পদ্মা সেতুর অপেক্ষায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষও। সেতুটি চালুর পর রাজধানী ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছের সমুদ্রবন্দর হবে বাগেরহাটের এই বন্দর। ফলে আমদানি ও রপ্তানিকারকরা এই বন্দরে যোগাযোগ বাড়াবেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরের কর্মব্যস্ততা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানিতে।
বন্দরের আশপাশে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার প্রত্যাশাও করা হচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান হবে বলে আশাবাদী স্থানীয়রা।
এ বিষয়টি অনুমান করে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
বন্দরে ছয়টি জেটি, তিনটি মুরিং বয়া, ২২টি অ্যাংকোরেজ এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ১১টি প্রতিষ্ঠানের জেটির মাধ্যমে মোট ৪২টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব।
চারটি ট্রানজিট শেড, দুটি ওয়্যার হাউস, চারটি কনটেইনার ইয়ার্ড, দুটি কার ইয়ার্ডের মাধ্যমে বার্ষিক এক কোটি মেট্রিক টন কার্গো এবং এক লাখ টিইউজ কনটেইনার এবং ২০ হাজারটি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে বন্দরে।
বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও আটটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা অনেক বাড়বে।
বিজিএমইএর চোখ মোংলায়
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসা জানান, বিজিএমইএ নেতারা তার সঙ্গে এরই মধ্যে বৈঠক করেছেন। কয়েকটি বড় পোশাক কোম্পানিও পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে পণ্য রপ্তানিতে এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ব্যবসায়ীদের এমন আগ্রহের মূল কারণ হচ্ছে, ঢাকা থেকে এ বন্দরের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা খরচ কমাতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করবেন।
বন্দরের চেয়ারম্যান জানান, পদ্মা সেতু সামনে রেখে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সেতু চালু হওয়ার পর বন্দরের যে কর্মতৎপরতা বাড়বে, সেটি সামাল দেয়া যাবে।
বাড়বে গাড়ির ব্যবসা
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আহসান আরজু বলেন, ‘বর্তমানে আমরা আমদানি করা গাড়ি ঢাকায় নিতে আরিচা ফেরিঘাট ব্যবহার করি। যার কারণে মোংলা থেকে একটি গাড়ি ঢাকায় নিতে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে।
‘ফলে আমরা যেদিন গাড়ির অর্ডার পাব, সেদিনই ক্রেতার হাতে তা দিতে পারব। যার ফলে সময় বাঁচার পাশাপাশি গাড়িপ্রতি ১-২ হাজার টাকা খরচ কমবে ব্যবসায়ীদের।
‘আবার আমাদের সংগঠনের প্রায় ৩০০ সদস্য মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করেন। কম সময়ে গাড়ি খালাস ও রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে আমদানি করতে বেশি পছন্দ করছেন। পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দর দিয়ে আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আরও বাড়বে।’
২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। ওই বছর গাড়ি এসেছিল ২৫৫টি। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মে মাস পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে ২০ হাজার ৯টি।
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান বলেন, ‘মোংলা বন্দর দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার ৫২ শতাংশ আসে গাড়ি আমদানির কর থেকে।’
রাজস্ব বাড়ার আশা
১৯৯০-৯১ থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত বন্দরটি লাভজনক ছিল। তবে ২০০২-০৩ থেকে ২০০৬-০৭ অর্থবছর পর্যন্ত লোকসানের শিকার হয় বন্দরটি। ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে আবারও লাভের মুখ দেখে তারা।
সর্বশেষ চার বছর ধরে এ বন্দর থেকে ১০ হাজার লাখ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে।
মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৮২৮টি ও গেছে ৮৩০টি। এতে বন্দরের মোট আয় হয়েছে ৮ হাজার ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু চালু হলে আগামী অর্থবছরে আমরা রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারব বলে আশাবাদী।’
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার নেয়াজুর রহমান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। ১১ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে দ্বিগুণের মতো। আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। পদ্মা সেতু চালু হলে কম খরচ ও কম সময় ব্যয় করে ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য নিতে পারবেন। তখন বন্দরে বেশি আমদানি-রপ্তানি হবে, রাজস্বও বাড়বে।’
বিনিয়োগ বাড়ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য মতে, বিভাগে ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে ১০৩টি প্রতিষ্ঠান। এতে ২ হাজার ৩৪৬ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগ করেছে ৩১টি ব্যবসায়ীপ্রতিষ্ঠান। এতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৫ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
বাগেরহাট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে বাগেরহাট জেলার উন্নয়নের জন্য বাইরে থেকে টাকার প্রয়োজন হবে না। কারণ পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী হবে।’
‘বর্তমানে মোংলা বন্দর এলাকায় ছোট-বড় মিলে ৩৮৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শুধু পদ্মা সেতুর কারণে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে জমি কিনেছে। তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ চলমান রয়েছে। যার ফলে এ অঞ্চলে শিল্পবিপ্লব শুরু হবে। বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে কয়েক লাখ মানুষের।’
কোন কোন প্রকল্পের কাজ চলছে
৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘স্ট্র্যাটেজিক মাস্টার প্ল্যান ফর মোংলা’;
সমুদ্রগামী জাহাজ, বন্দর অফিস ও আবাসিক এলাকাসহ বন্দরসংলগ্ন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সুপেয় পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে চলেছে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন;
বন্দরের কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ;
নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সহায়ক জলযান সংগ্রহ;
বন্দর এলাকায় চলাচলকারী জলযান এবং শিল্প-কারখানা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য ৪০১ কোটি ২৪ লাখ টাকায় চলছে ‘মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা’;
ইকুইপমেন্টসহ কনটেইনার টার্মিনাল, হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড, ডেলিভারি ইয়ার্ড, সার্ভিস ভেসেল, মেরিন ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স, মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স, ওভারপাস, বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা ও বন্দর ভবন সম্প্রসারণ এবং আটটি জলযান সংগ্রহের ‘আপগ্রেডেশন অফ মোংলা পোর্ট’, যার ব্যয় ৬ হাজার ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা;
মোংলা বন্দরের জেটি পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধা সৃষ্টির জন্য ‘ইনার বার’ এলাকায় ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকায় ২১৬ দশমিক শূন্য ৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের জন্য ‘পশুর চ্যানলের ইনার বারে ড্রেজিং’ প্রকল্প; এবং
মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইকুইপমেন্টসহ দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণের লক্ষ্যে পিপিপির আওতায় ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ।
অনুমোদনের অপেক্ষায় ছয় লেন প্রকল্প
পদ্মা সেতু ঘিরে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল খুলনা-মোংলা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা।
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘১৯৮৪ সালে সড়কটি নির্মাণ হওয়ার পর থেকে প্রশস্ত করা হয়নি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এ সড়কে যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে। সে কারণে সড়কটির বাগেরহাট অংশের সাড়ে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ছয় লেনে উন্নীতকরণ এখন সময়ের দাবি।
‘ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি ডোনারের মাধ্যমে করা যায় কি না সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করছে। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকও হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অজ্ঞাত মুখোশধারীরা গত রবিবার রাতের বেলায় জমিদার বাড়ির পুরোহিতকে ধরে নিয়ে জঙ্গলে বেঁধে রাখে। টাকা-পয়সা এবং জমিদারেরও খোঁজ করে তারা।
এমন পরিস্থিতিতে ডাকাত আতঙ্কে রয়েছেন বাড়ির লোকজন।
মুখোশধারীরা ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশপাশে তল্লাশি চালানোর কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।
এতে দেখা যায়, রবিবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী নেলী চক্রবর্তী ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে দুজন মুখোশধারী ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সঙ্গে পুরোহিতকে বেঁধে ফেলে।
জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর আগে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। এর মধ্যেই দুজন মুখোশধারী আমাদেরকে ধরে বাড়ির পাশে জঙ্গলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় মুখোশধারীরা জমিদার কোন ঘরে জানতে চায়। সিন্দুকের খোঁজও চায় তারা।
‘বাড়ির তিন তলায় ওঠার চেষ্টাও করে। ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশেপাশে তল্লাশি চালায়।’
বাড়ির কেয়ারটেকার স্বপন সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত জমিদার বাড়িতে চাকরি করছি। দেশের বিভিন্ন জায়গার লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন। পুরো বাড়ি তাদের ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করি।
‘কিন্তু অতীতে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এই ঘটনার পর থেকে বাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে জমিদারের একমাত্র শেষ বংশধর মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বসবাস করছেন। নিঃসন্তান ব্যক্তিটির স্ত্রী কিছুদিন আগে লোকান্তরিত হন। বাড়িটিতে বর্তমানে তিনি ছাড়া কয়েকজন কর্মচারী ও পুরোহিত অবস্থান করছেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।
বাড়ির মালিক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বলেন, ‘মুখোশধারীরা হয়তো ধনদৌলত নিতে কিংবা আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করতে চেয়েছিল। তবে বাড়ির লোকজন সজাগ হয়ে যাওয়ার মুখোশধারীরা সেটা করতে পারেনি।’
জানতে চাইলে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বড় রাজাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িতে বৃহস্পতিবার দুপুর একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে, বেলা ১১টায় হামলা করা হবে। এতে লেখা হয়, ‘নোয়াখালীর বিপ্লবীরা, বুলডোজার নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। মার্চ টু কাউয়া কাদেরের বাড়ি! আজ বেলা ১১টা।’
সকাল থেকে সাংবাদিকরা বাড়ির সামনে অবস্থান করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক লোকজন বাড়িটি দেখতে আসেন।
ওই সময় বিক্ষুব্ধদের কাউকে বাড়ির ছাদ, বাড়ির ভেতর, আবার কাউকে বাড়ির সামনে অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের ‘কাউয়া’ ‘কাউয়া’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
তারা বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র, ছাদের রেলিং ও সামনে থাকা পোড়া একটা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাড়িতে ওবায়দুল কাদেরের নিজস্ব কোনো ঘর নেই। যেটি আছে, সেটি তার ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র কাদের মির্জার।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের একজন বলেন, “সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। সবাই ‘কাউয়া’, ‘কাউয়া’ স্লোগান দিচ্ছে।”
এ বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মো. ফৌজুল আজিমকে কল করে পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেলে একই বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ওই সময় বাড়ির পাঁচটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় ফজলুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আদালত তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম ও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এ মামলায় আরও ১১ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক ফেরদৌস ওয়াহিদ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈকত ইলিয়াস কবির।
ভুক্তভোগী ফজলুর রহমান রাইগাঁ গ্রামের প্রয়াত ইউনুস আলীর ছেলে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন রাইগাঁ গ্রামের শহীদুল ইসলাম (৫০), আবদুস সালাম (৬০), আবুল কালাম আজাদ (৫৫), আশরাফ (৪৫) ও আতুরা গ্রামের ইব্রাহিম (৬০)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিল দুপুরে মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ গ্রামে আবদুস সাত্তারের জমির পাশে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ১৮ থেকে ২০ জন ফজলুর রহমানকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এতে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তার।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈকত ইলিয়াস কবির জানান, ঘটনার দিনই ভুক্তভোগীর স্ত্রী শাহনাজ বেগম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করলে পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। পরে সিআইডি আবার তদন্ত করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় আদালতে।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলার ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৯ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। বাকি ১১ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। আর তিন আসামি রায়ের আগেই মারা যায়।
আরও পড়ুন:সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ ফেরত দুই যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে সাড়ে ১৭ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্বর্ণের বার ও পিণ্ডগুলো যাত্রীদের লাগেজে করে আনা ফ্যানের ভেতরে ছিল।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও কাস্টমস কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে স্বর্ণের এ চালান জব্দ করেন।
ওই সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে আসা দুই যাত্রী আফতাব উদ্দিন (৩৬) ও সাঈদ আহমদকে (২৪) আটক করা হয়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে শারজাহ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করে। ওই সময় দুই যাত্রীর আচরণ সন্দেহজনক হলে তাদের লাগেজ তল্লাশি করেন সংশ্লিষ্টরা।
তল্লাশিকালে যাত্রীদ্বয়ের লাগেজের ভেতর ফ্যানের মধ্যে কৌশলে রাখা সোনার ১২০টি বার ও গোলাকার চারটি স্বর্ণপিণ্ড উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত সোনার ওজন প্রায় সাড়ে ১৭ কেজি বলে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, বগুড়ার আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে।
এ ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।
কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজনও। তাদের একজন বেসরকারি সিম কোম্পানির কর্মী আল-আমিন।
তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে তেল শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পেট্রল পাম্পে নিয়ে আসি।
‘পাম্প বন্ধ থাকায় আবার ঠেলে নিয়ে চলে যেতে হয়। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না।
‘এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে অবস্থিত মেসার্স সাকিব ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেকেই অফিসগামী মোটরসাইকেল আরোহী ও জ্বালানিচালিত বিভিন্ন যানবাহনগুলো পাম্পে এসে বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যানবাহন চালকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান যানবাহন চালকরাও।
‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সকল পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়েছে।’
প্রেক্ষাপট
পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ বগুড়া। ওই সময় সান্তাহারের হামিম ফিলিং স্টেশন ও আনিকা ফিলিং স্টেশনে তেলের মিটার উচ্ছেদ করা হয়।
তারা জানান, পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে এ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেওয়া পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল ওহাবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সুজানগর উপজেলার ভায়না ইউনিয়নে বুধবার সকাল পৌনে আটটার দিকে অভিযান চালিয়ে নিজ গ্রাম মথুরাপুর বটতলার আনসার সরকারের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আবদুল ওহাব সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক পৌর মেয়র।
গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া একাধিক মামলার পলাতক আসামি ছিলেন তিনি।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকাল পৌনে আটটার দিকে অভিযান চালিয়ে আবদুল ওহাবসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে এই ঘটনায় আরও ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়ার পর নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা থেকে বাঁচতে আবদুল ওহাব নিজ থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর পুলিশের সঙ্গে কথা অনুযায়ী নিজ এলাকায় ফজর নামাজের পর আত্মসমর্পণ করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নিজ এলাকা সুজানগর পৌরসভার মথুরাপুর হাই স্কুলের মাঠে আবদুল ওহাবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পরপরই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পুলিশের গাড়ির ওপর হামলা করে গাড়ি থেকে আবদুল ওহাবকে ছিনিয়ে নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
এ ঘটনায় পুলিশের আটজন সদস্য আহত হয়েছিলেন।
ঘটনার পরের দিন ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। সে সময় অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ এক স্কুলছাত্রীকে নওগাঁ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
নওগাঁ শহরের আরজি মধ্যপাড়া থেকে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ও র্যাব।
উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী।
ওসি জানান, ঢাকা থেকে ওই স্কুলছাত্রীর নিখোঁজের একটি তথ্য তাদের কাছে আসে। তার নওগাঁয় অবস্থানের তথ্যের ভিত্তিতে আরজি নওগাঁ মধ্যপাড়া এলাকায় কথিত প্রেমিকের বাসায় অভিযান চালানো হয়। পরে সেই যুবকের বাবাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে তিনি স্বীকার করেন, কিশোরী তাদের কাছে রয়েছে।
তিনি আরও জানান, যুবকের বাড়ির পাশের একটি বাড়ি থেকে কিশোরী ও যুবককে আটক করে পুলিশ ও র্যাব-৫। এরপর র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পে দুজনকে নেওয়া হয়।
ওসি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় কিশোরী জানায়, টিকটকের সুবাদে তাদের দুজনের পরিচয় হয়। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
মন্তব্য