদকের তদন্ত এবং পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে আমার কোনো অনিয়ম না থাকায়, বিশ্বব্যাংক তার অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে না পারায় তারা আমার প্রতি কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ পায়নি।

সার্বিক বিবেচনায়, দেশের স্বার্থে, পদ্মা সেতুর স্বার্থে আমি নিজেই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করি। তারপরও বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।

পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করা ছিল বিশ্বব্যাংকের একটি চরম ভুল সিদ্ধান্ত। শুধু ভুল নয়, বোকামিও বটে। এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্পে অর্থায়নের সুযোগ হারাল।

বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় আলোচনা না করে এবং বোর্ড সভার অনুমোদন না নিয়েই নিজ উদ্যোগে কারও অন্যায্য নির্দেশে প্রভাবিত হয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেন। বিশ্বব্যাংকের অধিকাংশ কর্মকর্তাই অর্থায়ন স্থগিতের বিষয় সমর্থন করেননি। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিকের সঙ্গে চায়নায় বোয়াও ফোরামে এক অনুষ্ঠানে আমার সাক্ষাৎ ও পরিচয় হয়। তখন তিনি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।

তখন আমি নিশ্চিত হই যে তিনি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন অনৈতিক কাজ করেছেন। রবার্ট জোয়েলিকের মতো বিশ্বব্যাংকের হাতে গোনা কিছু কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু অর্থায়ন না করার দায় বিশ্বব্যাংককে নিতে হলো। আমি মনে করি, বিশ্বব্যাংক সৃষ্টির পর থেকে আরও ১০০ বছরেও পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ বিশ্বব্যাংক পাবে না।

বিশ্বব্যাংকের সেই রবার্ট জোয়েলিক এখন কোথায়? গোল্ড স্টেইন এখন কোথায়? সেই লুইস ওকাম্পো কোথায়? ওকাম্পো দুর্নীতিবাজ হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছে। এ খবর দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ ওকাম্পো বাংলাদেশে এসে সততার নাটক করেছেন।

মূলত বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান লুইস মোরেনো ওকাম্পোর নেতিবাচক রিপোর্টে বাংলাদেশের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যায়। অথচ ওকাম্পো আজ বিশ্বের বড় দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত। ওকাম্পোর দুর্নীতির চল্লিশ হাজার নথি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

ওকাম্পোর নেতিবাচক রিপোর্ট পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশকে বিতর্কিত ও সমালোচিত করেছে। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই দুর্নীতিবাজ ওকাম্পোর পরামর্শেই বিশ্বব্যাংক গ্লোবাল সার্চ করে আমার সম্পর্কে কোনো অনিয়ম পায়নি। বিশ্বব্যাংক আজ পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করতে না পেরে বিশ্বব্যাপী লজ্জিত। আমার কাছে অনুতপ্ত।

সেই উদ্ধতবাদী ওকাম্পো আজ বিশ্বব্যাপী নিন্দিত ও বিতর্কিত। তার সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বৈঠক করে তার অপচেষ্টার সাথি হয়েছিলেন। দুদকের তৎকালীন একজন কমিশনার মিডিয়ায় একাধিকবার এ কথা প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আজ সত্য প্রকাশিত হয়েছে। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি।

ওকাম্পোর রিপোর্টে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যায়। ঠুনকো অজুহাতে বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। পদ্মা সেতুর স্বার্থে আমি পদত্যাগ করার পরও বিশ্বব্যাংক ঋণ দিতে এগিয়ে আসেনি। এটা প্রমাণ করে- বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতুতে ঋণ দেয়নি। প্রস্তুতিপর্বে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা ছিল অমূলক, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, বায়বীয় এবং উদ্দেশ্যমূলক। পরবর্তী সময়ে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের বাংলাদেশের আদালত নির্দোষ বলে রায় দেয়। কানাডার আদালতে একই অভিযোগের মামলায় প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে রায় দেয়, গালগল্প বলে রায় দেয়।

আমি কোনো অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে কখনও আপস করিনি। বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল সার্চ ও দুদকের নিবিড় তদন্তে আমার সম্পর্কে কোনো অনিয়ম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পদ্মা সেতুর কোনো প্ল্যান ছিল না, চূড়ান্ত ডিজাইন ছিল না। অর্থের সংস্থান ছিল না। কোনো দাতা সংস্থার কমিটমেন্ট ছিল না। দুই বছরে প্রস্তুতিকাজ সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগও চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলাম। সেই ঠিকাদারই এখন পদ্মা সেতু তৈরি করছে।

পদ্মা সেতুর কাজ যেভাবে আমি এগিয়ে নিয়েছিলাম তাতে সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালু হতো। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের প্রস্তুতিকাজ করতে যেখানে ১০ বছর লেগেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদ্মা সেতুর সে পর্যায়ের কাজ আমি দুই বছরে শেষ করেছি। বিশ্বব্যাংক ও দেশীয় স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে ২০১৩ সালে পদ্মা সেতুর চালু হওয়া বন্ধ করেছে। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়নে এটি একটি বিরাট বাধা হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।

প্রশ্ন আসতে পারে বিশ্বব্যাংক কী অভিপ্রায়ে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল।পদ্মা সেতু বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতু। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের এক প্রাণশক্তি। উন্নয়নের অন্যতম সিঁড়ি। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক, জাপানের জাইকা, এডিবি ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নের অঙ্গীকার পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় বিশ্বব্যাংক। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি কার্যক্রম দুই বছরে শেষ করি। প্রতি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদনে, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি ঠিকাদারদের প্রাকযোগ্যতা নির্বাচন (প্রি-কোয়ালিফিকেশন) নিয়োগ, কনসালট্যান্ট নিয়োগের কার্যক্রমের ধাপ অতিক্রম করেছিল।

আমি আগেই বলেছি, ঠিকাদারের প্রাক-যোগ্যতা বাছাইয়ের একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক কারিগরি কমিটিকে একটি প্রাক-যোগ্য কোয়ালিফায়েড দরদাতা চায়না কনস্ট্রাকশন কমিউনিকেশন কোম্পানিকে (সিসিসি) বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে বাদ দিতে বলে এবং প্রি-কোয়ালিফিকেশন স্টেজে একটি ডিসকোয়ালিফায়েড দরদাতা চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে (সিআরসিসি) কোয়ালিফাই করতে বলে।

কারিগরি কমিটি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে প্রাক-যোগ্য কোয়ালিফায়েড দরদাতাকে বাদ দেয়। কিন্তু প্রাক-যোগ্য নির্বাচনে ডিসকোয়ালিফায়েড দরদাতাকে কোয়ালিফাই করতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ, প্রাক-যোগ্য ডিসকোয়ালিফায়েড দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট প্রদান করেছিল।

কারিগরি কমিটি বিশ্বব্যাংককে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। ফলে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক কারিগরি কমিটির কাছে একাধিকবার নানা কোয়ারি করে এবং প্রতিবার কারিগরি কমিটি বিশ্বব্যাংককে তাদের মতামত যুক্তিসহ প্রেরণ করে। ফলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের ঘাপলা বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হলে এবং বিশ্বব্যাংক এ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তদবিরকৃত প্রাক-যোগ্য ডিসকোয়ালিফায়েড দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রি-কোয়ালিফিকেশন প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।

পরবর্তীকালে নানা অজুহাতে বিশ্বব্যাংক ঠিকাদার প্রি-কোয়ালিফিকেশন নির্বাচনের অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে। এ সময় স্থানীয় পত্রিকা আমার কতগুলো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অসত্য রিপোর্ট করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের প্রাক-যোগ্য নির্বাচনে ডিসকোয়ালিফায়েড দরদাতা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি পত্রিকার কাটিং অন্তর্ভুক্ত করে আমার বিরুদ্ধে বেনামী দরখাস্ত বিভিন্ন জায়গায় পাঠায় এবং তাও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মূলত বিশ্বব্যাংক নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়ে অর্থাৎ প্রাক-যোগ্য নির্বাচনে ডিসকোয়ালিফায়েড দরদাতাকে নিয়োগ দিতে না পারার কারণে পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ আনে।

পরবর্তী সময়ে দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ে বিশ্বব্যাংকের নানা অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়।

বিশ্বব্যাংক বলেছিল, আমি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদ থেকে সরে গেলে সেতুর কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু আমি সরে গেলেও স্থগিত কার্যক্রম তারা আর শুরু করেনি। এটা ছিল একটা ষড়যন্ত্র। সরকার তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে দুর্বল করার একটি পদক্ষেপ।

বিশ্বব্যাংক যখন তাদের সমর্থিত ঠিকাদারকে প্রি-কোয়ালিফায়েড করতে ব্যর্থ হয়, তখনই পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এই অবৈধ কার্যক্রমকে আড়াল করার জন্য আমার বিরুদ্ধে প্রাক-যোগ্য নির্বাচনে ডিসকোয়ালিফায়েড ঠিকাদারের স্থানীয় এজেন্ট দিয়ে ভুয়া বেনামী অভিযোগপত্র প্রদান শুরু করে এবং এসব ভুয়া অভিযোগ পত্রিকায় প্রকাশে প্রভাব বিস্তার করে।

অনেক নামীদামি পত্রিকাও বিশ্বব্যাংকের এ ষড়যন্ত্র বুঝে হোক, আর না বুঝে হোক, তাতে হাত মিলায় এবং এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে যেন পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বিলম্বিত হয়।

বিশ্বব্যাংক তাদের ষড়যন্ত্রকে কাজে লাগানোর জন্য পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনৈক বিহারিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করে। ফলে আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, পদ্মা সেতু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছে। একপর্যায়ে ঠিকাদার নিয়োগে প্রি-কোয়ালিফিকেশন কোনো ত্রুটি বা অনিয়ম প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বব্যাংক আমাকে টার্গেট করে এবং আমি সরে গেলেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে, সেতুর কাজ চালিয়ে যাবে, এমন কথা বলতে থাকে। কিন্তু আমি জানতাম, এটা তারা করবে না। কারণ, তৎকালীন ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি গোল্ড স্টেইনের কথায় ও আচরণে পদ্মা সেতু বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা লক্ষণীয় ছিল। পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে আমি মন্ত্রিসভা থেকে একপর্যায়ে পদত্যাগ করি। এরপরও বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন কার্যক্রম শুরু করেনি। এটা ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।

কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়। আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমার কথাই প্রতিষ্ঠিত হয়। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে পরিকল্পিত স্ক্যান্ডাল নিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকার কাটিং এবং কিছু টেলিফোনের কথোপকথন আদালতে জমা দেয়া হয়েছিল। কানাডার পুলিশ দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রমাণ বা কারও সম্পৃক্ততা পায়নি। ফলে বিষয়টি আদালতের কাছে একটি গালগল্প স্টোরি ছাড়া কিছুই প্রতীয়মান হয়নি।

বিচারক রায়ে এসব টেলিফোনিক কলকে গালগল্প বলে খারিজ করে দেন। বাংলাদেশে দুদকও পদ্মা সেতুর বিষয়টি নিয়ে নিবিড় তদন্ত করে। আমি দুদকের ডাকে দুদক অফিসে যাই এবং জিজ্ঞাসিত বিষয়ে উত্তর দিই। দুদকের তদন্তেও আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই।

এ প্রসঙ্গে স্যার হেনরি ওটনের একটি উক্তি আমার মনে পড়ে, ‘সমালোচনা হচ্ছে মহৎ লোকের পোশাক পরিষ্কার করার ব্রাশ।‘ পৃথিবীর যেখানেই আমি যাই, সেখানেই আমি এখন সম্মানিত হই। কারণ, দেশের দুদক ছাড়াও কানাডার আদালত আমাকে নির্দোষ বলে পরিষ্কার রায় দিয়েছে।

অসত্য বক্তব্য শেষ পর্যন্ত অসাড় প্রমাণিত হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে এ মিথ্যা অভিযোগ, পত্রিকার রিপোর্টে আমার ব্যক্তিগত সুনামের যে ক্ষতি হয়েছে, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ বিলম্বিত হয়েছে এবং এর ব্যয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এ ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে। দেশের কতিপয় পত্রিকা সব জেনেশুনে যে অসত্য ও ভিত্তিহীন অপবাদ আমাকে দিল, দেশের যে ক্ষতি করল- এর দায় কি তারা নিতে পারবে? আমার সুনাম কি তারা ফিরিয়ে দিতে পারবে?

জাপানি অর্থায়নে জাপানি কনসালট্যান্ট ফিজিবিলিটি স্টাডির রিপোর্টে প্রথমে পদ্মা সেতুতে সিঙ্গেল ডেকার সেতুর প্রস্তাব করেছিল। সিঙ্গেল ডেকার মানে মাঝখানে রেল যাবে এবং দুই পাশ দিয়ে গাড়ি যাবে। সিঙ্গেল ডেকার সেতু নির্মাণে সময় বেশি লাগে এবং ব্যয়ও বেশি হয়। আমি ডিজাইন কনসালট্যান্ট মনসেল এইকমের কাছে ডাবল ডেকার সেতু নির্মাণের প্রস্তাব রাখি। আমি চায়নায় সিঙ্গেল ডেকার নির্মিত বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু ড্যানইয়াং কুনসান মহাসেতু, বেইজিংয়ের তিয়ানজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ, উইনান উইহে গ্র্যান্ড ব্রিজ, বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ, বেইজিং তিয়ানজিন ব্রিজ, হ্যাংজো বে ব্রিজ ও রান ইয়াং ব্রিজ পরিদর্শন করেছি।

হ্যাং জো বে ব্রিজ (Hangzhou Bay Bridge), কানেকটিং-নিংবো (Shanghai and Ningbo) ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ পর্যায় থেকে কয়েকবার পরিদর্শন করি। ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সাংহাই ইস্ট সি ব্রিজ (Shanghai East Sea Bridge) কানেকটিং ডিপ সি পোর্টও আমি পরিদর্শন করেছি। হংকং-ঝুহাই-মাকাও ব্রিজ (Hongkong-Zhuhai-Macau Bridge) যা সমুদ্রপৃষ্ঠে ১৬ কিলোমিটার এবং সমুদ্র ভূগর্ভস্থ ৩৯ কিলোমিটার সর্বমোট ৫৫ কিলোমিটার সেতুও আমি দেখেছি।

চায়না ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ডাবল ডেকার সেতুও আমি দেখেছি। আমি চীনের বিভিন্ন প্রদেশে বেশ কিছু ডাবল ডেকার ব্রিজ পরিদর্শন করেছি এবং নির্মাণ পর্যায় থেকে অবলোকন করেছি। আমি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ডাবল ডেকার সেতু চীনের ইয়াংসিগাং (Yangsigang Yangtze), সাংহাই-এর মিনপু ব্রিজ (Minpu Bridge), জিয়াংসু প্রদেশে ওউফেনজ্যাশন ব্রিজ (Wufengshan Bridge, Jiangsu Province) এবং টেনসিংজো ব্রিজ (Tianxingzhan Yangtze River Bridge, Jiangan District, Wuhan) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে বেনপো ব্রিজ (Banpi Bridge, Seoul, South Korea) পরিদর্শন করি।

এসব ব্রিজ পরিদর্শন করে ডাবল ডেকার ব্রিজ সম্পর্কে আমি সম্যক ধারণা লাভ করি। ডাবল ডেকার সেতু হলো- দোতলা সেতু। ওপর দিয়ে গাড়ি যাবে এবং নিচ দিয়ে রেল যাবে। এ ধরনের ব্রিজ তৈরিতে সময় কম লাগে, দ্রুত শেষ করা যায়। কারণ, সেতুর অধিকাংশ কাজ দরদাতা নিজ ফ্যাক্টরি থেকে স্টিল স্ট্রাকচার তৈরি করে এনে শুধু সেতুতে সংযোজন করেন।

এসব ডাবল ডেকার ব্রিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি কনসালট্যান্ট ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল থেকে ট্রান্সপোর্ট মিনিস্টার্স কনফারেন্সে অংশগ্রহণ শেষে আসার পথে হংকংয়ে মনসেল এইকমের অফিসে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করি। আমার এ অভিজ্ঞতা কনসালট্যান্ট যথার্থ বলে মনে করেন এবং সে অনুযায়ী ড্রয়িং ও ডিজাইন করেন। পুরো বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপস্থাপিত হলে তিনি তা অনুমোদন করেন। বর্তমানে পদ্মা সেতু ডাবল ডেকারে নির্মিত হয়েছে।

পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ করতে গিয়ে আমি জাপান গৃহীত ডিজাইন দেখেছি। আমি কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোক নই; আমি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করিনি, লেখাপড়া করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনুসন্ধানী মন এবং জানার আগ্রহ নিয়ে আমি বিশ্বের বড় বড় সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছি। এমনকি আমি নর্থ আমেরিকার সেনটিনিয়াল পানামা ব্রিজ সম্পর্কেও খোঁজখবর নিয়েছি। এটি প্যান-আমেরিকান হাইওয়ে ক্যারিয়ার হিসেবে প্রতিস্থাপনের জন্য নির্মিত হয়েছিল, যা ২০০৪ সালে চালু করা হয়।

চায়নার থ্রি গরজেস প্রকল্প একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। ৩০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারে নির্মিত এ ব্রিজ আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশের প্রকৌশলীরা পরিদর্শন করেছেন শুনেছি, একবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার সম্মেলন শেষে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে আমি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্মাণ এ প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছি।

আমি আগেই বলেছি, চীনের বেশ কয়েকটি সিঙ্গেল ডেকার ব্রিজ পরিদর্শন করেছি। চীনের ডাবল-ডেকার ব্রিজ- ইয়াংসিগাং ব্রিজ, মিনপু সেতু, ওউফেলজ্যাশন সেতু এবং টেনসিংজা সেতু আমি দেখেছি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ডাবল-ডেকার ব্রিজ বেনপো সেতুও আমি দেখেছি।

এসব থেকে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। তার আলোকে কারিগরি কমিটিকে ডিজাইনে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা ভাবতে অনুরোধ করেছিলাম। এই ডিজাইনের বিষয়ে আমি প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রফিক সাহেবকে নিয়ে ডিজাইন কনসালট্যান্ট মনসেল এইকম-এর সঙ্গে বসেছিলাম। তাদের সঙ্গে আমার ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। হংকংয়ে গিয়ে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে মিটিংও করেছি। সেতু দ্রুত বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েও তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ডাবল ডেকার ব্রিজ স্টিল স্ট্রাকচারের বিষয়ে কথা বলেছি। উহানের আদলে এ ধারণা নিলে ৩ বছরে পদ্মা সেতু করা সম্ভব তাও তাদের বলেছি।

ডিজাইন প্রতিষ্ঠান মনসেল-এইকম একজন চায়নিজ বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক, যিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ডিজাইনার, তাকে দিয়ে ডিজাইন তৈরি করাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা উপস্থাপিত হয় এবং তা তিনি অনুমোদন করেন।

আমি প্রস্তাব রেখেছিলাম, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন এমনভাবে করতে হবে, যাতে করে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলেও ব্রিজের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। এ ক্ষেত্রে জাপানি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে অনুরোধ করি। কারণ, জাপানিরা ভূমিকম্পসহনীয় ডিজাইন এক্সপার্ট।

আমি তখন অভিজ্ঞতার আলোকে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে বলেছিলাম, পদ্মা সেতুর পাইলিং করতে গিয়ে যদি শক্ত মাটি পাওয়া না যায়, নরম মাটির স্তর আসে, তাহলে কনক্রিট ফাউন্ডেশন দেয়ার বিধান রাখতে, অর্থাৎ নরম মাটি এলে তা কেমিক্যাল দিয়ে কংক্রিটে রূপান্তর করা সম্ভব। চায়নার উদাহরণও আমি দেখিয়েছি।

আমি এ ক্ষেত্রে Three Gorges Dam project on Yangtze River, Xiaolangdi Project on yellow River, Baoshan Steel Inc., Shanghai, Metro line, Shanghai, Shanghai Plaza Project, Shanghai Out – Huangpur Tunnel, Shanghai – Honk Kong New World Plaza, Xiang’an Subsea Tunnel, Xiamen এবংs Wicheng Road, Wuxi, China-তে আমার দেখা ও জানার অভিজ্ঞতার কথা তাকে বলেছি।

আমি আরও বলেছি, পাইলিং করতে গিয়ে মাটির গভীরে গ্যাস পাওয়া গেলেও ফাউন্ডেশন করা সম্ভব, এ বিষয়টি আমি চায়নার একটি টিভি চ্যানেলে সবিস্তারে দেখেছি। এ উদাহরণ চায়নায় রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এলে কাজ যাতে বিলম্বিত না হয়, ব্যয় না বাড়ে- এ শর্ত রাখতে আমি কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে অনুরোধ করেছিলাম এবং চুক্তির আগে চায়নায় গিয়ে সরেজমিনে দেখতে বলেছিলাম।

এ ক্ষেত্রে ভ্যারিয়েশনের পরিবর্তে লামসাম চুক্তির প্রভিশন রাখতে বলেছিলাম, যাতে পরবর্তীকালে সেতু নির্মাণের ব্যয় না বাড়ে, কিন্তু অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী আমার মতামতের গুরুত্ব বিবেচনায় নেননি।

আমার আশঙ্কা অনুযায়ী নির্মাণ পর্যায়ে যখন দেখা গেল মাটির তলদেশে শক্ত মাটি নেই, তরল মাটি যা পাইলিংয়ের উপযুক্ত নয়। এ ক্ষেত্রে কী করণীয় সে ব্যাপারে কোরিয়ান সুপারভিশন কনসালট্যান্ট তখন পর্যন্ত ছিল অনভিজ্ঞ। তখন বর্তমান ঠিকাদার, যারা নির্মাণকাজে অভিজ্ঞ, তারা কেমিক্যাল ব্যবহার করে মাটি শক্ত করে পাইলিং করার পরামর্শ দেয়।

আমি শুনেছি তারা ছয়টির পরিবর্তে আটটি পাইলের প্রস্তাব করেছিল। তাদের এ পরামর্শ আমার আগের পরামর্শের সঙ্গে ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ, কিন্তু কোরিয়ান কনসালট্যান্ট বিডারের এ কথা শোনেননি। কনসালট্যান্ট গবেষণার নামে দুই বছর সময় ক্ষেপণ করল। শেষ পর্যন্ত মনসেল-এইকমের ডিজাইনার আমাকে যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেই পরামর্শ অনুযায়ীই বর্তমানে স্ক্রিন গ্রাউটিং পদ্ধতিতে কেমিক্যাল ব্যবহারের পথ বেছে নিল। ছয়টি পাইলের পরিবর্তে সাতটি পাইল ব্যবহার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, একজন বিডারকে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বাদ দিয়ে পদ্মা সেতুর ঠিকাদার, আমার রেখে যাওয়া প্রি-কোয়ালিফায়েড বিডারদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হলো, কিন্তু সুপারভিশন কনসালট্যান্ট নিয়োগে নতুনভাবে প্রি-কোয়ালিফিকেশন আহ্বান করা হলো। অথচ এসএনসি-লাভালিনকে বাদ দিয়ে অন্যদের মধ্য থেকে সুপারভিশন কনসালট্যান্ট নির্বাচন করা সমীচীন ছিল।

নতুনভাবে প্রি-কোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বানের ফলে কোরিয়ার মতো তুলনামূলকভাবে অনভিজ্ঞ সুপারভিশন কনসালট্যান্ট নিয়োগ পেল। নতুন প্রি-কোয়ালিফায়েড টেন্ডার আহ্বান না করে আগের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন প্রি-কোয়ালিফায়েড বিডার মনসেল-এইকম নির্বাচিত হলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদার নিয়োগে এক নীতি এবং সুপারভিশন কনসালট্যান্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্য নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে সময়ক্ষেপণ ও নির্মাণ ব্যয় দুটোই বেড়ে গেছে।

আমার আশঙ্কা সত্য হলো, যখন নির্মাণ পর্যায়ে দেখা গেল নদীর তলদেশে শক্ত মাটি নেই, আছে তরল কাদা যা পাইলিংয়ের উপযুক্ত নয়। তখন বর্তমান ঠিকাদার, যারা নির্মাণকাজে অভিজ্ঞ, তারা কেমিক্যাল ব্যবহার করে মাটি শক্ত করে পাইলিং করার পরামর্শ দেয়। তাদের এ পরামর্শ আমার আগের পরামর্শের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ছিল। কিন্তু অনভিজ্ঞ কনসালট্যান্ট সে পথে না গিয়ে গবেষণার নামে দুই বছর সময়ক্ষেপণ করল। ঠিকাদারের সেই পরামর্শ অনুযায়ীই বর্তমানে স্ক্রিন গ্রাউটিং পদ্ধতিতে কেমিক্যাল ব্যবহারের পথ বেছে নিল। ফলে সেতু নির্মাণে সময়ক্ষেপণ হলো, ব্যয়ও বেড়ে গেল অনেক।

নিজের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি, এটা গর্বের। তবে আমাদের যে এত অর্থ নেই, তাও ঠিক। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য আমাদের অনেক বিনিয়োগ রিশিডিউল করতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে গেলে আমার পরিকল্পনা ছিল ডিজাইন বিল্ট ফাইন্যান্সিংয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার। এ সম্পর্কিত সারসংক্ষেপ মাননীয় প্রধানন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করি। তিনি অনুমোদন দেন। তবে অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেন।

সে সময় পদ্মা সেতু ডিজাইন বিল্ট ফাইন্যান্সিংয় করা সম্ভব হলে সরকারি অর্থের ওপর চাপ পড়ত না। ডিজাইন বিল্ট ফাইন্যান্সিংয়ে গেলে খরচ কম হতো, কারণ এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করতে হতো না। আমরা বিডারস ফাইন্যান্সিং বা পিপিপিতে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে পারতাম।

দেশের গণমাধ্যম পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অসত্য ও ভুয়া খবরকে উপজীব্য করে আমার বিরুদ্ধে ঢালাও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বেনামী চিঠির ভিত্তিতে বারবার একই বিষয়ে প্রতিবেদন করেছে। চ্যানেলগুলোয় খবরের কাগজগুলোর রিপোর্টকে উপজীব্য করে টকশোতে বুদ্ধিজীবীরা অবিবেচকের মতো অশোভন কথা বলেছেন, শোনা কথার ওপর নির্ভর করে বিবেচনাহীনের মতো অসত্য কথাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

পত্রিকা প্রতিবেদন তৈরির সময় সত্য-মিথ্যা যাচাই করেনি। কীভাবে, সঠিক পথে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়েছে তা তারা জানারও চেষ্টা করেনি। এ বিষয়ে তাদের ন্যূনতম জ্ঞানও ছিল না। তবু এমনভাবে কথা বলেছে যেন তারা বিশেষজ্ঞ। আবার পত্রিকাগুলো কারিগরি কমিটির মূল্যায়নের অনিয়মের বিষয়েও কিছু বলেনি। বাতাসের ওপর ভর করে আমার বিরুদ্ধে নানা অসত্য রিপোর্টকে পুঁজি করে পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করেছে। নানা কারণে প্রভাবিত হয়ে বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রে হাত মেলাতে গিয়ে একবারও ভাবেনি পদ্মা সেতু দেশীয় সম্পদ। এর বাস্তবায়ন অসত্য ও ভিত্তিহীন অজুহাতে বাধাগ্রস্ত হলে দেশের ক্ষতি হবে।

অনেক সময় ভাবি, দেশের পত্রিকাগুলো কি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আপস করে, কিন্তু কেন? তারা এ দেশের সন্তান। তাহলে আমাকে অসত্য ও ভিত্তিহীন অজুহাতে নাজেহাল করতে গিয়ে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, এটা কি তারা বুঝতে অক্ষম ছিলেন?

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ের পর পত্রিকার তরফ থেকে সরাসরি দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি। তাদের কোনো লেখায়ও তা প্রতিফলিত হয়নি। তবে সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এক টকশোতে সবার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং পত্রিকার অসত্য রিপোর্টের ভিত্তিতে গভীর রাতে আলোচনাকারী বুদ্ধিজীবীদের বেশ কয়েকজন আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাজনীতিবিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আমার প্রতি অবিচারের জন্য সরকারের কাছে পুনরায় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছিলেন।

আমি প্রায় তিন বছর যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম। তিন বছর আমি প্রচুর পরিশ্রম করেছি। সরকারি প্রকল্পের জন্য প্রচুর বৈদেশিক সাহায্য মবিলাইজ করেছি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ এবং বর্তমান রেল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নে নানা কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন সেতু বিভাগের বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় করা ছাড়া কোনো কাজ ছিল না। আমি দায়িত্বে এসে সেতু বিভাগের কার্যক্রমে গতি সঞ্চার করি।

মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ঢাকা ও চট্টগ্রামে টানেল নির্মাণ, গুলিস্তান লেচু শাহের মাজার থেকে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্প গ্রহণ ও কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন শুরু করি।

আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্টেও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু এতদিনে বাস্তবায়িত হতো। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিডারস ফাইন্যান্সিংয়ে সেতু নির্মাণের সারসংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছিলেন। সড়ক বিভাগের অধীনে ১৬০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়, যার মধ্যে ৪৪টি অগ্রাধিকার প্রকল্প। অনুরূপভাবে রেলওয়ের উন্নয়নে ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর অনেকগুলোর কাজ বাস্তবায়নাধীন ছিল।

জোর দিয়ে বলতে পারি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি তিন বছরে যে কাজ করে দিয়ে এসেছি, যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছি, সেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে, সে কাজ ১০০ বছরের ভেতরে পাঁচ বছর মেয়াদি কোনো সরকার উদ্যোগ নিতে পারেনি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছি, বাস্তবায়ন করেছি তা হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক এবং একটি ঐতিহাসিক দলিল।

আমি যখন দেখি এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে, হচ্ছে, তখন খুব ভালো লাগে। ক্রমান্বয়ে আমার সময়ে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। দেশের জনগণ, ঢাকাবাসী শিগগিরই এসব প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবেন।

বিশ্বব্যাংক, দেশি-বিদেশি কিছু চক্র পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের শুরুতেই বাধার সৃষ্টি করে। এই গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে অসত্য প্রচারে লিপ্ত হয়। সংবাদপত্রসহ ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় তারা অসত্য ও ভিত্তিহীন প্রচার অব্যাহত রাখে। একসময় বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণদান স্থগিত ঘোষণা করে। এর ফলে অন্যান্য দাতাগোষ্ঠী যেমন জাইকা, আইডিবি, এডিবি তাদের ঋণদানও স্থগিত করে।

বস্তুত বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশ্য ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে যাতে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন না হয়। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে একদিকে যেমন দৃঢ় করে, অপরদিকে দাতাগোষ্ঠীকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে- আমরাও পারি। আমরাও কাজের মাধ্যমে অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারি। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। পদ্মা সেতু আমাদের অপমানের প্রতিশোধ। এই সেতু শুধু বাঙালি জাতির একটি স্বপ্ন নয়। কনক্রিটে মোড়ানো কোনো জড় বস্তু নয়, বাঙালি জাতির অস্তিত্ব, সততা, দৃঢ়তা, কষ্টসহিষ্ণুতা এবং বীরত্বের প্রতীক- অর্থনৈতিক অগ্রগতির সোপান, জিডিপি প্রবৃদ্ধির সহায়ক শক্তি।

পদ্মা সেতু ডিসেম্বর ২০১৩ সালে চালুর টার্গেট নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি, যাতে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নির্মাণের সাফল্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারে। কিন্তু কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এবং তাদের অপরাজনীতি প্রস্তুতিকাজের শুরুতেই ষড়যন্ত্র শুরু করে। ফলে বাঙালি জাতির স্বপ্নযাত্রা ব্যাহত হয়, সময়ক্ষেপণ হয় দীর্ঘ ৯ বছর।

এরপর পৃথিবীর বিচিত্র নদী পদ্মার প্রকৃতি, গতিপ্রবাহ এবং কোভিড-১৯-এর কারণে নির্মাণ প্রকৌশলীদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। স্বাভাবিক বাস্তবতায় সময়ক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় পদক্ষেপ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনেক ষড়যন্ত্র, সব বাধা, বৈরিতার মধ্যে পদ্মা সেতুর দ্বার আজ উন্মোচিত। সমগ্র জাতি আজ গর্বিত, আনন্দিত।

পদ্মা সেতু আমাদের অহংকারের প্রতীক। আমাদের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। বাংলাদেশের প্রকৌশলগত এক বিস্ময়ের প্রতীক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন। তাকে মোবারকবাদ জানাই। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় দলমত-নির্বিশেষে সবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

লেখক: সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, শিক্ষা উদ্যোক্তা ও লেখক।

আরও পড়ুন:
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে ইতিহাসের ‘সবচেয়ে উৎসবমুখর’ অনুষ্ঠান
পদ্মা সেতু চালুর পরও শিমুলিয়া নৌবন্দর থাকবে
পদ্মা সেতুর অপেক্ষায় মোংলা বন্দরও
পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তরও শেখ হাসিনার হাতে
শেখ হাসিনার হাতে পদ্মা সেতুর ভিত ২১ বছর আগে

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Wish was that the corpse returned home to be a judge

ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার, বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে

ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার, বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে ঢাবি ছাত্রী আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ছবি: সংগৃহীত
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে। এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।

গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। তার ইচ্ছা ছিল এলাকায় বিচারক হয়ে ফেরার; ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার। সে ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে সোমবার লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ ছাত্রী।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি ছাত্রীনিবাস থেকে রবিবার রাতে ঝুলন্ত অবস্থায় আনিকাকে উদ্ধার করে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।

আনিকার বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে। সেখানে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তার শতবর্ষী দাদা আলহাজ সোলাইমান আলী মণ্ডল হতভম্ব হয়ে এদিক-সেদিক দেখছেন। কান্না থামছিল না ফুফু আক্তার বানুর।

আনিকার এমন মৃত্যুতে বিস্মিত পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা চেয়েছেন ঘটনার রহস্য উদঘাটন।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে।

এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনে নওগাঁয় সম্মুখসারিতে ছিলেন আনিকা। পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলায় মাইক হাতে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে সড়কে দাঁড়ান তিনি।

সুষ্ঠু তদন্ত দাবি

পরিবারসহ এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আনিকার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হোক।

বকুল নামের একজন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‌‘আমি গিয়ে দেখি আনিকার মরদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছিল, কিন্তু অর্ধেক মেঝেতে লেগে ছিল। আমার জানা মতে একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।

‘আমরা ঢাকায় আছি। তার বাবা পাগল হয়ে গেছে। তবে আমরা যখন যাই, তখন দেখি লক ভাঙা ছিল। মনে হয় তাকে কেউ নামানোর চেষ্টা করেছিল।’

বুটেক্স ছাত্র আটক

আনিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) এক ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

বাহিনীর ধারণা, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ঢাবির এ ছাত্রী। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:
অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের
নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন
নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকা থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নওগাঁয় উদ্ধার
মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Dealership Agriculture Officer of the Seed Fertilizer by irregularities is a college lecturer

অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের

অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর ভবন। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়। সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

নওগাঁয় অনিয়ম করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিইসি) বীজ ও সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক ও কৃষি কর্মকর্তা। তাদের স্বজনদেরও একই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তারা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ অনুসারে, একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে অন্য কোথাও থেকে কোনো ধরনের সুযোগ- সুবিধা নেওয়ার বিধান নেই। একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি একের অধিক ডিলারশিপ নিতে পারবেন না।

অন্যদিকে আচরণ বিধিমালার ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনো কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’

অনিয়মে যুক্তদের ভাষ্য

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী নওগাঁতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফজলে রাব্বি। তিনি তার স্ত্রী সম্পা বেগমের নামে বিএডিসির বীজের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে কৌশলে ডিলারশিপ বিক্রি করে খাচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নওগাঁ শহরে বসবাস করলেও তারা পোরশা উপজেলায় ‘সাইফ ট্রেডার্স’ নামের ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্পা বেগম তার নামে লাইসেন্স স্বীকার করে বলেন, ‌‘আমি নওগাঁ বসবাস করলেও পোরশায় আমার দোকান রয়েছে। ওখানে একটি ছেলে আছে। সে দোকান চালায়।’

দোকানের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী রাব্বি নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’

সাইফ ট্রেডার্স নামের কোনো দোকান পোরশা বাজারে পাওয়া যায়নি। দোকানের সঠিক ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে সম্পা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কথা না শোনার ভান করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলে রাব্বির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই লাইসেন্সটা আমার স্ত্রী সম্পার নামে করা আছে।’

নিয়মিত বীজ তোলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভাই অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান। আপনাদের অনেক সাংবাদিক আসে; চা খেয়ে যায়।

‘সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। আপনি অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান।’

ওই বক্তব্যের পর সংযোগটি কেটে দেন তিনি।

এদিকে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মেসার্স জিমান ট্রডার্স নামে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন নিয়ে রেখেছেন বিএডিসির সার লাইসেন্সের ডিলারশিপ। প্রোপাইটারে জায়গায় রয়েছে তার নিজের নাম।

তার ছেলে জিমানের নামে নিয়ামতপুর বাজারে রয়েছে দোকান। নিয়মিত বিএডিসির সার ও বীজ তুলে বিক্রি করেন তিনি।

এ বিষয়ে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘লাইসেন্সটা অনেক আগে করা ছিল। তখন আমার কলেজ সরকারি হয়নি। ২০১৮ সালে আমার কলেজ সরকারি হয়েছে।’

‘তাহলে দীর্ঘ সাত বছর ধরে সরকারি ডাবল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। এটার সুযোগ রয়েছে কী?’

উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একাধিক জায়গা হতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি তিন মাস আগে ডিসি অফিসে লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানিয়েছি।’

এদিকে ধারাবাহিকভাবে গত মাসেও সরকারি গুদাম থেকে সার তুলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সটা আমার ছেলের নামে হস্তান্তর করা হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে।’

অপরদিকে ধামইরহাট উপজেলার ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলাম তার নিজ নামে নিয়ে রেখেছেন বিসিআইসির সার ডিলারশিপ। সরকারি গুদাম থেকে নিয়মিত সার তুলে উপজেলার আমাইতাড়া বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।

এ বিষষে জানতে ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা অনেক আগে করা হয়েছিল। পরে আমার কলেজ সরকারীকরণ হয়।

‘সরকারি একাধিক জায়গা হতে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বেআইনি হয়েছে। আমি লাইসেন্সটা ট্রান্সফার করে দেব।’

‘আপনি তো এখনও নিয়মিত সার তোলেন।’ এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন ইরি-বোরো মৌসুম চলছে তো। তাই একটু তুলতেছি।’

যা বলছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা

ডিলারশিপের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা এটা করতে পারে না।’

‘আপনার অধিদপ্তরে এমন অনেকে রয়েছে। তাহলে তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’

এমন প্রশ্নে প্রোগ্রামের ব্যস্ততার কথা বলে ফোন লাইন কেটে দেন এ কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়।

‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

আরও পড়ুন:
নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন
নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকা থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নওগাঁয় উদ্ধার
মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর
গলা কেটে হত্যা: দাফন-কাফনে সহযোগিতা করেও হলো না রক্ষা

মন্তব্য

জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক

জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অজ্ঞাত মুখোশধারীরা গত রবিবার রাতের বেলায় জমিদার বাড়ির পুরোহিতকে ধরে নিয়ে জঙ্গলে বেঁধে রাখে। টাকা-পয়সা এবং জমিদারেরও খোঁজ করে তারা।

এমন পরিস্থিতিতে ডাকাত আতঙ্কে রয়েছেন বাড়ির লোকজন।

মুখোশধারীরা ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশপাশে তল্লাশি চালানোর কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।

এতে দেখা যায়, রবিবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী নেলী চক্রবর্তী ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে দুজন মুখোশধারী ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সঙ্গে পুরোহিতকে বেঁধে ফেলে।

জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর আগে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। এর মধ্যেই দুজন মুখোশধারী আমাদেরকে ধরে বাড়ির পাশে জঙ্গলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় মুখোশধারীরা জমিদার কোন ঘরে জানতে চায়। সিন্দুকের খোঁজও চায় তারা।

‘বাড়ির তিন তলায় ওঠার চেষ্টাও করে। ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশেপাশে তল্লাশি চালায়।’

বাড়ির কেয়ারটেকার স্বপন সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত জমিদার বাড়িতে চাকরি করছি। দেশের বিভিন্ন জায়গার লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন। পুরো বাড়ি তাদের ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করি।

‘কিন্তু অতীতে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এই ঘটনার পর থেকে বাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে জমিদারের একমাত্র শেষ বংশধর মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বসবাস করছেন। নিঃসন্তান ব্যক্তিটির স্ত্রী কিছুদিন আগে লোকান্তরিত হন। বাড়িটিতে বর্তমানে তিনি ছাড়া কয়েকজন কর্মচারী ও পুরোহিত অবস্থান করছেন।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।

বাড়ির মালিক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বলেন, ‘মুখোশধারীরা হয়তো ধনদৌলত নিতে কিংবা আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করতে চেয়েছিল। তবে বাড়ির লোকজন সজাগ হয়ে যাওয়ার মুখোশধারীরা সেটা করতে পারেনি।’

জানতে চাইলে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
তাড়াইলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত: পুলিশ
নোয়াখালীর বয়ারচরে ডাকাতদলের তাণ্ডব, আটজনকে কুপিয়ে জখম
বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও জমিতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ বীর মুক্তিযোদ্ধার
প্যারোলে মেলেনি মুক্তি, বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
জামালপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে নিহত ১, আটক ২

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Petrol Pumps closed in Naogaon strike What the victims say

নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা

নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। কোলাজ: নিউজবাংলা
আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না। এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, বগুড়ার আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে।

এ ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।

কী বলছেন ভুক্তভোগীরা

যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজনও। তাদের একজন বেসরকারি সিম কোম্পানির কর্মী আল-আমিন।

তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে তেল শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পেট্রল পাম্পে নিয়ে আসি।

‘পাম্প বন্ধ থাকায় আবার ঠেলে নিয়ে চলে যেতে হয়। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না।

‘এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে অবস্থিত মেসার্স সাকিব ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেকেই অফিসগামী মোটরসাইকেল আরোহী ও জ্বালানিচালিত বিভিন্ন যানবাহনগুলো পাম্পে এসে বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যানবাহন চালকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান যানবাহন চালকরাও।

‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সকল পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়েছে।’

প্রেক্ষাপট

পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ বগুড়া। ওই সময় সান্তাহারের হামিম ফিলিং স্টেশন ও আনিকা ফিলিং স্টেশনে তেলের মিটার উচ্ছেদ করা হয়।

তারা জানান, পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে এ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:
ডাকাতি করতে এসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় সাতজন গ্রেপ্তার
শৈত্যপ্রবাহ: নওগাঁয় এক দিনে তাপমাত্রা কমল ৬.৪ ডিগ্রি
নওগাঁয় বিএনপির দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার
সিলেটে কর্মবিরতির ডাক পরিবহন শ্রমিকদের
১৮ ডিসেম্বর বিজয়ের পতাকা ওড়ে নওগাঁর আকাশে

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The bus fares increased by the train closed more than doubled

ট্রেন বন্ধে বাস ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণের বেশি

ট্রেন বন্ধে বাস ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণের বেশি ট্রেন না পেয়ে খুলনা থেকে দূরপাল্লার যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ছবি: নিউজবাংলা
শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ ট্রেন ব্যবহার করেন। হঠাৎ করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে বাসের ওপর বাড়তি যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বাসের টিকিটের মূল্য বেড়ে গেছে।

খুলনা থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য সকালে রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।

তারা জানান, খুলনা থেকে নওগাঁ যেতে তারা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কোনো টিকিট পাননি। বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তাতে ভাড়া গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ পথে নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকার বেশি নয়।

শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

‘অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’

সান্তনুর মতো অনেক দূরপাল্লার যাত্রীকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।

খুলনা থেকে উত্তরবঙ্গে দৈনিক একাধিক ট্রেন যাতায়াত করে। এর মধ্যে কপোতাক্ষ ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস খুলনা থেকে রাজশাহী, রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চিলাহাটি, মহানন্দা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রকেট এক্সপ্রেস খুলনা থেকে পার্বতীপুর, নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, বেনাপোল ও মোংলা কমিউটার খুলনা থেকে বেনাপোল যাতায়াত করে।

এ ছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ঢাকাতে যাতায়াত করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এর মধ্যে কোনো ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়নি। ফলে হাজার হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরেছেন।

রেলওয়ের রানিং স্টাফরা মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এ সুবিধা সীমিত করা হয়।

ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বুধবার রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা।

খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাত ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। আজ কোনো ট্রেন চলেনি। টিকিট বুকিং দেওয়া যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

এ সমস্যার সমাধান কবে হবে, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন:
ট্রেনের বিকল্প হিসেবে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু
বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক আটজন
ট্রেনযাত্রীদের অধিকার রক্ষার ১০ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর
এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের নজর ছোট ও গণমুখী প্রকল্পে
প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিমা সুবিধা দেবে ‘আমি প্রবাসী’ ও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The trial is going on in the court of Jhalkathi

ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজ চলছে ঝালকাঠির আদালতে

ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজ চলছে ঝালকাঠির আদালতে ঝালকাঠির আদালত ভবনের বাইরের এবং ভেতরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। কোলাজ: নিউজবাংলা
আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।’

দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি।

এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালতে কর্মরতদের।

সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থদের অবহিত করে গণপূর্ত বিভাগের ঝালকাঠি অফিস ২০১৯ সালে চিঠি চালাচালি করলেও বিষয়টি এখনও ফাইলবন্দি।

ভবনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের দাবি আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জরাজীর্ণ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৫ নভেম্বর বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর পরিদর্শন প্রতিবেদন পাঠান।

ভবন পরিদর্শনকালে তিনজন উপসহকারী প্রকৌশলী, গণপূর্তের ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনের একটি কপি সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা।

কী ছিল পরিদর্শন কপিতে

ঝালকাঠি গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী অনিরুদ্ধ মন্ডল, মো. বদরুজ্জামান, মো. ইমরান বিন কালাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল-মাসুম স্বাক্ষরিত ওই পরিদর্শন কপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ভবনটির দুই তলায় করিডোরের বেশ কিছু স্থানে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়ছে। এ ছাড়াও নলছিটি কোর্ট রুমের পরিদর্শনকারীদের বসার ওপরের ছাদের অংশ খসে পড়েছে। এ সমস্ত স্থানে মরিচা পড়ে রড উন্মুক্ত হয়ে আছে। দ্বিতীয় তলা এবং নিচ তলার করিডোরের বেশ কিছু বিম ও কলামে ফাটল লক্ষ করা গেছে।

‘ভবনটির নিচ তলায় হাজতখানার ছাদের বেশ কিছু অংশসহ করিডোরের বিভিন্ন অংশে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়েছে। এসব স্থানেও মরিচা পড়ে রড বের হয়ে আছে। নিচ তলার বিভিন্ন কলাম এবং বিমের ফাটল লক্ষ করা গেছে। কিছু স্থানে কলাম ফেটে রড বের হয়ে গেছে।’

পরিদর্শন প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ১৯৮৯-৯০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে ২০০৪-০৫ সালে তৃতীয় তলার উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিম কলামে ফাটল থাকায় এবং ছাদের কনক্রিট খসে পড়ায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
‘এমতাবস্থায়, উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত ডিজাইন বিভাগের মতামতসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রয়োজন।’

প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ

সম্প্রতি জজ আদালত ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ছাদের ওপর থেকে খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফাটল ধরেছে অনেক পিলারেও। ভারি বৃষ্টি এলেই ছাদ ও দেয়াল চুষে পানি পড়ে মেঝেতে। নষ্ট হয়ে যায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র।

দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় তিন তলা ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিচারকের এজলাস, খাসকামরা, পেশকার, সেরেস্তাদারের কক্ষ, নকল কক্ষ, হাজতখানাসহ প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

যা বলছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা

আদালতের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়ে কথা হয় আবদুর রহমান, তৈয়ব আলী, কামরুল ইসলাম, মুরাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে।

তাদের একজন বলেন, ‘আদালত ভবনের ভিতরে প্রবেশের পর কার্যসম্পাদন করে বের হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকি আতঙ্কে। প্রায় সময়ই ছাদের পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে।

‘বর্ষায় তো বারান্দায় পানি জমে যায়। দেয়ালে পানি চুষে অনেক ফাইল নষ্ট হয়ে যায়।’

আইনজীবী মানিক আচার্য্য বলেন, ‘ভবনটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তার সংস্কার করছে না কর্তৃপক্ষ। বিচারকরা যদি ভালো পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে বিচারকার্যে মনোনিবেশও করতে পারেন না।

‘ঝালকাঠির বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সকলেই আমরা এ ভোগান্তিতে রয়েছি। বিভিন্ন সময়ে উচ্চপদস্থদের বিষয়টি অবগত করলেও এখনও কোনো ভূমিকা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’

আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।

‘আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা এবং নতুন ভবন নির্মাণ অথবা টেকসই সংস্কারের জন্য গণপূর্তের চিঠি চালাচালি হলেও দীর্ঘদিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাইনি। জনস্বার্থে দ্রুত নতুন আদালত ভবন নির্মাণ জরুরি।’

আইনজীবী আক্কাস সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে এ আদালতে ১৬ হাজার দেওয়ানি মামলা এবং দেড় হাজার ফৌজদারি মামলা চলমান। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।

‘আদালত ভবনের নিচ তলায় হাজতখানার পশ্চিম দিকে মসজিদের সামনে একাধিকবার ধসে পড়েছে ছাদের অংশ। এখন এই ভবন অস্থায়ী সংস্কার না করে এটি ভেঙে এখানে নতুন ভবন করা উচিত।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নব্বই দশকে দোতলা জজ আদালত ভবনটি নির্মাণের পর ২০০৬ সালে এর ওপর আরও এক তলা বর্ধিত করে তৃতীয় তলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে নিচ তলার অনেক পিলারে ফাটল ধরেছে। ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আদালতের স্টাফ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা রয়েছেন আতঙ্কে।

‘হাজতখানা সরিয়ে পার্শ্ববর্তী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে নেওয়া হয়েছে। ভবনে আগতদের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। দ্রুত এটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’

জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ঝালকাঠির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার একই ধরনের বক্তব্য দেন।

তাদের একজন বলেন, ‘ভবন পরিদর্শনের রিপোর্ট ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন ভবনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।

‘সেখান থেকে অর্ডার হলেই গণপূর্ত বিভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কার্যসম্পাদন করবে।’

ক্যাপশন: ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন। ছবি: নিউজবাংলা

ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের ভেতরের জরাজীর্ণ অংশ। ছবি: নিউজবাংলা

আরও পড়ুন:
ঝালকাঠিতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ধারণা পুলিশের
স্কুলের পাশে ইটভাটা, ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পরিবেশ কর্মকর্তার
ওকালতনামা না থাকায় চিন্ময়ের পক্ষে ঢাকার আইনজীবীর ৩ আবেদনই নাকচ
ধাক্কা দিয়ে পথচারীর সঙ্গে প্রাণ হারালেন বাইক চালকও
‘আজ সেই দুষ্টু লোকেরা কোথায়?’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Allegations of trying to rehabilitate the absconding chairman of Awami League

আওয়ামী লীগের পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ

আওয়ামী লীগের পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের গেট। ছবি: নিউজবাংলা
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‌‘আবেদনসহ অন্যান্য কাগজ আমি পেয়েছি। উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো কৌশলগত বিষয় আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে নিয়ম-বহির্ভূত কাউকে পুনর্বাসন করার সুযোগ নেই।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগের পলাতক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমানকে কৌশলে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলীসহ স্থানীয় একাধিক রাজনীতিক ও কিছু ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট এ ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ ছেড়ে পালিয়ে যায়।

জনসেবা অব্যাহত রাখতে নিয়ম অনুসারে ইউপি সদস্য সুমন রানাকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ করে বাকি প্যানেল গঠন করা হয়।

বর্তমানে ইউপিতে নাগরিক সেবা অব্যাহত থাকলেও প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কৌশলে অনাস্থা এনে এরশাদ আলীসহ অন্যরা পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় আছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি কৌশল জানাজানি হলে ইউনিয়নবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমন বাস্তবতায় যেকোনো সময় ওই ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের ‘কৌশল’

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রথমে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তাব এনে একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়। সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ৯ জন ইউপি সদস্য।

পরে সেই আবেদনের জের ধরে ১৩ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডের পাতায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ মো. এরশাদ আলী স্বাক্ষরিত এক পাতার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের রেজুলেশন ও অপর একটি পাতায় আটজন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর সংবলিত পাতা সংযুক্ত করা হয়। এ পাতায় সভার স্থান দেখানো হয় ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে।

ওই রেজুলেশনে বলা হয়, ‘অদ্যকার অত্র আলোচনায় শুকানপুকুরী ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমানের (পলাতক) মাধ্যমে ইউপির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সভায় বিস্তর আলোচনা করা হয়। এরপর সভার সভাপতি প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলীর উপস্থিতিতে সদস্যদের জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন, যা জেলা প্রশাসকের বরাবরে অনাস্থার প্রস্তাব আনয়ন করি।

‘তাই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানের (পলাতক) মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা তথা জনসেবা অব্যাহত রাখা একান্ত জরুরি মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

রেজুলুশনে উল্লেখ করা হয়, সর্বসম্মতিক্রমে পলাতক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা তথা জনসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।

প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে দুই ইউপি সদস্যের ভাষ্য

কারণ জানতে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন অনাস্থা কাগজে স্বাক্ষর করা দুজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে। তারা হলেন মো. আমজাদ ও ধর্ম নারায়ণ রায়।

ইউপি সদস্য আমজাদ বলেন, ‘৪ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে আমার বাড়ির সামনে স্থানীয় সাবেক দুজন সদস্য মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তারা আমাকে কৌশলে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অন্যান্য ইউপি সদস্যরাসহ বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত। রাতের খাবারের বিশাল আয়োজনও করা হয়েছে। আমি কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

‘পরে জানানো হলো, আমাকে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে স্বাক্ষর করতে হবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। তিনি খুব ভালোভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এসবই আলোচনা হচ্ছে। এরপর এক প্রকার জোর করেই আমাকে রাতের খাবার খাওয়ানো হলো এবং পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর করতে হলো। কিন্তু আমি সিলমোহর দিইনি।’

ইউপি সদস্য ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, ‘একই তারিখে স্থানীয় বাসিন্দা তোষর এবং রফিকুল আমাকে একটা জায়গায় সমস্যার কথা বলে কৌশলে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি বিএনপির অন্যান্য রাজনীতিক নেতাসহ অন্যান্য ইউপি সদস্যরা রয়েছেন। আমাকে রাতের খাবারের জন্য বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কী কারণে এত আদর-আপ্যায়ন, বুঝতে পারছিনা। জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর পাই না।

‘সমাজ রক্ষার্থে সকলের সাথে রাতের খাবার খেলাম। এরপর আমাকে এক প্রকার চাপ দেওয়া হয় প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানার বিরুদ্ধে অনাস্থা কাগজে স্বাক্ষর করতে। কিন্তু আমি তার সমর্থক। তিনি ভালো মানুষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাক্ষর দিতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাক্ষর করেছে। আমি কেন করব না, এ কথা তোলে। অনেকক্ষণ তর্ক-বিতর্কের পর সই করে সেখান থেকে আসতে হয়েছে। পরে আমি লিখিত চিঠি দিয়ে বিষয়টি প্যানেল চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’

ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ভবেষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে অনাস্থা আনা হয়েছে, তা আমার কাছে ভিত্তিহীন মনে হয়েছে।’

সচিব আরও বলেন, ‘পরিষদে তিনি (সুমন রানা) সবার সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন এবং নাগরিক সেবা অব্যাহত রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে আমাকেও কেউ কোনো দিন কোনো মৌখিক অভিযোগ দেননি।’

সভার বিষয়ে যা বললেন ইউপি সচিব ও সদস্য

ইউনিয়ন পরিষদ সচিব বলেন, ‘৪ জানুয়ারি, ৭ জানুয়ারি ও ১৩ জানুয়ারি কোনো সভা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমসহ পরিষদের কোনো স্থানে অনুষ্ঠিত হয়নি। যেসব সভার কথা বলা হচ্ছে, তা গোপনে বা প্রকাশ্যে অন্য কোথাও হয়ে থাকতে পারে। তা আমার জানা নাই।’

ইউপি সদস্য ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, ‘১৩ তারিখ সকাল ১১টায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সভা ডেকেছিল। আমি সময়মতো পরিষদে আসলেও সভা হয়নি।

‘আমি জানতে চাইলে তিনি গোপনে স্থানীয় দুলাল নামের এক লোকের বাসায় মিটিং হবে বলে জানান। কিন্তু আমি সেখানে যাইনি। পরিষদের কাজ শেষে বাড়ি চলে আসি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যানের ভাষ্য

স্থানীয় বাসিন্দা জিলানি হোসেন বলেন, ‘যে চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি, তিনি জনগণের কথা ভাববেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি আমাদের দুর্ভোগে ফেলে আজও পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। আমরা নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা তার পুনর্বাসন চাই না।

‘পরিষদ তাকে ছাড়া বেশ ভালো চলছে। আমরা সুন্দর সেবা পাচ্ছি। শুনছি অনেকে পলাতক চেয়ারম্যানের টাকার কাছে বিক্রি হয়েছে। আমরা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেব না।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলী ইউনিয়ন পরিষদে সভা না করা এবং কোনো ব্যক্তির বাসায় বসে সভা করার বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে পরিষদে সভা করতে পারেননি।

তিনি কেন পলাতক ও বিতর্কিত চেয়ারম্যানকেই পুনর্বাসন করতে চান, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বর্তমান দায়িত্বরত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন।

অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পরিষদে নাগরিক সেবা অব্যাহত আছে কি না, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানান।

ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে পরিষদের কোনো বৈঠক হয়নি; সিদ্ধান্তও হয়নি। আমার হাত ভেঙে যাওয়ায় আমি অসুস্থ। তাই রাজনীতিক নেতা ও পরিষদের সদস্যরা দেখতে এসেছিল। এর বেশি কিছু না।’

তবে চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‌‘আবেদনসহ অন্যান্য কাগজ আমি পেয়েছি। উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

‘কোনো কৌশলগত বিষয় আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে নিয়ম-বহির্ভূত কাউকে পুনর্বাসন করার সুযোগ নেই।’

আরও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা: ঠাকুরগাঁওয়ের তিন সাংবাদিককে খালাস
ট্রেনযাত্রীদের অধিকার রক্ষার ১০ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর
‌‌‘মিথ্যা সাক্ষী দেয়নি বলেই কি বাবা জেলে?’
চার শিক্ষা বোর্ডে নতুন চেয়ারম্যান
প্যারোলে মেলেনি মুক্তি, বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান

মন্তব্য

p
উপরে