সরকারসংশ্লিষ্ট হলে সাজা নিয়েও বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কেন এই সুযোগ পাবেন না, সে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে গেলে সরকারকে এর দায় নিতে হবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি মহাসচিব। খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ ও তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেত্রীকে ২০২০ সালের মার্চে যখন সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়, তখনই শর্ত দেয়া হয় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
তবে ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এবং বছরের শেষে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তার দল এবং স্বজনরা। তবে সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
খালেদা জিয়া তৃতীয় দফায় যখন হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি জীবন-সংশয়ে আছেন। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তার লিভার সিরোসিস হয়েছে এবং দেশে এর চিকিৎসা নেই। বিদেশে নিয়ে যেতে দেরি হলে কিছু হয়ে যেতে পারে।
তবে সরকার রাজি না হওয়ার পর খালেদা জিয়া প্রায় তিন মাস পর বাসায় ফেরেন এবং শনিবার প্রথম প্রহরে আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। এবার জানানো হয়েছে, তার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এবং তার এনজিওগ্রাম বা হার্টে রিং পরানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের সলিমুদ্দিন, কালিমুদ্দিন, সাজাপ্রাপ্তরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। অথচ মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া বেগম খালেদা জিয়াকে তারা বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। এর কারণ, সরকার তাকে ভয় পায়। তিনি যদি রাস্তায় নামেন, তাহলে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মানুষের ঢল নেমে আসবে।
‘বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। যেটা আমাদের এখানে নেই। যেটা বিদেশে আছে। বারবার চিকিৎসকরা বলছেন। আমাদের খুব সোজা কথা, আল্লাহ না করুন বেগম খালেদা জিয়ার যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সরকারকেই দায় নিতে হবে। এ দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। টেনেহিঁচড়ে নামাবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কথা স্পষ্ট। তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠাতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর বাইরে দেশের মানুষ কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত না।
‘বেগম খালেদা জিয়া যাতে রাজনীতি করতে না পারেন, সে কারণে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তার অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করে বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে।’
দাবি মেনে না নিলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও সতর্ক করে দেন ফখরুল। বলেন, ‘এখনও সময় আছে, দাবি মেনে নিন, তাহলে রক্ষা পেতে পারেন। এরপর আর পালাবার পথ পাবেন না। সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। যে দুর্বার আন্দোলন হবে তাতে আপনাদের রক্ষা হবে না।
‘আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং জনগণের কল্যাণ একটি সরকার গঠন করব।’
পাচার করে এখন ফেরত আনা
ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তো কোনো ব্যবস্থা নেয়ইনি, বরং কেমনে বাড়ানো যায় সেটা করেছেন। শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়েনি। অথচ করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের দশা ফুটে উঠেছে।’
পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘এতদিন টাকা পাচার করেছেন। কানাডা, অস্ট্র্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে, বেগমপাড়ায় বাড়ি করেছেন এখন সেগুলো জায়েজ করতে কর দিয়ে টাকা ফেরত আনার কথা বলেছেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু সভায় যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন।
আরও পড়ুন:বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলো পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ায় অনেকে অনেক কথা বলেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। পদ্মা সেতু হবে না বলেও অনেকে মন্তব্য করেছিলেন বলে জানান তিনি।
জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় নিয়ে বুধবার বিরোধীদলীয় নেতা এসব কথা বলেন।
বাজেট অধিবেশনে তিনি আজকেই প্রথমবারের মতো যোগ দেন। গত বছরের ৫ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান তিনি। চিকিৎসা শেষে গত সোমবার ৭ মাস পর দেশে ফেরেন তিনি।
রওশন এরশাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিলে বিদ্রুপ করেছেন অনেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দৃঢ়তা, সাহস, বিচক্ষণতা আর দূরদর্শীতা দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। চুনকালি পড়েছে সমালোচকদের মুখে।’
বিরোধীদলীয় নেতা পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। বলেন, ‘দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। পদ্মা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি দেশের সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক।
‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, এত সমস্যা মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’
এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক লাইফলাইনরূপে কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ, শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা, কৃষি সম্প্রসারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।’
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন দেশের সাবেক এই ফাস্ট লেডি। তিনি বলেন, ‘আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান, বেসরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে কর্মসৃজন, আমদানি সহনীয় পর্যায়ে রেখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ স্থিতিশীল রাখা, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বর্তমান হারে রাখা, করের আওতা বৃদ্ধি করে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো ও বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা এ চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম।’
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর কৌশল নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির সর্বোচ্চ এ নীতি নির্ধারক বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য টেকসই গণতন্ত্রের প্রয়োজন। সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, ও সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক হবে। এটাই গণতন্ত্রের মূলনীতি। আমাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:দক্ষিণ কোরিয়া শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম ভুট্টোকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দেশটির রাজধানী সিউলে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম হাছান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুই জন সদস্য নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করেন। সেই অবৈধ কমিটির নামে ব্যানার টানিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সভা করেন। সেই আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এসব কারণে রফিকুলকে আওয়ামী লীগের দক্ষিণ কোরিয়া শাখা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞতিতে জানানো হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে যারা ষড়যন্ত্র কিংবা বিরোধিতা করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার পক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিরোধিতা করেছে। ড. ইউনূস হোক আর তার সাঙ্গপাঙ্গ হোক। তাদের বিচার করা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই।’
রাজধানীর সিরডাপে বুধবার এক গোলটেবিল আলোচনায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
‘পদ্মা সেতু: সম্প্রীতির পথে সাফল্যের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে সম্প্রীতির বাংলাদেশ।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা দেশের উন্নয়নের বিরোধিতা করেছে অথবা অসত্য তথ্য সরবরাহ করেছে, বাংলাদেশের দণ্ডবিধির প্রচলিত আইন অনুযায়ী তারা অপরাধী।’
‘আজকে তাদের ছেড়ে দিলে অনেকে মনে করবে এসব করলে তো কিছুই হয় না। আমি একজন আইন পেশার মানুষ হিসেবে মনে করি তারা দেশের প্রচলিত আইন, দণ্ডবিধি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে তারা অপরাধী।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমার তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, এটি তার হৃদয়ের বিশালতা।
মন্ত্রী বলেন, ‘এখনও যারা মিথ্যাচার করছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ দরকার।’
‘যারা উন্নয়নের বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা প্রেস ক্লাব কিংবা সিরডাপে এসে সভা-সেমিনারে অনেক বড় বড় ভাষণ দেয়। আজকে পেপারে দেখলাম, পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্র পদ্মা সেতু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের অনুসারী যারা বাংলাদেশে আছেন, তারা প্রধানমন্ত্রীকে পদ্মা সেতুর জন্য এখনও অভিনন্দন জানাতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। অবৈধ পথে যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন বন্ধ করতে চেয়েছে তাদের মুখে চপেটাঘাত। সারা দেশের যেখানেই যাবেন শেখ হাসিনার কৃতিত্ব খুঁজে পাবেন।’
আলোচনায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে ষড়যন্ত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একা ছিলেন না বলে জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ড. ইউনূস তিনি কি একাই ষড়যন্ত্র করেছিলেন? তার সঙ্গে কি এদেশের সংবাদপত্র ছিল না? সংবাদপত্রের সম্পাদক কয়েকজন ছিল না তার সাথে? তারাও তার (ড. ইউনূস) সাথে ছিল তো। তারাও ষড়যন্ত্র করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ছিল তার সঙ্গে। তার নেতৃত্বে গুলশানে, একটি জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদক, ড. ইউনূস, তার প্রতিনিধি সভা করেছে পদ্মা সেতুর লোন কী করে বাতিল করা যায় বিশ্বব্যাংককে দিয়ে। অনেক প্রচারমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবী পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।’
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অসীম সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান।
বিএনপির ওপর সরকার নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে বলে দলের নেতারা যে অভিযোগ করে আসছেন, তাকে কল্পিত বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি তাদের ব্যর্থতা ও হতাশা ঢাকতে সরকারের বিরুদ্ধে নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিএনপি মহাসচিবের বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
বিরোধী দল দমনে সরকার হিংস্র রূপ ধারণ করেছে– ফখরুলের এমন অভিযোগ নিয়ে কাদের বলেন, ‘তার এমন অভিযোগের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি চিরাচরিত মিথ্যাচারের অপরাজনীতি থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি।’
তিনি বলেন, “বিএনপি মহাসচিবের উপস্থিতিতে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে '৭৫-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বক্তৃতা প্রদান করেছে। এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও ফৌজদারি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করার পরও বিএনপি নেতাদের দমনে হিংস্র আচরণ তো দূরের কথা, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।’’
বিএনপি নেতারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে এবং তাদের দেশবিরোধী ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কারণে জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
দেশ সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘দেশ সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বলেন, বিরোধী মতের ওপর দমন-পীড়ন হচ্ছে, বিএনপি মহাসচিবকে এই দ্বিচারিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বিএনপি মহাসচিব রাজনৈতিক বক্তব্যের আড়ালে এসব সন্ত্রাসীকে রক্ষা করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।
‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা আজ সন্ত্রাসের কথা বলেন। বলেন, বিরোধী দল দমনের কথা। অথচ বিরোধী দল দমন-পীড়ন ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক সন্ত্রাস সৃষ্টির মধ্য দিয়েই ইতিহাসের কুখ্যাত স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছিল।’
আরও পড়ুন:ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আর অংশ নেবে না জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেছেন, খেলা হবে ‘ফেয়ার’।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। যুবদলের নবগঠিত কমিটির উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।
টুকু বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে আগে একবার নির্বাচন হয়েছিল, আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাস করে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম, কিন্তু তারা দিনের ভোট রাতেই শেষ করে দিয়েছে।
‘আবার এখন ইভিএম, ইভিএম করছে। অর্থাৎ রাতের বেলা সিল মারতে হবে না, দিনের বেলা ঘরে বসেই সব ভোট নিয়ে নিতে পারবে। এ রকম মকারির নির্বাচনে মধ্যে আমরা যাব না।’
টুকু বলেন, ‘যতক্ষণ একটি নিরপেক্ষ সরকার না আসবে বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপি একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেখিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্র কাকে বলে। বেগম খালেদা জিয়া পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি পরাজয় বরণ করেছিল। এটাকেই বলে আসল গণতন্ত্র।
‘এই সরকারের যদি সৎ সাহস থাকে তাহলে তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসুক। আমরা যদি পরাজয় বরণ করি করব। তবে খেলাটা ফেয়ার হতে হবে।’
সিইসির চারদিনে ভোট করার প্রস্তাব সম্পর্কে টুকু বলেন, ‘তিনি হাইব্রিড কি না জানিনা, আবার তিনি চার দিনে কেন নির্বাচন করতে চান সেটাও জানিনা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জন্মের আগে থেকেও আমরা একদিনেই ভোট করি। চার দিনে ভোট করার মানে হলো ভোটগুলো এনে ডিসি অফিসে রাখা, আর ডিসি অফিসকে কেউ বিশ্বাস করে না। সুতরাং এটি বাংলাদেশ হবে না।’
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, বর্তমান সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র সহ সভাপতি মামুন হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মিল্টন, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ আর নেই।
স্থানীয় সময় বুধবার সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
নির্মল গুহের বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন তিনি।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১২ জুন রাতে রক্তচাপ বেড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নির্মল রঞ্জন গুহ। তাকে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেয়া হয়।
নির্মল গুহের হার্টে দুটি ব্লক ধরা পড়লে সেখানে রিং বসানো হয়, কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে ১৬ জুন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গারপুর নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন:ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি দিক যাচাই ও ভোটদান বিষয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মঙ্গলবার আয়োজিত মতবিনিময়ে যোগ দেয়নি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
‘নতুন করে একই কথা বলার জন্য মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করা প্রয়োজনীয় নয়’ উল্লেখ করে সিপিবির পক্ষ থেকে কমিশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
দলটির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইভিএম আমাদের দেশের সব মানুষের জন্য সহজবোধ্য নয় এবং সবাই এটির যথাযথ ব্যবহার করতে পারেন না। এই পদ্ধতি এখনো বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেনি। অধিকাংশ ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোটদান পদ্ধতির বিরোধিতা করেছে। তাই আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘ইভিএম একটি মাইক্রো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রিত হওয়ায়, ইভিএম নিম্নতর স্তরে নিয়ন্ত্রণ না করেও নির্বাচন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কিংবা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ উচ্চতর স্তরের কমসংখ্যক প্রযুক্তিবিদের সহায়তায় কারচুপি করা যায়।
‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইভিএম ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ইভিএম এখনও কোনো জালিয়াতি নিরোধক নয়। যান্ত্রিক ত্রুটির যুক্তিতে ইভিএমের মতো আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে কারচুপির ঝুঁকিকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না।’
চিঠিতে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান রাজনৈতিক বিবেচনায় ইভিএম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রধান বিবেচ্য বিষয় নয়। এটিকে সামনে এনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্য বিষয়কে গৌণ করে ফেলার সুযোগ নেই। আমরা ইতোপূর্বে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে আমাদের কথা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি।
‘পুনরায় বলতে চাই, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য করার জন্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থাসহ নির্বাচনকে টাকা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত করতে ব্যবস্থা নিন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সিপিবির ৫৩ দফা প্রস্তাবকে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নিন।’
সিপিবির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না তা প্রমাণিত। তাই নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় তদারকি সরকার গঠন, তার কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট করা এবং নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে মতামত দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য