ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ভারতে বিজেপি নেতার মন্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
সিলেট নগরীর কুমারপাড়ায় সিলেট আর্টস কলেজ উদ্বোধন শেষে শনিবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘মহানবীকে নিয়ে কটূক্তিকারীর বিরুদ্ধে ভারত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। যিনি মন্তব্য করেছেন তিনিও এ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তাই এই বিষয়ে আর বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না।
‘আমাদের রাসুলও নির্দেশ দিয়ে গেছেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। তার নির্দেশনা আমাদের মানা উচিত।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই বিষয়ে বিভিন্ন দেশে অনেকেই নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সব দেশেই এমন কিছু লোক থাকেন, তাদের ভিন্ন মতামত থাকে। কেউ কেউ বেফাঁস কথাও বলে ফেলেন। এসব নিয়ে হইচই হয়। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত হবে না।’
এর আগে সিলেট আর্টস কলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আজ সিলেটের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। সিলেটে আর্টস কলেজ যাত্রা করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশেই এমন কলেজ বিরল।
‘সংস্কৃতির প্রতি সিলেটের মানুষের অনুরাগ রয়েছে। সিলেট শিল্প-সংস্কৃতির উর্বর ভূমি। তাই এখানে আর্টস কলেজ দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কলেজে পরিণত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
দেশের প্রথম এই আর্টস কলেজে চারুকলা, সংগীত, নাটক ও নৃত্য বিষয়ে পড়তে পারবেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম বছরে চারুকলা ও সংগীত বিষয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরে নাটক ও নৃত্য বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।
কলেজের অধ্যক্ষ হ্যারল্ড রশীদের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সিংহ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব খান মোহাম্মদ বিলাল।
আরও পড়ুন:জালিয়াতির দায়ে গেল বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিখা পিরেগুকে। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাবেক সভাপতি। বহিষ্কারের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকছেন তিনি।
বিষয়টি স্বীকার করে মার্কেটিং বিভাগের ৪৪ ব্যাচের বহিষ্কৃত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করেছি। এ বিষয়ে এখনও জবাব পাইনি, তাই হলে থাকছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪০১, ৪১২ ও ৪১৩ নম্বর কক্ষ তিনটি ছাত্র ইউনিয়রের ‘কক্ষ’ হিসেবে পরিচিত। মিখা পিরেগু নিয়মিত থাকেন ৪১২ নম্বর কক্ষে। চার সিটের এই কক্ষে আরও থাকেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি রিফাত খান অনিক, সাংগঠনিক সম্পাদক অমর্ত্য রায় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কসম্পাদক মো. সৈকত।
আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত একজন ছাত্র কীভাবে হলে থাকেন জানতে চাইলে অমর্ত্য রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সে (পিরেগু) নিয়মিত ঢাকায় থাকত। মাঝে মাঝে হলে আসত। তার পারিবারিক সমস্যার কারণে গত দেড় মাস ধরে হলে নিয়মিত থাকছে।’
সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েও আপনি কেন ব্যবস্থা নেননি? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সহ সভাপতি রিফাত খান অনিক বলেন, ‘পিরেগু আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের পুনঃবিবেচনার বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। সেই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তিনি হলে থাকতে পারবেন। তাই এই বিষয়ে আমরা কোনো ব্যবস্থা নেইনি।’
একই কক্ষে থাকলেও পিরেগুর বহিষ্কারের বিষয়টি জানতেন না দাবি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. সৈকতের। বলেন, ‘আমি ভাইয়ের বহিষ্কারের বিষয়টি জানতাম না।’
গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, ‘বিশেষ পরীক্ষার অনুমতির আবেদনপত্রে বিভাগীয় সভাপতির স্বাক্ষর ও সিলমোহর জালিয়াতি করায় এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মিখা পিরেগুকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।’
বহিষ্কার হওয়ার পর কেউ হলে অবস্থান করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবু হাসান (শিক্ষা)। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কেউ সাময়িক বহিষ্কার হলেও তার হলে থাকার অধিকার নেই। সেক্ষেত্রে আজীবন বহিষ্কার হলে কোনোভাবেই হলে থাকার সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী হোক বা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী হোক, আজীবন বহিষ্কার হয়ে কেউ কোনোভাবেই হলে অবস্থান করতে পারেন না। এটি একটি নৈতিকতাবিরোধী কাজ।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:পরীক্ষার উত্তরপত্রে অযাচিত এক বাক্য লিখে বেকায়দায় পড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সেই ছাত্রকে বিভাগীয় তলবের পর এবার কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই ছাত্রের এমন আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ায় ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বুধবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তানভীর মাহতাবকে আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তার এ কর্মকাণ্ড অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি।
‘ওই শিক্ষার্থী একাধিক অপরাধ করেছে। সেগুলোর কারণ তাকে দর্শাতে হবে। যথাযথ কারণ উল্লেখ করতে না পারলে তাকে প্রশাসনিকভাবে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে গত রোববার তাকে ডেকে পাঠায় বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্র সেদিনই ভুল স্বীকার করে মার্জনা পেতে তার বিভাগের কাছে আবেদন করেন। তারপর তার লিখিত বক্তব্য প্রক্টর অফিসে পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘বিভাগ থেকে আমরা একটি আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দীন বলেন, ‘তাকে বিভাগ থেকে ডাকা হয়েছিল। তার কাছ থেকে লিখিত নিয়ে প্রক্টর অফিসে জমা দেয়া হইছে। বিভাগ তো আর শাস্তি দিতে পারে না। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন (শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে) ব্যবস্থা নেবে।’
বিষয়টিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলে ওই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বহিষ্কার করতে পারি না। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। আর ভাইরাল হওয়া ওই অতিরিক্ত উত্তরপত্রে ইনভিজিলেটরের স্বাক্ষরটি ইংরেজি বিভাগের কোনো শিক্ষকের নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভাগের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিভাগ যা বলবে তার ওপর পদক্ষেপ নির্ভর করছে। তা ছাড়া উত্তরপত্রটি আমি দেখিনি। তাই এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এর আগে তানভীর মাহতাব নামের ওই ছাত্র পরীক্ষার অতিরিক্ত উত্তরপত্রে ‘স্যার, আজকে আমার মন ভালো নেই’ লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে হাসিঠাট্টা তামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছেন তিনি।
মিডটার্ম পরীক্ষা শেষে অতিরিক্ত একটি উত্তরপত্র সঙ্গে নিয়ে আসেন তানভীর মাহতাব। বুধবার রাতে সেই উত্তরপত্রে ‘আজকে আমার মন ভালো নেই’ লিখে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন তিনি। তারপর বিষয়টি সব জায়গায় ভাইরাল হয়ে যায়। পরে তিনি পোস্টটি ডিলিট করলেও এ নিয়ে চলছে হাসি-তামাশা।
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে টাইমলাইনে ফানি পোস্ট দেয় তানভীর। উত্তরপত্রে ইনভিজিলেটরের সইও তার দেয়া ছিল বলে নিউজবাংলাকে তিনি জানিয়েছেন।
ওই ছাত্র জানান, তিনি বুঝতে পারেননি বিষয়টি এভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে। পরে বেকায়দা বুঝতে পেরে পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাংবাদিকদের হেনস্তা ও হুমকি দেয়ার ঘটনায় ৯ ছাত্রলীগ কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুরে তাদের এই নোটিশ দিয়েছে চবি প্রক্টরিয়াল বডি।
১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতির কক্ষে গিয়ে শোকজ পাওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বলেছিলেন, ‘চবির হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব৷’
এই হুমকির ঘটনায় লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জনকে শোকজ করা হয়েছে।
শোকজ পাওয়া ৯ ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের রানা আহমেদ, একই সেশনের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ওবায়দুল হক লিমন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০১৬-১৭ সেশনের আশীষ দাস, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের সাজ্জাদুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের তুষার তালুকদার বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আহম্মদ উল্লাহ রাব্বি ও একই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের জাহিদুল ইসলাম এবং সংস্কৃত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের রুদ্র তালুকদার।
সহকারী প্রক্টর মো. শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময় বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ৯ ছাত্রকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াসের অনুসারী উপ-গ্রুপ বিজয়ের বেশ কয়েকজন কর্মী চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকদের হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন তারা।
এদিন ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, ‘এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব৷ এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কী করবি তোরা? নিউজ করবি? কর। আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না৷’
এ ঘটনায় ১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন চবি সাংবাদিক সমিতির নেতারা।
আরও পড়ুন:নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা এবং সাভারে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক নির্যাতনে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ হয়।
‘শিক্ষকের গলায় জুতার মালা: নৈতিকতার অবক্ষয় ও সাম্প্রদায়িকতার ছড়াছড়ির শেষ কোথায়’ শীর্ষক সমাবেশে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহাও অংশ নেন।
মিহির লাল সাহা বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি এখানে বক্তব্য দিচ্ছি, জানি না আমি কতটুকু নিরাপদ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করছি। কারণ আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী। সনাতন ধর্মের প্রত্যেকটি শিক্ষক আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সাম্প্রদায়িকতাকে যদি শেকড় থেকে তুলে না আনা যায়, তাহলে এই সমসার সমাধান হবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ হয় পাকিস্তান হবে, নয় আফগানিস্তান হবে। এর সঙ্গে যে কুচক্রী মহল যুক্ত আছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
‘উন্মুক্ত রাস্তায় জনসম্মুখে তাদের বিচার করা উচিত। তাহলেই শিক্ষা হবে।’
মিহির লাল বলেন, ‘বিচারহীনতার সমাজে কখন বিচার হবে? যারা বিচার করবেন, দেখা যায় তারাই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। প্রশাসন বলছে, ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
‘ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আগে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরাতে হবে। তাদের আগে জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষকের সামনে দাঁড় করাতে হবে। এটি হলে বিচারের প্রথম কাজ এগোবে।
'প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, শিক্ষক লাঞ্ছনার দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।'
শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নীরবতার সমালোচনা করে অচিরেই ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার আহ্বান জানান অধ্যাপক মিহির লাল।
সমাবেশে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাজল দাস বলেন, ‘যে প্রজন্ম শিক্ষককে জুতার মালা গলায় পরায়, শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, সেই প্রজন্মের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ঘটনার প্রতিবাদ না জানানোর সমালোচনা করে কাজল দাস বলেন, ‘আজকে আমরা লজ্জিত। যেখানে শিক্ষক সমাজ এখানে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে আমরা দাঁড়িয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা এই সাম্প্রদায়িকতাকে কখনো মেনে নেয়নি, নেবে না। যেকোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকব।’
জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মন বলেন, ‘শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড। স্ট্যাম্পের আঘাতে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। আমরা দেখছি, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে নিরীহ শিক্ষক। আজকে তারা মন খুলে পড়াতে পারেন না।
‘মনের ভাব প্রকাশ করতে গেলে, কথিত ধর্ম অবমাননার অপবাদ দিয়ে হয় গণপিটুনি খেতে হয়, নতুবা জেলে যেতে হয়। এই বিষদাঁত আমাদের ভেঙে দিতে হবে।’
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী চালক নজরুল ইসলাম।
সোমবার রাতে মামলা করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন হাওলাদার।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম কৌশিক সরকার সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী।
মারধরের শিকার নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষারের গাড়ির চালক।
গত রোববার ওয়ারীতে জবির শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের কাছে অভিযুক্তকে সাইড দিতে বলায় ঘটনার সূত্রপাত হয়। সেখানে মারধরের পর আবার চালককে হলে নিয়েও মারধর করা হয়।
অভিযুক্ত কৌশিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের কর্মী বলে জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা গেছে, সাম্য নিজেকে শাখা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের সঙ্গে তার ছবি ছাড়াও নিয়মিত ছাত্রলীগকেন্দ্রিক পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায়।
শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাও সাম্যকে সংগঠনটির কর্মী হিসেবে নিশ্চিত করেছেন।
তবে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কেউ নয়, এমনকি তার কর্মী নন বলে জানান।
তিনি দাবি করেন, ‘আমি নেতৃত্বে আসার পর এ ছেলে কখনও আমার সঙ্গে রাজনীতি করেনি। জগন্নাথে পাঁচ-ছয় হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমাদের ছবি থাকতে পারে, তাই বলে এরা সবাই তো ছাত্রলীগ করে না।’
মামলার বিষয়ে ওসি কবীর হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘গত পরশুর ঘটনা। রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালক নজরুল ইসলাম গাড়ি ঘোরাচ্ছিলেন, ছেলেটা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। ড্রাইভার বলছেন ছেলেটার গায়ে লাগেনি, হর্ন দিয়েছিলেন সরে যাওয়ার জন্য। ছেলেটা প্রথমে চালককে থুথু দেন, তারপর মারধর করেন। পরে আবার সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলে নিয়ে গিয়ে চার-পাঁচজন মিলে মারধর করে চালককে। সোমবার সন্ধ্যার পর মামলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করব। এরপর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। থানার সাথে আমার কথা হয়েছে। গাড়ির চালক মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্যারের ছেলের গাড়িচালক বলে থানা জানিয়েছে।’
২০১৯ সালে অভিযুক্ত কৌশিক সরকার সাম্য সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশের প্রথম এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে ক্লাস চালুর মধ্য দিয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
লালমনিরহাট শহরের পাশে বিমানঘাঁটি এলাকায় অবস্থিত এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে রোববার সকাল ১০টার জাতীয় সংগীত গেয়ে ও পতাকা উত্তোলন করে ক্লাস চালু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
চলতি শিক্ষাবর্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হয়েছেন।
ভিসি নজরুল বলেন, ‘মূল ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে হলেও আমরা ২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ঢাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করি। এখন যেহেতু লালমনিরহাট ক্যাম্পাসে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ হয়েছে, তাই আজ পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হলো।
‘তবে মূল ক্যাম্পাসের কাজ শেষ হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।’
২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।
ভিসি বলেন, ‘স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ৬২০ একর জমির অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসবেন। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি করবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এভিয়েশন ম্যানেজমেন্টের ওপর এমবিএ, এভিয়েশন সেফটি অ্যান্ড অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশনে এমএসসি এবং আন্তর্জাতিক ও মহাকাশ আইনে এলএলএম বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিসি।
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিমের ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়া নিয়ে হট্টগোল হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম সিনেট অধিবেশনে তার আলোচনার শেষে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেন। এর পরেই প্রতিবাদ জানাতে থাকেন সিনেট সদস্যরা।
সিনেট সদস্য শেখ মনোয়ার হোসেন তাৎক্ষণিক এর বিরোধিতা করেন। বলেন, “‘জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান। কেউ ‘জয় বাংলা’ ছাড়া অন্য কোনো স্লোগান দিতে পারেন না।”
শেখ মনোয়ার হোসেনের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও সিনেট সদস্যরা। ওই সময় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ব্যারিস্টার শিহাবউদ্দিন খান, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক মো. শামসুল আলম সেলিম, সাবিনা ইয়াসমিন, অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বিরোধিতা করেন।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “এটি আমাদের বাক-স্বাধীনতা বিরোধী। আমরা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে পারব। আমাদের সাংবিধানিকভাবে সে স্বাধীনতা আছে।”
পরে সিনেট সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ তার বক্তব্যে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া নিয়ে মন্তব্য করলে আবার হট্টগোল বাঁধে। সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরোধিতা করেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা।
সিনেট অধিবেশনের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ রাশেদা আক্তারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য