দেশের মানুষকে বিকল্প শক্তি উপহার দেয়ার জন্য জাতীয় পার্টি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে আদর্শগত জায়গায় ১৮০ ডিগ্রি ফারাক থাকলেও দেশ ও জনগণের অপছন্দের কর্মকাণ্ডে তাদের ব্যাপক মিল আছে। জনগণ এখন বিকল্প শক্তি খুঁজছে। দেশের মানুষকে বিকল্প শক্তি উপহার দেয়ার লক্ষ্যে জাতীয় পার্টি কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার লক্ষ্যে আমাদের দল কাজ করছে। তবে কোনো দল বিশেষ করে সরকারি দল বা বিএনপির সঙ্গে জোট করা হবে কি না তা পরিস্থিতি ও সময় বলে দেবে।
‘জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি উপহার দেয়া হচ্ছে।’
এক যুগ পর চাঁদপুর জেলার জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছে। এতে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক এমরান হোসেন মিয়াকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি ঘোষণা করা হয়।
সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন প্রার্থী হওয়ায় দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে জানানো হবে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এমরান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া।
বিএনপির বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, তারা সহজ ও সোজা পথে হাঁটে না। তারা পদ্মা সেতুর মতো দেশের এত বড় প্রকল্প নিয়েও ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তাদের সব কুচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এবার তারা বন্যার মতো মানবিক বিপর্যয় নিয়ে অপরাজনীতি শুরু করেছে।
শুক্রবার দুপুরে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
ত্রাণ বিতরণকালে বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের দুঃখ, কষ্ট বোঝেন। এত বড় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে অপরাজনীতি করবেন না।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কোনো ভয় নেই। আমরা সবাই আপনাদের পাশে আছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের মাঝে এসে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি তার দেখানো পথেই আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে এসেছি। এ বিষয়ে আমার সহধর্মিণী খাদিজা রাসেল আমাকে বেশি সহযোগিতা করেছেন।’
যেসব ক্রীড়া পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পরিবারকেও সহায়তা করার আশ্বাস দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।
ত্রাণ বিতরণকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নাসির উদ্দিন খান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন সেলিমসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা স্টেডিয়ামে ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জে আরও দুই হাজার বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝেও ত্রাণ বিতরণ করেন।
আরও পড়ুন:শারীরিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের ওমিক্রন সংক্রমণ এড়াতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগের দিন শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন ‘সংক্রমণ এড়াতে রিস্ক থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে খালেদা জিয়াকে বিকেলে বা সন্ধ্যায় বাসায় নেয়ার কথা রয়েছে। বাসায় প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ে রাখা হবে। জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে আনা হবে।’
মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কিডনির জটিলতা কিছুটা সমাধান করা গেলেও, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’
বিকেল ৫.৩৫ মিনিটে বিএনপি নেত্রী হাসপাতাল থেকে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজার পথে রওনা হন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি সেখানে পৌঁছান।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর আলোচনার মধ্যে গত ১১ জুন মধ্য রাতে বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবন থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার হার্টে রিং পরানোর কথা জানানো হয় দলের পক্ষ থেকে।
হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিএনপি নেত্রীকে শেষ পর্যন্ত অবশ্য আর পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি। তার দলের সাতজন নেতাকে কার্ড পাঠানো হয়েছে। তবে তারা কেউ অনুষ্ঠানে যাবেন না।
হাসপাতালে নেয়ার পর বিএনপি আবার তার নেত্রীকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি করে। তবে এর আগের তিনবারের মতো এবারও সে দাবি অগ্রাহ্য করে সরকার।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা স্থগিত হওয়ার পর বিদেশে যেতে পারবেন না-এমন শর্তে বিএনপি নেত্রীকে মুক্তি দেয়া হয়।
এরপর করোনায় আক্রান্ত হলে প্রথমবার ২৭ এপ্রিল থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ৫৩ দিন, দ্বিতীয় দফায় ১২ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬ দিন এবং তৃতীয় দফায় ১৩ নভেম্বর থেকে ৮১ দিন তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে থাকলেন।
তৃতীয় দফায় ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার সময় বিএনপি নেত্রীর জীবন সংকটাপন্ন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তার লিভার সিরোসিস হয়েছে এবং দেশে এর কোনো চিকিৎসা নেই- এমন দাবি করা হয় বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসায় গঠন করা মেডিক্যাল বোর্ডের পক্ষ থেকেও। এমনও বলা হয়, বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্তে দেরি হলে ক্ষতি হয়ে যাবে।
তবে সরকার তার অবস্থানে অটল থাকার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি এভারকেয়ার থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরে যান বিএনপি নেত্রী। সে সময় দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছিল। সে সময়ও তার চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণের আশঙ্কায় ঝুঁকি সত্ত্বেও বিএনপি নেত্রীকে বাসায় নেয়া হচ্ছে।
এবারও বাসায় ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘উনার (বিএনপি নেত্রী) ব্লাডিংয়ের চান্স, সিরোসিস অব লিভার, সেটা কিন্তু রয়ে গেছে। এটার কোনো চিকিৎসা হয়নি। আমরা শুধু উনার ব্লিডিং স্পটগুলোকে মাইগ্রেশন করে বন্ধ করে রেখেছি। সেগুলোর গত ছয় মাসে কী অবস্থা হয়েছে, আমরা কিন্তু ফলোআপ করতে পারিনি। এখনকার কন্ডিশনের জন্য ওনার ফলোআপ করাটা আরও রিস্কি হয়ে যাচ্ছে।’
দেশের বাইরে নিয়ে গেলে বিএনপি নেত্রী সুস্থ হয়ে যাবেন- এমন কথা বলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘তবে এখনও খালেদা জিয়ার ফ্লাই করার মত শারীরিক সক্ষমতা আছে। বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করলে হয়ত তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুকে দেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক বলে মনে করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। পদ্মা সেতুকে প্রত্যাশা ও প্রতিজ্ঞার মেলবন্ধন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শুক্রবার তার একান্ত সহকারী সচিব মামুন হাসানের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
রওশন এরশাদ বর্তমানে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। আগামী ২৭ জুন তার চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার কথা রয়েছে। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষে আগামী ৪ জুলাই রুটিন চেকআপের লক্ষ্যে আবার ব্যাংকক যাবেন রওশন।
বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতু শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে যাচ্ছে। দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর সেই দিন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি নেতারা নানান নেতিবাচক বক্তব্য দিলেও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ মনে করেন, পদ্মা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি দেশের সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। পদ্মা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়। এটি দেশের সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাঙালির গর্বের আরেকটি নতুন সংযোজন পদ্মা সেতু। প্রত্যাশা ও প্রতিজ্ঞার মেলবন্ধন পদ্মা সেতু।
‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, এত সমস্যা মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এ সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক লাইফলাইন রূপে কাজ করবে। বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ, শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা, কৃষি সম্প্রসারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে পদ্মা সেতু।’
পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদা এবং আত্মনির্ভরতার এক অনন্য সোপান উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও বহু কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়।
‘নিঃসন্দেহে এটি আমাদের অনেক বড় অর্জন, অনেক বড় সফলতা ও অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। এ অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির নতুন যুগে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ আজ নতুন এক পরিচয়ে পরিচিত। যে পরিচয় সম্মানের গৌরবের সফলতায় এবং সক্ষমতার। খরস্রোতা পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতা। এটি আমাদের অহংকার।’
বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, ‘বহু বিস্ময় ও রেকর্ডের জন্ম দেয়া সেতুটির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ প্রত্যক্ষভাবে এর মাধ্যমে উপকৃত হবে আর পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে দেশের মানুষ।’
পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হোক নতুন পালক, এমনই প্রত্যাশা বিরোধীদলীয় নেতার।
আরও পড়ুন:যে কারণে বন্যা হচ্ছে তা প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা সরকার এখনও করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এও বলেছেন, ‘বরং বন্যা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
শুক্রবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নিখোঁজ বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
অবশ্য বন্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়, তার ব্যাখ্যা দেননি ফখরুল।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমি সিলেটে গিয়েছিলাম। এর ভয়াবহতা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। মানুষ যে কষ্টে আছে তাদেরকে ত্রাণের ব্যবস্থা করে দেয়া, তাদের বাঁচার চেষ্টা করে দেয়ার কোনো ব্যবস্থা তারা (সরকার) করেনি।
‘অথচ তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী তিনি হেলিকপ্টারে করে ঘুরলেন। পরে সার্কিট হাউসে নেমে কয়েকজন লোককে টোকেনের মাধ্যমে ত্রাণ দিয়েছেন। তারপরও তিনি বলেছেন সব হয়ে যাবে।’
অবিলম্বে বন্যার্ত এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণারও দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতা। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতারা প্রত্যেকে মিথ্যাবাদী। তারা অনর্গল মিথ্যা কথা বলেন।
২০১০ সালের আজকের দিন নিখোঁজ হন চৌধুরী আলম। বিএনপির অভিযোগ, তাকে গুম করেছে সরকারি সংস্থা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীগুলো।
ফখরুল বলেন, ‘গত ১২ বছর ধরে পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে খুঁজে চৌধুরী আলমের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এতদিন পর্যন্ত এই সরকার তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি।
‘আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরে এ ধরনের ঘটনার অনেকগুলো সংঘটিত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিএনপির ৬০০-এর ওপরে নেতা-কর্মী গুম হয়েছে, কিন্তু তাদের কোনো সন্ধান সরকার দিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যে সনদ রয়েছে, এখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, জোর করে যদি কাউকে নিয়ে যাওয়া হয় সেটা মানবাধিকার লংঘন, অপরাধ। এতেই প্রমাণিত হয় এই সরকার ফ্যাসিবাদী। তাদের ১৫ বছর দুঃশাসনে বাংলাদেশের কত মানুষ পরিবারহারা হয়েছেন, সন্তানহারা হয়েছেন, কতজন স্বামীহারা হয়েছেন, কতজন পুত্রহারা হয়েছেন তার কোনো সঠিক হিসাব নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য গুম, খুন, বেআইনিভাবে আটক করে তাকে হত্যা করা, জুডিশিয়াল কিলিং এমনভাবে বেড়েছে, যেটা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না।
‘আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে, জীবনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যাদের গুম করা হয়েছে তাদেরকে জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
সরকারের পদত্যাগ দাবি করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনের দাবিও জানান বিএনপি নেতা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সদস্যসচিব রবিউল আলম মজনুসহ দলের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাসায় ফিরতে পারেন শুক্রবার সন্ধ্যায়।
বিএনপিপ্রধানের চিকিৎসক ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিকেলে ম্যাডামের কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে। তার পরে ওনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘মূলত করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে, হাসপাতালে যেহেতু অনেক করোনা পেশেন্ট আসছেন, সেসব কারণে এই সিদ্ধান্ত আরকি।’
হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় ১০ জুন গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। পরের দিন দুপুরে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হয়। এতে তার হার্টে কয়েকটি ব্লক ধরা পড়ে। ব্লকের একটিতে পরানো হয় রিং।
গত ১৫ জুন খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিট থেকে কেবিনে নেয়া হয়।
হাসপাতাল-বাসা-হাসপাতাল
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এখন পর্যন্ত পাঁচবার খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের এপ্রিলে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন। ৫১ দিন পর বাড়ি ফিরে একই বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত আবার তিনি একই হাসপাতালে যান।
এরপর ১৩ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮১ দিন হাসপাতালে থেকে বাসায় ফেরেন বিএনপিপ্রধান।
সে সময় বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। দাবি করা হয়, দেশের বাইরে না নিলে তাকে বাঁচানো যাবে না। কারণ তার যে রোগ, তার চিকিৎসা দেশে নেই।
খালেদা জিয়ার কী রোগ, সেটি জানানো হয়নি শুরুতে। পরে জানানো হয়, লিভার সিরোসিস হয়েছে তার। আর শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ একবার কোনো রকমে সামাল দেয়া গেছে। এর চিকিৎসা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দুই-একটি স্থানে আছে।
চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাসার বাইরে যান খালেদা জিয়া করোনার টিকার বুস্টার ডোজ নিতে। মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তিনি টিকা দিতে যান নিজের গাড়িতে করে। সেদিন দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। হাসপাতালের কর্মীরা গাড়িতে বসা অবস্থায় তাকে টিকা দেন।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সংঘর্ষ হয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
উপজেলার পুলেরঘাট বাজারে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে।
স্থানীয় দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারওয়ার জাহান সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।’
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানে নেতৃত্বের বিরোধে এ সংঘর্ষ বলে জানান স্থানীয়রা।
এলাকার লোকজন জানান, পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগ বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের অনুসারীরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিবাদে জড়াচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে তাদের মধ্যে।
এর আগে একাধিক কর্মসূচি পালনে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। পুরনো বিরোধের জেরেই বৃহস্পতিবার তারা ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় আহত হয়েছেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি খায়রুল আলম ফয়সাল।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলেরঘাট বাজারে সংবাদ করছিলাম। বিকেল ৫ টার দিকে কয়েকজন পেছন থেকে হামলা করে। এতে মাথা ফেটে যায়। সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
হামলার সময় দৈনিক প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি তাফসিলুল আজিজের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন কয়েকজন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামলাকারীরা আমাকে খোঁজাখুঁজি করেছে। না পেয়ে মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে।'
সংঘর্ষের ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. ফরিদ উদ্দিন দায়ী করেছেন এমপি সমর্থকদের। তিনি সোহরাব উদ্দিন গ্রুপের নেতা হিসেবে পরিচিত।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ছিল পুলেরঘাট বাজারে। আমরা সেখানে গেলে এমপির লোকেরা আমাদের বাধা দেয়। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করলে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।’
নূর মোহাম্মদ গ্রুপের নেতা হিসেবে পরিচিত উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি নাজমুল হক দেওয়ান বলেন, ‘বিকেলে পুলেরঘাট বাজারের কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে হামলা হয়। সোহরাবের লোকেরা আমাদের নেতাকর্মীদের মারপিট করেন। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
সংঘর্ষের পর এলাকার পরিবেশ থমথমে। তবে কোনও পক্ষ রাত পর্যন্ত মামলা করেনি।
কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল-আমিন হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ এক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।'
আরও পড়ুন:
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে দেখতে থাইল্যান্ড গেলেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ের তিনি। তিনি ব্যাংককে ওয়েস্টিন গ্র্যান্ড সুকুমভিত হোটেলে অবস্থান করবেন।
আগামী রোববার রাতে ঢাকার পথে রওয়ানা হবেন জি এম কাদের।
গত বছরের ৫ নভেম্বর রওশন এরশাদকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দেশে থাকতে ফুসফুসের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত সফরে আজ থাইল্যান্ড গিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
তবে দলীয় চেয়ারম্যানের থাইল্যান্ড যাওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টির এক কেন্দ্রীয় নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে দেখতেই দলের চেয়ারম্যান থাইল্যান্ডে গিয়েছেন। সেখানে উনি উনার ভাবীর (রওশন এরশাদ) সঙ্গে দেখা করবেন। মূলত এটাই উদ্দেশ্য। থাইল্যান্ডে যাওয়া আর কোনো কারণ নেই।’
এত দিন পরে কেন যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলীয় চেয়ারম্যান এত দিন ব্যস্ততার কারণে থাইল্যান্ডে যেতে পারেননি। এখন উনার সুযোগ হয়েছে তাই গেছে।‘
রওশন এরশাদ অভিমান করেছেন এবং এটি জানতে পেরে জি এম কাদের থাইল্যান্ড গিয়েছেন- এমন একটি খবরও ছড়িয়েছে। এর সত্যতা জানতে চাইলে জালালী বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। মানুষ অনেক কথা বলে। কিন্তু এটা সত্য নয়। উনাদের ভাবী-দেবরের সম্পর্ক অনেক চমৎকার বলেই জানি। প্রায় উনাদের ফোনে কথা হয়।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও তাঁর সহধর্মীনী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান।
বিমান বন্দরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান দলীয় চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা শেরিফা কাদের, মমতাজ উদ্দিন, জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আশিক আহমেদ, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ আবু তৈয়ব, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল ইসলাম, ইঞ্জিয়ার এলাহান উদ্দিন, জাতীয় ছাত্রসমাজ নেতা আল আমিন সরকার।
দুপুরে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। বন্যায় রংপুর ও সিলেট বিভাগসহ উত্তরাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে। তাদের মাঝে খাদ্য নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই, জীবন রক্ষাকারী অসুধ নেই, শিশু খাদ্য নেই। এমন বাস্তবতায়, সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা না করে গণমানুষের পাশে দাঁড়ানোই উত্তম।
জাতীয় পার্টির সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের দূর্গত মানুষকে সার্বিক সহায়তা করতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ত্রাণ বিতরণ কমিটিকে সার্বিক সহায়তা নির্দেশ দেন জি এম কাদের।
আগামী সোমবার দেশে ফেরার কথা রয়েছেন রওশন এরশাদের। জাপা নেত্রীর একান্ত সহকারী সচিব মামুন হাসান এ তথ্য জানিয়েছিলেন।
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষে আগামী ৪ জুলাই রুটিন চেকআপের লক্ষ্যে আবার ব্যাংকক যাবেন রওশন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য