পদ্মা সেতুর অপেক্ষায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষও। সেতুটি চালুর পর রাজধানী ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছের সমুদ্রবন্দর হবে বাগেরহাটের এই বন্দর। ফলে আমদানি ও রপ্তানিকারকরা এই বন্দরে যোগাযোগ বাড়াবেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরের কর্মব্যস্ততা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানিতে।
বন্দরের আশপাশে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার প্রত্যাশাও করা হচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান হবে বলে আশাবাদী স্থানীয়রা।
এ বিষয়টি অনুমান করে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
বন্দরে ছয়টি জেটি, তিনটি মুরিং বয়া, ২২টি অ্যাংকোরেজ এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ১১টি প্রতিষ্ঠানের জেটির মাধ্যমে মোট ৪২টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব।
চারটি ট্রানজিট শেড, দুটি ওয়্যার হাউস, চারটি কনটেইনার ইয়ার্ড, দুটি কার ইয়ার্ডের মাধ্যমে বার্ষিক এক কোটি মেট্রিক টন কার্গো এবং এক লাখ টিইউজ কনটেইনার এবং ২০ হাজারটি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে বন্দরে।
বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও আটটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা অনেক বাড়বে।
বিজিএমইএর চোখ মোংলায়
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসা জানান, বিজিএমইএ নেতারা তার সঙ্গে এরই মধ্যে বৈঠক করেছেন। কয়েকটি বড় পোশাক কোম্পানিও পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে পণ্য রপ্তানিতে এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ব্যবসায়ীদের এমন আগ্রহের মূল কারণ হচ্ছে, ঢাকা থেকে এ বন্দরের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা খরচ কমাতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করবেন।
বন্দরের চেয়ারম্যান জানান, পদ্মা সেতু সামনে রেখে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সেতু চালু হওয়ার পর বন্দরের যে কর্মতৎপরতা বাড়বে, সেটি সামাল দেয়া যাবে।
বাড়বে গাড়ির ব্যবসা
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আহসান আরজু বলেন, ‘বর্তমানে আমরা আমদানি করা গাড়ি ঢাকায় নিতে আরিচা ফেরিঘাট ব্যবহার করি। যার কারণে মোংলা থেকে একটি গাড়ি ঢাকায় নিতে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে।
‘ফলে আমরা যেদিন গাড়ির অর্ডার পাব, সেদিনই ক্রেতার হাতে তা দিতে পারব। যার ফলে সময় বাঁচার পাশাপাশি গাড়িপ্রতি ১-২ হাজার টাকা খরচ কমবে ব্যবসায়ীদের।
‘আবার আমাদের সংগঠনের প্রায় ৩০০ সদস্য মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করেন। কম সময়ে গাড়ি খালাস ও রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে আমদানি করতে বেশি পছন্দ করছেন। পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দর দিয়ে আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আরও বাড়বে।’
২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। ওই বছর গাড়ি এসেছিল ২৫৫টি। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মে মাস পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে ২০ হাজার ৯টি।
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান বলেন, ‘মোংলা বন্দর দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার ৫২ শতাংশ আসে গাড়ি আমদানির কর থেকে।’
রাজস্ব বাড়ার আশা
১৯৯০-৯১ থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত বন্দরটি লাভজনক ছিল। তবে ২০০২-০৩ থেকে ২০০৬-০৭ অর্থবছর পর্যন্ত লোকসানের শিকার হয় বন্দরটি। ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে আবারও লাভের মুখ দেখে তারা।
সর্বশেষ চার বছর ধরে এ বন্দর থেকে ১০ হাজার লাখ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে।
মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৮২৮টি ও গেছে ৮৩০টি। এতে বন্দরের মোট আয় হয়েছে ৮ হাজার ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু চালু হলে আগামী অর্থবছরে আমরা রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারব বলে আশাবাদী।’
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার নেয়াজুর রহমান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। ১১ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে দ্বিগুণের মতো। আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। পদ্মা সেতু চালু হলে কম খরচ ও কম সময় ব্যয় করে ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য নিতে পারবেন। তখন বন্দরে বেশি আমদানি-রপ্তানি হবে, রাজস্বও বাড়বে।’
বিনিয়োগ বাড়ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য মতে, বিভাগে ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে ১০৩টি প্রতিষ্ঠান। এতে ২ হাজার ৩৪৬ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগ করেছে ৩১টি ব্যবসায়ীপ্রতিষ্ঠান। এতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৫ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
বাগেরহাট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে বাগেরহাট জেলার উন্নয়নের জন্য বাইরে থেকে টাকার প্রয়োজন হবে না। কারণ পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী হবে।’
‘বর্তমানে মোংলা বন্দর এলাকায় ছোট-বড় মিলে ৩৮৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শুধু পদ্মা সেতুর কারণে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে জমি কিনেছে। তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ চলমান রয়েছে। যার ফলে এ অঞ্চলে শিল্পবিপ্লব শুরু হবে। বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে কয়েক লাখ মানুষের।’
কোন কোন প্রকল্পের কাজ চলছে
৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘স্ট্র্যাটেজিক মাস্টার প্ল্যান ফর মোংলা’;
সমুদ্রগামী জাহাজ, বন্দর অফিস ও আবাসিক এলাকাসহ বন্দরসংলগ্ন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সুপেয় পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে চলেছে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন;
বন্দরের কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ;
নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সহায়ক জলযান সংগ্রহ;
বন্দর এলাকায় চলাচলকারী জলযান এবং শিল্প-কারখানা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য ৪০১ কোটি ২৪ লাখ টাকায় চলছে ‘মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা’;
ইকুইপমেন্টসহ কনটেইনার টার্মিনাল, হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড, ডেলিভারি ইয়ার্ড, সার্ভিস ভেসেল, মেরিন ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স, মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স, ওভারপাস, বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা ও বন্দর ভবন সম্প্রসারণ এবং আটটি জলযান সংগ্রহের ‘আপগ্রেডেশন অফ মোংলা পোর্ট’, যার ব্যয় ৬ হাজার ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা;
মোংলা বন্দরের জেটি পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধা সৃষ্টির জন্য ‘ইনার বার’ এলাকায় ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকায় ২১৬ দশমিক শূন্য ৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের জন্য ‘পশুর চ্যানলের ইনার বারে ড্রেজিং’ প্রকল্প; এবং
মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইকুইপমেন্টসহ দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণের লক্ষ্যে পিপিপির আওতায় ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ।
অনুমোদনের অপেক্ষায় ছয় লেন প্রকল্প
পদ্মা সেতু ঘিরে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল খুলনা-মোংলা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা।
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘১৯৮৪ সালে সড়কটি নির্মাণ হওয়ার পর থেকে প্রশস্ত করা হয়নি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এ সড়কে যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে। সে কারণে সড়কটির বাগেরহাট অংশের সাড়ে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ছয় লেনে উন্নীতকরণ এখন সময়ের দাবি।
‘ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি ডোনারের মাধ্যমে করা যায় কি না সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করছে। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকও হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।’
আরও পড়ুন:ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য